(পর্ব-৮)
এসে পড়লাম ঢাকায়? নিজের মধ্যে স্বগত সংলাপ চালায় শফিক হায়দার। কী করবো আমি? কার কাছে যাবো? মিজানের দেওয়া ঠিকানায় গেলে আমাকে গ্রহন করবে? এই লঞ্চের যাত্রীরা নামার জন্য প্রস্তত হচ্ছে, সবার হাতে ব্যাগ, বোচকা; কারও কারও হাতে হাঁস-মুরগি; সবাই লঞ্চ থেকে নামার পর নির্দিষ্ট ঠিকানায় যাবে, কারও নিজের বাসা, কারও সন্তানের বাসা, কারো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাসা, কিন্তু আমি? প্রায় হাজার খানেক মানুষ লঞ্চ থেকে নেমে পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট ঠিকানায় কিন্ত আমার কী হবে? মিজানের মামা মাওলানা আবদুল মতিন আমাকে কেন গ্রহণ করবেন? চালচুলোহীন শূন্য মানুষ আমি। কী যোগ্যতায়? পূবালী লঞ্চের হাগার খানেক যাত্রীর মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজের একটা মূল্য নির্ধারনের চেষ্টা করে শফিক, এই লোকজনের মধ্যে আমার মূল্য কত? এক টাকা! দশ টাকা? একশো টাকা?
মনে হয় না, নিজের দাম নিজেই নাকচ করে দিয়ে পুনরায় নিজের মূল্য নির্ধারণ করে শফিক, আমার দাম শূন্য টাকা। শূন্য কিন্ত টাকা। শূন্য টাকা। শফিক হায়দার নিজের মূল্য নির্ধারণ করতে না করতেই পূবালী লঞ্চের নাকটা ধাক্কা মারে সদরঘাটের বিশাল টার্মিনালের সঙ্গে। গোটা লঞ্চটা একহাত পেছনে গিয়ে আবার স্থির হয়ে যায়। ধাক্কায় অনভ্যস্ত কোনো কোনো যাত্রী পড়ে যায় পাশের যাত্রীর ওপর। পিল পিল করে পিঁপড়ার সাঁড়ির মতো করে লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নামছে। শফিকও যাত্রীদের সঙ্গে পায়ে পায়ে দোতলা থেকে নেমে আসছে। হাতে নাইলনের সুতোর ঝুলন্ত ব্যাগ। ব্যাগে দুটি পুরোনো শার্ট, একটা পুরোনা প্যান্ট, একটা রঙ ওঠা লুঙ্গি, একটা গামছা। নামছে লাইন ধরে। টিকিট মাস্টার সামনে এসে দাঁড়ালে শফিক পাঁচ টাকা বের করে দেয়। টিকিট মাস্টার চাঁদপুর টু ঢাকা একটা টিকিট কেটে হাতে দিয়ে চলে যায় অন্য যাত্রীর কাছে। জীবনের প্রথম যাত্রায়ই প্রতরণা?
কিছু করার নেই। পকেটে যদি ষাট বা সত্তরটা টাকা না থাকে, ঢাকা শহরে নেমে করবে কী? খাবে কী? প্রতরণাই জীবনের প্রথম শর্ত নয়। যা কিছু হোক, জীবনের জন্য হোক। সামনের লোকগুলো নেমে গেলে শফিকও নামে। লঞ্চ থেকে নেমে বিশাল টার্মিনালে দাঁড়াতেই অবাক, এত মানুষ?
মানুষের ভিড়ে নিজেকে না হারিয়ে টার্মিনালের পাশে, ফাকা জায়গায় সরে দাঁড়ায় শফিক হায়দার। দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে বিচিত্র মানুষের যাত্রা। নানান কিসিমের যাত্রীদের দিকে তাকাতে তাকাতে পকেটে হাত দিয়ে শফিক, উঠিয়ে আনে টাকা। গুনে দেখে মাত্র আটাত্তর টাকা! আবার রাখে পকেটে টাকাটা। যাত্রী একটু কমে গেলে শফিক চারদিকে চোখ বুলিয়ে সামনের দিকে হাঁটে। প্রকৃতপক্ষে, যাদের ঠিকানা আছে, আছে গন্তব্য, সেইসব যাত্রীদের ঘরে ফেরার একটা তাড়া থাকে, কিন্তু শফিকের তো কিছুই নেই। সুতরাং তাড়াও নেই। টার্মিনাল পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে শফিক ওপরে উঠতে থাকে। একেবারে ওপরে ওঠে, শফিক অবাক, কোনো যানবাহন নেই। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
-ঘটনা কী? পাশের একজন যাত্রীকে জিজ্ঞেস করে শফিক।
-আজ হরতাল।
-হরতাল?
-হ্যাঁ। যাত্রী সিগারেট টানতে টানতে বলে, এরশাদের বিরুদ্ধে হরতাল। গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ। আমি থাকি মিরপুরে কিভাবে যাবো, বুঝতে পারছি না। আপনি কই যাবেন?
-আমি?
লোকটা সিগারেটায় শেষ টান দিয়ে টার্মিনালের মেঝেতে ফেলে পায়ের জুতোর নিচে পিষতে পিষতে তাকায় শফিকের দিকে, হ্যাঁ আপনি? মিরপুর গেলে একসঙ্গে যেতাম।
-না, আমি যাবো সেগুনবাগিচা, প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে।
-ও, সেগুনবাগিচা? এইতো কাছেই। হেঁটেই যেতে পারবেন, আমি পড়লাম মুশকিলে…লোকটা ব্যস্তভাবে সামনে এগিয়ে যায় অনেক অপেক্ষারত যাত্রীদের ভিড়ে।
-লোকটা বাক্যটা কানে বাজে শফিকের, এইতো কাছেই। হেঁটে যাওয়া যাবে।
-শফিক হায়দার অনেক যাত্রীর সঙ্গে টার্মিনাল থেকে রাস্তায় নামে। নেমে সেই যাত্রীদের সঙ্গে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে একজনকে জিজ্ঞেস করে, প্রেসক্লাব কতদূর?
-বেশি দূর না। আপনি হেঁটে গুলিস্তান চলে যান। গুলিস্তানের কাছেই।
গুলিস্তানের উদ্দেশে পা বাড়ায় উজানগাঁওয়ের শফিক হায়দার। অথচ জানে না, গুলিস্তান কোথায়, কতদূর?
-তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
-না!
-না?
-হ্যাঁ, তোমাকে একটুও বাসি না ভালো, শিমুল বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে মিলিকে। তোমাকে আমি একটুও বাসি না ভালো…আলতো দাঁত বসায় মিলির উদোম বুকের ডান স্তনের খয়েরি বোঁটায়।
-উহু, কী ডাকাতরে বাবা! নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে শিমুলের বুকের ওপর থেকে। পিঠের কালো চুল উল্টো এসে ছড়িয়ে পড়ে মাথার ওপর দিয়ে মুখের সামনে। বিছানার ওপর টাল খেতে খেতে নিজেকে সামলে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে শিমুল, তোমাকে আমি খেয়ে ফেলবো গো।
-বাকি রেখেছো টা কী? সারাটা শরীরে কামড়ের দাগে ভরিয়ে দিয়েছ।
দুহাতে বুকের মধ্যে আবার ঝাপটে ধরে শিমুল, আরও আরও চিহ্ন এঁকে দেবো তোমার শরীরজুড়ে। তোমার সোনার অঙ্গের প্রতিটি বিন্দুতে আমি আমার কামনার দাগ রেখে দেবো। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তোলে মিলির দুটি গাল আর কপাল ওষ্ঠো আর কপাল।
মিলি নাচছে ছাদের ওপর। দেহের অপূর্ব ছন্দ ছড়িয়ে পড়ছে নৃত্যর তালে।
শিমুল আহসান খুব সাদাসিদে টাইপের মানুষ। হালকা পাতলা শরীর, রঙ অনেকটা তামাটে। মাথায় প্রচুর চুল। আর মিলি মাহজাবীন লাল সুন্দরের মেয়ে। চোখ দুটো মায়াময়, অতল, কালো। শরীর ছিপছিপে বর্ষার লম্বা নৌকা। হাসলে দুই গালে টোল পড়ে। এই টোলে মুগ্ধ হয়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে হাতে একটা টকটকে লাল গোলাম নিয়ে হাঁটুমুড়ে বলেছিলে, আমাকে বিয়ে করবে?
প্ল্যানটা ছিল মৌরি আর রাতুলের। সবাই সাংবাদিকতায় পড়ে। কিন্তু শিমুল পড়ে সমাজবিজ্ঞানে। মেস-সূত্রে বন্ধুত্ব রাতুল আরহামের সঙ্গে। প্রায়ই রাতুলের ডিপার্টমেন্টে আসতো শিমুল আহসান। আগেই মৌরির সঙ্গে লেপ্টে ছিল রাতুল। মৌরি আর রাতুলের কমন বন্ধু মিলি মাহজাবীন। মিলির বাবা সরকারের বড় কর্মকর্তা। মিলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর থেকে শিমুল যে দিকে তাকায়, কেবল মিলিকে দেখতেই পায়। ঝিগাতলার মেসে রাতে দিনে শিমুল কেবলই বলে, মিলিকে আমার চাই।
রাতুল বলে, চাই বললে তো হবে না, মিলিকে জানাতে হবে তোর ভালোলাগাটা।
-আমি বলতে পারবো না।
-কেন?
-ওর সামনে গেলেই ভয় লাগে। দেখোস না, আমি খালি চেয়ে থাকি ওর দিকে?
হাসে রাতুল, আরে ব্যাটা রাম খচ্চর, প্রেম জেগে উঠলে বলতে হবে তো? না বললে মেয়েটি জানবে কী করে?
-তুই আমার হয়ে বলে দে।
-এই গাধা তুই না, টেবিল টেনিসের বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন? বুকের মধ্যে এক তিল সাহস নেই, টেবিল টেনিস খেলিস কেরম করে?
-রাতুল! তুই বুঝতে পারছিস না কেন? টেবিল টেনিস খেলা আর মিলিকে প্রেম নিবেদন করা এক হলো? মিলি যদি আমাকে অস্বীকার করে?
যদি প্রশ্ন করে তোর বাপের কী আছে যে আমাকে প্রেম নিবেদন করতে এসেছিস? জানিস আমার বাবা সবকারের জয়েন্ট সেক্রেটারি, তখন তো আমার মরা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না।
-তোরে কী করা উচিত, জানিস? বোকার মতো তাকিয়ে থাকে শিমুল।
-পৌষের কনকনে শীতের রাতে কালা বরফ ঠাণ্ডা পানিতে চুবানো উচিত শালা ইতর প্রাণী। তুই তো কাপুরুষের চেয়েও…
রাতুলের বকা খেয়ে মৌন মুখে দাঁড়িয়ে থাকে বাড়িঅলার দোতলা বাড়ির ছাদে। আকাশে দ্বাদশীর চাঁদ। ফকফকা জোছনা। পাশের বাড়ির দোতলা ছাদে তাকিয়ে অবাক শিমুল, মিলি না? মিলি নাচছে ছাদের ওপর। দেহের অপূর্ব ছন্দ ছড়িয়ে পড়ছে নৃত্যর তালে।
-রাতুল?
-কী?
-দেখ তো, ওই বাড়ির ছাদে মিলি নাচছে না?
ছাদের কার্নিশ থেকে কাছে আসে শিমুলের, কোথায় মিলি?
রাতুলের দিকে তাকিয়ে আবার তাকায় পাশের বাড়ির ছাদে, বিরান শূন্যতা। কেউ নেই। শিমুলের দিকে তাকিয়ে মায়া লাগে রাতুলের। নিজেও কত কাঠখড় পুড়িয়ে মৌরিকে জয় করেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত রাখে শিমুলের কাঁধে, বুঝতে পেরেছি।
-কী?
-তোকে আর ফেরানো যাবে না। চল নিচে, ভীষণ খিদে পেয়েছে। আর মৌরির সঙ্গে কাল কথা বলবো। মৌরি নিশ্চয়ই একটা বুদ্ধি বের করতে পারবে।
পরের দিন সব শুনে মৌরি বললো, এটা কোনো ব্যাপার না।
-মানে? শিমুল আর রাতুল একসঙ্গে বলে।
-পানির মতো তরল ঘটনা। মিলি লাল গোলাপ খুব ভালোবাসে। তুই একটা লাল গোলাপ দিয়ে পায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়বি মিলির…
-মানে? চমকে ওঠে শিমুল আহসান। প্রেম নিবেদনের জন্য কেউ পায়ের ওপর…
হাসে রাতুল, আরে গাধা, পায়ের ওপর বললেই তুই মিলির পায়ের ওপর পড়বি নাকি? এই দ্যাখ, হাতে লাল গোলাপটা নিয়ে মিলির সামনে হাটুমুড়ে বসবি আর গোলাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বলবি, আই লাভ ইউ! ব্যস…
-কোথায় বলবো?
-করিডোরে।
-অসম্ভব!
-কিয়ের অসম্ভব?
-আমি হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর সামনে এটা করতে পারবো না। আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
-এইটুকু করতে পারবে না? আবার মিলিকে ছাদের দোতলায় চাঁদের আলোয় নৃত্য করতে দেখো।
-মিলি নাচ দেখালো কোথায়? অবাক প্রশ্ন মৌরির।
রাতের ঘটনা সব বললো রাতুল। শুনে হাসে মৌরি। অনুভব করে মিলির প্রতি শিমুলের অনুরাগ। ওদের গল্পের মধ্যেই চলে আসে মিলি।
কোথায় থাকিস তোরা? অনুযোগ মিলি মাহজাবীনের কণ্ঠে। তাকায় শিমুলের দিকে, ভালো আছেন আপনি?
মিলিকে দেখেই শিমুলের মনে হচ্ছে, ও শিমুল তুলার মতো হালকা হয়ে গেছে। মেয়েটি সব জেনেশুনে এসেছে নাকি? জানলো কিভাবে? করুণ চোখে তাকায় রাতুলের দিকে। রাতুল বললো না তো? ওর গোটা শরীর অবশ হয়ে আসছে। মিলির জিজ্ঞাসায় কোনোভাবে বলে, ভালো।
মৌরি হাসছে মিটি মিটি। রাতুল অন্য দিকে তাকিয়ে কান খোঁচার ভান করছে। গোটা পরিস্থিতিটা অন্যরকম মনে হচ্ছে মিলির। তাকায় মৌরির দিকে, অ্যাই মৌরি তুই হাসছিস কেন?
-বগা ফান্দে পড়িয়া কেমনে কান্দে, এইটা দেখিয়া হাসিতেছি।
-মানে কী?
-মানে তো খুব সহজ। ধর, একটা বক আর একটা বগার প্রেমে পড়ে হাবুডুব খাচ্ছে। কিন্তু বক বলতে পারছে না, বগা আমি তোমারে ভালোবাসি। প্রেমের এই টালমাটাল সময়ে হঠাৎ সেই বগা দেখলো, বকটা শিকারির ফাঁদে আটকে পড়ে ছটফট করতেছে।
-ধুর, তোর গল্পের আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তাকায় শিমুলের দিকে, কী ব্যাপার শিমুল? আজকে আপনাকে অন্যরকম লাগছে। কী হয়েছে আপনার?
-কই, কিছুই না তো। আমি আমি…আমি ঠিক আছি। হাত বাড়ায় ওর দিকে, হাত ধরে দেখেন। আমার শরীরে কোনো জ্বর নেই।
হতবাক মিলি, কী হয়েছে আপনার? আপনার শরীরে জ্বর আছে, আমি তো বলিনি।
-না, আপনি না বললেন…অন্যরকম লাগছে আমাকে?
-সে জন্য আমাকে আপনার শরীরের জ্বর দেখতে হবে?
রাতুল এসে সামনে দাঁড়ায়, মিলি তুই এত সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন? শিমুলের একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে গত রাত থেকে।
রাতুল আহসানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মিলি, গতরাত থেকে সমস্যা?
মাথা নাড়ায় রাতুল, শোন। মানুষের জীবনে হঠাৎ এমন সব ঘটনা ঘটে, যার সময়ে ব্যাখ্যা থাকে না। ঠিক সেই রকম একটা ঘটনা ঘটেছে গতরাতে আমাদের শিমুলের জীবন। তুই ঘটনাটা শুনবি?
শিমুল আহসানের ইচ্ছে হচ্ছে এখান থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়, দূরে কোথাও। কিন্তু শরীরটা এমন হালকা লাগছে যে, চাইলেও উড়তে দৌড়াতে পারছে না। মনে মনে রাতুলের মাথা চিবায়, ইতর প্রাণী। আমাকে বিপদে ফেলে মজা দেখছে। কেন যে, ওদের বলতে গেলাম!
বিস্ফারিত দৃষ্টিতে মিলির পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে শিমুল। আর ওর দিকে তাকিয়ে দেখেছে রাতুল। রাতুলের কাঁধে ভর দিয়ে তাকিয়ে মৌরি।
ওর ভাবনার মধ্যেই রাতুল বলে, শোন মিলি আমাদের শিমুল খুব চকচকে মারাত্মক সুন্দরী এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে।
-পড়তেই পারে। খুব স্বাভাবিকভাবে বলে মিলি মাহজাবীন, তো সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা হচ্ছে সেই মেয়েটিকে সাহস করে বলতে পারছে না শিমুল আহসান। অথচ মেয়েটি আশেপাশেই থাকে, ঘোরাঘুরি করে।
শিমুলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসে মিলি, আমাকে মেয়েটির ঠিকানা দিন।
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে শিমুলের, কার কার ঠিকানা দেবো?
-আপনি যে মেয়েটিকে ভালোবাসেন, সেই মেয়েটির ঠিকানা দিন। আমি মেয়েটিকে আপনার হয়ে বলবো। আচ্ছা, বলুনতো মেয়েটি কেমন? সুন্দরী খুব?
-হ্যাঁ রে, মেয়েটি ভীষণ সুন্দরী, মিলির পাশে দাঁড়িয়ে বলে মৌরি। অনেকটা তোরই মতো দেখতে, হালকা পাতলা গড়নের। তোর মতোই গভীর কালো চুল। লম্বা? তাকায় রাতুলের দিকে, রাতুল লম্বা তো এই মিলির মতোই না?
গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ায় রাতুল, একদম। শিমুলের প্রেমিকার সঙ্গে তোর অবিকল মিল আছে রে।
-তোদের তিন জনের মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে, আমি যাই। এখনই গাড়ি আসবে।
সামনে পা বাড়ালে হাত ধরে রাতুল, যাবার আগে আমার বন্ধুর অবস্থটা জেনে যা। গতরাতে আমি আর ও আমাদের ঝিগাতলার মেসর ছাদে দাঁড়িয়ে ওর প্রেমেরই ঘটনা নিয়ে আলাপ করছিলাম। হঠাৎ ও পাশের বাড়ির ছাদের দিকে তাকিয়ে বলে, রাতুল দেখ তো সেই মেয়েটা না?
আমি বলি কোন মেয়ে?
-যাকে আমি ভালোবাসি। দেখ, মেয়েটা পেখম তুলে নাচছে, কী অপূর্ব নাচ? এমন নাচ জীবনে দেখিনি। অবস্থাটা বুঝেছিস আমার বন্ধুর? একেবারে বেসামাল।
-শোন, প্রেমে পড়লে ওই রকমই হয় রে।
-তোর অভিজ্ঞতা আছে না কি? প্রশ্ন করে মৌরি।
-ধ্যাত! যেতে যেতে জবাব দেয় মিলি মাহজাবীন, আমার অত টাইম নাই। যাই রে। আমি আজ দেলোয়ার স্যারের ক্লাসটা করবো না। বাসায় মেহমান আসবে, আব্বা গাড়ি পাঠিয়েছে অফিস থেকে। বাই। চলে যায় মিলি মাহজাবীন। ওর চলার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে শিমুল আহসান, দেখতে পাচ্ছে মৃদুতালে পা ফেলে ফেলে চলে যাচ্ছে মিলি, কেবলই যাচ্ছে, যাচ্ছে কিন্তু যাওয়া আর শেষ হচ্ছে না। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে মিলির পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে শিমুল। আর ওর দিকে তাকিয়ে দেখেছে রাতুল। রাতুলের কাঁধে ভর দিয়ে তাকিয়ে মৌরি।
চলবে…