লালনের তত্ত্বসঙ্গীত আমাদের হৃদয়ের গান যা সবার কাছে বাউল সঙ্গীত নামে সুপরিচিত। তাঁর এ গানের অন্তরমূলে রয়েছে ভাবের চেতনা আর বোধের শাণিত জীবনের দ্বিধাহীন মোহনীয় শক্তি যা আমাদের ভাবনায় রেখাপাত করে সহজেই সুপ্ত হৃদয়কে করে তুলতে পারে আধ্যাত্মবাদের মরমীয় বোধ। মরমি ধারা বাংলা সাহিত্যের এক নতুন সংযোজন, যার আদি উদ্ভব মূলত চর্যাপদ থেকেই বলে মনে করা হয়। পরবর্তীকালে তা বৈঞ্চব পদাবলী শাক্ত পদাবলী এবং সবশেষে বাউল পদাবলী যা ভাবসঙ্গীতের পূর্ণ বিকাশ ও পরিণতি। মরমিবাদ ইংরেজি মিস্টিসিজম থেকে বাংলায় এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। মরমিবাদ বস্তুর বিচার বিশ্লেষণ করে না, এ এক বিশেষ ধরনের মানবীয় অনুভূতি, মহিমাময় বোধশক্তি বিষয়বস্তু থেকে মুক্তির প্রয়াস এবং সবোর্চ্চ মোক্ষলাভের সাধনা। জগৎ এবং জীবনকে ঘিরে মানবমনে যত প্রকার মৌলিক প্রশ্নের উদয় হতে পারে লালনের তত্ত্বসঙ্গীতে আমরা তা উত্থাপিত হতে দেখি। মানুষের জীবনযাত্রা, বড় হওয়া, জগৎ এবং মানুষের সম্পর্ক এমনকি বিশ্ব জগতের সৃষ্টির রহস্যময় আলো-আঁধারির বিষয় নিয়েও তিনি একজন দার্শনিকের মতো প্রশ্নের উপস্থাপন করতে দ্বিধা করেননি। এজন্যই আমরা লালন সাঁইজিকে একজন ভাববাদী দার্শনিক হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকি। লালনের এ তত্ত্বসঙ্গীতের গুঢ়ার্থ সহজ কাব্যরস এবং অলঙ্কারাদির সহজাভ প্রকাশ আমাদের কাছে সহজবোধ্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। যা আমাদের সহজেই হৃদয়মূলে আঘাত করে এবং আমাদের চেতনাবোধের জাগ্রত ঘটায়। লালনের মানস ও চরিত্রের মধ্যে মিশেল ঘটেছে আলো-আঁধারি। লালনের জীবন ছিল নানা সংগ্রামমুখী। কিন্তু এ সংগ্রামমুখী জীবনের অন্তরালে ছিল এক ভাববাদী প্রাণপুরুষের বোধ যা তাকে তাঁর নিজস্ব এবং একান্ত মানস নিমার্ণে সহায়তার ভূমিকা আরোপণ করেছে, যা তাকে পরবর্তীকালে জানার নেশা তাকে দুর্গম নেশায় পরিণত করেছে। অচেনাকে চেনা আর অজানাকে জানার জন্য এই ঘোর তাঁর কখনো কাটে নি। তিনি তাঁর সঙ্গীতে অজানাকে জানা, মানবতাবাদ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ সংস্কার, ধর্ম বর্ণ গোত্র এবং ভেদাভেদ তুলে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা তিনি লালন করেছেন হৃদয়ের গহীন কোণে যা তাকে জীবন উপলব্ধির মহীমায় একজন আধ্যাত্মবাদী এবং জীবনবাদী দার্শনিক হতে সাহায্য করেছে এবং তার মনের মধ্যে জাগ্রত করেছে নির্লিপ্ত অন্বেষণী তৃষ্ণা। তিনি আত্মজিজ্ঞাসার বলেই খোঁজ করেছেন সেই সত্তাকে যে তাকে অনুভূতিশীল আত্মজিজ্ঞাসু পরমাত্মার সান্নিধ্যের উপায় বাতলে দেয়। এ যেন লালনের প্রাণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সেই উদ্দেশ্য সঞ্জীবনী ভেবেই রচনা করলেন—
কিরূপ সাধনে বলে অধর ধরা যায়—
নিগূঢ় সন্ধান জেনে শুনে সাধন করতে হয়।
লালনের তত্ত্বসঙ্গীতের বাইরে রয়েছে লালনের এক আলো-আঁধারি কুহকময় জীবন যে কুহক আমাদের টেনে নিয়ে যায় জীবনবাদী লালনের জীবন সর্ম্পকে নানা তথ্যের সঠিক উৎঘাটনে। লালন গানে যেন বলতে চায় স্রষ্টার প্রকৃতির বিলীন অনিবার্য কিন্তু একে নানাব্যঞ্জনায় নানাভাবে ভোলার আভাস দেন কিন্তু তাকে ধরা যাবে না কোনোভাবেই। অনুরূপ লালন সাঁইজির জীবনেও রয়েছে আলো আঁধারির নানা ঘটনা যা কিংবদন্তীর জন্ম দেয়। তবু এ ক্ষুদ্র প্রয়াস মনের অতৃপ্ত ইচ্ছা থেকেই আজ এই যৎ সামান্য অন্বেষণ। লালন ফকিরকে আমরা সবাই লালন শাহ হিসেবে চিনে থাকি। কিন্তু তাঁর জীবন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উঠলেই আমরা তাঁর বিষয়ে জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে ওঠি। তাঁর অপার সৃষ্টি তত্ত্বগান যা আমাদের প্রতিনিয়ত একটা ঘোরের মধ্যে আবিষ্ট করে রাখে। জাগ্রত করে তোলে আমাদের চেতনার জগৎ। তাঁর সঙ্গীতে রয়েছে মানবমুক্তির এক অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার শাশ্বত পথ। যে কারণে লালনের পুরাতন কথা ও বাণী ক্রমাগত আমাদের উপলব্ধিজাত ও অনুভূতিপ্রবণ মনকে প্রশান্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লালন যতই দিনকে দিন আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক না কেন ততই আমাদের মনমন্দিরে একটি প্রশ্নের উদ্বেগ কৌতূহলী মনকে বেসামাল করে তুলছে—কে এই লালন শাহ? কোথায় তাঁর জন্ম?
লালন সাঁইজির জীবনলিপি নিয়ে অনেক আলোচনা বা সমালোচনা হয়েছে কিন্তু আমরা এ থেকে কতটুকুই বা সঠিক তথ্য নিরূপণ করতে পারছি?। লালনের বিচিত্র গানের মর্মবাণী আমাদের চিত্তমূলে আঘাত করে এবং বেদনার্ত হৃদয়ে সঞ্চালন ঘটায় প্রাণরসের। যা আমাদের চিরঞ্জীব মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তিনি একজন পৃথিবী বিখ্যাত কবির ভূমিকায় নানাবিধ চিত্রকল্পের ব্যবহারে আমাদের বিমোহিত এবং নিজের স্বরূপ উন্মোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে মনে করি। উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা বা অলঙ্কারের ব্যবহারও তাঁর সঙ্গীত বা কবিতায় লক্ষণীয়:
লাগল ধূম প্রেমের থানাতে
মন চোর পড়েছে ধরা রসিকের হাতে।
কিন্তু এই মহান ভাববাদী কবির জীবনলিপির সঠিক ইতিহাস নানা কাহিনি নির্ভর রহস্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি এর সঠিক স্বরূপ উন্মোচিত হবে। বিভিন্ন সময় জাত পাত বা বর্ণের প্রশ্ন তুলে মানুষ লালনকে বিব্রত পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধ্য করেছেন কিন্তু সাঁইজি এ প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব দেননি। তিনি বলেছেন: ‘আমার আমি না জানি সন্ধান’। তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন হৃদয়ধ্বংসী—এই কালকেউটেকে! কারণ তিনি তার সংগ্রামী জীবনে জেনে গেছেন জাতের সর্বগ্রাসী-থাবার ধ্বংসাত্মক রূপ। এজন্যই জাতিত্বের গণ্ডির মধ্যে তিনি নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চাননি। কারণ তিনি সহজেই অনুমান করে নিয়েছিলেন জাতের সীমাবদ্ধরূপ আর সর্বময় ধ্বংসের কূপমণ্ডুপচিহ্ন স্মারক। তাই জাতধর্মের বিরুদ্ধচারণ করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন:
জগৎ বেড়ে জেতের কথা
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলায়
লালন সে জেতের ফাতা
বিকিয়েছে সাধ বাজারে।
অথবা,
সবলাকে কয় লালন কি জাত সংসারে
লালন কয় জেতের কি রূপ দেখলাম না এ নজরে ॥
আজ লালন মৃত্যুর দীর্ঘদিন পরে এসেও এই ভাববাদী দার্শনিক কবির রহস্যবৃত জীবন তথ্য উৎঘাটন করার প্রয়াস পাই। কিন্তু এত দীর্ঘসময় অতিক্রমের পরে তাঁর সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিরূপণ করা সত্যিই কঠিন এবং দুঃসাধ্যও বটে। তবু কঠিনেরে আমি বাসি ভালো। অনেক গবেষক তাদের গবেষণার অভিসন্দর্ভে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, লালন শাহ যশোর বর্তমান ঝিনাইদহের হরিশপুরের সন্তান। যা কিনা আজ সন্দেহতীতভাবে প্রমাণিত। এ সম্পর্কে সু-সাহিত্যিক গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ আবু তালিব বলেন:
‘যশোর জেলার (বর্তমান ঝিনাইদহ) হরিণাকুণ্ডু থানার হরিশপুর গ্রামে আলম, কলম ও লালন এই তিন ভ্রাতা বাস করিতেন। ইহাদের পিতার নাম দরিবুল্লাহ। লালনই কনিষ্ঠ এবং শৈশবে পিতৃহীন হন এবং ভ্রাতা ও ভ্রাতৃবধূ কর্তৃক পালিত হন। ইহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আলম কলিকাতায় শ্রমিকের কার্য করিতেন। মেজ ভ্রাতা কলম কৃষি কার্যাদি করিয়া সংসার যাত্রা নির্বাহ করিতেন। লালন বাল্যকাল হইতেই ভ্রাতার সাহায্যের জন্য গো চারণ ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ইনি(লালন) গীতবাদ্য ভালবাসিতেন। তৎকালে এই হরিশপুর গ্রামে সকল শ্রেণির হিন্দু মুসলমানে কলমুখরিত এবং সমৃদ্ধ ছিল। এই হরিশপুরে ৯/১০ খানা দুর্গা প্রতিমা প্রত্যেক বছর শরৎকালে পূজিতা হইত। দূর দেশাগত-কালোয়াত গায়ক আগমন, বৈঠকী, আমোদ-প্রমোদ প্রায়ই লাগিয়া থাকিত। মুসলমানের নেতৃত্বে ‘ইমাম যাত্রা’র দল পরিচালিত হইত। এসব দেখে দেখে লালন শৈশব থেকে এত বেশী অনুরক্ত হইয়াছিলেন যে সংসারের কর্তব্য আহার নিদ্রা ছাড়িয়া দিনের পর দিন কাটিয়া দিয়াছেন।’
আবুল আহসান চৌধুরী ‘লালনশাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করলেন, ‘‘লালনের জীবনের ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে কোনো সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায় না বলে গবেষকদের অনেক ক্ষেত্রেই জনশ্র“তি কিংবা অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়। লালন শাহ ১৭৭৪ সালে বর্তমান কুষ্টিয়া (তৎকালীন নদীয়া) জেলার অধীন কুমার খালী উপজেলায় চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবতী ভাঁড়ারা গ্রামে (চাপড়া গ্রাম সংলগ্ন) জন্মগ্রহণ করেন। সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারের সন্তান লালনের পিতা মাতার নাম যথাক্রমে ‘মাধবকর’ ও ‘পদ্মাবতী’। জানা যায় লালন পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। শৈশবেই তিনি পিতৃহীন হন।’’
আবুল আহসান চৌধুরী লালনকে পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান হিসেবে উল্লেখ করলেও ম. মনিরউজ্জামান তার ‘সাধক কবি লালন কালে উত্তরকালে’ গ্রন্থে লালনের যে বংশ তালিকা দিয়েছেন, সেখানে তিনি দেখিয়েছেন লালনেরা ছিলেন দুই ভাই। ললিত নারায়ণ কর (লালন) এবং রামকৃঞ্চ কর। আবার মুক্তধারা প্রকাশিত ‘বাংলা বিশ্বকোষ’-এ লালনের জন্ম পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এভাবে—লালন শাহ ১৭৭৪-১৮৯৪ মতান্তর ১৭৭২-১৮৮৮ অবিভক্ত বাঙ্গলায় ক্ষণজন্মা কবি ও সুফি মতান্তরে বাউলপন্থী বিখ্যাত সাধক ফকির। লালনশাহ সাধারণ্যে লালন সাঁই বা সাঁইজি নামে সুপরিচিত। লালন শাহের জন্ম তারিখ জন্মস্থান ও বাল্যজীবন সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী মতামতে প্রচারিত রয়েছে। কতিপয় পণ্ডিত ব্যক্তির মতে লালন শাহ হিন্দু (কায়স্থ) সন্তান, পরে মুসলমান। অধিকাংশ গবেষকদের মতে লালন মুসলিম সন্তান এবং যশোর জিলার ঝিনাইদহ মহকুমার অন্তর্গত হরিশপুর গ্রামে এক কৃষককের পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম দরীবুল্লাহ দেওয়ান ও মাতার নাম আমিনা খাতুন। পিতার তিন (মতান্তর চার) পুত্রের মধ্যে লালন ছিলেন তৃতীয়। এসব অভিমত থেকে প্রমাণিত হয় লালনের পিতার একের অধিক সন্তান ছিল কিন্তু আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত লালনের জীবনী গ্রন্থ ‘লালন শাহ’ গ্রন্থে লালন পিতা মাতার একমাত্র সন্তান হিসেবে উল্লেখ করেছেন বটে কিন্তু কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। আবার লালন শাহের গুরু সিরাজ সাঁইয়ের পরিচয় নিয়েও রয়েছে নানা বাক-বিতণ্ডা। বিভিন্ন জন ভিন্ন-ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এ সম্পর্কে মৌলবী আব্দুল ওয়ালী (১৮৫৫-১৯২৬) একটি ইংরেজি প্রবন্ধ যেটি মুদ্রিত হয় ১৯০০ সালে সেখানে তিনি বলেন: ‘যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার (বর্তমান ঝিনাইদহ জেলা) হরিশপুর গ্রামে সিরাজ সাঁই জন্মগ্রহণ করেন।’ এ মতের সমর্থন করেছেন আবু তালিব, খোন্দকার রিয়াজুল হক ও এস এম লুৎফর রহমান। মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন প্রথমে কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুর এবং পরবর্তীকালে কুমারখালীতে সিরাজ সাঁইয়ের জন্ম বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন: আমার বাড়ি ওই হরিনারায়নপুর গ্রামে। সেখানে লালন গুরু সিরাজ সাঁই বলিয়া পালকী বাহক ছিল, তাহা কোনো দিন শুনি নাই।’ তবে উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ভোলানাথের বরাত দিয়ে বলেন: ‘ফরিদপুর জেলায় কালুখালী স্টেশনের সন্নিকটে কোনো গ্রামে তাঁর নিবাস ছিল।’ আবার বসন্তকুমার পাল সিরাজ সাঁইয়ের জন্মস্থানের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সিরাজের বাড়ি যশোর জেলার ফুলবাড়ী গ্রামে।’ অন্যপক্ষে সরদার জয়েনউদ্দীন সিরাজ সাঁই পাবনা জেলার অধিবাসী বলে দাবি তুলেছেন। তবে বাংলাদেশের প্রথম লালন গবেষক আনোয়ারুল করীমের মতে, ‘তিনি (সিরাজ সাঁই) জন্মগ্রহণ করেন যশোর জেলার (বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার) কুলবাড়িয়া হরিশপুর।’
তাহলে আমরা উপরিউক্ত গবেষকদের অভিমত থেকে এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি—লালন গুরু সিরাজ সাঁইয়ের জন্মস্থান যশোর জেলার (বর্তমান ঝিনাইদহ জেলা) হরিশপুর গ্রামে এ ব্যাপারে আর কারও সন্দেহ থাকতে পারে না। কারণ ওয়ালী সাহেবের (১৮৫৫-১৯২৬) ইংরেজি প্রবন্ধ যেটিতেই সর্বপ্রথম লালনের জন্মস্থান বর্ণিত হয় এর আগে ‘হিতকরী’ বা অন্য কোনো রচনাতে লালনের জন্মস্থান সম্পর্কিত কোনো তত্ত্বই প্রকাশিত হয়নি। ম. মনিরুজ্জামান লালনের আর এক সহোদর আবিষ্কার করে লালনের বংশ তালিকা প্রণয়ন করেন। সেই সূত্রের ভিত্তিতে ড. তৃপি ব্রহ্ম লালনের কথিত ভাইয়ে অধঃস্তন সন্তানদের কাছে তথ্য সংগ্রহে যান। কুমারেশ কর নামক ওই বংশের সন্তান লালন বলে কারও নাম শোনেননি বলে জানান। এ তথ্য প্রমাণিত হলে লালন ভাড়ারার সন্তান নন বলে বিবেচিত হবে।
চলবে…