এক.
মেজাজ খারাপ ভুতং গৌতুর। সকাল বেলায় কোথাকার কোন এক বেপাড়ার ছেলে এসে অহেতুক ঝগড়া করে গেছে ওর সঙ্গে। ও কিছুই করেনি। একটা ঝোপের আড়ালে বসে আকাশ আর পাতাল নিয়ে ভাবছিল। আকাশটা কেন অত উঁচুতে আর পাতালটা মাটির ঠিক কতটা নিচে, বোঝার চেষ্টা করছিল। ওদের ইস্কুলে এখনো এসব পড়ায়নি। কখন পড়াবে কে জানে? একবার টিচারের কাছে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু টিচার মুখ সরু করে আর চোখদুটো আণ্ডা বানিয়ে হাতের বেতটা সপাং করে ওর পিঠে ঝেড়ে দিয়ে বলেছিল, ‘আকাশ আর পাতালে আমাদের কোনো কাজ নেই। বরং গাছের কথা বল, ঝোপের কথা বল। কোন গাছে চড়তে হয়, কোন ঝোপে লুকোতে হয়, এসব প্রশ্ন কর। পণ্ডিতি করবি তো…’ বেতটাকে আবার নাচাতে নাচাতে বলেছে, ‘এটা ভাঙবো তোর পিঠের ওপর।’
এক বাড়িতেই খবর হয়ে গিয়েছিল গৌতুর। মনে হয়েছিল পিঠের হাড়গুলো বুঝি ভেঙে চুরে গেছে। চিকন বেতের বাড়িতে হাড় ভাঙবে না সে জানে। তাই ভয় পায়নি। কিন্তু ব্যথা পেয়েছিল খুব। শরীরে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে মনেও কষ্ট পেয়েছিল। ক্লাসের অন্য ছেলে-মেয়েরাও হেসে গড়িয়ে পড়েছিল একজন আরেকজনের গায়ে।
তা গৌতু কিন্তু ছাত্র হিসেবে হ্যাবলা-ভ্যাবলা নয়। প্রতি বছর ফার্স্ট হয়। ফার্স্টবয়দের আলাদা একটা ইজ্জত থাকে। কিন্তু গৌতুর ধারণা, তাকে কেউ ইজ্জত করে না। ঠিকমতো পাত্তাও দেয় না। অথচ সেকেন্ড বয় থিবং ভৌতুকে নিয়ে সবার কী আহ্লাদ। থিবং ভৌতু ভালো কথা বলতে পারে, খুব হাসাতেও পারে। ক্লাসে সে একটা না একটা দুষ্টুমি নিয়ে মেতে আছে। অনেক মজার মজার কাণ্ড করে। ওর কাণ্ডকারখানা দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে অন্য ছেলেরা। মেয়েরাও। কিন্তু গৌতু কিছু বলতে গেলে সবাই এমন ভাব করে, যেন তারা কিছুই শুনতে পায়নি। কিংবা কষ্ট করে শুনতে পেলেও কিছুই বুঝতে পারেনি।
এর কারণও অবশ্য আছে। ভৌতুর মতো করে গৌতু চটপট কথা বলতে পারে না। বলতে গেলে আটকে যায়। মুখ দিয়ে কথা বেরোতে চায় না। ওর মনে হয় ওর জিভে আঠা আছে। শব্দগুলো আঠায় আটকে যায়। টিচার বলতে গেলে ‘টি-টি’ করতে থাকে, ‘চার’টা আর আসে না। তোতলা কিনা সে।
তবে মনে মনে কিন্তু বেশ কথা বলতে পারে গৌতু। বেশ গুছিয়ে এবং একটুও তো তো না করে। ধরো, তুমি তাকে আকাশ নিয়ে প্রশ্ন করলে। সে তোমাকে বলে দেবে, ‘আকাশ হলো মাটি থেকে অনেক ওপরে একটা ছাদ। পুরো দুনিয়াটা একটা ঘর। এই ঘরে ভূতেরা আছে, মানুষেরা আছে, নানারকম গাছপালা আর জীবজন্তু আছে।’
গৌতু আবার একটু কবিতা-টবিতাও লেখে। তার নিজের লেখা কিছু কবিতা আছে। একটা খাতায় সেগুলো টুকে রেখেছে। ব্যাপারটা খুব গোপন। কেউ জানে না এখনো। গৌতু ঠিক করে রেখেছে, আরেকটু বড় হলে, মানে টিচাররা যখন কথায় কথায় বেত নিয়ে তেড়ে আসবে না, তখনই সবাইকে একটু একটু করে জানান দেবে। কিন্তু তাতেও সমস্যা আছে। ভূতসমাজে কবিতা লেখা ভূতদের কেউ পাত্তা দেয় না। কবিতা লিখিয়ে ভূতকে তারা বলে ‘অদ্ভুত’।
বুড়ো ভূতদের ঝগড়াঝাটি, জোয়ানমদ্দ ভূতদের হাসি, ঠাট্টা-মশকরা, গান-গপ্পো আর শিশু ভূতদের এই হাসি-এই কান্না, চেঁচামেচি।
গৌতু অনেক কবিতা লিখেছে। একটা কবিতা ওর খুব পছন্দেরও। সেটা সে একা থাকলে মাঝে মাঝে নিজে নিজেই আওড়ায়। কবিতাটা হলো :
আমাদের রাত হলো তোমাদের দিন
তোমাদের দিন হলো আমাদের রাত
তোমাদের হাত হলো আমাদের ঠ্যাং
আমাদের ঠ্যাং হলো তোমাদের হাত।
আজ সকালেও কবিতাটা আবৃত্তি করছিল সে, খুব আবেগ টাবেগ দিয়ে আর একটু গলা চড়িয়ে। চোখ দুটো বন্ধ ছিল। তাই বেপাড়ার ছেলেটা কখন যে ওর কাছে চলে এসেছিল, টের পায়নি। আচমকা বিচ্ছিরি গলায় হাসির শব্দ শুনে চোখ মেলল গৌতু। বিশ্রী টিংটিংয়ে চেহারার ছেলেটার মুখে পিচ্ছিল দেঁতো হাসি। ছেলেটাকে চেনে না সে। তাই একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘হাসছিস কেন?’
‘একা একা কী বক বক করছিস? কী বলছিস এসব হাত-পা-ঠ্যাঙ…?’
‘কিছু বলছি না। কবিতা পড়ছি। আমার লেখা কবিতা।’ বলতে গিয়ে একটু গর্বও হলো গৌতুর।
‘কবিতা!’ বিশ্রীভাবে হাসতে লাগল ছেলেটা। ‘তোর লেখা কবিতা! আরে, ভূতেরা আবার কবিতা লেখে নাকি? কবিতা লেখে মানুষেরা। তুই কি মানুষ?’
অপমানজনক একটা প্রশ্ন। একটা ভূতকে আরেকটা ভূত কখনো এরকম কথা বলে না। যখন বলে, তখন বুঝতে হবে ব্যাপার খুব গুরুতর। যাকে বলা হয়, ধরে নিতে হবে সে নিশ্চয় মারাত্মক কোনো অন্যায় করেছে। তাই ভূতসমাজে প্রচলিত সবচেয়ে খারাপ গালিটাই তাকে দেয়া হয়েছে। গৌতুর বিশ্বাস, সে কবিতা লিখে এমন মারাত্মক কোনো অপরাধ করেনি যে, তাকে এমন ‘মানুষ’ গালাগাল শুনতে হবে।
ভীষণ খারাপ লাগল ওর। ইচ্ছে হলো, সেও অমন একটা খারাপ গালি দেয় ছেলেটাকে। কিন্তু কী বললে সেটা আরো খারাপ গালি হবে, সেটা বুঝতে পারল না। তাছাড়া… যারা কবিতা লেখে, তারা তো বেপাড়ার ছেলেদের মতো গালাগাল করতে পারে না।
চুপ করে রইল সে। ভাবল, সে কথা না বললে ছেলেটাও হয়তো কথা বলবে না। একা একা কি কথা বলা যায়?
কিন্তু ছেলেটা ত্যাঁদড়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গৌতুর দিকে চেয়ে ফ্যাক ফ্যাক করে হাসতে লাগল। ওর হাসি দেখে গায়ে জ্বালা ধরে গেল গৌতুর। খেঁকিয়ে উঠল, ‘হা-হাসছিস কেন শু-শুধু শুধু?’
‘তুই তোতলা। কথা বলতে পারিস না। তাই হাসছি।’
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল গৌতুর। রেগে গেলে ওর তোতলামি একটু বেড়ে যায়। ‘আমি তো-তোতলা হলে তো-তোর সমস্যা কী? কো-কোন গাছের ভূত তুই?’
‘ইয়ে…বট গাছের। তুই?’
জবাব দিলো না গৌতু। অশিক্ষিত লেবার শ্রেণীর ছেলেটা। ভদ্রভূতের ছেলে-মেয়েরা এভাবে কথা বলে না। আগেই বোঝা উচিত ছিল। গৌতুদের এলাকায় তিন-চারটে বট গাছ। প্রতিটি বট গাছে গিজ গিজ করছে মেলা ভূত। ঘুমের সময়টুকু বাদ দিলে সারাক্ষণই লেগে আছে গোলমাল, হৈ চৈ। বুড়ো ভূতদের ঝগড়াঝাটি, জোয়ানমদ্দ ভূতদের হাসি, ঠাট্টা-মশকরা, গান-গপ্পো আর শিশু ভূতদের এই হাসি-এই কান্না, চেঁচামেচি।
ভালোই করেছে। নইলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো। কারণ ভূতেরা কখনো ভূতেদের ঘাড়ে চেপে বসে না। সেটা ভূতসমাজবিরোধী কাজ।
ভূত সমাজে গরিব আর অশিক্ষিত ভূতেরা বটগাছে থাকে। বটগাছ হলো ভূতদের বস্তি। অনেক ভূতের জায়গা হয় একটা বটগাছে। পয়সাঅলা ভূতেরা থাকে তেঁতুল গাছে। তালগাছ আর শেওড়া গাছেও থাকে কিছু ভূত। এরা মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত ধরনের। লেখাপড়া জানে। গৌতুর বাবা-মা থাকে তাল গাছে।
এরপর ছেলেটাকে আর পাত্তা দেয়নি গৌতু। আকাশের দিকে উদাস চোখে তাকিয়ে থেকেছে। ছেলেটাও কিছুক্ষণ উসখুস করেছে। তারপর ঝগড়া জমাতে না পেরে সরে পড়েছে। বটগাছের ভূত বলে পরিচয় দিয়ে লজ্জা পেয়েছে বোধ হয়।
একটু মন খারাপ হলো গৌতুর। কবিতা লেখা নিয়ে ছেলেটা খোটা দেয়ায় অপমান বোধ করছে। কবিতা তো সে ইচ্ছে করে লেখে না। কবিতা তার এমনি এমনিই চলে আসে। একটা খেলা শুরু হয়ে যায় ওর ভেতর। শব্দের সাথে শব্দ মেলানোর খেলা। ধরো, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবল, এটা আকাশ। ভাবার সাথে সাথেই আকাশ-এর সাথে মিলে যায় আরেকটা শব্দ চলে এল, তাকাস। তারপরে পাকাস, তারপরে ঝাঁকাস, তার পরে বাঁকাস…এসব। তেমনি ভাবল ‘পানি’, সাথে সাথে এসে গেল মানি, জানি, ছানি। এভাবে শব্দের সাথে শব্দ মেলানোর খেলায় মেতে ওঠে গৌতু। ভাল লাগে ওর। তারপর একদিন শব্দের সাথে শব্দ মেলানোর খেলা খেলতে গিয়ে চার লাইন কবিতাই বানিয়ে ফেলল।
চারলাইন কবিতা বানিয়ে পাক্কা চার মিনিট হাঁ হয়ে ছিল গৌতু। ওদের ভূত সমাজে ডাক্তার আছে, ইঞ্জিনিয়ার আছে, উকিল আছে, ব্যবসায়ীও আছে। কিন্তু কবি নেই। বাবা বলেছে, এক সময় নাকি ছিল। কিন্তু কবিতা লিখে পয়সাপাতি পাওয়া যায় না বলে ভূতেরা আর কবিতা লেখে না। যাদের একটু লেখার হাত টাত আছে, তারা গাইড আর নোটবুক লেখে। তবে ইসকুলে অবশ্য কবিতা পড়ায়। সব ক্লাসে একটাই কবিতা। কবিতাটার নাম ‘তাল গাছ’। তাও একজন মানুষের লেখা। কবিতাটা গৌতুর মুখস্থ।
‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।’
টিচাররা এটা পড়ানোর সময় বলেন, খুব বাস্তবধর্মী কবিতাটা। ভূতদের ঘরবাড়ি নিয়ে লেখা। তবে কবি একটু ভুল করেছেন। তালগাছ নিয়ে কবিতায় অনেক কথা বলা হলেও ওটায় যে ভূতেদের কথাও লেখা যেত, সেটা কবির মাথায় আসেনি। তা আর কী করা? একদম না থাকার চেয়ে একটু থাকাটাও কম কী? টিচাররা খুব আগ্রহ করে পড়ায় কবিতাটা।
তালগাছে ভূতেরা থাকে। অবশ্য বটগাছ, অশ্বত্থ গাছ, শেওড়া গাছ, তেঁতুল গাছেও থাকে। তবে তাল গাছ ছাড়া আর কোনো গাছ নিয়ে কোনো কবিতা লিখেনি মানুষেরা। লিখলে ভাল হতো। গৌতুর অবশ্য একটু গর্বও হয়। তারা তালগাছের ভূত। তাদের তালগাছ নিয়েই কবিতা আছে। টিচাররা তালগাছ পড়ানোর সময় সে একটু ভাব নিয়ে সবার দিকে তাকায়।
নিজে চার লাইন কবিতা লিখে পাক্বা চার মিনিট হাঁ করে থাকার পর ঢোক গিলতে পেরেছিল গৌতু। তাহলে সে কবিতা লিখেছে! সে কবি! বিষয়টা তো কাউকে বলতে হয়! কিন্তু কাকে জানাবে?
কাকে জানাবে, এটা ভাবতে গিয়ে থমকে গেল। ওর উচিত, এত বড় একটা খবর সবার আগে মাকে জানানো। কিন্তু মা যদি শোনে গৌতুর কবিতা লেখার কথা, তখন প্রথমে তার চেহারা কীরকম হবে, বুঝতে পারছে না ও।
মা হয়তো প্রথমে ভারী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাবে। তারপর ঢোক গিলে বলবে, ‘তুই কবিতা লিখেছিস? কী সব্বোনাশ! তুই কি মানুষ নাকি যে কবিতা লিখবি?’
গৌতু জানে, মানুষের সঙ্গে তুলনাটা মাও দিয়ে বসবে। আসলে ভূতেরা মানুষকে একদমই পছন্দ করে না। মানুষ ছাড়াও দুনিয়ায় কুকুর-বেড়াল, গরু-ছাগল-ভেড়া আরও কত ধরনের প্রাণী আছে। এদের কাউকে ভূতেরা অপছন্দ করে না। কিন্তু মানুষ শুনলেই খেপে যায়। যেন মানুষেরা ভূতেদের শত্রু। তাই কথায় কথায় মানুষ নিয়ে খারাপ কথা বলতেই হবে। এই ব্যাপারটা ওর ভাল লাগে না। তাদের স্কুলে মানুষের লেখা কবিতা পড়ানো হবে, কিন্তু কাউকে ‘মানুষ’ বললে সেটাকে শক্ত গালাগাল বলে মনে করবে।
শেষ পর্যন্ত কবিতা লেখার কথাটা মাকে বলা হয়নি। মাকে বললে মা সেটা বাবাকে বলবে। তারপর বাবা ওকে ডেকে নিয়ে আধঘণ্টা ধরে বোঝাবে, ভূতেরা কবিতা লেখে না, লেখা উচিত নয়। তার চেয়ে তুই বড় হয়ে গাইড বই লিখবি। ভূতেদের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে উন্নত মানের গাইড বই।
‘ভূতেদের নানা কর্মকাণ্ড’ কথাটাও একটু অদ্ভুত লাগে গৌতুর কাছে। ভূতেরা যা করে, তা-ই করে। বড়রা খায় দায়, ঘুমোয়, আড্ডা মারে, ঝগড়া করে, ছোটরা ইস্কুলে যায়, মাস্টাররা বেত দিয়ে পিটুনি দেয়…এসবই তো। এসব তো এমনি এমনি হয়। এসব তো মানুষেও করে। এগুলো আবার কর্মকাণ্ড হয় নাকি?
হ্যাঁ। ভূতেরা একটা কাজ করে, যা মানুষেরা করে না। ভূতেরা মানুষকে ভয় দেখায়। ঠিক দুপুরে কিংবা রাত নিশীথে একা পেলে ভয় দেখিয়ে ভিড়মি খাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। যে যত বেশি মানুষকে ভয় দেখাতে পারে, সে তত বিরাট ভূত। ভূত সমাজে সে বিশাল সেলিব্রিটি।
এই কাজটা ভূত শিশুরা জন্মের পর থেকেই আয়ত্ত করতে শুরু করে। বাবা-মারা তাদের ছেলেমেয়েদের শেখায়, স্কুলে টিচাররা ছাত্র-ছাত্রীদের শেখায়। শেখানোর কাজটা একেবারে বিশ^বিদ্যালয়ে পর্যন্ত চলে। অন্ধকার রাতে একা কোনো মানুষকে ভেলকি মারা থেকে শুরু করে উড়িয়ে নিয়ে তালগাছের আগায় বসিয়ে দেয়ার মতো জটিল কঠিন ভয় দেখানোর কাজটা পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে জটিল কাজটা হলো কোনো মানুষের কাঁধে চেপে বসা। কোনো ভূত যদি কোনো মানুষের ওপর ভর করে, তখন ওই মানুষ ওই ভূতের কথামতোই সব কাজ করে। হাসতে বললে হাসে, কাঁদতে বলে কাঁদে।
মানুষকে ভয় দেখানোর কায়দা কানুন গৌতুকেও শিখতে হয়েছে। বাবা-মা একেবারে পিচ্চি থাকতে শিখিয়েছে কিছু। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর টিচাররাও। এ বিষয় আলাদা একটা ক্লাসও আছে পাক্কা এক ঘণ্টার। অন্যান্য বিষয়ের ক্লাসের সময়ের চেয়েও পনেরো মিনিট বেশি সময় চলে এই ক্লাস। ক্লাসে ভয় দেখানোর নানা পদ্ধতি পুঁথিগতভাবে শেখানোর পাশাপাশি হাতে কলমেও কাজ চলে। কাউকে কাউকে মানুষ হিসেবে কল্পনা করে তাদের ভয় দেখানের চেষ্টা করে পড়–য়া অন্যান্য ভূতের ছেলে মেয়েরা। গৌতুর কাছে এই ক্লাসটা অন্য সব ক্লাসের চেয়ে বেশি ভালো লাগে। তবে সে একেবারে সবচেয়ে বড় ভয়টাই দেখাতে চায়।
সবচেয়ে বড় ভয় দেখানোর কাজটা হলো কোনো মানুষের কাঁধে চেপে বসা। তবে এই মুহূর্তে ভুতোর ইচ্ছে করছে বেপাড়ার ওই ভুত ছেলেটার ঘাড়ে চেপে বসতে। ঘাড়ে বসে ওর মাথাটায় তবলা বাজাতে। হতচ্ছাড়া মুখ্যুটা কিনা তার কবিতা লেখা নিয়ে কথা বলে, তাকে তো-তো করে ভেঙায়। কী সাহস! বটগেছো মূর্খ ভূত হয়ে তালগাছের শিক্ষিত ভূতকে অপমান করে!
তবে ব্যাটা এখন হাতের কাছে নেই। ঝগড়া জমাতে না পেরে কেটে পড়েছে। ভালোই করেছে। নইলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো। কারণ ভূতেরা কখনো ভূতেদের ঘাড়ে চেপে বসে না। সেটা ভূতসমাজবিরোধী কাজ।
চলবে…