(পর্ব-২৭)
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শীত যত ঘন হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানের রণাঙ্গন থেকে পাক বাহিনীর পিছু হটার খবরও তত আসছে। আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি চলছে ভেতরে ভেতরে। ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত হলো বটে, শেষ সময়ে মানরা গ্রামের প্রতিরোধযুদ্ধে আমার সহপাঠী চান মিয়া শহীদ হলো। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম দিকঘেঁষে শহীদ চানমিয়ার কবর হলো দিনে দিনেই। নির্দিষ্ট একটি বাড়ির শোক তখন পাড়া, গ্রাম ছাড়িয়ে দেশের সংবাদ হয়ে উঠলো। নিকট স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধু হারানোর বেদনায় কাতর সবাই।
আসন্ন বিজয়ের শেষ লগ্নে আমাদের গড়পাড়া ইউনিয়নকে ঘিরে যতগুলো পাড়া মালার মতো গাঁথা ছিল, তার সর্বত্র অস্থিরতা দেখা দিলো। পাড়ার রাস্তায় রাস্তায় জটলা বেঁধে তারা শলা পরামর্শ করছে একে অন্যের সঙ্গে।
আমাদের গড়পাড়া ইউনিয়ন থেকে মাইল দুয়েক দূরে সাপ্তাহিক একটি হাটের নাম ছিল ‘পাকিস্তান’হাট। হঠাৎ আমার ভাইদের মাধ্যমে খবর এলো ওই হাটের নাম বদলে ফেলে ‘বাংলাদেশ হাট’ নামকরণ করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসী মহাখুশি, একদল তরুণ-কিশোর মিলে আনন্দ মিছিল বের করে জয়বাংলা স্লোগানে ভরিয়ে তুললো চারপাশ।
আমাদের বাড়ির কাছাকাছি কোনো বাজারও নেই, মাইল খানেক দূরে ডাউটিয়ার হাট নামে আরও একটি সাপ্তাহিক হাট ছিল। জরুরি প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস কিনতে হলেও হাটবারের জন্যে অপেক্ষা করতে হতো। নয়তো সাড়ে তিন মাইল হেঁটে মানিকগঞ্জ যেতে হতো।
প্রতিদিনের বাজার করার মতো কোনো বাজার নেই হামছায়ায়। এই অভাববোধ অনেকদিন থেকেই অনুভব করছে সবাই, কিন্তু কোনো হিল্লে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বাধীনতার এই মহার্ঘ বিজয় উপলক্ষে তার একটি সুরাহা হলো। আমাদের পশ্চিম পাড়ার নাম বিলনালাই। বিলনালাই ও গড়পাড়া পাড়ার সীমানা বরাবর বাজার প্রতিষ্ঠার জন্যে বিলনালাইয়ের সিকিম আলী খন্দকার একখণ্ড পৈত্রিক সম্পত্তি দান করেন প্রথম। এরপর হায়াত আলী খন্দকার, মনসুর আলী খন্দকার, ফরমান আলী খন্দকার তাদের জমি দান করেন। বাজারের আকৃতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে অন্য বিলনালাইবাসী আরজুবানু হাইস্কুলের হেড মাস্টার গোলাম হোসেন খান এবং তার ভাই রহমান খান আরও দু’টুকরো জমি দান করেন। পরিশেষে সিকিম আলীর ভাতিজা সাত্তার খান তার বাড়ির ভিটার বড় ঘর ভেঙে এনে বাজারে একটি মসজিদও প্রতিষ্ঠা করে দেন।
আব্বাকে সভাপতি ও দুলাভাই ওসমান গণীকে প্রধান অতিথি করে ‘বিলনালাই-গড়পাড়া’নামে বাজারটি উদ্বোধন করা হলো ১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের মহান দিনটিকে স্মরণে রেখে। দুলাভাই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী এক বক্তৃতা দিয়ে এলাকাবাসীর শ্রদ্ধা কুড়ালেন। ষোলই ডিসেম্বরের পরে থেকে গ্রামবাসীর মধ্যে এমন এক উজ্জীবনী শক্তি এবং তার দীপ্তি মঞ্জুরিত হতে দেখা গেলো, যা পূর্বে অজপাড়াগাঁয়ের চেতনালোকে অনুপস্থিত ছিল। বর্গাচাষি, কামার কুমার নিম্নবিত্তের এই পোড় খাওয়া জনগণের মধ্যে নতুন উদ্দীপনায় জেগে উঠলো দেশ, শুধুই বাঙালির স্বদেশ। বিহারি, মোগল, পাঠান কেউ নয় এর অংশীদার। এই আত্মতৃপ্তিতে সবাই লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দিলো আকাশে বাতাসে। উঁচু-নিচুর সব ভেদাভেদ ভুলে পরস্পর পরস্পরকে বাঁধলো গভীর আলিঙ্গনে। সে এক চরম উল্লাসের কাল, গোলাপের পাপড়ি-ছিঁটানো আনন্দের বেলা। ভাষায় তার যথোপযুক্ত ছবি আঁকা সত্যিই দুরূহ।
বিজয়ের ২৪ দিন পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এলেন। এই দিনটিতে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি লাভকরে তার স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সামনে রেখে বাঙালি জাতি যেন উত্তাল ঢেউয়ের মতো আবেগে দিশাহীন। বাঙালির প্রাণে প্রাণে নতুন দোলা, দুরন্ত এক রঙিন আবেগের মনুমেন্ট তিনি।
নতুনভাবে দেশ জেগে উঠলো পুনরায়। আমাদের গ্রাম থেকে অনেকেই ঢাকা গেলো বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে একনজর দেখবে বলে। আকাশ-বাতাস মাতিয়ে বাংলার ধূলিকণায় বাজে একটি নাম শেখ মুজিব। বাঙালির রক্তে নেশাতুর একটি স্লোগান আপনা-আপনি বেজে ওঠে, জয়বাংলা, বাংলার জয়-ধ্বনি।
দুই.
আমার কলেজও খুলে গেলো। আমিও অন্যদের মতো বিপুল আবেগ নিয়ে স্বাধীন দেশের শিক্ষার্থী হয়ে শিক্ষাঙ্গনের পবিত্র ভূমিতে পা রাখলাম। বিশাল মাঠের এপাশ-ওপাশ ঘিরে নানা রঙ পোশাকে সজ্জিত প্রজাপতির মতো পাখায় ভর দিয়ে যেন উড়ছে সবাই। হঠাৎ আমাদের সিনিয়র এক আপাকে দেখি, পিঠ খোলা চিকন একটা ব্লাউজ পরে এসেছেন। ভারত থেকে আগত নতুন এই স্টাইলের ব্লাউজ ও শাড়ির কুচিতে কুচিতে যেন খুশির উৎসব লেগে আছে। দূর থেকে দেখে খুব ভালো লাগছে, কিন্তু জানি এই স্টাইল আমার মতো পাড়াগাঁয়ের মেয়ের জন্যে শোভন নয়। মানিকগঞ্জ শহরের মেয়েদের জন্যে অবশ্যই মানানসই। একটা দেশ সদ্য স্বাধীন হলে কোথায় তার কেমন পরিবর্তন আসবে, তা তো জানা নেই আমাদের।
পরীক্ষা খুব ভালো দেইনি, এ কথা সত্য। কিন্তু কিভাবে যে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করলাম, সেটি ছিল অবাক করা ঘটনা আমার জন্যে।
তবে ভারতীয় শাড়ির চাহিদা সব বয়সী নারীর মধ্যেই ছিল। পিঠকাটা, খোলা পিঠের শর্ট ব্লাউজ, হাতাকাটা ব্লাউজের স্টাইলটি আমাদের কলেজগামী আধুনিক মেয়েদের অনেকেই আদরের সঙ্গেই গ্রহণ করেছিল। এইসব স্টাইল চলেছিল বেশ কিছুদিন।
নতুন বস্তি থেকে পায়ে হেঁটে কলেজের দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে নতুন বস্তি পরিত্যাগ করে আমি এবার এসে উঠেছি মানিকগঞ্জ শহরের বান্দুটিয়ায়, শহরতলীর মতো গ্রাম গ্রাম আবহাওয়া এখানে। ঘন সবুজের আদিম এক প্রকৃতি যেন।
মূল সড়কের অধিকাংশ বাড়ি গ্রামের বাড়ি-ঘরের মতোই এলোমেলো, বিচ্ছিন্ন শ্রীহীন। আমার মায়ের ফুপাতো ভাই প্রয়াত বদরউদ্দিন মামার বাসা এখানে। মামির ছয় মেয়ে এক ছেলের সংসারে আমিও একজন এসে জুটেছি শুধু পড়াশোনার গরজে। আমার মাকে এই মামা মামি খুবই স্নেহ করতেন। সম্ভবত সে কারণেই নিজের টানাটানির সংসারে আমাকেও রাখতে রাজি ছিলেন। আমার এই মামি দেখতে স্লিম, আঁটোসাটো বাঁধনের ছোটখাটো মানুষ বটে, কিন্তু খুব সাহসী ছিলেন। কাউকে গুনে কথা বলতেন না, মুখের ওপর বলে দিতেন, যখন খুশি যা। বড় দুই সৎ ছেলেও ভয় পেতো এবং ভালোবাসতো এই সৎমাকে। ছোটবেলা থেকে তাদেরও তিনি মানুষ করেছেন। বান্দুটিয়ার এই বাসা থেকে রিকশায় কুড়ি মিনিটে কলেজে যাওয়া যায়। মামির বড় মেয়ে আলেয়া আপা আমার চেয়ে দুই বছরের বড় হলেও মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে আমার সঙ্গেই পড়েন। কাজেই দু’জনে এক রিকশায় কলেজে যাই সকালে। দুপুরের পরে ফিরে আসি। বাকিতে কেনাকাটার জন্যে মামির বাসার সামনেই একটা দোকান ছিল। সেখান থেকে বাকিতে ডিম, ডাল, চাল, তেল আনাতেন যখন-তখন। অধিকাংশ দিন আস্ত এক ডিমভাজি এবং ডাল দিয়ে ভাত খেতাম। প্রয়াত বদর মামার আগের স্ত্রী দুই ছেলে রেখে অকস্মাৎ মারা যান। তার বড় ছেলে বকুল ভাই তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন, ছোট জন বুলু ভাই আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন।
মামির সংসার চলতো এই দুই ছেলের পাঠানো টাকায়। তাদের নিজেদের সংসার সামলে তবে মা এবং ভাই-বোনদের জন্যে টাকা পাঠাতেন। ফলে মামিকে বেশ কষ্ট করে চলতে হতো। ছেলেদের টাকা পাঠাতে দেরি হতো বলে বাকি দোকানের সদাই দিয়ে সংসার চালাতেন মাসের অর্ধেকটা, বাকি অর্ধমাস কাঁচা বাজার কিছু করতেন, তবে কাজের মেয়ে যা রান্না করতো, তাই খেতে হতো সবাইকে। মামার জীবদ্দশায় মামিকে কখনো রান্না করে খেতে হয়নি। মামার চাঁদহোটেল থেকে নিয়মিত খাবার আসতো পরিবারের জন্যে। যে কারণে রান্না-বান্নায় মামি কখনো আগ্রহ দেখাননি, আনন্দও খুঁজে পাননি। মামার মৃত্যুর পরে চাঁদহোটেল চালাতে তার পুত্ররা কেউ রাজি নয় বলে, মামি কিছুদিন চেষ্টা করে পরে বেচে দিয়েছেন। এতগুলো সন্তানের লেখা-পড়ার খরচ চালানোর পরে সংসারের খাওয়া দাওয়া চলতো কোনোভাবে। পুষ্টিগুণের আচার-বিচার সম্ভব ছিল না। এরপরেও মামি আমার খাওয়া-খরচ বাবদ টাকা নিতে কিছুতেই রাজি হননি। এই মামার মেজো মেয়ে কণা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল স্কুল জীবনেই। মামার সেজো মেয়ে তপাকে আমার পুলিশ খালু (বদর মামার আপন ছোটভাই ছিলেন তিনি) মির্জাপুর থানায় থাকার সময় নিজের মেয়ে হিসেবে সব দায়িত্ব নিয়ে কাছে নিয়ে গেছিলেন, কিন্তু সেখানে তার মন বসলো না। ফিরে এলো পুনরায় মায়ের সংসারে।
খালুজান পরে মামির সবচেয়ে ছোট মেয়ে লিটিলকে নিয়ে পালন-পালন পূর্বক বিয়েশাদি দিয়েছেন। নিজের ঘরবাড়ি, বিষয় সম্পদ যা ছিল লিটিলকেই লিখে দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগে।
১৯৭২ সালের মাসটি ঠিক মনে নেই। পরীক্ষা শুরু হওয়ার তিন দিন আগে মামির বান্দুটিয়ার বাসা থেকে কলেজের প্রাণকেন্দ্রে আরও নিকটতম দূরত্বে খোদেজা খালার বনশ্রীর বাসায় এসে উঠলাম। এই বাসা থেকে কলেজ তিন মিনিটের হাঁটা পথ। পরীক্ষার সময় সব দিক থেকে সময় বাঁচানোর একটা প্রচেষ্টা থাকে সবার মধ্যেই। খোদেজা খালাই আমাকে ডেকে বলেছিলেন, পরীক্ষার সময় কতজন এসে আমার বাসায় থেকে পরীক্ষা দিয়ে যায়। তুই এতদূরে থেকে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করবি কেন? তুই আমার আদরের বোন লেবুর মেয়ে, আমার বাসায় চলে আয়, পরীক্ষার ক’দিন আমার কাছে থাকবি।
খালাম্মার আশ্বাসে চলে আসি তার বাসায়। তার প্রথম কন্যা সন্তান আমার খালাতো বোন কবি জাহানারা আরজু।এই খোদেজা খালার চার মেয়ে, চার ছেলে।
আরজু আপা ও ঝর্ণা আপা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে পাস করেছেন তাদের বিয়ের পরে। আরজু আপার ছোট আবু ভাই ডাক্তারি পাস করেছেন। সেই সময় আবু ভাইয়ের বিয়েটা অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে হয়েছিল মানিকগঞ্জ শহরে।
আবু ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান এবং কনের গহনাগুলো আক্ষরিক অর্থেই ছিল রাজ-রানিদের মতো দাপুটে এবং অহঙ্কারী। খুব ছোট্ট বেলায় গ্রাম থেকে এই বিয়েতে এসে আমার তো চোখ চরকগাছ। বিদেশিদের মতো শাদা গায়ের রঙের বৌ, আলতা রঙের মুখ, এই বৌয়ের গলায় সাতনরী হার দেখে সিনেমার মতো স্বপ্নময় মনে হচ্ছিল সব কিছু।
আবু ভাইয়ের ছোট জানুভাই পড়াশোনা শেষ করেননি, তার রাজনীতির কারণে। ভাসানী ন্যাপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরেও আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার পরিবর্তে কুঁড়েঘর মার্কা ভাসানী ন্যাপের রাজনীতি করেছেন সারাজীবন।
আমাকেও ভাসানীর সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাবেন এবং মানিকগঞ্জের সাংগঠনিক পদে পদায়ন করবেন বলে প্রায় শোনাতেন। আমি ততদিনে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের পাঠ চুকিয়ে ফেলেছি।
শবনু আপা আর লাবলু ভাই দুজনেই আমার দুই বছরের সিনিয়র।দু’জনেই দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। শবনুআপা তখন আরজু আপার বাসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ে ভর্তি হতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। লাবলুভাই এবং সবচেয়ে ছোট দুই ভাই-বোনফোয়ারা ও খশবু তখন খালাম্মার সঙ্গে বনশ্রীর বাসায় বর্তমান। মুক্তিযুদ্ধের কারণে শেসনজট যেন আরও দীর্ঘায়িত না হয়ে পড়ে, সেজন্যে হঠাৎ করেই আমাদের পরীক্ষার তারিখ পড়ে গেলো। যুদ্ধের নয়মাস কেটেছে জীবন বাঁচানোর টেনশনে, স্বাধীনতা-উত্তর বিজয় আনন্দে কেটে গেলো আরও কিছুটা সময়, কাজেই পরীক্ষা দেওয়ার মতো প্রকৃত পড়াশোনা তো কিছুই হয়নি। তবু সহপাঠীরা সাহস দিয়ে বললো, পরীক্ষা দিলেই হবে, অটোপাস দেবে নতুন বাংলাদেশ সরকার। যুদ্ধের এই পরিস্থিতির পর পরেই শিক্ষার্থীরা খাতায় কী লিখতে পারবে, তা তো সবারই জানা। কাজেই চিন্তা নেই পরীক্ষার হলে বসে কিছু লিখলেই চলবে। অনেকেই তখন নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবছে হয়তো মনে মনে। যে সব ছাত্র যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরেছে, তাদের জন্যে তো সেই বছর কোনো কোনো কলেজে পরীক্ষার আলাদা কক্ষ করে দিয়েছিলেন শিক্ষকেরা, তারা যেন বই খুলে লিখতে পারে। তবে আমাদের দেবেন্দ্র কলেজে তেমন হয়নি, যেহেতু আমি নকল করতে পারি না বা অভ্যস্ত নই; কাজেই আমার আশে-পাশে কেউ নকল করলেও আমি তা বুঝতে পারিনি।
পরীক্ষা খুব ভালো দেইনি, এ কথা সত্য। কিন্তু কিভাবে যে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করলাম, সেটি ছিল অবাক করা ঘটনা আমার জন্যে।
চলবে…
বালিকার চরৈবেতি-২৬॥ দিলারা হাফিজ