॥পর্ব-৮ ॥
২৮
মহিউদ্দিন বাই, বেড়াবান্দা তো ম্যালা জামেলার কাম?
ওইরহমই তো মনে অইতাছে সুলতান ভাই।
তুমি এইসব না হইরা অন্য কামও তো হরবার পাইতা?
সিলেডো গেছিলাম ব্লকের কাম হরবার। চেরমেন জামেলায় ফালাইলো, আয়া পড়লাম।
চেরমেনের কথা আর না কও। এরা অইলো বদের আড্ডি।
কি অইছে সুলতান বাই?
কি অয় নাই, ওইডা কইবার পারো। দুই নম্বর লোকি বুদোয় মেম্বর-চেরমেন অয়। নির্বাচন হরবার সময় যত বালা বালা কথা কওয়া যায়, হেইতা কইবো। আঙ্গোর বাতিজারে ডাল হিসাবে ব্যবহার হরলো ইলিয়াস চেরমেন। দেখছে এই পোলাডারে গেরামের সবাই মানে। অ্যারে রাখলে কামে দিবো। চেরমেন বাতিজাক কইলো, তোমাদের গ্রামে যাবো, সবাইকে থাকতে বইলো। আর তুমি অনুষ্ঠানটা পরিচালনা কইরো। সবার মইধ্যে কতা কইতে বাতিজার আবার বালা লাগে। এলাকার মানুষরে কইলো চেরমেন আইবো, আপনাগোর লগে কথা কইবো। গেরামের সবাই আইলো। বাতিজার আতো মাইক দরায়া দিলো চেরমেন। মাইক নেওয়ার পর অয় কথা কইলো। মুরুব্বিরা কতা কইলো। আলাপের মইধ্যে আছিন, রাস্তা-গাট, বিরিজ, বিদুৎ, স্কুলের উন্নতি, এইতা। লোকাল বক্তব্য শ্যাষ অইলে আঙ্গোর হবু চেরমেন বাষণ দেওয়া শুরু হরলো। ওয়াদা হইরা কইলো, ‘আমি চেয়ারম্যান হলে তিন বছরের মধ্যে রাস্তা পাকা করে দেবো। আমি যদি রাস্তা পাকা করে দিতে না পাই, তাইলে আমি চেয়ারম্যানি ছেড়ে দিবো। উন্নত এবং আরো আধুনিক ব্রীজ করে দিবো। যতদিন পর্যন্ত আমি এই ব্রিজ না করতে পারছি ততদিন পর্যন্ত আমার কোনো শান্তি নাই। আমার প্রথম কাজ হলো এই ব্রিজটা করা।’ অ্যাহন দ্যাড় বছর অয়া গেলো বিরিজের কুনু খবরই নাই। হেদিন বাতিজা যায়া চেরমেনরে কইলো, বাই, বিরিজটার অবস্থা কি?
কয়, বিরিজ এবার হবে না, সামনেরবার বাজেট আসলে ধরবো।
রাস্তার কথা তো কইবারই পাইলো না। কইলে খাউস হইরা উডে। কয়, টাকা নাই, তোমরা টাকা দিলেই হয়ে যাবে।
অ্যাহন দুহানের পাড়ো এইডা লইয়া আলাপ অয়। শালার চেরমেন কইলো, বিরিজটা হইরা দিবো, বুড দিছি অ্যাহন আর খবর নাই। এইবার খালি বুড নিবার আইলে অয়। তারপরে বানামু। আরেকজুন কয়, হ, কি সোন্দর সোন্দর কতা কইলো, বিরিজ না হরবার পাইলে বলে চেরম্যানিই ছাইড়া দেয়। শালা, মিছা কতা কয়া বুডগুলা নিছে। দেহি আর কয়ডাদিন। আবুল মিয়া, জহির মিয়া সবাই অ্যাকমুরা থাইহ্যা কইতেছেই। চেরমেন পক্ষের একজন আয়া ফির নাগ গলানি শুরু হরলো। ঠেলাঠেলি বাজলো তার লগে।
আবুল মিয়া কয়, চুপ হইরা থাক, কথা কইচ না। তুই কিছু পাইছোস তো। যুদি না পাইতি তাইলে এদুন হরতে না। যার যায় হ্যায়ি বুজে।
হ, আমি পাইচি না। আমাক কি দিছে তরা কইবার পাইবে?
তরে দিছে না? তরে ছাপরা তুইল্যা দিছে না? ছাগল কিইন্যা দিছে না? আঙ্গোরে কি বাল দিছে রে?
জাপাজাপি অইলো কতক্ষণ। থামলো। পরে চেরমেনের চামচা হোটেলো ডুইহ্যা দুহানদাররে কয়, এই টিবি দে। বালা ছবি দে। সাকিব, মান্না, মওসুমি, পরীর ছবি দে। ছবি-টবি দিলো, কুকরি-মুকড়ি অইয়া বইয়্যা চা-টা খায়া চইল্যা আইবার সময় দুহানদাররে কয়,
কয় ট্যাহা অইছে?
কয়, দশ ট্যাহা।
অয় কয়, হেই দশ ট্যাহা হা, আড ট্যাহা নে।
আড ট্যাহা দিয়া চইল্যা আয়ে।
কাইজার গরম ওইনোয়ো গেলো সুলতান বাই?
হ মহি বাই, অইনোও গেলো। বাতিজা চেরমেনরে কইছে আঙ্গোর এলাকাত একটা ক্লাব আছে, ক্লাবো চেংরা-বেংরা এত্তুগুলা। ক্লাবটা ঠিক হরুন লাগতো। চেরমেন ব্যাট-বল দেওয়ার সময় মাইকো কইলো, ‘এই জায়গায় ক্লাবের কথা বলেছে, ক্লাব তো রেজিস্ট্রি করা নাই। যাইহোক ক্লাবের কথা যখন আমার কানে আসছে, আমি ক্লাবের বিষয়টা দেখবো। জমি রেজিস্ট্রি করা লাগবে, ঘর তোলা লাগবে, সভাপতি, সেক্রেটারি করা লাগবে। আপাতত ব্যাট-বল কিনার জন্যে কিছু টাকা দিলাম। পোলাপাইন ব্যাট-বল খেলুক।’ তিন-চাইর শ’ ট্যাহা পাইয়া পোলা-পাইন হই দিলো। পরে অয় জমি রেজিস্টি হরলো না, গরও তুললো না। ক্লাবোর পদ-টদ মিটিংয়ই খতম। চেংরা-বেংরা যে কয়দিন বলো দুই-চাইরডা লাত্থি দিলো, ওইডাই লাভ। বিরিজের কাম আইলে এইডা সবাই জানবার পাই। আঙ্গোর পক্ষ থাইক্যা একজন মুরুব্বি চেরমেনরে কয়, চেরমেন সাব, শুনলাম বিরিজের কাম আইছে, কামডা শুরু হরলে বালা অইতো। পানি জইম্যা থাহে। গরিবরা আবাদ হরবার পায় না।
চেরমেন কয় হ, কাজটা তো শুরু করা লাগে। ইটের অর্ডার দিছি। আসবে।
সবাই বাড়িত গেলো, কইলো বালা তো, চেরমেন ইডের অডার দিয়া ফ্যালছে। কাম তো তাইলে অইবোই। ইট যহন লইয়া আয়ে তহন চেরমেন কয়, তোমরা সবাই মিইল্লা পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবা। কাজটা ইনশাল্লাহ দ্রুতই হয়ে যাবে।
আমরা বেকায়দায় পইড়া যাই। মুরুব্বিরা কয়, তোমারি তো এলাকা, কামডা হইরা দ্যাও। আমরা এতো ট্যাহা কই পায়াম?
চেরমেন কয়, থো তোর এলাকা। এলাকার গুষ্টি মারি। আমাক টাকা দে।
তোমার বাতিজাক গ্রামের মানুষ দরে নাই?
এই কথা আর কইয়ো না মহি বাই। সবাই মিইল্যা বাতিজারে কইছে, তুমি তো কইল্যা কাম হরবো। কই কিছুই তো হরলো না। তোমারে দেইহাই বুডটা দিলাম। আর অ্যাহন…বাতিজা কয়, সময় আছে দেহা যাক কি হরে। কাম না হরলে পরেরবার আর বুড দিতাম না। অয় কি বুজছিন নির্বাচন অইলো মিছা ওয়াদা দিয়া বুড নেওয়া। এতো আপন বাইবা কথা কইলো, বুড নিলো, জিতার পর আইলোই না। বুয়া মারছে। বাতিজা নদীর পাড়ো যায়া টংয়ো বইয়া ইড ডেলায় আর দুঃখে ফুলে। চেরমেন হালায় কাড বেচে আঙ্গোরটে। অয় চামচাক পাডায় সবাইরে একলগে হরার লাইগ্যা। কয়া যায়, শুক্রবার তোমরা মাঠত আসপা। চেয়ারম্যান তোমাগোর সাথে কথা কবো। তোমাগোরে কাড দিবো। আমরা মাডো যাই। চেরমেন কয়, গরিব মানুষের জন্যে কিছু কার্ড আসছে। কার্ড তো খুব কম। কারে দেই আর না দেই। তোমরা একশ’ জন, আর কার্ড আসছে বিশটা। কাড কিন্তু একশজনের লাইগ্যা একশোটাই আইছে। চেরমেন সব গরিব মানুষরে দেহে না। যারা বেশি গরিব কেবল তাগোরেই দেহে। অ্যাহন কিছু গরিব আয়া কয়, তোমাক যদি কিছু ট্যাহা দেই, কাডটা কি আমাক দিবা?
চেরমেন কয়, আমি তো কার্ডের টাকা নিতে পারি না। তোমার নাম দিয়ো, দেখি কি করা যায়।
তহন যত গরিব মানুষ আছে সবাই যায়া নাম দিয়া আয়ে। নিজেগর মইধ্যে আবার গেরমা লাগে। গেরমাডা অইলো নিজেরাই মনে মনে কয় আমার কাডটা বুজি অইলো না। তহন কি হরে ছাগল বেইচ্যা, মুরগি বেইচ্যা, মাইনষের বাড়িত কাম হইরা অ্যাক আজার-দুই আজার ট্যাহা চেরমেনরে দিয়া আয়ে। চেরমেন যহন দ্যাহে যাদের নামে কাড আইছে তারা সবাই ট্যাহা দিয়া গেছে। তহন তাগোরে ডাইক্যা কাড দেয়। বাহিগুলারে দেয় না। যারা ট্যাহা দিবার পাইলো না তারা মনে হরে কাড তো সরহার থাইক্যা আইবোই। কাড দিবার দিনো সবাই যায়, কয়, আমার নামডা আছে?
চেরমেন কয়, আছে। যাচাই-বাছাই হবে, পরে দেখা যাক কি হয়।
যেদিন ফাইনাল অয়, হেদিন দেহা গেলো যারা বেশি ট্যাহা দিছে তাগোর নাম লিস্টো উডাইছে।
সুলতান বাই, দ্যাশের চেরমেন-মেম্বর এই রহমি, মাইরা খাওয়ার মইধ্যে অ্যাক নম্বর।
হ, অইডাই তো দ্যাখতাছি। হ্যারা কয়, নির্বাচনে টাকা খরচ করছি তোলা লাগবো না? দ্যাহো বাই, অরা মাসে কয় ট্যাহাই আর পায়? চেরমেন পায় পচিশ শ’, মেম্বর পায় সতরো শ’। এইডারে কয় বাতা, বেতন না। হেদিন যারা কাড পাইলো তারা তো হেই খুশি। আর যারা পাইলো না তারা তো জ্বলতেই থাহে। ইসহাক রাগ আটকায়া রাখপার না পায়া স্যালান্সার ছাড়া গলা ছাইড়া দেয়। কয়, মুরগি বেইচ্যা ট্যাহা দিয়া আসলাম। আমি দিলাম বারো শ’, আরেকজন দিছে চোদ্দ শ’ ট্যাহা। দুই শ’ ট্যাহার লাইগ্যা আমাক কাডটা দিলো না। কয়, সামনের বছরে দিবো। সামনের বছরো কি মনে থাকপো? একটাও মনে থাকপো না। আবার নতুন হইরা ট্যাহা নিবো। মনডায় কয়, হালারে দইরা চাবাই। ইবার খালি বুড চাইবার আইলেই অয়। যে কাড পায় অয় চেরমেনের গুনগান গায়। কয়, না, চেরমেন সাব খুব বালা মানুষ। আমি যাইবার লগে লগেই অইয়া গেছে।
কাড থাইক্যাও যাগোরে দিলো না, চেরমেন তাগোর কি ব্যবস্থা হরে?
তারা আবার যায়, কয় চেরমেন সাব দেহো তো আমার কাডটা আছে নাহি। চেরমেন কয়, সখিনার বাপ, তোমার না ভালো চলে। ব্যাটা আছে, কামলা দ্যাও, কার্ড দিয়া কি করবা? কাড তো নাই। যে কয়টা আছিল সব তো শ্যাষ হয়া গেছে। ভাইস-চেয়ারম্যানের কাছে আছে এতোগুলা, বড় নেতার কাছে আছে এতোগুলা, তোমরা তাদের কাছে যাও। গরিব মানুষ কি অতদূর দৌড়াইবার পায়? দিন গ্যালেই কামলা খরচ। ২৫০ থাইক্যা ৩০০ ট্যাকা লছ। এই লছ কেউ হরবার চায়? হ্যার লাইগ্যা যায় না। কয়, আল্লা মুখ দিছে আতো দিছে। খাডাম আর খায়াম, কাডের পিছনো যাইতাম না। অ্যাক আজার ট্যাহা খাইচোছ, খা। অই রাগ কি আর দমে? দমে না। কাড না পায়া সখিনার বাপ আইল কাটপার যায়। খিদা লাগলে বাড়িত আয়ে। আয়া দেহে বউ বাড়িত নাই। কই জানি গেছে। চিল্লায়া চিল্লায়া দুই-তিনবার ডাকলো, হুনলো না। অ্যালহা অ্যালহাই কইতে থাহে, খালি আয়া ল, দইরা বানায়াম। বউ আইলে জিগায়,
কই গেছলে?
অয় কয়, কাপড় দইবার গেছলাম।
কয়ডা ডাক দিছি?
হুনছি না।
ক্যা হুনলে না।
ডাঙের উপর ডাঙ। এইডা বউয়ের পাওনা আছিন না, তাও খাইলো। একশো দিনের কর্মসূচি আইলে নেতারা খাইতাছে অদ্দেক। চেরমেন খাইতাছে অদ্দেক। তিনবাগের অ্যাকবাগ পায় মেম্বর। অয় ফির মাইরা দেয় অদ্দেক। অ্যাক লাখ ট্যাহা আইলে, কাম হয় বিশ আজার ট্যাহার। এদুন হইরা নির্বাচনো খরচ অওয়া ট্যাহা তুলতাছে। তুলুক। দশ লাখ ট্যাহা তুলতে তো ছয়মাস, বড়জুর অ্যাক বছর লাগে। অ্যার বেশি তো লাগার কতা না। তারপরেও হুমানে অজম হরতাছে। বিচারেও জামেলা হরে। ট্যাহার কাছো হুইত্যা যায় চেরমেন। একবার ফজল বিচারের লাইগ্যা গেলো চেরমেনের অইনো। কয়, আকালু আমার বউয়ের লগে গসটা-গসটি হরছে, চেরমেন সাব এইডার বিচার চাই। চেরমেন কয়, যাও আমি দেখমুনে। চেরমেন আকালুর লগে দেহা হইরা কয়, এই তোর কিন্তু অবস্থা খারাপ। নারী নির্যাতনের মামলা হইতে পারে। ফজল আসছিলো, তুই নাকি কি আকাম করছিস তার বউয়ের সাথে। তুই যদি পকেটে কিছু না দেইস, তাইলে তোর কিন্তু বারোটা বাজাবো। অয় কাতুমাতু হইরা কয়, না চেরমেন সাব আমার কিছু হইরো না। আমি তোমারে এইডা দ্যাম। আকালুরটে কিছু মালপানি নিলো। বুদ্দি শিখায়া দিলো, বিচারত তোক দুইটা থাপ্পড় মারা লাগবে। তুই কিন্তু আগ করিস না। থাপ্পড়েই বাঁচি যাবু। চেয়ারম্যান বিচারে বইয়্যা জিগাইলো, আকালু তুই এইটা করছিস?
হ। চেরমেন সাব।
তুই একটা বুঝনাদার চ্যাংরা হয়া এইটা করলু কিসের জন্যি?
কতা শ্যাষ হরার লগে লগে দিলো ফড়াং হইরা দুইডা চড়। কইলো, এইদোন জানি আর না করিস। ফজল আর উইয়ার বউয়ের হাত ধরি মাফ নে। বিচার ডিসমিস। বুঝলা ব্যাপারটা?
বুঝলাম সুলতান বাই?
আরো আছে।
কও।
মালিক আয়া বদর বদর হরবো। কামতো অ্যাহনো অল্পেটটু বাহি আছে।
গপ্পে গপ্পে অইয়া যাইবো। কইতে থাহো।
২৯
মহিউদ্দিন বাই, নদী বাঙা শুরু অইলে তো আর থামবার চায় না। আঙ্গোর শলা-পরামর্শও শ্যাষ অয় না। কুলসুমের বাপ আমাক কয়, কি রে বাড়ি বেন থাহেই না? বাঙুনই লাগে? যায়াম কই? জাগাই তো নাই। ক্যাডা দিবো জাগা?
হ চাচা, বাড়ি সরায়া নিবাম কই? রাস্তাও বুজাই। বাড়ি তো আর একটা-দুইডা বাঙে না। পাড়ার সবার বাঙে। সবাই যায় অইনোই। আর যাইবোই বা কই?
ওই রাস্তাও আরেকজুনের দহলে থাহে। কুলসুমের বাপ চেরমেনরে কয়, রাস্তার দারো বাড়ি হরবার চাই, গর উডাইবার দিবা?
চেরমেন কইলো বাড়ি করবার চাইলে করবা।
অয় নাইচ্যা নাইচ্যা বাড়িত আয়ে। চেরমেন অল্পেটটু পরেই চ্যালারে পাডাইলো বাণী দিয়া, যারা যারা বাঁধে বাড়ি বানাবার চাও তারা তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবা। নাইলে বাড়ি বানাবার পাবা না। ইবার কুলসুমের বাপ দৌড়ায়া গেলো চেরমেনের বাড়িত।
চেরমেন কয়, কি কুলসুমের বাপ, কি খবর? হাঁপাইতাছো ক্যান?
চেরমেন সাব বড় বিপদো পইড়া আইছি। আমারে বিপদ থাইক্যা উদ্দার হরুন লাগবো।
কও, কও তোমার কি সমস্যা। আমি চেরমেন না? আমি দেখবো না? কও।
আপনাক তো সহালে কইছি বাঁশের থুপার নিচে বাড়ি হরবার চাই। অ্যাহন যেডা শুনলাম, এইডা তো মহাবিপদের।
দ্যাখো, সবাই আইসা তো কয় বাড়ি হরাম অইনো। তুমিও আমার ইউনিয়নের মানুষ, করিম মিয়াও আমার ইউনিয়নের মানুষ। তোমারে দিমু না অরে দিমু। যারা মালপানি দিবো তাগোক আমি জায়গাটা দিবার পারি। জায়গার দাম আছে না? তোমরা তো জায়গার উচিত মূল্য দিবার পাবা না। সামান্য কিছু একটা দ্যাও। দিয়া বাড়ি করো।
তারা পঞ্চাশ আজার ট্যাহা দিয়া বাড়ি হরে। জমিডা অইলো খাস। দহল নিলো চেরমেন, ট্যাহাও উডলো তার পকেডো। সরহার চাইলে যে কুনু সময় তাগোরে বান্দের রাস্তা থাইহ্যা সরায়া দিবার পারে। তাও এই অবস্থা। অয় বাড়িত আয়া বউয়ের লগে আলাপ হরে। কয়, চেরমেন সাব এতো ট্যাহা চাইলো। গরিব মানুষ, ট্যাহা পায়াম কই? বউ কয়, থাহুন তো লাগবো। গর না থাকলে উদাম আসমানের নিচে গুমায়াম কিবা? কপাল যহন গরিব অইছে একটা উপায় তো হরুন লাগবো। আতো যে কয় ট্যাহা আছে অই ট্যাহাই দ্যাও। আর চেরমেনের কাছ থাইক্যা কিছুদিন সময় লও। চেরমেনরে নগদ বিশ হাজার ট্যাহা দিয়া ত্রিশ হাজার বাহি রাহে। কিছু ইনকাম হইরা শুদ হরার জল্পনা-কল্পনা জমাইতে থাহে নিজের মইধ্যে। অ্যাক মাস গেলো, পাইলো না দিবার ট্যাহা। ট্যাহা কই পাইবো, কও? বান কমতে কমতেই তো অ্যাক মাস লাইগ্যা গেলো। জমিন থাইক্যা পানি না সরলে কেউ কি কামলা নিবো? আবাদের সময় আইতেও ম্যালা দেরি। কাম-কাজ না থাকলে ট্যাহা দিবো কিবা? চামচারে দিয়া ডাইক্কা পাডাইলো কুলসুমের বাপরে। অয় গেলে চেরমেন কয়,
কি কুলসুমের বাপ আজকে মাসের কয় তারিখ যায়? কথা কি আছিলো?
হ, আছিলো তো ট্যাহা দিবার কতা। চেরমেন সাব আমি তো ট্যাহা জুগাড় হরবার পাইছি না।
আমি তো এইটা বুঝবো না। আমারে টাকা দিতে হবে এইটা ফাইনাল কথা। তুমি টাকা দিবা না বাড়ি ভাঙবা?
কুলসুমের বাপ আন্ধার দেহা শুরু হরে। অয় এলাকার সুদখোর আনসার আলির বুগলো যায়। কয়, আনসার সাব, বিপদে পড়ছি, ট্যাহা-পইসা দরহার, দিবার পাইবা কিছু?
না, ট্যাকা-পইসা তো কিছু আছিলো কাছে। আরেক কাজে লাগবে, এখন আমি দিতে পারবো না। তুমি ভাই অন্য চেষ্টা করো।
দেহো বাই, আমার বিপদ, ট্যাহা না অইলে বাড়িডা বাঙুন লাগবো। তোমারে আমি দিয়া দ্যাম।
ঠিক আছে। দিবো। কিন্তু তিনদিনের মইধ্যে দিবা। নড়চড় যাতে না হয়।
না বাই, আমি তো তিনদিন পরে দিবার পাইতাম না। আমার কাছে অ্যাক মাস থাহুক। আমি তোমারে ত্রিশ আজারের জাগাত পয়ত্রিশ আজার দ্যাম।
দেখ, আমি তো সুদ-টুদ খাই না। নিবোও না সুদ-টুদ। এই টাকাটা আমাক দান কইরা দিয়ো।
মহিউদ্দিন বাই, গরিব মাইনষের কুনু ছাড় নাই। চরে যাগোর ইট্টু ক্ষ্যামতা আছে তারাই বদমায়েশি হরে। মুহুরিও হরে। চরে জমি লইয়া এমনিতেই কাইজ্জা-ক্যাচাল লাইগাই থাহে। অয় আরো কাইজ্জা বাজানির দান্দায় থাহে। জমিনের মাফ কম দিবো। আরেক পক্ষের ট্যাহা খায়া জমিন বেশি বাইর হইরা দিবো। কয়দিন পর এইডা লইয়া আবার বাজবো। জানোইতো চরের কাইজ্জা কতো মারাত্মক।
খুইল্লা কও তো সুলতান বাই?
অ্যাকটা গটোনার কথা কই তোমারে। কুদ্দুস বকশো জমিন হিসাবে কম মনে হরছে। হ্যায় সীমানার খুডি সরায়া লগে থাহা মজনুর ক্ষ্যাতো গাড়ে। গাড়তে গাড়তে কয়, এইডা আমার জমিন, ব্যাডা খালি যদি আয়োছ একদম কাইড্ডা হালাম।
মজনুও তো গাউরা কম না, কয়, আমি যায়াম, তর ঠেহানির থাকলে ঠেহাইছ।
আচ্ছা, কদ্দুর পারছ, আইছ কালহা দেইহা লইয়াম।
ঠিক আছে, কালহা আয়িছ।
মজনু যায় ক্ষ্যাতো, যাইতেই কুদ্দুস বকশোর বাড়ি থাইক্যা মানুষ আয়ে, ঠেলাঠেলি শুরু হরে। খবর পায়া মজুনর বাড়িত থাইক্কাও মানুষ আয়ে বাঁশ-টাশ লইয়া। মজনু কয়,
শইল্লো আত দেইস না, আত দিলে এক্কেবারে মাইরা হালাম।
কুদ্দুস কয়, মার। মার।
শালা, তাও শইল্লো আত দিলে?
ফালা দিয়া ফটাফট মাইরা দিলো। আর কোৎ উইড্ডা গেলো বকশোর। থামলো পিটাপিটি। কাগজ লইয়া কিন্তু পরে বইলোই। অ্যার মইধ্যে হুদাই পুংডাপুংডি হরলো। বাঙালি না, একটু ত্যাড়া তো থাকপোই। অ্যারপর বিচার বইলো। বিচারে আর মাইরের কতা উডলো না। মজনু দিলো হাজারহানি ট্যাহা অষুধপাতি খাওয়ার লাইগ্যা। ট্যাহা গেলো তো কি অইছে। মারছে শান্তি হইরা। চেরমেন কইলো, তোমার জমিন যদি এইটা হয় তাইলে কাগজ দেখাও। মজনু কাগজ আইন্যা দিলো। কইলো, এই দ্যাখেন চেরমেন সাব। আমার জমিন এইডা। দাগ এতো। এইডার খতিয়ান নম্বর এতো। বকশো খালি জুর হইরা ক্যাচালডা বাজাইলো। চেরমেন মুহুরিরে কয়া গেলো, তুমি জমিনডা মাফ দিয়া দেখ সরে কি না। সরলে খুঁটিটা নড়াচড়া কইরা মাপ মতো গাইরো। না সরলে তো নাই। দেখ মজনু আর বখশো, তোমরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা কইরো না। খারাপ শোনায়। মানুষ খারাপ কয়। কেউ মইরা গেলে সবাকই জেল খাটা লাগবে।
পরেরদিন মাপজোক দিলো। আইল দিলো। মজনু, আমিনের আতো গুইজ্জা দিলো অ্যাক আজার ট্যাহার দুইড্ডা নুট। আর জমিন বাইড়া গেলো দুই শতক। আমিন বকশোরে বুজাইলো, দুই-চাইর শতক ব্যাপার না। চরের জমিন ক্যাচাল হইরো না। কিন্তু ক্যাচাল তো লাগায়া থইয়াই গেলো। অয় আকাম হইরা গেলো যাতে কয়দিন পর আবার তার কাম লাগে। পকেডো আবার ট্যাহা উডে। হুনলাইতো গপ্প। অ্যাহন কামে মন দ্যাও। মালিকের মন চাইলেই তো ক্যাট ক্যাট শুরু হরে।
চলবে…