॥পর্ব-৬ ॥
২১
ধুর, এত ভাবাভাবি করি কী হইবে। যাং। আন্ধার হয়া আইসপার নাগছে। নাইটটা নিয়া যাং সাথত। বিসমিল্লাহ, ডান পা আগে ফেলং।
কি রে মোখলেস আসলু তাইলে?
হয়। দেইখপার নাগছোং তোমরা চেতনয়ে আছেন।
থাইকপার নং। তোর মতো অসহায় মানুষক কি মুই অবহেলা কইরবার পাং।
কামের কথা কও।
শোন, তুই পূজা দিবার পাবু?
ক্যা?
তাইলে ড্যাগের দেবি খুশি হইবে, ড্যাগ পাবু।
তোমরা এইদোন ফাকসা কথা ক্যা কন?
তুই তো জাতের নোক নোয়াইস। তুই কি দুলাভাই নাগিস যে তোর সাথে ইয়ার্কি মারিম।
না, নং। কেমন করি দেইম পূজা?
হেন্দু চেংরিগুলাইক নাচাবু, খাওয়াবু, আমোদ-ফূর্তি করবু।
কবে দেইম পূজা?
কাইলকা সকাল থাকি দিবু।
আচ্ছা।
২২
আহসান ভাই, ম্যালাদিন হইল তোমাক দেখোং না। বাজারের দোকানিরঘরক জিগানু কায়ো কিছু কবার পাইল না। কোটে গেছনেন? (দর্শক-১)
শরীরটা ভালো আছিল না।
মুইয়ো তোমাক খুজছোং। (দর্শক-২)
ক্যা খুজছেন?
হামার দুঃখের কথা তোমার মতো আর কায় ভাঙি কবার পায় কন তো? (দর্শক-২)
আচ্ছা, তোমারগুইলার কথা মোরও মনে পড়ছে।
ভাই, টিভিত খালি গজলডোবা বাধ নিয়া কবার নাগছে, সোগ তো বুঝি না। বুঝি কইমেন? (দর্শক-৩)
শোনেন, গজলডোবা ব্যারেজ ভারত সীমান্তত। এইটা তিস্তা ব্যারেজ থাকি ৬৫ কিলোমিটার উজানত। ওমরা গজলডোবা বাধ দিয়া পানি একতরফা সরাবার নাগছে। এই ফাঁদ ওমরা তৈয়র করছে ১৯৮২ সালত, জলপাইগুড়ি জেলায়। ইয়ার গেট হইল ৪৪টা। নম্বায় ২২১ দশমিক ৫৩ মিটার। ইয়ার ভাগ হইল তিনটা। পরথম ভাগত সেচ প্রকল্প। দ্বিতীয় ভাগত পানি বিদুৎ প্রকল্প। তৃতীয় ভাগত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খাল খনন করি নৌপথ তৈয়র করার প্রকল্প। পরথম ভাগের কাম শ্যাষ হইছে ম্যালা আগত। অ্যালা চইলবার নাগছে দ্বিতীয় ভাগের কাম। আর এইজন্যে ওমরা একতরফা পানি সরাবার নাগছে। গজলডোবার বাম-ডান পাশ দিয়া দুইটা খাল করছে। খাল দুইটা পানি ধরি আইখপার পায় ১৪২ আর ৪৫৫ কিউসেক। ডান পাশের খাল শুক্যান মওশুমত মহানন্দা নদী প্রবাহের সব পানি ধরি আইখপার পায়। আর মহানন্দায় যায় তিস্তার পানি। খালি হামরায় কি সংকটত আছি? না, কেবল হামরা নোয়ায়। ওমার জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি-নাটাগুড়ি-মেখলিগঞ্জ-হলদিবাড়ির মতো পুরান শহর, নতুন শহর, পুরান গঞ্জ, আবাদি এলাকা পানিহীন হয়া পড়ছে। তিস্তা যেটে শুরু হইছে অট্টে পানি আছে। গজলডোবায় পানি আছে। কিন্তু ওমরা কায়ো অটে পানি নিয়া মুখ খুইলবার নয়। সাংবাদিক গেইলেও না। সরকারি-বেসরকারি কোনো নোকয়ে মুখ খুইলবার নয়। তিস্তায় পানি না থাকায় কি কি পরিবর্তন দেইখপার পাইছেন?
আবাদ হয় না। (দর্শক-৪)
পানির স্তর নিচত নামছে। (দর্শক-৫)
মাছ পাই না। (দর্শক-৬)
হামাক পেশা বদলা নাগছে। (দর্শক-৭)
অসুখ-বিসুখ বাড়ছে। সর্দি-কাশি, এলার্জি, চর্মরোগ মানুষ, গরু-ছাগল-হাস-মুরগি সবারে নাগিয়ায় আছে। (দর্শক-৮)
সুন্দর। ধইরবার পাইছেন তাইলে। তিস্তাক আশ্রয় করি ছোট-বড় যে নদীগুইলা বাঁচি আছিল ওইগলা মরি গেইছে। হিসাব করলে ৩৩খান নদী মরি গেইছে। ধরলা, ঘাঘট, আখিরা, দুধকুমর, বুড়ি তিস্তা, শালকী, দেওনাই, মানস, ধুম, নাউহারা, ধাইজান, বুড়িখোড়া আরো ম্যালা নাম। এই নদীগুলাত তৈয়র হইছে ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীগুইলা কায় দখল করিল?
ভুমিদস্যুর দল। (দর্শক-৯)
হামার প্রাণের গান কি?
ভাওয়াইয়া। (দর্শক-১০)
ফাঁদ পাতিছে ফাঁন্দিরে ভাইয়া
পুঁটি মাছও দিয়া-
সেই পুঁটি মাছের লোভেরে বগা
পড়ে উড়াল দিয়ারে-
এই গান কি হামরা শুইনবার পাই?
না। (দর্শক-১১)
বগা আর উড়াল দেয় না, ফান্দিও ফাদ পাতে না।
হাড়িয়া কোনে নাইগছে রে দেওয়া
গুড়গুড়ি ডাকে
পার করি দে সকাল সুকাল
হাত ধরি কও তোকে
রে ঘাটিয়াল পাও ধরি কও তোকে।।
অ্যালা ঘাটিয়াল পাইমেন?
ঘাটও নাই, ঘাটিয়ালও নাই, গানও নাই। (দর্শক-১২)
আয়রে তোরা ভুই নিরাইতে যাই
ভুই মোদের মাতাপিতা, ভুই মোদের পুত,
ভুইয়ের দৌলতে হামার গালা ভর্তি সুখ।
এই কথা কয়জনে কবার পান, বুকত হাত দিয়া কন?
কই তা কবার পাই। ‘গালা’ ভর্তি সুখ পামো কোটে? (সম্মিলিত স্বর)
এবার ধান কাটিমো খচাখচ,
ধানের আটি মাথায় নিয়া
ফিরবে বাড়ি মচামচ-
সোনার ধানের পিঠা বানে
দিমো মুখে গপাগপ,
এবার ধান কাটিমো খচা খচ।
কাটছেন ধান ‘খচা খচ’?
ভুইয়ে তো গাইড়বার পাইনো না। ধান কাটমো ক্যামন করি? গাছত কাঁঠাল গোফত ত্যাল। (দর্শক-১৩)
আছে গরু না বয় হাল
তার দুঃখ সর্বকাল।
অ্যালা এই কথাখান খাটে?
না। (সম্মিলিত স্বর)
তাইলে কি হইবে?
হইবে,
আছে গরু না বওয়াবার পায় হাল
তার দুঃখ সর্বকাল। (দর্শক-১৪)
খুবয়ে ভালো বনাইছেন। অ্যালা মোক কন পানি ব্যবহারের হিসাবে ভারত কি দেশের কিংবা আন্তর্জাতিক আইন মাইনবার নাগছে?
না। (সম্মিলিত স্বর)
হয়, পত্রিকা থাকি জাননু, ভারত পানি ব্যবহারে না মানছে আন্তর্জাতিক আইন, না মানছে ওমার সংবিধানের আইন। আন্তর্জাতিক নদীর পানি সরবরাহ নিয়া ১৯৯৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে কওয়া আছে, ‘প্রত্যেক অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় রাখবে।’ পশ্চিমবঙ্গ পানি সরে নেবার সময় হামার দেশের ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনক’ বিবেচনায় নেয় নাই। হেলসিংকি নীতিমালার ১৫ অনুচ্ছেদে কওয়া আছে, ‘প্রত্যেক তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানায় আন্তর্জাতিক পানি সম্পদ ব্যবহারের অধিকার ভোগ করবে যুক্তি আর ন্যায়ের ভিত্তিতে।’ ‘যুক্তি আর ন্যায়ের’ অধিকারে সব সময়ে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবারে নাগছে। পশ্চিমবঙ্গ নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করি পানি আটকে আখে আবার ছাড়ি দেয়। ১৯৯২ সালের ডাবলিন নীতিমালার ২ নং নীতিতে কওয়া আছে ‘পানি উন্নয়ন আর ব্যবস্থাপনা হবে সবার অংশগ্রহণে।’ তিস্তার পানি ব্যবহারে এইটা হয় নাই। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘জলপ্রবাহ কনভেনশন’ নামে নীতিমালা গ্রহণ করে। এই নীতিমালার ৬ নং অনুচ্ছেদে পানি ব্যবহারে ‘যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার’ কথা কওয়া আছে। পশ্চিমবঙ্গ এককভাবে পানি ব্যবহার কইরবার নাগছে, অটে ‘যুক্তি আর ন্যায়পরায়ণতা’র খাওয়া নাই। পরিবেশবিষয়ক জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৪ নং অনুচ্ছেদ আর জলাভূমিবিষয়ক আমসার কনভেনশনের ৫ নং অনুচ্ছেদে ‘প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব ও প্রাণি সংরক্ষণের’ যে কথা কওয়া হইছে ভারত ওইগল্যা হিসাবত ধরে না। সমস্যা হইল ভারতের, আর দায়টা কাধত নিয়া বেড়াবার নাগছি হামরা।
২৩
এই কাদির…কাদির এততি আয় তো।
আসসালামু আলাইকুম
ওয়ালাইকুম আসসালাম। বইসেক।
আইনুদ্দিন চা, তোমরা এইদোন করি তো মোক ডাকান না, আইজ কী হইল?
মোখলেসটার জন্যে মনটা ক্যামন করে। এইজন্যে ডাকনু। ছাওয়াটা বাপের মতো মোক শ্রদ্ধার চোখত দেখছে। সম্মান করছে। বিপদ-আপদের কথা কইছে। সেই ছাওয়াটা এইদোন আস্তায় আস্তায় ঘুরি বেড়াবার নাগছে। পাগল হয়া গেইল। দুইজনে তো ভালো দোস্ত আছলু। হইলটা কি, কবার পাইস?
চাচা, এইটা তো ম্যালা বড় কাহিনি।
আস্তে-ধীরে কওয়া শুরু করেক ক্যানে।
হামরা দুইজনে কামত বেড়াইলে একদিন দেইখপার পাং অয় বিড় বিড় কইরবার নাগছে। কানপাতি শুনং পূজা দেবার আলাপ কইরবার নাগছে কার সাথত জানি। আশপাশত কাকো দেখং না। অয় খালি কথা কয়ায় যাবার নাগছে। ইয়ার মাঝত শ্বশুর বাড়ি গেছনু, আসি দেখং অয় পূজাত বসছে। জঙ্গল কাটি অল্পেকনা জাগাত ডেরা করি পূজা শুরু করিল। পূজা করতে করতে মন্দিরের পাশত একটা সোনার শিকল বাইর হয়। কামলা নাগায় খুড়ি দেইখপার জন্যে। যত খুড়ে শিকল তত নিচত যায়। অয়ও চিইন্তা আরো ভিতরত নিয়া যায়। শিকলত যে ড্যাগগুইলা বান্দা উয়ার মনত এই কথাখান শক্ত হবার ধরিল। বাইর হওয়া শিকল অয় কাইটপারও পায় না, ছিইড়বারও পায় না। আগ করি সোগ শিকল মাটি চাপা দেইল। এইটা কইরবার যায়া মোখলেসের খুবয়ে কষ্ট হয়। মনে হইছে অয় নিজের ভাগ্যক মাটি চাপা দিবার নাগছে। মোখলেস আবার পূজাত বইসে। বলি দেইল বউয়ের পালা রাজহাস। দিনটা আছিলো ইদের। পূজা দেয় আর আমোদ করে হেন্দু চেংরিগুইলাক নিয়া। এইদোন করি ট্যাকার ড্যাগ ধইরবার পথ চওড়া করে। উইয়ার বউ-ছাওয়া ইদের দিনত খাবার না পায়া কান্দে। শ্যাষের দিন অয় পূজাত বইসে ফুল, পিঠা সামনত নিয়া। পূজা শুরুর পর পাঠা বলি দিছে। সাথে আছিল গান-বাজনা, নাচ। কোনো মুসলমান গায়ক-নাচনেয়ালী দেখং নাই। পরে শুননু দেবী কইছে, হেন্দুক খাওয়াবু আর নাচাবু; তাইলেই জুটপে ড্যাগ। অয় তাইয়ে করিল। মালতি ভারি শরীল দোলায়-নাচায়। বিইন্দি গানের তালত আরতির নাচ দিবার ধরিল। সুধীরের মাও মোখলেসের নামাজ পড়া পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি পরি বিইন্দির সাথে তাল দেয়। চইলতে থাকে মোখলেসের পূজা আর ওমার নাচ-গান। ড্যাগের দেবী ধন নিয়া হাজির হবার ধরে। ওইদিন আছিলো আমাবইস্যার আইত। ঘুটঘুটা আন্ধার। চোখে কিছুই দেখা যায় না। দেবী আইসপার সাথ সাথ আইতের আন্ধার কাটি যাবার ধরিল। ম্যাঘ-বৃষ্টির আইতের বিজলীর চমকের মতো চাইরপাক চমকাবার ধরিল। এইদোন হওয়ার পর হাজির হয় দেবী ট্যাকার সাতখান ড্যাগ নিয়া। দেবীর হাসিত চারপাশ খলবল করে। মোখলেসক দেবী কয়, নে তোর ধন মুই আর আইখপার পাবার নাগছং না। মোখলেস নিবার চায় ধন। কিন্তু একটা করি ড্যাগের মুখত তিন-চাইরটা করি ফণা তোলা সাপ। অয় ভয় পায়। চুপসি যায়। দেবীক চলি যাবার দোহাই দেয়। দেবী কয়, তোর দোহাইয়ের গুল্লিমারং। এই ধন তোক নেওয়ায় নাগবে। মুই আর পাহারা দিবার পাবার নং। তুই নিবু কিনা ক? মোখলেসের শরীল ঘাইমবার ধরে। অয়, হা, না কিছুই কবার পায় না। ধন নিলে উইয়ার ছাওয়া জামিল থাইকপার নয়। সাপের কামড়ত মারা পড়বে। হইবে দেবীর ভোগ। দেবী তো এই কথা আগত উইয়াক জানায় নাই। মোখলেস চিইন্তাত পড়ি যায়। উইয়ার সামনত দুইটা পথ খোলা থাকে। হয় ছাওয়ার মরণ, না হয় ধন হাত ছাড়া। চিইন্তার আকাশত অয় সোগ চিইন্তা ছাড়ি দেয়। চিইন্তার ছড়াছড়ি আছে, সমাধান দেইখপার পায় না। এতোদিনের সাধনার ধন হাত ছাড়া হবার নাগছে। উপায় না পায়া মোখলেস জ্ঞান হারাইল। ড্যাগগুইলা চলি যায় না। থাকে উইয়ার ঘরত। মোখলেসের দ্বিতীয় বউয়ের বেটি শিউলি ঘর নেইপ্পার যায়া ড্যাগের আনাগোনা টের পায়। নোরা দিয়া মাঝিয়া নেপে কিন্তু নেপা হয় না। মাটি ফাটি যায়। জাগায় জাগায় খাইল হয়া গেইল। সেই খাইল মুখের য়ুপ নেয়। নুকি থাকা ড্যাগগুইলা শিউলির সাথে কথা কয়।
এই মাগি নেইপা হামার মুখ বন্ধ করিছ ক্যা?
তোক চাং না, তাই।
তোর বাপ এতোদিন পূজা করিল ক্যান? তোর বাপ ধ্যানত বসি হামাক ডাকছে ক্যান?
বাপক নোভ দেখাছিস ক্যা?
তুই মোক জব্দ কইরবার নাগছিস?
তুই ভাগ।
কিন্তু ওমরা যাবার চায় না। শিউলি আগ করি খাইলের মুখ মাটি দিয়া বন্ধ কইরবার চাইলে ড্যাগের দেবী জোরে চিল্লি উঠে। ভয় পায়া শিউলি কান্দে। মাক ডাকে। মাও আসি এইদোন দেখি খাইলের মুখত মুতি দেয়। চলি যায় দেবি এই অপমান সহ্য কইরবার না পায়া। মোখলেস জ্ঞান ফিরি পায়। মুখত জপ, মোর ট্যাকার ড্যাগ কোটে? এই কথা জপতে জপতে আবার অজ্ঞান হয়। পাওয়া হয় না উইয়ার ট্যাকার ড্যাগ। ওই শোকে সন্ন্যাস নিছে। খুঁজি বেড়ায় ট্যাকার ড্যাগ। সামনত ধানসিদ্ধ ড্যাক দেখলেও উইয়ার কানিত হাত নাগি টানি ধরে যাতে আর না হারায়। এইটা যে ট্যাকার ড্যাগ নোয়ায়, মোখলেসক বুঝাইবে কায়? বোঝাইলেও ওই জ্ঞান উইয়ার কোনো কামত আইসে না। উয়ার ট্যাকার ড্যাগয়ে চাই। নাইলে য়িন শোধ করবে ক্যামন করি!
২৪
ভাবি, বাড়িত আছেন?
আছি। ক্যায়?
মুই, তোমার ননদ।
লিপি, আইসেক, বইসেক চেয়ারত। মিমির বেটি এইটা?
হয়।
ওমা, কি সুন্দর, পরীর নাকান দেখতে।
ইয়াক নিয়াও কতো কথা। সেদিন মুক্তার মাও আসি কবার নাগছে, তোরে মতো হইবে গাডুম-গুডুম, এতো সুন্দর হবার নয়।
তুই কি কলু?
কনু, ইয়ার যদি কপাল ভাল থাকে, তাইলে প্রাইভেট কারত করি ঘুরি বেড়াইবে। তোমার তো সারাদিন পুটকি ছ্যাচড়াইতে দিন যাইবে।
কয়, না রে মুই এইটা ইচ্ছা করি করোং কামলাগুইলার নগে, কাম না করলেও মোর চলে।
হয় ইচ্ছা করি মানুষ ভুইয়ত যায়া নামে। তোমরা কইলেই হামরা বিশ্বাস করনো। অ্যাকনা থতমত খায়। পরে আরেক কথা কবার ধরিল। কয়,
হয়, এইটা কইছিস ঠিক কথা। মোর বইন ধলা আছিল, অয় গেইছে ভাঙা বাড়িত। আর ফুফু শ্যামলা আছিল, অয় গেইছে পাকা বাড়িত।
রং-ঢং নিয়া এইসব কোনো কথা হইল? বিচার হইল? স্বামী বাঁচি থাকতে কাদো করা ভুইয়ত মাছ মাইরবার নামছে। ওমাক কয়, যাও না, তোমরা বাড়িত যায়া হাস-মুরগিগুইলা সামলাও। মুই যাবার নাগছোং, দুই মিনিটের মাঝত যাইম। খাড়া হয়া না থাকি যাও। হাসের বাচ্চাগুইলা শিয়াল-বেজি নিয়া যাইবে। মুই অ্যালায় আইসপার নাগছং।
স্বামীখান আসি খোয়াড়ত হাস-মুরগি তোলে। অয় মাছ মারি বাড়িত নিয়া যায়। সারাদিন মাইনষের গিল্লা গায়া বেড়ায়। উইয়ার ভাসুরের ব্যাটা ওযা আখে নাই। কবার নাগছে, ক্যারে মতিন, বুইরাগাদা চ্যাংরাটা ওযা আখিস না ক্যানে? মতিনের বউয়ক কবার নাগছে, সুন্দরীরা তেন্দর হয়। তোমার বেটি যে সুন্দর ওইদোন তেন্দরও হইবে। দশ নাখ ট্যাকা নাগবে বিয়া দিতে। অ্যালা মতিনের বউ কয়, মোর বেটি সুন্দর হইবে না বান্দর হইবে, না তেন্দর হইবে, তোমাক কবার কইছং? দশ নাখ ট্যাকা নাগবে, উইয়ার বাপে দেবে, উইয়ার দাদায় দেবে। তোমরা দিমেন পাচ নাখ ট্যাকা?
মুক্তার মাও কয়, ক্ষ্যাপো ক্যা? ক্ষ্যাপো ক্যা?
অয় কয়, ক্যা তোমরা এইগল্যা কথা কইমেন, ভালো কথা বাদ দিয়া।
সারাদিনে এই কাহিনি, সেই কাহিনি গায়া বেড়াবারে নাগছে। মিনহাজের বউয়ক কবার নাগছে, তোমার খালি বাথরুম গড়ায় হইবে। খালি টাইস নাগায় হইবে, টাইসত হাগায় হইবে। জমি কেনা আর হবার নয়। জমি চোক্ষে দেখা হবার নয়, এইগল্যাই করা হইবে। মিনহাজের বউ ক্ষেপি যায়া কয়, তোর পুটুর পুটুর করিয়ায় দিন যাইবে, তুই হাইগবারো পাবার নইস, মুইতপারও পাবার নইস। তোর বাড়িও হবার নয়। তুই জমিনে কর, জমিনে কর। জমিন নিয়া কবরত যা।
কয়দিন আগত না শুননু অয় ঢাকাত গেছলো?
হয়, গেছলো তো। ঢাকাত গেইলে উইয়ার বাপের মুরিদের ঘরে কয়, তুমি যে জামা পড়ছো এই জামা এখানকার বুয়ারাও পড়ে না। পরে তিনসেট জামা গড়ে দেইল, ওইগল্যাই অ্যালা পড়ে। উইয়ার বাপের আরেকটা মুরিদ আসি চাউল-ডাউল, গাছের পাকা আম, হাস-মুরগি-ডিম আনি দেয়। পরে অয় কাম করায়া নেয়। ঘর নেপিয়া নেয়। কাম শ্যাষ হইলে কইবে অ্যালা চলি যাও। চাইট্টা খাবারও দিবার নয়। মুরিদখানও এইদোন, কয়দিন পর আবার আইসে। জিগাইলে কয়, আব্বা-হুজুর স্বপন দেখাইছে। কইল, ক্যারে বিউটি, তুই মোর বেটিটাক দেইখপার যাইস না ক্যা? এইজন্যে আইসং। মুক্তার মাও খালি নাইরা যুক্তি দেখাইবে। যখন পাল্টা যুক্তি দেখাইমেন, তখন আর পায় না। যামরা বোঝে, ওমরা কথা ধরলে অয় তো আর ক্লিয়ার করি কবার পাবার নয়। অয় ভাসুরগুইলার সাথে মাছও মাইরবার নামে দীঘিত। কায়জানি বোয়াল পাইছে, অয় চিৎকার মারি উঠি কবার নাগছে, হুররে, বোয়াল পাইছে রে। কবার নাগছে
আর নাইচপার নাগছে। পাড়ত থাকি শউরি কবার নাগছে, শয়তানের শয়তান, বেআক্কেলের বেআক্কেল। এই বলে আবার পীরের বেটি। এত খারাপ। ভাসুর দুইটার সামনত ন্যাংটা হয়া মাছ মাইরবার নাগছে। মাছ পাইছে তো পাইছে। হাত দুইটা তুলি হুররে হুররে কওয়া নাগবে? মান-সম্মান সোগে খালু।
অয় ফির কয়, এইটায় তো মজা। তোমরা কি বুঝমেন?
হয়, বুঝং তো। মজা। ভাসুরঘরের সামনত হুররে হুররে করা তো মজায়!
স্বামী ঘুম থাকি উঠতে দেরি হইলে, কইছে, ঘুম থাকি উঠিস নাই অ্যালাও। তোর পাছায় চাবুক দিয়া পিটাইম। কার কত বয়স, এইগল্যা নিয়া নাইরা প্যাচাল পাড়ে। কবার নাগছে, মোর বয়স নাই। বয়স একেবারে কম। উইয়ার ভাসুরের বউ অ্যালা কয়, হয় হয় তোমার বেটি মুক্তার থাকি তোমার বয়স কম।
পরে কয়, না, না, মোর বয়স সত্য সত্যই কম। সবার চোখের সামনত বড় হনু।
হয় হয়, তোমার জন্ম না সেদিন হইল। তোমার বেটির জন্মের দুইদিন পর।
কয়, টিভি দেখা যায় না। ডিস দেখা যায় না। দেখলে গুণাহ হয়। এইগল্যা কয়া আইত বারোটা ধরি জাউয়ের ঘরত স্টার জলসা দেখে। টিভি দেইখপার যায়া কাইজ্জা-কাইজ্জি নাগলে বাপের বাড়ি থাকি এতো বড় একখান টিভি দিয়া গেইছে। অ্যালা দিনমনে দেখে। অয় কি যে দুই নাম্বারি কথা কয়। সেদিন মাটি তুইলবার নাগছে, ভাসুরের বউ আসি কইছে, দুইখনা মাটি দ্যাও, নিয়া যাং। সওয়াব হইবে। অয় কয়, মোর সওয়াব নাইগবার নয়। এত সওয়াব থুইম কুটে? ম্যালা সওয়াব করছং। এইগলা দিয়াই পাড় হয়া যাইম।
নদীত ঢ্যাল মারবে ধরি। জান্নাতত যাওয়া নাইগবার নয়।
ভাবি, কথাখান মন্দ কন নাই। মুক্তার মাওয়ের ইতিহাসের শ্যাষ নাই।
আরো আছে?
কি কন, আছে না। আপনে তো নতুন, জানেন না অত কিছু। অয় চিঠি নেইখা প্রেম করছে, পরে তো বিয়াই বসিল। অ্যালা তো চিঠির যুগ নাই, ওইজন্যে বেটিরঘরক মোবাইল কিনি দিছে প্রেম করার নাইগ্যা।
দুইটাই প্রেম করে?
হয়, একটা ডাইভারের নগে। আরেকটা কারিগরি কলেজেত পড়া চ্যাংরার নগে। ওমার মাওয়ের একটা ফোন, দুইজনে কথা কয়। একটা ফোন দিয়া কি দুইজনে কথা কবার পায়? ওমার মা করিল কি, দুইজনক দুইটা মোবাইল কিনি দেইল বয়স্কভাতার ট্যাকা দিয়া। আইতত দুইজন দুই পাশত শোতে, আর মাঝত শোতে ওমার মাও। আইতভরি ওমরা প্রেম চালায়। দুইটা চেংরিক বিয়া দিতে ছয়-সাত নাখ ট্যাকা নাইগবার নয়। এতো ট্যাকা কুটে পাইবে? বড় বইন দুইটাক থুইয়া ব্যাটাখান বিয়া করি বসি আছে। অ্যালা উইয়ার সংসার চালাইতে টিকার বাতাস বাইর হয়া যায়। বইনেরঘরক দিবে কি? এইজন্যে মাও বেটিরঘরক আরো উসকি দেয়। ব্যাটাখান শুনছে ওমরা প্রেম করে আইত জাগি। শুনি মাক আর বইন দুইটাক গালি দিছে। সকালে ওয়ার মাও বিচার নিয়া যায় চেরমেনের বাড়িত। মাও কয়, মোর চ্যাংরাখান বইনের নামে অপবাদ দিয়া বেড়াবার নাগছে। কয়, মোর দুই বেটি প্রেম করি বেড়ায়। মোক কয় বেশ্যা, আ-ি, বাড়িত থাকি বের হ। এইদোন মা মোর নাগে না। নাতিখ্যান কয়,
হাড়িত থুনু পাকা কলা
বউ বেড়াইছে দুপুর বেলা।
ও বউ তুই বেড়াইস না
বটের তলোত যাইস না।
বটের আটা পড়বে
বিয়ার স্বামী মরবে।
মাটি দিবে কোন খানে
বট গাছের নিচে
বট গাছের পাতা নাই
ডেসকো মাগির ভাতার নাই।
ইয়ার বিচার করো।
নার্গিসের মাও এইগল্যা কয়া গেইলে, ব্যাটা ফির আইসে। কয়, মা মোর দুর্নাম করে। মোর মাও নটি। দুই বেটিক নিয়া মা মোর প্রেম করে। প্রেম করতে করতে মা-বেটি সবায় পালাইবে। মাক দেখমেন খালি দ্যাশত দ্যাশত ঘুরি বেড়ায়। বাপটা তো মরি গেইছে। মরি যায়া বিশ্রাম নিবার নাগছে। আর মোক ধুইছে পেরেশানত। বাড়িত যায়া ব্যাটা ঘোষণা ছাড়িল, আইজক্যা থাকি মা আর বেটিঘর তোমার কারো সাথত হামার কোনো কথা কওয়া-কওয়ি নাই। তোমরা তোমার মতো প্রেম করি বেড়ান। মোর কল থাকি পানি নিবার নন। মাও কয়, থুইয়া দে তোর কথা কওয়া-কওয়ি। কথা না কইলে বুঝি মোর প্যাটের ভাত হজম হবার নয়। ম্যালা না খায়া তোক খাওয়াইছং। অ্যালা এইগল্যা কইস। না খানু তোর কল থাকি পানি, এইজন্যে ভাবছিস হামার দিন যাবার নয়? ওমরা তিনটা বাড়ি পর আকবরের বাড়ি থাকি পানি আনি খায়। বেটিরঘরক নতুন সিম কিনি দিছে। দোকানত যায়া শুনছে নতুন সিম কিনলে ম্যালা বোনাস আইসে, কিনি আনিল। অয় পারভীন মেম্বারের পেছনত পেছনত ঘুরে। ইলিফের চাউল পায়। স্কুলত বিধবাগুইলাক নিয়া কমিটি হয়, অটে পদ পাইছে। মিটিং কইরবার যায়। বাড়িত আসি বেটিগুইলাক নিয়া ভুইয়ত পানি দেয়। ধান পাকলে ভুইয়ত এন্দুর দাবরাবার যায়। ধান কাটে। আটি মাথাত করি আনে। সময় পাইলে বেটিরঘরক বিশ্রাম দেয়। স্বামী বাঁচি থাকলে না হয় ওমরায় বেটি দুইটার ব্যবস্থা করিল হয়। অ্যালা স্বামীও নাই, জমিনও নাই। বিয়া দিবার গেইলে ট্যাকা-পয়সা নাগবে, অনুষ্ঠান করা নাগবে, অয় এতো ট্যাকা পাইবে কুটে? এইজন্যে বেটিরঘরক অবসর দেয়। যাতে ওমরা প্রেমিকের সাথে আলাপ কইরবার পায়। মাইজলা বেটিরখান হালবোয়ামেশিন চালায়। ওমার বাড়ির আশপাশত যতক্ষণ হালবুয়াইবে ততক্ষণ অয় বাড়ি ঢুইকপার নয়। গাছত হ্যালান দিয়া চায়ায় থাকপে। ওমার বাড়িত বড় জাম গাছ আছে, অটে বসি থাকপে। অয়য়ো চাইবে। হাসপে। আন্ধার শুরু হইলে বাড়ি আসপে। অয়য়ো বাড়িত যায়া গা থাকি কাদো সরে ভাত খায়া অ্যাকনা য়েস্ট নিয়া আইতত কথা শুরু করবে।
বিলকিসের মাও বাড়িত আছিস?
আছং তো। কি হইছে?
আইনুদ্দিন ভাই, আসসালামু আলাইকুম!
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি রে ভালো আছিস? তোর বাপ-মা ভালো আছে?
হয়, সবায় ভালো আছে। তোমরা তো আর হামার বাড়িত যান না, বড়লোক হয়া গেইছেন?
না রে, সময় পাং না। যাইমনে।
ভাবি, ভাই, থাকেন, আইজক্যা যাং।
বইন, সময় পাইলে আবার আসিস।
আচ্ছা!
বউ, কামলা আইছে।
কামলা কুটে পাইনেন?
মোখলেস ম্যালা কয়দিন আগত কছিল, আইজ আসছে। ছাওয়াটা তো সন্ন্যাস নিছে। কথা কইলে শুনছে।
হয়, কামের পোলা আছলো।
অয় নাকি ট্যাকার ড্যাগের ফান্দে পড়ি আইজ সন্ন্যাসী।
কারটে শুননেন?
উইয়ার দোস্ত কাদির গপ্প করিল আসার পথত।
এইটা তো কপালের ফ্যার।
হ, হবার পারে। শোন, কামলাক ঘর দ্যাখে দে, কোনটা আগে ঠিক করবে। আর আইতে কুটে ঘুমাইবে ওই ব্যবস্থাও করেক। ওমরা দশদিন থাকপে ঘর-বাড়ির সোগ কাম শ্যাষ করি যাইবে। মুই নেপটিন থাকি আইসপার নাগছোং।
চাচি, আসসালামু আলাইকুম।
ওয়ালাইকুম। আসো। তোমরা, বাঁশগুইলা কাটতে থাকো। তোমাগোর চাচা আইসা বাকি কাম দেখায়া দিবো।
আচ্ছা!
বাঁশগুইলা কাটলা?
হ, চাচা।
তোমরা, ত্যামাল তুলবার পাওতো?
হ, পাই।
তাইলে ত্যামাল তুইল্যা বেড়াটা দিয়া ফ্যালো, আমি বাজার থাইক্যা আসতাছি।
আপনে যান। আমরা বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা হরতাছি।
আমরা যে কাম হরবার দরছি, কেউ তো কাউরে চিনি না। বাই, কইবা তোমার কতা?
কইতাম না হ্যা। আমি মহিউদ্দিন। দোয়ানি বাজারের সাইডে থাহি। আগে তিস্তা নদীত বালু উডাইতাম। আর অ্যাহন মাইনষের গর-দুয়ার ঠিক হরি। তোমার কথা কও।
চরো সবাই আমাক সুলতান কইয়া ডাহে। নাউ বাইতাম। রাইতে মাছ দরতাম। নদীর পানি তো হুগায়া গেছে। অ্যাহন তোমার মতোই গর-দুয়ার বান্দা-বান্দির কাম হরি।
আগে হরছিলা এই কাম?
না, দরহার পড়ে নাই তো। আঙ্গোর আছিন গো, এর চায়া কত বালা গর আছিন। নদী গরদোর সবই বাইঙা লইয়া গেলো। পরে খাস জমিনো থাহা শুরু হরলাম। আর রাইতে মাছ দরতাম। চইল্যা যাচ্ছিলই।
আর আগাইলো না ক্যা সুলতান বাই?
অ্যাক নম্বর কারণ অইলো জমা-জমি। জমি নদী লইয়া গেলো। দুই নম্বর কারণ বড় বাই বিয়া হইরা আলাদা খাওয়া শুরু হরলো। তিন নম্বর কারণ বাপ-মা আঙ্গোর বইনরে বিয়া দিয়া ট্যাহা পয়সা ছাড়া অয়া গেলো। একটা বইনরে বিয়া দেওয়া, একটা বিধবা বইনরে বাড়িত পুষা। তিন সমস্যা অ্যাকলগে অইলে মাইনষের যা অয়।
ও। আগে তুঙ্গোর বাড়ি কই আছিন?
আঙ্গোর বাড়ি আছিন ওই ব্যারেজের নিচে। ব্যারেজ বানাইবো, এক্কেবারে মাতাত বাড়ি দিয়া কিইন্যা নিলো। কিছু সম্পত্তি নদীর প্যাডো চইল্যা গেলো। মিয়া বাই, নদী বাঙা মাাইনষের শান্তি নাই। গর আজক্যা বাঙুন লাগে, কালহা বাঙুন লাগে। বাড়ি বাঙতে বাঙতে এইনো। এইনো আর জমিন নাই। ব্যারেজ বানাইবার সময় চাচার বাড়িত যায়া দুই বছর আছলাম। দেখপা, নদী যেইনো বাঙার চাঞ্জ নাই অইনো দ্রীম হইরা বাইঙা গেলো। হঠাৎ হইরা বান আইলো ওই সুযুগে নদীও ডুইক্যা গেলো। নদী যহন আইবার দরলো ওই সময় কেউই আর জমি কিনবার চাইলো না। নদী বাঙবো বইল্যা আমি বেচপার চাই, যে কিনবো হ্যারো তো ওই ডর আছে। জমিন না বেচাই রইলো। বানের সময় নদীত ডাক উইড্ডা যায়। ডেউ কি তার! তহনি বাঙে নদী। বাঙা শুরু অইলে দুন কে দুন লইয়া যায়। অ্যাক কিলো রাস্তা আদাগণ্টাত বাইঙা যাইবো। নদী এলাকাত অইনো দনী অইনোই গরিব। নদীর কুনু গ্যারান্টি নাই। চর জাগলো আবাদ হরলো আবার পানি আইলো বাইঙা গেলো। বাঙা-বাঙি শ্যাষ অইলে নিজেরে বুজাই, চর বাঙছে, বাঙছে, কপাল তো নিবার পাইলো না। আল্লায় আত-পাও দিছে হইরা খাইবার পায়াম। আল্লার যেইডা বালা মনে অইছে হেইডাই হরছে। আমরা তো মরতাম না বাইচ্চা থাহামি। এই বুজ কি আর মানে? মনো দুঃখু জমাই থাহে। বড় বাই শিখাইছিলো মাছ মারা। পরতম দিন মাছ মারবার গেলে খালি গুম দরে। পইড়া যাই। শইল ঝাহি মাইরা উডে। সহালবেলা বাড়িত আইলে গুময়ি দরে না। পরথম তো। তারপরের দিনও ওইরহমই। তারপরের দিন গুমও দরছে। আস্তে আস্তে হেবিট অয়া গেলে আর সমস্যা অয় নাই। ওই সময় ছুডু আছলাম খাডনি আরো বেশি অইছে। নাউতেনে পইড়া গেছি। সাতরায়া আবার উঠছি। দুই সেট হইরা কাপড় নিছি। পইড়া গেছি। উইড্ডা কাপড় বদলাইছি। তহন নদীত ম্যালা মাছ আছিন। বড় বাইয়েরা অত বুজতো না, অ্যাহন আমরা যেদুন বুজি। মাছ আছিন কিন্তু মারবার পাইছে না। বেশি মাছ কিবা মারুন যায় শিইখ্যা শ্যাষ হরতে না হরতে মাছ কমা শুরু অইলো। নদীত মাছুয়া ম্যালা অওয়ায় টানা-হ্যাচড়া হইরা প্যাট চলছিন। মাছ মারবার যাওয়ার আগে দুইজুনে বুদ্দি হরি কুন জাগাত গেলে মাছ কিরহম পায়ুন যাইবো। অ্যাকদিন যায়া ঠগি, আরেকদিন জিতি। কুনুদিন দেহা গেলো ট্যাহা-পয়সা দরকার, মাছও নাই। কই আজক্যা ম্যাগের মইধ্যে বিইজাই মাছ মারাম। বিইজ্জা গেলে গামছা পিইন্দা লঙ্গি লাইড়া দেই। হুগাইলে, পইরা বাড়িত আয়ি। মাছ দরাটা অইলো আন্দারের হিসাব। যারা নতুন মাছ দরা শিখপার চায় তাগোরে লগে লইয়া গেছি। মাছ মারা শিখাইছি। আমারে নাউ চালানির ডাইবারও কইবার পারো।
বুঝলা মহিউদ্দিন বাই, মাছ অইলো বাগ্য। আজকা ৫ কেজি পাইলাম। কুনুদিন ২ কেজি। কুনুদিন পাইলাম না। গুইরা আইলাম। আগে ২০০ ট্যাহার মাছ বেচলে, কি সুন্দর সংসার চলছিন। অ্যাহন ২০০ ট্যাহার মাছও যদি বেচি খরচের পুটকি-তি আইড্ডা যায়। চাইল কিনুন লাগে, তরহারি কিনুন লাগে, নুন কিনুন লাগে। ট্যাহা শ্যাষ। কি জমা থাকপো? কি খায়াম? সংসার বাড়ায়াম কিরহমে? জমি-জমা যদি থাকতো তাইলে মাছ মারা আর আবাদ হরা দিয়া সংসারডা বাড়তো। সহালে খাই, দুহুরো খাই, রাইতে পাইলে খাই, না পাই তো না খায়া থাহি। এইনো দনী-গরিবও নাই যে অ্যাকমুড বাত আইন্যা খায়াম। আঙ্গোর যে দশা, অনজাতি যে আছে তাগোরো হেই দশাই।
আঙ্গেরডাই খালি হুনবা, তোমার কথা কইবা না?
আঙ্গোর কথা আর কি শুনবা সুলতান ভাই। বাপ-দাদারা বালু তুলতো। ছোডুবেলা থাইক্যা তাই দেখলাম। পরে আমিও শিখলাম। তোমার বাপও মাছ মারতো?
বাপ আড থাইক্যা দান কিনতো। হেই দান বাড়িত আইন্যা হুগায়া ডেহিত বানছে, নাইলে মিশিনো লইয়া গেছে। বাঙাইছে। চাইল বেচছে। ঋণ হইরা সাইকল কিনছিন। সাইকলো হইরা তিনমুণ-চাইরমুণ দান লইয়া আইছে। এইতা বিজাইছে, হিদ্দ হরছে, হুগাইছে। চাইল বেচার ব্যবসা অচল অইলে নাউ লইয়া নদীত নামলো। অ্যাহন বেগারি দেয়। বাপে কয়, বইয়া থাহার চায়া বেগারি খাডা বালা। মাইনষে জাল-টাল সবই কিইন্যা দেয়, বাপ খালি সেড হরে। মাসে দুইডা-তিনডা নামাইবার পায়। সারারাইত মাছ মারলে সহালবেলা শইল্লো এমনিতেই জ্বর আয়ে। কুনুদিন রেস্ট লই। বেশি অসুখ অইলে মানত হরি। কই, অসুখটা বালা হইলে সামনের শুক্রবারো মুরুগ জবো হইরা পোলাও দ্যাম মসজিদো। আব্বা-মা কইছে, মাছ মাইরা খাবি, কাম হইরা খাবি, যা হইরা খাবি খা, চুরি হরবি না। মাইনষে যাতে না কইবার পায় অমুকের ব্যাডা, অমুকের নাতি চুরি হইরা খায়। মাছ মারবার যায়ুন লাগেই। বেহালালি হরুন যাইতো না। কামাইডাই নিশা; পরকালের হিসাব আর এই যুগো হালাল খাওয়া; অন্য হিসাব নাই। খাটনি বেশি অইলেও হালাল খান লাগবো। অ্যার মইধ্যে কিছু থাকলে ব্যাডা খাইবো। অসুখ-বিসুখ অইলে ঠিক অইবো। আবার কাম হরাম। আবার অসুখ অইবো, ফির সারবো। কাম হরাই লাগবো। অ্যাহন মাইনষের বাড়িত কাম হরি মালিক দুইশ’ ট্যাহা দিলে অইহান থাইক্যাই খাওয়া, পরা, জমা সব। সামনে তাকাও, চাচা আইতাছে মহিউদ্দিন বাই।
হ, ব্যাডার শইল্লো শক্তি কতো। আডে তো না, মনে অয় দৌড়ায়।
কামো মন দ্যাও।
কি বাবারা, তোমরা ত্যামাল তুলা শ্যাষ করছো?
হ, চাচা, প্রায় শ্যাষ।
দুপুরে খাওয়ার পর বেড়া গাতপার পারবা?
চেষ্টা হরুন যাইবো।
হালার চেষ্টা মারাও। কইলে কি হয় পারমু।
চাচা, কিছু কইলাইন?
না, তোমরা হাতের কামটুকু শ্যাষ কইরা খায়া নাও।
আচ্ছা।
চলবে…