॥ পর্ব-১৬ (শেষ)॥
৪৮
শুনছেন ভারত সরকার এই পরথম নির্দিষ্ট সময়ের কথা কইছে। কইছে ২০১৮ সালত তিস্তা চুক্তি হইবে। এই সময়ে চুক্তি হইবে ভরসা পান?
আহসান ভাই, হামরা ভরসা পাই না। ওমরা টাল্টিবাল্টি করি খালি পিছাইবে। (দর্শক-১)
তিস্তা চুক্তি কইরবার জন্যে যে আন্তরিকতা দরকার, ওইটা ওমার নাই। (দর্শক-২)
একটা তারিখ ধরায়া হামাক সান্ত¦না দিছে, যাতে হামরা চুপ থাকি। (দর্শক-৩)
এইটা হবার পারে বাংলাদেশ আর ভারতের আজনৈতিক কৌশল। আবার আজনৈতিক মীমাংসা ছাড়া এই চুক্তি হবারো নয়। (দর্শক-৪)
মোদ্দাকথা, ওমরা গজলডোবার তিন পর্যায়ের কাজের ভিতরত সেচ প্রকল্প করছে, জলবিদুৎ চালু করছে, তিন নম্বরটা যে বাকি আছে, ওইটা পূরণ না করি চুক্তিত বইসপার নয়। (দর্শক-৫)
ওমরা এমন সময় চুক্তিত সই দিবে যেসময় হামার তিস্তা চুক্তি আর দরকারত নাইগবার নয়। (দর্শক-৬)
ওমরা জিওখান বের করি নিয়া তারপর চুক্তিত আইসপে। (দর্শক-৭)
২০১৮ সালে যে তিস্তা চুক্তি হবার কথা, এইটা নিয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কইল ‘কেন্দ্র, রাজ্য আর বাংলাদেশ—তিন সরকার সহমত না হলে তিস্তা চুক্তি সই হবার সম্ভাবনা নাই।’ ‘নাই’ শব্দ আছে। ২০১৭ সালত যখন তিস্তা চুক্তি নিয়া আবার তোড়জোড় আরম্ভ হইল হামার দেশের পক্ষ থাকি, তখনও মমতা বেঁকি বইসে। অয় তিস্তার জলের বদলে দিবার চায় বিদুৎ। হামরা বিদুৎ নিয়া করমো কী?
হয়, করমো কী! (সম্মিলিত স্বর)
অয় বিকল্প প্রস্তাব দেয়, কয়, ‘তিস্তায় জল নেই। কোথা থেকে জল দেব? তিস্তার জল ভাগাভাগিতে তার আপত্তি নেই, যদি এ অঞ্চলের আরো কয়েকটি নদীর জল তিস্তায় এনে জলের পরিমাণ বাড়ানো যায়। বাংলাদেশ জল নিতে পারে তোর্সা, মানসাই ও সংকোশ নদী থেকে।’ অর্থাৎ আগের কথায় নতুন করি শুনাবার নাগছে। আবার কয় কি, বাংলাদেশের সাথে উইয়ার আর আজ্য সরকারের সম্পর্ক নাকি কোনোদিনয়ে খারাপ আছিলো না। কথা শোনো। শরীলত এ্যাসিড মারি মুখ চিপি ধরি কয়, কিছু হয় নাই।
হামার সরকারো দিছে ভালো করি জবাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকল্প প্রস্তাব খারিজ করি কইছে, ‘তিস্তার জলই চায় বাংলাদেশ’। জোর দিয়া কইছে হামার পানিয়ে দরকার। মমতাক খোঁচায়া কইছে, ‘লেকিন দিনিমনি এক কাম কিয়া। হাম ইলেকট্রিসিটি দেউঙ্গি। পানি মাঙ্গা, লেকিন ইলেকট্রিসিটি মিলা।’
মমতা সাহেবা তোর্সা, মানসাই ও সংকোশ নদী থাকি যে পানির ব্যবস্থা কইরবার কইছে এইটা হইল নম্বা সময়ের ব্যাপার আর ব্যয়সাধ্য। এইটা বাস্তবায়িত হবার কোনো সম্ভাবনাও নাই। এই বেটিটা খালি বাঁকা পথ দিয়া হাঁটে। অয় কল্যাণ রুদ্রক নিয়োগ করছিল পরিস্থিতি বুইঝবার, বিকল্প পথে পানি দিবার কথা কতকুইনা ক্ষতির বা সম্ভবের তা বিশ্লেষণ করি দেইখপার কছিল। অয় এইটা বিশ্লেষণ করি দেখিল এইটা করা সম্ভব নোয়ায়। ওমার কথায়, ‘তোর্সা বা ধরলার মতো নদীগুলো থেকে খাল কেটে বাড়তি জল তিস্তার দিকে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেটা মুখে বলা যতোটা সহজ, কাজ করা ততটা কঠিন।’ আরো কন, ‘ডুয়ার্সের গহীন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এই খাল কাটতে হলে পরিবেশ ও ইকোলজির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বর্ষায় এই নদীগুলো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এ সময় পশ্চিমমুখী খাল চালু রাখতে গেলে ভায়াডাক্ট বা অ্যাকোয়াডাক্ট তৈরি করতে হবে।’ আসলে এইদোন করি হামাক আরো দীর্ঘসময় ধরি পানি থাকি বঞ্চিতো আইখপার চায়। যাও এ্যাকনা সম্ভাবনা হবার ধরছিল নোট বাতিল নিয়া নরেন্দ্র মোদী আর মমতার মাঝত শুরু হইছে ক্যাচাল। এইদোন ক্যাচাল বাজাইবে কিংবা বাজি থাকপেয়ে, হামরা পানি পাওয়া থাকি বঞ্চিত হইতেয়ে থাকমো। তোমরা কি কন?
হামরা আর কি কমো? তবে হামার সরকার ম্যালা আগাইছে, কেন্দ্র সরকারক আজি করাইছে। এ্যালা আজ্য সরকার মত দিলেয়ে তো হয়। (দর্শক–৭)
আজি হইলে তো পানি পায়াই যাইমো। ওইটাই হইল ওমার বুদ্ধি। একজন আজি হইবে আরেকজন হবার নয়। বোঝাইবে, হামার প্রধানমন্ত্রী তো পানি দিবারে চায়, খালি মুখ্যমন্ত্রি চায় না, ওইজন্যে চুক্তিখান হয় না। ওমরা এইদোন অবস্থা তৈরি করি হামাক পানিতে মাইরবারো নাগছে, আবার হামার সরকারের কাজ থাকি স্বার্থ আদায় কইরবারো নাগছে। (দর্শক-৮)
হয়, হয়, তোমরা ঠিকে কইছেন, ইয়াকে কয় আজনীতি। (দর্শক-৯)
ওমরা মুখোতে চিড়া ভিজাইবে, কাজের বেলায় ঠনঠনা। (দর্শক-১০)
তোমরা কি মনে করেন চুক্তি হইলেয়ে হামরা সমান পানি পাইমো? এইটা ভাবলেয়ে বোকামি হইবে। ত্যারাব্যাকা করিয়া থুইবেয়ে, যতয়ে চুক্তি হোক। পানি বিনা হাপিত্তেশ তখনো থাকপে। হাপিত্তেশ যে বেশি হবার নয় ওয়ারে বা গ্যারান্টি কি? (দর্শক-১১)
ক্যাচালের অবসান হোক! হামরা দোয়া করি। (দর্শক-১২)
৪৯
মিলি, সাইতুনের উঠোনে কয়েক মাস আগেও রোদ ছিল। রোদের স্পর্শে সে চলে গেছিলো জোছনায়। বুঝে সুখ কাকে বলে। এর স্বাদ কেমন তা বুঝতে থাকে লম্বা স্মৃতির দায় নিয়ে। জোছনা তো বেশি দিন থাকে না। কালো রাতও আসে। সেই রাতে তার মনের জোছনা পথ খুঁজে পায় না। যত এগিয়ে যেতে চায় তত এলোমেলো পথ সামনে আসে। কোনো পথেই নিজের ঠিকানায় পৌঁছতে পারে না। যে তাকে সুখ যাপনের দিনক্ষণ বোঝালো, তাকে এখন সে কাছে পায় না। বাসেও উঠতে পায় না। উঠবেই বা কেমন করে? আগে তার ওজন ছিলো পঁয়তাল্লিশ কেজি, এখন হয়েছে ষাট কেজি। আগে তার সিঙ্গেল শরীর ছিলো, এখন ডাবল। পেট লেগে থাকতো দেহের সঙ্গে, এখন তা ফুলে উঠেছে। পেট আর কতই বা নিজেকে স্লিম রাখতে পারে? খাদ্যের স্বাদ সেও পেতে চায়; তাই তো নিজেকে এত বড় করতে পেরেছে। সে তৃপ্ত। অতৃপ্ত কেবল সাইতুন। তার শরীর তো কেবল পেট নিয়েই নয়। হাত-পা-মুখসহ অন্য অংশও রয়েছে। তাদেরও আরাম দিতে হয়। এখন তাকে একা একা অসহায় দিন কাটাতে হচ্ছে। বিরক্তি চূড়ায় পৌঁছালে এবার নিজেকে কিছুটা হলেও গতিশীল করতে চায়। সাইতুন ফিরে পেতে চায় সেই মানুষটিকে, যে আদর-ভালোবাসায় শরীর-মন ভরিয়ে দিয়েছে। যে কারণে বেড়েছে ওজন। তাকে দরকার। একাউন্টের টাকা শেষ, আবার কাজেও বেরুতে পারছে না। মা’কে অনেক দিন ধরেই টাকা পাঠাতে পারছে না। মায়ের অসহায় মুখ তাকে বারবার তাগাদা দেয় কিছু টাকা পাঠাতে। নিজেকেও চলতে হবে। ভাবতে ভাবতে বুদ্ধির দৌঁড় থেমে যায়। আবার দৌঁড়ায়, ভিন্ন পথ পায়। নতুন পথেই সাইতুন কল্পনা ঠেকায়। শুনেছে দরবেশের কবর থেকে অমাবস্যারাতে অন্যের নজর এড়িয়ে মাটি তুলে কবিরাজি করলে প্রিয় মানুষটিকে কাছে আনা সম্ভব। সে তাই করতে চায়। অপেক্ষা কেবল অমাবস্যা রাতের জন্য। আসে সেই রাত। ওজনওয়ালা দেহটাকে টেনে বিছানা থেকে উঠায়। হাঁটতে থাকে। এখন নিজেকে হালকা মনে করছে। প্রিয় মানুষকে পাবার শক্তি কি এমনই শক্ত হয়? প্রেমের জোর কি এমনই? যে তাকে আজ এমন হালকা করেছে। সাহস দিয়েছে। হতে পারে, ভেবে নেয়। দম বন্ধ করে কবরে ঝাপ দেয়। এক মুঠ মাটি নিয়ে কবর থেকে উঠে। দম ফেলে। ঘরে ফিরে। দেখে সে আরো হালকা হয়ে উঠেছে। কবিরাজের কাছে যায়। কবিরাজ তার জ্ঞান কাজে লাগাতে থাকে। না, কোনো ফল আসে না সাইতুনের নিকট। তার মনে উঁকি-ঝুকি দেয় শৈশবে গাওয়া ছড়া,
আয় আয় ওরে হাঁস তৈ তৈ তৈ
মোলা দেব মুড়ি দেব আরো দেবো খই।
ও তুই পাখনা মেলে, কাছে আয় না চলে
তোর সঙ্গে প্রাণ খুলে, দুটি কথা কই।
তাকে কাছে পায় না। দূরেই থাকে সেই মানুষটি। মানত করে, সে যদি ফিরে আসে তাহলে এক হাজার টাকা মসজিদে দিবে। সে আসে না। শরীর পূর্বের অবস্থা ফিরে পায়। ভারি শরীর, আরো ভারি হতে থাকে। নিজেকে আর টানতে পারছে না সাইতুন। পাশের বাসায় টেলিভিশনে চলছে গান,
দুধের দাঁতের বিয়াও করিয়া
যৌবন কালে না চান ফিরিয়া
আরে ও ও মোর সোয়ামি রে ধন
নারীর যৌবন মোর বৃথাই গেলো কান্দিয়া।
এ গান শুনে সে আরো যন্ত্রণাময় সময়ে পৌঁছায়। তার পক্ষে একা থাকা সম্ভব হচ্ছে না। সে খুঁজে ফিরে কি করা যায়। করার উপায় নাই। নিজের খাওয়ার ব্যবস্থাই করতে পারছে না, অভাবী মায়ের মুখ মনে পড়লেই দুঃখ আরো বেড়ে যায়। পাড়া-পড়শীর মুখস্ত বাক্য, বরের খুজ নাই, প্যাট বাদায়া বইয়া রইছে। সাইতুন রুম থেকে বের হলেই এমন কথা শুনতে পায়। নিজেকে সামলাতে পারে না। সে মানসিক চাপ অনুভব করতে থাকে। সমীরণের কাছ থেকে জানতে পেলাম সাইতুন মানসিক চাপ থেকে হালকা হওয়ার জন্য ফ্রেনজিত ঔষধ খায়। সে তো এই ঔষধের নাম জানে না। ডিসপেন্সারিতে গিয়ে বলেছে আমাকে টেনসন কমানোর ঔষধ দেন। তারা এটি দিয়েছে।
প্রথমে কম করে খেত। ঘুমানোর চেষ্টা করে। দুনিয়ার যন্ত্রণা থেকে সে সরে থাকার চেষ্টা করতে থাকে। সম্ভব হয় না। মানসিক চাপ অনুভব করলেই ঔষধ খেতো। একটা পর্যায়ে দুই-তিন ঘণ্টা ব্যবধানে সে এই ঔষধ খায়। আস্তে আস্তে সাইতুন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ঘুমের ঔষধ বেশি খাওয়ায় তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারো সাথে কথা বলতো না। সারাদিন শুয়ে থাকতো। মাথা ভারি হয়ে যায়। খাবার হজম করতে পারে না। অথচ তার খাওয়া দরকার। বমি বমি ভাব সব সময় লেগে থাকতো। শরীর দুর্বল হতে থাকে। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিকভাবেই মায়ের বেশি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হয়। খাবার তার গলা দিয়ে নামেই না। সমীরণ তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার আশ্বস্ত করতে পারে না। পরে সমীরণ তাকে টাপুর চরে মায়ের কাছে নিয়ে আসে। সাইতুনের শরীরে রস আছে কি নাই বোঝাই যায় না। চামড়া কুচকে গেছে। উজ্জ্বলতা নাই। চোয়াল ভেঙে গেছে। চোখ ফ্যাকাসে, কোনো মায়া নেই। স্বর অস্পষ্ট। অনেকদিন হয়তো চুল ধোয় না। চুলে জট বেঁধে গেছে। ভাগ্যক্রমে সেখানে আমারো যাওয়া পড়ে। চরের মুরুব্বিরা এসে বলছে, পুড়িডা কি সুন্দর আছিন। শইল্লো কত গুসতু আছিন। হ্যায় এ্যাহন হুগায়া কইঞ্চার মতো অইছে।
হ, মিয়া বাই ঠিকি কইছুইন। আঙ্গোর নদীর মতো সাইতুনও কিরুম হুগায়া গেছে।
মিলি, ফোন রাখছি। আগামীকাল বিকেলে ব্যারেজে এসো।
ঠিক আছে।
৫০
আমরা তো হাঁটতে পারি, কি বলো মিলি?
চলো, হাঁটি।
শেষ বিকেলে নদীর পাড়ে হাঁটলে দেখবে ঠাণ্ডা বাতাস তোমায় ছুঁয়ে যাচ্ছে। এ সময়টায় নৌকায় ঘুরলে নদী মানুষকে যে কত আপন করে নেয়! পানি থেকে উঠা বাতাস দিনভর জমা হওয়া যন্ত্রণা মুছে দিবে।
শাহরিয়ার, এখানে নদী আছে, কিন্তু পানি নেই এবং নৌকাও নেই।
হুম, তাইতো দেখছি, আছে কেবল বালু আর চৈত্রের রোদ।
দেখো মানুষ কত ব্যস্ততা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে আমরা কত নিষ্কর্মা। সামনের দিকে তাকাও।
তাকালাম।
একটা লোক দেখতে পারছো?
পারছি।
কেন বসে আছে?
তাকে তুমিও জানো। তোমাকে তার সম্পর্কে একদিন বলেছিলাম। হাটের দিনগুলোয় দোয়ানি বাজারে গেলেই তাকে দেখতে পাবে। দেখবে সে মাইকে কথা বলছে, আর দর্শকের মতামত নিচ্ছে। প্রত্যেকে আলাদা আলাদা মত দিয়ে তার সাথে আলাপে সক্রিয় থাকছে।
মনে পড়ছে। প্রথম দিন তো তার সাথে পরিচয় হয়েছিল। সে তো তোমার আহসান ভাই?
সঠিক উত্তর।
তাইলে শুরুতেই তার নাম বললে না কেন?
তোমার আইকিউ টেস্ট হচ্ছিল।
দেখছি তুমি দুষ্টামিতেও ওস্তাদ।
বলতে পারো। তবে মাত্রাটা একটু কম। মিলি, এখন আহসান ভাই তার অতীতে হাটাহাটি করছে। আগের জীবনের কথা বেশি করে মনে পড়লে বালুতে বসে থাকে। তার গোছালো ও সমৃদ্ধ জীবন ছিলো। আগের গল্প থেকে হয়তো এটুকু আঁচ করতে পেরেছো?
তা পেরেছি। বাকিটুকু বলো।
তার ভাওয়াইয়া গানের একটা স্কুল ছিলো। আগে ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে মাসে ভালো টাকাই আয় করতেন। চাকরি ছেড়ে তিনি স্কুল গড়ে তুলেন। গান শেখান। ভাওয়াইয়া যে আমাদের ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এর যে সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে তা পরের প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে গান শেখানোয় মনোযোগী হন। দেশের নানা জায়গায় ভাওয়াইয়ার আসর বসান কখনো নিজের উদ্যোগে কখনো আমন্ত্রণে। ঢাকা থেকে একবার ডাক আসে, যান। সেখানে দুদিন থাকেন। এর মাঝে ভীষণ বন্যা হয়। তার শখের স্কুলটি তলিয়ে যায়। জমি-জমা যা ছিলো সবই নদী তার বুকে নিয়ে নিলো। এরপর তিনি নিজেকে আর গোছাতে পারেননি। দোয়ানি বাজারে হাতে থাকা ছোট মাইকে ব্যারেজবাসীর সংকটের কথা বলে নিজের যন্ত্রণা হালকা করে। প্রথমদিন তার করুণ জীবন-অধ্যায় জানতে চেয়েছিলে না?
হুম।
সেই অধ্যায়ের গল্পটা এমনই।
৫১
আরে চেরমেন চাচা, তোমরা এইদোন করি পড়ি গেইনেন যে? ব্যথা পাইছেন?
আহসান, ব্যথা তো কত আগে থাকি শরীলত স্টোক আছে। ওই ব্যথাগুইলা আরো বড় বড়। এ্যাকনা পড়ি গেইছোং তো, ইয়াত কিচ্ছু হবার নয়।
উঠেন।
থামো, বুক-কপাল ঠেকে চরত সিজদাহ দ্যাং। যদি কোনো চিনির টোপলা পাং। আব্দুল কাদির জিলানীক মাও কছিল, বাবা তুই প্রত্যেকদিন নামাজ পড়বু আর জায়নামাজ তুললেই চিনির টোপলা পাবু। ছাওয়াখান নোভত হোক আর আল্লাক পাবার জন্যে হোক প্রত্যেকদিনে নামাজ পড়ছে। জায়নামাজ গোছাবার ধরলে চিনির টোপলা পাইছে। মাওয়ের চালাকি সন্তান বুইঝবার পায় নাই। বুঝবেই বা ক্যামন করি? আল্লা নিজে সেই চালাকিত সমর্থন দিছে। উইয়ার মাও টোপলা আইখপার কথা ভুলি গেইলে আল্লায় ধুইছে। না, কায়ো তো মোক কিছুই দিলে না। মুই তো অনেক সময় ধরিয়ায় চরত সিজদাহ করি আইসপার নাগছোং। এইদেশের সরকারও দিলে না, সেইদেশের সরকারও দিলে না। ওমরা দেওয়া শুরু করলে না আল্লাও দেইল হয়। চিনি না পাং মুই তো এ্যাকনা পানিও পাবার অধিকার আখং। হামাক তেলাপোকার মতো বাঁচি থাইকপার জন্যে হইলেও এ্যাকনা পানি খুবয়ে দরকার।
চাচা, উইঠপার চেষ্টা করেন। পানি বিনা হামরা মরমো, হামার ছইলেরা মরবে। ওমার ছইলেরাও মরবে, মরার কাজ চইলতে থাকপে। আর এইটায় হইল হামার এ্যাকশন। চলো, ভালো করি য়েডি হওয়া নাগবে তো!
শেষ
তিস্তা: পর্ব-১৫॥ হারুন পাশা