॥পর্ব-১৫॥
৪৪
শুননেন তো, পানির জন্যে আন্দোলন কইরবার যায়া মামলা খায় চাঁদাবাজির। এইদোন কিচ্ছা আর কোনোটে শুনছেন?
না, আহসান ভাই, শুনি নাই। (সম্মিলিত স্বর)
তোমরা তো জানেন হামার তিস্তার বুকত অ্যালা বালা চিক চিক কইরবার নাগছে।
হয়, হামরা জানি। (সম্মিলিত স্বর)
বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আসছিল সবাক নিয়া এই অবস্থা বিশ্ববাসীক জানাবার জন্যে। তখন মমতারঘর কি করিল?
বেশি মমতা ঢালি দিছে। (দর্শক-১)
বালা পানিত ভরি দিছে। (দর্শক-২)
ওমার বদমায়েশির প্রমাণ আরেকবার দেইল। (দর্শক-৩)
ক্যামন করি প্রমাণ দেইল?
বিশ্ববাসী যদি জাইনবার পায় হামার তিস্তাক ওমরা মরুভূমি বানে ফেলাইছে। তাইলে বিদেশ থাকি চাপ আসপে। মমতারঘর চাপত থাকপে। চুক্তিটা তাড়াতাড়ি করি ফেলা নাগবে। ওমরা তো চুক্তি অ্যালায় কইরবার নয়। আরো শুকি মারবে, তারপর সই করবে চুক্তিত। বিদেশের চাপ আর চুক্তি করা থাকি দূরত থাইকপার জন্যে ওমরা বদমায়েশি করি পানি দিলে ছাড়ি। ভাসি গেইল চর। (দর্শক-৩)
বখ্রি খায় ছিমার পাত্
কাউয়ায় খায় দই
আয়রে আলম দুঃখের কথা কই। (দর্শক-৪)
হয়, আইসো দুঃখের শেয়ার করি। তিস্তা চুক্তি করাটা তাইলে দরকারি?
হয়, চুক্তি করা ফরজ হয়া গেইছে। (দর্শক-৫)
তাইলে এইবার চুক্তি নিয়া কিচ্ছা শোনো। পত্রিকা থাকি জাননু, বাংলাদেশ-ভারতের ভিতরত সোগ মিলি ৫৪খান আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী আছে। তিস্তা এইগল্যার মাঝত একটা। এই নদীর উৎপত্তি হইল ভারতের সিকিমের সোহামো নেক থাকি। ৩১৫ কিলোমিট্যার নম্বা এই নদী পশ্চিমবঙ্গ হয়া নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা দিয়া বাংলাদেশত আসছে। ১৭৬৪ থাকি ১৭৭৭ সালে বিটিশ সার্ভেয়ার য়েনলি এই নদীর ম্যাপ গড়াইল। এই নদীক কওয়া হয় উত্তরের নাইফনাইন। ১৯৭২ সালত পরথম বাংলাদেশ আর ভারতের ভিতরত থাকা নদীগুইলার পানি বন্টন নিয়া তৈয়র হয় যৌথ নদী কমিশন। এই কমিশন বছরের পর বছর নোক দেখানোর জন্যে আলাপ করে ঢাকা-নয়াদিল্লির মাঝত। ফল হইছে জিরো। তাও নিয়মিত নোয়ায়, অনিয়মিত। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসত বাংলাদেশ-ভারতের মন্ত্রী পর্যায়ে আলাপে তিস্তার পানি বন্টন নিয়া স্থির হয় যে, তিস্তা নদীর পানি শতকরা ৩৬ ভাগ পাইবে বাংলাদেশ। ৩৯ ভাগ পাইবে ভারত। ২৫ ভাগ পানি নদীর জন্যে স্টোক থাকপে। ক্যামন করি পানি ভাগাভাগি হইবে এইটা নিয়া আছলো না ঠিকঠাক নির্দেশনা। অন্তবর্তীকালীন ভাগাভাগির সুরাহা আইসে না। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরত অন্তবর্তীকালীন ভাগাভাগির সময় শ্যাষ হয়। এই ভাগাভাগির সময় আরো দুই বছর বাড়াইল। এইটাও শ্যাষ হয় ১৯৮৭ সালের মে মাসত। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসত ভারত-বাংলাদেশের সচিবপর্যায়ের অ্যাক আলাপে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হইল। যৌথ নদী কমিশনের নির্দেশে এই কমিটির কাম আছিল তিস্তাক অগ্রাধিকার দিয়া বাকি অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে স্বল্প বা বড়মেয়াদী পানিবন্টন ফর্মুলা তৈয়র করা। ১৯৯৭ সাল থাকি ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই কমিটির সাতটা বৈঠক হয়। তারপরেও দুইদেশ কোনো ঐক্যমতত পৌঁছাবার পায় নাই। ২০০৭ সালের ২৫, ২৬ আর ২৭ সেপ্টম্বর হওয়া একটা বৈঠকত বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দুইদেশের মাঝত বন্টন করি বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্যে আইখপার প্রস্তাব দেয়। ভারত এই প্রস্তাব গ্রহণ না করি পাল্টা তিস্তার কমান্ড এরিয়া ওমার বেশি এই দাবি তুলি কয়, বাংলাদেশ, ভারতের সমান তিস্তার পানি পাবার নয়। তার মানে ভারত বেশি নিবে, বাংলাদেশ পাইবে ওমার থাকি কম। আর কি কয়, হামার এটে যে তিস্তা সেচ প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগের কাম আছে, এইটা যাতে হামরা বাতিল করি। সাহস দেখছেন। হামার প্রকল্প হামরা আখমো না বাতিল করমো এইটা কি ওমারটে সিদ্ধান্ত নেওয়া নাগবে? পরে ওমরা চিঠি দিয়া কয়, খালি ২০ ভাগ পানি ভাগ করবে। ৮০ ভাগ নদীর থাকপে। যাতে করি ওমরা নিজের শান্তি মতন ব্যবহার কইরবার পায়। ক্যামন বদমায়েশি কথা খেয়াল করছেন।
হয় হয়, খুবয়ে বদমায়েশি কথা। (সম্মিলিত স্বর)
এট থাকি আবার চিঠি দেয়। ওমাক অনুরোধ করে, চিঠি চালাচালি করে। এইটা পিরীত পাইছেন? যে চিঠি লিখমো, পাইমো। দুইদিন বাদে চুমামো আর জমামো। এটে শক্ত করি কাম করা নাগবে। দাপট দ্যাখা নাগবে। জোর দিয়া কথা কওয়া নাগবে। তাইলেসেন কাম হইবে। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি নয়াদিল্লিত নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এই বছরে প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা ভারত সফরত যায়; ১৮ আর ১৯ মার্চ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। কোনো ফল আইসে না হামার পকেটত। ইয়ার পর ২০১১ সালে ভারতের পুরাতন প্রধানমন্ত্রি মনমোহন সিং ঢাকা সফরত আইসে। অয় আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তৎপরতা চালায়। অভিন্ন নদীর পানি বন্টনে যৌথ নদী কমিশনের কিছু নীতিমালার পরিবর্তন করে যাতে পানি ভাগাভাগির ফয়সালা হয়। মমতা সাহেবা বেঁকি বসিল। ইয়ার ভিতরত আছে আজনীতির খেলা। ইয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের ভিতরের আজনীতি আছে। আছে নয়াদিল্লীর সাথত কলকাতার নম্বা সময়ের আজনৈতিক বিরোধ। এই চুক্তি বাতিল হওয়ার পরও মমতার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার থাকি সমর্থন তুলি নেয়। ডা. দীপু মনি প্রস্তাব দিছিল ৮০ ভাগ পানি ভাগাভাগি হইবে। আর মমতা সাহেবা কয় ‘আমরা মাত্র ৫ ভাগ পানি দিতে পারবো।’ ফাজলামি নোয়ায়।
হয়, হয়, বড় প্রকারের ফাজলামি। (সম্মিলিত স্বর)
আর এদি হামার দেশ আরেক দফায় ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়া থাকে। কয় ১৬ আনা পূরণ না হইলেও কাছাকাছি থাকলেও হামরা চুক্তিত যামো। তাও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন ভরে না। ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মমতা সাহেবা বাংলাদেশ সফরে আসিল আর তিস্তা চুক্তি বিষয়ে আশ্বাস দিয়া গেইল। এই বছরের ৬, ৭ মে ভারতের নোক আর আজ্য সভাত স্থল সীমানা চুক্তি পাস করার পর ৬, ৭ জুন নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফর কইরবার আসিল। আসার আগত ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ক্লিয়ার-কাট জানে দেইল তিস্তা চুক্তি বিষয়ে, কইল ‘তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের মতো অবস্থায় আমরা পৌঁছাই নাই’। আচ্ছা, দাদারা, তোমরা কি সারা জীবন ধরিয়াই কইমেন হামরা চুক্তি স্বাক্ষরের অবস্থায় পৌঁছাই নাই। ২ কোটিরও বেশি মানুষের ভাগ্য নিয়া ওমরা টাল্টিবাল্টি শুরু করছে। হামরা এদি আন্দোলন করি, ওমরা ওদি খুশিতে নাচে। ওমরা যে কয়, মমতা উইয়ার ভালোবাসা ছড়ায় না বলি চুক্তি হয় না। মমতার মমতা আর ভালোবাসার তো দরকার নাই। ওমার দেশের কেন্দ্র সরকার চাইলে নিজে এই চুক্তি স্বাক্ষর কইরবার পায়। ওমরা তা করে না। ধর্না দেখায় আজ্য সরকার মমতাক নিয়া। হামরা পানি পামো আন্তর্জাতিক আইন মতে।
৪৫.
আমি কক্সবাজার থেকে ফিরে মা’কে ডাকি, সাইতুনকে ডাকি। কারো কোনো আওয়াজ পাই না। আদুরী বলে, আপা, আম্মায় তো বাপের বাড়ি গেছে।
সাইতুনের কথা জানতে চাইলে বলে, হ্যায় তো চইলা গেছে।
সাইতুনের চলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে আদুরী কান্দে। কান্দা থামিয়ে আসল কথা বলতে বলি। বলে, আপা, আপনি গেছেন কক্সবাজারো, আর আম্মায় গেছে বাপের বাড়ি। বাড়িত কেবল আমি আর সাইতুন আপা। গতদিন রাইতে খালু কাশতে কাশতে সাইতুন আপার ঘরে আইলো। তখন আমি আপার চুলে বেণি কইরা দিতেছিলাম। খালুজান কইলো, আদুরী ঔষধ তো খুঁজে পাচ্ছি না। তুই একটু খুঁজে দেখবি। আমি ঔষধ আনতে গেলাম। আয়া দেহি খালুজান আপার লগে ধস্তাধস্তি করতাছে।
আপা কইতাছে, আপনে না আমার বান্ধবীর বাপ, মানে আমারো বাপের সমান। আপনি এইসব কি করতাছেন?
খালুজানে কয়, কাম জাগলে বাপ আর কন্যার বান্ধবীর মধ্যে পার্থক্য রাখলে হয় না। তখন দুজনেই এক হয়ে যেতে হয়।
আপা ফির কয়, নাউযুবিল্লা, এইসব কি কন! আপনার জিবব্বা খইসা পড়বো।
খালুজানে কয়, পড়–ক। তুমি কাছে আসো। কামচেতনা অবশ হোক। মাঝে মধ্যে কন্যার বান্ধবীর মতো কারো সান্নিধ্যে বউ কিংবা প্রেমিকার অভাব পূরণ হয়, পূরণ করা যায়।
আমি চিল্লানি দিলে খালুজান আইসা আমার মুখ চিইপা ধরে এক হাতে। আরেক হাতে আপার চুল ধইরা থাকে। আপা জোর কইরা হাত ছড়ায়া আপনের ঘরে যায়া খিল দেয়। খালুজান কতক্ষণ চেঁচায়া নিজের গরো যায়। সকালে ঘুম থাইকা উইঠা দেখি আপায় নাই।
আমি অনেক ব্যথা পাই। জোরে জোরে বলতে থাকি, তাইলে আমি এই টপস দিয়ে কি করবো? এই ব্রেসলেট দিয়ে কি করবো? কক্সবাজার থেকে আমি বান্ধবীর জন্য আনছি। তারে অ্যাহন কই পাই? বান্ধবী, তুই কি আমায় ক্ষমা করতে পারবি? তরে আমি আশ্রয়ের জন্যে আইনা আরো বেশি নিরাশ্রয়ী কইরা তুললাম। ছিঃ এই লোককে এর পরেও বাবা বলে ডাকতে হবে? স্বীকার করতে হবে? লোক সমাজে পরিচয় করাতে হবে ইনি আমার পিতা? যে মেয়ের বান্ধবীরে বদ নজর থেকে এড়াতে পারে না, সে কি করে আমার উপর নেক নজর রাখে? রাখতে পারে? আমি কি করে নিরাপদ ভাবি নিজেরে? এইজন্যে কি সে আমারে মাঝে মইধ্যেই জড়ায়া ধরে? গালে চুমু খায়? হাঁটুর উপরে হাত দেয়? ছিঃ ছিঃ ছিঃ জন্মদাতা! এরপর সাইতুন কোথায় আছে জানি না।
৪৬.
ক্যা বাহে, তোমরাও চুক্তি চান? ক্যা চান?
বাহে, হামরা বাইচপার চাই। মরণ থাকি উদ্ধার চাই। (দর্শক-১)
এতো গরমত থাকা যায়? জিও ব্যারে যাবার নাগছে, নদীত পানি থাকলে তো গরমখান কম নাগিল হয়। (দর্শক-২)
হামরা কৃষাণখাটা মানুষ, হামরা পানি তো চাইমোয়ে। পানি ছাড়া কি হামার উপায় আছে। (দর্শক-৩)
হামার সমস্যার সমাধান আসবে তিস্তা চুক্তির হাত ধরি। চুক্তি চাই। (দর্শক-৪)
তাইলে তোমরা কবার নাগছেন চুক্তিটা হউক। এই চুক্তি হামার বাঁচা-মরার সাথে জড়ি আছে। তিস্তার বিপর্যয় নিয়া একখান কবিতার কিছু অংশ পইড়বার চাই, নিখছে হামারে ছাওয়া আমিনুল ইসলাম, শুনমেন তোমরা?
হয়, শুনমো। (সম্মিলিত স্বর)
তাইলে শোনো,
কুঁড়েঘরগুলো ধবল চাদরে ঢাকা সারিবদ্ধ কবর,
কোথাও কোনো শব্দ নেই-কুয়াশার কারায় বন্দি কোলাহল,
স্রোত নেই, তিস্তার বুক জুড়ে প্রেমহীন বালুর বসতি,
বাসন্তির জালটা গেছে, সেই সাথে অন্য গরজটাও,
একাত্তরের গণকবরে কারা যেন দিয়ে গেছে চুন,
কুলসুম বেওয়াকে পেয়েছে ফের সেই পুরাতন কান্নায়।
শীতের পিঠা নেই গ্রামের কোনো উঠোনে
সংস্কৃতির বগলে সুড়সুড়ি দিতে গিয়ে শহর থেকে আর
ফেরেনি;
আগুন জ্বালানোর খড় নেই
সমস্ত আগুন ঠাঁই নিয়েছে ধুলু মাঝির খালি পেটে;
আহা চিলমারীর বন্দর-সময় গিলেছে তাকে সেই কবে!
গাড়িয়াল ভাইয়ের গলা-সেও আর যায় না শোনা একটিবার।
আহা, এ তো হামারে কথা কইছে। কবি, তোমায় প্রণাম। (সম্মিলিত স্বর)
আরো পড়ি:
আমি যাবো আকাশে
জল খাবো বাতাসে।
আবার,
টিয়া পাখিটা কাঁঠল খায়
মোখো এনা না দেয়।
আজার বেটির বিয়াও হয়
নম্বা নম্বা ধুতি পায়।
ধুতির উপর সইস্যার ফুল
খালার বাড়ি বহুদূর।
হয়, বহুদূর?
দূরতে তো। (দর্শক-৫)
কাছত হইলে তো বুকত টানি নেইল হয়। দুধ-কলা খাবার দেইল হয়। (দর্শক-৬)
হামার কান্দন ওমার মনের নাগালে পায় না, তাইলে দূরত নোয়ায়। (দর্শক-৭)
আগের দিন আর নাই রে কাউয়া, আমের ডালি মাথায় নিয়া হাগির বইচ্ছে নাউয়া। (দর্শক-৮)
মানির মান থাকবে না, চেংরা হইচে দেওয়ানি
নদী হইছে বালুচর, কোষকে বাতি জ্বলিবে। (দর্শক-৯)
ইচিং বিচিং ছিচিং চা
প্রজাপতি উড়ে যা
মমতার মনত যা।
ইস্টিশনের মিষ্টি ফুল
মমতার ভাঙুক ভুল। (দর্শক-১০)
দেইখপার নাগছং তোমরা সবায় কবি হয়া গেইছেন। ভালো। খুবয়ে ভালো। মমতার ভুল ভাঙুক, এইটাই কবার চান জোর দিয়া?
হয়, হয় ভাঙুক। ভাঙুক। ভাঙুক ভুল। (দর্শক-১১)
৪৭.
শাহরিয়ার, শিল্পী কি তোমার কাছে জানতে চায়নি সাইতুন পরে কোথায় ছিল?
হুম, চেয়েছিল জানতে।
তুমি কি বললে?
বললাম, সে আগে যেখানে ছিলো ওইখানেই ফিরে আসে। অর্থাৎ সমীরণের সঙ্গে থাকা শুরু করে। পরের কথাগুলো তো সমীরণই জানিয়েছে:
হঠাৎ ঘরের সামনত সাইতুনক দেখি জাইনবার চাং কি রে এই কয়দিন কুটে আছলু? কয়,বান্ধবীর বাড়িত গেছনু সমীরণ আপা।
একটা ফোনও তো কইরবার পালু হয়?
মোবাইলত চার্জ আছলো না। বইন, মিরাজের মোবাইল তো বন্ধ পাবার নাগছোং।
আবার চেষ্টা করেক।
কোনো ফল নাই। মিরাজের ঘরের জানালাও তো বন্ধ দেখা যাবার নাগছে।
একদিন কছলু তোরা বিয়া করছিস; কাবিন-টাবিন আছে?
আছে তো।
আনেক তো দেখং।
এই যে।
এইটা তো জাল মনে হবার নাগছে। অয় যেটে ভাড়া আছিল অটে যা। না পাইলে উইয়ার পরিচিতি যায় আছে ওমার সাথে কথা কয়া আসলটা জানেক।
হয়, অইটায় করা নাগবে।
মিরাজ যে বাড়িত আছিল অটে সাইতুন যায়। দাড়োয়ানক কয়, এখানে মিরাজ নামে একজন আছিলো না?
দাড়োয়ান কয়, হ্যায়, চইলা গেছে কয়েকদিন আগে।
কিছু বইলা গেছে?
না।
অয় পরে মিরাজের বন্ধু নাজিমক ফোন দেয়, হ্যালোও নাজিম, আপনি কই?
এই তো স্ট্যানে।
কতক্ষণ থাকবেন?
আছি। ক্যান?
আপনার সাথে কথা আছে। থাকেন আসতেছি এখনি।
আচ্ছা! আসেন।
নাজিম ভাই এদিকে আসপেন?
সাইতুন আপা, আপনি কাঁপতেছেন ক্যান?
বলেন আপনার বন্ধু মিরাজ কই?
হ্যায় তো গ্রামের বাড়িত গেছে।
মোবাইল বন্ধ ক্যান? কিছু জানেন?
হ্যায় আর আসপো না। আপনার লগেও আর যোগাযোগ করবো না। এমনই কইছে।
ক্যান করবো না যোগাযোগ? এই কাবিন?
এইটা জাল। সেদিন যে বিয়া হইছে ওইটাও জাল। কাজি আছিলো ওরি আত্মীয়। সাক্ষীও তারাই।
সব জাল?
হু, সব জাল। অর স্বভাবটাই অ্যামন। নতুন সম্পর্কে জড়াইবো আর পুরানটার থাইকা টান কমাইতে থাকপো। এর আগে অনেক মেয়ের লগে অয় একই অভিনয় করছে। অবশ্য অয় যখন যার লগে থাকে তখন হান্ডেড পারসেন্ট ভালোবাসা নিয়াই থাকে। কয়দিন পরে খালি পিছলায়া যায়। প্রবলেম একটাই।
অয় চিট করলো?
হুম।
আমি এই বাচ্চাক নিয়া কি করবো?
ভাইবা দেখেন কি করবেন। আর অধের্য হয়েন না। কষ্ট একটু বেশি পাইবেন। তারপরও শক্ত থাকা লাগবে। যেহেতু ভুল সম্পর্কে জড়াইছেন, সেহেতু এইটা উপলব্ধিতেও রাখা লাগবে। আপনারা, মানে মেয়েরা প্রেমে পড়ার সময় সিনেমার নায়িকা হয়া যান। মদখোর, গাঁজাখোর, প্রতারক, বদমাইস সবগুলারে ভালোবাসা দিয়া ঠিক কইরা ফালাইতে চান। বুঝতেই পারেন না সিনেমা আর বাস্তবতা। প্রেমের ঘোর দুইটার মাঝে ব্যবধান ভুলায়া দেয়। গাধী কইরা তুলে। এতোদিন তো সিনেমায় অভিনয় করছেন, এখন বাস্তবে অভিনয় কইরা দেখেন। আমি যাই। কাজ আছে।
নাজিম এইদোন চটাং চটাং কথা কয়া চলি যায়। সাইতুন ঘরত ফিরি কান্দিবার ধরে।
চলবে…