৪১.
আইনুদ্দিন চা, হাসপাতাল তো নিরাপদ নোয়ায়। চলো এট থাকি চলি যাই। পুলিশ কখন আসি পড়ে।
হয় রে কাদির, ঠিকয়ে কছিস, চল বাড়িত যাই।
বাড়িও তো নিরাপদ নোয়ায়। শুননু অটেও পুলিশ যায়-আইসে।
তাইলে যাবু কোনঠে?
আরেকনা আন্ধার হউক, পরে আড়াবাড়িত যায়া থাকমোনে।
দূরত কায়ো থাকলে অটে যাওয়া ভালো হইবে। নীলফামারীত মোর ব্যাটার শ্বশুর বাড়ি আছে। অটে যায়া কয়টাদিন পার করি আইসং।
তাইলে মুই কুটে যাইম?
তুই বাড়িত যা। বাড়িত থাকপু, খাবু। যেই পুলিশ আসার খবর পাবু ধানের মাচাত ঝিত করি শুতি থাকবু। নড়চড়, কাশিটাশি দিবার নইস।
চাচা, ভয় নাইগবার নাগছে। এইটা বাদদি আরেকটা বুদ্দির কথা কন।
তুই তো বড়শি দিয়া মাছ মাইরবার পাইস?
হয় চাচা, তা পাং।
তাইলে তুই দীঘিত যায়া বড়শি নিয়া বসি থাকপু। অটে সারাদিন কাটে দিবু। আর আইতত মোর এটে আসিস। ঘুম থাকি উঠি আবার দীঘিত যাবু।
ঠিক আছে চাচা, এইটায় হোক।
মহিউদ্দিন, বুঝলা, গরীবের পিছনো কেউ নাই। আঙ্গোর যেইড্যা পাওনা হেইডার লাইগ্যা দাবি জানাইলাম। উল্ডা আঙ্গোরেই পিডানি দিলো। মামলা দিলো।
হ সুলতান বাই, অইরহমই তো দ্যাখতাছি। অ্যাহন আমরা পলায়া বেড়াই। গরো বউ-পোলাপান কি খায়? কি পরে? কিছুই যানবার পাই না। রাইতে বাড়ি ফাহা থাহে। কেউ যুদি হামলা মারে, কত অসুবিধা অইবো, চিন্তা হরছো?
হ, তা তো অইবোই। আঙ্গোর জীবনডাই মনে অয় এইরহম, খালি বাইরে বাইরে কাডান লাগে। বাড়িত থাকপারই পাই না। এতোদিন নদীত কাডাইছি রাইত। অ্যাহন রাইত কাডাই জঙ্গলো।
আমরা গেলাম একটা কামো, পড়লাম আরেক খাদো।
পানি তো দিলোই না, আরো বিপদে ফালাইলো। এই মামলা যে আবার কবে উডবো।
চেয়ারম্যানের বুগুলো তো যায়ুন যাইতো, হ্যায়তো পা খুড়া অইয়া মেডিকেলো পইড়া রইছে।
কও, তাইলে আরো কতদিন এই জঙ্গলো মশার কামুড় খায়া থাহুন লাগবো?
আল্লাই বালা জানে।
৪২.
ক্যারে নেওয়াজ, মানুষ মোক এতো ভালোবাসে? সময় হইতে সবায় হাজির হইল। ডাং-ডুংও খাইল দিধারছে। সবাক তো আইসপার জন্যে ট্যাকাও দিবার পাং নাই। তাও আসিল!
বাসেয়ে তো ভালো। নাইলে ভোট দিয়া তোমাক চেরমেন করে। অ্যাটে তো সবার নাভ আছে। এইজন্যে তোমার ডাকত সাড়া দিছে।
মুই কি ওমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
তোমরা তো ইলেকশনের সময় কইছেন ওমার অসহায় অবস্থায় সহায় হিসেবে তোমাক পাইবে। কইছেন আস্তা-ঘাট, বিরিজ সোগে গড়ি দিমেন। কষ্ট দূর কইরবার জন্যে যা যা দরকার তাই তাইয়ে করমেন। এলাকার মানুষের তো অভাব খুবে বেশি। অ্যাকনা আশ্বাস পাইলে ওমরা নিজেক খুলি দেয়। ওমার মনতো সরল। সারাদিন খাটিখুটি ঘরত যায়া চাইট্টা ভাত খাবার পাইলে বউয়ক নিয়া শান্তির ঘুম দেয়। ওমার সম্বল হইল আল্লা আর বিশ্বাস। বিশ্বাস তো তোমরা খালি ভাইঙবারে নাগছেন। কত ওয়াদা দিছেন, একটাও কি কামত য়ুপ দিছেন? দেন নাই। তারপরও আসছে ওমরা। ওমরা দুঃখত থাকিয়াও সবার সুখ চায়। আর তোমরা সুখত থাকি ভাবেন ক্যামন করি মাইনষক আরো দুঃখত আখা যায়, প্যাচত ফ্যালা যায়, ট্যাকা শুষি নেওয়া যায়, ঘাড়ত পাও দিয়া ডাবে আখা যায়, জিও বের করি নেওয়া যায়। তোমরা ডাকছেন ওমরা আসছে, কেসও খাইছে। তোমরা এইদোন য়িস্ক নিনেন হয়?
তুই যে এতোদিন ধরি মোর পিছত পিছত ঘুরিস, মোক এইগল্যা কথা কছিস কোনোদিন?
তোমার এইদোন উপলব্ধি হইছে ইয়ার আগত কইম যে? তোমরা খালি ফুলি উইঠপার ধান্দাতেই আছনেন। কায়ো যদি কোনো বিষয় নিয়া ভাবে। চিন্তাটা মন-শরীলত ছড়ায় তাইলে কিছু কইলে অয় সেইটাক গুরুত্ব দিবে। কইলে ফল পাওয়া যাইবে।
মুই ওমার সাথত যে আচরণ করছোং ইয়ার তো মাফ দেখং না। ওমার বিশ্বাস তো সোগে ভাঙছং। সবাক কাড দ্যাং নাই, আস্তা-ঘাট-বিরিজ কিছুয়ে করি দ্যাং নাই। তারপরেও ওমরা মোক মানে। সম্মান করে। মোর এতো জমি, ট্যাকা-পয়সা, ক্ষ্যামতা থাকিয়াও ওমার চায়া গরিব হয়া গেনু রে।
গরীবে তো। তোমার চিটার-বাটপারি মন, আর ওমার ভালোবাসায় ভরা মন।
পাওখান ভালো হউক। যেইগল্যা ওয়াদা করছং সোগে বাস্তবায়ন করিম। কেস তুলি নেয় যাতে সুপারিশ করিম। পানিটা যাতে আইসে উপরত নোটিশ দেইম। মুইও যাইম। ওমরা তো মোক মানুষ হওয়া শিখাইল। দিল বড় করা শিখাইল।
হয়, ওমার জন্যে যদি কিছু কইরবার পান তাইলে ওমরা আবার তোমাক চাইবে, আবার ইলেকশনত জিতমেন।
জিতা-জিতি থো। ওমার জন্যে কিছু কইরবার পাইলে য়িনমুক্ত হবার সুযোগ আসপে।
চাচা, এতোদিনে তোমার মুখ থাকি অনেকগুইল্যা ভালো কথা শুননু। দিলট্যা জুড়ি গেইল। আল্লা তোমাক অহমত করুক।
৪৩.
চাচা, সংসারত মুই একলাই কামাই করং জানেনয়ে তো। ছোট ভাইটা ঢাকা শহররত য়িকসা চালাবার যায়া অসুখ বাধে ঘরত পড়ি আছে। ভাবছিল আবাদ-সুব্যাদ তো হবার নাগছে না যাং শহরত যায়া কামাই করং। অয় কি জানছিল শহরত প্যাসেঞ্জারের চায়া য়িকসায় বেশি। একটা পেসেঞ্জার আসলে দাড়ে থাকা সোগ চালকয়ে ডাইকপার ধরে। অল্প কয় ট্যাকা কামাই করছিল। ওই ট্যাকা খাইতে-মিলতে শ্যাষ। ওভারবিরিজত আইত কাটে দিনত ভাড়া মারছে। ঘরত ঘুমাইলে তো ভাড়া দেওয়া নাগবে। ওই ট্যাকা তো উইয়ার আছিল না? এইদোন চলতে চলতে জ্বরত পড়িল। জ্বর আর ছাড়িলয়ে না। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হইল য়িকসা চালাবার যায়া এলাকার কয়জনের সাথে পরিচয় হছিল, পরে ওমরা ট্যাকা-পাইসার ব্যবস্থা করি বাড়িত পাঠাইল। অইযে বিছানাত পড়িল। অ্যালাও অইদোনে আছে। বউ-ছাওয়ার সাথে ওয়্যাকও দেখা নাগে। মায়ের প্যাটের ভাই, ফেলে তো দিবার পাং না। বউ ফোন করছিল, কইল ঘরত কিছু নাই। আইজ তো পাঁচদিন হবার ধরিল হামরা পালে বেড়াবার নাগছি। যে কয়টা ট্যাকা আছিল ঘরত খরচ আনি খাইছে। ছাওয়াটা প্রাইভেটত যাইবে, যাওয়ার খরচ দিবার পায় না। ওইজন্যে প্রাইভেট বন্ধ। স্কুলত তো পড়ানেখা হয় না, খালি ফাঁকিবাজি। প্রাইভেটত না দিলে ছাওয়া তো ভালো য়েজাল্ট কইরবার পাবার নয়। মুই তো পালে বেড়বার নাগছং। আয়-য়োজগার তো নাই। শুননু ফজিলার মার কাছ থাকি আইজ সকালে তিন শ’ ট্যাকা ধার করি চাউল-ডাউল, তরকারি কিনি আনছে। একটা গরু আছিল চোরে নিয়া গেইছে। বউ মোবাইল করি কাইনবার ধরছে। কোনো রকমে বউয়ক বুঝ দিনু। কিন্তু মোর মন তো নরম হয়া আছে।
কাদির, ধৈর্য ধর। হামার এই জীবনেরও শ্যাষ আছে। কোনো জীবনয়ে নম্বা সময় নিয়া আইসে না। নতুন কিছু ইয়ার ভিতরত আইসেয়ে। হামারো আসপে।
হইলেয়ে ভালো। থাকেন, মুই বাজার থাকি টোপ নিয়া আইসং।
চাচা, টোপের সাথে বাজার থাকি একটা খবরের কাগজও কিনি আননু। দেখেন তো হামার কথা কিছু আছে নাকি?
দে তো। সকালত তো খুব অধৈর্য হয়া গেছলু। কোনু না জীবন একভাবে বেশি দিন কাটে না, বদল আইসে। আসছে! বেশিদিন মনে হয় তোক বড়শি হাতত নিয়া থাকা নাইগবার নয়। আঙা মন্ত্রী আইজক্যা আসপে এলাকাত। কেস তোলা নিয়া কিছু কবার পারে। চল হামরাও অ্যাকনা যাই। চুপ করি শুনি আসি কি কয়।
সুলতান, চলো বাড়িত যাই।
মহিউদ্দিন, তোমার মাথা খারাপ অইলো নাহি।
ক্যা?
বাড়িত গেলেই তো পুলিশে দইরা লইয়া চৌদ্দ শিহো ডুহাইবো।
ডুহাইতো না। দুহানেরপাড়ো গেছিলাম। খবরো দ্যাখলাম, রাঙা মন্ত্রী আয়া মীমাংসা হরছে। মামলা উডাইছে।
আলহামদুলিল্লা। তোমারে প্যাট বইরা খাওয়ায়াম, যে খুশির খবর দিলা।
ট্যাহা পাইবা কই? পানি তো দেয় নাই। খালি মামলা উডাইছে।
পরের বছর খাওয়াইয়াম। পানি তো অ্যাকদিন পায়ামই। হেইদিন না হয় মনে হরায়া দিও।
কবে পানি আইবো, তুমি খাওয়াইবা? হেই আশায় গুফো ত্যাল বড়ায়া থইলাম। অ্যাহন তুমিও বাড়িত যাও, আমিও যাই।
যাইতাছি, দোস্ত মনে করায়া দিবা কিন্তু খাওনের কথা।
দিমুনে। আগে বাড়িত যাও।
চলবে…