॥ পর্ব-১২॥
৩৬.
সুলতান মিয়া, স্বামী আমার। তোমার দোস্ত সগীরের ব্যাডার কঠিন জ্বর আইছে, দেখপার গেছিলাম। আত-পাও লড়াচড়া হরবার পায় না। মুরুব্বিরা কইতাছে, বুত দরছে, হালিম কবিরাজরে ডাক দ্যাও। সুফিয়ার অমন বুত দরছিলো, হালিম কবিরাজরে ডাইক্যা আইনা ফু-ফা দিছে, তাবিজ দিছে। তারপর বালা অইছে। মুরুব্বিগর কথা হুইন্না অয় কবিরাজ ডাইক্যা আনলো। কবিরাজ ফু-ফা দিয়া কয়, না অ্যারে জীন দরছে। সন্ধ্যার আযানের সময় অমুক জাগায় মুতছিন। মুত অর মাথায় পড়ছে। পইড়াই অসুখ দরছে। অদ্দেক খাইছে, অদ্দেক থইছে। অ্যাহনই ফুল চিকিৎসা না নিলে পরে আর বাঁচপো না। তোমার দোস্তর বউ তো বয় পায়া যায়। কইলো, আপনে চিকিৎসা শুরু হরেন। কবিরাজ শুরু হরলো তার কাম। মাডিত আকাবাকা হইরা দাগ দিলো। তুলা রাশিরে খুইজ্জা আনলো। ঝাডা নিলো। সইস্যা নিলো। চুল নিলো। লইয়া দাগ দেয়া মাডির কয়েক জাগায় থাপ্পর-টাপ্পর দিলো। হাজির অওয়ার পর জীন কয়, কাডানি হরুন লাগবো। কাডানি হরতে লাগবো চাইরআলি মালবুক কলা। একজুড়া কবুতর। লাগবো সাদা খাসির রক্ত। সাদা কাপড়। সিন্দুর। দুদ-কলা। এইতা অ্যাক লগে হইরা কলা গাছ দিয়া বুরহা বানায়া গাডো বাসান লাগবো। সবাই যাইবার পাইতো না গাডো। খালি কবিরাজ যাইবো। এইতা হরার পর সগীর বাইয়ের বউ কয়, আল্লা বাঁচাইলো, কবিরাজ যুদি না আইতো তাইলে এতোদিনে পুলাডা মইরাই যাইতো।
তুই এইত্যা বিশ্বাস হরছ? এইত্যা অইলো বুংবাং। ট্যাহা-পয়সা নেওয়ার ফন্দি।
মাইনষে তো হরতাছে।
তুই কি মনে হরছস, এইরহম হইরা অয় বালা অইবো? বালা অইতো না। ছ্যারার মনে গাথা অইলো জাড়-ফুক তো দিলোই অ্যাহন আর অসুখ নাই। এই চিন্তাডাই অরে অল্পেটটু সুস্থ হইরা তুললো। পরে কবিরাজ আওয়া বন্দ অইলে অয় ডাক্তারের অষুধ খায়া বালা অইবো। ব্যাপারটা এইরহম। বিশ্বাস আর মন যতো শক্ত রোগও সারবো তত তাড়াতাড়ি।
তুমি তো দেহি খুবয়ি বুজনাদার?
সুলতান, সুলতান বাড়িত আছো?
দ্যাখ তো ক্যাডা?
এনজিওর মানুষ আইছে।
বইবার দে।
বাই, আসসালামু আলাইকুম। কিদুন আছুইন?
ভালো আছি। আজ কিস্তির তারিখ। টাকা নিয়া আসো।
বাই, ট্যাহা তো নাই। আরেক কিস্তিতে দ্যামনে।
তুমি গত কিস্তিতেও এমন কথা কইছো। অন্য কথা নাই, টাকা
আনো।
বাই, সত্য কইতাছি আমারটে ট্যাহা নাই।
টাকা না থাকলে তো হবে না। টাকা নিছো যেমনে হোক কিস্তি
দেওয়া লাগবে। তুমি টাকা দিবার পাবা না, কিস্তি নিছো ক্যান?
দরকার আছিলো দেইহাই তো নিছি।
দরকার সারছো, এখন টাকা ছাড়ো।
আতো কাম-কাজ নাই। নদীও হুগনা দ্যাখতাছুইনতো। দিয়া দ্যাম চিন্তা হরুইন না যে।
চিন্তা তো করা লাগে। বস তো ছাড়বে না। তোমাক আমি এক কিস্তিত সুযোগ দিছি। এইটাত দিতে পারবো না। যেখান থেকে পারো টাকার ব্যবস্থা করো। ঈদের পর ট্রান্সফার, আর আসতে পারবো না। ব্যবস্থা করে দিয়া দ্যাও।
আঙ্গোর প্যাডো বাত নাই। তোমার কিস্তি দ্যাম কিবা?
এইসব কথা শোনার টাইম নাই। টাকা দিতে হবে এইটা হইলো কথা। যেখান থেকে পাও আইনা কিস্তি শোধ করে দ্যাও। বাকি রাখা যাবে না।
কাম-কাজ না থাহায় ম্যালা দার অইছে, এইতাই দ্যাম না কিস্তি দ্যাম?
তর্ক করে সময় নষ্ট না করে টাকার ব্যবস্থা করো। আমি আসতেছি।
হুনছোস কি কয়া গেলো?
হুনছি। অ্যাহন কি হরবা?
দেহি আইজুদ্দির বাপেরটে দার-টার পাওয়া যায় কি না।
না রে, ওইনো মিললো না।
আরো কুনুহানো গেছিলা?
গেছলাম। বকশোরে কইলাম। মজনুরে কইলাম। মহিউদ্দিনের লগে মোবাইলো কতা কইলাম। অয় ট্যাহা দিবার পাইবো কি পাইতো ঠিক হইরা কইবার পাইলো না।
অ্যাহন কি হরবা?
কি যে হরাম, এইডাই বাবতাছি।
সুলতান বাড়িত আছো?
ওই যে আয়া পড়ছে, কি কইয়াম?
যাও, অয় যেদুন হইরা কয় ওই মতো উত্তর হরবা।
বাই, বালো আছেন?
ভালো আর রাখলা কই। কিস্তি জোগাড় করছো?
না, পাইলাম না তো। অনেক জাগাত খুজা-খুজি হরলাম। পাইলাম না।
তাইলে দিবার পাবা না?
না।
রিয়াজ, মাহিন, ফরিদ অর ঘর থেকে হাড়ি-পাতিল যা পাও নিয়া আসো।
বাই, আপনে এমন কইরেন না। আড়ি-পাইল্লা না থাকলে কিবা রাইন্দা-বাইড়্যা খায়াম?
না খেতে পাইলেই কোম্পানীর কথা মনে পড়বো। তুমি যে অঙ্গীরকারাবদ্ধ সেই কথা স্মরণে আসবো। এখন তো আছো জালে আটকা। তখন চিন্তার পথের এই জাল সইরা যাবে। ঠিকই কিস্তি দিবা।
বাই, আপনার আত-পাওয়ো দরি তাও আপনি এমন কাম হইরেন না।
ছাড়ো, হাত-পাও ধরা তো অফিস দেখবে না। সে দেখবে টাকা। কত কিস্তি তুলতে পাইছি, সে এটা দেখবে। কিস্তি না নিয়ে গেলে আমার বেতন থেকে টাকা কেটে নিবে।
যাও, তোমরা হাড়ি-পাতিল বের করে আনো।
আল্লার দোহাই, আপনারে সামনের কিস্তিত সব ট্যাহা দিয়া দ্যাম। তাও এইকাম হইরেন না।
এখন কারো দোহাই-ই খাটবে না। তুমি পা ছাড়ো। কান্না থামাও।
বস, আনছি।
চলো। আর শোনো সুলতান, পরের সপ্তাহে তিনকিস্তি দিয়ে হাড়ি-পাতিল ফিরায়া আনবা।
ক্যাগো, কোদাল লইয়া কই যাও?
যাই। পথ ছাড়।
বাবি, সুলতান কই?
মহিউদ্দিন বাই, অয় তো কোদাল লইয়া নদীর হেইবা গেছে।
ও। আপনে বাড়িত থাহুন। আমি ওইদিকেই যাই।
সুলতান, দোস্ত, চর কোপাও ক্যারে?
নালা হরাম, পানি আনাম। পানি থাকলে কি আর আজক্কা কিস্তি দিবার পাই না। গরতে আড়ি-পাইল্লা লইয়া যায়।
দোস্ত, পানি তো আসল জাগায় আটকানি। ওইনো না ছাড়লে এইনো আইবো না। তোমার মোবাইল পায়া ঋণ হইরা এই ট্যাহাডা আনছি। আইতে দেরি অয়া গেলো। যাও ট্যাহা দিয়া আড়ি-পাইল্লা ছুডায়া আনো।
দোস্ত, কও অ্যামনে চলবার পায়? কতদিন দইরা পানি পাই না। সব কিদুন মইরা গেছে। খালি বালু আর বালু।
হ, আঙ্গোর বাড়ির সামনো ক্ষ্যাতো পানি দিবার লাইগ্যা বডিং হরছে। হেই বডিং থাইক্যা পানি ওডে না। খালি ডুডায়।
অবস্থা খারাপের থাইকাও বেশি খারাপ। উদ্দারের উপায় তো হরুন লাগবো।
তুমি-আমি কইলেই কি আর উদ্দার আইবো। উদ্দারের চাবি তো দুনিয়ার মালিকের আতো। থাহো দোস্ত, বাড়িত ম্যালা কাম ফালাইয়্যা আইছি। আরেকদিন আয়াম নে।
যাও বাই, বাড়িদ যাও। তুমি অনেক বড় উপকার হরলা। মনে থাকপো।
৩৭.
বিলকিসের মাও কুটে গেলু?
কি হইছে?
ক্যানেলত তো পানিয়ে নাই। যেইকন্যা পানি আছে অটে হাস দাড়ে থাকি পাখ ঝাইড়বার নাগছে, ভেড়া ঘাস খাবার নাগছে। এইদোন হইলে আবাদ করমো ক্যামন করি?
উপায় তো করা নাগবেয়ে। বডিং বসান।
বডিংয়েও কাম হবার নাগছে না। পানি ম্যালা নিচত চলি গেইছে। হামার এটে যে কাজ করছিল মহিউদ্দিন নামের ছাওয়াখান, ওমার বাড়ির সামনত বডিং করছে। পানিয়ে নাকি উঠে না। মেশিন খালি সাউন্ট করে।
বাড়ির বাকি কামখান শ্যাষ কর নাইগবার নয়?
বালের প্যাচাল শুরু করলু। আবাদ করিম ক্যামন করি সেই চিইন্তাত বাঁচং না। আর অয় আছে বাড়ি ঠিক করা নিয়া। ভুই থাকি ধান আসলে বাড়ি এমনিতে ঠিক হয়া যাইবে। প্যাটত দিবু কি অই চিইন্তা করেক।
মুই তো ভালো কথায় কইছোং, অ্যাতো চেতার কি হইল?
বুঝলু, সময় বুঝি কথা কওয়া নাগবে। এই জ্ঞানটা বা তোর আছিলোয় কবে? টিভিখ্যান ছাড়েক তো, দুনিয়ার হালচাল অ্যাকনা দেখং।
দুনিয়া-দারির খবর নেওয়ার নোকখান কি! ঘরত তেল-নুন আছে কি নাই এইটারে খবর যায় আখে না, তায় আবার দুনিয়ার খবর আখপে।
আবার শুরু করলু।
ন্যাও দেখো তোমার দুনিয়ার খবর।
আজকের বিশেষ খবর, ‘তিস্তায় পানি শূন্যতায় কৃষকের আন্দোলন, পথে নেমেছে কৃষকেরা।’ এ প্রসঙ্গে আমরা বিস্তারিত জানবো। এখন সরাসরি চলে যাচ্ছি আমাদের প্রতিনিধি জমির উল্লাহর কাছে। জমির আমাকে শোনা যাচ্ছে?
হ্যাঁ ন্যান্সি, শোনা যাচ্ছে।
ওখানকার বর্তমান পরিস্থিতি কি?
ন্যান্সি, খবরে যেমনটি বললেন, ভারত কর্তৃক গজলডোবার সবকটি গেট বন্ধ করে দেওয়া এবং তিস্তা থেকে পানি সরিয়ে নিজের কাজে লাগানোর কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পানিশূন্যতায় ভুগছে তিস্তা। সে কারণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পে পানি নেই। পানি না থাকার কারণে আওতাধীন ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর বোরোর জমি ফেটে চৌচির। পানির অভাবে কৃষকরা মাথা ঠুকে মরছেন। তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করছে পানির জন্য। এর মধ্যে ৩ ও ৫ মার্চ পানির দাবিতে প্রকল্পের ক্যাচমেনড এরিয়ার দিনাজপুরে চিরিবন্দর উপজেলার ফতেহজংপুর ইউনিয়নের দেবীগঞ্জে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে কৃষকরা। দীর্ঘ অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হলে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষকদের বুঝিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করিয়ে নেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে কৃষকরা ধর্ণা দিচ্ছেন। কথা কাটাকাটি হচ্ছে। এরই মধ্যে কৃষকরা লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিলে অসহায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা তিন জেলার এসপি, ওসি এবং ডিআইজির কাছে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করে রেখেছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা হয়তো আরো বড় কোনো আন্দোলনের ডাক দিতে পারে অন্য কোথাও, গোপন সূত্রে এমনটিই জানা গেছে। ন্যান্সি।
জমির আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। প্রয়োজনে আবারো আপনার সঙ্গে যোগ দিবো। দর্শক এতক্ষণ আপনারা শুনছিলেন পানির দাবিতে কৃষকদের করা আন্দোলনের সর্বশেষ সংবাদ। এখন আমরা ফিরছি অন্য প্রসঙ্গে।
বিলকিসের মাও, পাঞ্জাবিটা দ্যাও তো, পাগলাপীর থাকি আসি।
কাদির, ক্যানেলত পানি নাই, বডিংয়ত পানি উঠে না। তাইলে আবাদ করমো ক্যামন করি?
হয় চাচা, এইদোন অবস্থা তো আগত দেখং নাই। হামরাও তো চিইন্তাত পড়নো।
আগত শুক্যাইলেও অ্যাকনা করি পানি পাওয়া গেছলো, এইবার তো একবারে নাই। ব্যারেজত যায়া দেখনু পিলারগুইলা দাড়ে আছে বালুত। ব্যারেজের নিচত যে পানি উইয়াত হাটুও ভিইজবার নয়। কোলার ছাওয়াও যদি পেসাব করা শুরু করে ওই পানির চায়া বেশি জমাইবে। নৌকাগুইলা বালুর ভেতর কোমর ডুবি আছে। কোনো কোনোটা গোটালে চরের বুকত নুকাইছে। অইদোত কোনোটার বুক চিড়ি গেইছে। নৌকার মানুষগুইলাও পানি বিনা কাতরাবার নাগছে। জলের জীবন, টানত আসি গতি হারাইছে। নৌকা আর মানুষ সবায় বেকার সময় কাটাবার নাগছে।
হয় চাচা, মুইয়ো কাইলকা দেইখপার গেছনু ব্যারেজ। উজান আর ভাটিত চায়া দেখং বালা চকচক কইরবার নাগছে। মানুষ, গরু-ছাগল কায়ো নাই। খালি অইদ আর বালা। বাড়িত আসি শুনোং ছলিমটা গলাত অশি দিছে?
ক্যা অশি নেইল?
ভুইট্টা আবাদ করি যখন তুইলবার সময় হইল, হিসাব করি দেখিল য়িনের ট্যাকা শোধ দিবার পাবার নয়। য়িনধারের ঘর তো আর ছাইড়বার নয়। তাই অয়ে ছাড়ি গেইল। ভুইট্টা আবাদত তো ঠিক মতো পানিয়ে দিবার পায় নাই। এইজন্যে আবাদও ভালো হয় নাই।
এইদোন অবস্থা দেখি দিনাজপুরত আন্দোলন করিল পানি পাবার জন্যে, খবরটা দেখছিস?
হয় চাচা, দেখছং।
হামরাও আন্দোলনের ডাক দেই, ভালো করি ধইরবার চেষ্টা করি। যাতে পানি পাই। তোরা কি ভাবছিস?
হামরাও তো এইদোন ভাইববার নাগছি। চেয়মেনের সাথে আগত কথা কওয়া নাগবে। দেখি ওমরা কি কয়।
কবে যাবু উইয়ার কাছত?
চলো, অ্যালাই যাই। বাজারত তো হামার এত্তিকার সোগ আবিদরঘর আছে। বৈকাল থাকি ওমরাও হা হুতাশ কইরবার নাগছে। ওমারো মেজাজ ভালো নোয়ায়।
তাইলে চল ওমাকো সাথত নিয়া।
চেরমেন সাব বাড়িত আছেন?
নেওয়াজ দেখতো কায় আসিল।
চাচা, গ্রামের সোগ কিষাণ আসছে।
সবায়? কিছু হইছে?
মনে হয় কিছু একটা হইছে। তোমরা যায়া দ্যাখো।
আসসালামু আলাইকুম চেয়ারম্যান সাব।
ওয়ালাইকুম। তোমরা সবায় কি মনে করি?
ক্যানেল দেখছেন? আইজক্যা টিভি দেখছেন?
হয়, দেখছোং।
হামরাও আন্দোলনে নাইমবার চাই। শক্ত করি ধরা নাগবে যাতে দাবিটা পিছলি না যায়।
হয়, ধরা তো নাগবে আইনুদ্দিন চা। নোক পাইমেন কোটে? আস্তাত দাড়াইবে কায়?
হামরায় দাড়ামো। তোমরা সাথত থাকমেন। নাকি তোমরা চান না পানি?
পানি না চায়া কি করিম। মোরও তো ভুই আছে, আবাদ করা নাইগবার নয়। চেরমেনিত আর কয় ট্যাকা।
তাইলে তো আর চুপচাপ বসি থাকা যায় না এইটা তো বুইঝবার পাইছেন।
তা তো বুঝনুয়ে। চাচা, তোমরা ক্যামন করি আন্দোলন কইরবার চাও?
হামরা আগত কাগজ হাতে আস্তাত দাড়ামো। তারপর আস্তা-ঘাটের যোগাযোগ বন্ধ করি দিমো। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকপে।
মানুষ তো অসুবিধায় পড়বে।
হামরা কি অসুবিধায় নাই। অসুবিধায় সুবিধা আসপে অসুবিধার পথ ধরিয়ায়।
আচ্ছা! তোমরা যাও, দেখি কি করা যায়।
নেওয়াজ, মুই যে চড়ত যাইম, এই কথা সবাক জানাও। টানত আইনুদ্দিন চাচা আর কাদিরক দায়িত্ব দে সোগ আবাদিরঘরক যাতে আন্দোলনত নিয়া আইসে। দোয়ানির বাজারত যে ছাওয়াখান মাইক হাতত নিয়া সবার সাথে আলাপ করে উইয়াকও খবর পাঠাও। অয় যাতে মোর সাথে দেখা করে, বাড়িত আইসে।
ঠিক আছে, মুই সোগ ব্যবস্থা কইরবার নাগছোং।
৩৮.
শোনো, চেরমেনের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সংবাদ আছে। তোমরা কালকে মাঠে আসপা। চেয়ারম্যান তোমাদের কিছু বলবো। কথাগুলা নাকি গুরুত্বপূর্ণ।
নেওয়াজ বাই, অয় বুট লইয়া যে ছ্যাচড়ামি হরলো। একটা কামো হরলো না। অ্যাহন আর কি কইবো?
সামনে কাজ করবে। মাঠে সবাই এক সাথে হও। শোনো, চেরমেন কি কয়।
আচ্ছা, আসমুনে।
আরে আহসান ভাই, কই যাও?
তুমি না কইলা চেরমেন সাব ডাকছে কি জানি কইবো।
হ, মনে পড়ছে।
এতো ভুইল্যা গেলে হইবো?
চলো, আমিও তো ওইপথেই যাবো। এক সাথেই যাওয়া যাক।
চলো।
চেরমেন চাচা, ইয়াজুল আহসান ভাই আসছে।
বইসপার দে।
চাচা, আসসালামু আলাইকুম।
ভালো আছো, আহসান?
জ্বী, আপনি?
এই আছি। সরাসরি কাজের কথাটাই বলি।
জ্বী চাচা, বলেন।
তুমি তো আমাদের নানা ধরনের সংকট নিয়ে কথা বলো হাটের দিন। এইটা কিন্তু ভালো। আমরা পানির দাবিতে আগামীকাল পাগলাপীরের গঞ্জিপুরে এক সাথে হবো। এলাকার অনেকেই তো তোমাকে মান্য করে, তোমার কথা শোনে। তুমি যদি আন্দোলনে থাকো তাইলে তারা ভরসা পাবে, আন্দোলনে অংশ নিবে। তুমি কি থাকতে পারো না আন্দোলনে?
চাচা, অসুবিধা নাই, আমি থাকবো আন্দোলনে। অন্যদেরও অংশ নিতে বলবো। পানি তো আমাদের খুবই দরকার।
হ বাবা, বইলো। এই কথা কওয়ার জন্যেই তোমাক ডাকছিলাম। নেওয়াজ, আহসানকে চা দে। তুমি বসো, চা খায়া যাও। আমার একটা মিটিং আছে, উঠি।
ঠিক আছে, আপনি মিটিংয়ে যান।
শোনো চরবাসী, আমি জানি তোমরা খুব রাগ করে আছো আমার উপর। এতোদিন যা যা হয়েছে ভুলে যাও। আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। এখন আমাদের এক সাথে হওয়া দরকার। আমরা একটা বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আন্দোলন করতে হবে। আসো আমরা এক সাথে হয়ে পানির জন্যে আন্দোলন করি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত একসাথে থাকলে আমাদের কেউই বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। শোনো, আমরা পানির জন্যে আন্দোলনের ডাক দিছি। তোমরাও যোগ দেও। আসো আমরা আন্দোলন শক্ত করি। তোমরা তো জানোই যে তিস্তায় পানি নাই। তোমরা মাছ মারতে পাও না। আবাদ করতে পাও না। কিস্তি দিতে পাও না। তিস্তার পানির ন্যায্য অধিকার আমাদের প্রাপ্য, কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। তোমরা আমার সাথে থাকো, আমরা আন্দোলন গড়ি। ১৩ মার্চ আমরা পাগলাপীরের গঞ্জিপুরে সবাই এক সাথে হবো। তোমরা অবশ্যই যাবা। পানি আমাদের অধিকার, এ অধিকার চেয়ে নিতে হবে। যাওয়া আসার খরচ আমি দেব। তোমরা কি যাবে? উপস্থিত থাকবে?
হ, চেরমেন সাব আমরা যায়াম। যাওয়া-আসার খরচ দিলে রাজি আছি। আঙ্গোর অধিকার আদায় করা লাগবো তো। (সম্মিলিত স্বর)।
চলবে…