আবার একটা ধোঁয়ার ঘূর্ণির মতো ওঠে। মনিটরে আর কিছু দেখতে পাওয়া যায় না। সব জায়গায় তখনো টান টান উত্তেজনা। তারপর আর কী হবে? আরও কতদূর। আরও কতদূর মানুষ অতীতে যেতে পারবে? কতদূর ভবিষ্যতে যেতে পারবে? মানুষ কি পারবে তার ইচ্ছের সবটুকু পূর্ণ করতে। নানা টানাপড়েন তখন বিশ্ববাসীর, সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী বিজ্ঞানী লেখক শিক্ষক শ্রমজীবী আর সাধারণ সব মানুষের। যে যেখানে বসে দেখছে টিভিতে সবাই মুগ্ধ আর রোমাঞ্চিত এক অভাবনীয় আবিষ্কার আর তার সফল ভ্রমণের রোমান্সে। এ সফলতা একা রূপকথার নয়। এ সফলতা তার পরিবারের। এ সফলতা বাংলাদেশের। এ সফলতা সমগ্র মানবজাতির।
ঝড়ো বাতাসের মতো কিছু দেখা যায় মনিটরগুলোয়। সিনেমায় ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করলে যেমন কিছু পিক্সেল কেবল ফুটে থাকে তেমন। এতক্ষণে বোঝা যায় দ্রুতগতির কারণে অমন হয়। কোথাও থামার আগে তেমন কিছু দৃশ্যমান হয় না। ওরা দু’জন ছুটছে। ঈশানের টানটান উত্তেজনা। রূপকথা ধৈর্যের বাঁধ যেন ভাঙছে। কবে যাবে সেখানে। কত কত কাল ধরে সে ওই স্বপ্নটা দেখছে। সেই যে শিউলি গাছ। আহা। এখনো যেন মায়ের ছোটবেলা হয়ে তার নাকে ভেসে আসছে। ওই পেয়ারা বন। ওই যে বাদুড় বুঝি এখনই পাখা মেলেছে আকাশে। মধ্যরাতে বাঘডাস ডাকছে শিউলির তলে। আর পাহাড়। খাড়িপথ বেয়ে সেই যে নিঃস্ব একজন মানুষের ঘর উঁচু টিলার পর। আহা কেমন সে গ্রাম। কেমন দেখায় মধ্যরাতে যখন টিম্ টিম্ করে জ্বলে দূরের গ্রামগুলোতে আলোর ঝালড়। সেই লেবু পাতার কাঁটা। সাদা শুভ্র লেবুফুল চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির এক একটা ফোঁটা মার যাকে মনে হতো হীরের কণা। সেই লালমাই। কচি সবুজ ঘাস। লজ্জাবতীর লাজ। কোনোদিন সে যে দেখেনি অমন সুন্দর। তার যে কোনো গ্রাম ছিল না। গ্রামের পাশে পাহাড় ছিল না। পাহাড়ে ছোট কুঁড়ে ঘর ছিল না। ছিল না অমন অবাধে প্রকৃতিতে চড়ে বেড়ানোর পথ। ছিল না সাঁতার কাটার পুকুর। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শোনার মতো পুকুরের উছল পানি। তার যে কোনো পাখি ছিল না। কোনো বন ছিল না। ঢাকা শহরের চার দেয়ালের ভেতর মা যখন তাদের দু’বোনকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপাত করে যাচ্ছেন। ঘরের দরজা খুললেই পাশের বাড়ির জংধরা নোংরা জানালা নষ্ট করে দিত ভোরের সৌন্দর্য। অনেক কষ্ট করে দালানের ফাঁকে যখন চাঁদ দেখতে হতো তখন মা খুব কষ্ট পেত। মা’র মুখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতো। আহা আমার মা। সে তার সমস্ত সত্তা দিয়ে অনুভব করাতে চাইতো না দেখা অধরা সেই প্রকৃতিকে। ওই বুঝি ফিঙে বেরোবে পোকা শিকার করতে। কাঠবেড়ালিটা বুঝি এই লাফ দিয়ে উঠলো পেয়ারা গাছে। একটা আচ্ছন্ন ঘোরের মধ্যে ছিল রূপকথা।
একটা জোর ঝাকুনি খেয়ে থেমে গেল টাইমমেশিন। ঘোর কেটে বাস্তবে ফিরে এলো রূপকথা।
কী হলো ঈশান?
ম্যাম। আমিও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
স্যার, স্যার শুনতে পাচ্ছেন?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। দেখতে পাচ্ছি তোমাদের। রূপকথা কোথায় যাচ্ছ সালটা আবার কি-বোর্ডে লিখো।
রূপকথা লিখে ১৯৭৪। না কোনো সাড়াশব্দ নেই মেশিনটার। বিশ্ববাসী স্থির। কোনো কি দুর্ঘটনা। ওরা কি আটকে যাবে ওখানে? কোথায় আছে ওরা এই মুহূর্তে?
চলবে…
টাইমমেশিন-১৪ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-১৩ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-১২ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-১১॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-১০॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-৯॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন: ৮ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-৭॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-৬॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন: পর্ব-৫ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন: পর্ব-৪॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন-৩ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন: পর্ব-২ ॥ শাপলা সপর্যিতা
টাইমমেশিন: পর্ব-১ ॥ শাপলা সপর্যিতা