স্টোন ওয়াশ জিন্স প্যান্ট আর রেড একটা টিশার্ট পড়েছে দিদি। কি যে সুন্দর লাগছে আজ দিদিকে। আর স্যার তিনি তো চন্দ্রকথার গত জীবনের রাজকুমার। সফেদ তার পোশাক, তবু কি বাহার। আর হ্যান্ডসাম হিরো ঈশান স্কাই ব্লু শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স এ যা দেখাচ্ছে। মা পড়েছেন তার পছন্দের কালো জামদানি। চন্দ্রকথা সোনালি একটা টপস্ এর সাথে ব্লু জেগিংস।
অসাধারণ লাগছে তোমাকেও চন্দ্র। নিজেই নিজেকে বলে।
নতুন ইতিহাস লেখা হতে যাচ্ছে। আর তার সাক্ষী আজ তুমিও হতে যাচ্ছ চন্দ্রকথা…
তার বিশ্বাস এখন ষোলো আনা। দিদি জয়ী হবেই। রূপকথার চেহারায় আত্মবিশ্বাসের সুতীব্র ছায়া। এতটুকু বিচলন নেই । স্যারও যেন নিশ্চিত। তবু তার কপালে ঈষৎ দুশ্চিন্তার ছায়া। ঈশান নির্ভীক। গবেষণাগারের আছে এক ডজন প্রোগ্রামার, স্যার আর অন্যান্য। হাজার হাজার টিভি ক্যামেরা টাইমমেশিন আর গবেষণাগারের মনিটরের ওপর সেট করা। রূপকথা আর ঈশান প্রথম আরোহী। ঈশান সঙ্গে থাকবে এ জন্য যে মেশিন যদি কোনোরকম গোলযোগে পড়ে তা সামলাবে সে।
ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টা মিনিট সেকেন্ড অতিক্রম করে শূন্যে ঠেকে। মেশিন আর কম্পিউটারগুলোতে একইসঙ্গে সেট করা হয় মিশন ‘টাইমমেশিন ২০৩৬ টু ১৯৭৪’-এ
সেকেন্ডের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে পড়ে টাইমমেশিন আর সঙ্গে রূপকথা এবং ঈশান
স্যার চিৎকার করে ওঠেন,
ইয়েস। ইট ইজ ওয়ার্কিং। ইট…ইজ…ওয়ার্কিং…।
বালকের মতো চাপা একটা চিৎকার করে ওঠেন আকবর খান আবার।
সবার দৃষ্টি তখন মনিটরে।
কয়েক মুহূর্ত কিছুই দেখা যায় না। একটা কেমন ধোঁয়ার কুণ্ডুলী পাকিয়ে মেশিনটা চলতে শুরু করে। চারপাশে কেমন কুয়াশা কুয়াশা সব। আকাশ গাছ মানুষ মেশিন কিছুই দেখা যায় না। শুধু মনে হচ্ছে একটা গভীর শূন্যতার ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে সব। মনিটরে ফাঁকা সব। কয়েক সেকেন্ড। স্যার আবার চিৎকার করে ওঠেন,
ইয়েস। ওটাই। ওই তো ভেসে উঠছে। ওই তো আমি দেখতে পাচ্ছি। ধোঁয়াশার মধ্যে রূপকথা আর ঈশান। সবার দিকে তাকিয়ে স্যার আবার,
আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন তো?
সবাই কিছু একটা অনুমান করতে পারছে ঠিক। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু ভাবতে পারছে না।
আপনারা অপেক্ষা করুন। আমি ব্যাখ্যা করছি। দেখুন খুব দ্রুত গতিতে চলছে টাইমমেশিন। আমার মনে হচ্ছে রূপকথা সরাসরি ১৯৭৪-এ চলে যেতে চাইছে। আপনার অস্থির হবেন না । আমি কথা বলছি ওদের সাথে।
ভীষণ উত্তেজনায় স্যারও কাঁপছেন যেন বা খানিকটা। এয়ার ফোনটা ঠিক করে নিলেন আর একবার।
রূপকথা শুনতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছ রূপকথা? আমাকে শুনতে পাচ্ছ? সারাপৃথিবী অপেক্ষা করছে। জবাব দাও।
জ্বি স্যার। শুনতে পাচ্ছি। আমরা ২০১১ সালে আছি বর্তমানে।
আমরা কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। ইজ ইট্ ওকে অর নট্? টাইমমেশিন তবে যাচ্ছে তো?
জ্বি স্যার। আমরা সফল স্যার। আই অ্যাম টোটালি অ্যাক্সাইটেট।
কিন্তু আমাদের প্রমাণ দাও। তুমি কোনো একটা জায়গায় থামো। পৃথিবীকে দেখতে দাও।
ঠিক আছে স্যার।
তারপর রূপকথা ইশানকে বলে,
ঈশান, চলো আমার স্কুলে থামি। ২০১৫সালে। ওখানে আমার বন্ধদের মায়েরাও আছেন। তারা প্রমাণ হিসেবে বলতে পারবেন আমরা ঠিক কি না।
স্যার আমরা ২০১৫-তে থামছি। আমার স্কুলে।
ওকে। ওকে। থামো তবে।
টাইমমেশিন ল্যান্ড করে সফলভাবে। ২০১৫ সালে। রূপকথা আর চন্দ্রকথার প্রথম স্কুল নালন্দা বিদ্যালয়।
ঐ তো দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ ঐ যে শেহজাদি, তৃণা তুর্ণা সেই যে চন্দ্রর দুই টুইনবন্ধু । দিগন্ত, পৃথা, শ্রাবণ, বর্ণ, স্পন্দন সব রূপকথার বন্ধুরা। ঐ যে দেখো সৃষ্টিকে ওর মা স্কুলে দিয়ে গেলেন। পৃথা রাজেশ্বরীকে স্কুলে ঢুকতেই জড়িয়ে ধরেছে। সত্যি। সত্যি দেখা যাচ্ছে। ২০১৫’র ১৭ ই ডিসেম্বর। আগের দিন ১৬ ডিসেম্বরও বিজয় দিবসে স্কুল বন্ধ ছিল। পরদিন স্কুল গ্রাউন্ডের বাইরে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে স্কুলের সব শিক্ষক শিক্ষিকা আর ছাত্রছাত্রীরা দাঁড়িয়ে গাইছে… আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। সামনে রাজপথ। ঝুমুর চিৎকার করে ওঠে,
ঐ যে দেখ চন্দ্র। আইল্যান্ডের ওপর সেদিন সব মা বাবাও দাঁড়িয়ে গেছি। ঐ যে দেখ দেখ শেহজাদীও দাঁড়িয়ে আছে। দেখ দেখ সবগুলো গাড়ি থেমে গেল দেখতে পাচ্ছ। সবাই গাইছে আমার সোনার বাংলা। কেউ রাস্তায় দাঁড়ানোর কারনে বিরক্ত নয়। যেন প্রাণ খুলে গাইছে সবাই,
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ই ই ই
সবার অজান্তেই ঝুমুরের কথাগুলো সারাবিশ্বের সমস্ত দর্শক শুনতে পাচ্ছে। সে তো আজ চিনিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সাল। হঠাৎ রূপকথার কণ্ঠ শোনা যায়,
মা
হ্যাঁ বল রূপকথা।
মা আমার টাইমমেশিন…
রূপকথার গলা আবেগে আনন্দে যেন বন্ধ হয়ে আসে। মারও অবস্থা একই । তবু নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,
হ্যাঁ। হ্যাঁ রূপু। তোমার টাইমমেশিন কাজ করছে। তুমি সফল হয়েছ। বিশ্ব প্রমাণ পেল। তুমি যাও। যেখানে যেখানে যেতে চাও। যাও। ঘুরে এসো।
স্যারের চোখ দিয়ে কি জল গড়াচ্ছে! আর ঈশান, সে কোনো কথা বলছে না কেন? চন্দ্রকথা এমন ভাবতে ভাবতেই ঈশানের কণ্ঠ ভেসে আসে,
স্যার আন্টি। আমরা আর এখানে সময় নষ্ট করব না। আমরা খুব দ্রুতই ১৯৭৪ এ চলে যেতে চাই। সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
ঠিক আছে। শুরু করো।
চলবে…