[পর্ব-২৬। জুনিয়র হাইস্কুল পর্ব]
তখন বর্ষাকাল। চারদিকে থই-থই পানি। যেখানে বাড়ি-ঘর অনেক দূরে দূরে, সেখানের দৃশ্যে বিস্ময়কর। যতদূর চোখ যায়—বিশাল জলরাশির ওপর ঘন মেঘে ঢাকা আকাশ আর আকাশ। আর কিছুই দেখা যায় না। ভরা বর্ষায় অঝোরধারায় বৃষ্টি ঝরে। সেই পানি খাল-নালা দিয়ে তো নামেই না, উল্টো নদী উপচে ওঠা বানে ভাসিয়ে নেয় গ্রামের পর গ্রাম। দূর থেকে বাড়িগুলোকে মনে হয় ভাসমান জাহাজ। আর যখন প্রতিটি বাড়িতে জ্বলে ওঠে সন্ধ্যাবাতি, তখন মনে হয়, ডিঙি নৌকা। এই এক অপরূপ-অপার্থিব দৃশ। যেন ভুবনবিখ্যাত কোনো চিত্রকরের আঁকা পট। থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে একেকটি দৃশ্য।
টানা চৌদ্দ-পনেরো দিন বৃষ্টি-বানের জলে গ্রাম ডুবে আছ্ অনেকের পুকুর ভেসে গেলো। সঙ্গে ভেসে গেলো চাষের মাছ। পুকুর খালি। সেই পুকুরের মাছ ধানক্ষেতে চলে গেছে। চলে গেছে খালেও। এমনকি যেখানে-যেখানে রাস্তা ডুবে গেছে, সেখানেও জাল ফেলে সেই মাছ ধরছে মানুষ। খলুই ভরে নিয়ে আসছে। কেউ কেউ বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে। ভাগ্যের পরিহাসে অনেকে নিজের পুকুরের মাছই বাজার থেকে কিনে নিচ্ছে।
আমাদেরও ঝাঁকি জাল আছে। সে জাল ফেলে মাছ আমি ধরি। রাসেলও ধরে। একদিন রাসেল এসে বললো, ‘ভাইজ্জি জাল নিয়ে বের হন। চলেন মাছ ধরমু।’ বলি, ‘কোত্থেকে ধরবি।’ সে বলে, ‘আগে তো বের হন। দেখবেন কোত্থেকে ধরি।’ কাছারি থেকে বের হয়ে দেখি টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে। রাসেলের কোমরে খলুই বাঁধা। হাতে জাল। মাথাসহ সর্বাঙ্গ ঢাকা পলিথেনের জোংরায়। জোংরা সম্পর্কে দুটি কথা বলে নেওয়া ভালো—ওই সময় ঝড়-বৃষ্টিতে ছাতা নিরাপদ ছিল না। এর পরিবর্তে লোকজন বাঁশ, গাবপাতা ও নারিকেলের শলা দিয়ে বানানো একধনের বর্ষাতি ব্যবহার করতো। এতে পিঠ, শরীরে দুই পাশ ও মাথা বৃষ্টির ছাঁট থেকে রক্ষা পেতো। তবে বুকের দিক খোলা থাকতো বলে বাতাসের বেগ বেশি হলে ভিজে যেতো।
সে কোনোভাবেই ফিরতে রাজি না। আরও ধরবে। হঠাৎ তার চোখ গেলো খালের দিকে। কালভার্টের সামনে। সেখানে বড় বড় কোরাল-রুই ভাসছে। রাসেল সেই মাছগুলো লক্ষ করে ফেললো জাল। কিন্তু টানতে গিয়ে দেখে আর উঠে আসছে না।
যাদের এই বর্ষাতি কেনার বা বানানোর সামর্থ্য ছিল না, তারা চার ফুট লম্বা পলিথিনকে ভাঁজ করে এই ধরনের বর্ষাতি বানিয়ে নিতো। এই জোংরা তুমুল বর্ষায় জমিতে লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া ও ধান রোপণের সময় বিশেষভাবে কাজে লাগতো। প্রচলিত ছাতা মাথায় দিয়ে উপুড় হয়ে ধান রোপণ করা কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাঙল নিয়ে মাঠে চাষ দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। এরকম জোংরা আমাদেরও ছিল কয়েকটি।
রাসেলের ডাকে বের হই। ধারণা ছিল চৌরাস্তা বাজার থেকে পূর্বদিক রাস্তার কোলঘেঁষে সে খাল নদীতে গিয়ে পড়েছে, সেখানে মাছ ধরতে যাবে রাসেল। কিন্তু না। সে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দক্ষিণ দিকে হাঁটা শুরু করে। দক্ষিণ দিকে সিকি কিলো পরিমাণ গেলে, তিন রাস্তার মাথা। সেখানে আমাদের ক্লাসমেট শফিকুল ইসলামদের বাড়ি। লোকে সুফিয়ান হাজির বাড়ি বলে। বাড়িটি ছিল দুই রাস্তার কোলঘেঁষে। একটি ওই বাড়ির পুকুরের পশ্চিম পাড়ঘেঁষে চৌরাস্তা বাজারের দিকে গেছে। আরেক রাস্তা বাড়ির দক্ষিণ পাশঘেঁষে পূর্বদিকে গেছে। পূর্বদিকের ওই রাস্তার আরেকটি অংশ গেছে পশ্চিম দিকে। সেই রাস্তা দিয়ে কিছু দূর গেলে উত্তরপাশে সাইফুলদের বাড়ি, দক্ষিণপাশে ইউসুফ ও কচিদের বাড়ি। এই তিন জনের নাম এজন্য বলছি যে, তারা সবাই আমার ক্লাসমেট। তিন রাস্তার মাথা থেকে মাত্র দুই শ গজ উত্তরে একটি কালভার্ট। আর পশ্চিম দিকের রাস্তার শুরুতেই আরেকটি কালভার্ট। এটি নতুন।
তো এই তিন রাস্তার মোহনায় খালে তো মাছ খলবল করছেই, রাস্তার হাঁটুপানিতেও খেলছে ঝাঁকে-ঝাঁকে মাছ। সেখানে মাছ ধরতে আগে থেকেই হাজির সাইফুল, ইউসুফ ও কচি। রাস্তার ওপর জাল ফেলে রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, কই ধরছে। আমরাও লেগে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই খলুইয়ে আর জায়গা নেই মাছ রাখার। টিপটিপ বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। তাই ঠাণ্ডা লাগছিল। গ্রামের বয়স্করা ঠাণ্ডা তাড়াতে বাতাস আড়াল করে আবুল বিড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছেন। কেউ সফল হচ্ছেন, কেউ বিফল। বিফলরা সফলদের বিড়ির মাথায় বিড়ি ঠেকিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছেন। কিন্তু ছোটরা কী করবো? রাসেলকে বলি, ‘চল। বাড়ি যাই। অনেক হইছে।’ সে কোনোভাবেই ফিরতে রাজি না। আরও ধরবে। হঠাৎ তার চোখ গেলো খালের দিকে। কালভার্টের সামনে। সেখানে বড় বড় কোরাল-রুই ভাসছে। রাসেল সেই মাছগুলো লক্ষ করে ফেললো জাল। কিন্তু টানতে গিয়ে দেখে আর উঠে আসছে না।
এসব ফাটলের ফাঁকে ফাঁকে গোলাপি রঙের ছোট পাতাযুক্ত একধরনের উদ্ভিদ পাওয়া যেতো। মুখে নিলে লবণস্বাদ। প্রচুর রস। আমরা যখন ঘাস-গাছের গুঁড়ি-ডালের বস্তা টানতে টানতে ক্লান্ত হয় যেতেম, তখন সেই লতা খুঁজতাম। বেশ কিছু পরিমাণ পাওয়া গেলে চিবুতে চিবুতে বাড়ির পথ ধরতাম। এতে ক্ষুধা না মিটলে তৃষ্ণা মিটতো অনেকটাই।
জালের কাছি আমার হাতে দিয়ে রাসেল বলে, ‘ধরে রাখুন। আমি নামছি।’ বললাম, ‘না। নামবি না। যেই স্রোত, তোকে টেনে নিয়ে যাবে। একদম কালভার্টের ভেতর নিয়ে যাবে।’ রাসেল হেসে বলে, ‘তাতে কী? ওই পাশ দিয়ে তো বের হয়েই যাবো।’ বলি, ‘না রে ভয় করে। এ রকম করে করিম নামে একজন মারা গেছে।’ আমার কথা শুনে রাসেলের মুখে কলোমেঘ জমে যায়। যে আর নামে না খালে। ততক্ষণে অনেকেই এসে জড়ো হয়েছে।
তাদের পীড়াপীড়িতে মেলে ধরতে বাধ্য হই খুব ছোট্ট বেলার সেই দুঃসহ স্মৃতির পাতা। হাতিয়া অথবা সন্দ্বীপ থেকে নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে একটি পরিবার এসে আমাদের গুচ্ছগ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। পশ্চিম ভিটায় তার ঘর তুলে প্রায় দুই বছর ছিল। এই দুই বছরে তাদের অর্জন অনেক। সহায় সম্পত্তি বেশ গড়েছে। কিন্তু হারিয়েছে সীমাহীন। কী সেই হারানো? বলছি—ওই পরিবারের ছিল দুই ছেলে মেয়ে। ছেলেটি আমার বয়সী। মেয়েটি আমাদের ইসমাইলের সমান। মেয়েটির নাম মনে নেই। ছেলেটির নাম করিম।
এর আগে একবার বলেছিলাম, বানের তোড়ে স্টিলের পাইপের ওপর থেকে নদীর বাঁধ ছিঁড়ে গেছিল। সেই বন্যায় অনেক মানুষ মারা গেছে। যাদের লাশ পাওয়া গেছে, তাদের গণকবর হয়েছিল এই পাইপের পশ্চিম পাড়ে রাস্তার দুই পাশে। সেসব করিমকেও বলেছি বার কয়েক। এজন্য আমরা রাস্তার ওই অংশটুকুর কাছে যেতাম না। হয় পাইপ থেকে বেশ কিছু দূরত্ব রক্ষা করে দক্ষিণ দিকে যেতাম, না হয় সমান দূরত্ব রক্ষা করে উত্তর দিকে। আর সংগ্রহ করতাম নদীর তীর থেকে পাতাহীন ঘাস, বালুর ঘষা লেগে মসৃণ হওয়া গাছের গুঁড়ি-ডাল। এসবই ভেসে আসতে ভাটার টানে।
আমাদের বাড়ি থেকে নদী তখন সরে গেছে প্রায় এক কিলোর মিটার। বাড়ি ও নদীর মাঝখানে মরিয়মদের বাড়ি ছাড়া আর কোনো বাড়ি নেই। সবই ধূধূ চর। যত দূর চোখ যায়, বালু আর বালু। রোদ পড়লে দূর থেকে মনে হয় সেই পানি ঢেউ খেলছে। কাছে গেলে শূন্য খা-খা—কোথায় পানি? বরং মাটি ফেটে চৌচির। সেই ফাটলে মাঝেমাঝে পা ফসকে পড়ে যাই। তীব্র ব্যথায় কয়েকদিন হাঁটতে পারি না। তখন পাশের বাড়ির এক নানি বুড়ি এসে ফজরের নামাজের পর আগের রাতে জ্বালানো চেরাগের কেরোসিন দিয়ে পা মালিশ করে যান। কয়েকদিন মালিশ করলে ভালো হয়ে যাই আমরা। আবার দৌড়াই। উদ্দাম। বাঁধনহারা।
এসব ফাটলের ফাঁকে ফাঁকে গোলাপি রঙের ছোট পাতাযুক্ত একধরনের উদ্ভিদ পাওয়া যেতো। মুখে নিলে লবণস্বাদ। প্রচুর রস। আমরা যখন ঘাস-গাছের গুঁড়ি-ডালের বস্তা টানতে টানতে ক্লান্ত হয় যেতেম, তখন সেই লতা খুঁজতাম। বেশ কিছু পরিমাণ পাওয়া গেলে চিবুতে চিবুতে বাড়ির পথ ধরতাম। এতে ক্ষুধা না মিটলে তৃষ্ণা মিটতো অনেকটাই।
সেদিনও বের হলাম। কিছুদিন হাঁটার পর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এরই মাঝে বিশাল দুইটি মাটির চাকার ফাটলে আমার বাম পা আটকে যায়। মাটির চাকা ভেঙে সেই পা বের করে আনে করিম। এরপর বলি, ‘চল। আজ আর যাবো না।’ কিন্তু করিম সেই কথায় পাত্তা দেয় না। সে আগে আগে হাঁটে। বাধ্য হয়ে আমিও পিছু নেই। আজ আর দক্ষিণ পাশে নয়, উত্তর পাশে যাই। প্রচুর গাছের গুঁড়ি, ডাল, লম্বা-লম্বা ঘাস পাই। বস্তা ভরে গেছে। তখন আনমনে হাঁটতে হাঁটতে পাইপের কাছাকাছি চলে যাই। নদীর তীরের কাছাকাছি বেশ বড় সাইজের একটি মাছ দেখা দেখে করিম থমকে দাঁড়ায়। খাবি খাচ্ছিল মাছটি। হয়তো কোনো জালে আটকা পড়েছিল। এরপর ভাগ্যক্রমে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। এর আগেও আমরা এমন মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। তবে আজকেরটার মতো এত বড় নয় সেগুলো।
কিন্তু রাসেলে চোখে ভয়-উৎকণ্ঠার সঙ্গে যেন অবিশ্বাসও লেগে আছে। সে একবার আমার চোখে-চোখে তাকায়, আরেকবার তাকায় খরস্রোতা খালের দিকে-তার আটকে যাওয়া জালের দিকেও।
করিম বলে, ‘তুই খাড়া। মাছ নিয়েই চলে আইতাছি।’ বলতে না বলতেই সে লাফিয়ে পড়ে নদীতে। লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি যাওয়ার আগেই মাছটি আরও দক্ষিণে সরে গেলো। করিমও সেদিকে সাঁতার কাটা শুরু করে। আমি তীর থেকে চিৎকার করি—‘আর যাইস না। ওই খানে পানির গোত্তা (স্রোতের ঘূর্ণি, ওপর থেকে নিচের দিকে) আছে। তলিয়ে যাইবি।’ কিন্তু আমার সেই চিৎকার করিমের কান পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সে পড়ে যায় ঘূর্ণির ভেতর। কী করবো, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য আমি। ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু তাকে ধরতে পারি না। উল্টো ভাটার টানে পাইপের পশ্চিম পাশ দিয়ে হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে যাই। ততক্ষণে আমি এত পানি খেয়ে ফেলেছি যে, কী ঘটেছে কিছুই জানি না। পরদিন দুপুরের দিকে দেখি আমি বাড়িতে। সামনের রুমে চৌকির ওপর। পাশে কিরণ ডাক্তার, মা, বাবা, নানি, করিমের মা—সবাই। করিমের মা বুক চাপড়ে চাপড়ে কাঁদছেন। আর বারবার নিজেরে ভাগ্যকে আর আমাকে দোষারোপ করছেন। ঘটনা কী?
উঠোনে নেমে দেখি—ইয়া আল্লাহ। সাদা কাপড়ে মোড়ানো আমার বয়সী একটি লাশ। তার পাশে কয়েকজন চেনা জেলে। অনেকদিন এদের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে মাছ এনেছি করিম আর আমি। তারা মাছের জন্য টাকা-পয়সা নিতো না। বললেই এক খাবলা ছোট মাছ দিয়ে দিতো। এই জেলেদের একধরনের নীতি-সংস্কার ছিল। কেউ মাছ চাইলে তাকে বিমুখ করতো না। তাদের বিশ্বাস, কোনো মাছপ্রার্থীকে মাছ না দিলে মৃত্যুর পর তাদের লাশ থেকে মাছের গন্ধ বের হবে। এজন্য তারা বংশপরম্পরায় মাছপ্রার্থীকে খালি হাতে ফেরাতো না। তো তাদের একজন আমাকে দেখেই বলে, ‘এই টারে তো কাল জালে পাইছি। পানি খেয়ে পেটু ফুলে ঢোল হয়ে গেছিল। ওপরে তুলি চাপ দিয়ে পানি বাইর করছি। তারপর দিয়া গেছিলাম। আর ওইটারে কাল দেখি নাই। আজ জাল তোলার সময় দেখি নিচে পড়ি রইছে।’ ওই জেলের কথা শুনে করিমের মায়ের আহাজারি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। উঠোনে যত গড়াগাড়ি দেন, তারও বেশি দোষ দেন আমাকে।
ঘটনা এই পর্যন্ত বলে থামি। এর বলি, ‘রাসেল খালে যে স্রোত নামার দরকার নাই। তুই জাল ছেড়ে দে। নয় জোরে টান দে। ছিঁড়ে যদ্দুর আসে আসুক। তবুও তুই নামবি না ভাই। আমার ভয় করে।’ আমার কথা শুনে উপস্থিত সবার চোখে বিস্ময়। তবে, এ ধরনের ঘটনা কয়েক বছর আগে প্রায় ঘটতো বলে কেউ অবিশ্বাস করেনি সেই কথা। কিন্তু রাসেলে চোখে ভয়-উৎকণ্ঠার সঙ্গে যেন অবিশ্বাসও লেগে আছে। সে একবার আমার চোখে-চোখে তাকায়, আরেকবার তাকায় খরস্রোতা খালের দিকে-তার আটকে যাওয়া জালের দিকেও।
চলবে…
জীবনের যতিচিহ্নগুলো-২৬॥ মোহাম্মদ নূরুল হক