পর্ব-৫
-এরপর?
-আর কী, মইয়ে লাথি।
-মই পড়ে গেছে নাকি সরে দাঁড়িয়ে গেছে?
-ভাই, মইটার বিষয়ে তো আপনি জানেন, লোহা কাঠের। তবে ভাই, ধরা তাকে খেতেই হবে, টুডে অর টুমোরো।
-কেমনে? পরাজিত মানুষের ভরসা কি সব সময়ই গ্রিক ট্র্যাজেডির নিয়তি?
-নারে ভাই। তবে গ্রিক ট্র্যাজেডির একটা বিষয় আপনাকে মানতে হবে, তা হলো চরিত্রের ত্রুটি।
-সেটা কেমন?
-মানুষের চরিত্রের মাঝে এমন ত্রুটি থাকে, যা তার ভয়াবহ পরিণতি আগেই নির্ধারণ করে রাখে, যা থেকে তার কোনো মুক্তি নেই। এখানে নিয়তি অকার্যকর।
-রমিজের ত্রুটিটা কি প্রকাশ্য, নাকি হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে।
-কোনো সংশয় নেই, ঘটনা ঘটে গেছে এবং ঘটমান। ফাইনালে আত্মঘাতী গোলে বিশ^কাপ হাতছাড়া হয়ে গেছে কলম্বিয়ার, খেলা শেষ। এবার টিমের বাড়ি ফেরার পালা। কলম্বিয়া ফিরে আত্মঘাতী গোলওয়ালার অবস্থা কী হবে ভেবে দেখেছেন?
-এত প্যাসিভ বাক্য মেলাতে পারছি না। ঘটনাটা কী?
-ঢাকা সিটির ক্যাসিনো বাদশার সঙ্গে খেলায় ফিক্সিং করেছে আপনার বন্ধু। বাদশা শুধু খেলায় হারেনি, রেড কার্ডে সোজা জেলখানায়।
– বাদশা তো মনে হয় পার্টি থেকেও বহিষ্কার।
-তা-ও আপনার বন্ধুর কারণে। রমিজ খেলেছে ঝানু খেলোয়াড়ের মতো। আজকের রমিজকে শতকোটি টাকার মালিক বানিয়েছে বাদশা। ট্রামের ওপর ইসকার ভুয়া টেক্কার ওভার ট্রাম করেছে রমিজ। এরপর জুয়ার বোর্ড নিয়ে সোজা বাড়ি।
-সে এমন করল কেন?
-অন্য গ্রুপের হয়ে কাজ করেছে। ডুয়েল এজেন্টের ডুয়েল রোল। লোভের কি কোনো শেষ আছে।
-সম্ভাব্য পরিণতি কী?
সেখানে ঝড়-জল-নদীভাঙনের পাশাপাশি কুকুর-শিয়াল-বাগডাশের সঙ্গে টিকে থাকার বীভৎস লড়াই অবিরাম। নিয়তির বৃত্তে ঘোরে আমাদের জীবন।
-কলম্বিয়ার সেই আত্মঘাতী গোলওয়ালার মতো অনিবার্য মৃত্যু, মাঝামাঝি নাই। সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাকেও এক ঘটনায় ফাঁসিয়েছে। বাদশার ছাড়া পাওয়ার অপেক্ষা করব, না হয় আমি তো আছি। আচ্ছা এসব কথা থাক, আপনার স্কুল কেমন চলছে? বিশাল কাজ করেছেন। একজন মানুষ যে অনেক কিছু করতে পারে, আপনাকে না চিনলে জানতাম না। ফাটায়ে দিছেন ভাই। দুনিয়ার পুরো ফিজিক্স আপনার মাথার ভেতরে ভরা, তাই না ভাই?
-আরে না বোকা, পরমাণুর গঠনটাই তো আজ পর্যন্ত ঠিকমতো কেউ বলতে পারল না, বাকি সব তো অজানাই। এখন অবশ্য জীববিজ্ঞান নিয়ে খানিকটা পড়ছি, একটা বিষয়ে কাজও করছি, পরে কখনো বিস্তারিত বলব। তোমার একটা কথায় খুব ধাক্কা লেগেছে, এই যে বললে-রমিজ মানুষের জন্ম না। এ ধরনের কথা আজকাল অনেকে অহরহ বলে, কথাটা এলো কোথা থেকে? আচ্ছা বাদ দাও, আজ বিদায় নিলাম শংকর, ভালো থেকো।
রাত সাড়ে আটটার দিকে মিরপুর সাড়ে এগারোতে রমিজের বাড়িতে হাজির হন রকিব। ষষ্ঠ তলায় থাকেন রমিজ। ঢাকায় এমন বাড়ি চোখে পড়ে না, সাধারণত দুবাই ও সিলেটে দু-একটা দেখা যায়। দেয়ালে দেয়ালে মার্বেল পাথর বসানো, মাঝে মাঝে দু-চারটাকে মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কালো ডায়মন্ড। লিফটটা মনে হয় সোনায় মোড়ানো। তাজমহলের মতো কিছু একটা বানাবার পরিকল্পনা ছিল, হয়তো অর্থে টান পড়ায় থেমেছেন।
রমিজ লিফটের গোড়ায় এসে জড়িয়ে ধরেন রকিবকে। বলেন, বিল্ডিং বানাবার পর থেকে অপেক্ষা করতেছি, তুই কবে আইসা থাকবি, আমার পরিশ্রম সার্থক হইব। এই পুরা বাড়িতে একা একা থাকি, তোর ভাবি পোলাপান নিয়া থাকে বনানীর ফ্ল্যাটে, আজাইরা ক্যাচাল দূরে থাকা ভালো।
-তাজমহলের আদলে বানানো বাড়ি তো ঠিকই ভাবির নামে দিলি-সোহাগী মহল।
-মাগী-ছাগির আলাপ বাদ দে, মমতাজ মহল আর সোহাগী মহল সব ওই এক কামের মাল। বাড়ি পছন্দ অইছে? তোর জন্য সব রেডি, ফ্রিজ ভরা সব বিদেশি মাল। কামের মানুষ সব বিদায় দিছি, মাঠ পুরা ফাঁকা। কী চাস বল-লক্ষেèৗ, বেনারস নাকি দেশি?
-কিচ্ছু না, সারারাত গল্প করব।
-আচ্ছা দেখা যাবে, চল ভেতরে।
রাত যত বাড়ে গল্প জমে। দুজনে পেট ভরে ভদকা খান। রমিজ বলেন, তোর রাশিয়ার জেনুইন জিনিস, দুনিয়ার সব মাল ফেল। তোকে আগাম বলে রাখি, এই রাশিয়া অচিরেই আবার দুনিয়ার লিড নিব।
-নেশা কেটে গেলে মত বদলাবে না তো?
-আরে না। এখনো তো নেশা হয় নাই। তোর কথা বল, ভাবি নেদারল্যান্ডস থেকে আর ফিরব না? ফিরলেও লাভ কী, জিদে ভিভোর্স না দিলেও পারতেন। তোর মেয়েটা কত বড় হইছে? নানির কাছেই থাকে?
-রুহিন নানির কাছেই থাকে, হলিক্রসে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। মায়ের মতো ট্যালেন্ট হয়েছে। বিজ্ঞান বোঝে, দেখা যাক কী করে। তোর কথা বল, কয়েক বছরে অনেক এগিয়েছিস।
-বাইরে এগিয়েছি মনে হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পিছিয়েছি।
-মানে?
-মানে একটা মহাকাব্য দোস্ত, নাম-বিষাদসিন্ধু। খুবই দুঃখের বিষয়ে ভরা।
-দুঃখ কেন? চারদিকে দেখি মার্বেল পাথরের চিকচিক। ঝাড়বাতির আলোর দোলনি। এর মধ্যে বিষাদ ঢোকার ফাঁক কোথায়?
-যা দেখছিস, সব অপমানের প্রতিশোধ। ভয়ংকর অপমান, লাঞ্ছনা আর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমার জীবনের বছর গড়াইছে। আমি যে গ্রাম থেকে আসছি, সেই গ্রামে মানুষ বাঁচে কীভাবে নিজের চোখে না দেখলে বিশ^াস করবি না। চারদিকে নদীবেষ্টিত একটি চতুর্ভুজ গ্রাম। সাধারণ নদী না, আমাদের ওপর দিয়ে পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহসহ অন্তত দশ-বারোটি বিশাল বিশাল নদীর অবিরাম দৌড়দৌড়ি। তাদের চারটি আমাদের গ্রামকে ঘিরে রাখছে। গ্রামের একমাত্র বাহন সাইকেল আর বের হতে হলে নৌকা। ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কোনোদিন ঢাকায় আসে নাই। সেখানে ঝড়-জল-নদীভাঙনের পাশাপাশি কুকুর-শিয়াল-বাগডাশের সঙ্গে টিকে থাকার বীভৎস লড়াই অবিরাম। নিয়তির বৃত্তে ঘোরে আমাদের জীবন। ওই গ্রামে খবরের কাগজ যায় না, বিদ্যুতের আলো পৌঁছায় নাই।
-সত্যি? এমন গ্রাম আছে নাকি? কত বড় তোদের সেই গ্রাম? লোকসংখ্যা কত?
এইটা কোনো প্রশ্ন অইলো, আমার গ্রামের পোলারে আমি চিনুম না, এইটা অয়? সাবধান, খুবই সতর্ক থাকবি।
– বিশাল গ্রাম, গ্রাম বললে ভুল হবে, কয়েকটা ইউনিয়নের সমান। আরও সহজ করে বলি, সবকটা সেক্টর মিলে ঢাকার উত্তরা এলাকা যত বড়, তত বড় আমাদের খলিশাপুর গ্রাম। লোকসংখ্যাও অনেক, অবশ্য অনেকে সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। ধর এই মুহূর্তে সহকারী সচিব থেকে পূর্ণ সচিব পদমর্যাদার অন্তত দশজন আছেন ওই গ্রামের। বিরাট শিল্পপতি আছেন গোটা পাঁচেক।
-তোর গ্রামে কবে যাব বল। আজই তারিখ নির্ধারণ হবে।
-তোকে আগেও নিয়ে যেতে চাইছিলাম, পাত্তা দেস নাই। চল তবে আগামী নভেম্বরে, শীতের আগমুহূর্তে।
-ওকে, প্রোগ্রাম ফাইনাল।
-দোস্ত, সত্যি কথা বলতে দ্বিধা নাই, সেখানকার প্রতিকূল প্রকৃতি মানুষকে হিংস্র করে তোলে। আমি নিজেকে দিয়ে বুঝি, আমি তো মানুষ না, আস্ত একটা জানোয়ার। তোর আর আমার ব্যবধান অনেক, আমি চাইলেও তোর মতো সুশীল হইতে পারুম না। কিন্তু এতে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। ঈশ^রের প্রতিকূল প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের পদতলে পিষতে পিষতে বড় হইছি, সুযোগ পাইলেই সেই পেষণের বদলা আমি নিবোই। একটা ঘটনা বলি শোন-তুই তো পত্রিকা ছেড়ে সরকারি চাকরিতে চলে গেলি, আমি পড়ে রইলাম। কিছুদিন পর পত্রিকার মালিক ভরা মিটিংয়ে আমাকে চোর-চোট্টা বলে ঘাড় ধরে কুকুরের মতো বের করে দিল। আমি আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় পড়ে গেলাম। ভাগ্য ভালো ওই পত্রিকায় বড় পদে আমার এলাকার আহমেদ সাফায়েত ভাই ছিলেন। উনি মালিকের হাতে পায়ে ধরে আরেকটি চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে সেখানেই রাখার ব্যবস্থা করছিলেন।
শোন দোস্ত, রিজিকের মালিক আল্লাহ, কেউ কাউকে আটকাইতে পারবে না। দুই মাসের মাথায় চাকরি মিলে গেল।
-কেমনে?
-তিনটা কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে লাইন করলাম। ওইসব কোম্পানির প্রেসরিলিজ ইচ্ছামতো কাভারেজ দিলাম। এক পিআরও খুশির চোটে মালিকের সঙ্গে পরিচয় করায়ে দিলো। আহমেদ সাফায়েত ভাইরে ধইরা ওই মালিকের ইন্টারভিউ ছাপলাম, মালিকের খুশি দেখে কে। ওই কোম্পানির মালিক ছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, এ কারণে চাপে ছিল। পত্রিকায় ইন্টারভিউ দেখে এত আরাম পাইল যে, আমারে পারে তো কোলে তুলে নেয়।
আবদুল আলীমের একটা গান আছে-সকাল বেলা আমির আর বিকাল বেলা ফকির; এর উল্টাটাও আছে। ওই কোম্পানির মালিক জাতে ওঠার জন্যা পত্রিকা করার ধান্ধায় ছিল, আমার সঙ্গে সেই বিষয়ে আলাপ করল। আমিও পত্রিকা করলে তার কী কী লাভ হবে ফাটিয়ে কইলাম।
-কী বললি?
-খানকির পোলা রাজাকাররে কী বলতে পারি, তুমি বোঝো না? বলছি, আপনার গায়ে যুদ্ধাপরাধের গন্ধ, তাড়াতাড়ি পত্রিকা বের করেন, যদি অন্তত ব্যবসাটা বাঁচাইতে চান। হারামজাদা টোপ গিলছে। আর কী, পেয়ে গেলাম আলাদিনস ল্যাম্প।
-তাকে সেইভ করলি?
-আমার সেভ করতে হয় নাই, অটো সেভ হইছে। খানকির ছেলে দুই বছরের মাথায় গেছে মারা। তাতে আমার হইলো প্রবলেম, তার পোলা খাঁটি রাজাকারের বাচ্চা, এক রাজাকার আরেক রাজাকার চিনে, আমার সঙ্গে শুরু হলো ঠাপাঠাপি।
-তুই চাকরি হারালি?
-আরে না, আমার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনতে চাইছিল, তার আগে আমি চাকরি দিলাম ছেড়ে। এই দুই বছর কি চুল ফালাইছি? আমার তো চাকরি রেডি, একটা না, দুই-তিনটা।
-কী করলি দুই বছর?
-দোস্ত, আল্লার রহমত আর তোদের দোয়ায় সারা জীবনে আমার চাকরির অভাব হবে না। সব লাইন ক্লিয়ার।
-সরকার বদলালেও সমস্যা হবে না?
-আমি কি সরকারের চাকরি করি? পরের সরকারে সম্ভাব্য কারা আইতে পারে তাদের সঙ্গেও লাইন ঠিক। তুই কি আমারে ভোদাই মনে করস?
-আরে নারে গাধা, তা মনে করব কেন। সমস্যা না হলেই হলো।
-সমস্যা নাই আবার আছেও, পায়ে পায়ে বিপদ। পোলা হইয়া জন্মাইছি, বিপদ তো থাকবেই। পোলা মানি বাদশা, আর মাইয়া অইলো…।
-থাম। মেয়েদের নিয়ে অপমানজনক কথা বলা যাবে না। আচ্ছা ভালো প্রসঙ্গ, মতিঝিলের ক্যাসিনো বাদশার সঙ্গে তোর ঝামেলা কী নিয়ে?
-কে বলছে, খানকির ছেলে শংকর? সচিবালয়ে তোর সঙ্গে তার দেখা হইছে? হারামজাদা ঠিকই বলছে, বাদশা সারা জীবন মানুষরে ঠাপাইছে, এবার বাকি জীবন জেলের ভিতর ঠাপানি খাবে। আমার সঙ্গে আসে খেলতে, দিছি ধরাইয়া, পুলিশের প্যাদানি কারে কয় বুঝুক।
-ছাড়া পেলে কী করবি? তোকে তো জানে মেরে ফেলবে।
-শোনেন পণ্ডিত সাহেব, অত সহজ হবে না। দুই বছর খাঁচায় আটকা রয়েল বেঙ্গল টাইগারও শিকার ভুলে যায়, হরিণের সঙ্গে তখন আর দৌড়ে পারে না। এর মধ্যে পুলিশ রিমান্ডে নিয়া যা করছে, আর কোনো দিন খাড়াইতে পারবে কি না আল্লায় জানে। তবু সব ব্যবস্থা করা আছে। দম যতক্ষণ আছে জুয়া চলবে, খেলার নাম বাবাজি।
-তোকে রক্ষা করার কোনো দারোয়ান-পিয়ন তো দেখলাম না। আজ রাতে কেউ হামলা করলে কী করবি?
-আমি তো কোনো মানুষকে বিশ^াস করি না। দুনিয়ার বড় বড় সব কিলিং হইছে বডিগার্ডের হাতে। ধর আমি তো একসময় ক্যাসিনো বাদশার বডিগার্ডের মতো ছিলাম, খানকির ছেলে ধরা খাইছে আমার কারণে। রাজীব গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধীর মতো সব খেলোয়াড় গেছে বডিগার্ডের হাতে। অত চিন্তা কইরো না দোস্ত, দুই স্তরের গার্ড পাহারায় আছে; এরপর আমি আছি আরও দুই স্তর পর্দার ভেতরে। অটোমেটেড মেশিনগান রেডি, বোম সেট করা আছে। সিসিটিভি ক্যামেরায় সব দেখা যায়, দুর্বৃত্তের আক্রমণে গার্ডরা পরাস্ত হইলে সুইচ টিপলে মেশিনগানের গুলি বাইর হবে উল্টাপাল্টা বৃষ্টির মতো, শত্রুর জানে বাঁচার কোনো চান্স নাই। রাস্তার গেট থেকে ছাদ পর্যন্ত সব তাক করা আছে। তোর রাশান সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা এই সেটআপ ইউজ করে।
-এভাবে কত দিন?
-মরণ পর্যন্ত। ক্ষমতা এমন এক জিনিস, গন্ধ পাইলে আফিমের মতো নেশা ধরে, টাল অবস্থায় নেশার ঘোরে সব করা যায়। আমি বডিগার্ড রাখি না, তবে দূর থেইকা আমারে অনুসরণ করে দুইটা গানম্যান। উল্টাপাল্টা সন্দেহ হলেই গুলি।
উপায় তো নাই, শংকরের মতো চামচিকাও আমেরিকান পিস্তল নিয়া ঘোরে। প্যান্টে এমনভাবে রাখে, আমি যেন দেখি, মেজাজটা তখন এমন খারাপ হয়। গুন্ডামি কোন পর্যায় নামছে চিন্তা কর।
-আচ্ছা বাদ দে এসব কথা। তোর এলাকার জাফর আমার কলিগ, আমরা একই স্কুলে আছি। মনে আছে, পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলি, তোর কেমন যেন রিলেটিভ হয়?
-মনে আছে, বিরাট টাউট, মীর জাফরের বাচ্চা। সে আমার দূরের ঘুরানো-প্যাঁচানো আত্মীয়, খানকির পোলা তোরে পাইল কেমনে?
-অ্যাপ্লাই করেছিল, তোর এলাকার বলে নিয়ে নিয়েছি।
-সাবধানে থাকিস, সুযোগ পাইলে এমন মারা মারব, কোনো ওষুধে কাজ হবে না।
-তুই জানিস কীভাবে?
-এইটা কোনো প্রশ্ন অইলো, আমার গ্রামের পোলারে আমি চিনুম না, এইটা অয়? সাবধান, খুবই সতর্ক থাকবি।
সতর্ক হইলাম বলে ঘুমোতে যান রকিব। বোতলের তলানীর ভদকা চেটে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন রমিজও।
খুব ভোরে রওনা দেন রকিব।
চলবে…
খলিশাপুরের কুকুরগুলো এবং রকিবের থিসিস-৪॥ মুস্তফা মনওয়ার সুজন