পর্ব-১২
তোমার মনে কি প্রশ্ন জাগে না, নটীপাড়ার বেশ্যা, ফ্রয়েড থেকে আইনস্টাইন পর্যন্ত নামটা অন্তত জানলাম কীভাবে?
শোনো, বিখ্যাত পণ্ডিতরা আমার সঙ্গে রাত কাটিয়েছেন কথা বলে, ওরা কেন যেন গল্প বলে মুগ্ধ করতে চেয়েছেন। আমার স্মরণশক্তি প্রখর, যে যা বলেছেন হুবহু মনে রেখে দিয়েছি। এর মধ্যে আরেকটা কাণ্ড ঘটেছে। নামের পুরোটা বলব না, জেনে রাখো এক হক সাহেব, তিনি বিরাট লেখক; আমার ঘরে এক শেলফ বই রেখে গেছেন, আড়াই শর মতো হবে। বলেছিলেন, জীবনসায়াহ্নে তোমার ঘরে চলে আসব, বাকি সময় বই পড়ে কাটিয়ে দেব। মাঝে দিয়ে আমি বিখ্যাত সব বই পড়ে শেষ।
সেই লেখকের কথা বিশ্বাস করিনি, হয়তো একদিন হাজির হবেন, ফেরত চাইবেন আমানত। সব বই যত্ন করে রেখে দিয়েছি, বেশ্যার সঙ্গে কে আর জীবন কাটায়। বর্তমান স্বামী আব্বাসও জীবন কাটায় না, সেই সক্ষমতাও তার নেই। নপুংশক হলেও স্বামী একটা লাগে, সে দোকানদারি নিয়েই খুশি। যৌনতায় অক্ষম বলে আমার জীবনযাপনে তার কোনো কথা নেই। কী হলো, কথা বলো প্লিজ।
– আপনাকে মুগ্ধ হয়ে শুনছি, যদিও প্রবল ঝড়টা স্বস্তি দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে সত্তুরের মতো দক্ষিণাঞ্চলে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটছে। এখানে চারদিকে নদী বলে বেশি অনুভূত হতে পারে। তবে ভেবে আর কী হবে, যা হবার হবেই, অনিবার্য নিয়তি।
– হুম, বিশেষ করে এই গ্রামটা। জানো, এখানে ঈশ্বর নেই, আসার সুযোগও নেই; ভালো-মন্দের ভরসা নিয়তি, তোমরা যাকে প্রকৃতি বলো। প্রকৃতি এখানে নিজের নিয়মে চলে। যেমন কুকুর মারা ঝড়, ভাসমান শিরীষতলা। আরও একটি বিষয় আছে, সেটা আরও ভয়ংকর, তা হলো কুকুরের যৌনতা। আমার কথা তুমি বিশ্বাস নাও করতে পারো, স্কুলের হেড স্যারের সঙ্গে কথা বলে মিলিয়ে নিও। আমরা দুজন বহিরাগত, তুমি এখানকার অধিবাসীদের সঙ্গেও কৌশলে কথা বলবে।
এই গ্রামের ইতিহাসের একটি অংশ খুবই নিষ্ঠুর এবং মর্মান্তিক। গত শতাব্দীর মাঝামাঝির ঘটনা।
– দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে না পরে?
– সবই আমার শোনা কথা, তারিখ-দিন-ক্ষণ বলতে পারব না। তখন দুনিয়া দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল, যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠল। দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। যত দূর জানি, এ অঞ্চল মানে ভারতবর্ষে এমন নারকীয় ঘটনা আর ঘটেনি। জীবন আর মৃত্যুর ব্যবধান রইল না। খাদ্যের অভাবে মানুষ পড়ে রইল রাস্তায়; জীবিত মানুষের পাশাপাশি মৃতদেহ। সেই বীভৎস মানবিক বিপর্যয়ের মাঝে হাড্ডিসার জীবিত নারীরা কুকুরের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলো। দু-চারজন নয়, সারি সারি নারী। তোমাকে আগেই বলেছি, এই গ্রামের কুকুরে আচরণ মানুষের মতো, এ ব্যাপারটাও হয়তো প্রাকৃতিক। সেই নারীরা যথারীতি কনসিভ করল এবং যথাসময়ে সন্তান প্রসব হলো। মানবাকৃতির সেই সব শিশু বেড়ে উঠল।
– কিন্তু…
– থামো। এর মাঝে হাজারো যদি-কিন্তু আছে জানি। আমি যা জানি এবং লোকমুখে গোপনে যা প্রচলিত, তাই বললাম। এ বিষয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান কি বলবে- তা তোমরা নির্ধারণ করবে।
– এখানে বিজ্ঞানটা খুবই সরল। তা হলো- কুকুরের শুক্রাণু ও মানুষের ডিম্বানু মিলে জাইগোট গঠন করে কি না। মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৩ জোড়া আর কুকুরের ৩৯ জোড়া। ক্রোমোজোমের সমন্বয় এ ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর। ২৪ জোড়া ক্রোমোজোমের শিম্পাঞ্জি হলেও একটা কথা ছিল। এছাড়াও আছে ম্যান্ডেলের মতবাদ। সূত্র অনুযায়ী কুকুর আকৃতির শিশুও জন্মাবার কথা, সেগুলো গেল কোথায়?
– তুমি হাজারো সূত্র জড়ো করছো, কিন্তু একটি প্যারামিটার মনে রাখছো না, তা হলো অস্বাভাবিক প্রকৃতি। খলিশাপুর বারমুডা স্কয়ার মানে শয়তানের চতুর্ভুজ বা আখড়া। চারপাশে নদী অথচ এই গ্রামের জলাশয়ে কোনো মাছ নেই। নদী থেকে ধরে এনে ছাড়লেও মরে ভেসে ওঠে। বলতে পারো, অক্সিজেন কম-বেশির কারণে মাছ মরে যায়, এই কম বা বেশি এখানেই কেন হবে? এতবড় গ্রামে কোনো সাপ নেই, ইঁদুরও নেই; কারণটা কী?
তুমি চট করে বুঝবে না, একটু লক্ষ করলে দেখবে, কুকুরগুলো অন্য রকম। তারা শারীরিক গঠনে শুধু বড় নয়, চেহারা অন্য রকম, ঠান্ডা মাথার আচরণ, সব মিলিয়ে অস্বাভাবিক। এরা মানুষের কথা বোঝে, মেজাজ বোঝে, চোখ বোঝে, সমালোচনা বেশি বুঝতে পারে। মানুষ এদের সমালোচনা করলে না বোঝার ভান করে চলে যায়। আবার খাবার বিষয়ে কিছু বললে আশপাশে ঘুরতে থাকে। স্বজাতিবিরোধ এদের প্রকট। কয়েক দিন থাকো টের পাবে। পাশাপাশি লোকজনের দিকেও নজর রাখো- অনেকের স্বভাব, আচরণ, ব্যক্তিত্ব, চলাফেরা কুকুরগুলোর মতো। মানুষগুলো বিধাতার নির্মম সৃষ্টি। এরা দু-তিন প্রজন্ম পার করছে, দিনে দিনে বিস্তার ঘটছে। আমার ধারনা, এই ঘটনা পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা সময় ঘটেছে। এই প্রজাতির কুকুর এখানে নিশ্চয়ই আকাশ থেকে পড়েনি, এদের বিস্তার দুনিয়াজুড়ে থাকতে পারে। আর বিভৎস্য মানবিক বিপর্যয় তো শুধু খলিশাপুরেই ঘটেনি।
– বিজ্ঞানের নিয়ম ও শৃঙ্খলা অকার্যকর করে সবকিছু আপনি প্রকৃতির ওপর চাপালে তো কিছু বলার থাকবে না।
– বলার থাকবে না কেন। বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা না গেলে ঘটনা যে ঘটবে না তা তো হতে পারে না। বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম কোন বিজ্ঞান? বিজ্ঞান একবার বলবে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, আবার বলবে উল্টোটা, কোনটা বিজ্ঞান? বিজ্ঞান কোষের মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না কেন? পূর্বপুরুষের বিবর্তনে মানুষের ক্রোমোজোমের সংখ্যার তারতম্য মেনে নিয়েছ, অথচ অসম ক্রোমোজোমের শুক্রাণু-ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণে আপত্তি তুলছ, স্ববিরোধ হয়ে গেল না? এছাড়া নতুন নতুন প্রাণী তো অহরহ আসছে। সবাই কি পর্ব-গোত্র-শ্রেণিবিন্যাস ঠিক রাখছে?
– আপনি দেখছি প্রাণিবিদ্যাও জানেন।
– তোমাদের মতো পণ্ডিতের সঙ্গে কথা বলতে গেলে এটুকু না জানলে যে তোতলাতে হবে।
রাতের শেষ প্রহর। ঝড় দুর্বল হয়ে বৃষ্টি ঝরছে মুষলধারে। সৌরবিদ্যুতের ক্ষমতা কমে আসছে। পরের রাত্রি যাপনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে রকিবকে ঘুমানোর সুযোগ করে দেন মর্জিনা।
সকালে জানা গেল, ঝড়টি ছিল সুপার সাইক্লোন। বেতারে বিবিসির খবরে বলেছে, ১৯৬০ থেকে ৩৫টি বড় সাইক্লোনের হদিস পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে অন্যতম এটি। দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে এই ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়। মধ্যরাতে আঘাতের সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যম ঘূর্ণিঝড়টিকে ব্যাখ্যা করছে ‘এ সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম উইথ কোর অব হারিকেন উইন্ডস’ হিসেবে। রেড ক্রিসেন্ট ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানির শঙ্কার কথা বলছে।
রেডিওর খবর অনুযায়ী, খলিশাপুর গ্রামের অবস্থান সুপার সাইক্লোনটির গতিপথের নাভি বরাবর। সারারাত ঝড়ের তাণ্ডব অনুভূত হলো অথচ সকালে এখানে কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই, বিস্ময়ের অন্ত রইল না রকিবের।
মর্জিনা বলেন, চুপ বসে থাকো। ঘর থেকে বের হবে না তুমি। অযথা তৎপরতা দেখানোর দরকার নেই। ভোরে রমিজ লোক পাঠিয়েছিল, তোমার খোঁজ জানতে। বলে দিয়েছি, আমি জানি না।
– মিথ্যা বললেন কেন?
– কোনো মিথ্যা বলিনি। আমি আগে দুই রুশ নাগরিককে কথা দিয়েছিলাম, এই গ্রামে তোমার কোনো ধরনের বিপদ আমি হতে দেব না। এখন তোমাকে ছেড়ে দিলে তাদের সঙ্গে প্রতারণা হতো।
– আমার কিসের বিপদ?
– কচু জানো তুমি। রমিজ হলো তোমার সবচেয়ে বড় বিপদ, সে তোমাকে মেরে ফেলবে।
– আপনার এই অনুমানটা অন্তত সত্য নয়। সে আমাকে মারবে কেন? তার তো কোনো ক্ষতি করিনি।
– তুমি যা করছো, ফল তার বিরুদ্ধে যাবে, এটা সে বুঝতে পারে। তোমার কমান্ডো ট্রেনিং না থাকলে এতদিনে সে তোমাকে হাওয়া করে দিত। একটা কথা জেনে রাখো, আমি না জেনে বা নিশ্চিত না হয়ে কথা বলি না। আমি ইমোশনাল না, পোড় খাওয়া মানুষ ইমোশনাল হয় না। শুনেছি এই গ্রামের জাফর উল্লাহ তোমার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে, তখনই আমার সন্দেহ হয়েছে। মনে রেখো, জাফর আত্মীয় হয় রমিজের। তুমি রমিজের বড় ফাঁদে জড়িয়ে আছো, সে তোমাকে ছাড়বে না।
– তবে এটা ঠিক, আমার থিসিস দাঁড়িয়েছে রমিজ-জাফরের ওপর।
– তুমি গিয়ে জাফরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, সব বেরিয়ে আসবে।
রকিবকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ঢাকায় ফিরে গেলেন রমিজ। রকিব আরও দুইদিন-দুই রাত মর্জিনার ঘরেই থাকলেন। এর মধ্যে স্কুলের হেডমাস্টারকে ডাকিয়ে আনলেন। তার দীর্ঘ আলাপে মর্জিনার কথার প্রতিধ্বনি। গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় রকিবের। ঐতিহাসিক গল্পের ধরন সবার অনেকটা একই। গল্পে গল্পে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাত বাড়তে জোনাকি নামে দল বেঁধে। ব্যাঙের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাকছে ঝিঁঝি পোকা। মর্জিনার খেয়াল-ঠুমরিতে রাত গভীর হয়। রকিব অপলক দেখেন, শোনেন আর ভাবেন- মানুষের জীবন-জন্ম অত্যন্ত অদ্ভুত এবং নাজুক; এতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অপরিজ্ঞাত ও রহস্যময়। স্পার্ম শুধু নয়, জন্মস্থানও নির্ধারণ করে জীবনের গতিপথ। মানুষ যত চেষ্টাই করুক, এই কঠিন জাল ছিন্ন করতে পারে না।
সুন্দর মেয়েটি কোনো মধ্যবিত্তের ঘরে জন্মিলে জীবন হতো অন্য রকম। এই কণ্ঠ ভারতবর্ষ পেলে কিনা করত; আর ইউরোপ হলে মর্জিনার হয়তো জেটবিমান থাকত। এ নিয়ে কি সত্যিই তার কোনো আক্ষেপ নেই?
রকিবের ভাবতে ভালো লাগছে, প্রতিভা শুধু পশ্চিমে জন্মে না, পুবেও আছে। অবশ্য চোখের কালার, ত্বকের ধরন বলছে তার পূর্বপুরুষ ফরাসি অথবা পর্তুগিজ। অ্যাজ পার মেন্ডেলিজম, যৌনমিলনে পুংলিঙ্গ যা-ই হোক, মর্জিনার উৎপাদিত চারটি বাচ্চার অন্তত একটি হবে তারই মাপের সুন্দর এবং ফাটানো ট্যালেন্ট। এই নারীর গন্ডায় গন্ডায় বেবি থাকা দরকার; চারে এক, চারে এক করে ট্যালেন্ট মিলত। যৌনতায় মেয়েটার আগ্রহ নেই, কারণ জানা গেল না। অতীতে কখনো ছিল বলেও মনে হয় না। জনম জনম মমতাময়ী। গভীর আগ্রহে-যত্নে তিন দিন একটা আগন্তুককে পুষল, কারণ, অন্তত রুশদের নির্দেশনা নয়।
এক কেস কীট এনে দেন মর্জিনা। বলেন, এখানে ছয়টি কীটে ছয় কুকুরের ব্লাড আছে। নিয়ে যাও, ডিএনএসহ নানা জাতের পরীক্ষায় কাজে লাগবে।
– রাশানরা এসবও দিতে বলেছেন?
– না। ব্যাগ খুলে তোমার দুই পাতার কর্মপরিকল্পনা প্রথমদিনই পড়েছি।
– কুকুরের ব্লাড পেলেন কীভাবে? কীট এলো কোত্থেকে?
– সব প্রশ্ন করতে নেই, সব উত্তর বলতে নেই। আমার কাছে হীরার আংটিও আছে, দেখতে চাও?
– আরে না। অযথা আংটি দেখব কেন। আমার যাওয়ার সময় হলো, বিদায় দিন।
– ও হ্যাঁ। দিনরাত নিজেই বকে গেলাম, তোমার জীবনের গল্প অজানা রইল। শেষ সময় জানতে চাই না। শুধু একটি অনুরোধ করব- তোমার বউকে হীরার আংটিখানা দিও, সে খুশি হবে। আমার আর কিছু দেওয়ার নেই। গান শুনে ভালোবেসে এটা দিয়েছিলেন এক স্বৈরশাসক, তার সম্মানেই নাম বলা যাবে না। কী এক অদ্ভুত জীবন আমার। এটা ভালোবাসার আংটি, বাজারে দাম যা-ই হোক আমার কাছে মূল্যহীন। ভালোবাসার ধন আঁকড়ে না রেখে ছেড়ে মুক্তি চাই।
– ইলোরা ছিল, ছেড়ে চলে গেছে, এখন নেই। দামি আংটি কাকে দেব? তার চেয়ে ভালো আপনার কাছে রেখে দিন।
– একদিন ফিরে আসবে ইলোরা। তোমার ব্যাগের ভেতরের দ্বিতীয় পকেটে আংটি রাখা আছে। ভালো থেকো।
রকিব কঠিন চোখে তাকিয়ে মর্জিনার হাত শক্ত করে ধরে জানতে চান, এবার সত্যি করে বলেন, আপনি আসলে কী? গাইকা বা নর্তকীর ছদ্মাবরণে ভেতরের মানুষটি আসলে কে? আপনার প্রকৃত নাম কী? আমার প্রজেক্টের কেউ এখানে আসেনি, না দেশের না রাশিয়ান। আপনি এত সব জানেন কীভাবে? আপনার বিষয়ে কেউ যা জানে না, সেই কথাটা জানতে চাই।
– গেল তিন রাত নপুংশকের কোথায় ছিল এত চাওয়া? বেশ্যা নাকি অবেশ্যা বুঝতে বিখ্যাত বিজ্ঞানীর তিনদিন তিনরাত গেল? আর জেনেইবাকী হবে, আমাকে জেনে কী করবে? অত জেনে ফল কী? আমারও জানতে ইচ্ছে করেছিল, তোমার পরিচয় কী? তুমি কি পুরুষ নাকি ক্লিবলিঙ্গের কেউ। জানতে ইচ্ছে করেছে, মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ব্যবহারে যৌন সক্ষমতার বিলোপ ঘটে কিনা। ভয়ংকর রূপবতী এই রমণীর দিকে সেকেন্ডের জন্যও তাকালে না, কারণ কী? স্বার্থপরের মতো নিজের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে গেছ। মানুষের কোনো মূল্য আছে? কার জন্য এই থিসিস, যদি মানুষই না বোঝো। মূর্ত বিষয়ে প্রশ্ন করে গেলে, বিমূর্ত ভালোবাসা টের পেলে না। বস্তুর মূল্য নেই, জীবনের গুরুত্ব নেই, শরীর অর্থহীন—তবে বোঝোটা কী? নিজেকে আগে জানতে-বুঝতে চেষ্টা করো।
শোনো, আমি তোমার কাছে এসব কিছুই জানতে চাই না। তুমি আমার বিষয়ে আগ্রহী হয়েছ, তাতেই শান্তি পেলাম। তোমার প্রশ্ন করা ঠিক আছে- আমার আরও ঘটনা আছে। বাকি সব আজ বলছি না। তোমার সঙ্গে আবার দেখা হবে অন্য কোথাও, অন্য ইভেন্টে। সেই পর্যন্ত মর্জিনা অমীমাংসিত রইল। একটা কথা মনে রেখ, আমি রক্তমাংসের সজীব-উদ্দীপ্ত মানুষ; প্রেম আছে, যৌনতা অনুভব করি; তোমার মতো উদাসীন নই।
শেষ রাতের আঁধারে রওনা দেন রকিব। দুটি বড় সাইজের কুকুর তাকে খেয়াঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দেয় মানুষের মতো। এরা মর্জিনার পাহারাদার। নৌকা ছাড়ে, দুই কুকুরের চোখে টলমল জল অন্ধকারে জ্বলছিল। স্থির দৃষ্টিতে বুঝিয়ে দিল- তোমার জন্য কাঁদছে মর্জিনা।
চলবে…
খলিশাপুরের কুকুরগুলো এবং রকিবের থিসিস-১১॥ মুস্তফা মনওয়ার সুজন