॥চার॥
কালো বিরাট আরেকটি ফটকের সামনে ওরা এলো। ফটকটা মেঝে থেকে একেবারে ছাদ অব্দি উঁচু। বাম পাশে স্ফীত হাতল। গার্ড আলমগীর এগিয়ে ছিল খানিকটা। হাতলটা ধরে বাম থেকে ডানে সর্বশক্তিতে টানতে শুরু করামাত্র তার আত্মবিশ্বাসী মুখে যন্ত্রণার ছাপ পড়ল। দেখে ছোট এক লাফ দিয়ে সাহায্যে এগোলো সলিল। হাতলে তার হাত রাখার এক মুহূর্ত আগেই ভারী ফটকটা ঘড়ঘড় শব্দে সরতে শুরু করল। ফটকের নিচে ধাতব চাকা। ঢালাই মেঝেতে বসানো ধাতব রেলের ওপর দিয়ে একটা দৃঢ় মিড়মিড় শব্দ ক্রমশ সরে যেতে থাকল ডান থেকে বামে। উন্মুক্ত হলো ভেতরটা।
এ অংশটা আরও দামি আর জটিল সব যন্ত্রপাতিতে বোঝাই। মাথা উঁচু কতগুলো ধাতব পাত কাটার যন্ত্র দেখা গেল ঘরের একপাশে। অপরপাশে কপারের তারের কুণ্ডুলি ধারণ করে আছে এমন দেড় মানুষ উঁচু জটিল কতগুলো যন্ত্র সারিসারি করে রাখা। ঘরের অন্য পাশের দেয়ালে সারসার জানালা বন্ধ। ভেতরের বৈদ্যুতিক আলোয় তাদের গায়ে চড়ানো সবুজ রঙ চোখে পড়ে। বাতাসে ভেসে থাকা কটু গন্ধে সলিলের মুখ ছুঁচলো হয়ে উঠল। আলমগীর নির্বিকার।
ফটক গলে ঢোকার মুখেই বাম দিকে সোজা দোতলায় উঠে গেছে ধাতব পাত কেটে বানানো সিঁড়ি। সিঁড়ির হাতল ধরে দুজন ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে শুরু করলো। আগে নিরাপত্তারক্ষী, পেছনে নবাগত। বৃদ্ধ আলমগীরের পিঠের ওপর দিয়ে দরজার দিকে সলিলের চোখ পড়ছে বার বার। ধীরে ধীরে একটার পর এতটা ধাপ অতিক্রম করছে সলিল। আলমগীর ফিরে কথা বলে উঠল। স্যারের কি কষ্ট হচ্ছে?
সলিল হাসার চেষ্টা করল—মোটেই না। আমি ঠিক আছি। বেশ আছি। আপনি ঠিক আছেন তো? এ প্রশ্নে আলমগীর নিরুত্তর।
দরজার কপাট বন্ধের সময় প্রায় মাঝামাঝি আটকা পড়েছে পর্দার নিচের দিকের একটি কোণ। কালো দরজার পটে গাছের ফুল-কাণ্ড-পাতা আঁকা কাপড়ের নিঃসঙ্গ অংশটি বাইরের অনাত্মীয় পরিবেশে দরজার সঙ্গে সেঁটে আছে প্রায়, নড়ন-চড়ন নেই।
দুবার টোকা দিয়ে দরজা ঠেলে গার্ড ঢুকল ভেতরে। সলিলের জন্য দরজা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে রইল।
একটা সবুজরঙা মাদুর বিছানো ঘরে পারাখলো সলিল। ঘরের চার দেয়ালেই জানালা। আর সবকটা জানালাই খোলা। খোলা পথে বাইরের শব্দ আসছে, বাতাস আসছে। দূরে বাড়ি ফিরতে থাকা গ্রাম্য কিশোরদের হল্লার ধ্বনি আসছে। অফিসের পেছনে, কারখানার পশ্চিম সীমানা দেয়ালের বাইরে দাঁড়িয়ে যে বিশাল গাছ তা থেকে ফিরে আসা পাখির কাকলী আসছে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ধাতব বৈদ্যুতিক খুঁটিতে কেউ তার খেয়ালি হাতের লাঠি ভাঙল। ঠন্ করে একটা শব্দ অণুরণিত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে পড়তে কিছু অংশ জানালা দিয়েও ঢুকে পড়ল।
সলিল ঘরের পশ্চিমাংশ তাকিয়ে দেখলো সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপাশে একজন বসে আছে। বাঙালের আয়ত চোখ। গায়ের রঙেও তাই। ডান হাতে একটা পেপারওয়েট উল্টো করে ঘোরাচ্ছে লোকটা কাচ বসানোর টেবিলের ওপর। আর সেক্রেটারিয়েট টেবিল বরাবরই কর্মকর্তার পা নড়া বিশ্বস্ততায় ঢেকে রাখে।
সলিল টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। পেছনে শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা। টেবিলের ওপাশে বসে থাকা সৌরভ হাত ইশারায় বসতে বলল তাকে।তার সুন্দর চোখজোড়ার দৃষ্টি আবেগহীন। পরনে অপরিচ্ছন্ন সাদা শার্ট। কাঁধের কাছে ধূসর হয়ে গেছে। সামনের দিকে পাতলা চুলে মৃদু লালচে ভাব। ভুরুরেখা বেশ স্পষ্ট লোকটার। তার চোখজোড়ার ভাষা বোঝার মতো যথেষ্ট সময় পায় না আর কারো চোখ। মিথ্যেবাদীর লক্ষণ, কারখানার অনেককেই এ কথা বলতে শোনা যায়।
বসুন, প্লিজ!
টেবিলের ওপর পেপারওয়েট থেমে গেল। উঠে দাঁড়ানোর মতো একটা ভঙ্গি করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কারখানাগুরু বললো, আমি সৌরভ। আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? সলিলের হাতটা চেপে ধরে বেমানান একটা চাপ দিয়ে বসলো লোকটা। এতে নিজেও যেন একটু লজ্জিত হয়েছে এমন ভাবের ঝলক দেখা গেল চোখে মুখে। সলিল বিপরীতে মৃদু চাপে বন্ধুত্ব বোঝাল। বললো নিজের নাম।
আমি সলিল, চেয়ার টেনে বসার ফাঁকে সৌরভের চোখের দিকে না তাকিয়ে বলে গেল তরুণ। চেয়ারের হেলানে ঘুণপোকার ছিদ্র বেশ কটি। অসুবিধা বলতে ঢাকা থেকে বেরোতে একটু ঝামেলা হলো আর কি। এরপর সময় বেশি লাগেনি। আমি একটু দেরি করে ফেলেছি। ক্ষমা চাইছি এজন্যে।
না, ঠিকাছে। হাত দিয়ে যেন কথাটা উড়িয়ে দিলো সৌরভ। জানি তো ঢাকার দশা। ওটা আর কোনো বাসযোগ্য শহর নেই। যাহোক—সৌরভ খানিক বিরতি দিলো কথা শেষ না করেই। শরীরে কিছুটা জড়তা নিয়ে চেয়ার টেনেবসে আছে সলিল। প্রথমেই সৌরভের মাথার পেছন দিককার জানালা দিয়ে তাকালো বাইরে। জানালার বাইরের গাছগুলো যেন সৌরভের কথার সঙ্গে একমত। ওপরনিচ মাথা নাড়ছে। দৃষ্টি ঘরের ভেতর এনে এদিক ওদিক তাকিয়ে সজ্জা দেখতে লাগল সলিল। সৌরভ তার সামনে রাখা পুরনো ল্যাপটপে দিনের শেষ কিছু হিসেবের নিকেশ করে নিলো। এরপর তাকালো সলিলের দিকে। কিবোর্ড থেকে হাতজোড়া সরিয়ে টেবিলের ওপর রাখলো। কাচের আস্তরে বিম্ব পড়লো একটির ওপর আরেকটি পড়ে থাকা হাত দুটির। নাটকীয় স্বরে ঘোষণা করল সৌরভ—এই হলো আমাদের খেলাঘর! হাতদুটো আঙুলবদ্ধ হলো তার। প্রশ্নের ঢঙে বললো,তো বলুন, কেমন দেখলেন।
যতটুকু দেখলাম, বেশ লাগলো। সলিলের স্বর বিনীত। বিশেষ করে কারখানার ওই বাঁশিটা। কেমন একটা বিষণ্নতা আছে। তাড়া আছে।
বাহ। আপনি তো বেশ কবিদের মতো করে কথা বলেন! কবিতা-টবিতা লেখা হয় নাকি আবার! বিপদ হবে তো তাহলে!
সলিল হাসল। নিরুত্তর। সৌরভ কিছুক্ষণ উত্তরের আশায় সলিলের দিকে তাকিয়ে থাকবার পর নীরবতা দেখে চোখ ফেরালো ল্যাপটপের পর্দায়।কিছুক্ষণ বাদে যেন অতীতের মাটি থেকে স্মৃতির ঘাস কামড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে, এমনভাবে ঠোঁটদুটো চেপে ছাদের দিকে চোখ দুটো তুলে বলল, কবিতা টবিতা আমিও একদিন লিখতাম। এখনো যে মাঝেমাঝে ভাব আসে না তা নয়। কিন্তু সময় কোথায় বসার? বসাটাই হয় না। হলে আজকাল যা লেখে কবিরা, ওর চেয়ে অনেক ভালো হতো নিশ্চিত। জীবনে কম ঘাটের জল খাইনি।
সলিল মৃদু হাসল। নিরুত্তর। তার চোখজোড়া সৌরভের টেবিলের ওপর রাখা শতেক ফাইলপত্র, দিনপঞ্জি, কলমদানির বাহারি সাইনপেন, কাচের ওপর পাখার বাতাসে এদিক ওদিক করতে থাকা একটি ভোঁতা পেন্সিল এসব দেখে বেড়াচ্ছিল। সেদিকে তাকিয়ে সৌরভের চোখে হঠাৎ কেমন এক দ্যুতি খেলে গেল। নিচের চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠল। বুঝি শক্ত একটা কিছু বলতে গিয়ে কষ্টে গিলে ফেলল এমন মুখ করে আবার হাতে নিলো পেপারওয়েট। পরমুহূর্তে ছেড়েও দিলো। টেবিলের দিকেই চোখ রাখা সলিলের দৃষ্টি পড়ল সৌরভের চঞ্চল হাতদুটিতে। বাম হাতে রূপালি ঘড়ি। কাচটা এতই স্বচ্ছ যে, নেই বলে মনে হয়। ভেতরে দুটো কাঁটা ঘুরছে। কোনো নম্বর লেখা নেই, তার বদলে রূপালি দাগ টানা। একই হাতের মধ্যমায় একটি সোনার আঙটি। আঙটির মাথায় একটি লাঙলের চিহ্ন। সোনার ওপর খোদাই করা।
টেবিলের ওপর রাখা সলিলের কাগজপত্রগুলো একের পর এক উল্টে পাল্টে দেখতে থাকল সৌরভ। বাইরে কখন অন্ধকার নেমে এসেছে। পাখিরা ধীরে চুপ করে গেছে।বাতাসও হয়ে এসেছে আরও ঠাণ্ডা। সৌরভ পাতা ওল্টানোর ফাঁকে একবার চোখ তুলে তাকালো। সলিল তাকেই দেখছিল, চোখে পড়ে গেল চোখ।
বাতাসে একটা মরচে ভেজা গন্ধ। পাচ্ছেন?
গন্ধ একটা পাচ্ছি বটে অনেকক্ষণ। কিসের তা ধরতে পারছি না।
অস্বস্তি লাগছে?
একটু তো বটেই।
চেয়ার ছেড়ে পেছনে স্টিলের পুরনো আলমারির একটি ডালা খুলতে খুলতে সৌরভ আগের চেয়ে চড়া স্বরে বললো, অভ্যাস হয়ে যাবে। থাকতে তো হবে এর ভেতরই। এর ভেতরই আছি আজ কতদিন! শেষ শব্দটি বলবার সময় কণ্ঠ কিছুটা বিকৃত হয়ে গেল, তখন আলমারির ভেতরই কসরৎ করে কী এক ডালা ওপরে তুলছিল। আলমারির বিশেষ কিছু খোপে কাগজগুলো আলাদা করে রেখে কপাট দুটি দুই হাতে কাছাকাছি এনে পেছন ফিরে বললো, পৃথিবীর প্রতিটা পুরনো আলমারি খোলার আর বন্ধের আলাদা কৌশল থাকে। তাই না? এটারও তাই।
কপাট দুটি মুখোমুখি করে একসঙ্গে চাপ দিতেই কর্কশ শব্দ করে আলমারি বন্ধ হলো।
সলিলের বাম দিকের দেয়াল ঘেঁষে পরপর তিনটি খুপরি। যেন তিনজন পাশাপাশি বসে কাজ করতে পারে। খুপরির ভেতর ছোট চেয়ার টেবিল। পেছনের জানালার বাইরে অন্ধকার। মেঝেতে ঘরের আলোয় যত আসবাবের জ্যামিতিক ছায়া।
আলমারির কাজ সেরে আবার চেয়ারে এসে বসল সৌরভ। একপাশে ঘুরে টিয়ে সবুজ এক কলমদানির ভেতর আঙুল ডুবিয়ে তুলে আনলো দুটি ভিজিটিং কার্ড, বাড়িয়ে দিলো সলিলের দিকে। পদবিটা দেখলো সলিল। এতে প্রমাণ আছে, সামনের লোকটিই কারখানার সর্বেসর্বা। সৌরভ তার কণ্ঠকে আরও একটু ভারী হতে দিলো। বললো, আপনার ঘর ঠিক করা আছে। কারখানার বাইরে, খানিকটা হাঁটাপথ। তবে আজই ওখানে যেতে পারবেন না, আরও কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। মেঝেটা মেরামত করা হচ্ছে। প্রথম দুটো দিন কষ্ট করে ফ্যাক্টরির গেস্টরুমে থাকতে হবে। পারবেন না? ডান হাতের দুটি আঙুল কবজি বাঁকিয়ে সলিলের দিকে বাড়িয়ে রেখেছে তখনো।
নিশ্চয়ই!
কেন বলছি কষ্ট করে থাকতে হবে, সেটাও খানিকটা পরিষ্কার করি। ওই ঘরটাই আমাদের ডাইনিং। বুঝতেই পারছেন, যখন-তখন লোক আসবে-যাবে, বাথরুমের দরজা খুলবে। আর খাবার টেবিলে পাঁচজনে এক হয়, সুতরাং শোরগোলও হয়। ধরুন হেফাজত আর শাহবাগ মুখোমুখি পড়ে গেল! কেহ কারে নাহি ছাড়ে। এসব ব্যাপার আছে। এক কথায় কোনো প্রাইভেসি থাকবে না। চেয়ারে হেলান দিয়ে আবারও পেপারওয়েটটা উল্টো করে ঘোরাতে শুরু করল সৌরভ।
অসুবিধা নেই। চালিয়ে নেব। আমার কাছে সবই প্রায় সমান।
বেশ তো। সলিল, চা খাবেন? নাম ধরে বললাম।
কী যে বলেন। কেন বলবেন না!
বেশ। আসুন এক কাপ চা খাই। আমার দিনের শেষ চা।
খাওয়া যেতে পারে।
বেল চাপা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে খানিক আগে সলিলের দেখা রান্নাঘরের সেই ছেলেটা হাজির হলো। কিশোর বটে, মুখে কৈশোরের নমনীয়তা নেই। গায়ের রং ফর্সা। অভাবি দুটি হনু উঁচু হয়ে থাকলেও চিকচিকে চোখ জোড়ায় উপচে পড়ছে কৈশোর। দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিতে একটা শক্তিহীনতা বেঁকে আছে। সলিলকে দেখিয়ে দিয়ে সৌরভ বললো, রবি, তোমার নতুন স্যার। রবি ঘুরে তাকিয়ে আঙুল তুলে জড় কণ্ঠে সম্ভাষণ দেওয়ার চেষ্টা করল। তার কানের ওপরের অংশে রক্তোচ্ছ্বাস ঘটল। ওনাকে গেস্টরুমে দিয়ে এসো, কেমন? তার আগে দুকাপ চা দিয়ে যাও। আর, বিস্কিট আছে না? ওই যে, একপাশে শক্ত কালো, ওগুলো না। ওগুলো ছাড়া আরও একরকমের আছে না?
না স্যার, ওগুলোই শুধু আছে, রবি মুখে বিনয় ধরে রেখে মনময়পুরী টানে বলে উঠল। হাতজোড়া পেছনে নিয়ে কব্জিতে লাগিয়েছে গিঁট। ঘনঘন ভর বদল করছে পা থেকে পায়ে।
সৌরভ চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললো, সলিল, আপনার কেমন লাগবে তো বলতে পারছি না, তবে আমার ভালো লাগে না আরকি।
তাহলে থাক। শুধু চা-ই বলুন।
কিন্তু আপনি তো ঢাকা থেকে এলেন। কতক্ষণ না খেয়ে আছেন কে জানে! এভাবে চা খাওয়া কি ঠিক হবে? আচ্ছা তাহলে রবি, ঠাণ্ডা এক গ্লাস পানিও এনো সঙ্গে। কেমন? আর বিস্কিট যাই থাকুক নিয়ে এসো। রবি ঘাড় কাত করে সায় দিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিলো। আর সলিল, ও আমাদের আদরের রবি। পিয়ন কাম বাবুর্চি। অতিথিদের দেখাশোনাটা বেশি করে। রবি? স্যারকে চিনে নাও। আর যাওয়ার সময় ব্যাগটা নিয়ে যেও।
না না! থাক প্রয়োজন নেই! বলে ব্যাগের হাতলে হাত রাখবার আগেই রবি ছোঁ দিয়ে ব্যাগটা তুলে কাঁধের ওপর রাখল, এরপর ঘুরে চললো দরজার দিকে। ধাতব সিঁড়িতে তার সাবধানী পায়ের ছাপ শোনা গেল।
সলিলের মুখ পড়তে পেরেই বুঝি সৌরভ বলে উঠলো, ভাববেন না। এগুলো ওদের কাজ, ওরা আপনার চেয়ে ভালো পারে। ওদের শব্দটায় একটু জোর দিলো সৌরভ।
চা এলো। আদা ছেঁচে দেওয়া হয়েছে। দুজনই নীরবে অল্প অল্প চুমুক দিতে থাকল। রবি পেছনের একটা চেয়ারে বসে সেদিনের পত্রিকাটি হাতে নিয়ে ভুরু কুঁচকে পড়ার চেষ্টা করছে।
সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের নিচে সবাই এক আধটু কাঁপতে লেগেছিল। তাই গলা দিয়ে যখন গরম তরল নামছে, তখন বেশ লাগছে এমন একটা ভাব ফুটে উঠতে যাচ্ছিল সৌরভের ঠোঁটে, কিন্তু বাধা পড়ল। পিরিচের ওপর একটু কটু শব্দে নামিয়ে রাখল চায়ের সেই কাপ। একচুমুক পরিমাণ চা ঢেউয়ের মতো ছলকে পড়ল বাইরে। একটা কিছু বলতে গিয়েও সামনের নতুন মানুষটি একবার দেখে নিজেকে সামলে নিল।
রবি। আমার চায়ে তোর তেজপাতা দেওয়া আজই শেষ। কেমন তো লক্ষ্মী সোনা?
কথাগুলো কোমল করে বলা হলেও ভেতরের ধারটুকু আড়াল থাকল না। চা-পর্ব শেষে হাসিমুখে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে এলো সলিল। এবার হাতে চাপ পড়ল পরিমিত।
আগে আগে নামছে রবি। হাতে ট্রে-টা নিয়ে চলেছে বলে সাবধানে এক পা-এক পা করে নামছে। প্রথমে ডান পা-টা নামিয়ে দিচ্ছে, এরপর নিচু হয়ে একই ধাপে রাখছে বাম-পা। হাতের ট্রে-টাকে সমতলের সমান্তরালে রাখার খুব চেষ্টা চলছে। তবু একটা কাপ কাত হয়ে সামনের দিকে সরে গেল।
কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই ধাতব সিঁড়ি থেকে নেমে আসার অংশটা চুকল। কালো ফটকটা সরানোর প্রয়োজন হলো না। রবি সরিয়ে রেখে উঠেছে, আর লাগায়নি। তবে দুজন বেরোনোর পর সলিল যেই হাত দিতে গেল, কিশোরের মসৃণ কণ্ঠে রবি বলে উঠল, স্যার নামবে তো, খোলা থাক স্যার।
মুখ দেখে বোঝা গেল বাক্যটা মনমতো শেষ করেনি। কিন্তু আরও কিছু বলতে পারল না। সলিলের দৃষ্টি এড়াতে চাওয়া চোখজোড়ায় সংকোচ প্রকাশ পেল!
এরপর দীর্ঘ ঢালাই পথ, সোজা ফটকের দিকে চলে গেছে। ওই পথ ধরে এগোনোর সময় সারি দেওয়া যন্ত্রঘরের ছেলেটার কথা মনে পড়ল। সবকটা ঘরের দরজা এরইমাঝে বাহির থেকে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রবি, এই যে এ ঘরে কাজ করে একজন, সময় শেষ হওয়ার পরও যায় না, কে সে?
রবি নিরুত্তর রইল। একবার তাকাল সলিলের দিকে। এরপর তাকালো সলিলের তাক করে রাখা আঙুলের দিকে, কিন্তু বললো না কিছুই। একবার ঠোঁট দুটো খুললো, পরমুহূর্তে আবার খানিকটা ভীতি নিয়ে নিরুত্তর তাকিয়ে রইল। সলিলের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিএফআই রুম দেখিয়ে অস্পষ্ট স্বরে পাল্টা প্রশ্ন করল, এই ঘরে?
হ্যাঁ, এই ঘরে। একজন আছে, সময় শেষ হওয়ার পরও কাজ করে। দারোয়ানকে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম। তুমি তাকে চেনো? কিছুটা মনময়পুরী টান নকল করে বলল সলিল। রবির মুখচোখ এবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল। হ্যাঁ স্যার। তারেক স্যার থাকে। এই একটু আগে গেল।
তারেক স্যার। কেমন তোমার স্যার? রবির কাঁধে সস্নেহে হাত রাখলো সলিল।
কথা বেশি বলে না। তবে লোক ভালো। ইতোমধ্যে চোখে ভীতির ছাপটি ক্রমে কেটে যেতে লেগেছে।
যন্ত্রবোঝাই টিনসেডের ছাউনি শেষ হওয়ার পর বামে মোড় নিল রবি। মোড় নেওয়ার আগেই দেখা যাচ্ছিল ওই অতিথিশালা। এবার একেবারে মুখোমুখি। ঢালাই রাস্তা থেকে একটা খোয়ার বিছিয়ে দেওয়া পথ সোজা গিয়ে ঠেকেছে ঘরের তিন ধাপের সিঁড়িতে। এর কিছু আগে হাতের ডানে পড়ে সবুজ-সাদা পাতাবাহার। অতিথিশালার দরজা খোলা। ভেতরে একটা হলুত আলো জ্বলছে। ঘর থেকেই দেখা যাচ্ছে ওপারের খোলা জানালা। রবি আঁৎকে উঠে বলে উঠল, সর্বনাশ! আজকে জানালা আটকানো হয় নাই!
কেন, কী হয়েছে তাতে?
রবি হেসে বলল, এখানকার মশা কী জিনিস টের পাবেন স্যার।
অসুবিধা নেই। বেশিক্ষণ তো হয়নি। এখন আটকে দিলেই হলো!
যা হওয়ার হয়ে গেছে স্যার।
সন্ধ্যা পুরোপুরি নেমে যাওয়ায় গোটা এলাকা চুপ হয়ে গেল। দেয়ালের ওপারে কোথাও ঝিঁঝিঁ ডাকছে একটানা।
আসার আগে শুনেছিলাম কাছেই কোথায় নাকি গারো পাহাড়ের একাংশ এসে পৌঁছেছে? চাঁদরাতে হাতি নেমে এসে নাকি ফসলের ক্ষেত পাহারার যে মাচাগুলো আছে ওগুলো সব ভেঙে দিয়ে যায়? কোন কারণে যেন ওই মাচাগুলো ওরা সইতে পারে না। জানো কিছু?
হাতি নামে। তবে অনেক দূরে ওটা। কিছুদূর গাড়ি যায়, বাকিটা হাঁটার রাস্তা। পথ খুব খারাপ ওখানে।
একতলার এই অতিথিশালার মূল ঘরের পাশে যে আরও দুটো ঘর, ওগুলোর সঙ্গে বড় ঘরের পার্থক্যটা বারান্দায়। মূলঘরের সামনে বারান্দা নেই। পাশের ঘর দুটোয় মেঝে কিছুটা সামনে বাড়িয়ে বারান্দা মতো করা হয়েছে। বাড়তি অংশে ঝোপালো হয়ে আছে অন্ধকার। ওখানে টবে গাছের ঝাড়।
ঘরে ঢোকার মুখে মাথাটা নিচু করতে হলো। একটা ধাতব তার অতিথিশালার এক মাথায় একটা পোল থেকে শেষ মাথার সীমানা দেয়ালে গাঁথা আংটার সঙ্গে বাঁধা। এটায় কাপড় নাড়া হয়। একটা ভিজে চুপসে থাকা লুঙ্গি ঝুলছে এ মুহূর্তে আর তারটাও দুলছে ওপরনিচ। রবি থমকে দাঁড়ালো।
স্যার আপনি ঢুকে ফ্রেশ হন। আমি টেবিল, ঘর এগুলো পরিষ্কার করি। এরপর রাতের রান্না ধরব। কোনো সমস্যা হলে ডাকবেন।
চলে যেতে যেতে আবার থেকে মাথা একদিকে কাত করে গলায় দরদ ঢেলে বললো, আর একটা কয়েল জ্বালিয়ে দেব, দিচ্ছি এগুলো রেখে এসে। নয়ত থাকতে পারবেন না।
এখানে কি আরও লোক থাকে?
পাশের ঘরটা জসিম স্যারের। এখানে সৌরভ স্যারের পরেই জসিম স্যার। পাশের ঘরটা মেহেদি স্যারের।
সৌরভ স্যার কোন ঘরে থাকেন?
ওই গার্ডের ঘরের দোতলায়।
আর তুমি?
আমি স্যারের নিচে। ওই গার্ডের ঘরে।
সলিল পেছনে তাকিয়েফ্লাডলাইটের আলোয় দেখল গার্ডরুমের এক পাশের দেয়াল ঘেঁষে একটা ধাতব সিঁড়ি প্রাণতন্তুর মতো বাঁক খেয়ে ওপরে উঠে গেছে। দোতলার ঘরের জানালা বন্ধ। তবু স্বচ্ছ কাচের ভেতর দিয়ে ঘরের অন্ধকার চোখে পড়লো। সৌরভ এখনো এসে পৌঁছেনি হয়ত। ঘরটার ওপর পানির আকর চার পায়ে দাঁড়িয়ে।
অতিথিশালা ঘরটা বেশ বড় আর আয়তাকার। খয়েরিরঙা কাঠামোয় সাঁটা একপাল্লার কাঠের দরজা প্রায় ষাট ডিগ্রি কোণ করে খোলা। ভেতরে হলদে-সাদা আলো।ঢোকার মুখেই খাবার টেবিল। টেবিলের ওপর কাচের আস্তর। তাতে জগ গ্লাসের নানারঙা বিম্ব পড়েছে। চারপাশে সোনালী রঙলেপা গদি আঁটা কাঠের চেয়ার বেশ কটি। পাশাপাশি কটি প্লাস্টিকের চেয়ারও এনে রাখা হয়েছে। ওগুলোর পায়ার কাছটায় কাদা শুকিয়ে সাদা।
বাম দিকের দেয়াল ঘেঁষে চওড়া খাট। পায়ের কাছে ঘরলাগোয়া স্নানঘরের দরজা। আধখোলা হয়ে আছে। ভেতরে আলো জ্বলছে সেটিরও। সিমেন্টের তৈরি লাল মেঝের দিকে তাকিয়ে স্নানঘর থেকে দরজা অব্দি এক জোড়া ভেজা পায়ের কালচে ছাপ চোখে পড়ল।
ঘরের ডান দিকের দেয়ালে একটা কাপড়চোপড় রাখার বহুতল রোব। রোবের ওপর পিঠে কুঁজ বসানো সাবেকি আমলের টেলিভিশন,দর্শনকাচটা নোংরা হয়ে আছে।
বড় ঘর তাই দুপাশে দুটো ছাদপাখা। পাখার গায়ের কোমল সবুজ রঙ চটে গেছে, ব্লেডগুলোর ধার বরাবর ধুলো ময়লার পুরু স্তর জমে আছে। ছাদ আর পাখার যে সংযোগসেতু তাতে মাকড়শার জাল। ছাদে তাদের অধিকার বেশ প্রতিষ্ঠিত। জালে কোনো মাকড়শা নেই। তবে তিনটি কিচারটি সবুজাভ পুটলির একটি সারি জালে দিব্যি ঝুলে থেকে প্রমাণ করছে—কর্তা বেঁচে আছেন তো বটেই, রীতিমতো সক্রিয় আছেন।
দেয়ালগুলোয় উইপোকার নকশা শাখাপ্রশাখা মেলে দিয়েছে। প্রায় একই রকম শাখা প্রশাখা মেলে, তবে নির্দিষ্ট পথটি ধরে ছড়িয়ে পড়েছে সুইচবোর্ড থেকে বেরিয়ে থাকা বৈদ্যুতিক তার। নিয়মিত বিরতিতে আঠালো টেপ সেঁটে শাখার বিস্তার রোধ করার চেষ্টাও চলেছে।এভাবে তারের নদীপথ দেয়ালে সেঁটে থাকা একশ ওয়াটের বাতি, পাখা, টেলিভিশনের সুইচবোর্ড বরাবর চলে গেছে।
খাবার টেবিলের পেছনে রবির উদ্বেগের কারণ সেই জানালাটি খোলা। চেয়ার সরিয়ে সেখানে পৌঁছে আধসরানো কাচটি নিজেই লাগিয়ে দিলো সলিল। আলোটাকে ঘিরে ছোট ছোট অনেক পতঙ্গ উড়ছে। কোনো কোনোটি ঠুন ঠান শব্দে বাড়ি খেয়ে মাথা ভেঙে পড়ছে মেঝেতে। দেয়ালে বসে আছে স্বাস্থ্যবতী মশা সব। রবি বলছিল, দেখে হাত চাপড়ে মারতে ভয় হয়, মনে হয় তালুতে বুঝি কাঁটা ফুটে যাবে।
বাথরুমের কাছে আসতেই একটা কটু গন্ধে নাকের আক্ষেপ জন্মালো সলিলের। ছোট ওই ঘরেঢোকার মুখে একটা গোলাপি রঙা অপরিচ্ছন্ন বেসিন। রাজহাঁসের মতো গলা বাঁকিয়ে ওটার ওপর নেমে এসেছে পানির রূপালি নল। তার পাশে আর পেছনে এলোমেলো জড়োসড়ো হয়ে থাকা ব্রাশ, পেস্ট, মরচে ধরা ব্লেডের রেজর এসব। একটা ঘোলাটে প্লাস্টিকের বোতলে দুটো পাতাবাহারের ডাঁটা সাদা শেকড় ছেড়েছে। বড় বড় পাতায় মেরুন, হলুদ আর টিয়ে সবুজ রঙের প্রাকৃত নকশা।
ব্যাগের খোঁজে মেঝের এদিক ওদিক তাকাল সলিল। খাটের মাথার দিকের পায়ার কাছে দেখতে পেল, জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চেইন খুলে একটা আধপুরনো তোয়ালে, পাজামা আর ফতুয়া বের করে হাতে নিল সলিল। কী ভেবে একটু তলের দিকে ঘেঁটে বের করল একটা খদ্দরের চাদর। এরপর ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল বিছানায়। বিছানা যে এতোটা নরম হবে ভাবেনি। তাই বিব্রত মুখে কবার ওপরনিচ দোল খেতে হলো।
স্নানঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময়ে লুঙ্গি আর ফতুয়া পরা এক লোক মুখের ভঙ্গিতে বেশ অধিকার ফুটিয়ে ঢুকল ঘরের ভেতর। সৌরভের মতো এ লোকের চোখে কৌতুক বা প্রশ্রয় নেই। সৌরভের ওপর চোখ পড়ার পরও মুখের কোনো ভাবান্তর ঘটল না। রোবের ওপর থেকে রিমোট কন্ট্রোলটা নিয়ে চেয়ার টেনে হেলার দিয়ে বসে টিভি চালিয়ে দিলো। এক পায়ের গোড়ালি আরেক পায়ের খাঁজের ওপর ফেলে ঘন ঘন দোলাতে থাকল এরপর।হঠাৎ করেই ডেকে উঠলো রবিকে। সর বেশ রূঢ়।
কোনও সাড়া এলো না দেখে পা কাঁপানো লোকটা একবার অল্প মুখ ঘুরিয়ে আড়চোখে তাকাল সলিলের দিকে। সলিল তখন স্নানঘরে না ঢুকে তাকিয়ে লোকটিকে দেখছিল, চোখের দৃষ্টি বন্ধুত্বপূর্ণ। লোকটি তা দেখেও না দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের বাইরে চলে গেল। বাইরে সিড়ির ওপর প্লাস্টিকের ছেঁড়া পাপোশ। তার ওপর রাখা নিজ স্যান্ডেল জোড়া পায়ে গলিয়ে গট গট করে হেঁটে চলে গেল রান্না ঘরের দিকে। বিছানার শিয়রের কাছে আরেকটা জানালা আছে। ওই জানালা দিয়ে রান্নাঘরের দিকে ধাবমান তার কায়াটা দেখা গেল।
এরপর অস্পষ্ট আঞ্চলিক ভাষায় অনেকটা শাসানোর স্বরে কথা বলে চলল রবির সঙ্গে।
কিরে, সন্ধ্যায় যে চা দিয়ে ডাকার কথা ছিল, ডাকলি না কেন? কী সমস্যা? আর গোসল করে যাওয়ার সময় তোকে আরও একবার খুঁজলাম। পেলাম না। কেন? খুঁজলে না পেলে তোর চাকরি করার দরকারটা কি এখানে আমাকে বুঝিয়ে বল। সারাদিন এত খাটনি গেল। এখন মাথাটা কী পরিমাণ ধরেছে! এ সময় চা-টা চাই তা কি নতুন? বল।
নতুন স্যার আসলো। বড় স্যার ডাকল। তাই যেতে হলো—কুণ্ঠিত স্বরে রবির উত্তর। কণ্ঠটা খানিকটা কেঁপে উঠল, ধাতব কিছুটা একটা রাখার শব্দ হলো মেঝেতে।
নতুন স্যার এসেছে ভালো কথা। তাড়া থাকলে বা দিতে না পারলে আমাকে একটিবার জানাবি তো নাকি! একটিবার জানিয়ে তো যাবি! লোকটির কণ্ঠে প্রথমে সমঝোতার সুর থাকলেও পরমুহূর্তে আবার খানিকটা চড়ে উঠল।
ভুল হয়ে গেছে স্যার। এখনই করে দিচ্ছি—বিনীত উত্তর রবির।
লোকটি ঘুরে লুঙ্গিতে শব্দ তুলে নিজ ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করল। জানালায় আবার তার ধাবমান শরীরটা পলকের জন্য দেখা গেল।
এদিকে টেলিভিশন দিব্যি সচল। ত্বকের মেলানিনের সঙ্গে কঠিন রাসায়নিক যুদ্ধে নামার দীর্ঘ আহ্বান জানিয়ে চলল শেষ বিজ্ঞাপন।মধ্য আফ্রিকায় ইবোলার ভয়াবহ সংক্রমণ নিয়েরাতের খবরের পরবর্তী পর্বটি শুরু হলো। জালে ফিরে এলো মাকড়সা। গোলাপি বেসির জঞ্জালের মধ্য দিয়ে একটা খয়েরি আরশোলা পথ করে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেল।
লোকটি দরজার কাছে দাঁড়াল এক মুহূর্ত। পরক্ষণে দ্বিগুণ বেগে চলে গেল নিজ ঘরের দিকে। দরজা ভিড়িয়ে দেওয়ার মৃদু শব্দ হলো।
চলবে…
কারখানার বাঁশি: পর্ব-৩ ॥ হামিম কামাল
কারখানার বাঁশি: পর্ব-২ ॥ হামিম কামাল
কারখানার বাঁশি: পর্ব-১ ॥ হামিম কামাল