॥ পর্ব-২০॥
শেষ রাতে জাকারিয়ার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের ঘূর্ণায়মান প্রমাণ বিজলি পাখাটা বন্ধ হয়ে গেল। দেখো, ধীরে সে ঘামতে শুরু করেছে। ঘুমন্ত, নিরুপায়। জলতেষ্টা আর বর্ষণপূর্ব রাতের গুমোট তার অবচেতনাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। নিদ্রার জড় অন্ধকার থেকে চেতনার ‘অব’ অংশটি উঠে এলো তন্দ্রার তরল আলোকময় স্তরে। চোখের বন্ধ পাতার নিচে নড়তে শুরু করল নিশ্চল দুটো মনি, অধিবৃত্তাকারে।
বদ্ধ জানালার বাইরে প্রকৃতি সচল, সন্তানেরাও। পাশ দিয়ে চলে গেছে পায়ে চলা মোটা আলের মতো রাস্তা। মাথার ওপর মেঘ আর হাওয়ার দৌড়-ঝাঁপ বন্ধ। ঝড়জলের লক্ষণ পেয়ে দ্রুত পা চালিয়ে ওই রাস্তা ধরে যেতে যেতে শহরফেরৎ ক’জন যোগাড়ে শ্রমিক নিজেদের ভেতর ঝগড়া জুড়ে দিলো।
দুই সহোদর ভাই যার যার পারিবারিক অবদান নিয়ে ক্রমশ চাগিয়ে তুলতে থাকল রগড়। আর বাকিরা তাদের থামাতে চাইতে দু’পক্ষ দাঁড়িয়ে গণ্ডগোল সপ্তমে।
একপক্ষের একজনার গলা ভারি নারীকণ্ঠ ঘেঁষা। তাকে নিয়েই হঠাৎ শুরু হওয়া টিটকারির নিচে চাপা পড়ে গেল ঝগড়ার বিষয়বস্তু অল্প সময়ের জন্যে।
ছটফটিয়ে বাম কাত হয়ে থাকা জাকারিয়া বিছানায় পিঠ পেতে হলো চিৎ। ঘামে ভিজে উঠেছে গলা, পিঠ। পায়ের একটা পাতা নড়ে উঠল একবার। শ্বাস নেওয়ার হার কমে এলো।
আগুন! আগুন! শোনার পর করিডোরে বেরিয়ে এলো জাকারিয়া। দৌড়ুতে না চাইলেও পা দুটো শুনলো না তার কথা। ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসেছিল আরও অনেক মানুষ। সবার মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ, উদ্ভ্রান্ত মুখচোখ। আগুন লেগেছে শোনার পর সবার ঊর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু বেরোতে পারছে না কেন ওরা? মনে ঝলসে উঠল একটা বন্ধ দরজার চিত্র। মানুষ ঠেলে করিডোরের শেষ মাথায় পৌঁছনোর আগেই দেখতে পেল একদল বাঁচতে উন্মুখ মানুষ চিৎকার করে দরজা খুলে দিতে বলছে। কেউ শুনছে না ওদের কথা। কাছে এসে দেখতে পেল কাঁটাদরজায় ঝুলছে বেশ বড় এক তালা। কারখানার কর্মঘণ্টা চালাকালীন কেউ পালাতে যেন না পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিপদকালে এটা খুলে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কারখানা ব্যবস্থাপকের কাছে চাবি আছে বটে। কিন্তু আগুন যখন লেগেছে তখন সবার আগে সে লাপাত্তা।
কারখানার টয়লেটে ঢোকার মুখে ব্যবস্থাপক লোকটাকে পেয়ে গেল জাকারিয়া। একপর শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে লোকটার সারা গায়ে কিল বসাতে চাইলো, কিন্তু হতভাগাটার যেন রাবারের শরীর। একটা কিলও জুত করে বসানো গেল না। অস্ফুটে জাকারিয়া বলল, দে! দে চাবি! দে! লোকটা কেবলই মাথা এদিক নাড়িয়ে হাসতে থাকল। ওকে ছেড়ে টয়লেটের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল জাকারিয়া। নিচে পটকা ফাটার মতো একেকটা শব্দ হতে থাকল বিকট। শুনে দৌড়ে এসে কেচি দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করতে থাকা লোকগুলোর পাশে জাকারিয়া কিছুক্ষণ নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকল। তার খুব কান্না পেতে থাকল। এ দরজার বাইরে সিড়িটা নেমে গেছে ব্যবস্থাপকের ঘর বরাবর। লোকটা যদি কোনোভাবে শুনতে পেয়ে থাকে, এ আশায় কিছুক্ষণ গলা ছেড়ে চিৎকার করল সেও। একসময় বুঝল চিৎকার বৃথা। তখন সরে এসে ভাবতে লাগল অন্য উপায়ের কথা। বারান্দাপথের অন্য পাশের কাঁটাদরজারও দশা একই। প্রতিটা দরজাতেই আধুনিক তালা লাগানো। চাবির সাহায্য ছাড়া খোলা যায় না। এই গেট কোনোভাবে ভাঙা যায় না? জাকারিয়া কিছুক্ষণ করিডোর ধরে দৌড়ুতে দৌড়ুতে চিৎকার করল, ‘এই দরজা কি ভাঙা যায় না? একটা কোনো উপায় কি করা যায় না? ও আল্লা!’
হঠাৎ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকল জাকারিয়া, যেন উত্তরটা পেয়ে গেছে। কয়েকজন আগ্রহ ভরে তার দিকে তাকিয়ে আছে, কোনো উপায় জাকারিয়া বের করতে পেরেছে হয়ত, এই ভরসায়। জাকারিয়ার ওপর সবার ভরসা পুরনো। তার মুখচোখের কোথায় যেন আত্মবিশ্বাসের ছাপ রয়েছে, তার হাসির ভেতর, কণ্ঠের ঔদার্যে এমন একটা কিছু বহন করে এ কারখানায় যা আর কারও নেই।
অনেকেই নিজেদের ভেতর আলাপ করতো। সেই তারাই আজ ভরসা নিয়ে তাকিয়ে থাকলজাকারিয়ার দিকে। কিন্তু এর মুখচোখে একই রকম বিমূঢ়তা দেখে তাদের চোখের আলো নিভে গেল। যেন এই একটাই ছিল শেষ ভরসা, আশার শেষ জাহাজ, আর তা ডুবে গেছে।
বিপদের সময় মানুষের শরীরে বিশেষ কোনো প্রাণরস বেড়ে গিয়ে থাকবে, যে প্রাণরস সিদ্ধন্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে না বাড়িয়ে বরং উল্টোটা করে, অনেকে অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে বলে থাকে এমন। বিপদবেলায় মানুষ তুচ্ছ সব বিষয়ের ওপর ভীষণ নির্ভর করে এবং স্বাভাবিক সময়ে যা ভাবতেও পারতো না আর অনুভূতি এতোটাই চড়া সুরে বাঁধা থাকে যে অল্পতেই অণুরণিত হয়। এসব তথ্য বিপদের অভিজ্ঞতা থেকে বংশানুক্রমে বহন করে মানুষ।
জাকারিয়া দৌড়ে দ্বিতীয় কাঁটাদরজার কাছে গেল এই ভরসায়, হয়ত সেখানে কোনো ত্রুটি চোখে পড়বে, যে ত্রুটির ওপর ভর করে ওরা বেরিয়ে আসবে। দরজার কাছে যেতেই ওর চোখে আশার আলো জ্বলে উঠল। এইতো পাওয়া গেছে একটা সম্ভাবনা! এই দরজা থেকে বেরিয়ে সিড়িটা ভাঁড়ার ঘরের দিকে নেমে গেছে। এদিককার তালাটা তাই খুব একটা খোলার দরকার হয় না বলে আধুনিক ‘ওই বিটকেল’ তালা এদিকটাতেও দেওয়ার কথায় হয়ত মালিকের মনে আসেনি, একদিন কে যেন কাকে বলছিল বলে মনে পড়ল জাকারিয়ার। এই তালাগুলো একটা সরু তার পেলেই সে খুলতে পারে। একসময় ওরকম তারের আখড়ার ভেতর সে থাকত। কিন্তু আজ ওই তার কোথায় পাবে?
একটি মেয়ে চুলের সরু ক্লিপ হাতে দৌড়ে এলো, বয়স আঠারো থেকে কুড়ির ভেতর হতে পারে। নাকে সোনারঙের নাকফুল। চুলের সামনের অংশ ফোলানো, এর পেছনে ক্লিপে আঁটা টিয়ে রঙা ওড়নার ঘোমটা। গায়ের রঙ দূর প্রাচ্যদেশীয়দের মতো, বুঝি তার কোনো পূর্বপুরুষ বহু পথ পাড়ি দিয়ে এই মাটিতে এসেছির ভাগ্য ফেরাতে। মেয়েটা বড় বড় কালো চোখে ভয়, কিন্তু আরও অনেকের মতো নিয়ন্ত্রণহীন ভয় ওটা নয়, যেন তার ভয়ের ওপরও তার নিয়ন্ত্রণ আছে। ঘোমটার পেছনে যে পাশের ক্লিপ মেয়েটা খুলেছে সে পাশটা ঝুলে আছে, বেরিয়ে পড়েছে লালচে কালো চুলের দোদুল্যমান একাংশ। মেয়েটা উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, এটা কি কোনো কাজে আসবে? আমি এটা দিয়েও খুলতে দেখেছি।
কণ্ঠে দরিয়ানগরের সাগরপাড়ের টান স্পষ্ট। অত বিপদের মধ্যেও জাকারিয়ার মনে মুহূর্তের জন্যে এলো, এই মেয়েটিই কি এই কারখানার? কোনোদিন দেখেনি তো সে? তবে মনে হয় খুব আপন কেউ যেন। কথা বলার ভঙ্গিটা মরিয়মের মতো, ঈসার মা মরিয়ম। মেয়েটিকে একই কথা আবার বলতে দেখে তার মনে পড়ে মরিয়মের কথার ভঙ্গি তার মনে থাকলেও মুখটা একদম মনে নেই। আধো আলো আধো কালোর ঘরের শিয়রের জানালায় যার সাগর আছড়ে পড়ে? ক্লিপ দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে জাকারিয়া, এর আগে খোলেনি কখনো। মেয়েটা তাড়া দেয় তাকে, হলো? পারলেন? না পারলে আমাকে দিন, আমাকে দিন, আগুন বোধ হয় ওপরে উঠে আসছে, হায় আল্লাহ!
জাকারিয়ার হাত বার বার ফসকে যাচ্ছে তালার নির্দিষ্ট ওই ছিদ্র থেকে। ক্লিপটা নিয়ে ঘন ঘন কয়েকবার মেঝেতে ঘষে কেন যেন জিভে ছোঁয়াল নিজেও বলতে পারবে না। এসময় মেয়েটা ঝুঁকে এসে তার হাত থেকে ক্লিপটা নিয়ে চেষ্টা করতে বসে কয়েক সেকেন্ডেই জাদুমন্ত্রের বলে যেন, তালাটা খুলে ফেলল। মুহূর্তে সাড়া পড়ে গেল গোটা করিডোরে।
দরজার বাইরে বেরিয়ে এসে সিড়ির দিকে যেতেই বোঝা গেল, নিচে নেমে যাওয়ার উপায় বোধয় শেষ হয়েছে। সিড়িতে আগুন ঊদ্ধত সোনালি জিভ বোলাচ্ছে বাতাসে, উদরস্থ করতে চায় যা কিছু আছে। আগুন দেবতার মুখ, মা বলতেন। মা তার মাঝে মাঝে পুজা করতেন লুকিয়ে, বিদ্যুৎ ঝলকের মতো মনে এলো জাকারিয়ার। পরমুহূর্তে আগুনের হলকা তার ভাবনার জাল কুঁকড়ে ছিঁড়ে নিলো। দরিয়ানগরী মেয়েটি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কী করবেন?
একটু আগের বিফল মানুষটিকে মেয়েটি জিজ্ঞেস করছে কী করা হবে এখন। বিফল মানুষটি এই এক প্রশ্নে নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে পেল যেন। বলল, নিচে নামার চেষ্টা বৃথা। আর মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি। এই অবস্থায় আমরা ছাদটা দেখতে পারি। ছাদে তালা দেওয়া নেই তো?
সিঁড়ি ভেঙে উঠতে শুরু করলো ওরা ছাদে। দরজা খোলা আছে কিনা আদৌ কেউ ওরা জানে না। তবু ছুটেছে। জাকারিয়া দরজার কাছে পৌঁছে নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারল না। ছাদের আড় ছিটকিনিটাই শুধু আটকানো, কোনো তালা নেই। সম্ভবত করিডোরগুলো আটকানো থাকে বলে ছাদ আটকানোর কথা মালিকের আর মনে পড়েনি, মনে ভেবে নিলো জাকারিয়া। দরজাটা ঠেলে খুলতে পৃথিবীর সব আলো যেন একটা আয়তাকার ক্ষেত্র দিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করল। এবার বোধয় বেঁচেই গেল ওরা, এমন এক ভাবনা গোপন পুলকে ওর অন্তর ভরিয়ে দিলো। তার ঠিক পেছনেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে। জাকারিয়া একবার ভাবল মেয়েটার হাত ধরে। পরমুহূর্তে নিজেই ভুলে গেল সে কথা। আপনিই চলে গেল ছাদের মধ্যখানে। হুড়মুড় করে ছাদে আসতে থাকল মানুষ, মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেল। জাকারিয়ার চোখজোড়া ব্যকুল হয়ে খুঁজতে থাকল তাকে। মনে জপতে থাকল, এই দফা যদি বেঁচে যাই, সেও বাঁচে, তো তার ভেতর মরিয়মকে দেখার কথা সে বলবেই।
ছাদে এসে প্রথম যে স্বপ্নভঙ্গ হলো, তার পেছনে চালিকা এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। এই লোকটা ধুলো বালিতে কাশতো ভীষণ, ঢলে পড়ে গেল। আর তখনই প্রথমবারের মতো জাকারিয়ার নজরে এলো গোটা ছাদ রূপালি, কালচে রূপালি ধোঁয়া ভরে আছে। নিচ থেকে কুণ্ডুলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া, কোত্থেকে আসছে এত? দেখার জন্যে ছাদের কিনারে যেতেই কালচে রূপালি ধোঁয়ার একটা গরম কুণ্ডুলী তার খোলা মুখ দিয়ে ঢুকে গেল ভেতরে, দু’চোখ যেন উত্তাপে পুড়ে গেল। ধোঁয়ার কালো কুণ্ডলীর ভেতর জাগ্রত সোনালি সাপের মতো একটা কিছু নিচে লতিয়ে উঠতে দেখল জাকারিয়া। নিচে সারা কারখানা মরণ চিৎকারে ভেঙে পড়ছে। ঠিক ফটকের মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে হিংসাপরায়ণ দানবের লকলকে জিভ। ফটক, লগ্ন জানালা দিয়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী বেরিয়ে আসছে। ব্যাপার বুঝতে আরও একবার ঝুঁকে তাকাল নিচে। কিছু মানুষ বেরোতে গিয়ে টলছে বাইরের উঠোনে। একজন টলে পড়ে গেল, পোশাকের অনেকাংশ পুড়ে গেছে, ত্বকের কতখানি পুড়ে গেছে ছাদের ওপর থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই।
জাকারিয়ার বুকটা জ্বলে গেল। এর আগেও প্রবল উত্তাপের ভেতর সে কাজ করেছে। এরকম যাতনা স্মৃতি নেই। নেই?
নেতার পাণ্ডারা বসতিতে আগুন দিয়েছে। মা ইসহাককে বুকে করে আর তাকে হাতে ধরে পেছনে আগুন রেখে পালিয়ে যাচ্ছে কোথাও। বাবা ছিল পেছনে, অনেক কিছু একসঙ্গে আনতে গিয়ে কী যেন ফেলে দিচ্ছে বার বার। স্মৃতির নাটশালে ফের মঞ্চায়িত এ দৃশ্য কবেকার?
জাকারিয়া আরো একবার পেছনে তাকাল মেয়েটিকে আবার দেখা যায় কিনা এ আশায়। তাকে হতাশ করে দিয়ে বিপদে প্রিয় হয়ে ওঠা মুখটা দেখা গেল না। বার বার মনে হতে থাকল, ওই মুখ আর একবার যদি দেখা যেত, মুক্তি মিলতো এই বিপদ থেকে। আগুন ওপর তলায় পৌঁছে গেছে বোঝা গেল। ছোট ছোট বিস্ফোরণের শব্দ আসছে, আর জানালা পথে বেরোচ্ছে মেঘের মতো ভৌতিক অধিবৃত্তের ধোঁয়া।
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। তার একারই কি? না, চারদিকে আরও অনেকেই কাপড়ে বা হাতে নাক মুখ চেপে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ছাদে জলের আকরগুলোর নিচে গড়িয়ে চলে গেছে কেউ কেউ হতবুদ্ধির মতো, ভেবেছে ওখানে কিছুটা শীতলতা হয়ত পাওয়া যাবে। ছাদ ততক্ষণে তেতে উঠতে শুরু করেছে। ওপরের তলায় আগুন চলে এলে ছাদ তো তেতে উঠবেই, অথচ এ কথা এর আগে মনে আসেনি। কী করা যায়? কী করা যায়? কী করে বাঁচা যায় সবাইকে নিয়ে? সালাম ভাই থাকলে নিশ্চয়ই উপায় একটা বেরিয়ে যেত? কী করে বেরোতো? কীই বা আর করতে পারতো সালাম ভাই? সে যা পারতেন আমি কেন পারব না?
সালাম পাশে দাঁড়িয়ে বলতে থাকল, মন্দার কারখানায় আগুন কেন জনশূন্য মধ্যরাতে লাগে না, কেন কর্মঘণ্টা চলাকালীন লাগে, পারলে বল্ তো? এরপর জাকারিয়ার সরল উত্তরে হাসতো মিটিমিটি। সালামের উত্তরটা শোনার জন্যে যখন অধীর হয়ে উঠত, সালাম ভাই বলতো, বাড়িতে গিয়ে ঈসাকে বুকের ওপর বসিয়ে এরপর ভাবিস। উত্তর পেয়ে যাবি। বলতে না বলতেই ঈসা এসে হাজির। কালো হাফপ্যান্টের চেইনের দাঁতে ওর কোমল শিশ্নটুকুর বাড়তি কিছু ত্বক আটকে গেছে। অসহায় চোখ নিয়ে কোনো রকমে বাবার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ছোট ছেলেটা। বাবা বুঝি পারবে ছাড়িয়ে দিতে। জাকারিয়া ছেলের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল। ঝুঁকে তাকাল চেইনটার দিকে। এমন সময় কিছু মানুষ তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
দলটা সদর দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়েছিল। দরজার সঙ্গেই ছিল তুলার বিশাল গুদাম। একটা তীরশলাকা ধনুকে পরিয়ে বিঘতখানেক টেনে ছেড়ে দিলে যতো ওপরে ওঠে, ততটাই উঁচু। ধনুকের তারে যথাশক্তিতে টেনে তিন বিঘত ওপরমুখো করে ছাড়লে যতদূর যাবে ততদূর দীর্ঘ। আর যতটা উঁচু, প্রস্থেও ততটা। তুলনাটা নন্দের। গুটি বসন্তের দুর্লভ ক্ষতে ভরা নন্দের মুখ। মানিকনগরের কোনো এক যাত্রাদলে কাজ করতো নন্দ। যাত্রা দল ভেঙে যাওয়ার পর পেশা অপেশায় ছড়িয়ে পড়েছে নিরুপায় শিল্পীরা।
তুলোর পুরো মজুদে আগুন ধরে গেছে। টিনের সবল উত্তাপ আর সঙ্গে উত্তম দাহ্য তুলা পেয়ে আগুন দেবতা তুষ্ট। গুদামের টিনের দেয়ালের নিচে লোহার কাঠামোর ওপর করা প্লাস্টিক রঙ গরমে গলে গলে পড়ছে। সশব্দে এঁকে বেঁকে যাচ্ছে টিন, লোহাগুলো গনগনে লাল হয়ে উঠছে ক্রমে। মানুষগুলো সদর দরজা থেকে ফিরতেই পেছনে আগে থেকেই ভঙ্গুর হয়ে থাকা একটা বিমের মধ্যভাগ ভেঙে বেঁকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে নেমে এলো ছাদ। আগুন পেছনে ছড়িয়ে পড়েছিল আগেই। সরে যাওয়ার স্থান সংকীর্ণ হয়ে আসার পর আগুন এগিয়ে এলো, যেন নরখাদক পশু কোনো, প্রাণ আছে, হিসেবে নিকেশের ক্ষমতা আছে। মানুষগুলো আগুনের একটা বৃত্তের নিচে আটকা পড়ল।
নিচে মানুষের চিৎকার ক্রমে কমে এসেছে। হয়ত চিৎকারের ক্ষমতা হারিয়েছে, নয়ত সরে গেছে, ভাবল জাকারিয়া। সবাই ছাদের চলে এলে কী হবে? ভেঙে পড়তে পারে ছাদ। এরকম অবস্থায় পুরো ভবন ধসে পড়তে দেখেছে জাকারিয়া, অনেকবার। বললও সে কথা। সবাই খুব খুশি না! ছাদটা কিন্তু ভাঙবে! ভাঙবে বলে দিলাম! ছাদে চলে এসেছি শুনতে পেলে মরিয়ম হয়ত আবার মৃদু হাসতো, আর ভাবত, লোকটা শুধু ভুলই করে, শুধরাবার দ্বিতীয় সুযোগ কখনো পায় না।
জাকারিয়ার মগজ অবশ হয়ে আসতে থাকল। হাঁটুজোড়া ভেঙে আসতে চাইল, মগজ তার শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে দ্রুত। চোয়াল শক্ত করে সোজা হয়ে থাকতে সব শক্তি প্রয়োগ করতে চাইল জাকারিয়া। পারল না, পড়ে গেল। বুকের ভেতর যেন আগুন ধরে গেছে। শ্বাসকষ্ট চলছে। ভীষণ। দৃষ্টি হয়ে আসছে ঝাপসা। ঝাপসা চোখে দেখতে পেল, সবার কাছ থেকে শুধু একা হয়ে চলেছে সে। সমস্ত অবয়ব দৌড়ে তার কাছে থেকে চরে যাচ্ছে বহু দূরে। অবয়বগুলোকে মনে হচ্ছে সজল চোখে দেখা কতগুলো বক্ররেখার মতো। মনে হলো ওরা জোড়া জোড়ায় একেক কোণে লুকিয়ে নিজেতের রক্ষা করতে চাইছে, আবার সরে যাচ্ছে, আবার লুকোচ্ছে, সরে পড়ছে আবার। চিৎকার করছে বিরামহীন। তুলার গুদাম জ্বলা ধোঁয়া গোটা ছাদ শুধু নয়, গোটা আকাশ কালো হয়ে গেল। দুপুরের সূর্য দেখা যায় না। দূরে প্রধান সড়কের মোড়ে সারি সারি অনেক গুলো গাড়ি একের পর মোড় নিচ্ছে।
শক্তিমতি কারখানাতেও তখন সাড়া পড়ে গেছে, বিন্দুতে আগুন। আকাশ অন্ধকার করা ধোঁয়ার দেখা মিলছে সেখান থেকেও। প্লাস্টিক পোড়া কটু গন্ধ বাতাসে। জাকারিয়া একটা বাক্সের ভেতর রেঞ্চ কষছিল, মুখটা বিকৃত হয়েছিল, কতকটা ছোট করে কাটা নখের যন্ত্রণায়, কতকটা মনোযোগে। আবার দৃশ্যান্তর। বিন্দু, আগুন, আর বাতাসে কটু গন্ধ টের পেয়ে বুকের ভেতর ইসহাকের মুখটা ঝলসে উঠল। মুহূর্তে ছুটলো নীল বিরাট ফটকের দিকে। ওকে আটকালো না বৃদ্ধ দ্বাররক্ষী, চোখে ভীষণ সন্ত্রসস্ততা। এবড়ো থেবড়ো মেটে পথ ধরে সবেগে দৌড়ুতে থাকল জাকারিয়া। দৌড়ুনোর অভ্যাস নেই বহুদিন। মনে হলো গোড়ালিটা আপসে খসে যাবে। একাবার মুচড়ে গেল বাঁ পায়ের গোড়ালি। মুহূর্তে মনে পড়ল, স্বপ্নেও এভাবে দৌড়ুতে থাকে জাকারিয়া, গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে না কখনও। দৌড়ুতে দৌড়ুতে আবার একটা খোলা দরজার টয়লেট পেয়ে গেল, সাদা রঙ করা তার দেয়াল। দরজার চৌকাঠে দাঁড়াতেই পুলিশের হুইসেল!
কে এখানে কে! পুলিশি হাঁক! কোন বেটা এখানকার দরজা নিয়ে গেছে, আর দেয়নি! কোন বেটা! সরকারি মাল পেয়েছ? সরকারি মাল?
পুরো কারখানা ঘিরে ফেলেছে নীল পোশাকের পুলিশ। আগুনের আঁচেই কাছেপিঠে ঘেঁষা যাচ্ছে না। বিন্দুর প্রধান ফটকের জায়গাটুকু ফাঁকা রেখে সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে দমকলের লাল হলুদ ভারি সব গাড়ি। ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়ে প্রথমবারের মতো লক্ষ করলো জাকারিয়া, পুরো কারখানা ব্যারিকেড দিয়ে রাখা।
বাইরের উৎসাহী মানুষ এসে যেন ঢুকতে না পারে, কাজ যেন বাড়িয়ে না দেয়, পিছিয়ে না দেয়, সেজন্যেই এ ব্যবস্থা। একটা হাতমাইক নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বলে চলছিল শেষ কথাগুলো। ফটকের কাছে এ ব্যবস্থার জালে আটকা পড়ে গেল জাকারিয়াও। মরিয়া হয়ে বলল, ওপরে আমার ছোট ভাইটা আছে, আপনার দয়া করে আমাকে যেতে দিন, যেতে দিন!
ফটকের পুলিশ কোনো ভদ্রতার ধার দিয়ে গেল না এবং তার সে মানসিক অবস্থাও ছিল না। সবাই এসে আত্মীয় আছে বলে ঢুকতে চাইছে, দেওয়া হলে দমকলকর্মীরা কাজ করবে কী করে, আর কাকে রেখে কাকে বাঁচাবে তখন। ইতোপূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে জানে প্রহরী, সশক্তিতে হটিয়ে দেওয়া ছাড়া এ সময়ে আর কোনো দয়াময় আচরণ নেই।
জাকারিয়াকে ঠেকাতে নিজেকে যথেষ্ট মনে করলেও আসলে সে তা ছিল না। ছিপছিপে জাকারিয়া বলিষ্ঠ ব্যায়ামবীর পুলিশের ঘেরাওবাহুর নিচ গলে বেরিয়ে উঠোনের মধ্য দিয়ে দৌড় লাগাল। তার পেছন পেছন আরও কয়েকজন ঢুকতে চেষ্টা করতে গেলেই পুলিশ সবেগে লাঠি চালাল। লোকগুলো রাস্তায় কুঁকড়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকল।
উঠোন পেরিয়ে কারখানার মুল কাঁটাদরজার কাছে এসে জাকারিয়া দেখতে গেল ওপরকার ছাদ ধসে পথটা বন্ধ হয়ে আছে। একটা মৃত্যুকূপ, আর কূপের দরজাটা বন্ধ। ভেতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে দোজখ। দোজখে পুড়ছে পুণ্যঘামের নিত্য সিনানকারী শ্রমিকরা। জানালাগুলো ভেতর দানবের চোখ জ্বলছে দেখা যাচ্ছে। জানালার বাইরে ঘন ঘন জিভ পাঠাচ্ছে ওরা, আবার টেনে নিচ্ছে।
ভাইয়ের সঙ্গে অদেখা নাড়ির যে বন্ধন, তাতে দুঃসংবাদটা পেল জাকারিয়া। মনে হলো সে বুঝি আর নিজের ভেতর নেই। ভুল কাচ দিয়ে ঝাপসা নক্ষত্র দেখছে। আগুন খোলা একটা জানালা দিয়ে ভেতরে ঝাঁপ দেওয়ার পরিকল্পনাটা আসতেই যেন বুঝে ফেলেছে উদ্ধারকর্মীদের দুই সদস্য। যে মুহূর্তে সব ভেঙে দৌড়ুতে শুরু করেছে জাকারিয়া, ঠিক তখনই পেছন থেকে দুজন দুটি বাহু ধরে ফেলল তার। একজন জাকারিয়াকে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে গড়াতে থাকল, সঙ্গে চলল অশ্রাব্য গালাগাল। জাকারিয়া বজ্রবাঁধনে অসহায় ধরা দিয়ে শুধু চিৎকার করে চলল ভাইয়ের নাম ধরে। বিকৃত হয়ে গেল তার কণ্ঠস্বর। একপর্যায়ে ভাইয়ের নামটি আর মনে পড়ল না। শুধু ভাই, ভাই বলে চিৎকারে কেঁদে গেল।
জাকারিয়াকে কমবয়েসী এক উদ্ধারকর্মীর হাতে সমর্পণ করে বাকি দু’জন কোথায় যেন ছুটে গেল। কমবয়েসী ছেলেটা জাকারিয়ার গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে আদরের ভাষায় কত কী যে বলতে থাকল, জাকারিয়ার কানেই ঢুকলো না কিছু। তবে অবচেতনে সে কিছু যেন বুঝে নিয়েছে, এমনভাবে যাতনাকাতর বিকৃত মুখে অস্ফুটে কথা বলতে বলতে উদ্ধারকর্মীর সঙ্গে চলল। শান্ত, অনুগত আচরণ করল অনেকটাই। ফঢকের একপাশে আরও অসংখ্য স্বজনের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো তাদের। কেউ কেউ খবর পেয়ে ছবি নিয়ে এসেছে সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে সেই ছবি দেখাচ্ছে পুলিশকে। পাহারারত পুলিশদের মধ্যে কমবয়েসী একজনের চোখজোড়া লাল হয়ে যেন ফেটে যেতে চাইছে। চোখজোড়া লুকোতে চেষ্টার অন্ত নেই তার, বারবার মাথা নিচু করে ফেলছে।
ফটকের পাশে জাকারিয়াকে বসিয়ে দেওয়ার হলেও একটু পরই উঠে দাঁড়ায়। শ্বাস ফেলতে থাকে ঘন ঘন। প্লাস্টিক পোড়া গন্ধের পাশাপাশি মাংস পোড়া কটু গন্ধও আসতে শুরু করেছে প্রবলভাবে। পরিবেশ গরম হয়ে ওঠায় বাতাসের দিগবদল ঘটছে বাতাসের। গন্ধ একবার নাকে আসছে তো আরবার সরে যাচ্ছে।
অনন্তকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর স্ট্রেচারে করে মানুষের পোড়া দেহের পর দেহ আসতে থাকল। আগুনের হিসহিস শব্দ প্রায় থেমে যাওয়া এবার শোনা যাচ্ছে ঘন ঘন জলের ফিসফাস, শব্দ ভেঙে দিচ্ছে দমকলকর্মীদের অবিরত চিৎকার, আর সাংকেতিক উচ্চারণে। একেকটা স্ট্রেচার আসার সঙ্গে সঙ্গে লোকেরা ঘিরে ভেঙে পড়তে চায়। সারি সারি অ্যাম্বুলেন্সে তাদের তুলে দেওয়া হয়। আর স্বজনেরা ছবি নিয়ে দুর্বল পায়ে দৌড়ুতে থাকে অ্যাম্বুলেন্সের পেছন পেছন।
একেকটা হাতবিছানায় দুজন তিনজনকে তুলে নিয়ে আসতে থাকে দমকলকর্মীরা। হঠাৎ তাদের মধ্যেই একজনকে অনুজ ইসহাক বলে চিনতে পেরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে জাকারিয়া। দৌড়ে কাছ গিয়ে সারা শরীরে খুঁজতে থাকে পোড়ার ক্ষত। দেখতে না পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলে। তবে হয়ত বেঁচে যাবে তার ভাই! আর কোনোদিন শক্তকণ্ঠে কথা বলবে না ভাইয়ের সঙ্গে। আর যেতেও দেবে না বাইরে। না, কোনো কাজ আর কখনো করতে দেবে না ভাইকে। একদম আগলে রাখবে বুকের ভেতর। মাকে সে কথা দিয়ে এসেছিল।
বাইরে কোথাও না পুড়লেও ভেতরটা পুড়ে গিয়েছিল ইসহাকের। শ্বাসনালীর নাকি সত্তর শতাংশ পুড়ে গেছে, মাথা নেড়ে হতাশ স্বরে বলল চিকিৎসক। এমন কোনো শক্তপ্রাণ নয় ইসহাক। এরপরও প্রবল ইচ্ছে শক্তির জোরে দিন দুই যেন টিকে গেল। তৃতীয় দিন আর লড়তে পারল না। কথা বলতে পারল না। ফিসফিসিয়ে কিছু বলল, বোঝা গেল না, কিছু বলতে চাইলো ইশারায়। বোঝাতে না পেরে কাঁদলো। দিনভর ভাইকে পাহারা দিয়ে রাখার পর রাতে বিছানার পাশে ঠাণ্ডা মেঝেতে ক্লান্ত দেহে ছেঁড়া ছেঁড়া তন্দ্রায় জড়াত জাকারিয়া। হাসপাতালের বাইরে কী নিয়ে যেন গণ্ডগোল লেগে থাকল সারাদিন।
দৃশ্যান্তর। একাকী ঘরে ভিজে ওঠা ভাতের দিকে তাকিয়ে আছে জাকারিয়া। রাতের পর রাত পেরিয়ে গেল, না খেয়েই শুয়ে আছে পড়ল। এ পরিস্থিতি তার চেনা। কিন্তু দুটোর ভিন্নতায় হঠাৎ হিলহিলিয়ে মতো হাসতে থাকল। আশপাশের লোকেরা তাকে ধীরে ভয় পেতে শুরু করে জানাল বাড়ির মালিককে।
বাড়ির মালিক তার স্ত্রীর সঙ্গে জড়ালো বচসায়। স্ত্রীর মতো, জাকারিয়াকে যেন চলে যেতে বলা হয়। মালিক বলতে আর পারে না। মেয়েটা বাবা পক্ষ নিলো, ছেলেটা মায়ের।
রগুড়ে দলটা মাথা বাঁচিয়েছে কাছে কোথাও। ওদের কণ্ঠ গেল ঘুমন্ত জাকারিয়ার শ্রবণসীমা থেকে মিলিয়ে।
বাইরে আঁধার তরল। মেঘে মেঘে বিসংবাদ। ঝরছে শীত নামানো জল। ক্রমশ বেড়ে ওঠা জলতেষ্টা, তলপেটের চাপ, ঝড়জল সংকেতের আদিম বনজ তাড়নায় অবচেতনা তন্দ্রার স্তর থেকে জাগরণে ভেসে উঠে চেতনার তল স্পর্শ করা মাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাহ্য যত কম্পন পড়ল ছড়িয়ে, ব্যক্তি মেলল চোখ। টিনের চালার দিকে খোলা চোখ জোড়া মেলে চুপচাপ মেঝের বিছানায় পড়ে থাকল জাকারিয়া, নিঃসাড়। জলবিয়োগ না করলেই নয়। গলা না ভেজালে মরণ।
বিজলি পাখায় বিদ্যুতের সাড়া নেই। জানালা খোলা হলো। পায়ের পাতায় জলের গুড়ো এসে জমা পড়ার সুখ চেতনার ভাঁড়ারে তুলতে জাকারিয়া ফের বন্ধ করল চোখ। মনের আকর্ষি গুলো জানালার বাইরে। তাই বন্ধ চোখের পাতার আড়ে মস্তিষ্ক তার সময় গুনলো পল থেকে পলে ছোট ছোট লাফে। টের পেল সকাল।
চলছে…
কারখানার বাঁশি: পর্ব-১৯॥ হামিম কামাল