(পর্ব-১৭)
ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য কিছুতেই ভেবে পান না, ছোট্ট একটা বিভাগে এতো খণ্ডকালীন শিক্ষক কেন! যেখানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্য একশতও নয়। অথচ খণ্ডকালীন শিক্ষক নয় জন! স্থায়ী শিক্ষক তিনজন, সে সঙ্গে তো বিভাগের প্রধান আছেনই! বেশ কয়েকজন খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন, যারা জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত। যেখানে বিভাগের বয়স নয়-দশ বছর পার হয়ে গেছে, অথচ বিভাগ থেকে কোনো ধরনের কোনো অনুষ্ঠানই হয়নি। কোনো ধরনের কোনো প্রকাশনাও নেই। কারণ কী? অনেকভাবে বিষয়গুলো ভাবলেন ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য। এভাবে চললে কোনোদিনই এ বিভাগ বড় বিভাগে পরিণত হবে না; ছাত্র বাড়বে না; এখান থেকে সেভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীও বেরুবে না। এ রকম গতানুগতিকভাবে দিন পার করার; চাকরি করার কোনো মানে হয় না।
বিভাগটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা আমাকে করতেই হবে; কঠিন এক দৃঢ়তা গেঁথে ফেলে নিজের ভেতর।
বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন ও বেশ কিছু কার্যপন্থা নির্দিষ্ট করলেন।
ড. অীনন্দ্য অর্ঘ্য শিক্ষকদের বললেন, আপনারা সেমিস্টারের শুরুতেই কোর্স আউটলাইন শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেবেন। প্রত্যেকটি কোর্সের কারিকুলাম ও লেসন প্লান তৈরি করবেন। প্রত্যেক সেমিস্টারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পত্রিকা প্রকাশনা, দেয়াল পত্রিকাগুলোর পরিকল্পনা করে আমাকে দেবেন। পিআর রিভিউি জার্নাল বের করার পরিকল্পনা করতে হবে। প্রত্যেক সেমিস্টারে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে; সেখানে বিভিন্ন কলেজ যুক্ত থাকবে। কলেজের সাথে আমাদের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যেন তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটা উন্নত ধারণা পায়। তাহলে বাংলা বিভাগও উপকৃত হবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিষয়বস্তু আলোচনা করে ঠিক করে নেবেন। তারপর এই প্রস্তাবনা ও সম্ভাবনা বাজেট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে অনুমোদন নিতে হবে।
ফারিয়ার কাছে জানতে চাইলেন ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য, এগুলো ঠিকঠাক মতো নোট নিয়েছেন?
ফারিয়া বললো, জি স্যার।
আগামীকাল আজকের এই বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে আমাকে দেখাবেন। তারপর চূড়ান্ত করে ভিসি অফিস ও রেজিস্ট্রার অফিস সব জায়গায় প্রতিবেদনের অনুলিপি পাঠাতে হবে। বিভাগের ফাইলে মূল কপি রাখবেন। বলেই তিনি বললেন, অফিস মিটিংয়ের আগের যে ফাইল আছে, সেটা নিয়ে আসেন তো।
স্যার, অফিসে তো কোনোদিন মিটিংই হয়নি। ফাইল কোথা থেকে আনবো?
মানে? এত বছরের একটা বিভাগ; সেখানে এত বছরে একটা মিটিং হয়নি। বিভাগটা চলছে কিভাবে? সিদ্ধান্ত নেন কিভাবে?
মুখে মুখেই তো চলছে স্যার। আমি নিজে থেকেই করি। ম্যাডাম কখনো কিছু বললে করে দেই। এসবের কোনো ডক্যুমেন্ট তো নেই। ফাইলপত্রের কোনো ব্যাপার-স্যাপার নেই।
আশ্চর্য! ঠিক আছে। এখন থেকে মিটিংয়ের আগে নোটিশ হবে এজেন্ডাসহ। সেটাও ফাইলে থাকবে। মিটিংয়ের কার্যবিবরণীও ফাইলে থাকবে। যখন কোনো প্রস্তাবনা পাস হয়ে আসবে, সেসবও ফাইলে থাকবে। সব আলাদা ফাইল হবে। সবকিছুই ডক্যুমেন্টারি হবে। প্রতিমাসে শিক্ষক মিটিং হবে। সেমিস্টারের শুরুর আগে স্থায়ী ও খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নিয়ে আলাদা মিটিং হবে। প্রতি মাসে অন্তত একবার ছাত্রদের সাথে শিক্ষক মিটিং হবে। বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। এগুলোর সব আলাদা আলাদা ফাইল থাকবে। সব মিটিংয়ের প্রতিবেদন রেজিস্ট্রার অফিসে যাবে। ভিসি অফিসে যাবে। বিওটি অফিসে যাবে। এগুলো ঠিকমতো তৈরি করে আমাকে দেখিয়ে, তারপর পাঠাবেন। এ জন্য রেজিস্ট্রার খাতা রাখবেন। সেখানে তারিখ ও ক্রমিক নম্বর থাকবে। মূল শিরোনাম লেখা থাকবে।
শাহিদা শাহেদ বললো, স্যার, ডিপার্টমেন্টে এসব কার্যক্রম তো খুবই দরকার। অনেক আগে থেকেই হওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু ম্যাডাম, ভিসি বিল্ডিংয়ে তো বাংলার চেয়ারম্যান স্যার মানেই তো বিরাট কিছু। সবার মুখেই প্রশংসা।
সুমাইয়া সুলতানাও তা সমর্থন করে বললেন, আমরা তো স্যার আমাদের স্যারদের এসব করতে দেখেছি। সব শিক্ষকেরও আলাদা আলাদা ফাইল থাকতো। নিজেরাও বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতাম। এখানে এগুলো করতে পারলে অনেক ভালো হবে, স্যার। যেমন স্যার আমার স্টুডেন্টস এটেন্ডেন্স ক্লাসে যাওয়ার সময় খুঁজে পাই না। কোথায় থাকে কার কাছে থাকে, কোন টেবিলে থাকে!
বিরক্ত হয়ে ফারিয়া বললো, স্যার, এখানে এতসব পরিকল্পনা করে লাভ হবে না। বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। বাংলা বিভাগকে তো কোনো ফান্ডই দেয় না। কোনো অনুষ্ঠানের কথা বললে, একবাক্যে না বলে দেয়, বাংলা বিভাগ ওই কয়জন ছাত্র নিয়ে কী অনুষ্ঠান করবে! আগেও ম্যাডাম চেষ্টা করেছেন। পারেননি।
ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য ফারিয়ার কথাটা চিন্তা করলেন। বিভাগের প্রতি কর্তৃপক্ষের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য যে একটা ভাব আছে, তা অনুমান করলেন। আবার এও ভাবলেন, কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে কি না! কিংবা বিভাগ থেকে আদৌ এসব করতে চেয়েছে কি না, তাও ভাবলেন, যেসব পরিকল্পনার কথা বলছি, এগুলো এ বিভাগ থেকে অবশ্যই করা প্রয়োজন।
ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য বললেন, আচ্ছা, সামনে যে স্বাধীনতা দিবস আছে; আমরা বিভাগ থেকে এ অনুষ্ঠানটি করতে পারি না?
না, স্যার। এখানে সাংস্কৃতিক ক্লাব আছে। সেই ক্লাবই অনুষ্ঠান করে। বিজনেস ডিপার্টমেন্ট নির্দেশনায় থাকে। কারণ ওটা বড় ডিপার্টমেন্ট। ওদের দাপট বেশি। ফারিয়া বললো।
সেই অনুষ্ঠানে বাংলা বিভাগের কোনো ভূমিকা থাকে না?
শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে এমনি যেতে পারে। কিন্তু ক্লাবই নির্ধারণ করে দেয় অনুষ্ঠানে কারা আলোচনা বা গান কবিতা পাঠে অংশ নেবেন। অবশ্য এটা ভিসি স্যারের সাথে ক্লাব আলোচনা করেই সবকিছু চূড়ান্ত করেন।
এ ক্লাবের দায়িত্বে কে থাকেন?
এই ক্লাবের দায়িত্বে স্যার বিজনেস ডিপার্টমেন্টেরই ড. জামিল নামে একজন ফ্যাকাল্টি আছেন। মূলত তিনিই এটার প্রধান। বাংলা বিভাগের প্রধান কমিটির একজন উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। সেটা স্যার নামেই। বাস্তবে কোনো কার্যকরিতা থাকে না। শুধু বাজেট অনুমোদন ও বিল সাবমিট করার সময় তার স্বাক্ষর লাগে।
ঠিক আছে। ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য কিছু একটা ভাবলেন। তারপর প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে শিক্ষকদের বললেন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন থাকে?
স্যার, ছেলেমেয়েরা তো ক্লাসই করে না! খুবই কম ছেলেমেয়ে ক্লাস করে। শাহিদা শাহেদ বললো।
আপনারা প্রত্যেকে ছেলেমেয়েদের সমান সংখ্যায় ভাগ করে নেবেন। প্রত্যেককে অফিসের নম্বর থেকে ফোন দেবেন। ক্লাস করার জন্য বোঝাবেন। তাদের অভিভাবকদের ফোন দেবেন। তাদের ছেলেমেয়েরা যে ক্লাস করে না, তা জানাবেন। সেমিস্টার শেষে প্রত্যেক অভিভাবককে রেজাল্ট পাঠিয়ে দেবেন। প্রত্যেক সেমিস্টারে অভিভাবকদের সাথে আমরা একটা মিটিং করবো। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে। অনেক অভিভাবক জানেনই না তার সন্তানেরা ক্লাস করেন না। বাসা থেকে ঠিকই টাকা নিচ্ছে, মেসে থাকছে, বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। বাসায় হয়তো বলছে সে নিয়মিত ক্লাস করছে। ফারিয়া, আপনি আমাকে মিটিং শেষে শিক্ষার্থী ও অভিভাববকদের তালিকাটা দেবেন।
স্যার, শিক্ষার্থীদের তালিকা দিতে পারবো। কিন্তু অভিভাবকদের তালিকা তো নেই।
অ্যাডমিশন বিভাগ থেকে নেবেন। সেখানে অবশ্যই আছে। কম্পিউটারে ও ম্যানুয়েল ফাইলে এগুলো সংরক্ষণ করবেন।
জি স্যার।
আচ্ছা ফারিয়া, আমাদের খণ্ডকালীন শিক্ষক কতজন?
নয় জন।
এত শিক্ষক! আপনি তিন সেমিস্টারের খণ্ডকালীন শিক্ষকদের তালিকা, তাদের পেমেন্টের তালিকা এবং তাদের প্রত্যেকের কোর্সে কতজন করে শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বর্তমানে সেমিস্টারে প্রত্যেক কোর্সে কতজন করে শিক্ষার্থী আছেন; এই ফাইলগুলো নিয়ে আসেন। আচ্ছা, এসব ফাইল আপনার রুমে ওভাবে রক্ষিতভাবে থাকে কেন? আগামীকাল সব ফাইল এই রুমে ফাইল; কেবিনেটে রাখবেন। শুধু নোটিশ ফাইল আপনার রুমে রাখবেন।
ফাইলগুলো আনতে যায় ফারিয়া। শিক্ষকদের নিজের রুমে যেতে বললেন ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য।
শাহিদা শাহেদ ও সুমাইয়া সুলতানা রুমে ঢুকেই শাহিদা শাহেদ সুমাইয়াকে বললো, এতদিন যেভাবে চাকরি করেছ, এখন আর তা হবে না। চেয়ারম্যান স্যার পুরো আলাদা। মাসুম মাহিন স্যার ছুটি তো আরামেই কাটাচ্ছেন। ভাবছে, ডিপার্টমেন্ট আগের মতোই গরু ছেড়ে দেওয়া আলগা মাঠের মতোই আছে! এলে ঠ্যালা বুঝবে!
সুমাইয়া সুলতানা বললো, এটা ভালো তো। ডিপার্টমেন্টে নানারকম কাজকর্ম থাকবে। ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত থাকবে। সবসময় প্রাণবন্ত একটা ভাব থাকবে। তখন নিজের কাছেও ভালো লাগবে। এখন তো চাকরিটাই করি। কাজটা কী করি, তাই-ই তো বুঝি না!
তাও ঠিক। ফারিয়া আপু তো মনে মনে চেয়ারম্যান স্যারের ওপর ক্ষেপে আগুন হয়ে আছে! শাহিদা বললো।
আপু তো এখন আর মনে হয় না রুম বন্ধ করে সারাদিন কম্পিউটার ছেড়ে দিয়ে নাটক সিনেমা দেখতে পারবে! সুমাইয়া বললো, আসলে বাংলা বিভাগের যে অবস্থা আমার নিজেরও ভালো লাগে না। সারাদিন এভাবে খালি খালি বসে থাকতে। সারাদিন তো ফেসবুকিং আর গসিপ করেই দিন চলে যায়। সবাই মিলে বিভাগটাকে কাজের ভেতর আনতে পারলে, নিজেদেরই সম্মান বাড়বে। দেখো না অন্য বিভাগের ফ্যাকাল্টিরা আমাদের কোন গুরুত্বই দিতে চান না। বেতনটাও কত কম দেয়। মনে হয় দয়া করে দিচ্ছে!
তুমি অত ভাবো কেন? আমরা কি এখানে সারা জীবনের জন্য এসেছি! দেখো কয় মাস থাকি! তিনটা পাবলিকে দরখাস্ত করা আছে। এমনিই আমাদের চাকরি পাবলিকে হয়ে যাবে। আমাদের থেকে ভালো রেজাল্ট আর কার আছে! দুচার ছয় মাস বড়জোর একবছর জোড়াতালি দিয়ে সময়টা পার করলেই তো হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি নামটাও হলো, টাকাটাও অল্প-বেশি যায় হোক পেলাম; খারাপ কী? বিভাগের কী হলো, না হলো; এতসব ভেবে লাভ আছে! চেয়ারম্যান স্যার বলছেন, আমাদের শোনা দরকার শুনছি। মাথায় না নিলেই তো হলো!
তোমার সাথে আমি একমত নই, শাহিদা। সামনে তো খুব চামচামি করে কথা বললে। প্রশংসা করলে। এখন আবার অন্য কথা! দ্বি-চারিণী স্বভাব ভালো না। তোমার প্রিয় চরিত্র তো আবার অচলা!
কোথায় থেকে কোথায় চলে যাচ্ছ! সামনে অটুকু বলতে হয়। বসকে খুশি রেখে চলতে পারাও একটা যোগ্যতা বুঝছ! কাজ না করে যদি ওরকম করে ভালো থাকা যায়, সমস্যা কী!
এ কথার সাথে আমি একমত নই। যে কয়দিনই থাকি, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে চাই। সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা পারি ছেলেমেয়েদের দিতে চাই। চেয়ারম্যান স্যার যে সব পরিকল্পনা বলছেন, বিভাগের জন্য যে সব কথা বলছেন; এগুলো আসলেই দরকার। না হলে একটা ডিপার্টমেন্ট কিভাবে ডিপার্টমেন্ট হয়ে উঠবে! সারাজীবন তো এটা আদুভাই মার্কা ছাত্রের মতো আদুভাই মার্কা ডিপার্টমেন্ট হয়েই থাকবে! আর নিজেরা যদি এটাকে একটু হলেও গড়ে তুলতে অবদান রাখতে পারি, একদিন তো তা বলতে পারবো।
ভালো। তুমি জান-পরান দিয়ে কাজ করো। স্যারের সুদৃষ্টি অর্জন করো। ডিপার্টমেন্টটাকে তোমার স্বামী বানাইয়া ফেলো, জান-পরান দিয়ে যত্ন-আত্মি করো; মন ভরে খেদমত করো। কিন্তু আমি তা পারবো না। এখানে কয়দিন থাকি তারই ঠিকঠিকানা নেই! তাই ওসবে মনোযোগ দিতে চাই না।
তুমি যে কিভাবে কথা বলো, ধরলে কিন্তু বহুদূর যায়! ধরতে চাই না। আমি তো এখানে হাজার বছর থাকতে এসেছি তাই না! প্যাঁচানো কথা বলো কেন! করলে তুমিই করবে। ভার্সিটিতে পড়ার সময় কয়টা করেছ তা তো আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। তুমি গতকাল বললে না স্যার তো এমনিই সুন্দর! দেখতে একদম নায়ক। নিজেরটা আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছ! থাকো আমি বেরুচ্ছি।
রেগে গেছ? একটু দাঁড়াও। একসাথে বেরোই।
সুমাইয়া সুলতানা একটু অপেক্ষা করে দুজনে এক সাথে বের হয়ে যাবার সময় ড. আদিত্য অর্ঘ্যর রুমে উঁকি দিয়ে বললো, স্যার আমরা বেরুচ্ছি।
ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য তখন ফারিয়ার সঙ্গে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের ফাইল নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তাদের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে আবার মনোযোগী হয়ে ওঠেন ফাইলগুলোর প্রতি।
ফারিয়া, প্রত্যেক সেমিস্টারে এত কোর্স অফার কেন? এখানে তো এমএ প্রোগ্রাম নেই। শুধু অনার্স। গত তিন সেমিস্টারে আঠাশ ঊনত্রিশটা করে কোর্স অফার করেছেন! এতে শুধু খণ্ডকালীন শিক্ষকদেরই সেমিস্টারভিত্তিক প্রায় দশ লাখ টাকা করে বিল দেওয়া হয়েছে! অথচ প্রত্যেক কোর্সে ছাত্র সংখ্যা দু জন চার জন পাঁচজন দশজনের বেশি তো আমি কোথাও দেখছি না।
স্যার, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের কোর্স দেওয়ার জন্য ওপর থেকে চাপ থাকে। সেজন্য কোর্স বাড়িয়ে অফার করা হতো।
কোর্স অফার করবেন কোঅর্ডিনেটর অথবা বিভাগের প্রধান নিজে। এখানে যেহেতু কোঅর্ডিনেটর নেই, ম্যাডাম নিজেই কোর্স অফার করবেন। আপনি কেন করেন?
স্যার, প্রথম থেকেই আমি অফার করি। আর ম্যাডাম এসব অত বুঝতেনও না।
ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্য অবাক হন; একজন প্রোগ্রাম অফিসার, যিনি মূলত কম্পিউটারের কম্পোজের কাজগুলো করবেন; অথচ তিনি কোর্স অফার করেন! কোন শিক্ষক কী পড়াবেন, না পড়াবেন; তা তিনি নির্ধারণ করেন! কিছুই না বোঝার মতো করে বললেন, তা ঠিক আছে। আপনি কি বাংলায় পড়েছেন?
না, স্যার। ইতিহাসে পড়েছি। পরে বিবিএ এমবিএ করেছি। স্যার, একটা কথা বলবো?
বলেন।
আপনি যেভাবে কাজের কথা বলছেন, যেভাবে পরিকল্পনার কথা বলছেন, বা আপনি যেভাবে অফিসে সারাক্ষণ থাকেন, ম্যাডাম তো তা করতেন না। আমি যা করতাম, ম্যাডাম তা ওকে করে দিতেন। আর তার নিজের কিছু শিক্ষক ও বন্ধু ছিল, তাদের ক্লাস দেওয়ার জন্য কোর্স ইচ্ছে করেই বাড়াতে হতো।
ঠিক আছে। কিন্তু একবার কি ভেবেছেন, বাংলার মতো ছোট একটা বিভাগ প্রতি সেমিস্টারে পার্টটাইমার শিক্ষকদের বিলই আসে নয় দশ লাখ টাকা। যে বিভাগটার ওপর সবসময় খড়গ ঝুলছে! পারলে যেকোনো সময় বন্ধ করে দেয়। এরকম একটা বিভাগ থেকে ব্যক্তিস্বার্থে অতগুলো করে টাকা বের করে দিয়েছেন! কথাগুলো যখন ভিসি মিটিংয়ে যাবে, ব্যাপারটা কি ভালো হবে!
কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে থেকে ফারিয়া বললো, স্যার, আমি আসলে এত কিছু বুঝিনি।
এখন থেকে কোর্স অফার আমি নিজেই করবো। আর এতদিনের মতো কোর্স অফার এখন হবে না। প্রত্যেক কোর্সে ন্যূনতম পনেরজন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন ব্যাচ একসঙ্গে যৌথ করে দিতে হবে। এতে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা নয় থেকে তিনে বা দুইয়ে চলে আসবে। সেমিস্টারভিত্তিক ব্যয় সাড়ে নয় লাখ-দশ লাখ থেকে আড়াই লাখ তিন লাখে চলে আসবে।
ফারিয়া মনে মনে ভাবে, যেদিন এখানে এতদিন গেছে, সেদিন এখানে আর ফিরবে না। যারা আমাকে এতদিন এত গুরুত্ব দিতেন, সব বাদ হয়ে যাবে! যারা একটা ক্লাস পাওয়ার জন্য আমাকে কতরকম মিনতি স্বরে কথা বলতেন, সবই তো শেষ! আর এত এত কাজের কথা; কাজের প্ল্যান; এসব করতে গেলে তো আমার রুম বন্ধ করে কম্পিউটারে সিনেমা নাটক দেখা; তাও শেষ। অন্য বিভাগে যেয়ে আড্ডা দেওয়া; অফিস ফাঁকি দিয়ে মার্কেটে যাওয়া; সবই তো শেষ হয়ে যাবে! যেভাবেই হোক চেয়ারম্যান স্যারকে এখান থেকে তাড়াতে হবে। না তাড়ালে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো। আমার ক্ষমতা বলে কিচ্ছু থাকবে না। আমাকে কেউ মানবে না। এতদিনের যে দাপটি অফিসার আমি; এখন নিছক একজন কেরানি ছাড়া আর কিছুই থাকবো না। আগে যেখানে চেয়ারপারশন ড. ফারজানা আমার রুমে এসে বসে থাকতেন, আর এখন আমি চেয়ারম্যানের রুমে ফাইল নিয়ে কেরানি হয়ে সারাদিন দৌঁড়ের ওপর থাকবো! আচ্ছা, উনাকে যদি আমার মাটির গাছের লাউ খাওয়াতে চেষ্টা করি, পারবো না!
কিছু ভাবছেন?
না, স্যার। চট্ করে মিথ্যে বলে দিলো ফারিয়া।
শুনুন, আপনি এখানে অনেকদিন আছেন। অভিজ্ঞ মানুষ। ডিপার্টমেন্টের ভালো-মন্দ সব জানেন; সব বোঝেন। আপনি আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে বিভাগটাকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিতে চাই। এতে করে আমরা নিজেরাও সম্মানিত হবো।
অবশ্যই স্যার। আপনাকে আমি সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য তৈরি আছি। আমি এর আগে আরও দুজন চেয়ারপারশনের সঙ্গে এখানে কাজ করেছি। আপনি একদম আলাদা। আপনি শুধু আমাকে বলবেন কি করতে হবে আমি সাধ্যমতো তা করার চেষ্টা করবো।
আপনার কথা ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ। শুনুন, আমি এখন ভিসি স্যারের কাছে যাবো। আপনি রুমে গিয়ে সুন্দর করে একটা প্রতিবেদন তৈরি করেন।
জি স্যার। বলেই ফারিয়া ফাইলগুলো নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে টেবিলের ওপর ঠাস করে ফেলে দিয়ে, ধপাস করে চেয়ারে বসে হতাশকণ্ঠে বললো, আমার চাকরির সুখ শেষ! সানি লিওন দরোজা বন্ধ করে তোমাকে দেখার আমার আগুন সুখ নিভে গেছে।
আরিফুল বললো, ম্যাডাম চা দেবো?
আর চা! চেয়ারম্যান একখান আইছে! জানের আরাম তো হারাম করে ছাড়বে! কাজা কাজ আর কাজ! আর খণ্ডকালীন শিক্ষকদের তো বারোটা বাজিয়ে দেবে! যেভাবে উনি কোর্স অফার করবেন, তাতে সামনের সেমিস্টার থেকেই খণ্ডকালীন শিক্ষক প্রায় সব ফাঁকা হয়ে যাবে! ডিপার্টমেন্ট যেটুকু ছিল, অটুকুও আর থাকবে না।
কিন্তু ম্যাডাম, ভিসি বিল্ডিংয়ে তো বাংলার চেয়ারম্যান স্যার মানেই তো বিরাট কিছু। সবার মুখেই প্রশংসা।
আমি বুঝতেছি, চেয়ারম্যান স্যার কী জিনিস! কাজ করাতে করাতে পাগল করে ফেলবে! তাকে বিদায় না করতে পারলে, খুব বিপদ। চাকরি যদি করতে চাও, একটা বুদ্ধিসুদ্ধি বের করো, ক্রিজে টিকার আগেই বোল্ড করার বুদ্ধিবের করো।
এ যেন ফারিয়া আর আরিফুলের অসম সম্পর্কের অন্যরকম এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা!
ম্যাডাম, আমি যতটুকু জানি, ব্যাপারটা কঠিন আছে। অন্য চেয়ারম্যানদের মতো এই চেয়ারম্যান স্যারের অবস্থা না। বিভাগ ছোট হতে পারে; তার নিজের অবস্থান অনেক বড়। ওপরের সবাই তাকে পছন্দ করেন।
শোনো, তুমি আর আমি তো এখানে অনেক বছরই আছি। আমরা তো এখানে অনেক কিছুই দেখেছি। এখানে সকালের পছন্দ দুপুর না হতেই ফুরিয়ে যায়। আবার সকালের অপছন্দ বিকেলে গোলাপফুলের মতো মুগ্ধ হয়ে ওঠে। এসব দেখোনি এখানে? এখানে কে কখন কাকে পছন্দ করে; কে কাকে কখন অপছন্দ করে; বোঝা ঠ্যালা আছে। তোমাকে আমাকে নিয়েও তো কথা হয়। জানো কিছু? অবশ্য তুমি আমি যেভাবে সবসময় একরুমে থাকি; গল্প করি; ছবি দেখি; কথা হওয়ায় তো স্বাভাবিক! ফারিয়া রস লাগিয়ে আবার বললো, পুরুষ হিসেবে তোমাকে তো পছন্দ করার মতোই, চাকরিটা শুধু ছোট। ধরো, তুমি আমি আর আমার হাজবেন্ড যদি একসাথে হাঁটি, অচেনা কেউ কি আমার হাজবেন্ডকে ভাববে আমি অই লোকটার বউ! সবাই কিন্তু অন্যটা ভাববে। বুঝতে পারো কী বোঝাতে চেয়েছি! ফারিয়ার মনে কেন যেন হরলালের কথা মনে এলো। হরিহর যেভাবে বিধাব বিবাহের বাসনা রোহিনীর মনে জ্বালিয়ে উইল চুরি করতে সম্মত করেছিল, ফারিয়া সেই কবেকার পড়া ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র সেই ছবি মনে ভেসে এলো। বুদ্ধিটা হুট করে কাজে লাগালো। আরিফুলের ভেতরও এ কথার ভেতর দিয়ে একটা সুপ্ত বাসনার আগুন জ্বালিয়ে রাখে। যেন তাকে দিয়ে সে যেকোনো কাজ করাতে পারে। কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফারিয়া বললো, অবশ্য এখানে কথার কোনো বাঁধ নেই!
তা ঠিক ম্যাডাম। এখানে যে কত কিছু দেখলাম। তবে একটা কথা ঠিক ম্যাডাম, নতুন ভিসি স্যার এসে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পুরো পরিবর্তন করে ফেলেছেন। অনেক উন্নতি হয়েছে। ভিসি স্যার কিন্তু আমাদের চেয়ারম্যান স্যারকে খুব পছন্দ করেন। যা-ই করেন হিসাব করে করেন।
তুমি আমার সাথে আছ তো?
সে তো আছিই, ম্যাডাম। আপনার কোনো কথা শুনিনি-এরকম একটা কথা বলতে পারবেন? আরিফুল ভাবে, ম্যাডাম কী কথাডা কইলো, আমারে তার পছন্দ হয়! তার স্বামীর থেকে আমারে সুন্দর ভাবে! নিজের স্বামীর জায়গায় মনে মনে আমারে বসায়! অপার এক শান্তি তার ভেতর মৃদু বাতাস হয়ে বয়ে যায়। এরকম ভাবনায় যখন সে আচ্ছন্ন, ঠিক সে সময়ে ফারিয়া বললো, আরে শোনো, তোমারে নিয়ে আমার বাসায় একটা ঘটনা আছে; কী কারণে হুট করে আমার স্বামী একদিন বললো, তোমার তো আরিফুলের সাথে সম্পর্ক আছে! খারাপ সম্পর্ক! আমি তো ক্ষেপেটেপে আগুন! পরে চিন্তা করে দেখলাম কথাটার একটা মানে আছে; যেটা তোমাকে একটু আগেই বললাম। তুমি যে দেখতে অনেক সুন্দর; এটা তার ঈর্ষা! ভেতরে জ্বলে-পুড়ে-মরে!
আরিফুল এবার সাহসটা পায়। নিজের থেকে বানিয়ে মিথ্যে করে বললো, আমার বউও তো এই কথাই কয়। আপনি ম্যাডাম মানুষ তাই বলতে সাহস পাইনি।
তাই নাকি! আগে কখনো কওনি তো?
আগে কিভাবে বলি! আপনি কত বড় অফিসার! এই কথা আপনাকে কওয়া যায়! আমি আপনার চেয়ার মুছি; টেবিল মুছি; চা বানাই; আপনার হুকুমের দাস!
ফারিয়া একটু কী যেন চিন্তা করে বললো, শোনো কাজের জায়গায় কাজ, মনের জায়গায় মন। সব হিসাব দিয়ে সব হিসাব মেলানো যায় না। আচ্ছা আরিফ, তোমার বউ আমারে নিয়ে আর কোনো কথা কয়?
হ। কয় তো। কত কথা কয়। অফিসে তো তোমার বউ আছে, এজন্য বাড়ি আসতে মন চায় না। এখন ঘরের বউ লাগে না। আসলে ম্যাডাম আমার বউ তো ব-কলম। আপনার আর আমার অবস্থান যে আকাশ পাতাল পার্থক্য; তা ওকে বোঝাবে কে! আরিফুল এত সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারে, সত্যের চেয়ে বড় সত্য মনে হয়। ফারিয়া নিজেকে যে এত চতুর ও বুদ্ধিমতি ভাবে, অথচ আরিফুলের হুট করে বলা এসব বানিয়ে বলা কথাগুলো মনেপ্রাণে সে বিশ্বাস করে নেয়।
আরিফুলের প্রতি তার মন থেকে কেমন যেন একটা সহানুভূতি অনুভব করে। ফারিয়া বললো, আসলে কখন যে কী হয়; বলা কঠিন, আরিফ। তোমার বউ যা বলেছে ঠিকই বলেছে, তার অবস্থান থেকে। কিছু সম্পর্ক কোনো হিসাবের ভেতর দিয়ে হয় না। কে বড় চাকরি করে; কে ছোট চাকরি করে; কে বড় লোক; কে গরিব লোক; আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই তো এসব কত প্রমাণ আছে। এ সব ক্ষেত্রে ওসব অর্থহীন। মনটাই আসল। তোমার বউ যে কথা কয়, আমার বাসায় আমার হাজবেন্ডও ওই একই কথা কয়। তোমার যে চেহারা, তুমি যে লম্বা চওড়া, সুন্দর ফর্সা; শরীরের যে সুন্দর গড়ন; তুমি তো দেখতে একদম পুরো সুপুরুষ। আমার স্বামীও তোমার বউয়ের মতো বলে ফেলে। এসব নিয়ে তো অনেক অশান্তিও হয়। জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়। তোমাকে বলিনি। বলা যায়ও না। এখন কিভাবে যে এসব বলা হয়ে যাচ্ছে! আসলে এরকমই হয়; হয়ে যায়।
ফারিয়া নিজের থেকেই আবেগীকণ্ঠে প্রেমের ভঙ্গিতে আরিফুলকে বানিয়ে কথাগুলো বললো। নিজেকে, নিজের অবস্থানকে একটুও চিন্তা না করে এমনটি করে বললো, যেন আরিফুল ভেবে নেয় ম্যাডাম তার প্রেমে পড়েছে। যেন তাকে সহজেই অনুগত দাসের মতো করে ড. অনিন্দ্য অর্ঘ্যরে বিরুদ্ধে খেলাতে ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়।
আরিফুলও কাজের কারণেই সারাক্ষণ ফারিয়ার সঙ্গেই থাকে। ফারিয়ার রুমের পাশেই বারান্দায় চা বানানোর ব্যবস্থা। ফলে দিনে অসংখ্যবার ফারিয়া সামনে দিয়ে যেতে আসতে হয়। সময় পেলেই দুজনে গল্প করে; অফিস থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত; পারিবারিক এমনকি স্বামী-স্ত্রীর গল্প। আরিফুল জানে বিভাগের বর্তমান যে অবস্থা, ফারিয়া তাকে ছাড়া এখানে কিছুই করতে পারবে না, তার দিকে লোভের জিহ্বা; সেও অনায়াসেই বাড়াতে সাহস করে; ফারিয়া চেয়ার বসে তার সামনে যেভাবে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকে, তাতে তার পায়ের হাঁটু পর্যন্ত প্রায় আলগা হয়ে যায়। আবার টেবিলে যখন মাথা ঠেকিয়ে থাকে; তখন তার বক্ষ অর্ধনগ্ন হয়ে পড়ে। আরিফুলের প্রতিদিনের বাঁকাচোখে তা নেশার মতো মাদকতা ঢালে।
ফারিয়া এসব সচেতনভাবে করে না; এমনি এমনিই রোজ এভাবে থাকে; আরিফুলের হিসাবে তা থাকে না। ফারিয়ার প্রতি তার গভীর মোহ তৈরি হয়। তার মাথার ভেতর ফারিয়া কেমন এক অচেনা রোগের মতো যন্ত্রণা হয়ে ওঠে। কিন্তু শান্ত স্রোতের মতো আচরণে তা বিন্দুমাত্রও প্রকাশ পায় না।
প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান মাথা থেকে খসে যায়; সময়ের সঙ্গে তা যে একসময় খসেই গেছে; কেউই তা বুঝতে পারে না। ফারিয়ার প্রতি যে তার একটা মোহ; অন্তরে যে ভালোলাগা; তার ওপর ভর করেই নিজেও নিজের স্ত্রীর নাম করে একান্ত কথাগুলো ফারিয়াকে বলে ফেলে।
ফারিয়া নিজেও মন থেকে তা চাচ্ছিল; আরিফুলকে ছাড়া এখানে কুটিল খেলাটা কঠিন হয়ে যাবে; আরিফুলকে দিয়েই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এক একটা ঘূর্ণি বল করাতে হবে। তাতে যদি সম্পর্কের আরও গভীরে বাস্তবেও যদি নিজেকে নামাতে হয়, তবু। বাংলা বিভাগে সব কিছু আমার মতো করেই চলবে; যেভাবে আগে চলেছে; এখনো সেভাবেই চলতে হবে; তাতে জল যতটা ঘোলা করতে হয়, জলের যত গভীরে আমাকে নামতে হয়; আমি তা করতে একটুও কুণ্ঠাবোধ করবো না।
নিজের ভেতর নিজেকেই কেমন যেন এক দৃঢ়তার ওপর দাঁড় করায়; গোখরা সাপ যেভাবে নিজের শরীরে ভর করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ফণা তোলে।
এ যেন ফারিয়া আর আরিফুলের অসম সম্পর্কের অন্যরকম এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা!
চলবে…