॥পর্ব-৩॥
খুব ঘনগাঢ় রোদ ছিল সেদিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ লাইন পশ্চিম মেড্ডা এলাকায় শহরের বাইপাস রোডের পাশে অবস্থিত। ডানপাশে বড় মসজিদ রেখে একটু সামনে এগিয়ে গেলে একাডেমিক ভবন, অফিস ভবন পার হয়ে বামে উত্তর দিকে পূর্ব-পশ্চিমুখী আবাসিক ভবন। পুলিশেরা এতে থাকে, ভেতরে ক্যান্টিন-খেলার ঘর। এই ক্যান্টিনে এতটা সময় কেটেছে দারুল আরকামের দুবছর—যতটা সময় মাদ্রাসায়, এর ঠিক অর্ধেক এই ক্যান্টিনের রঙিন টিভিতে।
ফর্সা ও গড়ন দেখে তখন পাঞ্জাবি-টুপি পরলেও অনেকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলাম। যা বছরে-বছরে উন্মোচিত হয়েছে। এর বিস্তারিত বিবরণ আগামীতে সমকাম উপন্যাসে থাকবে আশা করি। কিন্তু আমার এই বালকের আকর্ষণে প্রায় প্রৌঢ়বয়সী একজন পেটমোটা পুলিশ খা-খা দুপুরে নিজের ঘরের দিকে ডাকবে, তা কল্পনায়ও আসেনি। বরং দ্রুত মাদ্রাসায় আসতে হবে ভেবে তাকে ‘পরে আসব’ বলে বিদায় নিয়েছি। পেটমোটা প্রৌঢ় পুলিশের হাস্যস্নাত বদনের ডাক শুনে কোনো অনীহাসুলভ আচরণ না করলেও মগজ খুলে দেয় আরেক পুলিশ অফিসার। র্যাংক বা নাম, কোনোটিই এত বছর পরে স্মৃতিতে নির্দিষ্ট করতে পারছি না; এমন একজন একহারা গড়নের পুলিশব্যক্তিই বিকালে আমাকে ডাকলেন। আমিও সহজাত ডাকে সাড়া দিয়ে তার কাছে গেলে, অনেকটাই দ্রুততার সঙ্গে বললেন, ‘দুপুরে যে তোমাকে ডেকেছে, তার কাছে যেও না।’ এরপর আমি আর শানে নুজুল শুনতে যাইনি। বয়সে কৈশোর আর উচ্ছ্বল থাকলেও পুরো ব্যাপারটি আমার নখদর্পণে; বিবিধ কারণ ও বাস্তবতায়। যার বিবরণ পরে করব। এরপরও পুলিশ লাইনে টিভি দেখা, বিশাল মাঠে খেলা, বিকালে আসিফের গান শোনা; সবকিছুই নিয়মিত চলতে থাকে। এই নিয়মকে খুব অযাচিতভাবেই থমকে দেন মাজহার সাহেব হুজুর। ইতোমধ্যে তিনি পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আমার চলাফেরা খানিকটা পরিশীলিত হয়ে পড়ে। তারপরও, হুজুরের লাই ছিল। দেখেও কখনো না দেখার ভান করে আমাকে বৈকালিক বিনোদনপ্রাপ্তির সাফল্যবঞ্চিত করতেন না। আমিও বেয়াড়া হয়ে চলি। মাজহার হুজুরের কাছে পিটুনি খেতে হয়নি কখনো। কিন্তু তার চোখে-মুখে রাগ দেখে-দেখে অনেক সময় রাতের খাবার খেতে সময় লেগেছে। দারুল আরকামে আমি যখন হুফফাজ জামাতে পড়ি, তখনই আমার রাতের থাকা নিশ্চিত হয় মাজহার হুজুরের রুমে। দফতরের সঙ্গে লাগোয়া কক্ষটিকে মাজহার সাহেব ছাড়া আরও দুজন থাকতেন। আর দুজন শিক্ষকই এসেছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পাস করে। স্বভাবজাত ইসলামি গজল গাওয়ার কারণে বাকি দুই হুজুরের কাছেও প্রিয়পাত্র। তবে একজন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের রাজনীতি ও মাওলানা মাজহার মহাসচিব হুজুর মুফতি আমিনীর রাজনীতি করায় তাদের বিদ্যমান দ্বন্দ্ব আমার সামনে প্রতিদিনই নিয়ম করে উন্মোচিত হতো।
খুব সম্ভবত ২০০১ সাল। এরই মধ্যে মাওলানা সুলায়মান হুজুরের কথা ও সুরে শায়খুল হাদিস ও মুফতি আমিনীর নামে দুটি সঙ্গীত গেয়ে আমি উভয় হুজুরের কাছে সমান সমাদৃত। রাজধানী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া; ফতোয়া নিষিদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে উত্তাল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলো। আর এর রেশ সবচেয়ে বেশি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। শহরের টিএ রোড থেকে কাওতলী-হুজুরদের আন্দোলনে রণক্ষেত্র। ওই বছর ৬ জন মারাও যায় পুলিশ ও বিডিয়ারের গুলিতে। ফলে মুফতি আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন। তার তুমুল জনপ্রিয়তায় আমার গাওয়া সঙ্গীত ওই সময় পুরো শহরের আলেম ও ছাত্রদের কাছে আমাকে তারকাখ্যাতি দিয়েছে। যে কারণে ২০০১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের যাওয়ার পর প্রথম মহাসমাবেশে মুফতি আমিনীকে উদ্দেশ করে গাওয়া গানটি গাইতে ছুটি থাকলেও আমার ফুফা মাওলানা নুরুল ইসলামকে দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ডেকে এনেছিলেন মাওলানা সাজিদুর রহমান। যিনি এখন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার দায়িত্বে আছেন এবং সফলতার সঙ্গে দারুল আরকামের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
আর মুফতি আমিনীকে নিয়ে গান গাওয়ার জন্য মাজহার হুজরের মণিকোঠায় আমার স্থান। আব্বার দেওয়া টাকা শেষ হয়ে গেলেও হুজুরের কাছ থেকে অবাধে টাকা পাচ্ছি। যদিও আব্বার দেওয়া টাকার হিসাব আমাকেই রাখতে হতো বলে বুঝতে পারতাম, মাজহার হুজুরের পকেট থেকে টাকা যাচ্ছে। মাস শেষে এই হিসাব হুজুরকে দেখালে তিনি কখনো-কখনো ফেরত নিতেন, কোনো মাসে পাত্তা দিতেন না। যদিও মাজহার হুজুরের খুব একটা রুজি তখন ছিল না। মাদ্রাসা থেকে সামান্য বেতন আর মসজিদের আয়। পরে শুনেছি হুজুর ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেন। এতে হাদিয়া-তোহফা ভালো আসে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনূছিয়ার ছাত্র হওয়ায় মাজহার হুজুর আমার নানা মাওলানা আবদুন নূরের সরাসরি ছাত্র। আর এ কারণে নাতি হিসেবে বাড়তি প্রাপ্তি আর আদর-খাতির আমি বেশি পেয়েছি।
দারুল আরকামের প্রথম বছরে মাওলানা শিব্বির আহমদের তত্বাবধানে, এরপর মাওলানা মাজহার। প্রথমজন প্রয়াত হয়েছেন ২০১৪ সালে। বারডেম হাসপাতালে। অসুস্থ হয়ে তাকে যখন হাসপাতালে আনা হলো, আমি ইটিভির গলিতে সহকর্মী-বন্ধু-বড় ভাইদের সঙ্গে আড্ডায় ছিলাম। খবর পেয়ে যাই, ওই রাতে তার অবস্থা ভালো থাকলেও খুব সম্ভবত পরদিন তিনি মারা যান। শিব্বির আহমদ আমার ফুফাত দুলাভাই, কিন্তু আমার কাছে তার মর্যাদার জায়গাটি ছিলো শুধু ছাত্র-শিক্ষকের। তার মুখে আব্বার গল্প, আম্মার চায়ের প্রশংসা শুনে হৃদয়ে নতুন আত্মীয়তার সম্পর্ক অনুরণিত হয়েছে সব সময়। পরবর্তী সময়ে আমি ঢাকায় এলে বড় কাটারা মাদ্রাসায় ভর্তি হই। যে বছর আমি দাখিল দেই, মানে ২০০৭। ওই বছর আমি মেশকাত জামাতে পড়ি (অনার্স ফাইনাল ইয়ার সমমান)। পুরনো লালদালানে কিছুদিন ক্লাস করি, কিছুদিন সিম বিক্রি করি। কিছুদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মধুর ক্যান্টিনে বসে বিপ্লবের নতুন আখ্যান রচনার স্বপ্ন বুনি ছাত্র ফেডারেশনের টেবিলে, বড় ভাইদের সঙ্গে।
শিব্বির আহমদ মারা যাওয়ার সময় কয়েকজন সন্তানাদি রেখে গেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এরপর আমার আপন ফুফাতবোনটি সংসারের গল্প শুনতে কখনো যাওয়া হয়নি। এমনকী ফুফাতো বোনের বড় ছেলে মুশাহিদকে দেখে বিস্মিত হয়েছি, আম্মার কাছে গল্প শুনে, যে ওঁ নাকি মসজিদে ইমাম। ভাবি, শিব্বির আহমদ বেঁচে থাকলে ওঁকে হয়তো কওমি মাদ্রাসায় স্বাচ্ছন্দ্যে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করতো। কিন্তু জানি না, ওঁর সাম্প্রতিক স্ট্যাটাস কী।
শিব্বির আহমদ হুজুর আরও একবছর আমার দায়িত্বে ছিলেন, মাদারীপুর শিবচরে জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় পড়ার সময়। দারুল আরকামের পাঠ চুকিয়ে আমি ২০০২ সালে চলে আসি মাদারীপুরে। আব্বার ইচ্ছা, রাজনীতিহীন পরিবেশে তার ছোটসন্তান পড়াশোনা করবে। এই বছরও শিব্বির আহমদ বাড়িতে আসার কথা বলায় নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ছিলেন আমাকে, অনেকটা মাদ্রাসার নতুন ভবনে লম্বা বারান্দায় দৌড়ে-দৌড়ে। এরপরও শিব্বির আহমদকে আমার মনে পড়ে, স্মৃতি ভাস্বর হয়ে বেঁচে রইবেন আ-জীবন। তার মতো সরাসরি, নিরেট চরিত্রের মানুষ আমি এই বয়স পর্যন্ত খুব কম পেয়েছি। তার পড়াশোনা, প্রকৃতি প্রতি নিবিড় আগ্রহ, ছেলেদের বুঝেও লাই দেওয়া, মেজাজবুঝে ছাত্রদের পড়াশোনা বুঝিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কারণে তার প্রতি নিবিষ্টতা প্রগাঢ়চিত্তে আবহমান থাকবে হৃদয়ে। মাজহার হুজুরের কৃতিত্ব আমার চোখে অন্যত্র। কিন্তু খুব রাগও আছে তার ওপর। এই রাগের কথা, তাকে একদিন সময় করে বলব। আমি তাকে এও বলব, আপনার পরিকল্পিত প্রবোধের কারণে কৈশোরের সমস্ত চেতনা ম্লান হয়ে গেছে এক বালকের। এক বালক এরপর কোনোদিন আর তার বন্ধুদের বিশ্বস্ততার মর্যাদা দিতে পারেনি। বিশ্বস্ততার উল্টোপিঠে সব সময় বালকের মাথাভর্তি আতঙ্ক বসবাস শুরু হয়েছে আপনার প্রবোধযন্ত্রণার পর। যে যন্ত্রণা থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারেনি এক বালক।
মাজহার হুজুর এখন কেমন আছেন, জানি না। কখনো তার কথা মনে হলে জানতে ইচ্ছে করে না। তার প্রতি অগাধ সম্মান আর ভালোবাসা। তিনি ভালো থাকুন। যেখানেই থাকুন। তবে আমার নানা প্রয়াত হয়েছেন ২০০২ সালে। ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় একদিন মধ্যরাতে বড় ভাই ডেকে তোলেন ঘুম থেকে। বলেন, আয়। রাজধানীর মুহাম্মদপুর মাদ্রাসাটির সামনে সাত মসজিদ। মোঘল আমলের এই মসজিদকে ডানে রেখে রাহমানিয়া মাদ্রাসায় যেতে হয় সরু গলি পেরিয়ে। ওই বছরে, মধ্যরাতে ঘুমভেঙে উঠে এক কাপড়ে বড় ভাই হাসান জুনাঈদের পিছু-পিছু হাঁটতে-হাঁটতে যখন গলির একেবারেই মাথায় আসি, ভাই বললেন, ‘নানা নেই।’ অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ থেকে যখন সম্বিত ফিরে পাই, দেখি সামনে ভাই নেই। আমি গলির মাথায়, ভাই মোহাম্মদপুর মাদ্রাসা মার্কেটের সামনে তিন রাস্তায়।
প্রশ্রয়, ভালোবাসা, আদর-আপ্যায়ন আর বড় করে তোলার পেছনে নানার ভূমিকা লিখে-লিখে খুব অনায়াসে রপ্ত করতে পারব না। আমাদের আব্বা-আম্মার পরিবারের চার-ছেলে-মেয়ে; সবাইকেই মানুষ করেছেন নানা ও নানি। এই দুজনের অসামান্য ভালোবাসা না পেলে পৃথিবীতে মানুষের সম্পর্কের সংজ্ঞা অপূর্ণই রয়ে যেত। আমাদের নাগরিক জীবনের যাত্রাকালের সূচনা ধরি নানার বাড়িটাকেই। মফস্বরে শহরে গাড়িঘোড়া, ইটপাকা দালান, বিশাল বেপু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেডিয়াম, স্টেডিয়ামে মেহরাব হোসেন অপিদের খেলা, রজনীগন্ধা-রূপশ্রী-চিত্রালয় সিনেমা হল, রেলস্টেশন, সার গোডাউনে পাকা সিঁড়িতে বসে তিতাসে ঢেউ গোনা, মামার কাছে শহরে কিচ্ছা শোনা, খালাতো বোন জেবুর কণ্ঠে ‘আম্মুও’ ডাকশোনা, রঙিন টিভিতে মধ্যরাতে ভারতীয় সিনেমা দেখা, কুচকুচে কালো আর আকর্ষণীয় হ্যাপিদের বাসায় ড্রইংরুম, টিএ রোডের পাশঘেঁষা কাচারী পুকুর পার, মঞ্চ ইত্যাদি দিয়েই নাগরিক জীবনের প্রথম উন্মোচন ছিল জীবনে। আর এর পুরোটাই নানার কৃতিত্ব। আমার আম্মা এই শহরেই বড় হয়েছেন। আমাদের বাড়িতে ফজরের নামাজের পর বেলায় টোস্ট বিস্কুট আর চা, বিকালে নাস্তা-চা ইত্যাদি জীবন-অববাহিকা এসেছে তিতাস নদীর মেয়ে রায়হানা আখতারের হাত ধরেই। আমাদের বাড়িতে শহুরে আচারের কিছু প্রারম্ভিকতা তার হাত ধরে আসায় এখনো আম্মাকে গর্ববোধ করতে দেখি। ভালোও লাগে।
২০০১ সালে দারুল আরকামে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটার পর থেকে মাথায় চাউর উঠে, কখন এই বেড়াজাল ছিন্ন করবো। অপেক্ষা করতে থাকি সুসময়ের। ঘটে যাওয়া ঘটনাটি যতখানি কর্মের কারণে বেদনাক্রান্ত করে, তারচে বেশি করে ব্যক্তিটির কথা ভেবে। যে ব্যক্তিটি আমার ওই মাদ্রাসার সবচেয়ে ভালোবন্ধুর মর্যাদাটি দখল করেছিলো। যার হাত ধরে পীরবাড়ি মোড় থেকে হাতধরাধরি করে মাদ্রাসার সোজারডওয়ালা গেট পর্যন্ত চলে এসেছি কতদিন, হিসেব রাখিনি। ছিল ক্লাসমেট, কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছি কত ইসলামী সঙ্গীত। তার পরিচ্ছন্ন জীবনের কত স্টাইল পছন্দ করে নিজে-নিজে শেখার চেষ্টা করেছি। আর এই কাছের বন্ধুটিকেই আমাকে আবিষ্কার করতে হয় মধ্যরাতে! এরচে অভাবিত, কল্পনাতীত, বিনাশীচরিত্র আর কী হতে পারে।
খুব সম্ভব, ২০০৬ সালের বন্যার সময় ঝাঁপ দিতে গিয়ে আহত হয়ে বিছানাশ্রয়ী হতে হয়েছে তাকে। কতদিন প্রথম ইচ্ছের কথা শুনে তাকে দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি, কিন্তু মনের ভেতরের মানুষটি তীব্রতরভাবে বাধা দিয়েছে। না, মধ্যরাতের লোভীজিঘাংসাকৃত অবয়ব আর দেখতে চাই না। তবে কেন জানি, ভুলতে পারি না।
চলবে…
u