(পর্ব-৯)
-অ্যাই রাতকানা শোন, মিলি মাহজাবীনের চলে যাওয়ার পরও সেই পথের দিকে তাকিয়ে আছে শিমুল। ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসে রাতুল আর মৌরি। মৌরি ওর কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিলে বাস্তবে ফিরে আসে শিমুল। লজ্জায় মুখটা নামিয়ে রাখে নিচের দিকে।
-শোন শিমুল, প্রেমে যখন পড়েছিস তখন তো একটা কিছু করতে হবে, না কি!
মাথা নাড়ায় শিমুল আহসান, কিন্তু আমি কী করবো? সামনে এলে আমার সব বোধ-বুদ্ধি বিবেচনা থেমে যায়। মৌরির হাতটা বুকে নেয়, দেখ হাত দিয়ে আমার হার্টবিট কত বাড়ছে?
-মাইগড! তাকায় রাতুলের দিকে, রাতুল এই পোলা তো বাঁচবে না। জাস্ট হার্টফেল করে মারা যাবে। এই দেখো ওর বুকে হাত দিয়ে।
হাসে রাতুল, তুমি হাত দিয়ে বুঝতে পেরেছো, তাতেই আমার হবে। কিন্তু ওকে বাঁচানোর দায়িত্ব তোমাকে দিয়েছি। একটা কিছু করো তুমি।
-আমি তো একটা আইডিয়া দিয়েছি। মনে হচ্ছে, এই আইডিয়ার চেয়ে বড় আইডিয়া প্রেমের ইতিহাসে আর নেই। আর এইটা করলে, প্রেম একশো ভাগ না, তিনশো ভাগ সফল হবেই হবে। কারণ, আজ পর্যন্ত হাটুমুড়ে গোলাপ দিয়ে প্রেম নিবেদন করে কোনো প্রেমিক পুরুষ ব্যর্থ হয়েছে, প্রেমের ইতিহাসে নেই। সুতরাং শিমুল, তোমাকে গোলাপ হাতে হাটু মুড়ে বসতেই হবে মিলি মাহজাবীনের দরবারে।
-বললাম তো, বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে অত ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকের মধ্যে গোলাপ হাতে হাটুমুড়ে প্রেম নিবেদন করতে পারবো না, অসহায় গলা শিমুল আহসানের। আমি শালা ঢাকা শহরই ছেড়ে চলে যাবো। আর কেন প্রেমে পড়তে গেলাম? বিশ্বাস কর, আমার যে জীবন এই জীবনে প্রেম মানায় না রাতুল।
-এই শালা এত ভেঙে পড়ছিস কেনো? আমরা আছি না?
-তোরা থেকে কোন বালডা ছিঁড়ছিস? আমি শালা ঢাকা ছেড়েই চলে যাবো।
কাঁধে হাত রাখে রাতুল, এত ঘাবড়ে যাস না। তাকায় মৌরির দিকে, শোন একটা প্ল্যান আসছে আমার মাথায়!
-কী প্ল্যান মি. গবুচন্দ্র! আদর করে মাঝেমধ্যে রাতুলকে গবুচন্দ্র ডাকে মৌরি।
-শোনো আমরা তো ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কলাভবনের তিন তলা চারতলার করিডোরে ঘুরি আর গল্প করি। তখন তো লোকজন কম থাকে…
-রাইট! মৌরি লাফিয়ে ওকে দুটো চুমু দেয় গালে, তুমি সত্যিকার অর্থেই আমার গবুচন্দ্র। বিপদে তোমার বুদ্ধি খোলে। যদিও রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কারের গবুর মাথায় ঘিলু ছিল না। শোনো নদের চান, এবার পড়ে শিমুলকে নিয়ে, আগামীকাল একটার ক্লাস হয়ে যাওয়ার পর আমি রাতুল আর মিলি মাহজাবীন হাঁটতে হাঁটতে চারতলার ওই দিকে যাবো। লোকজন থাকেই না। কেবল আমাদের মতো দুই চারজন প্রেমিক ভ্যাগাবণ্ড ঘুরে বেড়ায়। তুমি সেই সময়ে হাতে রক্তের মতো লাল টাটকা গোলাপ নিয়ে হাজির থাকবি।
ভাবনা একটাই, এত পরিশ্রম আর সাধনার পর যার হাত ধরলাম, সেই মিলি মাহজাবীন বলছে আমি কিন্তু অনেকের সঙ্গে প্রেম করছি। করছ করো, কিন্তু সেই ঘটনা শোনাচ্ছ কেন আমাকে? শরীর মন কেমন উদাস হয়ে যায় শিমুলের।
এবং পরিস্থিতি বুঝে নায়িকার সামনে গোলাপ নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বলবি, তাড়া লাগায় রাতুল, কী বলবি?
-বলবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-গাধা! একবার বলবি?
-একবার বলতেই তো আমার শক্তি সাহস সব শেষ হয়ে যাবে।
মৌরি আবার হাত রাখে শিমুল আহসানের কাঁধে, ইতিহাসে শুনেছি বরিশাল অঞ্চলের মানুষের সাহস অনেক বেশি। যারে তারে ছ্যাড়া বেড়া করে দেয়। তোমাকে দেইখা শুইন্যা তো মনে হচ্ছে না, তুমি বরিশালের মানুষ। তুমি যদি একবারই বলতে পারো, বাকিটা আমি আর রাতুল মিলে ঠিক করে দেবো। ঠিক আছে?
ঘাড় কাৎ করে শিমুল, ঠিক আছে মৌরি।
-কিন্তু একটা শর্ত আছে, দুজনার মাঝখানে দাঁড়ায় রাতুল।
-কী শর্ত?
-প্রেম হয়ে গেলে আমরা কী পাবো? তুই আমাকে আর মৌরিকে একবেলা হোটেল সোনারগাঁয়ে খাওয়াবি।
ঢোক গেলে শিমুল আহসান, বলিস কী রে রাতুল! হোটেল সোনারগাঁয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকি। আর তুই কি না
ভয়ে ভয়ে থাকিস?
-যদি হোটেলের কেউ জানতে চায়, শালা বদমাইশ বাড়ি কোথায়? গাধা মার্কা চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই বরিশাল বাড়ি। এই হোটেলের পাশ দিয়ে হাটলে ভিসা লাগে জানোস না? তোর এই হোটেলের পাশ দিয়ে হাঁটার ভিসা আছে? তুই সেই হোটেলে খাবি? ওই হোটেলে তো ছোটলোকেরা খায়। তোর আর মৌরির মতো বিদগ্ধ প্রেমিকযুগল ওই ছোটলোকের হোটেলে যাবার দরকার নাই। আমি তোদের ছালাদিয়া হোটেলে খাওয়াবো, একবেলা না তিন বেলা। সকাল বিকাল রাতে।
মৌরি হাসতে হাসতে করিডোরে বসে পড়ে।
পরের দিন পরিকল্পনা অনুসারে একটার ক্লাসের পর মৌরি, রাতুল আর মিলি তিনতলার পেছনের দিকে যায় গল্প করতে করতে। লম্বা করিডোরের একটা বাঁকে লাল গোলাপের একটা গুচ্ছ হাতে দাঁড়িয়ে ছিল শিমুল আহসান। যখনই করিডোরের বাঁকে এসেছে ওরা তিনজন, আড়াল থেকে বের হয়ে সামনে দাঁড়ায় শিমুল। মাঝখানে ছিল মিলা মাহজাবীন। দুই পাশ থেকে সরে যায় রাতুল আর মৌরি।এবার মিলির সামনে হাটুমুড়ে বসে শিমুল আহসান, হাতের গোলাপের গুচ্ছ বাড়িয়ে ধরে মিলি মাহজাবীনের দিকে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে গ্রহণ করো মিলি।
হতবাক মিলি। ডানে বামে তাকিয়ে মৌরি আর রাতুলকে না দেখে তাকায় শিমুলের দিকে। কী করবে বুঝতে পারছে না ও।
-তুমি ভালো না বাসলে আমি মরে যাবো না ঠিক, ওটা মিথ্যা কিন্তু আমি এই শহরে থাকতে পারবো না। আমার জীবনটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে মিলি। আমি আমার সকল সত্তা দিয়ে তোমাকে ভালোবাসি। আমি যেদিকে তাকাই, কেবলই তোমাকে দেখতে পাই। তুমি একটা কিছু বলো, বলো মিলি!
করিডোরের অন্য বাঁক থেকে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আসছিল। ওরা ঘটনা দেখে দাঁড়িয়ে যায়। কেবল দাঁড়িয়ে নয়, প্রত্যেকে মোবাইলে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে। দুই পাশে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মৌরি ও রাতুল সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ছাত্রদের সঙ্গে। ওরাও ছবি তুলতে থাকে।
-মিলি! বলো একটা কিছু, আমাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিও না।
-আপা, আপনি এত নির্মম কেন? ছাত্রদের পক্ষ থেকে লামিয়া এগিয়ে আসে, কী অসাধারণ ঘটনা। কেউ যদি আমাকে এমন করে প্রেম নিবেদন করতো আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যেতাম। আপা, আপনি ভাইটাকে আর কষ্ট দিয়েন না। পা ব্যথা হয়ে যাবে।
-মিলি! নে না শিমুলের ফুল। কানের কাছে যায় মৌরি, বেচারা আর কতক্ষণ বসে থাকবে একটা হাটুর ওপর!
মিলি হাত বাড়িয়ে লাল গোলাপের গুচ্ছটা নেয়। সারা চোখে মুখে লজ্জা আর অনুরাগের শিশির জমে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা হৈ চৈ করে ওঠে। দলের সেই মেয়েটা লিপি এসে জড়িয়ে ধরে মিলিকে, আপনার জন্য আজ চমৎকার একটা প্রেমের দৃশ্য দেখলাম। অবশ্য আপনি দারুন সুন্দর।
মিলি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
লিপির দলের একটা ছাত্র ওবায়দুল হাসান আসে সামনে, আয় লিপি। আপা ভীষণ লাজুক রে।
-দাঁড়া, লিপি বাধা দেয়, যাবার আগে সবাই মিলে একটা ছবি তুলি। আপনাদের আপত্তি নেই তো?
-আরে না, আপত্তি কিসের. এই ছবি বিবিসি আর সিএনএন টিভি চ্যানেলেও পাঠাবো। এসো সবাই ছবি তুলি নতুন দম্পতির সঙ্গে। হাসতে হাসতে বলে রাতুল।
ওবায়দুল হাসান প্রশ্ন তোলে, নতুন দম্পতি মানে?
-আরে ভাই লাইনে আসো, প্রেমিক প্রেমিকা জুটি কি এক ধরনের দাম্পত্য জীবন কাটায় না? এখন থেকে প্রেমিক প্রেমিকা মানেই দম্পতি, তোমার আপত্তি আছে?
-না ভাই। আমি আপনার সঙ্গে তিনশো ভাগ একমত। ওবায়দুল হাসান দাঁড়ায় লিপির পাশে, লিপি মিটি মিটি হাসে। করিডোরে সবাই লাইন বেঁধে দাঁড়ায়। মিলি লাল গোলাপের গুচ্ছ হাতে দাঁড়িয়েছিল সবার মাঝখানে। ঠেলাঠেলি আর গুতোগুতির কল্যাণে শিমুল চলে গিয়েছিল একেবারে ডান পাশে। মৌরি লাইন থেকে বের হয়ে শিমুলের হাত ধরে টেনে এনে দাঁড়া করিয়ে দেয় মিলির পাশে, এখানে দাঁড়াও বাছাধন। আজ থেকে এইভাবে পাশে পাশে থাকবে, নইলে…
মুখ ঝামটা দিয়ে নিজে গিয়ে দাঁড়ায় রাতুলের পাশে। মিলি গোলাপের ঘ্রাণ নিতে নিতে তাকায় পাশে দাঁড়ানো শিমুলের দিকে। শিমুল আগে থেকেই তাকিয়েছিল মিলির দিকে। মিলি তাকাতে ও লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকায়। ছাত্রদের দলের মহিবুল আলম ছবি তুলছিল, বলে, ভাই প্রেমিক পুরুষ প্রেমিকার দিকে তাকান। নইলে ছবি ঝাপসা আসবে।
সবাই হাসে আর একের পর একের মোবাইলে ছবি তুলতে থাকে। ছবি তোলা শেষ হলে ছাত্রছাত্রীরা চলে যায় হৈ চৈ করতে করতে। মৌরি আর রাতুলও চলে যায় মিহি হাসি দিয়ে। দাঁড়িয়ে থাকে দুজনে, পাশাপাশি। চুপচাপ দুজনে।
গোলার গুচ্ছের ঘ্রাণ নিতে নিতে সামনের দিকে তাকিয়ে নিজের মতো করে বলে মিলি, এত নাটক করার কী দরকার ছিল?
-কী করবো, আমার তো সাহস হচ্ছিল না। শেষে রাতুল আর মৌরিকে বললাম, ওরাই…
-এই নাটক সাজিয়েছে?
মাথা নাড়ায় শিমুল আহসান, হ্যাঁ। ওরা নাটক না সাজালে আমি কোনোদিনও বলতে পারতাম না তোমাকে।
-কিন্তু আমি তো অনেক আগেই জেনেছি।
-কী জেনেছ? অবাক চোখে তাকায় শিমুল আহসান।
-তুমি আমার প্রেমে হাবুডুব খাচ্ছ।
-কে বললো তোমাকে?
-কে বলবে? আমি বলছি। কী মনে হয় আমাকে? আর এখানে স্টাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি? চলো, নিচে যাই। আমাকে চুমু খেতে তো পারবে না, বদলে এক কাপ চা খাওয়াও বেশি চিনি দিয়ে। ওর দিকে কটাক্ষ দিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে, আর গোলাপের ঘ্রাণ নিতে থাকে।
হতভম্ব শিমুল আহসান কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে। দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যায় মিলি মাহাজাবীনের কাছে। মিলি ডান হাত বাড়িয়ে দেয়, ধরো।
ধরে শিমুল, সঙ্গে সঙ্গে ওর শরীরে প্রবল বিদ্যুৎ শক্তি ভর করে। এই হাত ধরার জন্য কত স্বপ্ন দেখেছি, অথচ সেই হাত এখন আমার হাতের মুঠোয়, আমি সত্যি সত্যি মিলির হাত ধরেছি?
ভাবনার মধ্যে ধমক দেয় মিলি, এত জোরে ধরছ কেন? একটা হাত নিয়ে এত হ্যাংলামো করো।
হাতটা ছেড়ে দিয়ে সিঁড়ির সামনে দাঁড়ায় শিমুল। বিরক্ত মিলি, গাধা নাকি? তোমাকে হাত ছাড়তে বলেছি না কি? বলেছি হাতটা নরম করে আস্তে ধরে রাখতে।
-ও আচ্ছা, হাতটা আবার ধরে মিলির।
আগে আর প্রেম করোনি? সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে জিজ্ঞেস করে মিলি মাহজাবীন।
থমকে দাঁড়ায় শিমুল।
-কী হলো? দাঁড়ালে কেন?
-আমি কখনো প্রেম করিনি। সাহসই পাইনি আর সময়ও হয়নি। ঢাকায় আসার পর টিউশনি…
-বুঝতে পেরেছি, গরিবের পোলা তুমি। নিজের দিকে তাকিয়ে বলে মিলি মাহজাবীন, আমি কিন্তু অনেকের সঙ্গে প্রেম করেছি।
দাঁড়িয়েই থাকে শিমুল। নিচের সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে হাতে টান পড়লে ফিরে তাকায় মিলি, নামছ না কেন?
কিন্তু দাঁড়িয়েই থাকে শিমুল আহসান। ভাবনা একটাই, এত পরিশ্রম আর সাধনার পর যার হাত ধরলাম, সেই মিলি মাহজাবীন বলছে আমি কিন্তু অনেকের সঙ্গে প্রেম করছি। করছ করো, কিন্তু সেই ঘটনা শোনাচ্ছ কেন আমাকে? শরীর মন কেমন উদাস হয়ে যায় শিমুলের। ওর ইচ্ছে হয়, ছুটে বেরিয়ে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সিঁড়ি ছেড়ে।
আজ সারা রাত ঘুম হবে না আমার। বাসায় একলা রুমে সারারাত জেগে জেগে তোমাকে তো পাবো না, তোমার এই লাল গোলাপগুলোর সঙ্গে গল্প করবো।
এক সিঁড়ি ওপরে উঠে আচমকা জড়িয়ে ধরে মিলি, সোনা আমি কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেম করিনি। আমি প্রেম করে চলেছি বিড়ালের সঙ্গে। আমি শৈশব থেকে বিড়াল পালি। একটা না একটা বিড়াল আমার সঙ্গ থাকে। কয়েকটা বিড়াল নানা কারণে মারা গেছে। যাইহোক, সেই ঘটনা আর একদিন বলবো। এখন চলো, বেশি চিনি দিয়ে চা খাওয়াবে এক কাপ। মিলি ওকে ছেড়ে দিয়ে সিঁড়ির দুই ধাপ ভেঙে ওপরে চারপাশ দেখে আবার নিচে নেমে এসে আবার জড়িয়ে ধরে চুমু খায় গালে, যদি ভালোবাসলে, তুমি হও দরিদ্রের পোলা, হও জমিদারের সন্তান আমার কিছু যায় আসে না, আমি সারাজীবন চেয়েছি যে আসবে সে যেন একজন ভালো মানুষ হয়। তুমি আমার জীবনে একজন ভালোমানুষ হয়ে থেকো।
-থাকবো, কখনো তোমার সঙ্গে প্রতারণা করবো না। জড়িয়ে ধরে বুকের সঙ্গে মিলিকে। দুজনে উপভোগ করছে দুজনের ঊষ্ণতার সৌরভ। দূরে মানুষের আসার শব্দ পেয়ে ছেড়ে দেয় দুজনকে। হাত ধরে নামতে থাকে সিঁড়ি ভেঙে।
সারাটা বিকেল সন্ধ্যা শিমুল আহসান আর মিলি মাহজাবীন ঘোরে, গল্প করে, চা খায়, শিঙ্গাড়া কামড়ায় টিএসটিজুড়ে। সন্ধ্যার পর বাসা থেকে ফোন করে মা আসিয়া রব্বানী, মিলি কোথায় তুমি? ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরতে এত দেরি করো না। গাড়িও ফিরিয়ে দিলে, ঘটনা কী?
-মা বিয়ে।
-বিয়ে? কার বিয়ে? কোথায় বিয়ে?
-মা আমার এক বন্ধুর বিয়ে। টিএসসিতেই। সব আধঘণ্টার মধ্যেই শেষ হবে। তারপরই চলে আসবো।
-কিভাবে আসবে?
-একটা রিকশায় চলে আসবো।
-রিকশায় তুমি উঠতেই পারো না।
-মা, আজ রিকশায় উঠতে পারবো। কানে মোবাইল নিয়ে কথা বললেও এক হাতে ধরে আছে শিমুলের হাত। দুজনে বসে আছে টিএসসির বারান্দায় হেলান দিয়ে। তুমি চিন্তা করো না।
-আমি চিন্তা করবো না আমার মেয়েকে নিয়ে! মায়ের গলায় উৎকণ্ঠা। শোনো, তোমার বাবা এখনো সচিবালয়ে, অফিসে। বলে দিচ্ছি, আসার সময়ে তোমাকে টিএসসি থেকে নিয়ে আসবে।
-না মা, এটা করো না। আজকের দিনটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন। অন্তত আজকের এই সময়টা আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, আমি একঘণ্টার মধ্যে ফিরছি বাসায়।
আসমা রব্বানী কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ, মেয়ে মিলি মাহজাবীন কখনো এমন করে বলেনি। কোনো আবদার করেনি। আবার কী বলছে, আজকের দিনটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন। মেয়েটা কি পাগলের পাল্লায় পড়লো? আবার বললো, টিএসসিতে বন্ধুর বিয়ে!
-ঠিক আছে, আসমা রব্বানী বললেন, আমি এক ঘণ্টার মধ্যে তোমাকে বাসায় না পেলে তোমার বাবাকে জানাবো। চেনো তো ভদ্রলোককে?
আসমা রব্বানী ফোন ছেড়ে দিলে তাকায় শিমুলের দিকে, জানো এই প্রথম মায়ের সঙ্গে মিথ্যা বললাম। আমি মিথ্যা বলি না বা কখনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আজ, এখন বুঝলাম কেনো মানুষ প্রেমে পড়ে মিথ্যা বলে। বিশ্বাস করো, মিথ্যা বলে আমার একটুও খারাপ লাগছে না। তুমি আমার জাদুকর, মাই ম্যাজেশিয়ান। আজ সারা রাত ঘুম হবে না আমার। বাসায় একলা রুমে সারারাত জেগে জেগে তোমাকে তো পাবো না, তোমার এই লাল গোলাপগুলোর সঙ্গে গল্প করবো।
চলবে…