পর্ব-৭ : নিরন্ন মানুষের ছায়া অরণ্য
এক.
পিতৃহীন মা আমার, শৈশব থেকেই বাস্তবতার নানা ঘর্ষণে বুদ্ধির দীপ্তিটা তার খুলে গিয়েছিল প্রয়োজনের তাগিদেই। মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়াবিহীন, কোল-ঝারা সর্বশেষ সন্তান, কাজেই মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বটা সুগভীর ছিল।
উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ তার ছিল না। কিন্তু নিজের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরেছেন। এতটাই বিদ্যানুরাগীছিলেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই, তাতে কি? শিক্ষানুরাগী স্বশিক্ষিত একজন মানুষ হিসেবে যেকোনো পরিবেশ বা সময়ের সঙ্গে তিনি নিজেকে মিলিয়ে নিতে দ্বিধা করেননি।
তার আভিজাত্যবোধ ও ধীশক্তি এতটাই প্রখর ছিল যে, পরিবেশ পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্তে নিতে পারতেন খুব সহজে। মায়ের ফুপাতো বোনের কন্যা কবি জাহানারা আরজু তখন মানিকগঞ্জ শহরে লেখাপড়া করেন, কবিতা লেখেন মুকুলের মাহফিলে। দু’জনেই তারা সমবয়সী। কিন্তু মা থাকেন গ্রামে, উপরন্তু তার বাবা মারা গেছেন বেশ ছোট বেলায়।
অধিকন্তু, বড় সৎ ভাই আতাহার খানের সম্পত্তি আত্মসাৎ ও প্রবঞ্চনার ঘটনায় ম্রিয়মান ছিলেন খুব। এই বঞ্চনার বোধ মাকে ভীষণ কুরে কুরে খেতো। আমার মাকে এই বঞ্চনার বিষাদ ও শোষণের ক্ষোভ দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন আব্বা। এজন্যে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী তার অপরাপর ভাই-বোনের পক্ষ হয়ে মিথ্যে জালিয়াতের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিলেন আব্বা। মামলার প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে নিয়েও কেন যেন শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন, জোড়া লাগা যেটুকু সম্পর্ক তখনো বর্তমান ছিল, তা যদি চিরতরে ভেঙে যায়, সেই কারণে সম্ভবত সরে এসেছিলেন সেই পথ থেকে।
তবে, আমার মায়ের বাবার বাড়ি যাওয়ার পথকে সহজ করতে আমার সেই আতাহার মামার বড় ছেলের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান থাকাসত্ত্বেও আমার ছোট বোন রানুকে বিয়ে দিতে আব্বা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।
শুধু মায়ের মনের স্বতঃস্ফূর্ততা ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু আমি জানি, বেদনাবাহিত মায়ের এই বঞ্চনার ফল্গুধারা কখনো যায়নি। কেননা, এই ভাইয়ের অনিচ্ছার কারণে লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি বলে সারাজীবন আপসোস করেছেন। উপরন্তু মায়ের আপন যে ভাইটি ছিল, সেই সামাদ মামাকে বাড়ি থেকে চিরতরে বিতাড়িত করেছিলেন এই আতাহার মামা। কাজেই মুখে বড়ভাইকে কিছু না বললেও কোনোদিন ক্ষমা করেননি মা।
মায়ের লেখালেখির ভালো হাত ছিল। তৃষ্ণাও ছিল অধীর। সুযোগের অভাবে বাড়তে পারেনি সেই শাখাতরু। একটি উপন্যাস লিখেছেন। তার পাতানো খুব ঘনিষ্ঠ সইয়ের প্রেম কাহিনি নিয়ে। নামকরণ করেছিলেন ‘তনিমা’।
আব্বা পূর্বাপর প্রেস ব্যবসার সঙ্গে যেহেতু জড়িত ছিলেন, সেজন্যে মা খুব আশা করে সেই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিটি আব্বার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ছাপার অক্ষরে দেখবেন বলে। নানা কাজে ব্যস্ত মানুষ আব্বা, সেই পাণ্ডুলিপিটি হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে মনের দুঃখে সেই যে লেখা ছেড়ে দিয়েছেন—আব্বাকে চিঠি লেখা, বাজারের ফর্দ লেখা ছাড়া আর কলম ধরেননি তিনি।
আমাদের তিনি মানুষ করেছেন, চোখের শাসনে, হাত চালিয়ে নয় মোটেও। একই দীর্ঘ উঠানে চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি, কিন্তু কথা বলেছি শুদ্ধ বাংলায়। বাকি চাচাতো ভাইদের মতো গালাগালি করে কথা বলার সাহস ছিল না আমাদের। একদিন আমার ছোটভাই সেলিম খুব ছোট্ট তখন, কাকে যেন শুয়োরের বাচ্চা বলেছিল, সেদিনই কেবল মাকে হাত তুলতে দেখেছি তার ছেলের গায়ে।
ঘরের মধ্যে ঘর তুলে আলাদা একটা বলয়ের মধ্যে মা আমাদের বড় করেছেন। বাড়ির তিন জন কাজের ঝি এবং ৫/৬ জন রাখালের প্রতিও ছিল তার মানবিক দরদ। মাকে যেমন মান্য করতো তারা, তেমনি ভালোও বাসতো।
ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, আমাদের মায়ের ঘরকন্নার কাজে সহায়তাকারীর একজনের নাম টুলির মা, অন্যজন আজাহারের মা। এই দু’জন ছাড়াও নিকটজনের মধ্যে পারুলের মা ছিলেন পার্টটাইম। মাকেসহ বাকি এই তিন মায়ের ত্রিধারা হেফাজতে আমার মায়ের বিরাট সংসারের সব কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হতো নির্বিঘ্নে।
আজাহারের মায়ের প্রথম কন্যা সন্তানের নাম ছিল রূপসী, পুত্র আজাহার, বেইজা ও তারণসহ চার সন্তান নিয়ে সে বিধবা হয়েছে আমার জন্মেরও অনেক আগে। তার স্বামীও আমাদের বাড়ির বছরকালিক রাখাল হিসেবে দীর্ঘকাল জীবনপাত করছে আমার বাবার জমিদারি দেখা শোনার কাজে। অকালে স্বামী হারিয়ে আজাহারের মা ছোট ছোট চারটি সন্তানের মুখে আহার জোগাতে আমাদের বাড়িতেই আমৃত্যু কাজ করেছেন।
এই নিরক্ষর, নিরন্ন, সহায় সম্বলহীন নিরুপায় মানুষটি আমাদের বাড়ির পাঁচ বেড়ার আড়ালে থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই থেকে ‘আজাহারের মা’ হিসেবেই সমাজ তাকে চিনেছিল, এটাই একমাত্র বড় পরিচয়। আমাদের গৃহ-সংসারে কাজের বিনিময়ে খাদ্যের সংস্থান করে পিতৃহীন এতিম সন্তানদের বড় করে তুলেছিলেন তিনি।
এরপর আজাহার একটু বড় হতেই আমাদের বাড়ির বছর সনকা রাখাল হিসেবে কাজে লেগে যায় বেশ ছোট বয়সে। বংশানুক্রমিক ধারায় এই পরিবার আমাদের সেবা দিয়ে গেছে প্রভূত পরিমাণে, তাদের পরবর্তী বংশধরের কেউ কেউ বিশেষভাবের প্রয়াত আজহারের বড়ছেলে রজ্জব আলী এখনো আমার ভাইদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে, বাবার অনুসরণে। প্রভু ভক্তি যাকে বলে, তা পুরোপুরি দেখিয়েছে এই পরিবারের সব সদস্য।
মনে পড়ে, চারজন সন্তান ছাড়াও আজাহারের মায়ের অন্ধ মাকেও তিনি লালন পালন করেছেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তাদের বাড়িতেই। আজাহারের মা ছিলেন ছোটখাটো গড়নের হালকা ওজনের মানুষ, কেন যেন আজো তাকে ভুলতে পারি না। তিনি যখন মারা যান, তখন আমার ঘোলা স্মৃতির বয়স। আমার অস্পষ্ট স্মৃতির মধ্যে আজো তিনি বেঁচে আছেন তীব্রভাবে।
সারাদিন কাজের পরে রাতে সন্তানাদি ঘুমিয়ে পড়লে স্বামীর কথা স্মরণ করে প্রায়ই করুণসুরে বিলাপ করে কাঁদতেন আজাহারের মা। হঠাৎ হঠাৎ মধ্যরাতে তার কান্নার সুরেলা এক উষ্ণ-ধ্বনিতে আমার ঘুম ভেঙে যেতো। মনে হতো অন্ধকার রাতের প্রকৃতি এসে আমার গলা চিপে ধরেছে যেন। গা ছম ছম করে উঠতো আমার। তখন মাকে জিজ্ঞেস করতাম, এভাবে এত রাতে কাঁদে কেন মা?
মা বলতেন, অকালে স্বামী মরে গেলে এভাবেই কাঁদে মেয়েরা।
২০১৬ সালে রফিক আজাদের প্রয়াণের পরে আজাহারের মায়ের সেই মিহি কান্না যেন আমাকে দখল করে নিয়েছিল আমুণ্ডপদনখে।
বৈধব্যের বিরামহীন দুঃখের সেই ক্রন্দনধ্বণি যেন এক জীবনে কখনো শেষ হয় না। বাঁশঝাড়ে ঘেরা আজাহারের মায়ের কুঁড়ে ঘরটি আজও জেগে আছে তার পরবর্তী প্রজন্মের বসতবাটি হিসেবে। সর্পবিষের মতো এক শীতলতা এবং আলেয়ার নির্জনতা ভেঙে বাঁশপাতার সজীবতা চূর্ণ করে তার বোবা কান্নার করুণধ্বনি এতকাল পরেও আমার বুকের মধ্যিখানে এসে ধাক্কা খায় বারংবার।
তবু শেফালি আমার রাত্রি দিনের খেলার ছিবুড়ি, পড়াশোনার জন্যে গ্রাম ছাড়ার আগ পর্যন্ত সেই আমার বন্ধু স্কুল থেকে ফেরার পরে।
আমার বুদ্ধি হওয়ার পরে থেকে আজাহারকে আমাদের বাড়িতে বছর সনকা রাখাল হিসেবে চাষাবাদ করতে দেখেছি। ওর ভায়েরাও ‘প্রতিরোজ’ হিসেবে কামলা দিতো। বিশেষভাবে ফসল তোলার মৌসুমে, ক্ষেতের নবীন ফসলের আগাছা উৎপাটনের সময়ে। গভীর রাতে আজাহার আমাদের বাংলা ঘরে শুয়ে মাঝে মাঝে গান ধরতো, ‘ও দুঃখ কান্দিলেও আর যায় না’—আমার শৈশবের মনোভূমি নিরন্ন মানুষের করুণ দুঃখ-সঙ্গীত প্লাবনে স্নাত ছিল। এজন্যে পরের দুঃখ বেদনায় ছোট বেলা থেকেই খুব কাতর ছিলাম আমি।
দুই.
টুলির মায়ের প্রথম ঘরের মেয়ে টুলি আমার সমান বয়সী, আমার খেলা-ধুলার নিত্যসঙ্গী। অজানা কারণে তার প্রথম বিয়ে ভেঙে গেলে সুন্দরী টুলির মায়ের দ্বিতীয়বার বিয়ে হয় আমাদের পাড়ার সুদর্শন অবিবাহিত যুবক মের্ধার সঙ্গে। দ্বিতীয় ঘরে আরশেদ নামে চার বছরের ছেলের পরে তৃতীয়বার সে সন্তানসম্ভবা। স্বামী ততটা রোজগেরে নয় বলে সংসারে টুলির মাকেই আহার জোগানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। মের্ধা স্বামী হিসেবে সুদর্শন হলেও কাজে অপটু। একদিন কাজে গেলে, দুদিন বসে খায়। শিল্পীর অলসতা যেন তার অস্থি-মজ্জাজুড়ে। এ নিয়ে নিত্যই ঝগড়াঝাটি। তবু সে চুপ।
পারুলের মায়ের স্বামী একদা কলকাতায় প্রেসে চাকরি করতো। দেশ ভাগের পরে সেই যে এসেছে, আর কোনো ধারাবাহিক চাকরি সে করেনি। তবে মাঝে মধ্যে স্ত্রীর বকুনি শুনে ঢাকায় গিয়ে কিছুকাল আত্মগোপনে থেকে ফিরে আসতো শূন্য হাতে। তারও অলসতার রোগ নিয়ে এন্তার অভিযোগ তার পারুলের মায়ের। মিয়া বাড়ির ঝগরুটে বউ হিসেবে সারা পাড়ায় পারুলের মায়ের দুর্নাম ছিল। শরিকের সঙ্গে কোনো কারণে ঝগড়া বাঁধলে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তা টেনে নিতো অবিরাম কথার পৃষ্ঠেকথা সাজিয়ে। এরকম বিরামহীন ঝগড়া আমি আগে কখনো শুনিনি। প্রয়োজনবোধে পরের দিন সকালে উঠে পুনরায় শুরু করতো। আমার বাবার চাচাতো চাচা, আমাদের সবার একমাত্র জীবিত দাদা, নাম তার হজরত আলী। পাড়ার সবাই তাকে হজু দাদা বলে ডাকতো। তার প্রথম পক্ষের ছেলে মদন চাচার বউ ছিল এই পারুলের মা।
পারুলের মা অধিকাংশ সময়ে ঢেঁকিতে ধানভানার কাজ করতো। তার দ্বিতীয় কন্যা শেফালি ছিল আমার সমবয়সী। আমার খেলার সঙ্গী। ওদের কুঁড়েঘরের মাচান থেকে একদিন একটা চটি বই সে আমাকে দেখিয়েছিল। মেম সাহেবাদের যৌনকর্মের ছবি। মনে হয় মেমদের পোষা কুকুরের সঙ্গেও দুই/একটি ছবি ছিল সেখানে। শৈশবে হঠাৎ এরকম ছবি দেখে মনে হয়েছিল দৈত্যের মতো আতঙ্কিত—এই আমি কী দেখলাম?
ভয়ানক এক অন্ধকার জগৎ যেন অদৃশ্য এক থাবা তুলে মুহূর্তে ধেয়ে আসছে আমার দিকে। গ্রাস করতে চাইছে আমার সত্য, সুন্দর, সব শুভময়তার পবিত্র চরাচর। জলাতঙ্কের রোগীর মতো আমার অবস্থা। এ কী দেখিলাম আমি?
হতবাক আমি পাথরের মতো স্তব্ধ যেন। এক মুহূর্তে ৪/৫টি ছবি দেখিয়েই শেফালি চট করে বইটি আমার চোখের আড়ালে নিয়ে বললো, আব্বা কলকাতা থেকে এই বই এনেছে। আমার হাতে এই বই দেখলে মা আমারে মাইরা ফেলবো। ওর আর কোনো কথা না শুনেই দৌড়ে আমি দ্রুত বেরিয়ে আসলাম ওদের ঘর থেকে, শত সহস্র পাপের আড়ৎ থেকে।
তবু শেফালি আমার রাত্রি দিনের খেলার ছিবুড়ি, পড়াশোনার জন্যে গ্রাম ছাড়ার আগ পর্যন্ত সেই আমার বন্ধু স্কুল থেকে ফেরার পরে।
মাসে দু/একবার ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে আব্বা জমাজমির তদারকি ও চাষাবাদের খোঁজ খবর করে যেতেন নিয়মিত। আব্বা বাড়িতে এলে মিয়াবাড়ির চারপাশ যেন আব্বা আব্বা গন্ধে ভরে যেতো মুহূর্তে। সেই গন্ধটা প্রাণ ভরে নিতেই আমি আর আমার ছোট ভাই সেলিম আব্বার চারপাশে ঘুর ঘুর করতাম সারাক্ষণ। এমনকী তার পাঞ্জাবিটি খুলে মায়ের খাটের যে পাশটিতে ঝুলিয়ে রাখতেন—সেখানে গিয়ে তার শাদা পাঞ্জাবিটি শুঁকতাম নাকের কাছে নিয়ে। আব্বা কী ব্র্যান্ডের সিগারেট খেতেন তখন, তার নাম জানতাম না, তবে সবটা মিলিয়েই আব্বা যে ঢাকা শহরের আনকোড়া নতুন এক সৌগন্ধ নিয়ে আসতেন, সেটি আমার ছোট্ট মনের খুব গভীরে জল থই থই নতুন আষাঢ়ের বার্তা বয়ে নিয়ে আসতো। পরের দিন সকালে উঠেই দেখতে পেতাম রাজহংসীর মতো আমার মা মাথায় ভেজা তোয়ালে জড়িয়ে উঁচু করে খোঁপা বেঁধে সকালের ঝিলিমিলি রোদের আলো মুখে লেপ্টে আব্বার জন্যে ডিম পরোটা নাস্তা বানাতে রান্না ঘরে ব্যস্ত সমস্ত এক নারী। আব্বার উপলক্ষে আমরাও ভালো নাস্তা পাবো আজ, সেই আনন্দে ফুরফুরে হাওয়া খেলে যেতো আমাদের ভাই-বোনদের মনে। দুদিন বাদে আব্বা চলে গেলেই মায়ের কঠিন অনুশাসনের অধীনে আমাদের রুটিন মাফিক জীবন শুরু হয়ে যেতো। মাকে ভয় পেতাম দুর্দান্ত। তার চোখের দিকে তাকাতে সাহস ছিল না আমাদের ভাই-বোনদের কারও। মা কখনো আমাদের মারেননি, মুখ ফুটে মা আমাদের কোনো গালিও দেননি কোনোদিন। একটু কঠিন মুখ করে আমাদের দিকে তাকালেই আমরা বুঝে যেতাম—আমাদের কী করা উচিত এই মুহূর্তে। মায়ের সারাজীবনের কঠিন শাসন মনে আছে, তবে কোনোদিন তিনি যে আমার দিকে নরম চোখে তাকিয়েছেন কিংবা আদর করে কোথাও একটি চুমো এঁকে দিয়েছেন, তা কিন্তু মনে পড়েনি সহসা। মায়ের পরশের, স্নেহের এই অভাব বোধ আমি অনুভব করেছি ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে। তখন আমি আমাদের সবার বড় বোন বড়’পার কাছে থেকে পড়াশোনা করি। বড়’পাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপা, মা কী আমাকে কখনো চুমু খেয়েছে?
আপা তো হেসে কুটিপাটি আমার প্রশ্ন শুনে, কোনো মা সন্তানের মুখে চুমু খায়নি, তাই কী হয় কখনো?
-তবে আমার যে মনে পড়ে না?
-আয় আমি তোকে একটা চুমু দিয়ে দিই। বলেই বড়’পা আমাকে কাছে টেনে নিলেন। আমি লজ্জায় তখন লাল।
এই বোনই আমার সব জ্বালাতন সহ্য করে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে এখানে এনেছেন। তাকে আমি শেষের দিকে বড়’পা বলতে গিয়ে মুখ ফসকে ‘মা’বলে ফেলতাম প্রায়শ। ঈদে, পার্বণে, কচিত কোথাও দেখা হলে বড়’পাকে কদমবুচি করে দাঁড়াতেই আপা আমার মুখটা সস্নেহে দুহাতে টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেতেন সন্তানের মতো।
এমনকী মৃত্যুর আগে আমার তিন ভাইয়ের হাত আমার হাতে সঁপে দিয়ে বলেছেন, ‘আমার এই দিলুমাকে সঙ্গে রেখে তোমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে মনে করবে আমারও তাতে সম্মতি থাকবে এবং আমার আত্মাও শান্তি পাবে।’
আমাদের মাও তার পড়ন্ত বয়স থেকে সন্তান, নাতি-নাতনি সবাইকে সস্নেহে জড়িয়ে ধরে আদর করেন, চুমু খান কপালে আর কপোলে। প্রকাশ্যে আদর করলে সন্তান হয়তো মায়ের শাসন মানবে না, সেই দ্বিধা ও জড়তা তিনি কাটিয়ে উঠেছেন আমাদের লেখাপড়া শেষ হলে, তবেই।
তিন.
চার ভায়ের মধ্যে আমার আব্বা ছিলেন মেজো। বাড়ির মধ্যেখানে টানা লম্বা উঠোনের একপাশে চার ভায়ের জন্যেই দক্ষিণ দরোজার একটি করে শোবার বড় ঘর, অন্যদিকে দ্বিতীয় ঘরটি সামান্য ছোট। সেই ঘরটির নাম ছিল দক্ষিণ ভিটার ঘর। আমাদের ছোটদের পড়াশোনা, আড্ডা সব চলতো সেই ঘরে। বড় ঘরটি মায়ের শয়ন মন্দির বলে তার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য ছিল অন্য রকম।
তবে, তা সমান দূরত্বে, সমান পরিমাপে চার ভাইয়ের আটটি ঘর পর পর একই রকম তৈরি বলে, ছবির মতো ছিল দেখতে। বাইরের বাড়িতে চার ভাইয়ের পরিবারের জন্যে কমন একটি বড় বৈঠকখানা ঘর ছিল। বিশাল একখানা মহিষের শিং, তিনটি হরিণ-সিং, বাঘ ও হরিণের চামড়া মোড়ানো কোচ ও পিতলের ঢাল-তলোয়ার দিয়ে সাজানো ছিল বৈঠক খানাটি ‘মিয়াবাড়ি’র বৈঠকখানা ঘরের আলাদা দরবারি এক মেজাজ ও আবহ ছিল। যা জমিদারি-প্রথা উচ্ছেদের হাহাকার নিয়েও দীর্ঘদিন টিকেছিল সগৌরবে। এই গৌরব গাথাটুকু গ্রামের সবার কাছে মিয়াবাড়ির আলাদা এক মান-মর্যাদা প্রতীক ছিল।
কালের গহ্বরে একদিন সভ্যতাও বিলীন হয়ে যায়। জমিদারি চলে যাওয়ার পরে বৈঠকখানা ঘরটি অধিকাংশ সময়ে রাখাল চাকরের অধিকারে থাকতো। তাদের খাওয়া দাওয়া, বিশ্রাম, বিনোদন, ঘুম সবই চলতো বৈঠকখানাকে ঘিরে।
কেবল আব্বা বাড়িতে থাকলে, সকালে অথবা বিকালে গ্রামের লোকজন মাতুব্বর হিসেবে আব্বার কাছে বিচার শালিস বা কোনো অভাব অভিযোগ নিয়ে কেউ দেখা করতে এলে বৈঠকখানাটি আব্বা ব্যবহার করতেন। অন্যসময় আমাদের পারিবারিক আড্ডা হতো আমাদের বড় ঘরের বারান্দায় বসে। প্রচণ্ড গরমের সন্ধ্যায় আব্বা শীতলপাটি বিছিয়ে আমাদের নিয়ে উঠানে বসতেন, তারায় মুদ্রিত রাতের খোলা আকাশ আব্বার খুব পছন্দের ছিল। কখনো বা এই রাতের খোলা ঘননীল আকাশের নিচে শুয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে তন্দ্রায় চোখ মুদতেন। মা তখন আব্বার পাশে বসে হাত পাখা ভিজিয়ে তাকে বাতাস করতেন, আর মিহি স্বরে কথা বলতেন। অসম্ভব রোমান্টিক মানুষ ছিলেন আমার আব্বা। যৌবনে অসম্ভব ভালো সেতার বাজাতেন। বর্ষাকালে যখন চাষ-আবাদের কাজ থাকতো না তখন বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর পানসী নৌকা ভাড়া করে মাকে নিয়ে নৌকাবাস করতেন। সদরঘাটে স্থাপিত আব্বার প্রেসের কাছাকাছি ঘাটেই বাঁধা থাকতে পানসীটি। প্রেসের কর্মচারী কলম আলী রান্না করে নৌকায় খাবার পরিবেশন করে যেতো নিয়মিত। এই কলম আলীই আব্বাকে পঁচিশ হাজার টাকায় ধানমন্ডিতে পঁচিশ বিঘা জমি কিনতে খুব অনুরোধ করেছিলেন। আব্বা শোনেননি। ওই একই টাকায় আব্বা আমাদের পাশের গ্রামের ডাউটিয়াতে পঁচিশ বিঘা জমি কিনেছিলেন।
আমরা তিন বোনই বড়, ভাই খুবই ছোট। কাজেই আব্বার ধারণা ছিল, যার পুত্র সন্তান বড় নেই, তার সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। শেষ বয়সে আব্বা যদি গ্রামে বাস করেন, তাহলে পুত্র ব্যতিরেকে ঢাকায় এসে তার সম্পত্তি দেখভাল করবে কে? তখনো পর্যন্ত কন্যাসন্তানদের সক্ষমতার কোনো উদাহরণ ছিলো না ওই সময়ে।
কাজেই কন্যা সন্তানেরা তো সম্পত্তি রক্ষা করতে পারবে না—এরকম ধারণা পোষণ করাও আব্বার জন্যে অমূলক ছিল না। কাজেই বাড়ির কাছেই সম্পত্তি ক্রয় করা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেছিলেন তিনি। তবে বুঝতে হবে আমার আব্বার বুদ্ধি ওভাবনার, চিন্তার সময়কালটা ছিল ১৯৪৭ কিংবা ১৯৪৮ সাল।
প্রথমদিকে আমরা তিন বোন ছিলাম বলে আব্বা খুব হতাশ ছিলেন। উপরন্তু আমার জন্মের আগে ফারুক নামে এক ভাই জন্মেছিল। সব চিকিৎসা অসার প্রমাণ করে ছয়মাস বয়সেই ভাইটি আমার ডাইয়েরিয়া হয়ে মারা যায়। সদ্য স্বাধীন দেশের সবচেয়ে সেরা ডাক্তার নন্দীও তাকে বাঁচাতে পারিনি। এর দু’বছর পরে আমার জন্ম। শোকসন্তপ্ত মায়ের কোলজুড়ে স্বপ্নের আনন্দনিয়ে এলেও দু’মাস পর্যন্ত আব্বা বাড়িতে যাননি, আমার মুখ দেখেননি অভিমানে। বড় হয়ে যখন তা জেনেছি আমারও অনেক অভিমান হয়েছিল বাবার প্রতি। পরে অবশ্য আব্বা সংসারের যাবতীয় সিদ্ধান্তে আমার মতের অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দিয়ে গেছেন আমৃত্যু। এমনকী মৃত্যুর আগে আমার তিন ভাইয়ের হাত আমার হাতে সঁপে দিয়ে বলেছেন, ‘আমার এই দিলুমাকে সঙ্গে রেখে তোমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে মনে করবে আমারও তাতে সম্মতি থাকবে এবং আমার আত্মাও শান্তি পাবে।’ পুত্র সন্তানের ওপরে স্থান দিয়ে গেছেন এই কন্যা সন্তানকেই। এতটাই আধুনিক দ্রষ্টা ছিলেন আমার বাবা।
এত কষ্ট করে তারা সন্তানের জন্ম দেয়? খাওয়া পরার সংস্থান নেই তবু তারা সন্তান জন্ম দিয়েই যাচ্ছে, ক্রমাগত, ক্রমাগত যাবে?
মা আমার মহিয়সী নারী। সন্তানদের সমুখে সব সময় আব্বাকে আপনি করে বলতেন, কিন্তু চিঠিপত্রে হে প্রাণনাথ, তুমি আমার হৃদয় বল্লব, আব্বাকে লেখা এরকম বহু চিঠি আমি মায়ের তোরঙ্গ হাতিয়ে পড়েছি সেই কৌতূহলী শৈশবেই। কিন্তু আমার আব্বা রেগে গেলে মাকে ‘আপনি’ করে বলতেন অন্য স্বাভাবিক সময়ে তুমি, ওগো, হ্যাঁ গো চলতো তাদের।
চার.
আমাদের স্কুল ছুটি হতো চায়টায়, চারটা মানে, ঘন দুধে মায়ের পায়েশ রান্নার বিকেল। সামান্য হাঁটা পথের দূরত্ব মাড়িয়ে বাড়িতে পৌঁছতাম চারটা দশ/পনেরো মিনিটের দিকে। বইখাতা টেবিলে রাখতে না রাখতেই মা সেদিন বললেন, ‘যাও তো টুলির মাকে একটু ডেকে নিয়ে আসো। ছেলে মেয়ের জন্যে দুপুরের খাবার নিয়ে সেই যে, কখন গিয়েছে বাড়িতে, এখনো আসার নাম নেই। বেলা পড়ে যাচ্ছে, ধানগুলো তুলবে আর কখন? ঢেঁকিতে চালের গুঁড়োই বা কখন করবে, রাতের রান্না কী ব্যবস্থা হবে? কোনো খেয়াল নেই’ ওদের।
আমাদের বাড়ির পূর্বদিকের ৩/৪ শরিকের ঘরের পরেই টুলির মায়ের কুঁড়ে ঘরখানা উঠের পিঠের মতো সদা ম্রিয়মান। পাটখড়ির বেড়া, বাবুই পাখির মতো ছনের ছাউনি। দরোজা বলতে একখানা ঝাঁপ দিয়ে ঢেকে রাখার মতো আড়াল। টুলির মায়ের স্বামীমের্ধা দেবর লালচান, কালু, বোবা আর ননদ মিলে ৪/৫ শরিকের একখানা করে কুঁড়েঘর জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মানদীর মাঝি-পাড়ার মতো। ঘরের কোণায় লাগোয়া ঘর, এক চিলতে উঠোন, তার মধ্যে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী—কী নেই।
টুলির মায়ের ঘর-বরাবর তাকাতেই মনে হলো তালাই বাঁশের ঝাঁপখানা যেন টেনে দিয়ে দরোজার মুখটা ঈষৎ ঢেকে রেখেছে কেউ। পড়ন্ত দুপুরের চিকন রোদ এসে পড়েছে সেখানে। পুরো বাড়িটাতেই যেন চিৎকাত রোদের মহরা চলছে। কেমন যেন আদি-ভৌতিক এক জলাশয়ের পারে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম এক স্তব্ধতা। বাড়ির আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে ঝাপখানা বাহাতে সামান্য সরিয়ে উঁকি দিতেই দেখি, এক রহস্যময় আলোর কুণ্ডুলি হয়ে টুলির মা ঘরের মধ্যে একা বসে আছে। আলো-আঁধারি ভেদ করে দৃষ্টি ফেরাতেই দেখি, দুহাত দিয়ে উপুড় করা একখানা বড় ধামা জড়িয়ে ধরে টুলির মা উবু হয়ে প্রসব বেদনায় নিঃশব্দে কাতরাচ্ছে। মধ্য সমুদ্রের ঢেউ এর মধ্যে বিভাজিত টুলির মা সৃষ্টি প্রক্রিয়া পরম্পরা প্রাণান্তকর ব্যথার গর্জনে পীড়িত।
প্রসূতি নিজেই গর্ভের অন্ধকার মাড়িয়ে সন্তানটিকে অদম্য আলোতে আনতে চেষ্টা করছে, আকাঙ্ক্ষিত পৃথিবীর এক সুবর্ণ তরুতলে। সে কি ভয়ানক দৃশ্য—আমার বয়সী একজন শিশুর জন্যে। তবু তাকিয়ে দেখছি, ঘেমে সে নেয়ে গেছে ইত্যবসরে। কিন্ত কাছে যেতে সাহস পাচ্ছি না কেন যেন।
এই দৃশ্য যে আমি দেখে ফেলেছি, এটিও আমি তাকে জানতে দিতে চাইছি না। এই বয়সে কোনো শিশুর ভূমিষ্টকাল দেখাও যেন অপরাধ। এমন প্রদোষকালীন গর্হিত গোপন গহবর দেখার অপরাধ যেন আমারই। তাৎক্ষণিকভাবে তার শাশুড়ি, ননদের কাউকে ডেকে দেওয়া আমার উচিত বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু মনে মনে খুব ভাবছিলাম, এই সময়ে তো গ্রামের দাইমার সাহায্য নিয়ে থাকে সবাই। কিন্তু টুলির মা তাকে ডাকেনি কেন? পরে জেনেছি, সাহায্যকারী হিসেবে যদি শাশুড়িকেও ডাকে, নিয়মানুযায়ী তাকেও একখানা শাড়ি দিতে হয়। এই খরচটুকু সে বাঁচাতে চেয়েছিল দুর্মরভাবে নিজের জীবনের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও। কারণ তার দারিদ্র্য। সম্ভবত, সে কারণেই কাউকে সে ডাকেনি।
কিন্তু সৃষ্টি-প্রক্রিয়ারত টুলির মায়ের ওই দৃশ্য চোখে দেখার পরে ভয়ে আমি চিৎকার করে সবাইকে ডেকে এক করে ফেলেছিলাম। তবে, সবাই জড়ো হতে না হতেই তার সন্তানটি মায়ের সহায্যে, মায়ের গর্ভ আঁধার থেকে একাই বেরিয়ে এসেছিল পৃথিবীর আলোক স্নানে। আমার মাকে দৌঁডে এসে খবরটা জানালাম, মা, টুলির মায়ে একা ঘরে একটা বাচ্চা দিয়েছে, ছেলে বাচ্চা। নাম বুচাই। ওর নাকটা খুব ছোট, তাই সবাই বুচাই বুচাই বলে ডাকছিল।
মা আমার কথার মধ্যে পথে থামিয়ে দিয়ে বললেন, বাচ্চা নয়, বলো সন্তান। কুকুর, বেড়াল, হরিণ, বাঘের বাচ্চা হয়। মানুষের পেটে জন্মায় সন্তান। কিন্তু সবাই যে, বাচ্চা বলে? ভুল বলে। না জেনে বলে, সবাই বলে, তার দেখা দেখি অন্যেরাও বলে, তাই ভুলই বেশি চলে।—আমি মায়ের কথাগুলো এক/আধবার ভাবতেই মন চলে যাচ্ছে টুলির মায়ের রহস্যময় কুঁড়েঘরটিতে।
যেখানে কিছুক্ষণ আগে জন্ম নিলো এক মানব সন্তান। টুলির মায়ের সেই অসহায় মুখে যেন আমারই অপর আর একটি মুখের আদল। আমি নিজেও তো একজন মেয়ে—তাহলে আমাকেও বুঝি এভাবে সন্তানের জন্ম দিতে হবে? মেয়েদের জীবনে এত কষ্ট? এত কষ্ট করে তারা সন্তানের জন্ম দেয়? খাওয়া পরার সংস্থান নেই তবু তারা সন্তান জন্ম দিয়েই যাচ্ছে, ক্রমাগত, ক্রমাগত যাবে?
বহুদিন পরে মনে পড়লো আজ জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত ‘বোধ’ নামক কবিতাটি। দীর্ঘ কবিতার কয়েকটি চরণ ছিল এ রকম,
জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মতো হয়ে,
সন্তানের জন্ম দিতে দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়,
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়
যাহাদের; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজক্ষেতে
আসিতেছে চলে জন্ম দেবে—জন্ম দেবে বলে
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি?
তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী।