[পর্ব—১২ ভালোবাসার টানাপড়েন]
এক.
মির্জাপুরে খালার বাড়ির দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ এক অভিনব পরিবেশে আমার পাঠযাত্রা শুরু হলো জ্ঞান অর্জনের বিপ্লবী বাসনায়। অপরিচয়ের বন্ধনমুক্তির পাশাপাশি চললো নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার যুদ্ধও। চেষ্টা করছি প্রতিপলে। কেন যেন কারও সঙ্গে কোনো হৃদ্য অনুভব করিনি দীর্ঘদিন। পাটকাঠিতে চিমটি এঁকে দিন গণনা করি বালিকা বধূর মতো। ছুটি হলেই বাড়ি যাবো কবে, সেই আশায় বসে থাকি।
স্বর্গোদ্যানের মতো মায়ের অনিন্দ্য কান্তিময় মুখের সঙ্গে বারবার ধাক্কা খাই, নিভৃতে কাঁদি। আমাদের দীর্ঘ উঠোনজুড়ে খেলার সঙ্গীদের নিয়ে ছি-বুড়ি খেলার স্বপ্ন দেখি। দিবাস্বপ্নে বাঁচি, তবু এখানে কাউকে শোনাই না সে মনখারাপের সংগীত। স্কুল ছুটির ঘোষণার আগেই আব্বাকে পোস্টকার্ডে লিখে জানাই। আব্বা আমাকে দেখতে আসেন। আমার চিঠি পেয়েই এই যাত্রা আব্বা আমাকে দেখতে এসেছেন বলে খালা-খালুকে জানিয়ে দেন অকপটে।
আব্বাকে চিঠি লিখেছি বলে বড়মা ক্ষুব্ধ হোন। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলেন, ‘খায়-দায় পোকটি, বনের ধারে চোখটি’। বুঝতে পারি তাদের ক্ষোভের কারণ। এখনো আমি তাদের কেন আপন ভাবতে পারছি না, সেই অভিযোগ যেন ঘুরেফিরে আমার দিকেই আঙুল তোলে বারবার। কাজেই আমি আরও বেশি একাকিত্ব বোধ করি। পড়ার টেবিলে বসে আর চিঠি লিখি না, থানার পুকুরে যাই গোসল করতে। ওখানে যে পোস্ট অফিস আছে, সেখানেই দাঁড়িয়ে এক পয়সা দিয়ে পোস্টকার্ড কিনি। দ্রুত কিছু কথা লিখি আব্বার ঠিকানায়, টুপ করে লাল চিঠির বাক্সে ফেলে দিয়ে ফিরে আসি বাসায়। বড় মা যেন বুঝতে না পারে, তাই।
এই একটিমাত্র ঠিকানাই মুখস্থ ছিল শিশুকাল থেকে। দ্বিতীয় শ্রেণীর বয়সে খুলনা থেকে এই ঠিকানায় আব্বাকে প্রথম লিখেছিলাম বিয়ারিং চিঠি, অতপর এখন প্রায়ই পোস্টকার্ডে লিখি।
আমাদের বাড়িতে সব সময় শিক্ষকেরা জায়গির থেকেছেন। ধর্মশিক্ষার মৌলভি, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, হাইস্কুলের এমনকী আব্বার নামে যখন আমরা কলেজ প্রতিষ্ঠা করি, তখনো ২/১ জন কলেজ শিক্ষক আমাদের বাড়িতেই থাকতেন জায়গির হিসেবে। জায়গিরের অধিকার ও নিয়ম-কানুন আমার জানা ছিল। তারা আমাদের প্রাইভেট টিচারের মতো সন্ধ্যাবেলায় ২/৩ ঘণ্টাব্যাপী পড়াতেন। বাড়ির ছেলেদের বাইরে বা রাস্তা-ঘাটে দুষ্টুমি করতে দেখলে শাসনও করতে পারতেন।
খালার বাড়ি হলেও অপরিচয়ের গন্ধবিধুরধূপে নিজেকেও মনে হতো জায়গির। আমিও বোধ হয় জায়গির আছি। প্রথমদিকে তো অবশ্যই। তবু দুপুরে ও রাতে সবার সঙ্গে এক পাটিতে বসে খাওয়া নিয়ম ছিল। পাশা ভাইকে আগে মুখে তুলে খাইয়ে দেন বড় মা, কখনো খালুজান নিজে।
পুলিশের খাকি পোশাকে আবৃত, লাঠি হাতে খালু জান যখন ডিউটি শেষে ঘরে ফিরতেন, আমার কেমন ভয় ভয় করতো। এরআগে কখনো পুলিশ দেখিনি। ভয়ঙ্কর পুলিশের গল্প শুনে বড় হয়েছি, কিন্তু আত্মীয় পুলিশ কেমন হয়, জানতাম না তখনো।
এক বর্ষাকালে আমাদের বাড়িতে চুরি হয়েছিল। আমি খুব ছোট। তবু মনে পড়ে, হালকা স্মৃতির মধ্যে নিমজ্জিত অন্য গ্রহের অচেনা মতো এক পুলিশকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন। মানিকগঞ্জ থানা থেকে নৌকা করে পুলিশ এলো জনাচারেক। মুহূর্তেই সারাগ্রাম রাষ্ট্র হয়ে গেলো মিয়া বাড়িতে পুলিশ এসেছে, যে যার মতো পালিয়ে বাঁচলো যেন। বর্ষার জল ঠেলে আসতে তেমন সাহস করেনি কেউ।
পুলিশের নাম শুনেই আমার মেজোপা, কাঁথামুড়ি দিয়ে দরোজায় খিল তুলে সেই যে শুয়ে পড়েছে, আমার শত ডাকেও উঠছে না। মা, রাখালের হাতে চা-বিস্কুট পাঠিয়ে দিলো বাংলাঘরে আপ্যায়নের জন্যে। চা খেতে খেতে তারা আমাদের বাড়ির আট/দশজন রাখালের অনেককে জেরা করলো।
পরে পুলিশের সন্দেহ ঠিকরে পড়লো আমাদের বাড়ির রাখাল জহুরউদ্দির প্রতি। মধ্যবয়েসী জহুরউদ্দির বাড়ি আমাদের দুই গ্রাম পরে আশাপুরে। ছোটকাল থেকেই সে আমাদের মায়ের অংশের রাখাল।
সিরাজ ভাই বাড়িতে নেই সেদিন। এদিকে আব্বার চোখের অপারেশন হয়েছে ঢাকায়, ফলে বাড়িতে চুরির খবর পেয়েও তিনি আসতে পারেননি। পুলিশের সঙ্গে কথা বলার মতো বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষও উপস্থিত নেই। ইতোমধ্যে জহুরউদ্দিকে পুলিশ নৌকায় তুলেছে থানা নিয়ে চালান করে দেবে বলে।
জলি ও তার ভাইয়েরা মিলে মাকে ঘিরে এলোমেলো গোল আড্ডা দিচ্ছিল, সবাই মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলতে ছিল।
জহুরউদ্দিকে অনুমতি ছাড়াই পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে শুনে আমার মা, বাইরের বাড়িতে বাংলা ঘরের কাছে এসে দাঁড়ালেন পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে। জহুরউদ্দিকেসহ পুলিশের নৌকা ঘাট ছেড়ে চলতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে।
দিশেহীন আমার মা, কণ্ঠ উঁচিয়ে চিৎকার করে পুলিশকে ডেকে থামালেন। বললেন, আমার পারমিশন ছাড়া আমার রাখালকে আপনি নিতে পারেন না। কাজেই ওকে নামিয়ে রেখে যান। পাড়াগাঁয়ের এক নারীর এমন দুঃসাহস দেখে এবং কথা শুনে বাধ্য হয়ে তারা জহুরউদ্দিকে সেদিন নামিয়ে রেখে যায়। পরবর্তী কয়েক বছর পুলিশের সঙ্গে কথা বলার এই কাহিনি নানা ধরনের গল্পের জন্ম দিয়েছে।
চাঁদের জ্যোৎস্না ছাড়া যে অজপাড়াগাঁ কখনো আলোর মুখ দেখে না, যেখানে রাস্তা বলে কোনো শব্দ নেই, যা আছে তাকে বলে হালট। গরু ও মানুষ মিলে ধুলো-ওড়া সেই মাটির হালট ধরে যূথবদ্ধ তারা হাঁটে।
অশিক্ষার অন্ধকারে ভূতনগরীর মতো টিকে ছিল কোনো রকম। সে রকম একটি পাড়ায় আকাশ বাতাস মথিত করে একজন সাহসী নারীর গল্প ঘুরে বেড়ায় সর্বত্র, উত্তর-দক্ষিণ পাড়া হয়ে ডাউলী বিলনালাইয়ের মানুষের মুখে মুখে ফেরে সে কল্পকাহিনি। মেয়ে মানুষ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সাহস দেখিয়েছে। এই গ্রামের মানুষ জীবনে প্রথম শুনলো এমন অদ্ভুত গল্প। তখন থেকে আমাদের গ্রামে আমার মা একজন সাহসী নারী হিসেবে পরিচিত পেলেন যেন।
দুই.
পুলিশ বিভাগে কাজ করলেও শেষের দিকে খালুজানকে অমায়িক মানুষ হিসেবেই জেনেছি। তবে তার সঙ্গে একবার কাঁচাবাজারে গিয়েছিলাম। বাসা থেকে দশ কদম হেঁটে যাওয়া যেতো সে বাজারে। খালুজান আমাকে নিয়ে মাছের খাড়ির কাছে দাঁড়াতেই শশব্যস্ত হয়ে জেলেরা খালুইতে মাছ ভরে দিলো বিনিময় ছাড়াই। একইভাবে গোয়ালা বা দুধবিক্রেতাকে দেখেছি বিনা বাক্যব্যয়ে দুধ ঢেলে দিয়েছে আমার হাতের পাত্রে। আম, জাম, কাঁঠালও ফ্রি চলে আসতো বাড়িতে।
কেবল লাউ, শিম, টমেটোর মতো সবজি কিনতে খালুজান পয়সা দিতেন। গাছের লাউটা কুমড়োটা বেচতে আসতো বাজারে যেসব গরিব চাষাভুসা, তারা দিতে চাইলেও, তাদের কাছ থেকে ফ্রি গ্রহণ করতেন না। উপযুক্ত মূল্য কিনে নিতেন।
খালুজান একদিন মির্জাপুরে ছিলেন না। চোর পাকড়াও করতে অনেক দূরের গ্রামে গিয়েছিলেন, সেদিন কাজের মেয়ের সঙ্গে আমাকে কাঁচাবাজারে পাঠিয়েছিলেন বড়মা। তখন মনে মনে খুব দুঃখ পেলাম এই ভেবে যে, আমাদের বাড়ির মেয়েরা কখনো কাঁচা বাজারে যায় না। অথচ খালার কাছে আছি বলে তিনি আমাকে বাজারে পাঠালেন, নিশ্চয় মা জানলে অনেক দুঃখ পাবেন। মায়ের চেয়ে যেন নিজেই দুঃখ পেয়েছিলাম অধিক।
তবে সেদিনের বাজারে টাকা খরচ করেই সব সদাই কেনা হয়েছিল। খালুজান ডিউটিরত অবস্থায় সপোশাকে বাজারে এলে সেদিন খালুই ভরে জেলেরা এত মাছ দিতো যে, বাড়িতে মাছ কাটার পরে বড়মা নওলা মাছের শুধু মুড়োটা রেখে বাকি গাদা-পেটি-লেজের অংশ তার প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। বেশিরভাগ সময় জলির মা নিয়ে যেতো এসে। জলি ছিল আমার এক ক্লাস নিচে, অসম্ভব লাবণ্যময়ী শ্যামল কান্তির এই মেয়েটি ছিল পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। জলির বড় ভাই পড়তো আমার সঙ্গে একই স্কুলে।
বাড়িওয়ালা হাজী সাহেবের ছোট মেয়ে মাহী ছিল আমার সহপাঠী, কিছুদিনের মধ্যেই মাহীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা প্রগাঢ় হয়েছিল। কিন্তু মাহীদের বাসায় আমার যাতায়াত ছিল খুব কম। ওর কজন ভাই ছিল বড় বড়। কেন যেন আমার ভালো লাগতো না সেখানে যেতে। মাহী বেশিরভাগ সময় আসতো আমার বড়মার বাসায়। ওকে সঙ্গে নিয়ে পাশেই জলিদের বাসায় যেতাম।
স্কুল ছুটির পরে আমার একমাত্র ঝোঁক ছিল জলিদের বাসার প্রতি। তার কারণ জলির মা। স্কুল থেকে ফেরার পরে টেবিলে বইখাতা রেখে আমি জলিদের বাসায় গেছি সেদিন। জলি ও তার ভাইয়েরা মিলে মাকে ঘিরে এলোমেলো গোল আড্ডা দিচ্ছিল, সবাই মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলতে ছিল।
মাকে ঘিরে তার স্কুলফেরত সন্তানেরা কলকাকলিতে যেন মেতে উঠেছে। দূর দুরান্ত থেকে খাবার সংগ্রহ করে মা পাখি বাসায় ফিরলে তার মুখ-ঠোঁটের দিকে তাক করে উন্মুখ শিশু শাবকেরা যেভাবে উন্মত্ত হয়ে ওঠে, জলির মাকে ঘিরে সেদিনের জটলাটি ছিল তেমনই।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে খুব নির্বিকার চিত্তে আমি দেখছিলাম সেসব তাকিয়ে তাকিয়ে। আমার মুখটা হয়তো সেই মুহূর্তে মাতৃহীন অনাথিনী বালিকার রূপ পেয়েছিল। একজন মা হিসেবে জলির মায়ের তা বুঝতে দেরি হয়নি। হঠাৎ করেই জলির মা, তার দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাকে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিতে নিতে বলছিলেন, আয়, আমার বুকে আয়, কতদিন তুই মায়ের বুকে যাস না, মায়ের মুখ দেখিস না, আয়, আমার কাছে আয়। এখনো মনে পড়ে, কথা কয়টি এক নিঃশ্বাসে বলেছিলেন জলির মা।
সঙ্গে সঙ্গে আমার দুচোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছিল। মনে হলো আমার বুকের কোনো অচিন জায়গায় যেন হাত দিয়েছেন এই চিরকালের মা। তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলাম। তার বুকের মধ্যেই আমি আমার মায়ের গন্ধ খুঁজে পেয়েছিলাম। সেদিন থেকে তাকে আমার মায়ের মতো মনে হতো।
আমি যাকে বড়মা ডাকি তিনিও একজন মা, আমারই মায়ের আপন বোন। তিনি কিন্তু কোনোদিনও আমার এই দুর্বলতম জায়গাটির খোঁজ করেননি। আবিষ্কার করতে হয়তো চেষ্টাও করেননি। কেননা, এখন বুঝতে পারি, নিজেদের সন্তানের দুঃখ বেদনায় কাতর ছিলেন সর্বক্ষণ। যেকোনো মুহূর্তে সন্তান হারানোর বেদনায় সদা উদ্বিগ্ন ও বিষণ্ন থাকতেন। সেজন্যে এত কাছে থেকেও সম্পর্কটি কখনো কাছাকাছি আসেনি, কুঁড়ি থেকে পাপড়ি মেলতে সুযোগ পায়নি।
বাড়িতে গিয়ে না হয় মায়ের হাতে খাবো। মা তো আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছেন। এভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বড় হয়ে উঠছিলাম, যাকে বলে বোঝমান।
বাড়িওয়ালাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মতো ছিল জলিরা। জলির বাবা বিদেশে থাকতো। তিন ছেলে এক মেয়ে নিয়ে জলির মা থাকতেন মির্জাপুর শহরের ডাউন টাউনের এই বাসায়। লক্ষ ছিল সন্তানদের ভালো স্কুলে লেখাপড়া করানো। প্রতিদিন সকালবেলায় গরম ভাতে ঘি ঢেলে আচ্ছাচে মাখিয়ে খাইয়ে স্কুলে পাঠাতেন সব কটাকে।
সেই সময়কার মায়েদের খুব বিশ্বাস ছিলো যে, ঘি-ভাত খেলে ছাত্রছাত্রীর বুদ্ধি খোলে। তারা লেখাপড়ায় ভালো ফল করতে পারে। সেজন্যে অধিকাংশ সচ্ছল বাঙালি পরিবারে ঘি-ভাতের প্রচলন ছিল খুব বেশি। আমর মাও নিজেদের গাভীর দুধের ঘনসর তুলে বেশ কদিন জমিয়ে রেখে নিজহাতে ঘি বানিয়ে তবে আমদের খাওয়াতেন। ফেনভাতের সঙ্গে, পরোটায়, কখনো রুটির সঙ্গেঘি-চিনি মিলিয়ে। অনেকগুলো গাইগরুর দুধ হতো প্রচুর।প্রতি রাতে সবরি কলার সঙ্গে দুধ-ভাত না খেলে আমাদের ভাই-বোনদের ঘুমই হতো না। আমাদের সবচেয়ে ছোটভাই শীতল সন্ধ্যারাতে কোনো কারণে হয়তো দুধভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, হঠাৎ মধ্যরাতে জেগে যেতো। মায়ের হাতে দুধভাত খেয়ে তবে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়তো। দুধ-ভাতে এমনি আসক্তি ছিল তার।
জনচিত্তের এই আকূতি অনুভব করেই মনে হয় অষ্টাদশ শতকের যুগশ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর তার ‘অন্নদা মঙ্গল’ কাব্যে লিখেছিলেন অবিস্মরণীয় সেই পঙ্ক্তিমালা।
প্রণমিয়া পাটুনী কহিছে জোড় হাতে।
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে॥
তিন.
বড়মার ঘরে খাবারের জিনিসের অভাব ছিল না মোটে। কিন্তু নিয়ম ছিল কড়া। বাঁশের ঝাঁকা ভরা আম পচে যাচ্ছে কিন্তু ইচ্ছে করলেই অনুমতি ব্যতিরেকে কিছু ধরা যেতো না। বাঁধনহীন শৈশবে অনায়াসে হাতে তুলে কিছু খাবার অনুমতি ছিল না আমার। সবই পারমিশন নেওয়ার ব্যাপার ছিলো বলে, কখনো কিছু চেয়ে খেতাম না আমি। ভারী অভিমান হতো। বড়মা বা খালুজান যখন হাতে তুলে কিছু দিতেন, কেবল তখনই তা খেতে পারতাম। অন্যসময় অনুভব করতাম এটি আমার নিজের বাড়ি নয়, এখানে আমি আশ্রিত।
আমাদের খাবার-দাবারে হিসাববিহীন মিয়াবাড়ির রেওয়াজ ছিল অন্যরকম। অনেক ভাই-বোন একসঙ্গে বড় হওয়ার আলাদা এক মাধুর্যই ছিল সেখানে। যদিও পরস্পরের মধ্যে মানিয়ে ও মেনে নেওয়ার শিক্ষাটিও ওখানেই নিহিত থাকে।
আমার মায়ের বড় ঘরের সিলিংয়ে আস্ত কলার গইর রশি দিয়ে বাঁধা থাকতো, টিনের উত্তাপে ধীরে ধীরে কলা পাকতো আর আমরা ভাই বোনেরা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে কাঠের পাটাতনে বসে বসে যার যে কটা ইচ্ছে কলা খেয়ে খোসাগুলো ওখানে রেখেই নিচে নেমে আসতাম। দিনের মধ্যে কে কতবার সেখানে গিয়ে কলা খেলো, তার কোনো হিসাব নেই। যার যেমন ইচ্ছে। এভাবে কলা খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতো হাওয়া আপা। একদিন হয়তো এত কলা খেয়েছে যে, সেদিন আর ভাতও খেতো না।
এভাবে পুরো গইর কলা যেদিন খাওয়া শেষ হতোম তখন কাজের লোক ওপরে উঠে কলার খোসাসহ সব পরিষ্কার করে রেখে আসতো। বাগানের কলা ঝোপে কলা পাকার উপযুক্ত সময় হলেই তা কেটে এনে পুনরায় একই নিয়মে সিলিংয়ে বেঁধে রাখা হতো। সারা বছরের সবরী ও মদনা কলার জোগান আসতো আমাদের বাগানের কলাঝোপ থেকে।
কখনো কখনো শখ করে বিচি কলাও খেতাম। বিচি কলার মধ্যে কলার চেয়ে বিচি বেশি। সে কলা আমাদের বাগানে হতো না। সাপ্তাহিক হাঁট থেকে তা কিনে আনতো রাখালেরা। দাঁতের তলায় পাকা কলার বিচি পুটপুট করে ফুটতো, মধুর এক আওয়াজ তুলেই গলনালী দিয়ে হারিয়ে যেতো দ্রুত।
খুব ছোটবেলায় আরো দেখেছি, যখন আমাদের বাড়িতে ভালো কোনো আমের গাছ ছিল না, তখন পাড়ায় যারা আম বিক্রি করতো, আব্বা তাদের বাড়ির আস্ত আমগাছ কিনে দিতেন সব আমসহ।
আখেরদিনে দুই/তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করে দিতেন আমাদের আখ খাওয়াতে। মিষ্টি আলু, চীনে বাদাম, ছোলা, বাঙ্গি, কেশু আলু তো আমাদের বাগানেই ফলতো। মুড়ি, চিড়া তৈরি করার আলাদা লোক ছিল, সারা বছরের মুড়ি-চিড়া, খইভাজা ও গুড়ে পাক দেওয়া, নারকেল ও তিলের নাড়ু তৈরি করার আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট সময়ও ছিল।
শীতকালে নানা রকম দুধের পিঠা তো হতোই। আমায় মায়ের হাতের দুধকুলি, দুধচিতই, দুধলাউ, অসাধারণ স্বাদ বহন করে নিয়ে আসতো। এছাড়া, কাঁচা রসের ফিরনী, মুখশলা, আন্দোশা, পাটিসাপটা, ভাপা, সিদ্ধকুলি, তিলকুলি এমনকী কার্তিক মাসে মুঠাপিঠা বানানো দিয়ে শুরু হতো এই শীতকালীন পিঠাযাত্রা।
ইচ্ছে স্বাধীনভাবে খাওয়া-দাওয়া, বেড়ে ওঠা কইন্যা আমি, হঠাৎ করে খালার বাড়ির নিয়মগুলো মনকে বিষণ্ন করে তুলতো। তখন মা ও মায়ের বোনের তফাত অনুভূত হতো।
একদিন বড়মা পাশের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। পাশা ভাই ছাড়া ঘরে কেউ নেই। পাশাভাই যে খাটে সারাদিন বুদ্ধমূর্তির মতো বসে থাকতো এবং রাতেও সেখানেই ঘুমাতো। তার পাশঘেঁষে একটা বেঞ্চে মুড়ি ভর্তি দুটো সবুজ রঙের টিন রাখা থাকতো। জানতাম যে, পাশাভাই অন্ধ, চোখে দেখতে পায় না। সেদিন মুড়ির টিন থেকে একমুঠো মুড়ি তুলতে যেই না হাত দিয়েছি, সঙ্গে-সঙ্গে কে কে, বলে চিৎকার করে উঠেছে পাশা ভাই। লজ্জায়, ভয়ে ভয়ে বললাম আমি দিলু।
-ওহ্, তুমি মুড়ি নিচ্ছিলে বুঝি?
বললাম, না না দেখছিলাম কতটা মুড়ি আছে।
মনে মনে ভাবলাম, আমাদের বাড়িতে কত চিড়া-মুড়ি-মুড়কী কাজের লোকে খায়, আর এখানে কি না অনুমতি সাপেক্ষে খেতে হয় সব। আহা! জ্ঞান, লেখাপড়া, এজন্যেই তো এমন অজানা বিভূই বিজনে কষ্ট স্বীকার করে আছি এখানে। থাকো মন। নাইবা খেলে কিছু। বাড়িতে গিয়ে না হয় মায়ের হাতে খাবো। মা তো আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছেন। এভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বড় হয়ে উঠছিলাম, যাকে বলে বোঝমান।
চার.
স্কুলের পরিবেশও অনাত্মীয়ের মতো। মধ্যখানের একটা বেঞ্চে বসে স্যারদের লেকচার শুনি, কিন্তু প্রায়ই ক্লাসেও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। এক উদাসীন হাওয়া যেন রাত্রিদিন খেলা করে আমাকে নিয়ে। স্কুল প্রাঙ্গণঘেঁষে বংশাই নদীর একটা খাল গেছে এঁকেবেঁকে, ঢাকা টু টাঙ্গাইল রোডের ব্রিজের তলা দিয়ে সেই সুদূরে মিশেছে যেন। সেদিকে তাকিয়ে থাকি আনমনে। ভাবি, আব্বা বাসে করে এই পথেই তো আসেন, কাজেই এই পথটুকু আমার আপন পথ। হঠাৎ অঙ্কের স্যার ক্লাসে এলে আড়মোড়া ভেঙে মেরুদণ্ড সোজা করে সচেতন হয়ে বসি।
এই স্কুলে এক বছর পড়ছি। কিন্তু অঙ্কের শিক্ষক ছাড়া কোনো স্যারকেই তেমন আপন মনে হয়নি, আমার প্রাইমারি স্কুলের স্যারদের মতো। অঙ্কের শিক্ষক দেখতে ছিলেন আমার সামাদ মামার মতো। আমার মায়ের আপন একমাত্র ভাই। এই মামাই তার যৌবনেই সৎ ভাইয়ের প্রতারণায় নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। আমৃত্যু সেই বেদনায় তার মুখচ্ছবিতে করুণ রসের এক অসহায়প্রলেপ যেন লেগেই ছিল। সারাজীবন একজন আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ হিসেবে বেঁচে ছিলেন তিনি। ক্ষোভে-রাগে দুঃখে অভিমানে তাকে কখনো জ্বলে উঠতে দেখিনি। আমার মা-ই ছিলেন তার দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করার মতো একমাত্র ছোটবোন।
সেদিন মনে হয়েছিল, আমার খালা-খালুর কাছে আমি সমাদৃত নই, যতটা সমাদৃত ছিল খালুজানের ভাইয়ের কন্যা তপা।
ইত্তেফাক ভবনে চাকরি শুরু করেছিলেন প্রুফ রিডার হিসেবে। পরে প্রশাসনিক একটি পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতেই দুই কন্যাসন্তান নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাদের কন্যাদ্বয় ভালো জীবন-যাপন করছে বটে, বুঝি তবু বিতাড়ণ ও বঞ্চনার বেদনা দেশভাগের মতো তাদেরও তাড়িত করে সারাক্ষণ।
আমার ছোটবেলায় সামাদ মামা যখন আমাদের বাড়িতে আসতেন, তার ব্যাগে আমার জন্যে নতুন কিছু না কিছু থাকতো। একবার আমার জন্যে খেলনা ডলপুতুল ও গোলাপি রঙের বাহারি এক ফ্রক এনেছিলেন। আর একবার ছোট্ট দুটো সোনার কানের দুল কিনে দিয়েছিলেন আমাকে। তার ছোট বোনের প্রথম সন্তান হিসেবে আদর-স্নেহ পেয়েছি আমি বেশ।
তার সেই স্নেহপ্রস্রবন মাখা মুখের আদলের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতাম অঙ্কের এই স্যারকে। আমার এই মামার মতো শ্যামবর্ণের মানুষ মাথায় কোকড়া চুল, ঠিক মামার মতোই তাকে আপন মনে হতো। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হচ্ছে স্কুলের মাঠেই। আমাকে ডেকে বললেন, খেলায় নাম দেবে না তুমি?
-জি স্যার দেবো।
মাহীকে সঙ্গে নিয়ে আমি সেদিন তিনটি ইভেন্টে নাম লিখালাম। যথারীতি ১০০ মিটার দৌড়ে ফার্স্ট এবং মিউজিক্যাল চেয়ারে দ্বিতীয় পুরস্কার পেলাম। বিস্কুট দৌড়ে তৃতীয় হলাম। হঠাৎ করে খেলার জগতে নিজেকে নিজেই যেন আবিষ্কার করে বিস্মিত হলাম। পুরস্কার পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলো দ্বিগুণ। খুব আফসোস হলো, নিজের গ্রামের স্কুলে কেন খেলিনি। সেখানেও তো আমার স্যারদের সামনে বিজয়ের স্বাক্ষর রাখতে পারতাম।
আমাদের প্রাইমারি স্কুলেও প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হতো নিয়মিত। কিন্তু কোনোদিন সেখানে আমি মাঠে খেলতে নামিনি পরাজয়ের ভয়ে। স্কুল ভবনের এক কোণে স্যারদের আড়ালে দাঁড়িয়ে সবার খেলা উপভোগ করেছি মাত্র। আমাকে দেখলেই স্যার যদি খেলতে বলেন, তাই তাদের চোখের আড়ালে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
কেবলি মনে হতো আমি ফার্স্ট গার্ল, আমি যদি খেলায় হেরে যাই, স্যারেরা কী ভাববেন? স্যারেরা এত ভালো জানেন, আমাকে পরাজিত দেখতে নিশ্চয় কারও ভালো লাগবে না। নিজের মনে ভাবনার এই জলপানি ছিটিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে শত হাত দূরে থেকেছি। তবে, একথা বলতেই হবে যে, মির্জাপুর স্কুলের এই বিজয়ের আনন্দে খেলাধূলার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়েছিল।
এ কারণেই মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়েও ১০০ মিটার দৌড়ে ফার্স্ট হয়ে কাপ জিতেছিলাম। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে খেলাধূলার মতো সহশিক্ষার এই কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মনে যেমন আনন্দের উজ্জীবন ডেকে আনে তেমনি জীবনেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে পলি-কাদার মতো।
স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছি। মেজ বোন হাওয়া আপার স্বামী তমিজ দুলা ভাই এসে নিয়ে যাবেন আমাকে, আব্বা সে কথাই জানিয়েছেন। হঠাৎ করেই খালুজানের বদলির অর্ডার হলো, মির্জাপুর থানা থেকে ভৈরববাজার থানায় যোগ দিতে হবে মাস খানেকের মধ্যেই। আমাকেও তাদের সঙ্গে যেতে হবে ভৈরব বাজারে। সেখানে আবার নতুন করে পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে হবে। ভাবতেই মনটা ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিগত এক বছরে মির্জাপুরের ছায়াচ্ছন্ন পরিবেশকে যেমন আপন করে নিয়েছিলাম এবার তার মায়া ত্যাগ করতে হবে।
বড়মা ও খালুজান নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন খুবই, তাদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে। মির্জাপুর গোরস্থানেই তার কবর হয়েছে।কাজেই মির্জারপুর থানা থেকে বদলির এই অর্ডার বজ্রাঘাতের মতো শেল হয়ে বিঁধছে তাঁদের হৃদয়ে। ইতোমধ্যে খালুজান তার বড় ভাইয়ের সাত মেয়ের একজনকে নিয়ে এলেন, নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করবেন বলে।
মেয়েটির নাম তপা। সুশ্রী, সুন্দর। তপা আমার চেয়ে বছর দুইয়ের ছোট। তপা আসার পর থেকে খালুজান কিছুটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। সারাক্ষণ মা মা ডাকছেন। তপার জন্যে নিত্য-নতুন খাবার আসছে ঘরে। খালুজান তপার পছন্দমতো গজ কাপড় কিনে দর্জি দোকানে তা দ্রুত বানাতে দিয়ে এলেন। তপাকে হাসি-খুশি রাখতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না দুজনের কেউ। ছোট হলেও বুঝতে পারি, তপাকে ঘিরে মূলত পুত্রশোককে ভুলে থাকতে চাচ্ছেন তারা দুজনেই। এরমধ্যে তপা বায়না ধরলো যে, সপ্তাহখানিক সে মানিকগঞ্জে মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে তবে ফিরবে। খালুজান বুঝলেন, না করে লাভ হবে না, কাজেই তার কথা মতোই পাঠিয়ে দিলেন মানিকগঞ্জে।
দিন যায় তপা আর আসে না। এদিকে দর্জি দোকান থেকে হলুদ ঝিকিমিকি জরি দেওয়া ফ্রকটি এনে রেখে দিয়েছেন তিনি। যেদিন খালুজান জানলেন তপা আর সত্যি আসবে না, সেদিন ফ্রকটি এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন, নাও এই ফ্রকটি তুমিই পরো। তপা আসবে না।
এই ঘটনাটি, আমার ছোট্ট মন কেন যেন মেনে নিতে পারেনি। ফ্রকটি হাতে নিতেই টপটপ করে চোখে আমার জল এলো। কোনোভাবে তা চোখের মধ্যেই ঠেসে লুকালাম। তখন মনের মধ্যে গুমরে মরছিল যে কথাগুলো, তা ছিলো হুবহু এরকম।
ওহ্! তপা আসেনি, সেজন্যে আমাকে দেওয়া হলো ফ্রকটি। আমি তো চাইনি কিছুই। কই, তপাকে নিয়ে যেদিন দর্জি দোকানে গেলেন ফ্রকের মাপ দিতে, আমাকে তো একবারও বললেন না যেতে। এতদিন হলো আছি আমি আপনাদের কাছে, একগজ চুলের লালফিতাও আমার জন্যে আপনারা কেনেননি ভালোবেসে! তপা আসেনি, তাই তার ফেলে যাওয়া ফ্রক আমাকে কেন পরতে হবে? কখনোই না। আমার মনের মধ্যে অচেনা এক মন ঢুকে গিয়ে সেদিন এভাবেই কথাগুলো গাইছিল।
সত্যি বলতে কি, ফ্রকটি আমি হাতে তুলে নিয়েছিলাম তাদের মনে দুঃখ দিতে চাইনি বলে, নিজে দুঃখ পেয়েছি, সেটি খুবই সত্যিকথা। কিন্তু অনির্দিষ্ট এক অচেনা অভিমানী মন ফ্রকটি আমাকে কোনোদিন পরতে দেয়নি। যদিও আমি খুব জেদী মেয়ে নই। জগতের কাছে আমার তেমন কোনো দাবি-দাওয়া নেই। ভালো তুমি আমাকে নাই বাসতে পারো, সেটি মেনে নিতে পারি আমি কিন্তু অবহেলা নিতে পারি না। সেদিন মনে হয়েছিল, আমার খালা-খালুর কাছে আমি সমাদৃত নই, যতটা সমাদৃত ছিল খালুজানের ভাইয়ের কন্যা তপা।
চলছে…
বালিকার চরৈবেতি-১১॥ দিলারা হাফিজ