বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বয়স সমান। শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্যে তত্ত্বপ্রধান চিন্তাশীল ধারার চর্চা হয়ে আসছে। যখন বাংলা ভাষার যে রীতি প্রচলিত ছিল সে রীতিতেই তা রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে। চর্যাপদের কবিতাগুলো চিন্তাশীল সাহিত্যেরই নিদর্শন। এগুলো সাধারণ কাব্যরস পিপাসু পাঠকদের জন্য রচিত হয়নি। বিশেষ গোষ্ঠীর সাধন-ভজনের জন্য রচিত। সাধনার জন্য রচিত এই কবিতাগুলোয় রয়েছে সমকালীন বাঙালির চিন্তাশীলতার প্রমাণ।
চর্যাপদের পরে বাংলা সাহিত্যে পাওয়া যায় বৈষ্ণবসাহিত্য, মঙ্গলসাহিত্য, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানমূলক সাহিত্য, নাথসাহিত্য, সূফিসাহিত্য ইত্যাদি। এগুলোর বেশির ভাগই রসপ্রধান সৃষ্টিশীল সাহিত্য। কিন্তু নাথসাহিত্য ও সূফিসাহিত্য তত্ত্বপ্রধান চিন্তাশীল। মঙ্গলসাহিত্যের কিছু কিছু অংশ সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে লেখা—সে অংশটুকুও তত্ত্ব বহন করে। এ টুকু চিন্তাশীলতার প্রমাণ বলে গণ্য করা যায়। এ ছাড়া সওয়ালসাহিত্য নামে আরেকটি ধারা তখন প্রচলিত ছিল, সেটি সম্পূর্ণই চিন্তাশীল।
ড. আহমদ শরীফ মধ্যযুগের মুসলমান লেখকদের রচিত তত্ত্বপ্রধান সাহিত্যকে তিনটি ধারায় ভাগ করেছেন। ক. শাস্ত্রসংলগ্ন রচনা তথা ধর্মসাহিত্য, খ. যোগতাত্ত্বিক চর্যাগ্রন্থ তথা সূফিসাহিত্য ও গ. সওয়ালসাহিত্য। তিনি তার রচনায় ওই সাহিত্যের তিনটি ধারার প্রাপ্ত, সম্পাদিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের বেশ বড় একটি তালিকাও প্রদান করেছেন। আহমদ শরীফ জানান, ‘এসব গ্রন্থে সৃষ্টি, স্রষ্টা, ইহকাল-পরকাল, পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, জীবন, সমাজ, শাস্ত্র, নীতি, আচার-আচরণ, বৈষয়িক, আত্মিক, আধ্যাত্মিক, এমনকি ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বিষয়েও নানা জিজ্ঞাসার উত্তর রয়েছে।’ [ আহমদ শরীফ: কালিক ভাবনা: মুক্তধারা, ঢাকা। ১৯৭১: পৃষ্ঠা-১৩৯]
ড. আহমদ শরীফ জানান, মোট বিশটি সূফি তাত্ত্বিক গ্রন্থ পাওয়া গেছে। এগুলোর পরিচয়ও দিয়েছেন তিনি। তার তালিকায় স্থান পাওয়া কবিদের নাম ও কাব্যের নামগুলো:
১. ফয়জুল্লাহ: গোরক্ষবিজয়
২. মীর সৈয়দ সুলতান: জ্ঞানপ্রদীপ-জ্ঞানচৌতিশা
৩. শেখ চান্দ: হরগৌরী সম্বাদ
৪. শেখ চান্দ: তালিবনামা
৫. অজ্ঞাত কবি: যোগ কলন্দর
৬. হাজী মুহম্মদ: সুরতনামা বা নুরজামাল
৭. মীর মুহম্মদ শফী: নুরনামা
৮. শেখ মুনসুর: আগম
৯. শেখ মনসুর: জ্ঞান সাগর
১০. আলী রাজা ওরফে ওয়াহেদ কানু: জ্ঞান সাগর
১১. বালক ফকির: জ্ঞানচৌতিশা
১২. আবদুল হাকিম: চারি মোকাম ভেদ
১৩. আবদুল হাকিম: সিহাবুদ্দিনপীরনামা
১৪. মোহসেন আলী: মোকাম মঞ্জিল কথা
১৫. শেখ মনসুর: সির্নামা
১৬. শেখ জাহিদ: আদ্যপরিচয়
১৭. শেখ জেবু: আগম
১৮. রমজান আলি: আদ্যব্যক্ত
১৯. রহিমুল্লাহ: তনতেলাওয়াত
২০. সহাজুল্লাহ: যুগীকাচ
এর মধ্য থেকে তিনি নয়জন লেখকের সাহিত্য নিয়ে ‘বাংলার সূফি সাহিত্য’ নামে প্রকাশ করেন। এ ছাড়া যোগতাত্ত্বিক সাহিত্যও অনেক রচিত হয়েছে। এ বিষয়ে আহমদ শরীফ বলেন,
‘বাংলা চর্যাপদে, শ্রীকৃষ্ণতীর্তনে, গোর্খসংহিতায়, যোগীকাচে, চৈতন্যচরিতে, মাধব মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলে, সহদেব ও লক্ষ্মণের অনিলপুরাণে, বিপ্রদাসের মনসামঙ্গলে, গোবিন্দ দাসের কালিকামঙ্গলে, দ্বিজ শত্রুঘ্নের স্বরূপবর্ণনে, আর যোগচিন্তামণি, বাউলগান প্রভৃতি সব গ্রন্থে ও রচনায় যোগ আর যোগীর কথা পাই।
মুসলমান লেখকদো মধ্যে শেখ ফয়জুল্লাহ, সৈয়দ সুলতান, হাজী মুহম্মদ, আলাউল, শেখ জাহিদ, শেখ জেবু, আবদুল হাকিম, শেখ চান্দ, যোগকলন্দরের অজ্ঞাত লেখক, আলিরজা, শুকুর মাহমুদ, রমজান আলী, রহিমুদ্দিন মুনসী প্রভৃতিকে যোগ-পদ্ধতির মহিমা কীর্তনে মুখর দেখি।
[আহমদ শরীফ: বাঙলার সূফিসাহিত্য: বাংলা একাডেমী প্রকাশন, ঢাকা। ১৯৭৯: পৃষ্ঠা: ৩৫-৩৬]
বৈষ্ণবসাহিত্য কৃষ্ণভাব বা রাধিকার আরাধনাবিষয়ক হলেও বৈষ্ণব সম্প্রদায় কিন্তু তত্ত্বের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছিল। এ বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাধা’ উপন্যাসে তাত্ত্বিক দিকগুলো উঠে এসেছে। বিশেষ করে ‘রাধা’ উপন্যাসটি বৈষ্ণবতাত্ত্বিক বলা যায়। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে উদ্ভুত লোকসাহিত্যের শক্তিশালী ধারা বাউল এবং শাক্তসাহিত্যও তাত্ত্বিক। বাউল মতাদর্শের নানা প্রকার তত্ত্বপ্রবাহী গানগুলো শুনতে রসপ্রধান মনে হলেও মূলত তা তাত্ত্বিক সাহিত্য।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে শাসক শ্রেণীর ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক আছে। সুলতানি আমলে মুসলমান শাসকরা হিন্দু-মুসলমান সব ধরনের সাহিত্যিকদের বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, পুরস্কার ইত্যাদি দিয়েছেন। মুঘল যুগে এসে দেখা যায় মুঘল শাসকেরা সেই ধারা অব্যাহত রাখেননি। আসলে মুঘল যুগে এখানে স্বাধীন শাসক ছিলেন না; আমলা ছিলেন। সুবাদার পদে নিযুক্ত বেতনভুক্ত এসব আমলা দিল্লিকে খুশি রেখে কাজ করতেন। তাই তারা ফারসি ভাষাকে প্রাধান্য দিতেন। কিছু ফারসি পুস্তক রচিত হয়েছে এ সময়। সতেরো শতকে রচিত হয় তিনটি বিখ্যাত ফারসি গ্রন্থ। মিরযা নাথানের ‘বাহারিস্তান-ই- গায়েবি’, মুহাম্মদ মাসুমের ‘তারিখ-ই-শাহ শুজাই’ এবং শিহাবউদ্দিন তালিশের ‘ফতিয়া ইবরিয়া’। [আবদুল করিম: ইতিহাস ও ঐতিহ্য: বাংলা একাডেমী, ঢাকা। ১৯৯৪। পৃষ্ঠা- ৩২]
উল্লিখিত তিনটি গ্রন্থই ইতিহাস বিষয়ক। মুঘল যুগে ঢাকায় দিওয়ান, মসনভি ইত্যদি কিছু কিছু রসপ্রধানসাহিত্যও রচিত হয়েছে। সেগুলো আমাদের আলোচ্য বিষয় না। আমরা দেখতে চাই তত্ত্বপ্রধান চিন্তাশীল সাহিত্যের নিদর্শনগুলো।
মুঘল শাসন ভেঙে গেলে নবাবি আমল শুরু হয়। প্রথমে মুর্শিদকুলি খান ও পরে আলিবর্দি খান দিল্লির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলা-বিহার-উড়িশ্যাকে পৃথক একটি স্বাধীন রাজ্য হিসাবে শাসন করেন। নবাবি আমলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ছিল না। দিল্লির শাসন থেকে পৃথক হওয়ার পরে দিল্লির শাসকদের হামলার শিকার হওয়ার কথা থাকলেও দিল্লির শাসকদের দুর্বলতার কারণে সেদিক থেকে আঘাত আসেনি। এসেছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে। মারাঠা দেশের বর্গীদের হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে যায় বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যার জনপদগুলো। এ সময় গঙ্গারাম নামে এক কবি বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন।
তবে সব বরগি গ্রাম লুটিতে লাগিল।
যত গ্রামের লোক সবে পালাইল ॥
ব্রাহ্মণ পণ্ডিত পালায় পুঁথির ভার লইয়া।
সোনার বাইন্না পলায় কত নিক্তি হড়পি লইয়া ॥
গন্ধবণিক পালায় দোকান লইয়া যত।
তামা পিতল লইয়া কাঁসারি পালায় কত ॥শঙ্খবণিক পলায় করাত লইয়া যত।
চতুর্দিকে লোক পালায় কী বলিব কত ॥
কায়স্থ বৈদ্য যত গ্রামেতে আছিল।
বরগির নাম শুইনা সবে সবে পালাইল ॥
ভাল মানুষের বউ যত হাঁটে নাই পথে।
বরগির পলানে পেটারি লইল মাথে ॥
ক্ষত্রি রাজপুত যত তলোয়ারের ধ্বনি।
তলোয়ার ফেলাইয়া তারা পালায় এমনি ॥শেখ সৈয়দ মোগল পাঠান যত গ্রামে ছিল।
বরগির নাম শুইনা সবে পালাইল ॥
গর্ভবতী নারী যত না পারে চলিতে।
দারুণ বেদনা পেয়ে প্রসবিছে পথে ॥
চোট বড় গ্রামে যত লোক আছিল।
বরগির ভয়ে সবে পালাইল ॥[মহারাষ্ট্রপুরাণ:গঙ্গারাম: কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়: বাঙ্গালার ইতিহাস (নবাবী আমল)-কলিকাতা, ১৩১৫ বঙ্গাব্দ]
গঙ্গারাম দাস ছাড়াও ভারতচন্দ্র রায় তার ‘অন্নদমঙ্গল কাব্যে’ এবং বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার ‘চিত্রচম্পূ কাব্যে’ও সমকালীন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
মোঘল শাসনকালের পরে অর্থাৎ নবাবি আমলে বাংলা ভাষায় কিছু লেখক সাহিত্য রচনা করেন নিজের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অথবা স্থানীয় ক্ষুদ্র শাসকদের অনুপ্রেরণায়। কেন্দ্রীয় শাসকরা তো অনেক আগে থেকেই বাংলা ভাষার ওপর থেকে আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলেছেন। এগুলোর মধ্যে মঙ্গলসাহিত্য, বৈষ্ণবসাহিত্য, রোমান্টিক সাহিত্যও রচিত হয়। এ সময় বড় বড় জমিদাররা কেন্দ্রীয় সুলতানদের মতো ক্ষমতা ব্যবহার করতেন। তাদের সম্পর্কে ড. অতুল সুর বলেন, ‘এ সকল জমিদারীর মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে বড়, সেসব জমিদারদের প্রায় সামন্ত রাজার মতো আধিপত্য ছিল। দিল্লির বাদশাহ তাদের রাজা, মহারাজা, খান, সুলতান প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করতেন। তারাই ছিল সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক।’ [ড. অতুল সুর: আঠারো শতকের বাঙলা ও বাঙালী: সাহিত্যলোক, কলিকাতা: ১৯৫৭: পৃষ্ঠা-১৪]
এ বিষয়ে শিবনাথ শাস্ত্রী বলেন, ‘দেশীয় রাজাগণ এক সময়ে দেশের মহোপকার সাধন করিয়াছেন। যখন সমগ্র দেশ যবন রাজাদিগের করকবলিত হইয়া মুহ্যমান হাইতেছিল, তখন তাঁহারা স্বীয় মস্তকে ঝড়বৃষ্টি সহিয়া দেশ মধ্যে জ্ঞানী ও গুণীজনকে রক্ষা করিয়াছেন; এবং শিল্প সাহিত্য কলাদির উৎসাহ দান করিয়াছেন।। যবনাধিকারকালে দেশীয় রাজগণ অনেক পরিমাণে সর্বময় কর্তা ছিলেন। তাঁহাদের দেয় নির্ধারিত রাজস্ব দিলেই তাঁহারা স্বীয় অধিকার মধ্যে যথেচ্ছ বাস করিতে পারিতেন।
বর্গীদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ সন্ধির মাধ্যমে অবসান হতে হতে আলিবর্দি খান বয়স হারিয়ে ফেলেন। তার মৃত্যুর পরে দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাহ নবাব হতেই ইংরেজদের ষড়যন্ত্র প্রবল হয়ে ওঠে। ইংরেজরা আগে থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল। আলিবর্দি খানের মৃত্যুর পরে তরুণ নবাবের অদক্ষতা ও অন্যান্য দুর্বলতার সুযোগে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে ইংরেজরা।
নবাবি আমলেই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের মধ্যযুগের শেষ বড় কবি ভারতচন্দ্রের আবির্ভাব। তিনি রসপ্রধান সৃষ্টিশীল সাহিত্যের অন্যতম সেরা লেখক। ভারতচন্দ্র বর্ধমানের আঞ্চলিক রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণায় সাহিত্য রচনা করেন। তবে তার পৃষ্ঠপোষক রাজা পলাশির ষড়যন্ত্রের অন্যতম খলনায়ক। নবাব সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে ইংরেজদের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করার সুযোগ করে দেন।
পলাশির যুদ্ধের পরে বন্দি অবস্থায় সিরাজের হত্যাকাণ্ডের পরে প্রকৃত নবাবি আমলের অবসান ঘটে। এর পরে যারা নবাব হন তারা ইংরেজদের হাতের পুতুল। নবাবি আমলে রাজভাষা ফারসি ছিল বলে মুরশিদাবাদে অনেক ফারসি সাহিত্য রচিত হয়। সেগুলোর বেশির ভাগই ইতিহাস বিষয়ক। আঠারো শতকের পঞ্চাশ থেকে নব্বই দশকের মধ্যে সাতটি বিখ্যাত ফারসি গ্রন্থ পাওয়া যায়। এগুলো মূলত ইতিহাসনির্ভর হলেও সমকালীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বাস্তবচিত্র পাওয়া যায়। এগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
১. মুনশী সলিমুল্লাহ : তারিখ- ই-বাঙ্গালা (১৭৬৩)
২. ইউসুফ আলী খান: আহওয়াল-ই-মহব্বতজঙ্গ (১৭৬৪)
৩. মোহাম্মদ ওয়াফা: ওয়াকিয়াত-ই-মহব্বতজঙ্গ
৪. সৈয়দ করম আলী: মুজাফ্ফরনামা (১৭৭২-৭৩)
৫. গোলাম হোসেন তবতবাই: সিয়ার-উল-মুতাখখিরিন (১৭৮৩)
৬. গোলাম হোসেন সলিম: রিয়াজ-উস-সালাতিন (১৭৮৬-৮৭)
৭. মোহাম্মদ আলী খান: তারিখ-ই-মুজাফ্ফরী (১৭৮০)
[বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী: ওয়াকিল আহমদ: বাংলা একাডেমী, ঢাকা-১৯৮৫। পৃষ্ঠা: ৫৮]
উল্লেখ করার মতো তথ্য হলো মোহাম্মদ আলী খানকে আলিবর্দি খান মনে করতেন, শ্রেষ্ঠ আইনবেত্তা, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী দীক্ষা-গুরু। যে যুগেই দুই হাজারের অধিক মূল্যবান গ্রন্থ তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল। সিরাজের দরবারে কুদরতুল্লাহ ও ফারহাতুল্লাহ নামে দুজন কবি ছিলেন। এখানে অনেক ফারসি কাব্য বা রসপ্রধান সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থগুলো আকরগ্রন্থ হিসেবে মূল্যায়িত হয়। তখন অনেক চিন্তাশীল সাহিত্যও রচিত হয়েছে।
১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে পাণ্ডুয়ার অধিবাসী মোহাম্মদ আসলাম পাণ্ডুয়াভি রচনা করেন ‘মুখতাসার-ই মুফিদ’ নামের বিশাল এক বিজ্ঞানকোষ গ্রন্থ। মুঙ্গেরের শেখপুরায় জন্মগ্রহণকারী আলী ইব্রাহিম সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি প্রথমে মির কাসিমের সভাপার্ষদ ছিলেন। পরে ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে রাজবল্লভের স্থলে তিনি বাংলার দিওয়ান-ই-সরকার পদে নিযুক্ত হন। তিনি পণ্ডিত লোক ছিলেন, স্যার উইলয়াম জোনস তাকে এশিয়াটিক সোসাইটিতে বক্তৃতা করার সুযোগ দিলে তিনি সেখানে ফারসি ভাষায় বক্তৃতা রাখেন। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থের লেখক। এর মধ্যে ‘গুলজার-এ-ইব্রাহিম’, ‘সুহুফ-ই-ইব্রাহিম’, ‘খুলাসাতুল কালাম’, ‘ওয়াকায়ে জঙ্গে মারহাট্টা’, ‘নিগারনামা-ই-হিন্দ’, ‘ইমাদ-উস-সাদাত’ ইত্যাদি। এর মধ্যে প্রথমটি উর্দু সাহিত্যের এবং মুরশিদাবাদ ও পাটনার সাংস্কৃতিক ইতিহাস। ‘ওয়াকায়ে জঙ্গে মারহাট্টা’ মূলত মারাঠা যুদ্ধের ইতিহাস।
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসিত ব্রিটিশ বাংলা-বিহার-উড়িশ্যার রাজধানী মুরশিদাবাদ থেকে সরিয়ে কলকাতায় নেওয়া হয়। সেখানে ছাপাখানা বসানো হলে বই-পুস্তক সংখ্যায় দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে প্রথমে হাতে লেখা পুস্তকই পাঠ্য ছিল। ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠান চালু করে। তবে মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও কলিকাতা আলিয়া মাদরাসায় হিন্দু শিক্ষার্থীও শিক্ষাগ্রহণ করত। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৯৫জন ছাত্র, এর মধ্যে দুজন হিন্দু ছাত্রও ছিল। তাদের নাম রাধা কিষেণ ও মোহন সিং। [বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী: ওয়াকিল আহমদ: বাংলা একাডেমী, ঢাকা-১৯৮৫। পৃষ্ঠা: ৫৮]
একটা বড় আকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পরে পুস্তক রচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ সময় কলিকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটিও (১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে) প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা থেকে সংগ্রহ করা অনেক আরবি এবং ফারসি পাণ্ডুলিপি এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি উইলয়াম জোনস ও তার স্ত্রী ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের রয়াল সোসাইটিতে দান করেন। এর মধ্যে আরবি পাণ্ডুলিপি ছিল ধর্মতত্ত্ব, আইন, ইতিহাস, দর্শন, কাব্য ও অলংকারশাস্ত্র বিষয়ক। আর ফারসি পাণ্ডুলিপি ছিল ধর্মশাস্ত্র, ঐতিহ্য, আইন, ইতিহাস, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, অভিধান, ব্যাকরণ, ছন্দ, কাব্য, সঙ্গীত এবং সংস্কৃত সাহিত্যের অনুবাদ। [বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী: ওয়াকিল আহমদ: বাংলা একাডেমী, ঢাকা-১৯৮৫। পৃষ্ঠা: ৫৯]
এ সময়ের দুজন লেখকের পাশ্চাত্য ভ্রমণের বর্ণনাও পাওয়া যায় ফারসি ভাষায়। তাদের একজন শেখ ইহতিশামুদ্দীন। অন্য জন মির্জা আবু তালিব খান। ইহতিশামুদ্দীনের গ্রন্থটির নাম ‘শিগুর্ফনামা-ই-বিলায়েত’। তিনি ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বিলাত ভ্রমণ করেন। এ গ্রন্থে ইহতিশামুদ্দীনের ব্রিটেন ভ্রমণের বিষয় ছাড়াও পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার তুলনামূলক পার্থক্য আলোচিত হয়েছে। তিনি তখনই ভবিষ্যদ্বাণী করেন, একদিন পুরো ভারত ইংরেজদের করতলগত হবে। তার সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘ভারতের বাহিরে যাহা কিছু তাহার চোখে পড়িয়াছে তাহারই তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করিয়াছেন। বৃটিশের স্বজাতিপ্রীতি, স্বীয় স্বাধীনতা, তীক্ষ্ম ব্যবসায়বুদ্ধি, তাহাদের এন্টারপ্রাইজিং মন ইত্যাদি সবই তিনি লক্ষ্য করিয়াছেন। বাংলার পরাধীনতা ও মোগল সাম্রাজ্যের পতন, ইংরেজের সমগ্র ভারতে রাজ্য স্থাপন অদূর ভবিষ্যতে যে অবশ্যম্ভাবী তাহাও তিনি বুঝিয়াছিলেন। [এবিএম হবিবুল্লাহ: ইউরোপে প্রথম ভারতীয়: মোয়াজ্জিন, কার্তিক- ১৩৪৩ সংখ্যা: পৃষ্ঠা-২৩৮-২৩৯: ওয়াকিল আহমদ: ঐ- পৃষ্ঠা-৭৭]
ইহতিশামুদ্দীন প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মধ্যে অর্থাৎ ইংরেজ ও ভারতীয়দের সামাজিক বিষয়ে কিছু তুলনামূলক আচরণও করেন। দুই সভ্যতার তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘বিলাতে লোক ৪০ বৎসর পর্যন্ত বিবাহ না করিয়া দেশ পর্যটন, বিদ্যাশিক্ষা ও অর্থোন্নতির চিষ্টা করে; কিন্তু আমাদের দেশে বাল্যকালেই সকল পিতামাতা ছেলের বিবাহ দেওয়া ফরজ মনে করেন এই ভয়ে যে ভবিষ্যতে তাঁহাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা না-ও থাকিতে পারে। যাহার পিতামাতার সামর্থ্য নাই, সে যেন তেন প্রকারেণ, এমনকি ঋণ করিয়া, ভিক্ষা করিয়াও স্ত্রী ঘরে আনা জীবনের সর্বপ্রধান কর্তব্য মনে করে। পরে সন্তান লালন-পালনের সামর্থ থাকে না—অভাবে অনাহারে নিজে ত মরেই, তাহার নির্দোষ সন্তানগুলিকেও জীবন্মৃত করিয়া রাখে।’ [এবিএম হবিবুল্লাহ: ঐ]
ইহতিশামুদ্দীনের বিলাত ভ্রমণের বহু বছর পরে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে আবু তালিব খান ইউরোপ ভ্রমণ করেন। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই চার বছরে তিনি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, তুরস্ক ও ইরান ভ্রমণ করেন। আবু তালিব খানের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ এই ভ্রমণকাহিনি ‘মাসির-ই-তালিবী’। গ্রন্থটি অল্পদিনেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। দুই খণ্ডে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ১৮১০-এ, জার্মান ভাষায় ভিয়েনা থেকে প্রকাশিত হয় ১৮১৩-তে, প্যারিস থেকে ফরাসিতে প্রকাশিত হয় ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে। ‘মাসির-ই-তালিবী’ তার সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে শুধু ভ্রমণের বর্ণনা নয়, ও চিন্তা ও দর্শন, ভাববাদ-বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিকতাও ফুটে উঠেছে। তার গ্রন্থ সম্পর্কে হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘কার্ল মাক্সের ৫০ বৎসর পূর্বে মির্জা আবু তালিব মানব সমাজের বিপ্লবে ও বিবর্তনে অর্থনীতির ভূমিকার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। যদিও নির্দিষ্ট তত্ত্ব দ্বারা সে ধারণাকে সূত্রবদ্ধ করেননি।’
আবু তালিব খান ইউরোপের বিভিন্ন জাতির বিশেষ করে ইংরেজদের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। তিনি ব্রিটেনের সরকার গঠন, পার্লামেন্ট, হাউজ অব কমন্স, আইন প্রণয়ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। লেখকের দৃষ্টিতে ব্রিটিশ সভ্যতা বিশেষ করে শিল্পবিপ্লব পরবর্তী ইংল্যান্ডের উৎকর্ষ ইতিবাচকভাবে ধরা পড়ে। ইংরেজদের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-প্রকৌশলবিদ্যার উন্নতিতে তিনি আশাবাদী মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি ডাবলিনে চিত্রকলার প্রদর্শনীও দেখেছেন। যে সব বিষয় তার ভালো লেগেছে সেগুলোর প্রশংসা করেছেন। আর যেগুলো ভালো লাগেনি তার সমালোচনা করেছেন। আবু তালিব খান ইংরেজজাতির স্বাধীনতাপ্রিয়তা ও নারী প্রগতির প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তাদের অহমিকা, অর্থলিপ্সা, সংকীর্ণ মন নিজ সৌভাগ্যে অন্ধবিশ্বাসের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ‘স্বাধীনতা ইংরাজজাতির আরাধ্য দেবী স্বরূপা। এখানকার জনসাধারণ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে, কিন্তু এদের সাম্য একটি মুখোশমাত্র। দরিদ্র ও ধনীর ভেতর এখানে যে প্রভেদ তা ভারতবর্ষ হতে অনেক বেশি।’ [এবিএম হবিবুল্লাহ: ঐ: ওয়াকিল আহমদ: ঐ: পৃষ্ঠা- ৮৩]
আবু তালিব খান ফরাসি বিপ্লব নিয়েও নিজের গভীর চিন্তাশীল বক্তব্য প্রকাশ করেন। ব্রিটেন থেকে ফেরার সময় প্যারিসে গেলে নেপালিয়ান তার সাক্ষাৎ চেয়ে পাঠিয়েছেলেন, কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় দেখা করতে পারেননি। ব্রিটিশ সরকার তাকে আফগানিস্তানে ইস্ট ইন্ডয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিল; তিনি গ্রহণ করেননি। তিনি বিদ্বান লোক ছিলেন। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে প্রথমে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘দিওয়ান-ই-হাফিজ’ সম্পাদনা করেন। একই বছর রচনা করেন ‘খুলাসাতুল আফফার’- এ গ্রন্থটিতে পূর্ব কালের ও সমকালের প্রায় পাঁচশ জন কবির কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন; এটি মননশীল গ্রন্থ। ১৭৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দে ‘লুব্বুস সিয়র’ এবং ‘লুব্বুত তাওয়ারিখ’ নামে বিশ্বের ইতিহাস এবং ইউরোপের ইতিহাস রচনা করেন। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি অযোধ্যার রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস লেখেন ‘তফজিহুল গাফিলিন’ নামে। তিনিও পাশ্চাত্য সভ্যতাকে আশাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় তিনি ‘সুরুর আফজা’ নামে একটি কাব্য রচনা করেন। এটির Ode to London নামে ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ‘প্রাচ্যনারীর স্বাধীনতা’ নামে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। এটি Vindication of the Liberties of the Asiatic Women নামে অনুবাদ হয়। তিনি ‘আল কামুস’ নামের বিখ্যাত আরবি অভিধানটি ফারসিতে অনুবাদ করেন। মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে তাদের উচ্চাভিলাষ, অহমিকা, আরামপ্রিয়তা ও ভোগবিলাসিতাকে দায়ী করেন; রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে তুলনা করেন।
নবাবি আমলে ঢাকায়ও ফারসি সাহিত্য রচিত হয়েছে। ঢাকার নবাব শামসদ্দৌলাহ (১৭৭২-১৮৩৩) রামমোহন রায়ের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি ইংরেজিতেও দক্ষ ছিলেন। তার পাণ্ডিত্য সম্পর্কে প্রখ্যাত সাংবাদিক উইলিয়াম হিকি বলেন, ‘আমি ভারতীয়দের মধ্যে তার মতো সংস্কৃতবান ব্যক্তি আর দেখিনি। তিনি প্রাচীন ও আধুনিক ইতিহাস সম্পর্কে উত্তম জ্ঞান রাখেন এবং ইংরাজি ভাষা খুব ভালো বোঝেন।’ [বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী: ওয়াকিল আহমদ: বাংলা একাডেমী, ঢাকা-১৯৮৫। পৃষ্ঠা: ৫২] তিনি শেক্সপিয়র বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত ছিলেন।
ঢাকার আরেক ফারসি লেখক শাহ নূরী ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন ‘কিবরিত-এ-আহরাম’ নামের একটি মননশীল তাত্ত্বিক গদ্যগ্রন্থ। কিবরিত-এ-আহরাম অর্থ লাল গন্ধক যা অদৃশ্য বস্তু অর্থে বাগধারা হিসেবে প্রচলিত একটি শব্দ। নবাবি আমলে বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধিত না হলেও বাংলায় এমনকি ভারতবর্ষে এ সময় পুস্তকশিল্পে এক বিপ্লব ঘটে যায়। ইংরেজরা ছাপাখানা বসিয়ে মুদ্রণশিল্পের গোড়াপত্তন ঘটায়। বাঙালি পঞ্চানন কর্মকার বাংলা মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করে হাতে লেখা পুঁথির যুগের অবসান ঘটান।
ওপরের আলোচনায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ও ফারসি সাহিত্যে তত্ত্বপ্রধান চিন্তাশীল ধারার কথা বলা হয়েছে, এগুলোই আধুনিক যুগে এবং ঔপনিবেশিক সাহিত্য প্রকরণ ও গদ্য ভাষারীতি প্রবর্তনের পর মননশীল প্রবন্ধ সাহিত্যের ধারার জন্ম দিয়েছে। এখানে দেখানো হলো আধুনিক প্রবন্ধসাহিত্যের ধারাটি ভিন্নরূপে আমাদের মধ্যে বহুপূর্ব থেকে, হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিল; আমাদের পূর্বপুরুষেরা নিরন্তর চিন্তা চর্চা করেছেন। সময়ে সময়ে তারা ভিন্ন ভাষায় বা ভাষারীতির ভিন্নরূপে বা ভিন্ন প্রকরণে তাদের চিন্তাশীলতা ও মননশীলতা প্রকাশ করেছেন।