প্রথমপর্বের পর:
লিটলম্যাগ সম্পদনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা জানেন, এর পেছনের যন্ত্রণাগুলো কত করুণ আর আগ্রাসী। সে ব্যথা বর্ণনা করে পাঠক বন্ধুদের মন ভারী করে তুলতে চাই না। তবে নিজের খানিকটা অভিজ্ঞতা না বললে অপূর্ণতার দায় থেকে যাবে।
শালিকজংশন নিয়ে শেষ পর্যন্ত অগ্রজ কবিদের দেখানো পথেই হাঁটতে হলো অর্থাৎ ‘চন্দ্রাবতীর কয়েকজন সন্তান’ ধারাবাহিকতারই মৌন প্রয়াস। লিটলম্যাগের প্রচলিত কনসেপ্ট আর রইলো না ওই অর্থে। লিটলম্যাগ শব্দটির সঙ্গে আন্দোলন শব্দটি যোগ হওয়া যেন এক প্রকার শব্দ-পরম্পরা। একটি ছাড়া আরেকটির কোথায় যেন একটা ঘাটতি থেকেই যায়। খুব ছোট কথায়, তারুণ্যের সবটুকু ক্ষোভ অভিমান সাহসকে ধারণ করার কনসেপ্ট থেকে আন্দোলন শব্দটির যুক্ত হওয়া। সোশ্যাল সাইকিয়াট্রিক আরগুমেন্ট এবং অ্যাসপেক্টেশনসগুলোরও শেষ পর্যন্ত ভরসা হয়ে ওঠে নিদেন পক্ষে ওই সাহিত্যের কাছেই।
সাহিত্যে ছোটকাগজের ভূমিকা বা ব্যাপ্তি নিয়ে বিস্তর আলোচনা বাংলাসাহিত্যে হয়ে আসছে গত কয়েক দশক ধরে।
ফলে সাহিত্যনির্ভর লিটলম্যাগের কলেবরটি ছোট হলেও তার পরিসরটি বেশ প্রশস্তই বলতে হবে।
এ যাত্রায় বিশেষ করে বিল্লাল মেহদীর সর্বান্ত উৎসাহ আমাকে সাহসী করে তুলেছিল। ফুলবাড়িয়া তারাকান্দা নেত্রকোনা আর শহর ময়নসিংহজুড়ে আমরা যেন অভিন্ন চিন্তা ও যাত্রাপথের যুগল ছায়া হয়ে উঠেছিলাম। সেইসব যুগল চলার ছায়া হয়তো আজও অমলিন পড়ে আছে কোথাও ধুলোওড়া কোনো মেঠোপথের বাঁকে। তবু অবিরল এক-একটি পায়ের চিহ্ন কেবলই দূরবর্তী করে তোলে, ছায়াটির থেকে দূরে। সময়ের সমীকরণ বড়ই অদ্ভুত!
আকাশচারী আরেক মায়াবী প্রতিবেশী শালিক পাখিটিকেই নির্বাচন করা হলো কবিতার এই জংশনের নামকরণে। নামলিপিটি করে দিলেন কবি ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল। মূল প্রচ্ছদ কবি আবুল হাসানের অঙ্কিত রেখাচিত্র ‘পাখিমানবী’ অবলম্বনে। ভূমিকা যতীন সরকার। আলোকচিত্র আলফ্রেড খোকন। লালনের স্কেচ দিলীপ তালুকদার। গ্রাফিক্স-এর দায়িত্ব নিলেন আনিসুর রহমান, স্বাধীন কম্পিউটার, ছোটবাজার। ইনার মুদ্রণ কোরায়শী প্রাঙ্গণ, সি.কে ঘোষ রোড।
এবার অর্থ যোগানোর পালা। এ পর্যায়ে সংকট আরও ঘনীভূত। বিজ্ঞাপনের জন্যে নানান সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হলো। বেশিরভাগই নিষ্ফল। কারও কারও বক্রোক্তিও শুনতে হয়। বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলে তারা মনে করে সাহিত্য চর্চার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি-ফিকির করছি! কি যন্ত্রণা! মানুষকে কেমন করে বোঝাই শিল্প-সাহিত্যের এই যজ্ঞশালার সবটুকু প্রশংসা ময়মনসিংহবাসীর। একবার শহর থেকে খানিকটা দূরে বন্ধু চন্দন সাহা রায়কে সঙ্গে নিয়ে এমনি এক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। আবেদনপত্র গ্রহণ করলেন। শিল্প-সাহিত্য সংক্রান্ত নানান প্রশ্নবানে বিদ্ধ করলেন। যত প্রশ্ন, আমরা তত আশান্বিত। এক পর্যায়ে দু’জনকে দু’গ্লাস ঠাণ্ডা পানি সামনে দিয়ে তিনি কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন! সেই যে গেলেন!
শেষ পর্যন্ত অ্যাডভোকেট মামুন মাহফুজ, তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটু এগিয়ে এলেন। জেলা পরিষদ সচিব জানালেন আবেদনপত্রে এমপি সাহেবের সুপারিশক্রমে তিনি বিজ্ঞাপন দিতে সম্মত আছেন। মামুন ভাই এমপি সাহেবের কাছে নিয়ে গেলেন দেখা করাতে। হাসিখুশি মানুষ তিনি। জানতে চাইলেন, কী কবিতা লেখো তুমি? প্রেমের কবিতা নাকি দেশাত্মবোধক কবিতা? মনে মনে বললাম কোনোটাই না। মুখে বলতে হলো, সব কিছু নিয়েই চেষ্টা করছি! তাকে জানালাম পত্রিকায় আপনার নামে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে, কথাটি মামুন ভাইয়ের শেখানো ছিল! তিনি স্মিত হেসে আবেদনপত্রে সিগনেচার করে দিলেন।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক জাফর আহমেদ চৌধুরী। ধুরন্ধর গোছের মানুষ। হঠাৎ এ লোকটি কবিতা রচনায় মনোযোগী হয়ে উঠলেন। ভুলভাল শব্দ-বাক্যযোগে বেশ কিছু কবিতামতো রচনাও করে ফেললেন। ভুল শুধরানোর জন্যে যখন-তখন তার ডাকে সাড়া দিতে হয়। তাতে অবশ্য শাবিহ মাহমুদ এগিয়ে থাকতো। বেশ কয়েকবার পাণ্ডুলিপি হাতে আমাকেও দৌঁড়ঝাপ করতে হয়েছে। প্রকাশিত হলো তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘সুন্দরের জন্যে’। এবার প্রকাশনা উৎসব। সরকারি কোষাগারের কিছু টাকা-পয়সা গেল কবি আল মাহমুদের হাতে। তিনি বিগলিত হয়ে ময়মনসিংহে চলে এলেন। অডিটোরিয়াম ভর্তি লোকজনের মধ্যে আল মাহমুদ ঘোষণাই দিয়ে বসলেন, রবীন্দ্রনাথ যে সৌন্দর্যকে ধারণ করতেন কবি জাফর আহমেদ চৌধুরী সেই সৌন্দর্যকেই স্পর্শ করেছেন। যে ‘সুন্দর’ খুঁজে পেয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আজ আবার সেই সুন্দরের দেখা পেলাম জাফরের কবিতায়।
আল মাহমুদ। বাংলাভাষার সমকালীন অন্যতম প্রধান কবি’র মুখে এ কী বচন! বিচলিত ও বিব্রত করা ছাড়া অন্য উপায় রাখলেন না। এক যোগে বহুজনের অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে আসতে হলো।
এবার ধুরন্ধরের সঙ্গে ভণ্ড শব্দটিও যোগ হলো। খানিকটা আপত্তিকর ঠেকছে! তার কিছু বয়ান দেই। কবিতার বইয়ের রমরমা পর্ব শেষ করার পরে তিনি ময়মনসিংহের ইতিহাস রচনায় হাত দিলেন। বই আকারে প্রকাশিত হওয়ার আগেই নকলের দায়ে অভিযুক্ত হলো সে পাণ্ডুলিপি। পূর্বলিখিত ইতিহাস তিনি হুবহু নিজের নামে প্রকাশের দায় এড়ানোর জন্যে আবারও কবিদের সহায়তা কামনা করলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে গোপনে দু’জন এগিয়ে গেলেন কিন্তু তা তেমন ফলপ্রসূ হলো না।বই আকারে প্রকাশের পরে সবার কাছে ‘ভণ্ড লেখক’ হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করলেন। দায় এড়ানোর জন্যে বিভিন্ন সভা-সমিতির বক্তব্যে তিনি ‘প্রচলিত ইতিহাস’ সংকলন করেছেন বলে দাবি করতে থাকলেন।
শালিকজংশন অথবা স্পিডব্রেকার-এর কোনো একটির জন্য তাঁর সহযোগিতা কামনা করা হলো, তিনি উৎসাহ দিয়ে বললেন এলজিইডির অনেক রুর্যাল ডেভলপমেন্টের প্রজেক্ট আছে, তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারে। আমি বলে দিলেইতো হয়, বলে তিনি তাঁর নিজের গোটা ত্রিশের মতো বই ধরিয়ে দিলেন এলজিইডি অফিসে বিক্রি করার জন্যে। বই বিক্রি হলো। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বই বলে কথা! সন্ধ্যায় বই বিক্রির টাকা দিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে গেলাম ডিসি বাংলোতে।
তিনি টাকাগুলো আগ্রহের সঙ্গে মুঠিবদ্ধ করে নির্ধারিত চেয়ারে আসীন হলেন। বললেন ‘মিয়ারা নামাজটাতো তোমরা ফড়ো না, নামাজটা ফড়িও ভাইয়া, নামাজটা ফড়িও। এইখানে একটা মসজিদ করে দিচ্ছি স্টাফদের জন্যে। আমি ইমামতি করি জানোনি? কবিতার বইতে মূল্য যা আছে অনেকে তারচে বেশি টাকা দিয়া কিনতাছে জানোনি? বই বিক্রির টাকা ফুরাডা মসজিদের টিন কিনে দিছি’।
রুর্যাল ডেভলপমেন্টের বিজ্ঞাপন প্রতিশ্রুতি হয়েই থাকলো। বাংলা সাহিত্যের এক আমলা কবি তাঁর কাব্যচর্চার ফল মসজিদ নির্মাণে বিনিয়োগ করছেন। সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ। আখিরাতে তিনি কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলে নেবেন। ইহকাল পরোকাল; জীবন এক মনোহারি কাব্যসুধা!
পরবর্তী সময়ে জাফর আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচলক ও তার কিছুদিন পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালকের পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বিটিভিতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার মুখদর্শন প্রায় নিষিদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছালো। যদিওবা কালেভদ্রে শেখ হাসিনাকে দেখানো হয় কিন্তু সে ফুটেজটি হতো ফেইড অথবা ডার্ক! সিংক বা ভয়েসওভারের সাউন্ডটিকেও ভাইব্রেট করে দেওয়া হতো।
কাজল ভাইয়ের ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু কাজের ফলে জাফর আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগটা ঢাকায় ফিরেও কিছুদিন অটুট রয়ে গেলো। একদিন তাঁর কার্যালয়ে (বেতার অফিস) দেখা করার কথা বললেন। বেশ কিছু নতুন কবিতা লিখেছেন, সেগুলো পাঠ করে বলতে হবে কেমন হয়েছে এবং জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ছাপার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমটির উত্তর সহজ, খুব সুন্দর হয়েছে।খুব সুন্দর। কবি বিগলিত হবেন। অধিকাংশের বেলায় যা হয়। কিন্তু পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকরা এই সুন্দর বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি হাল ছাড়লেন না। খামের ওপর পত্রিকার নাম-ঠিকানা লিখলেন। নিজের প্যাডে একটি চিরকুটও লিখলেন সাহিত্য সম্পাদক বরাবর। তাঁর ধারণা হলো, আমার হাত দিয়ে কবিতাটি সম্পাদকের টেবিলে পৌঁছালে সে কবিতা ছাপা না হয়ে পারবে না। ছোট-বড় কত রকমের কত মানুষ আমার প্রতি কত শত ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন! চৌধুরী সাহেবও তাঁর ব্যত্যয় ঘটালেন না। কবিতা ছাপা হলো না কোথাও। তিনি আরও একটি ধারণা যোগ করলেন, হয়তো আমি সেগুলো যথাযথ হাতে পৌঁছে দেইনি।
ফিরে আসি বিজ্ঞাপনে, ইকরামুল হক টিটু’র সঙ্গে পূর্ব পরিচয় থাকাতে সুবিধা হলো বটে। তিনি পৌরসভার বিজ্ঞাপনটি সহসায় মুক্ত করে দিতে পারলেন। তবে চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহমুদ আল নূর তারেকের স্বাক্ষর পেতে সকাল-বিকাল অন্তত দিন-দশেক ধরে পৌরসভার বারান্দায় অপেক্ষা করতে হলো। জনপ্রিয় আওয়ামীলীগ নেতা তিনি। প্রায় সারাবেলাই ব্যস্ত থাকেন। কোন সময়টাতে ব্যস্ততামুক্ত থাকেন, সেই দুর্লভ ক্ষণটির অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার শুভ পরিণতি হলো। বিজ্ঞাপনটি তিনি নিঃস্বার্থেই দিয়ে দিলেন। আরও কিছু বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা হলো। তবে বেশিরভাগই ভোগান্তি শেষে শূন্য হাতে ফেরা।
রসিক প্রকৃতির মানুষ পল্টু দা। শহরের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী। বিত্তবৈভবের কমতি নেই। প্রচুর মদ পান করতেন। কেউ একজন শিখিয়ে দিলো দাদা যখন টাল থাকে, তখন বিজ্ঞাপন চাইতে হবে। মাঝে মাঝে দাদার প্রতিষ্ঠানে যাই কিন্তু বুঝব কী করে আজ তিনি কত পেগ খেয়ে বসলেন? যা হোক, দাদার সামনের চেয়ারে বসলাম। দেখলাম, বরাবরের মতোই তার পাশের ঝুঁড়িতে কালোপলিথিনে মোড়ানো কিছু একটা আছে। ভরসা হলো। বিজ্ঞাপনের কথা শুনে তিনি বলতে থাকলেন, তুমি মিয়া কবি মানুষ মদ চাইবা, তুমি চাইতাছো টাকা। বলতে বলতে তিনি এক হাজার টাকা বের করে বললেন, বিজ্ঞাপন ছবিসহ ছাপাইবা, এই নাও আরও পাঁচশ’ টাকা।
বিজ্ঞাপনের টাকা চেকে পরিশোধ হবে তার জন্যে চাই ব্যাংক একাউন্ট কিন্তু সম্পাদকের নামে কোনো একাউন্ট নেই। সেখানেও আরেক জটিলতা। যথাসময়ে হাতে টাকা এসে পৌঁছানোর কোনো সুযোগ নেই। ওদিকে সব ম্যাটার প্রস্তুত। কোরায়শী প্রাঙ্গণে ইনার ছাপার কাজ সম্পন্ন হলো। কাজল ভাই আর্থিক লেনদেনে বরাবরই সতর্ক। ব্যাবসায়িক বিবেচনায় তাঁর কাছে কোনো ছাড় নেই। এদিকে ঢাকায় ম্যাট লেমিনেটিংয়ে বুকিং দেওয়া। সব কিছু যথা সময়ে হতে হবে।
কাজল ভাইয়ের সব কর্মকাণ্ডেই আমরা তাঁর পাশে থাকি ফলে আত্মবিশ্বাসটা এ ক্ষেত্রে বেশ জোরালো। কিন্তু ফল হলো উল্টো! তিনি ফোন রিসিভ করলেন না। হয়তো কোনো মিটিংয়ে আছেন। কর্মচারীরা জানালো, বস বলে গেছে ফুল পেমেন্ট করে প্রিন্টিংস নিতে হবে।
প্রিন্টিংস আজ রাতেই ঢাকায় পাঠাতে হবে নতুবা আরেক বিপদ। টাকা পরিশোধ করতে এক দু’দিন সময় লাগতে পারে কিন্তু কর্মচারীরা অসহায়। বিপদে-আপদে যে মানুষটির ওপর শতভাগ ভরসা, আজ সেই মানুষটিরই অচেনা-অন্য চেহারা! ভীষণ বিব্রত ও বিচলিত সেই মুহূর্তগুলো যেন পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো। সকল আয়োজন কি তবে স্থবির হয়ে যাবে!
উপায়ন্তর না দেখে ছুটে গেলাম দিলরুবা তাসনীনের কাছে। টাকা ব্যাংকে আছে বটে কিন্তু এখন কী করে সম্ভব? আমার সব কিছু নিয়ে এ মানুষটির সীমাহীন উৎকণ্ঠা। নিকট একজন বান্ধবী সম্ভবত শাহিমা খালাকে ফোন করলেন, সেদিক থেকেও কোনো সুরাহা হলো না। তাঁর চোখে পানি ঝরতে শুরু করলো। জননীর চোখের জলকে অতিক্রম করে আমি আনন্দমোহনের হোস্টেলের দিকে পা বাড়ালাম। হলে সফেদ ফরাজী আছে, নাইবা হলো কবিতার মলাটবদ্ধতা, মুক্ত কবিতায় রাতটা পার করা যাবে নিশ্চিত।
পেছন থেকে দিলরুবা তাসনীন ভেজা গলায় ডাক দিলেন। হাত থেকে দেড় ভরি ওজনের সোনার চুড়ি দুটো খুলে আমার হাতে দিয়ে বললেন, চলো বাবা গোল্ডের দোকানগুলো এখনো খোলা আছে। প্রিন্টিংস আজই নিতে হবে।
এমন ঘটনাগুলো সম্ভবত ছেলে বিদেশ গমনের বেলায় ঘটে। আর ঘটে মামলামোকদ্দমায় জড়ালে, তাই নয় কি?
মাঝে মাঝে মনে হয়, জগতে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা সত্যি সত্যি একটি চড়ুই পাখির মুখ দেখে জীবন আলোয় দীপ্ত করে তোলার সাধ্য রাখেন। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা এমন একটি ভাষা মুখে নিয়ে জন্মেছি, যে ভাষার জন্যে বুকের রক্ত ঢেলে লেখা হয়েছিল আমাদের মধুরতমা অ আ ক খ! যে ভাষার একজন অতি নগন্য অপ্রয়োজনীয় কবি, যার কবিতা প্রকাশে রক্তের সম্পর্কহীন একজন মাতৃস্থানীয় মানুষ তাঁর অলংকার বিসর্জন দিতে কুণ্ঠিত হন না। ‘স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’। গত শতকের আলখেল্লা পরা বৃদ্ধ কবির মর্মস্পর্শী উপলব্ধি সত্যিই যথার্থ।
চলবে…