পর্ব: এক
টিপটিপ বৃষ্টি আর বুনোপথ দুটোই আমার মগজ তেড়েফুড়ে যেন বেড়িয়ে যাচ্ছে বাতাসের মতো। পায়ের নিচে কাঁটার ঘায়ে ধেয়ে আসা রক্ত হয়তো আমার চিহ্ন রেখে গেছে ঘাসের অলিতে গলিতে। গায়ের পাতলা কাপড়টা ভিজে যেন চামড়ার মধ্যে লেপে আছে অদৃষ্টের মতো। না, তবু আমি পেছনে তাকাব না। যার উদ্দেশ্য যত মহৎ, তাকে তার মতো করেই সামনে এগিয়ে যেতে হয়। আমি এক মহৎ উদ্দেশ্যের শপথ নিয়েছি। আমাকে যেকোনো মূল্যে এখান থেকে বাঁচতেই হবে। নিচু গাছের বন আর ধারালো ঘাসের ফাঁকফোকরে রাতের অন্ধকার যেন আরও গাঢ় হয়। আমি তবু ছুটেছি। হাতের সামান্য রাইফেলটাও এখন ভারী মনে হয়। সেইসঙ্গে বৃষ্টির ফোটাও মনে হয় এই সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়ে আমার সমস্ত শক্তি চুষে খেয়ে চিবুক বেয়ে নামতে থাকে। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা যেন জীবন্ত পিস্টন হয়ে উঠেছে। প্রতিটি শ্বাসের সঙ্গে ওটা ঘা মারছে চিন্তার দেওয়ালে। আমি একটা ঝোপ খুঁজে বসে পড়ি। ক্রমাগত হাপাই,তবু রাতের অন্ধকার থেকে সতর্ক চোখ সরে না। সামান্য পাতার শব্দও আমার সমস্ত ইন্দ্রীয়কে সজাগ করে দেয়। ঝোপটার ভেতর দিয়ে সরসর শব্দে কী যেন সরে গেল। আতঙ্কে বন্দুকটা হাতে তুলে নেই অজান্তে। অন্ধকারে সেই শব্দের উৎসাটাকে দেখা যায় না। তবু আতঙ্কের পৃথিবী জোড়া যেন তার বাস। হয়তো কোনো বিষধর সাপ। কে জানে, আরেকটু হলেই বোধয় আমার পরিণতি বিষের রাজত্বে হতো। সেই যে ঘুটঘুটে জঙ্গলে যেমন পরিণতি হয়েছিল দলে সদ্য যোগ দেওয়া কিশোরটির। এক দু’দিনের ট্রেনিং নিয়েই কেমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল জল-জঙ্গল। পুলিশ চৌকিতে হামলার মিশনে তার সে কী অ্যাকশন, দেখলেই তাক লেগে যায়! অথচ তার মৃত্যু হলো কিনা সাপের কামড়ে। শাসকদের পোষা কুকুরগুলোর তাড়া খেয়ে দল যখন ঘুটঘুটে জঙ্গলটার আরও গভীরে ঢুকে পড়েছিল, তখন একদিন রাতে এমনিভাবে ঝোঁপের কাছে কোনো একটা সাপ কামড়েছিল ওকে। তবু ছোঁড়ার কী সাহস! একটুও ভয় পায়নি। ছুরি দিয়ে ক্ষতস্থানটা একটু চিড়ে টিপ দিয়ে রক্ত বের করেছিল নিজেই। তারপর পায়ের ওপর দড়ির গেরোটা বেঁধে আবার চলতে শুরু করেছিল। কিন্তু আধঘণ্টা যেতেই ওর হাত থেকে রাইফেলটা পড়ে যায়। তারপর কখন যে মাথা ঘুরে ঢলে পড়লো।
কমান্ডার চেষ্টা করেছিলেন ওকে বাঁচাতে। কিন্তু তারই বা কী করার ছিল, ওষুধ নেই, পথ্য নেই। তাড়া খেয়ে তখন জঙ্গলের গভীরে ছুটছে সবাই। ততক্ষণে ওর সাপে কাটা পাটা ফুলে ঢোল হয়ে উঠেছে। মুখ থেকেও ফেনা ভাঙছে। হয়তো বাঁচতো আরও ঘণ্টা খানেক। কিন্তু এই বিপদের মধ্যে কমান্ডার বেশিক্ষণ থামতে রাজি ছিলেন না। স্রেফ একটা গুলিতে কিশোরটিকে বিষ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। আজ ওর কথা মনে পড়তেই বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। আমাদের কাছে একজন সঙ্গীকে হারানো অনেক বড় ব্যাপার। অত্যাচার নিপিড়নতো মামুলি ব্যাপার। তবু কজন পারে পাল্টা আঘাত দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে! কমান্ডার বলতেন—পৃথিবীতে তো মানুষ আছে বহু। এরমধ্যে একদল জন্ম নিয়েছে কেবল সয়ে যেতে আর একদল জন্ম নিয়েছে ভার চাপিয়ে দিতে। সয়ে যাওয়া সেসব মানুষ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভার বইতে বইতে একসময় ভারবাহী পশুতে পরিণত হয়। ভার চাপিয়ে দেওয়া মানুষেরা তাদের চাবকে পিঠের ছাল তুলে নিলেও সেই বোবা পশু রা করে না। এরমধ্যে কেউ কেউ আবার গা ঝাড়া দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে মানুষ হয়ে উঠে দাঁড়ায়। ভারবাহী সেই বোবা পশুগুলোকে আবার মানুষ হতে সাহায্য করাতো তাদেরই দায়িত্ব। আমরা তাই করছি। কয়েকদিন আগে চালানো অপারেশনটার পর আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কে জানে এখন কমান্ডার কই আছে! তার মাথার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ওরা। নাকি কোথাও গুলি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে! আমি খুব সতর্কভাবে অন্ধকারে চারপাশটা ঠাহর করার চেষ্টা করি। বাতাসে কান পাতি কোথাও কোনও শব্দ পাওয়া যায় কি না। না, কোথাও কোনো নড়চড় নেই। কেবল রাতে একঘেয়ে নিস্তব্ধতার শব্দ আর বৃষ্টির হিমশীতল টুপটাপ। দলছুট হয়ে আমি আর আমার সঙ্গী আশ্রয় নিয়েছিলাম দক্ষিণের নিভৃত গ্রামটাতে। ভেবেছিলাম এত অজপাড়াগাঁয়ে পৌঁছাতে হয়তো ওদের সময় লেগে যাবে। আর আশ্রয়ও নিয়েছিলাম বিশ্বস্ত মানুষের কাছে। কিন্তু বিশ্বস্ততা গিরগিটির মতো রঙ পাল্টে কখন যে লপাই ছোপ ধারণ করেছে বুঝে উঠতে পারিনি। আজ ভোরেই গ্রাম ঘেরাও হলো। ওরা আমাদের দু’জনকে আত্মসমর্পণের জন্য মাইকিং করছিল। কিন্তু ততক্ষণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। কমান্ডার বলতেন,সমঅধিকার আর শোষণহীন এক সমাজ গড়ার সেই মহৎ লক্ষ্যে যারা শপথ নিয়েছে তারা কখনো সেই উদ্যত ভীতির কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। আত্মসমর্পণ করে কাপুরুষ। একজন বিপ্লবী, আমৃত্যুই বিপ্লবী। আমাদের কাছে থাকা দুটো রাইফেল আর কিছু গুলি কাজে লাগালাম। আমি গুলি করে ওদের দুটোকে ফেলে দিয়ে কেউ কিছু বোঝার আগেই দৌড়ে পানা ভরা একটা জলায় ঝাঁপ দিলাম। হয়তো পেছন থেকে গুলি চলছিল। কিন্তু বাঁচার উন্মত্ত নেশা আমাকে পিছু ফিরতে সাহস দেয়নি। তবু অনুভব করেছিলাম চোখের পলকে কী যেন একটা আমার কানের লতিটাকে ছিঁড়ে নিয়ে বাতাস কেটে বেড়িয়ে গেল। পানাভরা জলাটা সাঁতরে আমি ঢুকে পড়েছিলাম জঙ্গলে। আমার সঙ্গীর ভাগ্যে কী জুটেছিল জানি না। হয়তো ধরা পড়েছে, হাত-পা চোখ বেঁধে একক্ষণে ওকে ওরা নিয়ে গেছে কথা আদায়ের জন্য। নয়তো গুলি খেয়ে মরে পরে আছে কোথাও। আমার ওর রাইফেলটার জন্য আফসোস লাগলো। সেই সঙ্গে কয়েক রাউন্ড গুলির জন্যও। অথচ এখন আমার পকেটে অবশিষ্ট কেবল তিনটে। দানবের হাত থেকে পালাতে পারলে তো বাঁচলাম, নয়তো এরমধ্যে দুটো ওদের কারো জন্য বরাদ্দ রেখে বাকিটা আমার চিবুকের নিচেই ঢুকিয়ে দেব। অন্ধকারে এই প্রথম আমি ছিন্নভিন্ন কানটাতে হাত দেই। এতক্ষণ কিছু বোধ না হলেও স্পর্শ পেয়েই জায়গাটা প্রচণ্ড টনটন করে ওঠে। হাতের মধ্যে চটচটে জিনিসটার গন্ধ শুকি। হ্যাঁ, হয়তো রক্ত। স্মৃতিময় এবং বর্তমান নোনতা ঘ্রাণের রক্ত।
হঠাৎ কিসের যেন শব্দ হয়, আমি রাইফেলটাকে আবার অন্ধকারে শক্ত করে ধরি। আমার সমস্ত মনোযোগ এখন সেই শব্দ আর ট্রিগারে। মনে হয় যেন কেউ ঘাস সরিয়ে এগিয়ে আসছে সন্তর্পণে। তীব্র সেই আতঙ্কটা যেন আমাকে আবার ঘিরে ধরে। আমি উঠে আবার ঝোপঝাড় ভেঙে দৌড়াতে শুরু করলাম। সঙ্গে সঙ্গে সে অদৃশ্য সেই আততায়ীও পেছন পেছন ছুটতে থাকে। বৃষ্টির ফোটা বড় হয়, জঙ্গলও যেন ঘন থেকে ঘন,একেবারে তমশা ঘন হতে থাকে। তবে কি ওরা আমার সন্ধান পেয়ে গেছে! বারুদভর্তি সেই সিসার অভিশাপ এক্ষুনি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেবে বুক! দক্ষিণের জঙ্গলে ঘাঁটি গাঁড়ার সময় মাঝে মাঝেই আমার উদাস লাগতো। গ্রামের কথা মনে পড়তো। চষা ক্ষেত, দড়ির বিছানা, ঘরের দাওয়াটার কথা মনে পড়তো। সেখানে একসময় আমার মা আর ছোট্ট বোনটা থাকতো। বাবা-মারা যাওয়ার পর একরত্তি চাষের জমিটার দায়িত্ব আমিই নিয়েছিলাম। দিনের বেলা ক্ষেতে বাধা কর্মচারীগুলোর কাজ তদারকি করে সুর্যাস্তে বাড়ি ফিরতে ভালো লাগতো আমার। মা ভুট্টার দানা ভেজে রেখে দিতেন মাঝে মাঝে। দড়ির বিছানায় শরীর এলিয়ে সেগুলো চিবুতাম আর ভাবতাম। বন্ধুরা ঘরকুনো,ভাবুক বলে ক্ষেপালেও তর্কের টেবিলে আমার সঙ্গে পেরে উঠতো না। অথচ সেই যেন আজ বহু দূরের কোনো মহাদেশ। মা আর বোনটার কথা চিন্তা করে বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন করে ওঠে। মা কি কল্পনা করতে পারছেন, তার সেই ঘরকুনো তর্কবাগিস ছেলে এই মুহূর্তে কাঁটা-ডালপালায় ছিঁড়েখুড়ে যাওয়া পা আর শরীর নিয়ে একটা রাইফেল ও তিনটে গুলিকে অবলম্বন করে বাঁচার জন্য ছুটছে! হঠাৎ বাঁচার আদিম নেশায় যেন আমার গায়ে আরও জোর এসে যায়। ঝোপঝাড় ভাঙতে থাকি দ্রুত। হ্যাঁ, কখনো কখনো যে এই ফেরার জীবনের ওপর আমার বিতৃষ্ণা আসতো না, এমনও নয় আমাদের মধ্য থেকেই হয়তো কেউ একজন মেশিনগানটা মাটিতে আছড়ে ফেলে কখনো কখনো কাঁদতে বসে যেত। একবার তো একজন চিৎকার করে বলেছিল—কিসের মূল্যবোধ,কিসের প্রতিশোধ, কিসের শপথ! বেঁচে থাকাটাই সার কথা। আমি এখন বাঁচতে চাই। সাম্য সমতা অধিকার সব ভুয়োদর্শন। কমান্ডার আমাদের ব্যবহার করছে। তারচেয়ে পুলিশের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করলে এখনো হয়তো বাঁচার সুযোগ পাব। কিন্তু কমান্ডার কেমন করে যেন এসব ছোট-ছোট বিদ্রোহের খবর পেয়ে যেতেন। হয়তো মন পড়তে পারতেন! নয়তো বাহিনীর মধ্যে তার লুকোন ফেউটা ঘাপটি মেরে থাকতো উচ্ছ্বিষ্টের আশায়! ছোখে চোখ, আর কাঁধে হাত রেখে তখন কমান্ডার মনে করিয়ে দিতেন শপথের বাক্য—আমি আমার স্রষ্টা আর মাতৃভূমির নামে শপথ করছি যে, তখনই আবার সবার অতীত স্মৃতিগুলো চলচ্চিত্র হয়ে প্রতিশোধ স্পৃহার জাল বিছাত। হাতের বন্দুকে আবার শক্ত হয়ে চেপে বসতো আঙুল।
তবু একজন সেই প্রতিজ্ঞা উপেক্ষা করে পালিয়েছিল। কমান্ডার তাকে ঠিকই খুঁজে বের করে চরমতম শিক্ষাটি দিয়েছিলেন। ওর নিথর দেহ ঘিরে দাঁড়ানো সবাইকে বলেছিলেন—এই শাস্তিই ওর প্রাপ্য। বিপ্লবীর জীবন ক্ষমাহীন। এখানে বিশ্বাসভঙ্গকারীর একটি জিনিসই প্রাপ্য,সে হলো মৃত্যু। আর যে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য আমরা লড়ছি, সেই বৃহত্তর অর্জনের জন্য এমন দুই-একটি জীবনের ত্যাগ তুচ্ছ। কমান্ডারের সেসব কথা এখন সত্যি-মিথ্যের মাকড়সার জাল হয়ে আমার মগজে যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে। চারপাশ থেকে সরসর শব্দে দ্রুত সরে যাচ্ছে ধারালো ঘাসের জঙ্গল। আমিও হয়তো সেই বৃহত্তর অর্জনের ক্ষুদ্রতর বলি হতে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও,অবধারিত মৃত্যুকে সামনে রেখে দুর্বলতম প্রাণীটিও কি ঘুরে দাঁড়ায় না! আমি যতক্ষণ পারি লড়বো। হঠাৎ একটা গাছের শেকড়ে পা লেগে আমি উল্টে পড়লাম। ঘারালো ঘাস আর ডালপালার তলোয়ার যেন আমার মুখ হাত পায় আচড় কেটে গেলো। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়ে কঁকিয়ে উঠলাম। কতক্ষণ এভাবে অন্ধকারে পড়ে আছি জানি না। বৃষ্টিতে ভেজা ঘাস আর কাদায় শরীর মাখামাখি। কিন্তু ওইতো, আবার পেছনে যেন কেমন শব্দ, কারা যেন এগিয়ে আসছে সন্তর্পনে! ঘুটঘুটে অন্ধকারটা এখন খানিকটা চোখ সওয়া হয়ে গেছে। না, ধরা পড়া যাবে না। আমি ব্যাথা নিয়েও মনের জোরে আবার চলতে থাকি। এভাবে কতক্ষণ যায় জানি না। ঘাস কাদা মাড়িয়ে জঙ্গল ঠেলে এগিয়ে যাই কেবল। হঠাৎ দূরে যেন টিমটিমে দুটি আলো দেখা যায়। অসভ্যতার এই রাজ্য পেরিয়ে হয়তো সভ্যতার চিহ্ন! কোনো ঘর হবে কিংবা ঘুমন্ত গ্রাম। জঙ্গলের এই কঠিন বাধা তাহলে সত্যিই পেরিয়ে এসেছি। সামনে তাহলে ওরা ওঁৎ পেতে নেই। একটু আলো ফুটলে ওখানেই আশ্রয় নিতে হবে। দরকার হলে গৃহকর্তাকে জিম্মি করে হলেও। আমি আবার ঝোপের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। টিপটিপ বৃষ্টি ঝড়ে, মশার গুনগুন, নাম না জানা পোকার শব্দ শুনি আর রাইফেলটাকে দেখি। পকেটে মাত্র তিনটে গুলি আর সামনে সম্ভ্যাব্য আশ্রয়, পালানোর পথ। এখান থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলে অন্য সঙ্গীদের খুঁজে বের করবোই। দরকার হলে আবার ফিরে যাব দক্ষিণে। একসময় যেন আমার অপেক্ষা সৃষ্টিকর্তা শুনতে পান। জঙ্গলের বিচিত্র শব্দ উপেক্ষা করে আকাশে ময়লা আলো ফুটতে থাকে। একটা জোঁক আমার পায়ে পরম নিশ্চিন্তে দেখি রক্ত খেয়ে চলেছে। ওর কুচকুচে কালো তেল চকচকে শরীরটাকে শহরের সেই হোৎকা পিশাচগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। যেন নির্বিকারভাবে মানুষের রক্ত চোষাটা তার অধিকার। আমি ওটাকে টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। ওটার দর্মনে এখনো রক্ত ঝড়ছে। কী এক আক্রোশে জোঁকটাকে আমি টিপে ওর পেটের কালো রক্ত বের করে ফেলি আর শপথ নেই—আমি আমার স্রষ্টা আর মাতৃভূমির নামে শপথ নিচ্ছি…।
হঠাৎ গজবের ফরমান নিয়ে চারদিক থেকে ঝলসে ওঠে তীব্র আলো। সেই আলো এতই প্রখর যে তাকিয়ে থাকা যায় না। তবু প্রখর আলোয় ঝলসে যাওয়া সাদাটে দৃষ্টিতে আমি ঝোপঝাড় ভেঙে বুটের দৌড়ে আসার শব্দ পাই। সামনে-পেছনে-ডানে-বামে। কান ফাটানো গর্জন দিয়ে গুলি তেড়ে আসে। পকেটের তিনটে গুলির একটি লোড করে দানবীয় গনগনে অসুরের চোখটায় তাক করি। ট্রিগার টানার আগে চোখ বন্ধ করে আওড়াই, আমি আমার স্রষ্টা আর মাতৃভূমির নামে শপথ নিচ্ছি…
চলবে…