ত্রিকালদর্শী সাধু ও ডাকাত
এক সাধুর কাছে এলেন এক ডাকাত। সে ডাকাত আবার সম্মানিত, দুঃস্থের ত্রাতা হিসেবে। সাধু বসতে বললে তিনি দাঁড়িয়েই কথা বলা শুরু করলেন, শুনেছি আপনি ত্রিকালদর্শী!
সাধু তাকে আবারও বসতে বললেন। তিনি দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করলেন। সাধু আবারও যখন তাকে বসতে বললেন, সে মহান ডাকাত একই প্রশ্ন পুনর্ব্যক্ত করলেন তৃতীয়বারের মতো।
সাধু এরপর নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, ছিলাম, এখন নই! সে কথা শুনে ডাকাত বলে উঠলেন, কেন? সাধু বললেন, এতক্ষণ পর্যন্ত আমি ত্রিকালদর্শী ছিলাম, কিন্তু তৃতীয়বারের মতো যখন আপনি একই প্রশ্ন করলেন, এই প্রশ্নের ভেতর আমি মহান ঈশ্বরকে দেখতে পেলাম, আপনার প্রশ্নের দৃঢ়তা ও তীক্ষ্ণতা আমাকে এমনভাবে বিদ্ধ করলো, মনে হলো এতদিন আমি ছিলাম শর যা বিদ্ধ করতে চেয়েছে ঈশ্বরের বুক;কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে যে ভাবনা জেগে উঠলো তা হলো, আমিই সেই কেন্দ্রস্থল, যেখানে এতদিন বিদ্ধ করতে চেয়েছি শরকে।
আমি জানতাম আমি ত্রিকালদর্শী, কিন্তু কোনোদিন এই প্রশ্নটি করিনি নিজেকে। এই প্রশ্ন কেউ করে না, করার প্রয়োজনও পড়ে না। কিন্তু আজ আপনার মাধ্যমে আমি এমন একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম, যা আমাকে ঈশ্বর হতে দূরবর্তী কালাকালের সীমার ভেতর বন্দিদশা থেকে মুক্ত করলো। তাই আমার উত্তর হলো, আমি ত্রিকালদর্শী ছিলাম, কিন্তু এখন নই। আপনি আমার মনের ভ্রান্তিকে ডাকাতি করে নিলেন, আমি এখন মুক্ত, নিরাকার ও কালাতীত অসীম শূন্যে…।
সাধু হাঁটতে লাগলেন, ততক্ষণে তাঁরা পৌঁছে গেলেন বাগানের শেষ প্রান্তে, যেখানে নেমে গেছে গভীর গিরিখাত, দূরে কোথাও ঝর্নার শব্দ, মেঘের ফাঁকে ফাঁকে মাথা তুলে আছে একেকটি পাহাড়। সাধু বললেন, ওই যে পাহাড়ের শিখরগুলো, দেখতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ।
যদি আপনি একেকটি শিখরে গিয়ে পৌঁছান তবে অন্য শিখরগুলো আপনাকে প্রমাণ দেবে যে আপনি শিখরেই আছেন। কিন্তু সবচেয়ে উচ্চতায় যে চূড়া, যেখান থেকে আর কোনো শিখরকে দেখা যায় না, সেখানে পৌঁছাতে পারলে পরখ করার, তুলনা করার সুযোগ থাকে না;মনে হতে থাকে চূড়ান্ত উচ্চতাও একটি সমান্তরাল অবস্থানমাত্র। আমি এই চূড়ান্ত উচ্চতা হতে এতদিন নিচের পর্বতশিখরগুলোকে তালাশ করছিলাম, আপনি আমাকে উদ্ধার করলেন।
কিন্তু আমি কোথায় আছি?—ডাকাতের প্রশ্ন।
যদি বলতে বলেন আপনার অবস্থান কোথায়, আমি বলব, আপনি ডাকাতই। এতদিন হরণ করেছিলেন পরধন, আজ করলেন আমার ভ্রান্তিকে।
তার মানে?
তার মানে, আপনাকে এখন থেকে এই ভ্রান্তি নিয়েই থাকতে হবে, যতদিন আপনি আমার মতো মুক্তি না পান!
সাধু ও ত্রিকালদর্শন
সাধু একটা পাথরের ওপর বসলেন, তাঁর সঙ্গে অন্যরাও বসলো। মাটিতে, ঘাসের ওপর। সেই ঘাসের নিচ দিয়ে যে পিঁপড়ার দল লাইন ধরে যাচ্ছিল, তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। তিনি বললেন, তোমরা এমন কিছুর ওপর বসলে যেখানে বসার অধিকার তোমাদের আছে, আবার নেই। ওরা বলে উঠলো, এ কেমন কথা!
তিনি বললেন, এই তবে সত্য যে, আমাদের প্রত্যেকেরই অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় অন্যের অধিকারকে খুন করে। আমরা যতক্ষণ বেঁচে থাকি, ততক্ষণই আমাদের অন্যকে অধিকারবঞ্চিত করা। এই যেমন তোমরা বসেছ ঘাসের ওপর, তার নিচ দিয়ে হাজারো পিঁপড়া পথ তৈরি করে চলছিল, ওরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল, অনেকেই মারা পড়ল, তোমরা বুঝতেই পারোনি কী ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছে ওদের ভেতর! অথচ তোমরা তো তোমাদের খুব সাধারণ অধিকারকেই প্রতিষ্ঠা করলে, কিন্তু ওরা?
তাহলে কিভাবে এই অবস্থা হতে মুক্তিলাভ সম্ভব? ওরা বলে উঠলো। আমরা তো তাহলে কোনোকিছুই করতে পারব না অর্থবহরূপে, কোথাও না কোথাও একটা বিপর্যয় সৃষ্টি হবে আপনা থেকেই। প্রকৃতিই তাহলে একে অন্যের শত্রুরূপে সৃষ্টিজগৎকে পরিচালিত করছে। একজন বলে উঠল, আপনি নিজেও তো একটি পাথরের ওপর বসে আছেন, হতে পারে তার তলায় কোনো ছোট প্রাণ থেতলে গেলো, কিংবা যে পাথরটিতে বসলেন সেটি ছিল কোনো প্রাণীর অবকাশ যাপনের স্থান! সাধু হেসে উঠলেন সে কথা শুনে।
তোমরা যে দেখছি সহসাই দার্শনিক হয়ে উঠলে, অথচ একটু আগেও তোমরা তা ছিলে না, তোমাদের মনোজগতে বিরাজ করছিল কেবল উপভোগ—দৃশ্য, বর্ণ ও গন্ধের! কিন্তু তোমরা মাত্র কিছুক্ষণ পরই পরিণত হলে প্রকৃতির বন্ধুরূপে, এরই মধ্যে তোমরা উঠে দাঁড়িয়েছ, যেন ঘাসের তলায় পিঁপড়াগুলো খুঁজে পায় তাদের পথ। কিন্তু তোমরা যেখানেই যাও, এমনকি যখন হাঁটতে থাকো বা দাঁড়িয়ে যাও, পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে কত প্রাণ প্রতিমুহূর্তে মরতে বসেছে, জানতেও পারবে না।
উপায়?—সমস্বরে প্রত্যেকেই বলে উঠলো।
উপলব্ধি করো নিজেদের অসহায়ত্বকে, তোমরাও যে ওদের মতোই অসহায় ও দুর্বল সে কথা ভাবতে শেখো। তোমাদের জীবনরক্ষাকারী সব প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান এমনকি জীবনধর্মকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাও, পরিত্যাগ করো, দেখো কী হয়? একটি মুহূর্ত চলার মানসিক ও দৈহিক ক্ষমতা তোমরা অর্জন করতে পারবে না। সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হবে, তোমাদের মনোজগৎ ভেঙে পড়বে, তোমরা হয়ে উঠবে একে অন্যের শত্রু নিজেদের ভেতরেই;প্রাণীজগতে দেখো সবাই কেমন নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের কর্তব্য পালন করে, অথচ তাদের তোমাদের মতো মন নেই। কিন্তু তোমরা পারবে না, তোমাদের মন সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর বস্তুতে পরিণত হবে, সভ্যতার বিকাশের জন্য তোমরা এক পা-ও সামনে এগুতে পারবে না।
মানবজাতির ভবিষ্যৎ তাহলে কোথায়?—একজন প্রশ্ন করলো।
যতদিন সে মনের ভেতর বন্দি, ততদিন তার ভবিষ্যৎ নেই। বর্তমানই সবকিছু। না তাকে অতীত কিছু দিতে পেরেছে, না সে বর্তমানকে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় করে তুলতে পেরেছে। মানুষ অতীত হতে আসে আর ভবিষ্যতের দিকে যায়, বর্তমান হলো দু’য়ের মাঝখানে মিলনস্থল। বর্তমান এতই ক্ষুদ্র যে, তাকে অবলোকন করতে পারা অত্যন্ত কঠিন। আমরা অতীত ও ভবিষ্যতের একটা ঝাপসা অস্তিত্বকে বর্তমান বলে মনে করি, কিন্তু বর্তমানটিই আমাদের সচেতনতার বাইরে অজানা। তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত না মনকে থামাতে পারছ, বিষয় হতে বিষয়ের ভেতর ঘুরপাক খাওয়া হতে বিরত না হচ্ছ, ততক্ষণ তুমি বর্তমানকে কিছুতেই ধরতে পারবে না। তোমাকে থামতে হবে, একটা ধ্যানের মাধ্যমে, একটা আত্মনিয়োগের মাধ্যমে, একটা মনোবিয়োগের মাধ্যমে। মনকে বিয়োগ করতে হবে। কারণ, মন এতটাই বিভ্রান্ত যে, এর ভেতর হতে কোনো কিছু বের করতে গেলে বা এ দিয়ে কোনোকিছু ধরতে গেলে তুমি অতীত-ভবিষ্যতের একটা বন্ধনের ভেতর আবদ্ধ হবে কিন্তু সংযোগ স্থাপিত হবে না তোমার বর্তমানের সঙ্গে।
বর্তমান কী?
বর্তমান হলো চিন্তাসূত্র ও মনোসংযোগের পরম্পরাহীন সম্পূর্ণ আত্মময় এক পরমশূন্যতাকে অনুভব করা। এর বাইরে বর্তমানকে খুঁজে পাবে না। যে পাথরটিতে বসে আছি, তার সঙ্গে যদি সংযোগ ঘটাতে না পারি, তবে তাকে বর্তমান করে তুলতে পারব না আমি, যে ঘাসের ওপর বসেছিলে তার স্পর্শ কিংবা তলদেশে পিঁপড়ার জীবনযাপনের সঙ্গে সংযোগ না ঘটাতে পারলে বর্তমানকে ধরতে পারবে না তোমরা। প্রকৃতি এক পরম সচেতনতার নাম, আমরা তাকে অচেতন করে ধরতে চাই বলে একে অন্যের শত্রু হয়ে উঠি, তাই আমরা মিত্র নই, এমনকি আমাদের নিজেদেরও।
ধ্যান ও নীরবতার শব্দ
ধ্যানের প্রগাঢ়তা যখন সত্তাকে অহমহীন করে তোলে, তখন সে চোখ খুললেও তাঁর ধ্যান ভাঙে না, এমনকি যদি সে হাঁটতে থাকে, তখনো। সে হাঁটতে থাকবে এমন এক পরিনির্মাণের মশাল জ্বালিয়ে যে, তাঁর পা তাঁকে সবচেয়ে বেশি সঙ্গতি দেবে, সে মনেই করতে পারবে না পা আছে। সাধু তাঁর পা একটি পদ্মফুলের ডোবায় ছুঁয়ে বললেন, কথাগুলো মনে রেখো, ধ্যান তুমি কোনোদিন আয়ত্ত করতে পারবে না যদি মনে করো ধ্যান শিখছ;ধ্যানের পাঠশালা হয় না, যেমন সন্তান জন্মদানের কোনো স্কুল পৃথিবীতে নেই, সন্তান কিভাবে জন্মাতে হয়, তা গর্ভবতী না হলে কী করে বুঝবে? এ শেখার নয়, অনুভবের বিষয়।
তিনি তাকিয়ে রইলেন সেই নীরবতার দিকে যা পদ্মফুলের বন্ধ কুঁড়ির ভেতর একটা শঙ্খের মতো বাজতে চাইছে। পেছনে যারা আছে তারা তরুণ, একজনের বয়স বারো বছর;সে প্রশ্ন করলো, নীরবতা শঙ্খের মতো বাজে কেমন করে?
তিনি বললেন, যেমন করে শঙ্খ কানে বেজে ওঠে, একটা স্পর্শ বেজে ওঠে, একটা চিন্তা বেজে ওঠে, একটা দৃষ্টি বেজে ওঠে, জিভে জল আনা কোনো পছন্দের স্বাদ যেমন ঠিক মনের ভেতর বেজে ওঠে। নীরবতাকে পর্যবেক্ষণ করতে শেখো, কিন্তু নীরবতায় হারিয়ে যেও না। নীরবতাকে একটা ঘোড়ার মতো, একটা ঈগলের মতো কিংবা একটা সাপের মতো ছুটতে দাও এবং তুমি তার পিঠে চড়ো, নীরবতায় যে শব্দ বেজে উঠবে, সে শব্দ তোমাকে ধ্যানে মহিমামণ্ডিত করবে কিন্তু তুমি যদি ছুটতে থাকো নীরবতাকে পিঠে তোলো, তবে ধ্যান হয়ে উঠবে তোমার আচারসর্বস্বতা।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং একটা যন্ত্রণার মতো মুখ করে বললেন, দেখো, আমার মুখের দিকে দেখো, আমি জানি আমার ভেতরে নীরবতা ক্রমাগত ছুটছে, শব্দ করছে, আমাকে থামতে দিচ্ছে না, আর আমি এতে মাঝে মাঝে গভীরভাবে যন্ত্রণাকাতর হয়ে উঠি। কেন জানো? ধ্যানে ক্রমশ তুমি নীরব হয়ে গেলে দেখতে পাবে তোমার ভেতরের অশান্ত রূপ, তুমি ধীরে ধীরে তা শান্ত করতে পারবে, একসময় এমন হবে তোমার ভেতর নির্বাণের আনন্দলাভ হবে, নির্বাণ ঘটতে থাকবে তোমার ভেতর, প্রতিদিনই তুমি বুদ্ধ হবে, অবলোকিতেশ্বর হয়ে উঠবে, হাল্লাজের মতো নিজেকে বলতে ইচ্ছে হবে যে, আমিই সত্য!
কিন্তু সত্য যে গহীন ও প্যাঁচানো বহুমাত্রিকতা, সাধকের নির্বাণ তাই মোক্ষে নয় পরিনির্বাণের অব্যক্তলীলায়, সেখানে না পৌঁছুলে এই যন্ত্রণাটা যায় না।
বিদ্রূপ, উত্তাপ ও সন্তোষের কথা
আজ দুপুরে সাধু তাঁর আশ্রমে অভ্যাগতদের নিয়ে বসলেন। যারা বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের। তিনি তাদের অভ্যর্থনা জানালেন এবং একটা কাঠবাদাম গাছের নিচে গেলেন যেখান থেকে দূরের পাথুরে পর্বতশিখরগুলিকে রৌদ্রালোকিত দেখাচ্ছে, মনে হচ্ছে আগুনে সেঁকে উঠছে আস্ত মাংসপিণ্ড!
অনেকক্ষণ সেখানে তাকিয়ে থেকে একসময় বলে উঠলেন—বিদ্রূপের সময় মানুষের চিত্ত অস্থির হয়ে ওঠে, তখন সে নিজেও বিদ্রূপে সামিল হয়, তার কাছে মনে হতে থাকে এটাই একমাত্র ঢাল বিদ্রূপকে প্রতিহত করার। কিন্তু সে ভুল করে, বরং সে বিদ্রূপকে আরও প্রসারিত করে, তার জীবন থেকে কিছুতেই বিদ্রূপ দূরে সরে না। আজকের এই রৌদ্রদগ্ধ দুপুরবেলা তোমরা আমার সামনে বসে আছ, যে ছাউনি তোমাদের ঢেকে দিচ্ছে, সে কিন্তু রৌদ্রের প্রখরতাকে ঠেকাবার ঢাল নয়, সে নিজে তাপদগ্ধ হয়, ক্ষয়ে যায়, রোদ-বৃষ্টি-হাওয়ার প্রচণ্ডতায় নিজেকে নিঃশেষ করে। তুমি ঢাল নয়, ছাউনি হও, সহ্য করতে শেখো, ছাউনির তলে যেমন ছায়া, সহ্যশক্তির তলে তেমনি সন্তোষ; ছায়াময়তাকে আমরা ভালোবাসি, যেমন সন্তুষ্টিকে আমরা পেতে চাই কিন্তু এই দুটির জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, অথচ প্রকৃতিতে এই দুটিই অত্যন্ত স্বাভাবিকতার ভেতর দিয়ে তুমি পেতে পারো। গাছ যেমন ছায়া দেয় তেমনি তুমিও তোমার অন্তরকে সন্তোষ দিতে পারো।
একটি ছেলে বলে উঠলো, অস্থিরতাপূর্ণ সময়ে যখন এত তীরবিদ্ধ হয় মানুষ তখন প্রত্যেকেই প্রত্যেকের হাতে একটি করে ঢাল ও তরোয়াল রাখে। সে হয়তো মারা পড়বে যদি সে অন্যকে প্রতিহত না করে। আপনার কথায় আমরা কি অপঘাতে মরণকে বরণ করে নেব?
বালকটির এমন সাংঘাতিক প্রশ্ন শুনে তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। দুপুরবেলা অভ্যাগত সকলেই তখন সামান্য চা পান করছিলেন, ছেলেটির চায়ের কাপ পরিপূর্ণ, তার সে দিকে কোনো আগ্রহ নেই, সে কেবল তার প্রশ্নের উত্তরের দিকে তৃষ্ণার্ত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। সাধু বুঝতে পারলেন তার মনের অবস্থা, এখন সে দূরের রৌদ্রদগ্ধ পাথুরে পর্বতশিখরের মতোই লালবর্ণ ধারণ করে আছে, তাকে এ সময় উত্তাপ হতে রক্ষা করতে হবে, উত্তর নয়।
একটুপর একটা হাওয়ার ঝাপটা সমস্ত উপত্যকাজুড়ে বয়ে গেল, এমন প্রখর রৌদ্রের ভেতর দিয়ে এমন সুশীতল হাওয়া কেমন করে এলো আর সকলের দেহমনকে প্রশান্ত করে দিলো মুহূর্তে! তিনি বলে উঠলেন, দেখো আজকের এই প্রখর তাপে তোমরা যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছিলে দেহমনে তখনই কোথা থেকে এই সুশীতল হাওয়া এসে তোমাদের আনন্দদান করলো, সে কোথা থেকে এলো? এই দখিনা হাওয়া যেখান থেকেই এলো আর সে উত্তরে যেখানেই যাবে সে একটাই সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে যে, দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের প্রাণ ওই বৃষ্টির আগাম বার্তায় প্রশান্ত হচ্ছে।
আমরা যখন একটা অস্থিরতার ভেতর দিয়ে সময় কাটাই, যখন প্রতিটি মানুষের দেহমন অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, অশান্ত হয়ে ওঠে, সে এতটাই প্রতিহতপ্রবণ হয়ে ওঠে যে, তার সামনে দিয়ে অনেক ছোট ছোট সুসংবাদ এই শীতল হাওয়ার মতো বয়ে যায়, সে টের পায় না। তোমাদের প্রশান্তির চাইতে জরুরি ধৈর্য্য, এটা আরোপিত নয়, এ হলো মনোসংযোগের সরগম; এ না থাকলে তুমি লাভ করতে পারবে না উত্তাপকে পার হওয়ার মানসিক সক্ষমতা। যে সক্ষমতা তোমাকে বুঝতে শেখাবে জীবনের মানে, তোমার ভেতরের নীরবতা তোমার জীবনকে সর্বদা একটি ধ্যানের মহিমায় আলোকিত করে তুলবে।
তুমি প্রশ্ন করেছ, আমিও প্রশ্ন করি। কিন্তু আমাদের উত্তর আমাদের ভেতরেই আছে, যেমন এই সুশীতল হাওয়া উত্তাপের ভেতর দিয়েই প্রবাহিত হয়।
চলবে…