আমাদের বারোয়ারি গান লেখা চলছে। মুনশি রইস উদ্দিনের ‘সারেগামা’ দেখে দেখে সুরারোপের চেষ্টা করে খোকন। আর ধানক্ষেতের আল ধরে হাঁটার সময় সেই সুরে চলে কণ্ঠসাধনও।
এদিকে, পায়ের গোড়ালিতে ফের ফোঁড়া উঠতে থাকে, সঙ্গে বাড়ে ব্যথাও। একদিন এলেন নুর আলম মুন্সী। ফোঁড়া দেখে বললেন, ‘শোনো তোমাকে আমি ঘি পড়া দিতেছি। কুসুম গরম করে ফোঁড়ার ওপর মালিশ করেব। দেখবে দ্রুত পেকে গলে যাবে।’ তার পরামর্শ মতো চলছে সেই চিকিৎসাও। ব্যথা যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন বঙ্কিম বাবুর ওষুধ খাই। ব্যথা কমে। আবার কদিন পর খাই ডাক্তার নূর উল্লার ওষুধ, ব্যথা বাড়ে। আর চলে নুর আলম মুন্সীর দেওয়া ঘিয়ের মালিশ। এই ত্রিমুখী চিকিৎসাসেবনে আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী সলিমুল্লাহ।
একদিন ফোঁড়ায় খুব ব্যথা। সঙ্গে চুলকানিও। চুলকানি সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরি ফোঁড়ার মুখ। গলগল করে বের হতে থাকে পুঁজ। এই প্রথম বঙ্কিম বাবুর কাটাছেঁড়া ছাড়াই পুঁজ বের করে ফেলি। এরপরও চুলকানি থামে না। চোখ বন্ধ করে জোরে চেপে ধরি। এবার পুঁজের সঙ্গে রক্তও বের হয়ে আসে। রক্ত দেখে থাকতে পারি না। দুই হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ফোঁড়ার দুই দিক থেকে চাপ দিতে থাকি। আর অমনি ঘটে যায় অবিশ্বাস্য ঘটনা। এক ইঞ্চি সাইজের দুটি খেজুর কাটা ফুড়ৎ করে বের হয়ে ছয় ইঞ্চি দূরে মাটিতে পড়ে। আমার তখন কারামুক্তির আনন্দ! সেদিন বঙ্কিম বাবু, নুর আলম মুন্সীকে খবর দেওয়া হয়। বঙ্কিম বাবু ব্যথানাশক কিছু ওষুধ দিয়ে যান। আর নুর আলম মুন্সী বারবার স্মরণ করিয়ে দেন, তার ঘি পড়ার কারণেই যে কাঁটা বের হয়েছে, সে কথা।
মীর মশাররফ হোসেন একটা উপন্যাস লিখেছেন, আধা শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন। বাঙালি মুসলমানকে কাঁদাতে চেয়েছেন, সফল হয়েছেন। বাঙালি মুসলমানও এতই বোকা যে, খতিয়ে দেখলো না, যুদ্ধটা ধর্মীয় যুদ্ধ না, ক্ষমতার।
পা থেকে খেজুর কাঁটা বের হয়ে গেছে—এই সংবাদ শুনে পরদিন অনেকেই এলো। সন্ধ্যার দিকে এলো ইউসুফ। তার হাতে একটি বই। বইয়ের সাইজ না আমাদের পাঠ্যবইয়ের মতো, না আউট বইয়ের মতো। পাঠ্যবইয়ের চেয়ে একটু ছোট, আউট বইয়ের চেয়ে সামান্য বড়। প্রচ্ছদের ওপর বড় অক্ষরে লেখা, ‘মানুষ কী করে বড় হলো’। লেখক দুজন। ইলিন ও সেগাল। ইউসুফ নানা বিষয়ে কথা বলছে, কিন্তু আমার মনোযোগ বইটির দিকে। সে যা কিছুই বলে, আমি কেবল হুঁ-হ্যাঁ বলি। এই হুঁ-হ্যাঁ-তে সে বিরক্ত হয় কি না, বোঝা যায় না, তবে আমার মনোযোগ যে বইটির দিকে, তা যে সে বুঝতে পেরেছে, সেটি স্পষ্ট। বলে, ‘আরে হা করে তাকাতে হবে না। বইটা তোর জন্য আনছি। নে। কলিজা ঠাণ্ডা কর।’ সঙ্গে সঙ্গে ছোঁ মেরে বইটি নিয়ে নেই।
ইউসুফ চলে গেলে পড়া শুরু। বইয়ের দুই লেখক সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। একজনের পূর্ণ নাম মিখাইল ইলিন, আরেকজন ইয়েলেনা সেগাল। বইটি প্রকাশিত হয়েছে মস্কোর রাদুকা প্রকাশন থেকে। ভেতরে মানবজাতির বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপের ছবি। এই বইয়ে প্রথম চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পাই। এর আগে ভবেষ রায়ের লেখা ‘শত মনীষীর কথা’য় ডারউইন সম্পর্কে পড়েছি কিন্তু তার তত্ত্বের বিশ্লেষণ কোথাও পাইনি। তাই ডারউইন নিয়ে কোথাও কথা বলার সাহস পেতাম না।
এসব বিজ্ঞানবিষয়ক কথা বলার সাহস না পাওয়ার আরেকটা কারণ ছিল। স্কুল ছুটির পর আমরা মৌলবি ওবায়দুল হকের বাড়ির সামনে যে বটতলায় বসে আড়্ড়া দেই, সেখানে একদিন ‘বিষাদসিন্ধু’ নিয়ে কথা হচ্ছিল। ঈমাম হাসান, ঈমাম হোসেন ও ইয়াজিদ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা। অনেকেই হাসান-হোসেনের জন্য আপসোস করতে করতে ইয়াজিদকে কাফের পর্যন্ত সাব্যস্ত করছে। বিষয়টি আমার ভালো লাগলো না। তাই প্রতিবাদে ফেটে পড়ি, ‘তোরা কিসের ভিত্তিতে ইয়াজিদকে কাফের বলছিস?’ আলোচকরা সমস্বরে বলে, ‘কেন? সে তো হোসেনের কল্লা কাটাতে সিমারকে পাঠাইলো? রাসুলের নাতিদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাইলো। সে কাফের না?’ তাদের যুক্তি শুনে আমার গা জ্বলে। বলি, ‘রাসুলের নাতি হলে নিষ্পাপ-নির্দোষ, আর অনাত্মীয় মুসলমান হলেও কাফের? এই যুক্তি তোরা কোথায় ফেলি? ইয়াজিদ কার ছেলে তোরা জানিস? ঈমাম মুয়াবিয়ার। আর ঈমাম মুয়াবিয়া কে জানিস? খোদ রাসুলের সাহাবি। তাহলে ঈমানে, রাজকীয় যোগ্যতায় হাসান-হোসেনের চেয়ে কোন অংশে ইয়াজিদের কমতি আছে? মীর মশাররফ হোসেন কোনো ইতিহাস রচনা করেননি; একটা উপন্যাস লিখেছেন। আধা শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন। বাঙালি মুসলমানকে কাঁদাতে চেয়েছেন, সফল হয়েছেন। বাঙালি মুসলমানও এতই বোকা যে, খতিয়ে দেখলো না, যুদ্ধটা ধর্মীয় যুদ্ধ না, ক্ষমতার। ক্ষমতার যুদ্ধ মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে হয়নি, হয়েছে দুই মুসলমানের মধ্যে। তাহলে একপক্ষ যদি খাটি মুসলমান হয়, অন্যপক্ষ কাফের হয় কী করে?’ আমার প্রশ্নে উপস্থিত তার্কিকদের মুখে কোনো কথা নেই। কেবল পেছন থেকে কে একজন ক্ষীণকণ্ঠে ফোঁড়ন কাটে, ‘তুই তো নাস্তিক। তোর কাছে ইয়াজিদ ভালো, হোসেন খারাপ!’
আর তখন সেটি কেবল একজনের মনের মাধুরি মেশানো থাকে না, হয়ে ওঠে সম্মিলিত সঙ্গীত। গানের তালে তালে এগিয়ে চলি। আজও তেমন। বটতলা কখন পৌঁছে গেছি গানের সুরে সুরে—খেয়ালই করিনি।
এবার আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ‘কী বললি’—হুঙ্কার দিয়ে উঠতেই দেখি সে তার্কিক পগার পার। খোকন বলে, ‘বাদ দে। এসব আলাপ আমরা দুজন মিলে করবো। সবার সামনে আর না।’ আমিও চুপ হয়ে যাই। দীর্ঘদিন আর জ্ঞানের বিষয় নিয়ে আলোচনা তেমন হয় না।
এবার ‘মানুষ কী করে বড় হলো’ বইটি পেয়ে আলোচনার নতুন দরজা খুলে গেলো। মনে মনে বেশ খুশি। পরদিন থেকে ফের স্কুলে যাওয়া শুরু। তখনো পায়ের ব্যথা পুরোপুরি সারেনি। তাই খুঁড়িয়ে হাঁটি। সাইকেল চালানোর সাহস পাই না। অনেক দিন পর স্কুলে আবার দেখা ইলিয়াছ-সোহেল-নুর হোসেন-নিজামের সঙ্গে। টিফিন পিরিয়ডে অনেকে খেলাধূলা মত্ত। আমাকে ডাকে, যাই না। তখনই তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ শুরু—‘ও ল্যাংড়া-ল্যাংড়া’ (অর্থাৎ খোঁড়া)। এসব বিদ্রূপ গা সওয়া হয়ে গেছে, তাই প্রতিবাদ করি না। কালামের দোকান থেকে পাউরুটি-কলা খেয়ে অপেক্ষা করি, কখন ক্লাস শুরুর ঘণ্টা পড়বে।
স্কুল ছুটির পর পাঠ্যবই ও খাতার মাঝখানে রাখা ‘মানুষ কী করে বড় হলো’ বইটি খোকনকে দেখাই। সে বলে, ‘কিসের বই?’ জবাবে কিছু বলি না। কেবল হাসি। সে বিরক্ত হয়। বলে, ‘আগে তো বলবি, না বলে হে হে করে হাসলে বুঝবো কী করে?’ এবার তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলি, ‘বটতলায় গেলে বলবো।’
আমরা রাস্তা ছেড়ে ধানক্ষেতের আলে এসে পড়েছি। দুই পাশে ধানক্ষেত। ধানগাছে শীষ আসার সময় হয়েছে। প্রতিটি ধানগাছ এখন মায়ের মতো পরম মমতায় কচি-কচি ধানের ভ্রূণকে গর্ভে ধরে রেখেছে। কদিন পর ধানের শীষগুলো আলো-হাওয়ার পরশে আসবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। বাতাস কেমন, ‘দামাল ছেলের’-‘দস্যি মেয়ের’ মতো ধানগাছে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। যেন ভ্রূণগুলোকে বলছে, ‘আয় তোরা বেরিয়ে আয়! বেরিয়ে আয়! আর কত ঘুমাবি?’ আর গাঢ় সবুজ ধানপাতাগুলো ‘না-না’ বলে দামাল বাতাসকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এরই মাঝে একটি একটি করে গঙ্গফড়িং এসে বসছে ধানপাতার ওপর, মনে হচ্ছে—অমনি যেন পাতাগুলো নুয়ে পড়বে। না নুয়ে পড়ছে না, আবার সোজা হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। দামাল বাতাসকে যে ধানগাছ রুখে দেয়, সে মা কি সামান্য গঙ্গাফড়িংয়ের ভারে নুয়ে পড়তে পারে?
অবারিত সবুজের মাঝখানে আমরা কজন ছাত্র-ছাত্রী। ওপরে নীল আকাশ। মাঝে মাঝে ভেসে যাচ্ছে পেঁজাতুলোর মতো সাদা-সাদা মেঘ। তারই ছায়া এসে পড়ছে ধানক্ষেতে, কখনো বা আমাদের মাথায়। সেই ছায়ার সঙ্গে আমাদের কেউ কেউ দৌড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু না। ছায়া আরও দ্রুত দৌড়ায়। অনেক দূর চলে যায়। আমাদের সঙ্গীরা দৌড়ে তার নাগাল পায় না। হাঁপাতে হাঁপাতে থেমে যায়, ততক্ষণে পদাতিকরাও তাদের সঙ্গে এসে শামিল হই। এই রৌদ্র-ছায়ার খেলা এই সময় এলে প্রতিদিনই দেখি। আর মনে পড়ে যায়—‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরির খেলা রে ভাই লুকোচুরির খেলা/ আজ নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই সাদা মেঘের ভেলা।’ যখনই গানটি বেসুরো গলায় আমি ধরি, সঙ্গে সঙ্গে সুর মেলায় খোকন। বাকিরাও যোগ দেয় তাতে। আর তখন সেটি কেবল একজনের মনের মাধুরি মেশানো থাকে না, হয়ে ওঠে সম্মিলিত সঙ্গীত। গানের তালে তালে এগিয়ে চলি। আজও তেমন। বটতলা কখন পৌঁছে গেছি গানের সুরে সুরে—খেয়ালই করিনি।
বটগাছের পেছনে নাজমাদের বাড়ি, সে বাড়ি চলে গেছে। আলেয়া-রহিমা-যমুনাও বাড়ির পথ ধরেছে। সবাই নিজ নিজ পথ ধরলে বাকি থাকি আমরা কজন—ধনু কাকা, সেলিম, খোকন, খায়রুল বাসার, আবুল হোসেন, বেলাল, আনোয়ার ও আমি।
খোকন বলে, ‘সারারাত সোনাভানের পুথি শুনে সকালে কয়, সোনাভান নারী না পুরুষ! বেলালের দশাও তাই।’ এবার সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। আর তখনই বেলাল অপমানে-অসম্মানে দপ দপ পা পেলে বাড়ির পথ ধরে।
আজ আলোচনার বিষয় কবিতা না। গান না। ছড়া না। কোনো গল্প না। ভূত-প্রেমের কাহিনীও না। ‘বিবর্তনবাদ’। আনোয়ার বলে, এইটা আবার কী জিনিস? খোকন বলে, ‘আহ তুই থাম তো।’ খোকন ঠাণ্ডা মানুষ। কিন্তু তার ধমকে আমার মতো বদ মেজাজির গলাই যেন শোনা গেলো। সেই রূঢ় স্বরে আনোয়ার চুপসে গেলো। বাকিরা গোল হয়ে বসেছে।
এই আসরে আমিই একমাত্র বক্তা। বাকিরা শ্রোতা। কারণ যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, তার সামান্যই জানে খোকন। অন্যরা কিছুই জানে না। বিবর্তনবাদ বিষয়ে খোকন কিছুটা জানার কারণ আছে। কদিন আগে তাকে ভবেষ রায়ের ‘শত মনীষীর কথা’ দিয়েছিলাম। সেখানে ডারউইনের সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল। ওই জীবনী পড়ে বিবর্তনবাদ শব্দের সঙ্গে সামান্য পরিচয় ঘটেছে তারও। সুতরাং আজ যখন বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা করছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে আমার সমর্থক। একইসঙ্গে সমঝদার শ্রোতাও। এছাড়া এই অজপাড়াগাঁয়ে আরজ আলী মাতুব্বর বা ডারউইন নিয়ে কথা বলার মতো কেউ নেই। যেখানে ঈমাম হোসেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় লোকে ইয়াজিদকে কাফের মনে করে, সেখানে আরজ আলী মাতুব্বর কিংবা ডারউইন কিংবা বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা নিতান্তই বিপজ্জনক। অনেকটা হাস্যকর। বলা যায় অপরিণামদর্শিতাও। যে কেউ আমাদের কাফের আখ্যা দিয়ে বসতে পারে। তাই আলোচনা চালিয়ে যাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। খেলাচ্ছলে। আড্ডার মেজাজে। যেন বাইরে থেকে লোকে ভাবে নিতান্তই খেলাধূলা বা গল্পে মশগুল।
মিখাইল ইলিন ও ইয়েলেনা সেগালের ‘মানুষ কী করে বড় হলো’বইয়ে বর্তমান মানবজাতির আদিপুরুষদের টিকে থাকার লড়াইয়ের বর্ণনা আছে। আছে অন্যান্য প্রাণীর জীবনসংগ্রামের বিবরণও। তবে, কোনোটিই সাধারণ ইতিহাসের মতো করে নয়, সবই নৃতাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ। ফলে মানবজাতির কোন পুরষ কোন আকৃতির ছিল, কোন অঞ্চলে বসবাস করতো—এসব যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনি বিবরণ দেওয়া হয়েছে আফ্রিকার জঙ্গলের গাছপালা কিভাবে উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সরে গেছে, তারও।
ওই বইয়ে আরও বর্ণনা করা হয়েছে, আমাজানের গাছপালা কয় স্তরবিশিষ্ট। কোন স্তরে কোন পশু পাখির বাস। আবাসস্থল অনুযায়ী কিভাবে প্রাণী টিকে থাকার লড়াই করে। এই লড়াইয়ে শারীরিকভাবে শক্তিশালীরা টিকে যায়, নাকি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শক্তিমানরা?
এসব বিষয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা শেষ হলে বেলাল বলে, ‘কই এখানে তো বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি, সেকথা বলা হয়নি।’ জবাবে বলি, ‘আমি কি কোথাও বলেছি, এই বইয়ে সে বিষয়ে আছে? বলেছি, বিবর্তনবাদের কথা। কিভাবে মানুষ কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে আজকের রূপ নিয়েছে, সেটি বলেছি। কিন্তু মানুষের আদি পুরুষ বানর ছিল, তা তো বলিনি। আর এই বইয়ে তা নেইও।’
একটু থেমে যোগ করি—‘বিবর্তনবাদ বলছে, মানুষ ও অন্য নরবানরদের পূর্বপুরুষ অভিন্ন ছিল। আর ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান মাবষ প্রজাতিরও আদি পুরুষের সৃষ্টি হয়েছে। বিবর্তনবাদ মনে করে, শিম্পাঞ্জি, গরিলা ও ওরাং ওটাং অর্থাৎ বনমানুষের জন্ম একই ধরনের পূর্বপুরুষ থেকে। তবে, এই ব্যাখ্যা বলে না—মানুষের আদিপুরুষ বানর ছিল। বরং বলে, মানুষ ও নরবানরের আদিপুরুষ অভিন্ন ছিল।’ এবার বেলালের পাল্টা প্রশ্ন, ‘বিবর্তনবাদ তো বলে বানর থেকেই মানুষ?’ তার প্রশ্ন শুনে হেসে ওঠে সবাই। খোকন বলে, ‘সারারাত সোনাভানের পুথি শুনে সকালে কয়, সোনাভান নারী না পুরুষ! বেলালের দশাও তাই।’ এবার সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। আর তখনই বেলাল অপমানে-অসম্মানে দপ দপ পা পেলে বাড়ির পথ ধরে।
চলবে…
জীবনের যতিচিহ্নগুলো-৩১॥ মোহাম্মদ নূরুল হক