[পর্ব-৬]
ঘুমিয়েই কি কেটে যাবে একটি জীবন? জীবন হোক কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর, ছুটে চলার নিরন্তর অনুপ্রেরণা। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কবরের জীবন চিরকাল পড়ে রয়েছেই। [হজরত আলী (রা.)]
লাগেজ, ব্যাগপত্র নামানো হলো। ভাড়া মিটিয়ে আমরা রিসিপশনে গেলাম। হোটেলের লোকজনকে কিছু বলার আগেই বুঝে ফেলেছে আমরা কে, কোথা থেকে এসেছি। রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার কবি-সাহিত্যিকদের নামের তালিকা বের করলেন। কবি কামরুল হাসান ও কবি সেঁজুতি বড়ুয়ার নাম এই তালিকায় শনাক্ত করা গেলেও আমার নাম পাওয়া গেলো না। ঘটনা কী! তবে কি আমি অনাহুত! ম্যানেজার কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বললেন। কিছুক্ষণ বাদে অন্য একটি তালিকা বের করে তবে নাম পাওয়া গেলো। নীল কালির কলমে নামের নিচে টান দিতে দিতে ম্যানেজার বললেন ‘এহি হ্যায় আপ’।
মন খারাপ হয়ে গেলো। কারণ আমাকে থাকতে হবে ‘সপ্তগিরি’ নামে অন্য একটি হোটেলে। সেখানেই আমার জন্য রুম বারাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশার কথা এই, রুমমেট হিসেবে যার নাম দেখতে পাচ্ছি, তিনি আমার সুপরিচিত কবিবন্ধু তুষার কবির। কামরুল ভাই ও সেঁজুতি অভয় জানিয়ে নিজ নিজ রুমে চলে গেলেন। বুঝলাম, ‘পৃথক পালঙ্কে’ তবে আমার আবাস। ‘সপ্তগিরি’ থেকে একজন এসে আমার লাগেজ হাতে নিয়ে বললেন, ‘স্যার চলিয়ে’। আশাহত মনোরথে ভর দিয়ে তাকে অনুসরণ করলাম। তালিকা দেখে বুঝেছি, বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত কবিদের মধ্যে আমরাই প্রথম এসে দিল্লিতে পৌঁছলাম।
দীর্ঘভ্রমণের ক্লান্তি সরিয়ে মনে একটা সুখ সুখ অনুভূতি পাওয়া যাবে।
‘হোটেল কিয়ান’ থেকে বের হয়ে সরু রাস্তা। তারপর ওপারেই ‘হোটেল সপ্তগিরি’। মিনিট দুয়েকের দূরত্ব। কাউন্টারে গিয়ে চেকইন সেরে লিফটের তিন নম্বর বাটন চাপলাম। হোটেল ম্যাসেঞ্জার হিন্দিতে কথা বলছে। আমি হিন্দি ভাষা বুঝলেও বলার ক্ষেত্রে অতটা দক্ষ নই। দরজার লক খুলছে না। প্রায় ১০মিনিট ধরে চেষ্টা করে ম্যাসেঞ্জার কিছুটা ত্যক্তবিরক্ত। কারণ শুরুর দিকে হোটেল সম্পর্কে আমাকে যে মধুর প্রশাংসাবাণী শুনিয়েছেন। সেটা বুঝি দরজা খোলার আগেই মিথ্যা প্রতিপন্ন হতে চলেছে।
আমাকে দাঁড় করিয়ে আবার তিনি কাউন্টারে গেলেন। ফিরে এসে অবশেষে সফল হলেন। লক খুলছে এবার। রুমে প্রবেশ করে কিছুটা নির্ভার লাগছে। বেশ পরিপাটি। ধবধবে সাদা বিছানার চাদর। পাশাপাশি দুটো বেড মৌন ভাষায় আমাকে যেন অভিবাদন জানালো। ওয়ালে টিভি সেট করা।
রিমোর্ট দিয়ে টিভি অন করলাম। রুমে একা থাকলে বেশিরভাগ সময় টিভি চালু রাখি। এটা আমার পুরনো অভ্যাস। নির্জন কক্ষের নীরবতায় সঙ্গবোধ লাভের সামান্য আশা। টিভিতে মিস্টার নরেন্দ্র মোদি হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছেন। তার দেশে যেহেতু এসেছি, সেহেতু কিছুক্ষণ চলুক। একজন চা বিক্রেতা থেকে হয়ে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিস্ময়কর বটে। ভারতের ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে (ভারতীয় জনতা পার্টি, বিজেপি) মোদি প্রথম দৃষ্টান্ত। যিনি মাত্র ১৩ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
একপাশে সিঙ্গেল সোফা রাখা আছে। বেডের পাশে টেবিলে রাখা আছে টেলিফোন। প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি রাখার জন্য আছে ড্রয়ার, কেবিনেট। নাহ, মোদি সাহেবের বাহারি লেকচার শুনে ভালো লাগছিল না। আজকাল রাজনৈতিক নেতাদের কথায় আস্থা পাই না। মনে হলো হকারের লেকচার শুনছি। টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করে দিলাম। তারচেয়ে কাজল-শাহরুখের রোমান্টিক গান মন্দ নয়। দীর্ঘভ্রমণের ক্লান্তি সরিয়ে মনে একটা সুখ সুখ অনুভূতি পাওয়া যাবে।
টেবিলে আগে থেকেই একটা নোটবুক এবং কলম রাখা ছিল। নোটবুকে হোটেলের ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড লেখা আছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ কবিদের জন্য ভালো ব্যবস্থা রেখেছেন। তাড়াতাড়ি ওয়াইফাই কানেক্ট করলাম। প্রথমেই কবি ও কথাশিল্পী আশরাফ জুয়েলকে ম্যাসেঞ্জারে কল দিলাম। তিনি এখনো ঢাকায়। বিকেলে আসবেন। তাকে কল করার কারণ, ইতোমধ্যে জেনেছি বাংলাদেশ থেকে আগত কবি-সাহিত্যিক টিমের অন্যতম প্রতিনিধি তিনি। প্রায় প্রতিবছর এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি না চাইলেও করতে হয়। কারণ FOSWAL (Foundation Of SAARC Writers And Literature)-এর সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছেন। অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির সভাপতি, বিখ্যাত ভারতীয় লেখক শ্রী অজিত কৌর তাকে সন্তানতুল্য মনে করেন।
আর আমি আমার ভাবকল্পনাকে যথোপযুক্ত শব্দের বুননে উপমা, রূপক কিংবা প্রতীকের বিস্তারে কবিতাময় করে তুলি। এদিক থেকে আমরা পরস্পর শিল্পের সন্তান।
অবশ্য এ রকম করে বাংলাদেশের আরও কয়েকজন লেখক FOSWAL (Foundation Of SAARC Writers And Literature) এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। জুয়েল ভাইকে কল দিয়ে ‘সপ্তগিরি’ হোটেলে আমার একার নির্বাসনের কথা জানালাম। তিনি অভয় দিয়ে বললেন, ‘অপেক্ষা করুন। আমি এসে ঠিক করে দিচ্ছি।’
ফোন রেখে ম্যাসেঞ্জারে কবি তুষার কবিরকে খুঁজলাম। তিনি অফলাইনে আছেন। ঘণ্টাখানেক পর তাকে ম্যাসেঞ্জারে পেয়ে আবার কল দিলাম। কথা বলে জানা গেল এবার তিনি আসতে পারছেন না। কারণ অফিসে কাজের চাপ। ছুটিও মিলছে না। যাহ, রুমমেটও হাতছাড়া হলো। তবে একাই থাকবো! দিল্লির লাড্ডু একাই খাবো! জুতামোজা খুলে বাথরুমে গেলাম। ওমা! পানি নেই। অনেক চেষ্টা করেও লাভ হলো না। আবার বেরিয়ে ইন্টারকমে ম্যানেজারকে কল দিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে একজনকে পাঠালেন।
লোকটি বড়ই অদ্ভুত। দেখতে বেটে ও মোটা। রুমে ঢুকেই হোহো করে হাসছে। হিন্দিতে কী সব বলেছে, বোঝা যাচ্ছে না। কথাগুলো যেন মুখের ভেতরেই গমগম শব্দে মিলিয়ে যাচ্ছে। তার ইয়াবড় ভুঁড়ি। হাঁটার সময় ভুঁড়ি যেন ডানেবামে ছন্দে দোলে। অবশেষে গরম পানি এলো। দীর্ঘভ্রমণের পর ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল সেরে বেশ ঝরঝরে লাগছে। তখন বাজে সকাল ১১টা। কামরুল ভাই এবং সেঁজুতি দুপুর ১টায় সপ্তগিরির রিসিপশনে আসবেন এমনটিই সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এই দুইঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। ধবধবে সাদা বিছানায় গা এলিয়ে অনেক কথাই মনে পড়ছে।
দিল্লিতে আসার আগে ফেইসবুকের কল্যাণে এখানকার দুজন লেখকবন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। তাদের মধ্যে একজন চিত্রশিল্পী মৌমিতা ভট্টাচার্য। অন্য জন কবি পীযূষকান্তি বিশ্বাস। প্রসঙ্গক্রমে এই দুই শিল্পবন্ধুকে নিয়ে না লিখলে অন্যায় হবে। কারণ আমার এই ভ্রমণ মূলত কাব্যভ্রমণ। কবি ও কবিতার খোঁজে অনিকেত জীবন।
মৌমিতার জন্ম কলকাতা হলেও সে থাকে দিল্লিতে। জানালাম আমি এসেছি। এখবর শুনে সে বেশ উচ্ছ্বসিত হলো। ইনবক্সে আমাকে তার মোবাইল নাম্বারও দিয়েছে। কলকাতায় বেড়ে ওঠা বন্ধুটির প্রগতিশীল মনোভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করে। তার আঁকা ছবি ভীষণ পছন্দ করি। মুগ্ধ হয়ে দেখি। কখনো দেখা হয়নি সত্য। তবে আমাদের পরিচয় যেন অনেক দিনের। অবশ্য এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা পরস্পর আবেগের কারবারি। সে তার অন্তর্গত ভাবকল্পনাকে রঙতুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে মূর্ত করে তোলে। আর আমি আমার ভাবকল্পনাকে যথোপযুক্ত শব্দের বুননে উপমা, রূপক কিংবা প্রতীকের বিস্তারে কবিতাময় করে তুলি। এদিক থেকে আমরা পরস্পর শিল্পের সন্তান।
সংস্কৃত কলেজের কৃতি ছাত্রী মৌমিতা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি শেষে দিল্লিতে থিতু হয়েছেন। এখন ছবি আঁকাই তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। চোখেমুখে চিত্রকলার প্রতি নিমগ্ন প্রণয় আভাসিত হয়। তার আঁকা একটা ন্যুড ছবিও যেন অব্যক্ত শতকথা উসকে দেয় আমাদের মনে। সোজা চোখে আমরা যা কিছু প্রত্যক্ষ করি। সেসবই ধ্রুব নয়। তার অন্তরালে ব্যাপ্ত আছে হাজারও ভাবকথা।
দিল্লি হাট কিংবা কনটপ্লেসের কফি হোমে আয়োজিত কবিদের আড্ডার আহ্বায়ক তিনি। বাংলা ছাড়াও দিল্লিতে স্থিত হিন্দি, ইংরেজি, পাঞ্জাবি কবিদের সঙ্গে নিয়মিত বাংলা সাহিত্যের আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
মৌমিতার আঁকা ছবিগুলো দেখে দেখে আমি এসব ভাবি। এযাবৎ সে শতাধিক সৃজনশীল বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছে। তার আঁকা প্রচ্ছদে কী গভীর মায়া ছুঁয়ে থাকে। ইলাস্ট্রেশনের কাজেও তার মুন্সিয়ানা আছে। বিভিন্ন ওয়েবম্যাগে আমরা সেসব দেখেছি। সে চারটি যৌথ চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। একটা কলকাতা ফাইন আর্টস অ্যাকাডেমিতে। বাকিগুলো হয়েছে দিল্লিতে। তার আঁকা ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবি। আহা, কোনোদিন তার তুলির আঁচড় লাগবে কি আমার গায়! এই লেখার ফাঁকে আবদার রেখে দেই। আমাকে আঁকবে তুমি। আঁকবে তো?
পীযূষকান্তি বিশ্বাস তেমনই আরেকজন দিল্লির বাঙালি কবিবন্ধু। দিল্লি আসার আগে ম্যাসেঞ্জারে ঘনঘন কথা হয়েছে আমাদের। এটা বিশেষ প্রাপ্তি বৈকি। কথায় বলে, ‘যে যেমন, তার বন্ধুও তেমন’। আমি যেহেতু কবিতায় সমর্পিত থেকে মর্মে মরে থাকি নিশিদিন। কবি পীযূষকান্তি বিশ্বাসও তেমন কবিতানুরাগী। পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিইয়ারিংসহ অন্য অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কবিতাই যেন নেশা। কবিতা নিয়ে কথা বলা শুরু হলে তিনি হয়ে ওঠেন তুখোড় আড্ডাবাজ। ২০০২ সাল থেকে দিল্লিতেই লেখক জীবনের হাতেখড়ি। দিল্লির ধুলিকণা এবং হাওয়ায় মিশে আছে তার শিল্পবৃত্তান্ত। দিল্লির রুক্ষতা, হরিয়ানভি ঠাঠ, রক্তক্ষয়ী আবহাওয়া আর বঞ্জর আরাবল্লীর চাতালে তিনি খুঁজে ফেরেন শিল্পের শাঁস।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় পীযূষের জন্ম হলেও ১৯৯৩ থেকে কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। মূলত কবিতা লিখলেও কবিতার সমালোচনামূলক গদ্যও লেখেন। বর্তমানে ‘দেহলিজ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঘুমঘর’। অতপর ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘আকাশচুম্বন’।
শামসুর রাহমান যেমন ঢাকা শহরের বাস্তবরূপ তাঁর কবিতার উপজীব্য করেছেন। পীযূষের কবিতায়ও দিল্লি শহরের অভ্যন্তরীণ চরিত্র, নানা উপকরণ ও অনুষঙ্গ আভাসিত হয়েছে। দিল্লির প্রেক্ষাপট, খাদ্যাভ্যাস, ডায়াস্পোরা, প্রবাসজীবন, পরিবেশে রুক্ষতা, অন্যভাষার সংকরায়নসহ আধুনিক নগরচৈতন্যের স্বরূপ তার কবিতায় দূর্লক্ষ নয়। দিল্লি হাট কিংবা কনটপ্লেসের কফি হোমে আয়োজিত কবিদের আড্ডার আহ্বায়ক তিনি। বাংলা ছাড়াও দিল্লিতে স্থিত হিন্দি, ইংরেজি, পাঞ্জাবি কবিদের সঙ্গে নিয়মিত বাংলা সাহিত্যের আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। বন্ধুর একটি কবিতা পড়া যেতে পারে:
বিষয়বস্তুর ভিতরে ঢুকে মনে হলো
পথ হারিয়েছি
ফিরে আসার চিহ্নগুলি ধেবড়ে গেছে
. পায়ে পায়ে
আর দিলীপদা বলছিলো
সাংকেতিক বাঁকগুলোর কথা
গ্রানাইট থেকে কিভাবে তুলে নিতে হয় প্রচ্ছদ,
কিভাবে জানুয়ারির প্রত্যেক রাত্রির জন্য জুলাইকে অনেক শীতল হতে হয়
কিভাবে লগে হরিয়ালী এঁকে গড়ে তুলতে হয়বসন্তবিহার থেকে
একটানা গুঁড়গাও
এই সব যন্ত্রসর্বস্বতা
এত কার্বনের ভীড়, এত সালফার, এত সীসা
এর থেকে বীজ ছেনে নিয়ে জরায়ুর জলে রোপন করতে হয়
আমি নিষেকের কি বুঝি ?এই গ্রীষ্মে আরাবল্লীর উপর এক গোছা মালতী ফোঁটাতে হলে
রৌদ্রের ঠোটে রাখতে হয় পেন্সিলের শীষ ।দু-লাইনে দু-ঋতুর দিল্লিকে আমি কি দিয়ে লিখি ?
ধোঁয়া শব্দটি লিখতেই
ভিতর থেকে আবছা আগুনের ফুলকি ছুটে আসে।’
[জল জ্বলে ওঠে: পীযূষকান্তি বিশ্বাস]
চলবে…