‘বিশ্বজগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে’—কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এ চরণ আজ ধ্রুব সত্য। হাতে হাতে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ। কাগজ-কলমের পরিবর্তে কি-বোর্ড। কত সব আধুনিক প্রযুক্তি! এ জন্যই কবিরা স্বপ্নদ্রষ্টা। যুগে যুগে সাহিত্যের ধারায় যেমন পরিবর্তন এসেছে; তেমনি পরিবর্তন এসেছে প্রকাশের মাধ্যমেও। ধর্মনির্ভর সাহিত্যচর্চার পরিবর্তে শুরু হলো মানবতার জয়গান। কাব্যনির্ভর সাহিত্যচর্চার পরিবর্তে প্রবেশ করলো গদ্যনির্ভর সাহিত্য।
গদ্যনির্ভর সাহিত্যের শুরুতে হয়তো সবাই ভেবেছিল, এ ধারা বেশিদিন টিকবে না। কেউ কেউ বিরোধিতাও করেছিলেন। সব কিছুরেই শুরুতে মতবিরোধ থাকে, ভিন্নমত থাকে। তবে সাধনা ও চর্চায় তা টিকেও যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ধারাটি প্রতিষ্ঠিতও হয়। অতি আধুনিক যুগের তেমনি একটি পরিবর্তিত ধারা সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ।
ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যে এ পরিবর্তন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সাহিত্যচর্চা করতে এসে প্রত্যেকেই সাংবাদিক গগন হরকরা ও গ্রামবার্তা প্রকাশিকার কথা শুনে থাকবেন। নজরুলদের সময়ের হাতে লেখা পত্রিকার কথাও জানবেন অনেকে। তৎকালীন সাহিত্যচর্চার প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট সমুদ্রের এপিঠ-ওপিঠের মতো। বর্তমান সাহিত্যিকরা সেটা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না। হাতে লিখে পাণ্ডুলিপি সরাসরি বা ডাকযোগে পত্রিকা অফিসে পাঠানো খুব বেশিদিন আগের কথাও নয়। সেটা বিশ শতকের শেষের দিকে সাহিত্যচর্চা করতে আসা লেখকরাও টের পেয়েছেন। কখনো কখনো প্রকাশিত লেখা হাতে পাওয়ারও ভাগ্য অনেকের হয়েছে। সে সময়ের কথা চিন্তা করলে আজকের লেখক-পাঠক স্বর্ণযুগে বাস করছেন।
কথাগুলো প্রাসঙ্গিক এ কারণেই যে, এখন মুহূর্তেই সব কিছু করে ফেলা যায়। আঙুলের চাপে বিস্ফোরণ ঘটানো যায় দূর-দূরান্তের শত্রু আস্তানায়। হাতের স্মার্ট ফোন বা টেবিলের কম্পিউটার-ল্যাপটপে লিখে ফেলা যায় কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক। লেখা শেষ করেই ফেসবুক, ই-মেইল, হোয়াটসআ্যপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সম্পাদকের কাছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই হয়তো প্রকাশিত লেখার লিংকটিও পৌঁছে যায় লেখকের কাছে। এই যে প্রকাশের প্রক্রিয়া, এটাই সম্ভব হয়েছে আধুনিক ওয়েবসাইটের কল্যাণে।
সাহিত্যপাতা বা লিটলম্যাগের চেয়ে ওয়েবম্যাগ খুবই সহজ এবং কম পরিশ্রমের। যে কারণে ওয়েবম্যাগে ঝোঁকার দিকে তরুণদের উপস্থিতি বেশি। কখনো কখনো নিজেই লেখক, নিজেই সম্পাদক টাইপের ওয়েবম্যাগের সংখ্যাও বাড়ছে
যুগ যুগ ধরে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা, লিটল ম্যাগে ছাপা হতো লেখা। কাগজে ছাপানো সেই লেখার জন্য অপেক্ষা করতে হতো সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর। অথচ বর্তমান ওয়েবসাইটের কল্যাণে এখন যেন আর অপেক্ষা করতে হয় না। দৈনিক পত্রিকারও ওয়েবসাইট হয়ে গেছে। লিটল ম্যাগ হয়ে গেছে ওয়েবম্যাগ। একসময় যারা লিটলম্যাগ প্রকাশ করতেন, তারা অর্থের কথা চিন্তা করে এখন ঝুঁকছেন ওয়েবম্যাগের দিকে।
সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ চিন্তাসূত্র দাবি করছে, ‘একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ।’ এ প্রসঙ্গে তরুণ কবি শরাফত হোসেন বলেছেন, ‘লিটলম্যাগ বরাবরই এক্সপেরিমেন্টের জায়গা হিসেবে সমাদৃত। এর চর্চা তারুণ্যকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল। তারুণ্যই এর প্রাণ। এখনো তারুণ্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এখানে আবেগ, সাহিত্যপ্রেম ও প্রকাশের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিষ্ঠিতদের কথা বলছি না, তরুণরা বেশি পরিমাণে লিটলম্যাগে আগ্রহী। তবে এই সময়ের তরুণেরা অনেকটা টেকনোলজি-নির্ভর হওয়ায় লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে, বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। তবে মানের বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সহজলভ্য হওয়ার কারণে যে কেউ নিজের মতো করে ওয়েবম্যাগের দিকে ঝুঁকতে পারছে। অনলাইন নির্ভর হওয়ায় আড্ডা ও সমালোচনার জায়গাটি সংকুচিত হয়ে আসছে। যা লিটলম্যাগের প্রাণ। তবে এই সময়ে এসে লিটলম্যাগের আবেদন ফুরিয়ে গেছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’
শরাফত হোসেনের দাবির সূত্র ধরে বলা যায়, বর্তমানে ওয়েবম্যাগের প্রচলন বাড়ছে। লিটলম্যাগ বা পত্রিকার সাহিত্যপাতার চেয়ে ওয়েবম্যাগে বেশি লেখা প্রকাশ হচ্ছে। ওয়েবম্যাগের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। এই সহজলভ্যতার কয়েকটি কারণ হচ্ছে-
১. কম মূল্যে ডোমেইন কিনতে পারা
২. হোস্টিং খরচও হাতের নাগালে
৩. কম সংখ্যক কর্মী দিয়েই চলে
৪. কখনো কখনো একজনই সব কাজ করে থাকেন
৫. অফিস বা ছাপাখানার প্রয়োজন হয় না
৬. প্রচার-প্রসারের জন্য চিন্তা করতে হয় না।
সুতরাং সাহিত্যপাতা বা লিটলম্যাগের চেয়ে ওয়েবম্যাগ খুবই সহজ এবং কম পরিশ্রমের। যে কারণে ওয়েবম্যাগে ঝোঁকার দিকে তরুণদের উপস্থিতি বেশি। কখনো কখনো নিজেই লেখক, নিজেই সম্পাদক টাইপের ওয়েবম্যাগের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে মানহীন ওয়েবম্যাগের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। সে হিসেবে কতগুলো সমস্যা প্রতিভাত হয়। যেমন-
১. মানহীন লেখা
২. বানান ভুল
৩. অশুদ্ধ বাক্যগঠন
৪. নিজেকে সেরা ভাবার প্রবণতা
৫. যে যার মতো করে নিজেকে কবি-লেখক ভাবা
তাই যে উদ্দেশ্য নিয়ে ওয়েবম্যাগ যাত্রা শুরু করেছিল, সে উদ্দেশ্য রীতিমত ব্যাহত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ভুলভাল সেসব লেখা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। ফলে সাহিত্যসেবীরা ভুল পথে পা বাড়াচ্ছেন। ফেসবুকের হিট বা লাইক দেখে নিজেকে সেরা ভাবার মতো অহঙ্কারও প্রদর্শন করছেন।
তরুণ কথাশিল্পী ইলিয়াস বাবর মনে করেন, ‘‘সময়ের প্রয়োজনকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না, এড়াতে পারে না প্রাযুক্তিক প্রভাব। একসময় পোস্ট অফিসে গিয়ে খামে ভরে লেখা পাঠাতে হতো। এখন চিঠির যুগ পেরিয়ে মেইলে, এক ক্লিকেই লেখা পাঠাচ্ছি আমরা। কপি পেস্টও চলছে সমানতালে। এছাড়া সার্চইঞ্জিন ঘাঁটলেই পেয়ে যাচ্ছি অসম্ভব বা কল্পনাতীত সব তথ্য। ফেসবুক বা অন্যান্য দ্রুতগতির যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সহজেই সম্পর্ক হচ্ছে, সম্পর্ক ভাঙছে। অপ্রত্যাশিতভাবে উন্মুক্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও। কিন্তু জনকোলাহলের অবসরে, স্মার্টফোনকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত নির্জনতার অবসরে আমরা মিস করি আগের সময়গুলো। হয়তো কোরাস গেয়ে উঠি—‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!’ তাই বলে আমরা চিঠির যুগে ফিরে যেতে পারি না কিন্তু! তবে হ্যাঁ, বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে স্বীকার করেই আমাদের ঐতিহ্যসচেতন হওয়া দরকার। কেউ কারও কারও স্থান দখল করতে পারে না, কারও অভাব কাউকে দিয়ে পূরণ হয় না। আবার এ-ও সত্য, কারও জন্য থেমে থাকে না কোনো কাজও। ফলে, আমরা এভাবেই বলতে আরাম পাব—লিটলম্যাগের জায়গা ওয়েবম্যাগ দখল করেনি বরং প্রতিনিয়ত যোগ হতে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো ওয়েবম্যাগ দারুণভাবেই উন্মোচন করছে লিটলম্যাগের সামনে।’’
সব সৃষ্টিরই ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে। সেটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। যুগের চাহিদা অনুযায়ী লিটলম্যাগের পরিবর্তে আমরা ওয়েবম্যাগ গ্রহণ করতেই পারি। তবে তার জন্যও নীতিমালা থাকা জরুরি। লেখার অধিকার যেমন সবার আছে, ঠিক তেমনি বিভ্রান্তি ছড়ানোর মানসিকতা থাকা সমীচীন নয়। সাহিত্যচর্চা করতে এলে যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনেই করা উচিত। এ ক্ষেত্রে কেমন হতে পারে আমাদের ওয়েবম্যাগ? সমকালীন লেখকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:
১. এখানে আশাবাদী লেখা থাকবে
২. অন্বেষণ আর মননশীল লেখা থাকবে
৩. সৃজনশীল লেখাকে উৎসাহ দিতে হবে
৪. তরুণদের প্রেরণা দিতে হবে
৫. অগ্রজের সঙ্গে অনুজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে
৬. শিল্পের নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা থাকতে পারে
৭. শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের সঙ্গে সাহিত্যের মিথস্ক্রিয়া থাকবে
৮. পাঠক-লেখক মুখোমুখি হতে পারবেন
৯. অনুবাদ সাহিত্য সমান গুরুত্ব পাবে
১০. সমালোচনা সাহিত্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১১. লেখার যথাযথ সম্পাদনা করে প্রকাশ করবে
১২. সম্পাদনা পরিষদে বিজ্ঞজনেরা থাকবেন
১৩. সাহিত্যের সব বিষয়ই থাকবে
১৪. শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সংবাদ থাকতে পারে
১৫. সাহিত্যের গতিবিধি, কবিতার সাম্প্রতিক ধারা—এসব বিষয় থাকতে পারে।
উপর্যুক্ত দাবিগুলো কোনোভাবেই অবহেলা করার সুযোগ নেই। সাহিত্যপাতা, লিটলম্যাগ বা ওয়েবম্যাগ—সব ক্ষেত্রেই আলোচিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি।
সে হিসাব করলে বর্তমানের ওয়েবম্যাগগুলো মানসম্মতভাবে কতদূর এগিয়েছে? তা এখনই বলা মুশকিল। এ প্রসঙ্গে কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু বলেন, ‘অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা বহুবিধ সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে, তা আমরা কতটুকু সফলভাবে ব্যবহার করতে পারছি, তার ওপরই নির্ভর করবে লিটলম্যাগ ও দৈনিকের সাহিত্যপাতার বিকল্প অনলাইন সাহিত্য পত্রিকার অস্তিত্ব ও বিকাশ। মনে রাখা উচিত, দৈনিকের সাহিত্যপাতা বা পত্রিকাও তাদের ওয়েব-ভার্সন রাখছে। সে কারণে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকছেই। তবে, অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা সার্কুলেশনে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে, তবে বিভিন্নভাবে গ্রহণযোগ্য করার ওপরই তার সফলতা নির্ভর করে।’
ইন্টারনেটে স্বচ্ছন্দ একজন পাঠক একটা ভালো সাহিত্যসৃষ্টিকে পৌঁছে দিতে পারেন বহু মানুষের কাছে। তাই আমরা চাই শুধু সঠিক সংযোগ। আর চাই নিজেদের সদিচ্ছা
মনে রাখা জরুরি যে, ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। পশ্চিমবঙ্গের এক গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ১০০টির কাছাকাছি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ওয়েবসাইটের হদিশ পাওয়া যায়। যেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যার পরও পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় কনটেন্টের ভাগ খুবই কম। ইউনিসেফ বলছে, পৃথিবীত ৬ হাজার ৭০০ ভাষা অবলুপ্তির পথে। সেটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু সেটাকে একটু বিলম্বিত করা যেতে পারে , যদি সেই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষেরা আরও সক্রিয় হন।
তাই বলা যায়, আমরা সবাই কাজ করছি একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত। নিজেদের মধ্যে পরিচিতি কম। প্রতিহিংসাও বেশি। দ্রুতই কাউকে খারিজ করার প্রবণতা আমাদের বেশি। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে অহেতুক বাড়ছে ওয়েবম্যাগ। অথচ মানসম্মত একটি ওয়েবম্যাগই ভালো লেখক তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু এখানে বেশিরভাগই নিজের পেশাকে সামলে পাশাপাশি ওয়েবম্যাগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়মিত বা অনিয়মিত সংখ্যা হচ্ছে, ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার হচ্ছে, লাইক পড়ছে। কিন্তু এরপর ফল কী? সেই ওয়েবম্যাগ কি সত্যিই পৌঁছাতে পারছে সাধারণ পাঠকের কাছে? নাকি সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে শুধু চেনা-পরিচিতদের গণ্ডির মধ্যে?
ওয়েবম্যাগের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমাদের ভাবা উচিত—এই ম্যাগাজিন তৈরি করছি কাদের জন্য? যদি মুদ্রিত পত্রিকা হয়, তাহলে না হয় হিসাব রাখতে পারি কতটা কপি বিক্রি হলো? কিন্তু যদি পুরোটাই ওয়েবভিত্তিক হয়, তাহলে সাহায্য নিতে হয় গুগল অ্যানালিটিক্সের। কিন্তু এ তথ্য কি সবসময় আমাদের সত্যি ছবিটা দেখায়? ভিজিটর বা রিডার কতজন, তা হয়তো জানা যেতো। কিন্তু সেই রিডাররা কি সময় নিয়ে ওয়েবের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন? নাকি দ্রুত ব্রাউজ করে নিজের পরিচিতজনের লেখা দেখেই চলে যাচ্ছেন। যারা আমাদের ওয়েবসাইট দেখছেন, তারা কি আদৌ আমার পত্রিকার লক্ষ্য?
পশ্চিমবঙ্গের গবেষক শ্রী দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য এক পরিসংখ্যানে বলেন, ‘গত কয়েকবছরে ইন্টারনেট পরিষেবার হার যেভাবে বেড়েছে, ঠিক সেই অনুপাতেই বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। তার সাথে আরও দেখা যাচ্ছে যে, প্রথাগত ডেস্কটপ কম্পিউটারের বদলে মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট দেখেছেন অনেক বেশি মানুষ।’ তাই আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাকে এই মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বিশ্বে। এভাবেই তৈরি হতে পারে বাংলা ভাষায় আগামী দিনের পাঠক। কেননা ইন্টারনেটে স্বচ্ছন্দ একজন পাঠক একটা ভালো সাহিত্যসৃষ্টিকে পৌঁছে দিতে পারেন বহু মানুষের কাছে। তাই আমরা চাই শুধু সঠিক সংযোগ। আর চাই নিজেদের সদিচ্ছা।
তাই ওয়েবম্যাগকে টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু কাজ করতে হবে আমাদের-
১. ওয়েবম্যাগের সাহায্যে বাংলা ভাষার রসদের ভাণ্ডার বাড়াতে হবে
২. প্রতিটি ওয়েবম্যাগকে এ কাজে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে
৩. ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার প্রচার বাড়াতে হবে
৪. ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষাকে স্বমহিমায় টিকিয়ে রাখতে হবে
৫. ওয়েবম্যাগকে সগৌরবে টিকিয়ে রাখতে যথাসম্ভব প্রয়াস চালাতে হবে
৬. সর্বোপরি ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলাভাষী পাঠকের সংখ্যা বাড়াতে হবে
৭. পাঠকের হাতে মানসম্মত ওয়েবম্যাগ তুলে দিতে হবে।
তাই বলা যায়, আজ থেকেই চলতে থাকুক আমাদের এ প্রয়াস। ওয়েবম্যাগে আসুক বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ। তৈরি হোক নতুন নতুন কনটেন্ট। আসুন সব ধরনের রেষারেষি ভুলে ওয়েবম্যাগকর্মীরা হাতে হাত মেলাই। নিজেকে সেরা না ভেবে সেরা কিছু সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হই। প্রতিযোগিতার মনোভাব বদলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। ওয়েবম্যাগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে মজবুত করে তুলি।