আমরা বাঙালি, আমাদের আছে ইতিহাস গর্বের। পৃথিবীর বুকে আর কোনো জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে এদেশের ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছে, বাঁচিয়েছে মাতৃভাষার মান। প্রাণ দিয়ে অর্জিত মাতৃভাষার সম্মান কতটা রাখতে পেরেছি আমরা? তা আজ সত্যিই ভাবার বিষয়।
ভাষা তার সৌন্দর্য হারায় শুধু ভুল বা অশুদ্ধ উচ্চারণের কারণে। ভাষাকে সহজ-সাবলীল, মাধুর্যময়, ব্যঞ্জনাময় ও ঐশ্বর্যময় করাই উচ্চারণের মূল কাজ। আর সে উচ্চারণ যদি অশুদ্ধ হয়, তাহলে তা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি না করে নষ্ট করে। তাই শুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম আমাদের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। জন্মের পর থেকে শিশুরা হাত-পা নাড়িয়ে হাসি কান্নায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। যখন শিশুর মুখে ভাষা ফোটে তখন একজন শিশু খুঁজতে থাকে শব্দ। মা-বাবা ও পরিবারের লোকজনের কাছ থেকেই শিশুরা প্রথম ভাষা শেখে। পরিবার-ই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই মা-বাবা হিসেবে আমাদের উচিত সন্তানকে ভাষার ব্যাপারে সঠিক চর্চার সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু আমরা শিশুদের সে সুযোগ কতটা দিতে পারি? সত্যিকার অর্থে ভাষা নিয়ে আমাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই।
আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে থাকে। যা ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেজন্যে সব অঞ্চলের মানুষের জন্য সর্বজনমান্য ও সারাদেশে অভিন্ন একটি আদর্শ ভাষা গড়ে ওঠে। দেশের শিক্ষিত ও পণ্ডিত সমাজ এ ভাষায় মনের ভাব আদান-প্রদান করে থাকেন। আমরা নিজ-নিজ সমাজে নিজ-নিজ ভাষা ব্যবহার করলেও শিক্ষিত পরিবেশে, আনুষ্ঠানিক পরিমণ্ডলে, সর্বস্তরে পাঠ্যবই, সংবাদপত্র, প্রকাশনলায়, অফিস আদালতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বত্র প্রমিত চলিত বা এ আদর্শ ভাষার প্রচলন রয়েছে। বেতার, টিভি,বক্তৃতামঞ্চ, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। ভাষা আমাদের ভাব-বিনিময় ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তাই দেশের মধ্যেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ফোরামগুলোয় একে অন্যের সার্থক যোগাযোগের প্রয়োজনেও আঞ্চলিক ভাষার প্রভাবমুক্ত একটি ভাষারীতি দরকার। আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং তার কোনো প্রয়োজনও নেই। বরং বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা আমাদের ভাষার বৈচিত্র্য। কিন্তু বাংলা ভাষার কোনো একটি শব্দের উচ্চারণ তো আর বিভিন্নরকম হতে পারে না।
শুধু ভাষাবিশারদ বা ভাষা গবেষকরা উচ্চারণ নিয়ে কাজ করে গেলে বা চর্চা করে গেলে চলবে না। কাজ করতে হবে একদম রুট লেভেল থেকে অর্থাৎ স্কুল কলেজ থেকে। স্কুল-কলেজগুলোয় শুদ্ধ বাংলা বলার বা চর্চা করার তেমন কোনো সুযোগ নেই।
৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পর দীর্ঘ দিন পার হয়েছে। এই এতটা বছর পার করে এসেও আমাদের জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন এখনো সম্ভব হয়নি। সভা-সমিতি অনুষ্ঠানের আলোচনা, সংলাপে, টক শো ও বেতার টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে শুদ্ধ বাংলা বলাটা আয়ত্ত করতে পারেনি অনেকে।
যাদের আমরা অনুস্মরণ করবো, অনুকরণ করবো, তাদের যদি আঞ্চলিকতাদুষ্ট ভাষায় বা ভুল উচ্চারণে কথা বলতে দেখি, শুনি তাহলে আমাদের শেখার বা জানার জায়গাটা আসলে কোথায়?
গ্রীষ্মকে বেশিরভাগ লোকেই উচ্চারণ করে গ্রীশমো, চুড়ি কে চুরি, পদ্মাকে পদমা, সমাজকে সোমাজ, কোটিকে কুটি, বিশ্বকে বিশবো, অন্ধ কে অনদো, বন্ধকে বনদো।
আমরা আমাদের সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ ও মুখের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য যে সময় ব্যয় করি, মুখের ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তার সিকি ভাগ ও ব্যয় করি না। আসলে আমরা আমাদের চিন্তা ভাবনায় শুদ্ধ উচ্চারণের বিষয়টা কখনো আনি না। শুদ্ধ উচ্চারণের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতাই তৈরি হয়নি আমাদের। আমরা এটা বুঝতে পারি না সুন্দর পোশাক আর সুন্দর মুখশ্রী থেকে অশুদ্ধ বা ভুল উচ্চারণ আমাদের সব সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়।
একজন স্যুট টাই-পরা বিশিষ্ট ব্যক্তি যখন মঞ্চে উঠে বলেন, ‘সনমানিত সবাপতি সুমাজের মানুষের উননুতি করতে আমরা পুতিগগাবদদো হয়েছি।’ তখন আমাদের প্রত্যাশা মঞ্চেই মিশে যায়। ওই বিশিষ্ট ব্যক্তি কিন্তু ইংরেজি বলতে সতর্ক, তিনি কিন্তু ইংরেজি উচ্চারণে ভুল করেন না। কারণ তিনি ইংরেজি শুদ্ধ উচ্চারণের অণুশীলন করেন। বাংলা তো মাতৃভাষা, শেখার বা অণুশীলনের কিছু নেই; এই মানসিকতা রয়েছে আমাদের বেশিরভাগ মানুষের। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, মাতৃভাষা ছাড়া আমাদের আত্মপ্রকাশের কোনো মাধ্যম নেই। শুদ্ধ উচ্চারণে সুন্দর করে কথা বললে একজন মানুষের ব্যক্তত্বের শক্তিশালী দিক প্রকাশিত হয়। মানুষ মুগ্ধ হয়ে তার কথা শোনে, মূল্যায়ন করে। ইংরেজিতে যত পারদর্শী হই না কেন আমরা যদি আমাদের মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে না পারি, তাহলে আমাদের মান থাকবে না। আমাদের শুদ্ধভাবে মাতৃভাষায় কথা বলতে হবে এবং তার জন্য বারবার অনুশীলন করতে হবে৷
আমার এক পরিচিত লেখক ও সম্পাদক সাহেব আছেন, তার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তিনি তার লেখায় পাঠকদের মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখছেন, গবেষণা দিয়ে ধন্য করছেন বাংলা সাহিত্যকে। কিন্তু তিনি কোনো সাহিত্য আড্ডা, টক শো বা কোনো সাক্ষাৎকার দিতে রাজি নন। তিনি নিজেকে আড়াল করে রাখতে চান, কারণ তার উচ্চারণগত সমস্যা। তিনি বুঝতে পারেন তার উচ্চারণের সমস্যা, কিন্তু এখন সে অভ্যাস বদলানো কি এত সহজ? তিনি নিজেকে আড়াল করে রাখেন এবং কারও সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতো সংকোচবোধ করেন। এটা আমাদের কারো-ই কাম্য নয়।
শব্দ তৈরিতে প্রয়োজন হয় বর্ণ ও বর্ণচিহ্ন। আর উচ্চারণের জন্য প্রয়োজন হয় ধ্বনি। ধ্বনির উচ্চারণে প্রয়োজন বাগ্যন্ত্র। যাদের বাগ্যন্ত্র অর্থাৎ ঠোঁট, দাঁত তালু, জিভ, নাজ, কণ্ঠ, ফুসফুস স্বাভাবিক নয় তারা শুদ্ধ উচ্চারণ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু যার এগুলো স্বাভাবিক তার সাধারণত শুদ্ধ উচ্চারণ করতে পারার কথা। বাগ্যন্ত্র স্বাভাবিক থাকলেও যারা শুদ্ধ উচ্চারণ করতে পারে না বুঝতে হবে, তারা ভাষার ব্যাপারে সচেতন নয়, যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে। শুদ্ধ উচ্চারণ করতে গেলে কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়। যেমন: অ, আ, ক, খ, গ, ঘ, চ, ছ, জ, ঝ, ট, ঠ, ড, ঢ, দ, ধ, প, ফ, ব, ভ, ল, শ ইত্যাদি বর্ণ উচ্চারণ করতে গেলে ঠোঁট দু’টি অনেক ফাঁক করতে হবে। প, ফ, ব, ভ, ম উচ্চারণ করতে গলে ঠোঁট দুটি প্রথমে লাগিয়ে আবার জোরে ফাঁক করতে হবে। এ রকম করে প্রায় প্রতিটি বর্ণের জন্যই কিছু নিয়ম রয়েছে।
শুদ্ধ উচ্চারণের পেছনে কিছু সমস্যাও রয়েছে। সমস্যাগুলো একটু দেখে নেই।
১. রূপের অমিল: বাংলা লিখিত রূপের সঙ্গে উচ্চারিত রূপ প্রায়ই মেলে না। যেমন: পদ্ম-এর উচ্চারণ হবে পদ্দো, গ্রীষ্ম-এর উচ্চারণ হবে গ্রীশশো।
২. সংখ্যাগত: বাংলা বর্ণামালার একাধিক বর্ণের উচ্চারণ একটি এবং কখনো কখনো একটি বর্ণের উচ্চারণ অধিক। যেমন, শ, ষ, স।
৩. প্রাণঘটিত: উচ্চারণের সময় মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলো প্রায়ই অল্পপ্রাণ ধ্বনি হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন, তারিখ-এর উচ্চারণ তারিক।
৪. আঞ্চলিক: অঞ্চলভেদে এক অঞ্চলের শব্দের উচ্চারণ অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক হয়। যেমন, কথা=কতা, টাকা=টাহা, ঢাকা=ঢাহা।
৫. বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা: এটি একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উচ্চারণ শেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। যা আছে তা কাগছে কলমেই সীমাবদ্ধ।
ভাষা আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম। ভাষা শুদ্ধ না হলে যোগাযোগও হুমকির মুখে পড়ে। প্রাথমিক স্তর থেকেই শুদ্ধ উচ্চারণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। ভিত্তিতেই ভাষার দখল মজবুত না হলে পরে গিয়ে তা হাজারো চেষ্টা করলেও সফল হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা একটি লক্ষ্যে চলে, রয়েছে উদ্দেশ্য। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে—‘পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা যে চিহ্নিত অর্জনযোগ্য যোগ্যতাগুলো (জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি) অর্জন করবে বলে আশা করা যায়, সেগুলোকে প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা বলে।’
প্রান্তিক যোগ্যতা রয়েছে ২৯টি।
এর মধ্যে, ৯ নং প্রান্তিক যোগ্যতাটা তুলে ধরছি। এই দফায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলা ভাষার দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা।’
প্রথমে আসা যাক বাংলা ভাষার দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে। বাংলা ভাষার দক্ষতা চারটি। যেমন: শোনা, বলা, পড়া, লেখা। এই দক্ষতা চারটির আলোকে নির্ধারণ করা হয়েছে কিছু শিখনফল। শিখন ফল হচ্ছে—‘কোন একটি পাঠ শেষে শিক্ষার্থী কী জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে, সে সম্পর্কে পূর্ব-নির্ধারিত সুস্পষ্ট বিবৃতি বা বাক্য হলো শিখনফল।’
প্রথম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে শিখন ফল: ৯৭ টি।
দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে শিখনফল: ১১৪টি।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে শিখনফল: ৯৬ টি।
চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে শিখনফল: ১১০টি।
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে শিখনফল: ১১৭টি।
শ্রেণী ও বিষয়ভিত্তিক শিখনফল মোট ৫৩৪টি। এই মোটসংখ্যক শিখনফল থেকে কয়েকটি তুলে ধরছি।(১.৩.১) শুদ্ধ উচ্চারণে অনুরোধ করতে পারবে।
(১.১.১) যুক্তব্যঞ্জন সহযোগে তৈরি শব্দ স্পষ্ট ও শুদ্ধভাবে বলতে পারবে।
(১.১.২) যুক্তব্যঞ্জন সহযোগে তৈরি শব্দযুক্ত বাক্য স্পষ্ট ও শুদ্ধভাবে বলতে পারবে।
(১.৩.২) শুদ্ধ উচ্চারণে প্রশ্ন করতে ও উত্তর দিতে পারবে।
(১.৪.২) পাঠে ব্যবহৃত বাক্য শ্রবণযোগ্য স্পষ্ট স্বরে ও শুদ্ধ উচ্চারণে সাবলীলভাবে পড়তে পারবে।
(৩.১.১) শুদ্ধ উচ্চারণে জানা বিষয়বস্তু বুঝিয়ে বলতে পারবে।
(৩.২.১) সম্মান প্রদর্শন করে বিনয়ের সঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারবে।
(২.৪.১) প্রমিত উচ্চারণে গল্পের মূলভাব বর্ণনা করতে পারবে।
এমন অসংখ্য শিখনফল রয়েছে যার সঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারণ জড়িত। একজন ছাত্র যখন তার পরিবার বা শিক্ষকের কাছ থেকে শুদ্ধ উচ্চারণ শুনতে থাকে, তখন তার জন্য শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলাটা খুব সহজ হয়ে যায়, সহজ হয় বলা এবং লেখাও। আমাদের শুদ্ধ উচ্চারণ শোনার সুযোগ খুব কম রয়েছে। গ্রামের শিশুরা তো পরিবারে আঞ্চলিকতার বাইরে কোনো কিছু শোনার সুযোগ-ই পায় না। তারা স্কুলে শিক্ষকের কাছে যতটুকু সময় থাকে, ততটুকুই সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু আদৌ কি সে সুযোগ পায়? পায় না। আমাদের শিখনফল শুদ্ধ উচ্চারণকে ঘিরে থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে৷ বাংলা বিষয় পড়ান যে শিক্ষক তিনি পরিক্ষার সিলেবাস শেষ করতে, প্রশ্ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরতে ব্যস্ত থাকেন। রিডিং পড়াতে গিয়ে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর উচ্চারণের দিকে খেয়াল দেওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু তার জন্য সময় কতটুকু বরাদ্দ, সেটা একটা বিষয়। এছাড়া একজন শিক্ষক যিনি শুদ্ধ উচ্চারণ শেখাবেন তার এ ব্যাপারে দখল কতটা, তাও কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে। শিক্ষকের জন্য উচ্চারণ-বিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণের আলাদা ব্যবস্থা হয়েছে কি?
শিক্ষকের যদি উচ্চারণ বিষয়ে জানার বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তিনিও অশুদ্ধ উচ্চারণের বাইরে নয়, কারণ, তিনি ও মানুষ, তার ও আঞ্চলিকতা রয়েছে, রয়েছে শুদ্ধ উচ্চারণ শোনার সুযোগের অভাব। তাহলে মোট কথা দাঁড়াচ্ছে যে প্রাথমিক শিক্ষার শিখনফল অর্জিত হচ্ছে না। শিখনফল সম্পূর্ণভাবে বা সফলভাবে অর্জিত না হলে শেষ পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার উদ্দেশ্য। প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে একজন মানুষের ভিত্তি। ভিত্তিতেই যদি দুর্বলতা থেকে যায়, তাহলে তা কাটিয়ে উঠতে পার হয়ে যায় সারা জীবন। কেউ কেউ কাটিয়ে উঠতে পারেই না, কেউ কেউ হয়তো এর প্রয়োজনীয়তা বোঝার সুযোগই পায় না। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে কেন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকেও উচ্চারণের ওপর তেমন কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
তাই প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া ভাষার মান বাঁচাতে আমাদের উচিত প্রাথমিক পর্যায় থেকেই উচ্চারণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। উচ্চারণের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া এবং শুদ্ধ উচ্চারণের চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করা। সরকারের পাশাপাশি দেশের সব সচেতন নাগরিকের উচিত এ ব্যাপারে যত্নবান হওয়া। তাহলেই আমাদের প্রাণের ভাষা তার মর্যাদা ফিরে পাবে, অশুদ্ধ বা ভুল উচ্চারণে প্রতিনিয়ত আমাদের ভাষাকে তার মর্যাদা হারানোর লজ্জা থেকে বাঁচানো যাবে।