মধ্য আশিতেই তো, তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চারিদিকে। তলায় তলায় আমার মনেও কিছুটা দেশপ্রেমের উপলব্ধি তৈরি হয়ে, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বাসের চোরা স্রোত মর্মে-মর্মে বইছিল। সম্ভবত, ওই সময় থেকেই ব্যাপক কবিতা পাঠের আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলাম। প্রবল সামরিক চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তখনই কিছু লেখালেখির শুরু—কিন্তু, তাই যে আজ পর্যন্ত মর্মান্তিক এক কবি স্বপ্নের অহঙ্কার হয়ে উঠবে—এমনটি কখনো ভাবিনি। সোভিয়েতের গ্লাসনস্তো ও পেরেস্ত্রাইকার প্রস্তুতির মতো ধীরে ধীরে কবিতার তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী আলোয় উজ্জ্বল হচ্ছিল আমার অন্তর। কিছুটা আঁতলামির ঘোরে চেচনিয়ার বিক্ষোভের অস্থিরতার মতো বুঝে, না বুঝে মার্কস হেগেল হাইডেগার কামু কাফকা সার্ত্রের গদ্য পড়েছি। ঝেড়ে পড়েছি তারাশঙ্কর, মানিক, বিভূতিভূষণ, সমরেশ বসু, দেবেশ রায়, সুবিমল মিশ্র, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই কিংবা বামপন্থী লাল দূর্গের সাহিত্য পাঠের পেরেক ঠুকেই পোক্ত হচ্ছিল আমার হৃদয়।
কবিতায় তখন তুমুলভাবে নাজিম হিকমত, নেরুদা, মায়াকোভস্কি আর নির্মলেন্দু গুণের ‘নির্বাচিতা’ ও ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র—কাব্যগ্রন্থের সেসব পঙ্ক্তি—‘তোমাকে নিশ্চয়ই কিনে দেব একটি সবুজ রঙের/ হঙ্গেরিয়ান ব্রা এবং আশ্চর্য লাল সূর্যের মতো স্কার্ফ।’ —কিন্তু কথা ছিল,—তার আগে চাই সমাজতন্ত্র। শুধু কি তাই,.. একদিন নিশ্চয়ই আমাদের পৃথিবী আর এরকম থাকবে না,/ একদিন নিশ্চয়ই বহু-মানুষের স্বপ্ন এসে একটি বিন্দুতে মিলবে।’ এ-রকম অনেক স্বপ্নের মধ্যে আমার সময় ও কবিতার কর্ষণ হয়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম, মোহাম্মদ রফিকের ‘খোলা কবিতা’। নিষিদ্ধ ছিল তখন এই বইটি। ‘সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে, উড়বেই;/ বন থেকে দাঁতাল শুয়োর রাজাসনে বসবেই।’ খোলা কবিতার এ-রকম খিস্তি মনে মনে আমিও অওড়াতাম। তবু, ‘কীর্তিনাশা’, ‘গাওদিয়া’, ‘কপিলা’, ‘স্বদেশী নিঃশ্বাস তুমিময়’ গ্রন্থের কবিতায় আমার কম্যুনিস্ট চিন্তার ছায়াই খুঁজে পেয়েছি সর্বক্ষণ। তার কবিতার উপাদান, জীবন এবং আত্মোপলব্ধির মধ্য দিয়ে আমি সেই প্রায়শ্চিত্তের পথটিকে দেখতে পেয়েছিলাম। মোহাম্মদ রফিকের শব্দবিন্যাসের অভিনবত্ব ও শব্দাবলির ক্রোধ এবং কাল—ঐত্যিহের মাঠ কেটে কেটে রোপণ করা, প্রান্তের জীবনকে বোঝার লোকশক্তি আমাকে এতো বেশি স্পষ্ট করেছে, যাতে আজও আমি তার পূর্ববর্তী জীবনের অন্ধকার ভুলে যাওয়া দেখতে পাই। তাই তো মনে হয়, মোহাম্মদ রফিকের কবিতা থেকে শুরু হয়েছিল আমার এই পথ চলা। তার থেকেই শুরু হয়েছে এই গসপেল। বাংলা কবিতায় মোহাম্মদ রফিক যা পারেন নি—তাই হয়তো এই সময়ের কবিদের অসম্ভব হয়ে ওঠার পিছনে আরও অনেক কবির একান্ত বিষয় হয়ে ওঠার কবিতা খুঁজেছি।
শুয়ে আছ ॥ হেনরী স্বপন
তাঁতের বুনন খুলে দিয়ে ঘুরে বসে আছ ;
জুঁই ফোটাতে আবক্ষ তুলে রেখেছ আচার করে
বয়ামের তেলে ডুবিয়েছ …
সেখানেই যারা ডুবুরির বেশে
জলের গভীরে ঢুকে খুঁজতে গিয়েছে;
জিবের কামড় খাওয়া স্পর্শগুলো
ডুবে থাকা শেওলায় পিছল
শুঁটকীমাছের পঁচারক্ত ধুয়ে ফেলে
গোপন যন্ত্রণা মেখেএকঝাঁক পাখি ভেবে তাড়িয়েছ প্রকাশ্য জ্যোৎস্নায় একাকী
ওপাড়ে নৈঃশব্দ্য উল্লসিত!
ঢেউয়ে-ঢেউয়ে মাতাল মৈথুনে ক্লান্ত হয়ে
গ্রাম শুয়ে আছ…
তখন…‘খুকীর অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা’ আমার আকাশের গায়। কিস্তু কবি শামসুর রাহমানের কাব্যশিল্পের দ্যুতি আর ঝলমলে তার সমস্ত পঙ্ক্তির নরোম রোদ পোয়াচ্ছি আজও—আমি। কেননা, এই এত ভোরের ‘রৌদ্র করোটিতে’—ওফেলিয়া… কিছু বিস্মৃতির মেঘাকাশ যেন…‘সারসের মতো উড়ে গেলো…’ সেই পরিধিতে ছোপছোপ রং মেলে ছড়ানো দেখেছিলাম,‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়।’ আমার সময়ের শোকার্ত সেইসব চোখের কান্নায় যেন কোনো লোনাধরা নেই। তাই, আমি সেই দুর্বোধ্য। সেই সরল কিংবা আরও কঠিন বিপ্লবের—বিক্ষোভের হিরণ্ময় উচ্চারণগুলো আজও অনুভব করছি।
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মতো চিৎকার করতে করতে,…
কবির নিরবচ্ছিন্ন এই কবি সত্তার মধ্যে—চিন্তা ও নির্মাণ বর্তমানের প্রবাহনে আমারও কবিজন্মের বীজ আছে। কেননা, শামসুর রাহমানের কবিত্বের বেগ/ আবেগের শাণিত কলমতরবারি—দানব-দলিতের বিরুদ্ধে রুখেছিল সর্বদাই। কবি তার কবিতার দায় কখনোই খাপে তুলে রাখেননি। স্বৈরাচার-অত্যাচার, শাসন-শোষণের ব্যাসিলি পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলেছিল কবির সেইসব কবিতার স্ট্রেংথ যেন।
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায়, নীলিমায়।
এ-যেন আমাদের অভিজ্ঞতার বশে প্রচলিত কবিতার রূপে দগ্ধ এই ফর্ম। প্রলুব্ধ এই উপাদানকে মনে রেখেই বলা যায় তখন শহীদ কাদরী এবং আবুল হাসানের কাব্যের মধ্যেও আমার জীবন ও আত্মোপলব্ধির বীক্ষণ ছিল। নির্মলেন্দু গুণের কবিতার ভেতর যে ধারাবাহিকতা খুঁজে পেয়েছিলাম। শহীদ কাদরীর জীবন ও আত্মোপলব্ধি প্রকরণে—সেই নতুন সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও অপার ঐতিহ্য এবং দর্শনকে মনে রেখেছি আজও। তাই, কাদরীর কবিতা পাঠে, আত্মোপলপব্ধির ক্রোধের মধ্যে অন্যের উপস্থিতি টের পেলেও বেজে ওঠে মন। আর জীবন ফুলে ওঠে তেজের মাত্রায়। তার উপমা, প্রতি-উপমা, শব্দ এবং বাক্যের বক্রতা আমাকে অনেক দূরের সম্মুখ সমরে নিক্ষেপ করেছে।
অন্যভাবে তখন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও আবুল হাসান যেন তারই ধারাবাহিকতায় রোমান্টিক অন্যকে মনে রেখে, দৃশ্য থেকে দৃশ্যের বর্ণনায় মাতিয়ে দিয়েছেন। যদিও তা প্রান্তরের কোমল হাওয়ায় মুগ্ধতা বয়ে আনেনি। জীবন ও বোধের নিঃসীম গভীরতা আরোপ না করে—এক ধরনের মূর্ছনা বিক্ষেপ মাত্র। এক্ষেত্রে একজন শহীদ কাদরী আমার জীবনে যা ছিল, পরবর্তী কাদরী হওয়ার আগে, একজন: শঙ্খ ঘোষের ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ টের পেয়ে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে জানতে পেরেছি ‘রাতের কল্লোল শুধু বলে যায়—আমি স্বেচ্ছাচারী।’ মূলত সেই স্বেচ্ছাচারিতাই আছে আমার কবিতার খাতায় খাতায়। কিন্তু অরুণ মিত্রের কবিতা আমি যতই পড়েছি, ততই আমার কাব্যের দুয়ার খুলে চলেছি সুদূরের পথে। যে পথ দিয়ে আমি আজও ‘খরা-উর্বরায় চিহ্ন দিয়ে চলি।
টের পেয়ে যাই ॥ হেনরী স্বপন
আগুন ফেললে গিলে; পুড়ে যাচ্ছ
যে সম্পর্ক রান্না হলে;
হৃদয়ের কাছাকাছি জ্বলে গ্যাসের নরম
উষ্ণতা রাখবে বলে?
ভল্লুকের পশম জড়িয়ে নখের আঁচড়ে রক্ত
লুকিয়ে রেখেছ তাপ।সেখানে পতঙ্গ সেজে উড়বার ডানা গুঁজে
শুয়েছিল সমস্ত আকাশ,
অলস চর্বির গলে পড়া প্রখর রোদ্দুর
তুলে রেখেছিলে কেন…
ঢেঁড়স ভাজার তেল চিটচিটে স্তনে
মুখ রেখে এখনো আগুন জ্বালাবার
টের পেয়ে যাই…
অথচ আমার সময়ের বৈপ্লবিক, রোমান্টিক, আধ্যাত্মিকতার সংশয় কাটিয়ে আমাকে অসম্ভব আকর্ষণ করেছেন সর্বদাই জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে। তারা সবাই আধুনিককালের অভিধায়, বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডবের কীর্তিতে ভাস্বর ছিলেন। অথচ, তারা আজ পর্যন্ত তাদের ভাষার অতীন্দ্রিয় রহস্যময়তা কাটিয়ে সবাই জনপ্রিয়তার সমতল ভূমি পাননি। তবু, দুরূহ, বিমূর্ত, আপাতদুরূহতার ভাষায় জীবনানন্দ দাশ লিখছেন—‘উটের গ্রীবার মতো নিস্তব্ধতা’র ছবি। ইউরোপের নানা স্বরগ্রামে প্রত্যক্ষ হয়ে—নতুন কবিতার নানা উপমা, রূপক, চিত্রকল্প, অন্বয়। এই কবিদল বাংলা কাব্যে ছড়িয়েছেন রহস্য ও প্রশান্তির পরিমণ্ডল। সেই পরিমণ্ডলের পাশাপাশি আমার আত্মউন্মোচনের প্রত্যয় ঘটেছে নব্বইয়ের শুরুতেই প্রকাশিত হওয়া আমার একফর্মার একটি দীর্ঘ কবিতার কাব্যপুস্তিকায়।
কিন্তু আমার সময় ও আমার কবিতার প্রেক্ষাপটে—সৈয়দ শামসুল হক, সাইয়ীদ আতিকুল্লাহ ও সেইসঙ্গে আরও ছিলেন উৎপলকুমার বসু, বিনয় মজুমদার, তারাপদ রায়, জয় গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্ত—তারা সবাই আমার কাব্য জগতের অন্তর্বয়নে একেক জগতের—একেকজন কবিতার ঈশ্বর ছিলেন। তাই, দীর্ঘ এই কাব্যযাত্রায় পুরাবাহিত শব্দাবলি ও শৈলীতে আজও আমার নিরন্তর কোনও দায়বদ্ধতা নেই। কবিতার ফর্মেট অভ্যুত্থানের মুখোমুখি কিছুটা স্মার্টনেস দুর্বোধ্যতায় আমার কাবিতা হওয়ার দুর্নাম ছাড়া কিছু নেই।
ফলে, যতটা বিপরীত হয়ে উঠলে আমার ‘আমি’ মুছে যায় নৈর্ব্যক্তিকতায়, ততটা আমার সমস্ত কাব্যবর্ণনা নিপতিত হয় ত্রিমাত্রিক—বহুমাত্রিক শূন্যতায়। তখন আঁধার-আধেয় অ্যানেসথিসিয়ায় ডুবে যেতে যেতে কবিতা হয়ে ওঠে আরাধনার মতো। আবার তা জাগরিত হয় দৈর্ঘ্য-প্রস্থ উচ্চতার অক্ষ বরাবর।
যদিও আমার কবিতার শেকড় ডুবে থাকে চায় রসায়নে কিংবা ফরমালিনের জলে। আনন্দ অচল মুদ্রার মতো এসিডদগ্ধ বুদ্বুদের হাওয়ায় দেশ-কাল-পাত্র হয়ে ফুলে ওঠে মুগ্ধতায়। যদিও এর থটপ্রসেসে ইনস্ট্যালেশনের আধিক্য যতটা কম্পোজিশনে তার অধিক কম্পোজিশন থেকে দূরে সরতে থাকে কবিতার প্রাণ। এর কারণ আর কিছু নয়, ক্রিয়াপদের স্থান বিচ্যুতি, অব্যয় শূন্যতার কারুকাজ। পঙ্ক্তিগুলোর কম্পাউন্ড কমপ্লেক্স মাত্রা। কম্পোজিশনের সংশ্লেষ, গ্র্যান্ড ন্যারেশনকে আক্রমণ করে কবিতাকে পুরোটাই পথ করে দেওয়া মাত্র। তাই, আমার কবিতা ভাবনায় ঢোকা বা বেরিয়ে যাওয়া নেই। অপেক্ষায় থাকতে হয় ভিশন কখন ছোবল দেবে চেতনায়। কখনো ভিজে—টকটকে লাল হয়ে উঠবে, সিটামলের মতো ক্রিয়া করবে তাপ শোষণের আদিম খেলায়। কেবলই একটি বিক্ষেপ ছুড়ে দেওয়ামাত্র, তা থেকে শুরু হয় কবিতায় কল্পনার গভীরতা কিংবা সামগ্রিক বোধের মানবিক সময়োচিত দর্শন।
কোন খানে ॥ হেনরী স্বপন
কী দেখাইলা?
বুকের মাচায় কঁচি কদুর দোলায়,
বাতাসে কিসের হাতছানিকার দোলানিতে, কেমন ইশারা করে
পরানে আগুন জ্বলে ওভেনের তাপ খুলে;
ক্ষেতের ওপর রোদ এসে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে
গিরস্থ বাড়ির পালা কইতর।অচেনা নিঃশ্বাস দেয় মনে ঢেঁকিপাড় ;
বেড়াল চলার পথ জুড়ে হাঁটা শব্দগুলো
কোন দোতারায় বাজে
চেনা-অচেনা বুকের জ্বালায় চুল্লির মুখেকার আগুনের দ্যুতি;
জ্বালানিতে জ্বলে কেন এত দাউদাউ।
মূলত, এভাবেই লোড-আনলোড সূত্র জানা হয়ে গেলেই, বোঝা যাবে আক্রমণ-প্রতিরক্ষায় কতটা শক্তি আছে কবিতার গ্রান্ড ভায়োলেন্সে। যে শব্দ-বোধের আর্কেটাইপ—অন্য কোথাও নিয়ে যাবে পাঠকে। যা ছড়ানো নয়। নিহিত হবে বিনোদন-আনন্দে, সৌন্দর্যবোধে। শুধুই দেখার একমাত্রিকতায় নয় নিমজ্জিত বহুক্ষণ। তাই কবিতা আমার সৌন্দর্যভোগ ! একটি অনিশ্বেষ ক্রিয়া, সেখানে জীবনের মৌলিক আশ্রয় পেতে ফিরে ফিরে এসেছে—মানুষ, প্রকৃতি, নারী এবং মৃত্তিকার কাছে। সেখানে আমার সমস্ত কবিতার পটভূমি কিছুটা প্রচ্ছন্ন ছায়ার ভেতর লুকিয়ে থাকে। অনেক আবছা থাকে পঙ্ক্তির অর্থবোধ। কুহকের মধ্যে ছোপ ছোপ রঙের দাগ কেটে দেওয়া আমার কবিতার চিত্রকল্প এবং উপমা তৈরির বর্ণনায় কেবল সংকেত দিয়ে শব্দের মুগ্ধতায় পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে আমার কবিতার প্যাটার্ন। তাই আমিও বিশ্বাস করি,‘দুর্বোধ্যতা শুধু নয়, সম্পূর্ণ অর্থহীনতাও কবিতার উপার্জন হতে পারে। কবিতাকে পাওয়া যাবে আপাত অর্থশূন্য শব্দোচ্চারণেও, এমনকি হয়তো অর্থশূন্যতার কারণেই। শব্দমূর্ছনাই কবিতা—বর্ণনার অতীত শব্দের জাদুতে পৌঁছানোই কবিতার কাজ।’এ-জন্যেই শব্দব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি বরাবরই নিপুণ ও চতুরতায় অনেক বেশি সচেতন এবং দূরদৃষ্টিপ্রসূত বলেই হয়তো আমার কবিতা অন্যের থেকে আলাদা।
তাই বলে আমি, কোনোকালেই পাঠকের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন মেনে কবিতা লিখিনি। বরং এখনকার কবিতার পাঠককে বাইরে মনে না রেখে আমার কবিতায় ‘আমি’র অংশ মুছে ফেলে অন্য ‘আমি’তে মিশ্রিত হতে চেয়েছি। যদিও সময় এবং সময়ের মানুষ তার মিনিং মেনেই এগিয়ে চলে, আর সে-কারণেই আরও বেশি স্বতন্ত্র ও বহুস্বরিক আমার কবিতা, প্রকৃত ও প্রত্যক্ষ পাঠকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন কবিতা হয়ে উঠবে, আগামীর সময়-সত্তার বিনির্মাণ খেলায়।