॥৪॥
‘আলেখ্য’ গ্রন্থের কবিতায় বিষ্ণু দে’কে আবার পাওয়া যায় প্রেমে ও প্রিয়ার সন্ধানে। এ কি কট্টর বামপন্থীদের সমালোচনার জেদে না কি মানসিক আশ্রয়ের সন্ধানে? মাঝখানে কত ঝড়ঝাপটা বয়ে গেছে। কত উত্থান-পতন হয়েছে, তবু বিষ্ণু দে নিজের ব্যক্তিসত্তাকে অবলুপ্ত করতে দেননি। ‘রাগমালা’ কবিতায় প্রেমের কথা বলেছেন চিরদিনের প্রেমের ভাষায়:
ভালোবাসি সেই কথা তোমাকে বলি বার বার
আকাশ যেমন বলে, মাটি শোনে রৌদ্রে মেঘে আর
অন্ধকারে বার বার। তুমিই শিউরে ওঠ
বর্ষে বর্ষে মাটির মতন, ইতিহাসে যেমন মানুষ।
এ কবিতায় কবি প্রেমেই জীবনের পরিপূর্ণতার কথা বলেছেন। ‘একটি পূরবী’ কবিতায় বলেছেন “আমার হৃদয় একা”। অথচ কত বছর আগে থেকেই দেখেছি কবি সাম্যবাদী সমাজের আকাক্সক্ষায় একক জীবন ছেড়ে যৌথজীবনের জয়গান নয় অনুভব করেছেন। কিন্তু এখানে দেখছি বিরাট পরিবর্তন। এ কি তাঁর রাজনীতি ছেড়ে কবিতার কাছে ফিরে আসা? ‘ঐ মহাসমুদ্রের’ কবিতায় বলেন,
তবু দেখ তোমার ভিখারি
এসেছি তোমারই পাশে, নতুন ঊষার স্বর্ণদ্বার
দেখেছি তোমারই চোখে
এবার কবি প্রিয়তমার কাছে প্রেমভিখারি হয়ে গেলেন? ‘গুপ্তচর মৃত্যু’ কবিতায় মৃত্যুভাবনা দেখা দিয়েছে। এ যেন গভীরভাবে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখা। কবিতাটিতে মৃত্যুর প্রসঙ্গে আসার আগে অভাবের কথা বলেছেন। সে অভাব নানা ধরনের অভাব। এখানে তিনি তাঁর স্বভাবজাত তৎসম শব্দভাণ্ডার থেকে শূন্য বা শূন্যতাবাদ ধরনের শব্দ না এনে একেবারে আটপৌড়ে শব্দ ব্যবহার করেন— অভাব।
তাই কি করে না ভয় যতই বয়স
চলে এক অর্থহীন প্রাকৃতিক অন্তিমের দিকে?
এর পরের কবিতার নাম ‘এবং লখিন্দর’; নামকরণেই বলে দেয় এর বিষয়ও মৃত্যু। চাঁদ সওদাগরের ছেলে লখিন্দর লোহার ঘরে বাস করেও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান নাই। ‘তবু কেন’ কবিতায় প্রশ্ন করেন, “তবু কেন মরুভূমি ধেয়ে আসে বাংলা জীবনে”। এ কবিতায় তারিখ নাই, রচনাকাল জানতে পারছি না। তাই ‘মতান্তর বুঝি আমি, কিন্তু কেন এই মনান্তর?’ প্রশ্নটিরও উৎস জানতে পারছি না। সমকালীন কোনো ঘটনারই প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ‘এ বিচ্ছিন্ন নয়নাভিরামে’ কবিতায় নিসর্গ প্রেম তীব্রভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু শেষ পঙক্তিতে জানান, শান্তি নেই এ বিচ্ছিন্ন নয়নাভিরামে। ‘তাই শিল্পে’ কবিতায় দেখি শিল্প সম্পর্কীয় নতুন ধারণা প্রকাশ করছেন।
তাই শিল্পে সত্তা শুদ্ধ; তবু জানি জীবনই আকাশ,
শিল্প শুধু মেঘ, জ্যোৎস্না, মাঘী রৌদ্র, আষাঢ়ের ধারা।
শিল্প শুধু ইতিহাস. মুহূর্তের তোরণে পাহারা।
‘হেমন্ত’ কবিতায়ই বোধহয় প্রথম সাঁওতালদের কথা এসেছে। ছুটিতে তিনি লালমাটির দেশে গিয়েছেন, পশ্চিমা সুরের উপমায় উপমিত করেছেন শ্যামা তন্বীর মৃদঙ্গের বোলের কথা। ‘জন তিনেক ভগ্ন হৃদয়’ কবিতায় দেখি প্রিয়ার জন্য চরম ব্যাকুলতা। নিজেকে প্রেমিকার দাস, ভক্ত দাবি করেছেন। চরণে নত বলে স্বীকারও করেছেন। এই প্রেমের কিন্তু শরীরী অনুষঙ্গও আছে। চুম্বনের প্রকারভেদ এবং পদ্ধতি নির্বাচনের কথাও ব্যক্ত করেছেন কিশোর প্রেমিকের মতো। এর পরের কবিতা ‘একাদশী’তেও তাই। ‘সনেট’ নামের কবিতাটিতে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও আত্মস্বীকার বেশ শক্ত ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
আমি যা ছিলাম, একা অবিচল, পাললিক শিলা
…
কোথায় পালাবে তুমি, তোমারই এ স্মৃতির পাহাড়
ধূর্ত অগস্ত্যেরও কাছে কখনো সে নোয়ায়নি ঘাড় ॥
‘এক যুগের সংলাপ’ কবিতায় দ্বন্দ্বমুখর মানসিক অবস্থার কাব্যরূপ নির্মাণ করেছেন একটি উপমা দিয়ে। বিষ্ণু দে’র কবিতা সাধারণত উপমাবহুল নয়। কিন্তু এখানে লিখেছেন,
তোমার হৃদয় আজও চৌমাথায় বাসার মতন,
অবিরাম চলাচল, নানা শব্দ নানা তীব্রতায়
দোতলায় ভেসে আসে, বিকালের খোলা জানালায়
চোখে চলে চলচ্চিত্র, জানও না কেউ বা কখন
কোন ছাপ কার ছাপ রেখে যায় স্বপ্নালু স্নায়ুতে,
এ কাব্যের ‘আলেখ্য’ কবিতায় যে প্রেম দেখি তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাঁওতাল রমণীরই প্রেম। কবি কোনো সাঁওতাল নারীর প্রেমে পড়েছেন। ‘ক বছর পরে’ কবিতায় আবার মৃত্যু ফিরে এসেছে। ‘হাওয়ায় যেমন’ কবিতায়ও কবির মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। তিনি শক্তি সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। শক্তি—সে যত প্রয়োজনীয়ই হোক, কার্যকরী হোক সে বড় ভয়ানক। এ কথাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেছেন।
‘তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ’-কাব্যে দেখি বিষ্ণু দে রবীন্দ্রসরোবরে সুখস্নান করছেন। বেশির ভাগ কবিতা গীতিধর্মী। ছোট ছোট। এখানে দীর্ঘ কবিতা প্রায় নেই। সুরে ও ছন্দে আছে আকর্ষণ। আছে প্রেম, নিসর্গ, সৌন্দর্য বর্ণনা, গ্রামের মানুষের সহজ সরল কথা ও দৃশ্য। আছে মৃত্যুচিন্তাও। আর আছে রবীন্দ্রনাথের কথা, গান, দৃশ্য, সৃষ্টি চরিত্র নিয়ে নতুন বর্ণনা, আছে নতুন জিজ্ঞাসা। ‘তুমিই সমুদ্র’ কবিতায় ঈশ্বরচেতনাও দেখা যায়। ইতিহাসচেতনা বিষ্ণু দে’র কবিতার এক অনিবার্য অংশ। ইতিহাসের প্রচলিত পাঠ নয়। দ্বান্দ্বিক সূত্রে পাওয়া ইতিহাস। নিকট অতীতের ইতিাহাসের প্রভাবই আমাদের মধ্যে বেশি। তাই তিনি মোগল, পাঠান, তুগলক, খিলজিদের কথাই বারবার বলেন। সেই সব মধ্যযুগীয় রাজা-বাদশার ইতিহাস ভেঙে পড়ে আছে প্রত্নসামগ্রীতে; কিন্তু প্রজাদের ইতিহাস রচিত হয় নাই। এই অনুসন্ধানের আকাঙ্ক্ষা আছে আবার ব্যর্থতাও আছে। জীবনজিজ্ঞাসাও এখানে বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে নতুন নতুন শব্দেও পদে নবায়িত হচ্ছে। ‘এক ও অন্য’ কবিতায় দেখি,
এই তো নিয়ম, সত্য জমে ওঠে ধীরে
অনেক বৃষ্টিতে রৌদ্রে অনেক হাওয়ায়
অনেক দুঃখে ও সুখে স্তব্ধ উচ্চারণে।
এ কাব্যেও সাঁওতাল পরগণার প্রকৃতি, প্রেম এবং জীবন যাপনের নানা সমস্যার কথা ছোট ছোট কবিতায় উঠে এসেছে। ‘অথচ তোমায় জানি’ কবিতায় আছে আত্মবোধন। নিজের জীবনের নানা ভুলের উল্লেখ এবং নানা সংকটের কথার পরে কবি ক্ষমাপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিচ্ছেন। ক্ষমা চাইছেনও। এ কী আত্মসংশোধন নাকি আত্মপীড়ন?
আমি তো ক্ষমাই চাই,
ক্ষমা নিজের গর্বের কাছে এবং তোমারও।
আরো অনেকের কাছে আমি চাই ক্ষমা,
তৃতীয়ার পঞ্চমীর দ্বাদশীর পূর্ণিমার কাছে
‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত’ কাব্যের জন্য বিষ্ণু দে ১৯৬৫ সালে আকাদেমী পুরস্কার এবং ১৯৭২ সালে সর্বভারতীয় জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। অনেকেই এ গ্রন্থটিকে বিষ্ণু দে’র একটি মাস্টারপিস বলে মনে করেন। এ কাব্যের কবিতায় প্রেম, আশা, আশাহীনতা সবই আছে। ‘এ নরকে’— দীর্ঘ কবিতাটি সম্পূর্ণই নেতিবাচক। শুধুই হতাশার কথা বলেছেন কবি। আবার ছোট কবিতা ‘ভুবনডাঙায়’তে দেখি প্রেম- দেহজপ্রেমের গভীরতা। ‘সহযোগী’ কবিতায় কবি নিজেকে রূপের কারিগর বলে দাবি করেছেন এভাবে,
তুমি আর আমি সহযোগী এই কথাটা শহরে বটে!
তুমি রূপকার রূপসী, তোমাতে প্রাণ পায় সুন্দর;
আমিও রূপের কারিগর, আঁকি দেয়ালে কাপড়ে পটে,
তোমাতে আমাতে মন চায় সুন্দর!
‘ যে কথা’ কবিতায় দেখি মধ্যবয়সী প্রেমের টান তীব্র হয়ে উঠেছে। মধ্যবয়সী নারীর প্রতি নিবেদিত প্রেম। পরের কবিতা ‘প্রথম কদম ফুল’-এ তাই।
তোমাকে যে দেব জীবনের সন্ধ্যার
শ্রাবণ মাসের প্রথম কদম ফুল
আশা ছিল নাকো, তবুও রংবাহার
তবু বৈকালি আকাশে ঘনাল ঘটা।
এ কবিতাতেই প্রকাশ করেছেন চরম আশাহীনতার কথা, “আজকাল আশা যে কোনো বিষয়ে কঠিন”। পঞ্চাশতম জন্মদিনে লেখা কবিতা ‘জন্মদিন’। সেখানেও আছে বয়সের ক্লান্তি আর সামাজিক অভিজ্ঞতার বিরক্তি।
জানি চালশে জন্মদিনে শোকসভা হাওয়ার হিম বয়,
এমনই দিন এমনই দেশ দুনিয়া ব্যেপে এমনই হাল চাল,
চল্লিশের পঞ্চাশের জন্মদিনে নানা অভাব নানারকম ভয়,
সমাজ বেয়ে সংসারের গলির পাশে দাঁড়ায় আজকাল।
আবার দেখি ‘জ্যৈষ্ঠের স্বপ্ন’ কবিতায় পল্লীবাংলার কৃষকের ফসলের সম্ভাবনা এবং স্বপ্নের কথা। ‘ভাষা’ কবিতাটি পুরোই আশাবদী। প্রকৃতির কাছেই প্রাণ ভাষা খুঁজে পায়। পাঠককে, প্রিয়াকে এমনকি নিজেকেও কবি অভয় দান করছেন। আশাবাদী হওয়ার, স্বাপ্নিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে মনের স্থিরতা আশা করছেন বাইরের কোনো তত্ত্বে না, ব্যক্তিগত সততায়।
ভয় কেন, কবি? আছে আশা,
সততায় স্থির করো মন,
স্থির লক্ষ্য চলেছে পিস্টন্
লেদের আবর্তে গড়ো নানা আয়োজন
ক্রেনের বাহুতে দেখো বিশ্বব্যাপী,
সে দেশজ নাচে গাঁথো ভাষা।
এখানে যান্ত্রিক উৎকর্ষেই তিনি আশা রাখতে বলেছেন। ‘ব্লাডপ্রেসর’ কবিতায় কবি নিজের স্বাস্থ্যতথ্য পরিবেশন করেছেন। এ কাব্যে স্মৃতি অতীতের স্মারক, সত্তা বর্তমানের অস্তিত্ব আর ভবিষ্যত তো আগামীর ছবি। সব মিলিয়ে কবি সময়চেতনা দিয়ে অতীতের সঙ্গে ভবিষ্যতের একটি নতুন সম্পর্ক রচনা করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে কবি বক্তব্যধর্মী উচ্চকণ্ঠ থেকে নেমে এসেছেন নান্দনিক কোমলতায়, স্থিরতায় এবং ধীশক্তিসম্পন্ন শক্তিমানতায়। পঞ্চাশ পেরুনো কবিদের প্রায় সবাই তখন নিজ নিজ অবস্থানে বেশ সংগত এবং সহতরূপেই প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে কাছের অনেক লেখক মারা গেছেন। প্রথমে গেলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারপরে জীবনানন্দ দাশ মারা গেছেন। প্রবল শক্তিশালী মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ও চলে গেছেন। সুধীন্দ্রনাথ থেমে গেছেন।
অনেকের সাথেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। হচ্ছেও কারো সাথে। এই বয়সে বিষ্ণু দে অনুভব করেন একজন মৌলিক কবি হিসাবে নিজের বোধ ও অনুভবের, স্বপ্নের এবং সম্ভাবনার কিছু কবিতা জগতে রেখে যাবেন। বাইরে থেকে পাওয়া, বক্তব্যধর্মী কথা অনেক শুনিয়েছেন, শুনিয়ে যাচ্ছেন আরো অনেক কবি। কিন্তু এবরই মধ্যে কবির মধ্যে এসেছে মৃত্যুচিন্তা। শরীরে বাসা বেঁধেছে স্থায়ী ব্যাধি যা তিনি ‘ব্লাডপ্রেসর’ কবিতায় অনুভব করেই উল্লেখ করেছেন। কাজেই মৌলিক কিছু এই যে বর্তমানে বিরাজমান বস্তুজগৎজুড়ে আত্মবোধ এবং অতীতের স্মৃতি কিংবা স্মৃতির অতীত সময়চেতনারও আছে অন্য এক বোধ এই দ্বিবিধ বোধ এবং অনুভব দিয়েই রচনা করবেন ভবিষ্যতের নতুন সত্তা।
‘পার্কে’ কবিতায় অবসরভোগী, ডাক্তারের নির্দেশে সকাল-বিকাল হাঁটায় মৃত্যুপথযাত্রী এক ব্যক্তিসত্তার সন্ধান পাওয়া যায়। এ যেন প্রস্তুতি অথবা মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখার ব্যর্থ প্রয়াস। এখানে একজন ধ্রুপদী বাঙালি পুরুষকে খুঁজে পাচ্ছি আমরা। এই প্রথম আমরা তাঁর মধ্যে শাস্ত্রানুগত্যও দেখতে পাচ্ছি। বিষ্ণু দে’কে ঢালাওভাবে মার্কসবাদী কবি যারা বলেন তারা মুখস্থ কথাই বলেন। পরিবর্তনগুলো লক্ষ করেন না। তাঁর বিশ্বাসের মাত্রাগত তারতম্য দেখেন না। ভাঙাগড়া, উত্থান-পতন কিছুই তাদের চোখে পড়ে না। ‘দেখেও লাগে ভালো’ কবিতায় প্রাচীন এবং লোকশাস্ত্রকে মানা এবং গ্রহণযোগ্যতার পক্ষেই দেখতে পাই তাঁকে। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের স্মৃতির অতীত ইতিহাস থেকে যুক্তি এবং তথ্য এনে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করেছেন।
‘আলেখ্য’ কবিতায় ধ্যান শব্দটির ব্যবহার, পুনর্ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। কবির মধ্যে বয়সের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। শাস্ত্রানুগত্য, ধ্যান ইত্যাদি বাংলার চিরকালীন আধ্যাত্মিকতায় বিষ্ণু দে’ও অবগাহন করছেন। চিরকাল একই ধরনের চিন্তা এবং অনুভূতি থাকে না মানুষের। বিশেষ করে ঋতুবৈচিত্র্যের এই দেশে। এ কবিতায় চিরকালের বাংলার লোকায়ত শিল্পের এবং চেতনার নানা অনুষঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বাসের পুনঃপ্রতিষ্ঠাই যেন করছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে আশ্রয় নেওয়ার কথা যেমন বলেছেন, তেমনি ধ্রুপদ-টপ্পার মতো দরবারি সঙ্গীতের সাথে বাউল, কীর্তন, ভাটিয়ালি, কাওয়ালি, জারি, সারিগান, যাত্রা এবং গাজনে আর আগমনী গানের ভেতর দিয়ে জাতির সাংস্কৃতিক চেতনা ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ হওয়ার কথাও বলেছেন। পাশ্চাত্যবিদ্যা থেকে লব্ধ বুদ্ধি ও যুক্তির চেয়ে হাজার বছরের বাঙালির পুরনো এবং শাশ্বত লোকজীবনে গভীর আস্থাই এ কাব্যে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ‘সে এবং এরা’ কবিতায় তাই দেখা যাচ্ছে।
চলবে…
বিষ্ণু দে: একালের চোখে-৩॥ কাজী মহম্মদ আশরাফ
বিষ্ণু দে: একালের চোখে-২॥ কাজী মহম্মদ আশরাফ
বিষ্ণু দে: একালের চোখে-১॥ কাজী মহম্মদ আশরাফ