সম্প্রতি বাংলাদেশের বাংলা ভাষায় আরবি শব্দের প্রবেশ-অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেককে দুশ্চিান্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছে। তাঁদের কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও এই বিষয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। এ-বিষয়ে ক্ষুব্ধ বোদ্ধাদের গভীরভাবে অধ্যয়ন ও চিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার মানুষও বাংলায় কথা বলে। বঙ্গোপসাগরের থাইল্যান্ড উপকূলে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান-নিকোবরেও প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম, মেঘালয়, উড়িষ্যায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভাষা ‘সংস্কৃতি’র অন্যতম প্রধান উপাদান এবং অঞ্চলভেদে ভাষার কথ্যরূপে যে শুধু ভিন্নতা থাকবে তা-ই নয়, এর শব্দভাণ্ডারেও ভিন্নতা থাকা খুবই স্বাভাবিক।
এই প্রসঙ্গে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করি। এটাও সত্য যে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে কিঞ্চিৎ মতভিন্নতা থাকলেও মৌলিক বিষয়ে তাঁরা একমত। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ প্রসঙ্গে ভাষা বিজ্ঞানী ড. শ্রীনীতিকুমার চট্টোপাধায় জানিয়েছেন,
বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তি আর বিকাশ কবে যে হয়েছিল, সে সম্মন্ধে কোনও স্পষ্ট কথা বা কিংবদন্তি আমাদের সাহিত্যে নেই। চণ্ডীদাসের পূর্বে, অর্থাৎ খৃষ্টীয় ১৪ শতকের চতুর্থ পাদের পূর্বে, সবই অন্ধতমিস্রাচ্ছন্ন। চণ্ডীদাসের আগেকার লোক, কিন্তু এঁদের সময়ের ভাষার নিদর্শন নেই, এঁ যে কত প্রাচীন তা’রও কোনও প্রমাণ নেই, বেহুলা লখিন্দরের কথা, লাউসেনর কথা, গোপীচাঁদের কথা-এগুলো বাংলার নিজস্ব সম্পত্তি; রামায়ন, মহাভারত, পুরানের মতোন এগুলো সুপ্রাচীন উত্তর ভারতীয় হিন্দু জগতের কাছ থেকে, পৈতিৃক রিকয় হিসাবে প্রাপ্ত সম্পদ নয়।১
এই বক্তব্যে বাংলা ভাষার উৎপত্তির কাল পরিষ্কার না হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি যা বলেছেন, তার ওপরে ভিত্তি করে একটা উপসংহারে আসা যায়।
বাংলা ভাষার আদি ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, খৃষ্টীয় চতুর্থ শতকেও প্রাকৃত ভাষার ব্যবহার এদেশে দেখা যায়। সে সময় হিন্দু রাজন্যবর্গ ব্রাহ্মণদের ভূমি দান করতেন। উক্ত দাননামা তাম্রনির্মিত পাতে প্রাকৃত ভাষায় লেখার প্রমাণ পাওয়া যায়। সবচেয়ে প্রাচীন তাম্রশাসন বাংলাদেশে যা এ পর্যন্ত বেরিয়েছে সেটি হচ্ছে ধানাইদহে প্রাপ্ত গুপ্ত সম্রাট কুমারগুপ্তের সময়ের; এর তারিখ হচ্ছে ৪২২-৪২৫ এর পরে, ধারাবাহিকভাবে মুসলমান যুগ পর্যন্ত, আর তার পরবর্তী কালেরও, অনেকগুলি তাম্রশাসন পাওয়া গিয়েছে। এ সব দলিলে […] বাংলার প্রকৃত ভাষার নামও র’য়ে গিয়েছে। সেগুলি কোথাও মেজে-ঘষে দুই-একটি উপসর্গ বা প্রত্যয় তা’দের আগে পিছনে জুড়ে দিয়ে’, বাহ্যত একটু সংস্কৃত করে নেবার চেষ্টা করা হয়েছে।২
সুনীতিকুমার চট্টোপাধায়ের দালিলিক বিবরণী থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে অর্থাৎ মুসলিম শাসনের পূর্বে বাংলা ভাষার প্রকৃত রূপ ছিল ‘প্রাকৃত’, যার সাথে কিছু সংস্কৃত উপসর্গ বা প্রত্যয় যুক্ত করে দেওয়া হতো। এদেশে প্রাকৃত ভাষার প্রচলন ছিল, যদিও প্রাকৃতের সঙ্গে লিখিত রূপে সংস্কৃতের কিছুটা যোগ ছিল। প্রসঙ্গক্রমে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন, যা বর্তমান বাংলা ভাষার রূপ অনুধাবনে সহায়ক হবে।
সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীনতম প্রামাণ্য গ্রন্থ হচ্ছে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ উপনিষদ ও ঋগ্বেদ। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্য থেকে শেষ ভাগের মধ্যবর্তী সময়ে এই গ্রন্থদ্বয় রচিত হয়। এই সময়কার কোনো লিখিত নথি পাওয়া যায় না। তবে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, এই গ্রন্থের মৌখিক প্রচলনটি বিশ্বাসযোগ্য। কারণ, এই জাতীয় গ্রন্থগুলোর সঠিক উচ্চারণকে ধর্মীয় কারণেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো। ‘সংস্কৃত’ শব্দটির দ্বারা অন্যান্য ভাষা থেকে পৃথক একটি ভাষাকে বোঝাতো না, বরং বোঝাতো একটি পরিমার্জিত কথনরীতিকে। সাধারণত উচ্চবর্ণ, বিশেষত ব্রাহ্মণদের মধ্যেই সংস্কৃত ভাষার চর্চা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত ছিল বিদ্যাচর্চার ভাষা।
ভাষাতাত্ত্বিক মনিরুজ্জামান কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন,
সে-সময়ে ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলোও বাংলা অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। এই উপভাষাগুলোকে মাগধী-প্রাকৃত বলা হয় এবং এটি বিহার, বাংলা ও আসামেও কথ্য ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। এই ভাষা থেকে অবশেষে মাগধী-প্রাকৃত ভাষার বিকাশ ঘটে। প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিক থেকে মাগধী-প্রাকৃত ভাষা ক্রমে ক্রমে এর রূপ পরিবর্তীত হয় এবং অনেক পঙক্তি বাংলা ভাষাকে মাগধী-প্রাকৃত ভাষার অপভ্রংশ হিসেবে অভিহিত করেন। চর্যাপদগুলির ভাষা আলোচনা ক’রে আমার নিজের ধারণা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের চেয়ে অন্ততো দেড়শ বছর আগেকার- দু’চারটে বিষয় থেকে অনুমান করা হয় যে, যাঁরা এই গান লিখেছেন তাঁরা খৃষ্টীয় ৯৫০ থেকে ১২০০-ও মধ্যে জীবিত ছিলেন। এত সবচেয়ে প্রাচীন বাঙলার খানিকটা নিদর্শন পাচ্ছি।৩
এ-প্রসঙ্গে তিনি উপসংহার টেনেছেন এভাবে, ‘খৃষ্টীয় ১০০০ সালের পূর্বেকার বাংলা ভাষার পরিচায়ক তেমন বিশেষ কিছু নেই। চর্যাপদে গিয়ে আমাদের ঠেকতে হয় মাগদী-প্রাকৃতে।’ ৪
সেন শাসনামলে একটিও বাংলা সাহিত্য রচিত হয়নি কারণ সেই সময় তারা বাংলার মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে তাদের দেবভাষা বা ধর্মীয় ভাষা ‘সংস্কৃত’কে চাপিয়ে দেয়। ফলে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা সম্ভব হয়নি। অথচ আজ তাদের চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃত ভাষা বিলুপ্ত আর বাংলা ভাষা ঠিকে আছে সগৌরবে!
দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটক থেকে আসা ব্রাহ্মণ ধর্মাবলম্বী সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন (১১৫৮-১১৭৯) কৌলিন্য ও বর্ণপ্রথা চালু করতে গিয়ে সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সময় বাংলা ভাষার চর্চা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণ-অনুশাসনের যুগে প্রজাদের বড় অংশই ছিল অবহেলিত। উচু-নিচু বর্ণের ভেদাভেদ মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মাঝে তুলে দিয়েছিল বাধার প্রাচীর। নাপিত, ধোপা, ডোম, চণ্ডাল ইত্যাদি পেশার লোকজন ছিল চরম ঘৃণিত। তাদের দেখলে অন্যদের যাত্রাভঙ্গ করতে হতো। ‘ছি ছি’ ‘ধুর ধুর’ এই ছিল তাদের প্রতি সম্বোধনের ভাষা। সে সময় ছিল সংস্কৃত ভাষার জয়জয়কার। বাংলা ছিল অবহেলিত। প্রচার করা হয়েছিল, যদি কেউ রামায়ণ ও পুরাণের কথা বাংলায় প্রচার করে তাহলে সে রৌরব নরকে পতিত হবে। রামায়নের অনুবাদক কৃত্তিবাস এবং মহাভারতের অনুবাদক কাশীদাসের নিন্দা করে ভট্টাচার্যরা প্রবাদ রচনা করেছিলেন, ‘কৃত্তিবেসে, কাশীদেসে আর বামুন ঘেঁষে, এই তিন সর্ব্বনেশে।’৫
বাংলায় মুসলিম শাসন থিতু হতেই বাংলাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় রাজদরবারে। সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ (১৩৮৯-১৪১০ খ্রিস্টাব্দ) শিক্ষানুরাগী হিসেবে ইতিহাসে বিশেষ স্থান লাভ করেছেন।
এই ধর্মীয় ও রম্য উপাখ্যান বাংলা সাহিত্যে নব দিগন্তের সূচনা করে। বাংলা অঞ্চলে মুসলিম শাসনামলে রাজকাজে ফারসি ভাষা ব্যবহৃত হয় মূলত সুলতানি শাসনামলে। সংস্কৃতের পর বাংলা ভাষায় ফার্সি ভাষার সর্বাধিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। এমনকি মুসলিম জনগোষ্ঠী ধর্মীয় টারমিনোলজির ক্ষেত্রেও আরবির পরিবর্তে ফারসি শব্দ ব্যবহারেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে; যেমন সালাত-এর পরিবর্তে নামাজ, সিয়াম-এর পরিবর্তে রোজা ইত্যাদি।
বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই ফারসি ভাষার চর্চা ও ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছিল। ইরান-ইয়েমেন থেকে আগত সুফি-দরবেশগণ সৈনিক, ব্যবসায়ী ও রাজপুত্রদের কাফেলার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রসর হয়ে জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিম্ন বর্ণের মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে এবং কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে জানতে গিয়ে আরবি ও ফারসি ভাষার চর্চা করতে বাধ্য হন। সুফি-সাধকরা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বিষয়াদি সম্পর্কে ফারসি ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ প্রণয়ন করেন, যা বাংলা অঞ্চলে ফারসি ভাষার উন্নয়ন ও বিস্তারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
মুঘল শাসনামলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। মুঘল শাসকেরা যদিও প্রত্যক্ষভাবে বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেনি তাদের জ্ঞানদীপ্ত শাসনের পরিবেশের ফলে বাংলা ভাষার উন্নয়নের পথ সুপ্রশস্ত হয়েছিল। মুঘল পূর্ব যুগের মুসলিম শাসকগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলনে প্রত্যক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। ফার্সি শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রসারের ফলে বাংলা ভাষা বিশেষভাবে বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিল।৬ মুঘল শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের চর্চা বাংলা ছাড়িয়ে ত্রিপুরা ও আরাকানেও লক্ষ করা যায়।
বাংলায় সৈয়দ সুলতানের ‘নবীবংশ রসুল বিজয়’, ‘শব-ই-মেরাজ’, ‘হানিফের লড়াই’, ‘আমীর হামজা’, ‘ইউসুফ-জুলেখা’, নওয়াজিস খানের ‘পাঠঅন প্রশংসা’, উজির অঅলীর ‘শাহনাম ‘, ত্রিপুরাতে ত্রিপুরা রাজবংশের ইতিহাস ‘রাজমালা’, আরাকানে কবি আলাওলের বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ মুঘল শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কীর্তি।৭
ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকব্যাপী বাংলা অঞ্চলে প্রভাবশালী ভাষা হিসেবে ফারসির ব্যবহার অব্যাহত থাকে। তৎকালীন সমাজে ফারসির গুরুত্ব বিবেচনা করে ইংরেজ সরকার এদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তারের পরও সুদীর্ঘ ৮০ বছর (১৭৫৭-১৮৩৭) ফারসিকেই রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেয়। উনিশ শতকে মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন ও আধুনিক গ্রন্থাগার স্থাপিত হওয়ায় ফারসি চর্চা অধিকতর প্রসার লাভ করে। আগের মতো এই শতকেও মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু রাজা-মহারাজারা ফারসি সাহিত্য-চর্চায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ও হিন্দু ধর্মের সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) ফারসি ভাষায় বেশ কিছু-সংখ্যক মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।
এই বিবর্তনকাল প্রায় সাতশ বছর স্থায়ী হয়। পরিণতিতে বাংলা ভাষা ফারসি ভাষার প্রভাবে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। ব্রিটিশ শাসনামলেই মুসলিম লেখকগণ মৌলিক বাংলা সাহিত্য রচনার পাশাপাশি উপমহাদেশে ফারসিতে রচিত মূল্যবান গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদে আত্মনিয়োগ করেন। এ কারণেই বাংলা ভাষায় অসংখ্য ফারসি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলমান লেখকগণ প্রচলিত ধারাকেই আত্তীকরণ করেন; তবে ক্ষেত্রবিশেষে অনৈসলামিক প্রভাব দূর করার জন্য কিছু কিছু সংযোজন ও পরিবর্তনও করেন। কাসিদা, হামদ, নাথ ইত্যাদি ভক্তিমূলক গান রচনায় মুসলমান গীতিকাররা আরবি, ফারসি ও তুর্কি শব্দও ব্যবহার করেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক ধাপ এগিয়ে কাসিদা, হামদ, নাথ-এর মতো ভক্তিমূলক গানের ক্ষেত্র ছাড়াও সাধারণ কবিতা ও গানে আরবি, ফারসি, তুর্কি শব্দ সার্থকভাবে ব্যবহার করেন।
ততদিনে বাংলা ভাষায় বহু-সংখ্যক ফারসি ভাষা আত্তীকৃত হয়েছে এবং বাঙালিও (হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকলেই) ওই সব শব্দ নিজ ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। দাপ্তরিক ও আদালত সংক্রান্ত শব্দাবলির বাংলা পরিভাষা না থাকায় এর বিকল্পও ছিল না। বাদশাহ, আইন-কানুন, সালিশ-নালিশ, সুপারিশ, ফরমান ইত্যাদি ফারসি শব্দ। একইসঙ্গে বাঙালি মুসলমানরা নামাজ, রোজা, খানকাহ, দরগা, সুদ, ফরিয়াদ, ঈদগাহ, মৌলভি, বান্দা, শাদি ইত্যাদী ফারসি টারমিনোলজি নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেই চালু করেন। শুধু তা-ই নয়, অনেক হিন্দি শব্দও বাংলা ভাষায় আত্তীকরণ করা হয়। আবার অনেক হিন্দি শব্দ যেমন, কাহিনি, খানাপিনা, পানি, মিঠাই, সাচ্চা, টহল; পর্তুগিজ শব্দ সাবান, আলকাতরা, চাবি, বারান্দা আলমারি, কেরানি, বালতি বাংলা শব্দে এমনভাবে আত্তীকৃত হয় যে, ভাষাবিদরা ছাড়া অনেকে জানেনই না যে এগুলো পর্তুগিজ শব্দ।
পরবর্তী সময়ে সমগ্র ভারতে ইংরেজি শিক্ষা চালু হওয়ায় ভারত উপমহাদেশের প্রতিটি ভাষাতেই ইংরেজি শব্দ কথ্য ও লিখিত উভয় ভাষাতেই অসংখ্য ইউরোপীয় বিশেষত ইংরেজি শব্দ আত্তীকরণ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ নেই। কোনো কোনোটির প্রতিশব্দ থাকলেও অব্যবহারের দরুন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এজেন্ট, ইঞ্জিন, কংগ্রেস, কনস্টেবল, জাঁদরেল, টিকিট, টিফিন, টিন, টেবিল, টেলিফোন, টলিভিশন, টেন্ডার, টেলিগ্রাফ—এসবই ইংরেজি শব্দ। কার্তুজ, ক্যাফে, কুপন—এগুলো ফরাসি শব্দ। ব্যাংক শব্দটি ইতালীয় শব্দ; যদিও ইতালিতে এর উচ্চারণ ব্যাংকো (Banco)।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে উঠেছে। তবে আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসহ অন্যান্য ভাষিক পরিবারের শব্দ ব্যপকভাবে স্থান করে নেয়। এখানেই ভাষা ও ধর্ম তথা ভাষায় ধর্মীয় প্রভাব প্রসঙ্গটি চলে আসে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা বাংলা ভাষা থেকে ফারসি শব্দের প্রভাব দূর করার উদ্যোগ নেন ফোর্ট উইলয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের ইংরেজ শিক্ষকদের মাধ্যমে। পণ্ডিতদের কাজে যুক্ত হন খ্রিষ্টান পাদ্রি হ্যালহেড, উইলিয়াম কেরী, হেনরী গিটস ফরস্টার। পণ্ডিতদের মধ্যে পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামনাথ বিদ্যাবাচষ্পতি, রামরাম বসু প্রমুখ সবিশেষ উদ্যোগ নেন।
বাংলা ভাষায় যেখানে সম্ভব সেখানে ফরসি ও আরবি ভাষার পরিবর্তে সংস্কৃত শব্দ যুক্ত করা হয়। সেদিন সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডার ভিত্তিতে ঔপনিবেশিকতার উদরে এইভাবে জন্ম হয় আধুনিক বাংলা গদ্যের। যে গদ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের আমজনতার ভাষার কোনো সম্পর্ক ছিল না। মূল বাংলা ভাষার প্রতি তাদের অসূয়া কত গভীর ছিল, তা বোঝানোর জন্য ড. মুহাম্মদ এনামুল হক লিখেছেন,
হিসাব করে দেখা গেছে, যে ভাষা আমাদের নামজাদা সাহিত্যকরা তাদের লেখায় ব্যবহার করছেন, তার শতকরা দুটি অনার্য, পঁচিশটি সংস্কৃত-আধা সংস্কৃত, ষাটটি সংস্কৃত থেকে ভেঙ্গে সোজা করে নেওয়া আর আটটি হচ্ছে বিদেশী অর্থাৎ কিনা আরবী, ফারসী, পর্তুগীজ, ইংরেজী প্রভৃতি।৮
সম্প্রতি বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-মুসলমান বাংলায় আরবি শব্দের ব্যবহার নিয়ে বোধ করি কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। এ-প্রসঙ্গে আমি মনে করি ভাষা কিংবা কোনো ভাষার শব্দ ব্যবহারে মুসলমানদের কার্পণ্য করার সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। আল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণেও বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ২২, ২১, পারা: ২১)।
সুতরাং কোনো ভাষাকে হেয় জ্ঞান করার অবকাশ নেই, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার সুযোগ নেই ও অবহেলা করার অধিকার নেই। মানুষ যে ভাষায় স্রষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইবে, তা-ই বৈধ। আর প্রত্যেক ধর্মেই কিছু আচার অনুশীলন করতে হয়।বিশেষ ভাষায়; যেমন, ইসলাম ধর্মে নামাজ আদায় করতে হয় আরবিতে, ইহুদি ও হিন্দু ধর্মে দৈনিক প্রার্থনা করতে হয় যথাক্রমে হিব্রু ও সংস্কৃত ভাষায়।
এদিকে গত এক দশকে শুধু বয়স্ক মানুষ নয়, মুসলিম তরুণ সম্প্রদায়ের অনেকে আছে, যারা মৌলিক ধর্মীয় আকিদা মেনে না চললেও তাদের কিছু আরবি শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। যেমন, মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি। ইনশাআল্লাহ আরবি শব্দটি অবশ্য সম্ভবত এদেশে ইসলামের আবির্ভাবের সময় থেকেই ব্যবহার করা হয়।
একইসঙ্গে কিছু মুসলিম ধর্মীয় টামিনোলজি ফারসির পরিবর্তে আরবি ব্যবহার করছে; যেমন, নামাজের পরিবর্তে সালাত, রোজার পরিবর্তে সিয়াম ইত্যাদি। এই ধারা বাংলাদেশে ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। বস্তুত মাদ্রাসা থেকে শিক্ষিত বিপুল পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। সম্প্রতি মাদ্রাসা ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পড়াশোনায় অধিকহারে আগ্রহ লক্ষনীয় এবং ভর্তি পরীক্ষায় তারা ভালো ফলও করছে; যা অনেককে বিস্মিত, এমনকি চিন্তিতও করে তুলেছে। মাদ্রাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত এই ছাত্ররা সোশ্যাল মিডিয়াতে ধর্মীয় টারমিনোলজিগুলো ফারসির পরিবর্তে আরবি ব্যবহার করছে। অন্যেরাও তাতে উৎসাহিত বা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া ইউটিউবে ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমেও এই শব্দগুলো ব্যাপক-সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করি। তবে এতে প্রগতিশীল চিন্তাবিদগণের চিন্তা বা উদ্বেগের কিছু নেই।
বাংলা ভাষা একটি বিবর্তিত ভাষা। সংস্কৃত বাংলা ভাষার আদি-রূপ নয়। বাংলা ভাষার আদিরূপ মাগধী-পালি হলেও পরবর্তী সময়ে নানা ভাষার শব্দের সমন্বয়ে বাংলা ভাষা আজকের রূপ পরিগ্রহ করেছে। মাগধী-প্রাকৃত থেকে যে বাংলা সৃষ্টি হয়েছিল, তা বিলুপ্ত হয়েছে। এমনকি সংস্কৃত ভাষার তৎসম শব্দও প্রায় বিলুপ্ত। আবার কয়েকটি আরবি শব্দ নতুন করে বেশি শোনা যাচ্ছে বলে এটাও ভাবা ঠিক হবে না যে, বাংলা ভাষা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বা বাংলা ভাষা তার মৌলিকত্ব হারাচ্ছে। বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি শব্দ আছে, যা শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠী নয় অন্যান্য ধর্মালম্বীরাও ব্যবহার করে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলা প্রাইমার লেখার জোয়ার আসে, যার পেছনে ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকারের একটি শিক্ষিত শেণি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা কাজ করেছিল। শাসনকার্যে দক্ষতা অর্জনের জন্য এবং শাসিত প্রজাদের মধ্যে ইংরেজি জানার পাশাপাশি বাংলা ভাষার চর্চা করা একটি শ্রেণী গড়ে তোলা তাদের জন্য জরুরি ছিল। ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি জ্ঞানার্জন ও তার চর্চা তখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় এবং এ কাজে ইংরেজির পাশাপাশি মাতৃভাষার চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সময়ে শিক্ষা বিস্তার, স্কুল প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং এসময়ে ইংরেজ সরকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশনও গঠন করে, যারা জরিপ চালিয়ে শিক্ষা খাতের প্রকৃত অবস্থা বুঝে করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ করে। কমিশনসমূহের প্রতিবেদনে বাংলা ভাষায় পাঠ্যবইয়ের অভাবকে শিক্ষা বিস্তারের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এই সময়ে শিক্ষা বিস্তার, স্কুল প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং এসময়ে ইংরেজ সরকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশনও গঠণ করে, যারা জরিপ চালিয়ে শিক্ষা খাতের প্রকৃত অবস্থা বুঝে করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ করে। কমিশনসমূহের প্রতিবেদনে বাংলা ভাষায় পাঠ্যবইয়ের অভাবকে শিক্ষা বিস্তারের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
শিশুদের শিক্ষার প্রাথমিক ধাপে বর্ণমালার গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভূত হয়, এবং এ কারণে ‘বর্ণপরিচয়’ রচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয় ব্রাহ্মীলিপি থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে তৎকালীণ বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে এবং এ বিবর্তন প্রক্রিয়া চলেছে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। যদিও কমিশনের মতামতের ব্যাপারে সকলে একমত নন। কেননা, চর্যাপদের বর্ণলিপিকেই বেশিরভাগ পণ্ডিত বাংলা বর্ণলিপির পূর্বতন লিপি বলে মনে করেন। তবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই আধুনিক (চলমান) বাংলা বর্ণমালা উদ্ভাবন করেন। বিদ্যাসাগরের সহকর্মী মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ভূমিকাও এক্ষেত্রে স্মর্তব্য।
বাংলাদেশে বাংলা ভাষা বিজাতীয়করণ প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় সামান্য কয়েকটি শব্দ নিয়ে। বাঙালি মুসলমানরা কেন জলকে পানি বলে, স্নানকে গোসল বলে এবং নিমন্ত্রণকে দাওয়াত বলে? উল্লেখ্য যে, ‘পানি’ হিন্দি শব্দ, ‘গোসল’ ফারসি শব্দ এবং ‘দাওয়াত’ আরবি শব্দ।
ফারসি, আরবি শব্দ তো শুধু যে বাঙালি মুসলমানরা বলে তাতো নয়, হিন্দু, বৌদ্ধরাও বলে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ও আরবি শব্দ ‘ময়দান, মেহনত, মোকাবিলা,পয়দা’ হররোজ ব্যবহার করছে। তো এই গোটা তিনেক সংস্কৃত শব্দ বাঙালি মুসলমানরা না বললে তাদের বাঙালিত্ব খারিজ হয়ে যাবে? আমি মনে করি না। অক্সফোর্ড, ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত গ্রন্থে বলা হয়েছে ইংরেজি ভাষার শব্দভাণ্ডারের (৮০,০০০ শব্দ) ৭০ শতাংশ শব্দই বিদেশি উৎসজাত। ৯
বাংলা ভাষার অপর একটি বৈশিষ্ট্য এর বিজ্ঞানভিত্তিক সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত বর্ণমালা, এ বর্ণমালা ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। কেননা, প্রথমত, বাংলা ভাষার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ ইংরেজিসহ অন্য অনেক ভাষার ন্যায় অবিন্যস্ত নয়, বরং সুবিন্যস্ত ও আলাদা। দ্বিতীয়ত, যে ধ্বনির পর যে ধ্বনিটি আসা উচিত, ঠিক সেভাবেই বর্ণগুলোকে সাজানো হয়েছে। তৃতীয়ত, উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী বর্ণগুলোকে আলাদা-আলাদা বর্গে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যঞ্জনের অল্পপ্রাণ এবং মহাপ্রাণ ধ্বনিও ঠিক পর পর আছে। চতুর্থত, এই ভাষায় মানুষের উচ্চারিত প্রায় সকল ধ্বনির জন্য পৃথক বর্ণ রয়েছে, যা অন্যান্য ভাষায় বিরল। মানুষের স্বরযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত সকল ধ্বনিই তাই আমরা বাংলা ভাষায় পৃথক বর্ণ দ্বারা লিখতে পারি। এমন আদর্শ বর্ণমালা শোভিত ভাষা আমাদের বাংলা ভাষা, যা গর্বেরই ধন বটে।
বাউল, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, মারফতি, কীর্তন, প্রসাদী- কত প্রকারের গীতিকাই না এই ভাষাতে রয়েছে। প্রেম, বেদনা, সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রকৃতি-বন্দনা, উদার মানবতাবাদ—কী নেই এই গীতিকাগুলোতে। ময়মনসিংহ গীতিকা, জসীমউদ্দিনের নকশী কাঁথা, বাউল সঙ্গীত নিজ সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণার বিষয়বস্তু- এত কথা, এত গান, এত কান্না বাংলা গীতি-কবিতার মতো আর কোথায় পাবে মানবজাতি!
পৃথিবীর সকল ভাষা অন্য ভাষার শব্দ আত্তীকৃত করে অধিকতর সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলা ভাষাতেও অন্য ভাষার শব্দ থাকবে। এদেশের একজন মুসলমান সনাতন ধর্মালম্বীকে দাদা হিসেবে সম্বোধন করে। তদ্রুপ সনাতন ধর্মালম্বীর মুসলমানকে ভাই হিসেবে সম্বোধন করে। এটাই বাঙালির সংস্কৃতি। এই বাঙালির ভাষাতে পূর্বেও সংস্কৃত, ফারসি ও আরবি ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে- অন্য ভাষার শব্দের সংখ্যা বাড়বে, কখনো-বা কমবে। তবে গোটা পৃথিবীর সকল ভাষাই অন্য ভাষার শব্দসম্ভার আত্তীকরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধই হয়। এই প্রক্রিয়ায় উদ্বিগ্ন হওয়া অনর্থক।
তথ্যসূত্র
১. শ্রীসুনীতিকুমার চটোপাধ্যায়, বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা নবম সংস্করণ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৬, পৃ. ৫
২. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪
৩. মনিরুজ্জামান, ভাষাতত্ত্ব অনুশীলন, ঢাকা, বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫, পৃ. ১৬
৪. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮
৫. দীনেশচন্দ্র সেন, বঙ্গভাষার উপর মাসলমানের প্রভাব: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মুসলিম অবদান, (মোশাররফ হোসেন খান সম্পাদিত), ঢাকা, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৯৯৮, পৃ. ১৮
৬. ড. এমএ রহিম, বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড, ঢাকা, বাংলা একাডেমী, ১৯৮২, পৃ. ৯
৭. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৪
৮. https://rowyakbd.com/study-of-bengali-in-fort-william-college/ পরিদর্শন: ১৫.৯.২০২৪
৯. Denning, Keith M.; Kessler, Brett; Leben, William Ronald (2007), English Vocabulary Elements (London, Oxford University, 2007) P: 34