গদ্যের গোড়াপত্তন করলেন ১৯৭৮ সালে হলহেড নামে একজন ইংরেজ A Grammer of the Bengal Language-দিয়ে। ভারত উপমহাদেশে তারপরই বাংলা গদ্য হামাগুড়ি দিয়ে আসতে শুরু করলো বাংলাসাহিত্যে, কেবল বাংলা সাহিত্যে নয় সমাজের প্লাটফরমে অর্থনীতির কাঁধে ভর করে ঔপনিবেশিকতার যুগ হয়ে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। বাংলা গদ্যসাহিত্যের পথপ্রদর্শক আরেকজন ইংরেজ মিশনারি উইলিয়াম কেরি, তিনিই হয়ে গেলেন বাংলা ভাষায় গদ্যচর্চার পথিকৃত। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অর্থাৎ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার কাল থেকে, বাংলা গদ্যরচনার গুরুতর প্রচেষ্টা শুরু, তবে বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা আর তার আগের দেশি প্রচেষ্টার মধ্যে সুনীতিকুমার একটা সময় সাধনের প্রয়াস পান—Out of the large number of forms, dialectical, and archaic, which prevailed in Middle Bengali, specially in the verb, documentary and epistolary Bengali of the three centuries 1500-1800 was evolving a standard language for prose, in which only a few recognised forms were used; and the documentary and epistolary Bengali, based as it was on the speech of the 15th century, or it may be, of the 14th, was adopted as the Language of ordinary prose composition, when the advent of weste leaing brought in a sudden demand for a prose style. আর পুরোনো বাংলা গদ্য বলতে যে শুধু দলিল-দস্তাবেজ ও চিঠিপত্র বোঝায় না, সেকথা আরেকবার মনে করিয়ে দেন সুকুমার সেন (১৯৩৪)।
বৈষ্ণব সাধকদের নিবন্ধের আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গদ্য সাহিত্যের উদ্ভবের সম্ভাবনা প্রাচীন সাহিত্যে অসম্ভাবিত ছিল, কেননা ইহার আবেদন তত্ত্ববোধে এবং যুক্তিজ্ঞানে।’ এই ধারণা এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কৃতিত্বে অতিরিক্ত বিশ্বাস যে পুরোনো বাংলা গদ্য সম্পর্কে আমাদেরকে যথেষ্ট মনোযোগী হতে দেয়নি। গদ্য বা গদ্যরীতি এবং গদ্যসাহিত্যের পার্থক্যের ধারণাও অনেকের মনে কাজ করেছিল। তাছাড়া, ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত উপকরণগুলো এক করার চেষ্টাও হয়নি, তেমন করে উপাদান-সন্ধানের কাজও হয়নি। সুতরাং প্রাক-ঊনিশ শতকী বাংলা গদ্য সম্পর্কে আমাদের কোনো সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে উঠতে পারেনি।
রামমোহন, বঙ্কিম, ভূদেব, অক্ষয়কুমার, বিদ্যাসাগর, কালী প্রসন্ন সিংহ, এমন অনেকেই যতিবিহীন গদ্য শুরু করলেন।
চিঠিপত্র লেখা এবং দলিল-দস্তাবেজ লেখার প্রয়োজনে বাংলা গদ্যের সূত্রপাত। দলিল-দস্তাবেজ ইত্যাদি সংস্কৃতি ও পার্সি—এই দুই ভাষার প্রভাবে পরিকীর্ণ। আদি সাহিত্যিক গদ্যে কথ্যভাষার প্রতিফলন সুস্পষ্ট। পর্তুগিজ ধর্মপ্রচারক মানোএল দা আস্সুম্পসাঁউ-এর রচনারীতি বাংলা গদ্যের অন্যতম আদি নিদর্শন। ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ গ্রন্থ থেকে নিম্নরূপ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। লক্ষ্যণীয় এই অংশে বৃহত্তর ঢাকা এলাকার কথ্য ভাষা প্রতিফলিত—‘‘ফ্লান্দিয়া দেশে এক সিপাই বড় তেজোবন্ত আছিল। লড়াই করিতে করিতে বড় নাম তাহার হইল, এবং রাজায় তাহারে অনেক ধন দিলেন। ধন পাইয়া তাহার পিতামাতার ঘরে গেল। তাহার দেশে রাত্রে পৌঁছিল। তাহার এক বইন আছিল; তাহার পন্থে লাগাল পাইল; ভাইয়ে বইনরে চিনিল, তাহারে বইনে না চিনিল। তখন সে বইনেরে কহিল, ‘তুমি কী আমারে চিন?’ ‘না, ঠাকুর’ বইনে কহিল। সে কহিল,‘আমি তোমার ভাই।’ ভাইয়ের নাম শুনিয়া উনি বড় প্রীত হইল। ভাইয়ে ঘরের খবর লইল, জিজ্ঞাস করিল, ‘আমারদিগের পিতামাতা কেমন আছেন?’ বইনে কহিল, ‘কুশল- দুইজনে কথাবার্তা কহিল।’’’
এমন অবস্থার পরপরই সাহেব-শাসিত কলকাতায় যে মধ্যবিত্তশ্রেণী গড়ে উঠল, তাদের নিয়ে শুরু হলো নতুন চিন্তা-চেতনা, সৃষ্টির আলোড়নে নবজাগরণ। এরা ছিল কৃষককুলের ঠিক একটু ওপরের শ্রেণী। জাতীয়তাবাদী অনুভূতির ও চেতনার যে বিকাশকে নবজাগরণ বা রেনেসাঁ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল তা আসলে ভ্রান্তই ছিল, তা ছিল মুত্সুদ্দী শ্রেণীর জাতীয়তাবাদ। কলকাতাকে ব্রিটিশ পুঁজিবাদের পরিপোষক হিসেবেই ব্যবহার করেছিল সুকৌশলে আর ইংরেজ বিতাড়নের নামে যে জাগরণ তৈরি হয়েছিল তা আসলে ইংরেজ বিতাড়ন নয় বরং ইংরেজকে রাজনীতি, অর্থনীতির মূল ছেড়ে দিয়ে তার ছত্রছায়ায় সমাজকে বাঁচানোর চেষ্টা। আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল সেই চোখে ঠুলি লাগিয়ে অন্ধের পথ চলার মতো। দেশীয় কুটিরশিল্পকে গোড়া থেকে উঠিয়ে, উদ্বৃত্ত পুঁজিকে শিল্পে ব্যবহার না করে, উত্পাদিত পণ্যের বাজারে কাঁচামাল ও খনিজ পদার্থকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল সুপরিকল্পিতভাবে। এই কাণ্ড কখনো রেনেসাঁর মিত্র হতে পারে না বরং উল্টো যাত্রা। সামন্তবাদকে নিগড়ে উঠিয়ে পুঁজিবাদের পত্তন তরান্বিত করার ধান্দা ছিল তত্কালীন ইংরেজ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যস্বত্তভোগকারী ফেউদের। ইংরেজ শাসন মস্ত এক ব্যবসায়িক জাল ফেলল সমস্ত দেশ জুড়ে, পালটে যেতে লাগল অর্থনীতির চেহারা, সমাজের তক্তপোষ, এসে গেল রেল, ডাক, তার। স্থাপিত হলো ইংরেজ প্রশাসনিক কেন্দ্র। বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলো কেন্দ্রীয় শাসনের কব্জাভুক্ত হলো। পালটে গেলো শিক্ষাপদ্ধতি। শিল্পরুচি আর সংস্কৃতি, সাহিত্যে, নৈতিকতায় পদ্যের সুর কেটে বেরিয়ে এল গদ্য।
ইংরেজ আসার আগে এদেশে ৮০০ বছর রাজত্ব করেছিল কবিতা, গীতল পদ্য। দলিল দস্তাবেজে যে গদ্য একসময় ব্যবহার হয়েছে তাকেও গদ্য বলা চলে না, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন তাকে—‘গদ্যবোধশক্তি’। অবশ্য ইংরেজ আসার পূর্বে গদ্যের জন্য যে কোলাহল অর্থাত্ যোগাযোগ, আদান প্রদান, সামাজিকতা প্রয়োজন ছিল, তা ছিল না। কবিতা একা একা থাকতে পারলেও গদ্য সমাগম চায়।
দরিদ্রকে আরও দরিদ্র ধনীকে আরও ধনী করা অনিবার্যভাবে সমাজে এক বৈষম্যের জোয়ারে নিজ স্বার্থ বজায় রেখে ঊনবিংশ শতাব্দীর গদ্য লেখকরা প্রায়ই সকলেই সাময়িক পত্রের মাধ্যমে একটি ঘরানা তৈরি করলেন মানুষের কাছে যাবেন চিন্তা করে। কিন্তু কোন মানুষের কাছে তাঁরা যাবেন, সকল মানুষ না কিছু মানুষ। সকল মানুষের সাথে তাঁদের যোগাযোগ ছিল না, রাখা সম্ভবও নয়, তাই কিছুটা আত্মপ্রেমে, দেশপ্রেমের লেবেল লাগিয়ে নেতাদের মতো এগিয়ে এলেন তাঁরা। রামমোহন, বঙ্কিম, ভূদেব, অক্ষয়কুমার, বিদ্যাসাগর, কালী প্রসন্ন সিংহ, এমন অনেকেই যতিবিহীন গদ্য শুরু করলেন।
প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাংলা ভাষায় রচিত আদি গদ্যসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। এই গ্রন্থের ভাষা ‘আলাল ভাষা’ নামে পরিচিত। এই গ্রন্থে কথ্যরূপী গদ্য একটি পৃথক লেখ্য রূপে দেখা দেয়—‘রবিবারে কুঠিওয়ালারা বড়ো ঢিলে দেন-হচ্ছে হবে-খাচ্ছি খাব-বলিয়া অনেক বেলায় স্নান- আহার করেন- তাহার পরে কেহ বা বড়ে টেপেন- কেহ বা তাস পেটেন-কেহ বা মাছ ধরেন- কেহ বা তবলায় চাঁটিদেন-কেহ বা সেতার লইয়া পিড়িং পিড়িং করেন- কেহ বা শয়নে পদ্মনাভ ভালো বুঝেন- কেহ বা বেড়াতে যান- কেহ বা বহি পড়েন। কিন্তু পড়াশুনা অথবা সত্ কথায় আলোচনা অতি অল্প হইয়া থাকে। হয়তো মিথ্যা গালগল্প কিংবা দলাদলির ঘোঁট, কী শম্ভু তিনটা কাঁঠাল খাইয়াছে এই প্রকার কথাতেই কাল ক্ষেপণ হয়। বালীর বেণীবাবুর অন্য প্রকার বিবেচনা ছিল। এদেশের লোকদিগের সংস্কার এই যে স্কুলে পড়া শেষ হইলে লেখাপড়া শেষ হইল। কিন্তু এ বড়ো ভ্রম, আজন্ম মরণ পর্যন্ত সাধনা করিলেও বিদ্যার কূল পাওয়া যায় না, বিদ্যা চর্চা যত হয় ততই জ্ঞান বৃদ্ধি হইতে পারে।…’
তাই রামমোহন, দ্বারকানাথ, রাধাকান্তদেব মহাশয়রা মধ্যবিত্ত স্বার্থ রক্ষায় পৃথকীরণ করেন তাঁদের ভাষা ব্যবহারের মাত্রাজ্ঞানকে।
ওপরের গদ্যে যে চিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়, যে শব্দ বা বাক্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় তাতে স্পষ্টত তত্কালীন সমাজ ও অথর্নীতির প্রেক্ষাপট চিত্রিত হয়। অলস, কলকাতার মাতাল, বাটপার মনুষ্যদেহী পশুর ছবি, রুচিতে চেতনায় গ্রাম্য গড্ডলিকায় ইংরেজ-শিক্ষিত বাঙালির অবস্থানই এসেছে এই গদ্য সাহিত্যে। কালী প্রসন্নে অবশ্য যতি এসে গেছে—‘পাড়া গেঁয়ে দু’একজন জমিদার প্রায় বারোমাস এখানে কাটান। দুপুর বেলা ফেটিং গাড়ি চড়া, পাঁচালি বা চণ্ডী গানের ছেলেদের মতো চেহারা, মাথায় ক্রেপের চাদর জড়ানো, দশ-বারো জন মোসাহেব সঙ্গে, বাজানের ভেড়য়ার মতো পোশাক , গলায় মুক্তার মালা- দেখলেই বোঝা যায় বনগাঁর শিয়াল রাজা।’
গদ্যচর্চার ভেতর দিয়ে স্বীকৃতি পাচ্ছেন ভদ্রলোক। এই ভদ্রলোকদের পরিচয়টা কী? উত্পাদন ব্যবস্থার সাথে বিযুক্ত, জনজীবন বিচ্ছিন্ন, রুচির ব্যপারে নিরাপোস আবার আত্মসচেতনও বটে। যার পরিচয় ওপরের উদ্ধৃতিতে প্রাপ্য। এই শ্রেণীর আত্মীয়তা ছিল ইংরেজের সাথে। তাই জানা যায় রাজা রামমোহনের বাড়িতে ইংরেজরা বাইজির নাচ দেখতে এসেছিল। তাঁর বুর্জোয়া কর্মস্পৃহা ও সংস্কারের উত্সাহ প্রায় হাত ধরাধরি করে চলেছিল। ম্যাক্স মুলার সাহেব তাঁর সর্ম্পকে বলেছিলেন—‘a great man, because of unselfishness, honesty and boldness’। তিনি সজ্জন হলেও ধনসম্পতির মালিক ছিলেন প্রচুর। আর কোম্পানির সাথে সর্ম্পক না থাকলে তা সম্ভবও ছিল না। রাজা রামমোহন একা নন, এমন উদাহরণ লিপিবদ্ধ করতে হলে শব্দগুচ্ছের আধিক্যের রচনা কেবল ভারী হয়ে উঠবে।
মূলত গদ্যের ভাষা, শব্দে, ছবিতে উঠতি পুঁজিবাদ আর বাণিজ্যিকীরণের চিত্র দেখা যায়, যা পদ্যে সম্ভব ছিল না। পদ্যের আফিমে যে দুলকি চাল আছে তাতে এই সমাজের চেহারার বিকাশ অবশ্যম্ভাবী ছিল না, পয়ার বা পদ্য ভেঙে গদ্য এলো ঠিকই, কিন্তু তাতে রইল শ্রেণী শাসনের শিকল যা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত স্বার্থের ইটের তৈরি দালান। রবীন্দ্রনাথ যদিও সাহস করে বলেছিলেন—‘বিদেশি শাসনামলে যদি এমন কোনো জিনিসের সৃষ্টি হইয়া থাকে যাহা লইয়া বাঙালী যথার্থ গৌরব করিতে পারে, তা বাংলা সাহিত্য। তাহার প্রধান কারণ, সাহিত্য সরকারের নেমক খায় নাই’। সাহিত্য নেমক খাক আর না খাক সাহিত্যিক খেয়েছিলেন। শিক্ষাবিদ ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেছেন—‘না খেয়ে গত্যন্তর ছিল কী, অন্য কোনো নুনের সরবরাহ তো ছিলো না বাজারে। হ্যাঁ খেয়েছেন এবং সাধারণভাবে বলতে গেলে খাওয়ার পর নিমকহারামি যে করেছেন এমন অপবাদ তাঁদের সর্ম্পকে দেওয়া কঠিন। সাহিত্যের স্বাদে তাই নুন লেগেছে, ইংরেজের গুণের নুন।’
বাংলাভাষাকে বোঝা, আর বুঝতে পারাটা ব্যবসা ও ধর্মের প্রয়োজনে, তাই ১৭৭৮-এ হলহেডের বই ছাপানোর তাগিদে উপমহাদেশে প্রথম ছাপাখানা এলো, যেখানে ইংল্যান্ডে ছাপাখানার প্রচলন হয় ১৪৭৭ সালে। প্রায় তিনশ বছর পর ভাষার ব্যাকরণের পেছনে রাজনীতি ও অর্থনীতির ব্যাকরণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলা গদ্যের শুরু হলো। ইংরেজের ব্যবসানীতির ছাপ সুলভ না হলেও গদ্যে ছাপ রেখেছিল কমা, সেমিকোলন, যতি, বিস্ময়বোধক চিহ্ন, বাগবিধি, শব্দ, বাক্যগঠন, এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থার শব্দসমূহ ঢুকে পড়েছিল গদ্যে। যেমন আজকের গদ্যে ব্যবহার হচ্ছে এসএমএস, চ্যাট, ফেইসবুক, ভাইবার, আরও অনেক শব্দসম্ভার। তেমনি তত্কালীন গদ্যে চড়ক, বান্ডিল, বক্কোন, ফেটিং গাড়ী, টমটম, কমোড ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার গদ্যের ভেতর আসন গেড়েছিল। তবে গদ্য জনতার কাছে আসেনি, যায়নি জনতাও গদ্যের কাছে। কারণ জনতা মানে কৃষক শ্রেণী, নীলচাষি শ্রেণী। তারাই সংখ্যায় অধিক। তারা আসেনি। এটা তাদের সমস্যা। তাই রামমোহন, দ্বারকানাথ, রাধাকান্তদেব মহাশয়রা মধ্যবিত্ত স্বার্থ রক্ষায় পৃথকীরণ করেন তাঁদের ভাষা ব্যবহারের মাত্রাজ্ঞানকে। রামমোহনের গদ্যে তাই বুদ্ধির ঝলক থাকলেও হূদয় ছিল না, হৃদয় আসতে গদ্যে চল্লিশ বছর লেগেছিল, আর তা এসেছিল বিদ্যাসাগরের হাতে।
বাঙালির পদ্যের হূদয় তাই বড় অসহায় ছিল, গদ্য তাকে মুক্তি দিতে পারেনি। কারণ সে নিজেও ছিল অর্থনীতি আর মুত্সুদ্দির খাঁচায় বন্দি। শ্রেণী বৈষম্যের পাহারায় গদ্যের তারপর কী হয়েছিল তা আরও বিশদ আলোচনার দাবি রাখে।
দোহাই
১। রামতনু লাহিড়ী ও তত্কালীন বঙ্গসমাজ—শিবনাথ শাস্ত্রী।
২। রামমোহন ও তত্কালীন সমাজ—প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।
৩। ঊনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ—সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
৪। হুতোম প্যাঁচার নকশা—কালী প্রসন্ন সিংহ।