রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পরে বাংলাসাহিত্যের পরবর্তী বড় কবি কে—এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু জীবনানন্দের প্রয়াণের কয়েক বছর পরেই সে প্রশ্নের একটা উত্তর অনেকের মনে জমা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের জন্য অপেক্ষমান উত্তরটি এতদিনে নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখন আর কাউকে বলতে হয় না। জীবনান্দ দাশের চোখে রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন বিষয়টি নানাজন নানাভাবে বিচার বিশ্লেষণ এবং আলোচনা করেছেন। জীবনানন্দের রচনা থেকে রবীন্দ্রনাথের একটি জীবনানন্দীয় স্কেচ বের করে আনা যায়। তারই ভিত্তিতে নতুন করে একটু দেখা যায়।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে জীবনানন্দ দাশের চারটি লেখা পাওয়া যায়, এর মধ্যে কবিতার কথা গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা কবিতা’, ‘উত্তররৈবিক বাংলা কাব্য’ এ ছাড়া অগ্রন্থিত রচনা ‘রবীন্দ্রনাথ’, এবং খসড়া প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ’। জীবনানন্দের গদ্যগুলোতে রচনাকাল উল্লেখ নেই বলে পূর্বাপর বিবেচনা করা কঠিন। তবে কবিতার কথা গ্রন্থভুক্ত ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা কবিতা’কে প্রথম রচনা বলে অনুমান করা যায়, কারণ রচনাটি রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরপরেই লেখা। অগ্রন্থিত প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ’কে কয়েক বছর পরের লেখা বলে মনে হয়। গ্রন্থভুক্ত অন্য প্রবন্ধ ‘উত্তররৈবিক বাংলা কাব্য’ রচনাটি আরও পরের বলে মনে করার কারণ এখানে সুধীন্দ্রনাথের বন্ধ্যাপর্বের উল্লেখ আছে। তাঁর ‘উত্তর ফাল্গুনী’ গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পরে এবং ‘দশমী’ প্রকাশিত হওয়ার আগের লেখা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় খসড়া প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ’ কবেকার রচনা? এটিতে জীবনানন্দের রবীন্দ্রভক্তি, আস্থা, পৌরোহিত্য এবং শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি মুগ্ধতাবোধ সেই প্রথম প্রবন্ধটির মতোই। এই একটি মাত্র সূত্রে ধারণা করা যায় এটি রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর কিছুদিন পরের রচনা।
২॥
এগুলোর মধ্যে জীবনানন্দকে একজন রবীন্দ্রভক্তরূপেই দেখা যায়। রবীন্দ্রসাহিত্যের যাবতীয় সম্ভাবনার কথাই তিনি বলেছেন, সীমাবদ্ধতাগুলো হয়তো ধরতে পারেননি, নয়তো এড়িয়ে গেছেন। তিনি সুধীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব ও অচিন্ত্যকুমারের মতো কঠোর সমালোচক হতে পারেননি। বরং রবীন্দ্রনাথের শক্ত সমালোচকদেরই তিনি সমালোচনা করেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্যের ভাববাদকেও তিনি গ্রাহ্য বলে গ্রহণ করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘কাব্যকে কবিমনের সততাপ্রসূত অভিজ্ঞতা ও কল্পনাপ্রতিভার সন্তান বলে স্বীকার করে নিলে, আধ্যাত্মিক সত্যে বা যে কোনো সত্যে বিশ্বাস একজন কবির পক্ষে মারাত্মক দোষ নয়। বরং—শূন্যবাদের চেয়ে কাব্যসৃষ্টিকে তা ঢের বেশি জীবনীশক্তি দিতে পারে—এবং পরিশেষে রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া সভ্যতার ভিতর লালিত হলেও তার প্রতীক যে তিনি কখনোই নন—বরং আমাদের দেশে সেই সভ্যতার প্রধান ও প্রখর প্রতীক সমালোচক যে তিনিই, তা তাঁর জীবন ও পলিটিকস্ তাঁর সমাজসাম্যবাদ ও সাহিত্য দীর্ঘকাল ধরে প্রমাণ করে আসছে।’ (পৃ.৩০)।
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরেই লেখা বলে এখানে ভক্তি ও শ্রদ্ধার পরিমাণ বেশি। তিনি আরও জানান আধুনিক কবিতার যুগে এসে বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে এলিয়টকে ধারণ করেছেন। যারা এভাবে রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে এলিয়টকে বড় করে দেখেন জীবনানন্দ তাদের এই বিষয়টা দোষাবহ মনে করেন না যদিও কারণ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরবর্তী যুগের আধুনিক কবিদের কাব্যাদর্শগত দূরত্বটা তিনি স্পষ্ট ধরতে পেরেছেন। তবু তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা হারাতে রাজি নন। রবীন্দ্রনাথের ভিত্তি ভেঙে ফেলে সম্পূর্ণ অভিনব জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে সাহিত্য এমন অজ্ঞাতকুলশীল নন বলে মনে করেন জীবনানন্দ।
এক জায়গায় তিনি বলেছেন রবীন্দ্রপরবর্তী আধুনিক কবিদের মুষ্টিমেয় কয়েকটি সফল কবিতা রচিত হয়েছে মাত্র। আরেক জায়গায় বলেছেন, ‘দু-চারটি সফল কবিতার কথা। এর মানে রবীন্দ্রঘোর থেকে তখনো বের হতে পারেননি।’ এছাড়া সদ্যপ্রয়াত রবীন্দ্রব্যক্তিত্বকে নিয়ে কঠিন কথা লেখার মতো মানসিকতা ছিল না বলেই মনে হয়। পৃথিবীর আদিম কালের মহাকবি এবং মহাসুধীরা যেমন কালে কালে টিকে থাকেন। ইংরেজদের দেশে যেভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শেক্সপিয়র টিকে থাকেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে জীবনানন্দ দাশেরও তাই মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে।
কয়েক বছর পরের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে মূলত স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রশূন্যতা। এখানে জীবনানন্দ জানান, কবি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব বড় হয়ে ওঠে। এবিষয়টি সাহিত্য আলোচনার পক্ষে ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক তা তিনি উল্লেখ করেননি।
“আগস্ট আন্দোলনের অবদমন, মন্বন্তর, কালোবাজার, দাঙ্গা, ভারত ও প্রদেশগুলোর বিচ্ছেদ রবীন্দ্রনাথের চ’লে যাওয়ার পরেই কি এই শতাব্দীর সব চেয়ে দুর্মর বারবেলা আমাদের আক্রান্ত করেছে?” বলে প্রশ্ন করেছেন জীবনানন্দ অগ্রন্থিত প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ’-এ। এটুকু উদ্ধৃতি পাঠ করলেই বোঝা যায় এখানে রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার পরে বেঁচে থাকা কবিদের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের বেঁচে থাকাটা ছিল এক বিরাট বিষয়। তিনি লিখেছেন,‘আমাদের দেশে সাহিত্যলোকে রবীন্দ্রকাব্যই হয়তো আমাদের সব চেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। কিন্তু তবুও আমাদের এই চরিত্রহীন দেশে ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের মাহাত্ম্য খুঁজতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিস্বরূপের দিকেই আমাদের মন টানে অত্যন্ত অনিবার্য আকর্ষণে; তিনি ভালো কবিতা লিখেছিলেন, বড় সাহিত্য সৃষ্টি করেছিলেন, কি না করেছিলেন, সে সব কথা তখন মনের নির্জ্ঞানকূলে নিস্তব্ধ হয়ে আসে প্রায়। …অনেক সময়ই তারপর মনে হয় কী বিরাট পুরুষ ছিলেন তিনি, কবি প্রতিভার অবদান যথাস্থানে রেখে কী বিশাল মানবপ্রতিভা ছিল তাঁর।’
এ রচনার শুরুতে জীবনানন্দ জানান, রবীন্দ্রনাথ চলে যাওয়ার পরে ভারতবর্ষ এবং বাংলা দেশে অনেক বড় বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে সবের বিচিত্র সমাধান এবং সমাধানের অভাব আমাদের মানসপটভূমিতে আলোড়ন তুলে চলেছে এবং চলে যাচ্ছে।
‘উত্তররৈবিক বাংলা কাব্য’ প্রবন্ধে জীবনানন্দ রবীন্দ্রসাহিত্যের সঙ্গে পরবর্তী কালে আধুনিক কবিদের কবিতার সঙ্গে একটু তুলনা করার সুযোগ পেয়েছেন। তবুও তিনি এখানে রবীন্দ্রনাথকে সর্বোচ্চে স্থান দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথের কাব্যের থেকে সচেতনভাবে মুক্তির জন্য যে-বিপ্লব চলেছিল কুড়ি-পঁচিশ বছর আগে বাংলা কবিতায়—তা এখন একদল জ্যেষ্ঠ কবিদের ভিতরে অবচেতন লোকে বিদ্রোহের মূর্তি ধরেছে, রবিকাব্যলোকের বিপক্ষে ঠিক নয়, কিন্তু রবীন্দ্রসৃষ্ট সাহিত্যস্বভাব ও সমন্বয়স্বভাবের বিরুদ্ধে এটাকে বিদ্রোহও বলা ঠিক চলে না, কেননা সময় নিজেই কবি—সার্বভৌমকে এমন একটি দৈগন্তিক মহত্ত্বের ভিতর সরিয়ে নিয়ে গেছে যে তাঁর সম্পর্কে বিদ্রোহের প্রশ্ন এখন অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। তিনি আরো জানান, আধুনিক যুগের আবশ্যিক বাঙালি কবি এঁরাই। রবীন্দ্রনাথ বা তাঁর ঐতিহ্যপথিক শিষ্যরা নন। তিনি ঘোষণাও করেন যে এটা একজন রবীন্দ্রনাথের যুগ নয়। এ যুগে কয়েকজন কবি আছেন যারা সকলে মিলে একসঙ্গে উপস্থিত আছেন বলে কোনো দ্বিতীয় একক রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন নেই। এ যুগ অনেক লেখকের। একজনের নয়; কয়েকজন কবির যুগ। রবীন্দ্রনাথের একচ্ছত্র প্রভাব অনেকদিন পর্যন্ত বজায় থাকার পরে নতুন কবিরা সাহিত্যের কাছে সময়ের বিশেষ দান বলে মনে করেন জীবনানন্দ।
‘রবীন্দ্রনাথ’ নামের আরেকটি প্রবন্ধ—যেটিকে প্রবন্ধসংগ্রহের সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় খসড়া বলে চিহ্নিত করেছেন। এ রচনাটি জীবনানন্দ দাশ শুরু করেছেন ছোট একটি বাক্য দিয়ে। “রবীন্দ্রনাথ লোকোত্তর পুরুষ।” এই লোকোত্তর শব্দটি প্রথম প্রবন্ধেও আছে। এবং সেখানেও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে একই ধারণা পোষণ করতে দেখা যায়। এখানে তিনি জানান, লোকোত্তর কবিরা নিজেদের কল্পনা ও অন্তদৃষ্টির বলে আগামী ভবিষ্যতের একটা রূপ পাঠকের চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলেন। জার্মান কবি গ্যোটে এমন মহীয়ান ছিলেন। রবীন্দ্রনাথকেও তেমন কবি বলে গণ্য করেন জীবনানন্দ। যারা রবীন্দ্রনাথের গীতিকবিতা পড়ে কবিমানসিকতা সম্বন্ধে ধারণা সংগ্রহ করেন, জীবনানন্দের মতে তারা কবিবিভূতির সমগ্র রূপ দেখতে পান বলে মনে করেন না।
রবীন্দ্রনাথের যদি শুধু লিরিকপ্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ দেখা যেত তাহলেও তাঁকে চণ্ডীদাস বা বিদ্যাপতির চেয়ে শ্রেষ্ঠতর অভিধা দিতে আমরা দ্বিধাবোধ করতাম। কিন্তু তাঁর প্রতিভা শুধু স্বভাবজাত কল্পনামনীষায়ই গরিমাময় নয়। জীবনানন্দের মতে রবীন্দ্রনাথের দুটি বিশিষ্ট দিক ছিল যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবিদের থেকে তাঁকে পৃথক করেছে। এগুলো: প্রতিভার ভেতরকার অলৌকিক ধীশক্তি এবং তার নিপুণ প্রয়োগবৈচিত্র্যর বিশিষ্টতা। এই দুইটি ধারার নিবিড় সামঞ্জস্য তাঁকে একজন অসাধারণ গীতিকবির শ্রেণী থেকে অলোকসামান্য বিশ্বকবির পর্যায়ে উন্নীত করেছে। এর সঙ্গে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পৃথিবীর এবং ঔপনিষদিক ভারতবর্ষের মানুষ বলে একটি তৃতীয় সূক্ষ্মানুভূতি ও সংবেদনশীলতা সব সময়েই তাঁর সাহিত্যের মধ্যে ছিল যা পৃথিবীর আর কোনো কবির মধ্যে ছিল না।
রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বস্তুতান্ত্রিকতার অভাব নিয়ে কিছু কথা ওঠে অনেক মহল থেকে সেই বিষয়ে জীবনানন্দ দাশ মনে করেন এগুলো অসৎ সমালোচনা। গল্পগুচ্ছ, উপন্যাস ও গভীর সমাজচেতনাধর্মী আলোচনা ও প্রবন্ধগুলো রচনাকালেই এ ধরনের সমালোচনা দেখা গেছে। যখন তিনি বাংলার স্বদেশি আন্দোলনের ঋত্বিক ও কর্মী ছিলেন। জীবনানন্দ এ ধরনের সমালোচানর বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে তুলে ধরেন বোলপুরের শান্তিনেকেতনের শূন্যভূমিকায় একা একটি গৌরবময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করাকে। তিনি মনে করেন, এটি অতীভ বস্তুতান্ত্রিকতার মনীষা।
এর পরের কয়েকটি বাক্য জীবনানন্দ দাশের ভাববাদী উক্তি বলে মনে হয়। তিনি লিখেছেন, “বস্তুচেতনা ও সমাজচৈতন্যের অভাব রবীন্দ্রসাহিত্যে কোনোদিনই লক্ষ্যণীয় জিনিস নয়। বস্তুত রামমোহনের পরে— বাংলাদেশে—তথা ভারতবর্ষে দেশ ও সমাজ ও বিশ্বচেতনার এমন জাগ্রত পুরোহিত আমরা পাইনি—ভবিষ্যতে অনেকদিন পর্যন্ত পাব কিনা সন্দেহ।”
জীবনানন্দ দাশ মনে করেন বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রবীন্দ্রনাথের সমাজ এবং জাতীয় নির্দেশনাগুলো আমরা কায়মনোবাক্যে গ্রহণ করতে পারিনি। যদি তখন তাঁর সেই পরিকল্পনা ও বিধানগুলো সম্পর্কে সজাগ অনুভূতি এবং কর্মপ্রবত্র্নার পরিচয় দিত তাহলে আজ অনেক কিছুই হতে পারত। রবীন্দ্রনাথের বিচিত্র প্রতিভার মধ্যে আরেকটি দিক জীবনানন্দ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। দেশে-বিদেশে যত লোকের সঙ্গে যত কথা বলেছেন, আলাপ করেছেন সেগুলো সংগ্রহ করা হলে রবীন্দ্রনাথকে কনভারসেশনালিস্ট হিসাবেও গণ্য করা যেত।
এ রচনার শুরুর দিক থেকে শেষের দিকে জীবনানন্দ দাশের মধ্যে একটি স্ববিরোধী উক্তিও পাওয়া যায়। প্রথম দিকে তিনি লিরিকপ্রতিভা নিয়ে যে ধরনের উক্তি করেছেন, শেষের দিকে এসে আবার বিপরীত ধরনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রপ্রতিভা বহুবর্ণে রঞ্জিত হলেও আমার মনে হয় কবিতায়ই তিনি নিজেকে বিশিষ্টভাবে অর্পণ করার সুযোগ পেয়েছেন ব’লে সেই প্রেরণার সমগ্রতার ভিতরেই তাঁর শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষ সম্ভব হয়েছে। এর পরে জীবনাননন্দ রবীন্দ্রনাথের নানা কাব্যের কবিতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ‘সোনার তরী’তে কাব্যসৌন্দর্য, ‘ক্ষণিকা’র সুর এবং ‘বলাকা’র দুর্বার স্রোতে। ‘গীতাঞ্জলি’ ও ‘গীতালি’র সূক্ষ্ম রসানুভূতি ও আপাত সহজ রূপায়ণের বৈচিত্র্য এক সময় বিশ্বকে মুগ্ধ করেছিল। আজও তা হতে পারত। কিন্তু “আমাদের বর্তমান জীবনের সংশয়বাদ যদি আধুনিক বিজ্ঞানের কাছ থেকে নানা রকম অনুকূল ইসারা না পেত।”
জীবনানন্দের মতে রবীন্দ্রনাথের কাব্য পথ থেকে পথান্তরে চলেছে অপরূপ ফসল ফলিয়ে। কোনো বিশিষ্ট বা মহৎ প্রাচীর তাকে বিরতি দিতে পারে না। এখানে জীবনানন্দ ও আমাদের মানসিক সংহতি।