বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন ও মধ্যযুগ কাটিয়ে আধুনিকতার শুরু থেকেই গদ্য চর্চা শুরু হয়। গদ্যের উপজীব্য হয়ে ওঠে মানুষ। ধর্মাশ্রিত কাহিনি কাব্যের পরিবর্তে মানবতার সুর ঝংকৃত হতে থাকে। ১৮০০ সাল থেকে উইলিয়াম কেরিরা গদ্য রচনায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করতে থাকেন। ১৮০১ সালে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের মধ্যদিয়ে বাংলা সাহিত্যে অগ্রসরমান আধুনিকতার প্রবেশ। চিন্তা-চেতনায় আধুনিক যুগের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে মানুষ। কেননা ধর্মভিত্তিক সাহিত্য চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে কবি-লেখকরা মানুষের কল্যাণের জন্য লিখতে শুরু করেন।
ফলে আধুনিক যুগে এসে গদ্য চর্চায় মানুষের জয়গান পরিলক্ষিত হয়। মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে মানবতাবাদ। লেখকরা মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখতে প্রয়াস পান। সঙ্গত কারণেই সাহিত্য নতুন বাঁকে মোড় নিতে শুরু করে। যে পথ এঁকে-বেঁকে বহুদূর এগিয়ে গেছে।
গদ্য চর্চার ধারাবাহিকতায় কথকতা, আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে গদ্য তথা ছোটগল্পের উন্মেষ ঘটেছে। আর রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে পরিপক্কতা পেয়েছে ছোটগল্প। ক্রমান্বয়ে পাঠকের হৃদয় জয় করেছে অনেক গল্প। কালজয়ী সেসব গল্পের মধ্য থেকে আজ বেছে নিলাম পাঁচটি গল্প।
গল্পগুলো হচ্ছে- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘আদাব’ ও আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’।
আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’ গল্পে মানবতার চরম বিপর্যয়ের ছবি ফুটে উঠেছে। গল্পটি মা আর তার ছোট্ট একটি ছেলের। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে মাকে হারিয়ে ফেলা একটি ছোট্ট শিশুর হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয়েছে। চোখ বন্ধ ছেলের সামনে থেকে মায়ের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি নানাবিধ প্রশ্নের অবতারণা করে।
এখানে ভদ্রতার মুখোশে বদমায়েশির নিটোল চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। আবদুল মান্নান সৈয়দ ভদ্র ও বদমায়েশের প্রতিকৃতি অঙ্কন করেছেন অনায়াসে। লেখক গল্পে ছোট একটা ছেলের মুখ দিয়ে ভদ্রলোকের সংজ্ঞা উচ্চারণ করেছেন এভাবে, ‘ভদ্রলোক কাদের বলে, মা, যারা লুকিয়ে লুকিয়ে খারাপ কাজ করে তাদের?’ ছেলেটির মা হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লেখক অন্যত্র বলেছেন, ‘পয়সা পড়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায়, মানুষ পড়ে গেলে কখনো পাওয়া যায় না।’
মানবতার চরম বিপর্যয়ের ছবিটা আমরা এখানেই স্পষ্ট দেখি-‘তোর মা-কে পাইনি, তোকে দিয়েই সেই কাজ চলবে আমাদের’। আসলে ছেলেটির মা হারিয়ে গেছে নাকি ছেলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অন্য কোনো জগতে লুকিয়ে পড়েছেন। তার ভাবগতিক দেখে আপাত দৃষ্টিতে তা-ই মনে হবে। তবু মাকে ফিরে পাওয়ার আর্তনাদ শিশুটি মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র ফুটে ওঠে।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’ গল্পে রাজাবাহাদুরের শিকারের টোপ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। গল্পটি কেবল গল্প নয়; একটি আরণ্যক ইতিহাস, একটি বিচিত্র শিকার-কাহিনি। যেখানে মানবশিশুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছেন রাজাবাহাদুর। যা দেখে কেঁপে উঠেছে কবি চরিত্রের গল্প কথকের আত্মা।
রাজাবাহাদুরের বেপারোয়া বিলাসী জীবন, মানববিধ্বংসী কার্যকলাপ উঠে এসেছে গল্পে। যেখানে প্রতিটি পদেক্ষেপে লঙ্ঘিত হয়েছে মানবতা। কথকের ভাষায়, ‘মুহূর্তে বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল আমার। রাজাবাহাদুরের দুচোখে বন্য হিংসা। রাইফেলটা এমন শক্ত মুঠিয়ে বাগিয়ে ধরছেন যেন সামনে কাউকে গুলি করবার জন্য তৈরি হচ্ছেন তিনি। উত্তেজনার ঝোঁকে আমাকেই যদি লক্ষ্য ভেদ করে বসেন তাহলে আতঙ্কে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। কিন্তু ততক্ষণে মেঘ কেটে গেছে। রাজা-রাজড়ার মেজাজ! রাজাবাহাদুর হাসলেন।’
‘টোপ’ গল্পে সমকালীন বাস্তবতা পরম মমতায় তুলে এনেছেন লেখক। মানবতার লঙ্ঘন তখনকার নিয়মিত ব্যাপার। যেন অলৌকিক ভাবেই ঘটছে সব। রাজার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলাও বড় ধরনের অপরাধ। রাজার হুকুমই তো সেখানে আইন। লেখক গল্পে বলেছেন, ‘রাজা-রাজড়ার ব্যাপার সবই অলৌকিক। জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গেই কেউটের বাচ্চা।’
তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে, শিকার ছুঁচো কি সম্ভ্রান্ত হোক- তা দেখার মানসিকতা নেই রাজাবাহাদুরের। তার নেশা চড়েছে শিকারের। ফলে সামান্য হায়নাকেই গুলি করে বসে রাজাবাহাদুর। এতেই শান্তি। অন্তত মনের ক্ষোভ বা অভিলাস কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়।
গল্পে শিকারের সন্ধানে কবিকে নিয়ে বের হয়েছিলেন রাজাবাহাদুর। কেননা রাজাকে নিয়ে কাব্য রচনা করে রাজার সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। রাজার বাংলোতেই উঠেছেন তারা। আরণ্যক জগতে রাজার বাংলোর পাশে কতগুলো মাতৃহীন ছেলেমেয়ে দেখতে পান কবি। তারা সারাদিন হুটোপুটি করে ডাকবাংলোর সামনে। রাজাবাহাদুরও বেশ অনুগ্রহের চোখে দেখেন ওদের। কথকের ভাষায়,‘তেতলার জানলা থেকে পয়সা রুটি কিংবা বিস্কুট ছুঁড়ে দেন, নিচে ওরা সেগুলো নিয়ে কুকুরের মতো লোফালুফি করে। রাজাবাহাদুর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন সকৌতুকে।’
গল্পে ক্ষমতার দম্ভে শ্রেণীবৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। অধীনস্ত মানুষকে তখন পোষা প্রাণী মনে হয়। রাজারও হয়েছে সেই দশা। রাজাবাহাদুর নিজের খুশিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে শিকারের টোপ হিসেবে এক মানবশিশুকে ব্যবহার করে মানবতার চরম বিপর্যয়ের অবতারণা করেছেন।
রাজাবাহাদুরের হিংস্রতা ফুটে ওঠে গল্পের শেষের দিকে। যখন কথক বলেন, ‘ব্যাপারটা যেমন বিচিত্র, তেমনি উপভোগ্য। আমি রাজাবাহাদুরকে অভিনন্দিত করতে যাব, এমন সময় পরিষ্কার শুনতে পেলাম শিশুর গোঙানি। ক্ষীণ অথচ নির্ভুল। ও কিসের শব্দ।’
চারশ’ ফুট নিচে থেকে ওই শব্দটা আসে। যখন মুখের বাঁধন খুলে গেছে, তবে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তখন কবির বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে। কবি পাগলের মতো চিৎকার করে ওঠেন, ‘রাজাবাহাদুর, কিসের টোপ আপনার! কী দিয়ে মাছ ধরলেন?’
গল্পে কিপারের একটা বেওয়ারিশ ছেলে জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়, তবে রাজাবাহাদুরের শিকার করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারটা লোককে ডেকে দেখানোর মতো। সেই ঘটনার আট মাস পর চমৎকার একজোড়া চটি উপহার আসে কবির কাছে। তখন আট মাস আগেকার সেই রাত্রির কথা মনে পড়ে তার।
আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘বৃষ্টি’ গল্পে অনাবৃষ্টির কারণ খুঁজে পান হাজি কলিমুল্লাহ। জগতে অনাচার বেড়ে গেছে। অনেক আশঙ্কা হাজি সাহেবের। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর যে গজব নেমে আসবে তাতে সন্দেহ নেই।’ হাজি সাহেবের ধারণা, অন্যের অনাচারে গজব নামে। সে যাই হোক, আসল ব্যাপারটা অন্য জায়গায়। আর সেটা হচ্ছে, ব্যক্তিগত লালসা চরিতার্থ করতে না পেরে এ বিষয়কে উপজীব্য করে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে বিধবা বাতাসীর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বিচারের ব্যবস্থা করেন। যে কিনা দুই দুইটা বউ মারা যাওয়ার পর ছেলের বয়সী এক মেয়েকে বিবাহ করেন।
হাজি কলিমুল্লাহ যখন গর্ভবতী হওয়ার অপরাধে বাতাসীর শাস্তির আয়োজন করেন; সেই রাতে তারই তৃতীয় স্ত্রী সতীনের ছেলের সঙ্গে মেতে ওঠে শারীরিক আয়োজনে। একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়কে উপলক্ষ্য করে গল্পে মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
তখনকার মানুষের মধ্যে ধর্মভীতি জাগিয়ে তুলে ধর্ম ব্যবসা করে গেছেন হাজি কলিমুল্লাহর মতো এক শ্রেণীর বকধার্মিকরা। যাদের মিথ্যা ফতোয়া বা স্বেচ্ছাচারিতায় মানবিকতার বিপর্যয় ঘটেছে অহরহ। বর্তমান সমাজেও হয়তো তার ছাঁয়া এখনো খুঁজে পাওয়া যায়। ‘বৃষ্টি’ গল্পটি আমাদের তেমনই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেয়।
সবশেষে হাজি সাহেবের কনিষ্ঠ স্ত্রী শরীরী জ্বালা মিটিয়ে স্বামীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি জানেন না? বছরের পয়লা বিষ্টি, ভিজলে খুব ভালো। এতে যে ফসল ফলবে।’
সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্পে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে। এ গল্পেও মানবতার চরম বিপর্যয় ফুটে উঠেছে। দুই হিন্দু-মুসলমানের সাক্ষাৎ এবং তাদের আশঙ্কা নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। গল্পের দৃশ্যকল্পে বস্তিতে বস্তিতে জ্বলছে আগুন। মৃত্যুকাতর নারী-শিশুর চিৎকার স্থানে স্থানে আবহাওয়াকে বীভৎস করে তুলেছে।
দাঙ্গার কারণে কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। উভয়ে উভয়কে খুনি ভাবে। দাঙ্গায় স্বজন হারায় স্বজন। ঘরে ফেরা হয় না কর্মজীবী মানুষটির। তাদের উভয়ের প্রশ্ন, ‘হিন্দু না মুসলমান?’ অসাম্প্রদায়িক মানুষের মুখে ফুটে ওঠে, ‘মানুষ না, আমরা কুত্তার বাচ্চা হইয়া গেছি; নইলে এমুন কামড়া-কামড়িটা লাগে কেমবায়?’
গল্পটি মানুষের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে। এক মানবিক আবেদন উপস্থাপিত হয়েছে। পুরো কাহিনির মধ্যে বিধ্বস্ত একটি সমাজে মানুষের আর্তনাদ আর কতদূর পৌঁছতে পারে? গল্পের দৃশ্যকল্পে মনে হয় মানুষের আর্তনাদ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। কারণ সেখানে তো কোনো মানুষ নেই। সবাই মানুষরূপী অমানুষ।
গল্পের শেষটা ঠিক এরকম- ‘সুতা-মজুরের বিহবল চোখে ভেসে উঠল মাঝির বুকের রক্তে তার পোলামাইয়ার, তার বিবির জামা শাড়ি রাঙা হয়ে উঠেছে। মাঝি বলছে পারলাম না ভাই। আমার ছাওয়ালরা আর বিবি চোখের পানিতে ভাসব পরবের দিন। দুশমনরা আমারে যাইতে দিল না তাগো কাছে।’ এমন কথায় গল্পটির শেষ দৃশ্যটি যেকোনো পাঠককেই বিহ্বল করে তুলবে। গুমরে কেঁদে উঠবে সবার মন।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প যেন একটা ভ্রমণবৃত্তান্ত। দ্বিতীয় পুরুষে বর্ণিত গল্পটি একটি ভ্রমণকাহিনি হতে পারতো। অনেকটা ভ্রমণকাহিনির মতো। অনেক কৌশলী হয়েছেন গল্পকার। তার গল্প বলার ঢং দেখেই তা অনুমেয়।
লেখক পাঠককে উদ্দেশে করে বলছেন, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য আরো দু-জন বন্ধু ও সঙ্গী আপনার সঙ্গে থাকা উচিত। তারা হয়তো আপনার মতো ঠিক মৎস্যলুব্দ নয়, তবু এ-অভিযানে তারা এসেছে-কে জানে আর কোন অভিসন্ধিতে।’ অথবা ‘তিনজনে মিলে তারপর সামনের নালার দিকে উৎসুকভাবে চেয়ে থাকবেন, মাঝে মাঝে পা ঠুকে মশাদের ঘনিষ্ঠতায় বাধা দেবার চেষ্টা করবেন এবং সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে এ ওর মুখের দিকে চাইবেন।’
এ গল্পপাঠে মনে হবে, লেখক মনে হয় পাঠকের সঙ্গে কথা বলছেন। কিংবা পাঠককে পথ নির্দেশ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পড়তে পড়তে মনে হবে আপনি পৌঁছে গেছেন তেলেনাপোতা নামক অঞ্চলে। আর এ ভ্রমণবৃত্তান্তের মধ্যেই খুঁজে পাবেন আরো কত গল্প। পরিশ্রমী অসহায় মানুষের গল্প। মানুষের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-ভালোবাসার গল্প খুঁজে পাওয়া যায়।
এ গল্পে ভ্রমণে গিয়ে যামিনী নামের এক নারীর প্রেমে পড়ার গল্প উঠে এসেছে। ‘ফিরে আসবো’বলে যামিনীকে ছেড়ে ফিরে আসার ছবিও ফুটে উঠেছে। লেখক বলছেন, ‘চকিতে একবার যামিনীর ওপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে আপনার মনে হবে বাইরে কঠিন মুখোশের অন্তরালে তার মধ্যেও কোথায় যেন কী ধীরে-ধীরে গলে যাচ্ছে-ভাগ্য ও জীবনের বিরুদ্ধে, গভীর হতাশার উপাদানে তৈরি এক সুদৃঢ় শপথের ভিত্তি আলগা হয়ে যেতে আর বুঝি দেরি নেই।’
তেলেনাপোতা হয়তো লেখকের কল্পনার একটি রাজ্য। বাস্তবে সেখানে যাওয়া সম্ভব কিনা জানি না। তবে লেখক কিন্তু ভ্রমণের ছলে আপনাকে গল্প শুনিয়ে গেলেন। একেবারে শেষে লেখক বলেছেন, ‘একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে।’ সে যা-ই হোক; গল্প গল্পই। তবে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
আলোচিত পাঁচটি গল্পেই লেখকদের স্ব-স্বকালের সমস্যা, মানবতার বিপর্যয়, অপ্রেম, প্রবঞ্চনা, লাসলা, কুপ্রবৃত্তি, হানাহানি, হত্যা প্রভৃতি ফুটে উঠেছে। এছাড়া ক্ষমতার দম্ভ, হঠকারিতা, নির্যাতন প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। কেউ কৌশলে, কেউ ফুসলিয়ে, কেউ ক্ষমতার জোরে মানুষকে নির্যাতন করেছে। এখানকার দুটি গল্পে শিশু নিগ্রহের দৃশ্য, দু’টি গল্পে যৌনতার সংস্পর্শ রয়েছে। তবে সে যৌনতারও একটা যৌক্তিকতা রয়েছে। একটি গল্পে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার বিষয় আলোচিত হয়েছে। শেষ গল্পটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ঘিরে। তাই বলা যায়, প্রত্যেকটি গল্পেই মানুষ হয়ে উঠেছে কেন্দ্রবিন্দু। তাই মানবিক আবেদন ফুটে উঠেছে প্রত্যেকটি গল্পে।
বলতে গেলে গল্পগুলোর পরিচ্ছন্ন বর্ণনা, সাবলীল বাক্যালাপ পাঠককে নিমগ্ন করে রাখে। একটি গল্প পাঠ শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে মন চাইবে না। কালজয়ী গল্পের বৈশিষ্ট্য তো এমনই হওয়া চাই। দৃঢ়চিত্তে একথা বলতে পারি যে, গল্পগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরেও পঠিত হবে নিশ্চিত। গল্পগুলোর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে সমসাময়িক সামাজিক-নৈতিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন লেখক বা গল্পকারগণ।
মন্তব্য