দেশকে মহামারীর হাত থেকে বাঁচাতে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে ১৮ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব স্কুল ও কলেজ তথা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। পরবর্তীকালে করোনার ঢেউ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার সাধারণ ছুটির সাথে সাথে লকডাউনের ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে ভাইরাসটি অতিদ্রুত ১৮৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের মতে বিগত ৭৫ বছরে বিশ্ব এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয় নি। ফলে শুরু হয় মানব জাতির বেঁচে থাকার লড়াই। শুধু যে বেঁচে থাকা এটার চেয়ে বলা ভালো টিকে থাকা কারণ এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুধু স্বাস্থ্যখাতই নয় বরং ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিলো সমাজ এবং অর্থনীতির চাকা।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল, অনুন্নত, দেশগুলোতেও একই রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাতেও অর্থনীতির সূচক উর্দ্ধমুখী ছিলো কিন্তু এবারের মহামারীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মহামারীর আগে দেশে মোটামুটি অর্থনীতির একটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজমান ছিলো কিন্তু ২০১৯ সালের জিডিপি ৮.২ শতাংশ থাকলেও ২০২০ এসে তা কমে দাঁড়ায় ৩.৮ শতাংশ। এর জের ধরে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশে নামতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি খাত কৃষি, শিল্প ও সেবা যা দেশের জিডিপিতে যথাক্রমে ১৮ শতাংশ, ২৯ শতাংশ এবং ৫৩ শতাংশ অবদান রাখে। করোনা মহামারীর কারণে এসকল খাত বিশেষভাবে সংকটের মুখে পতিত হয়।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ তার জিডিপির প্রায় ৩ বিলিয়ন হারাবে এবং করোনার কারণে প্রায় ৯ মিলিয়ন চাকরিচ্যুত হয়ে পড়বে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটা বড় হুমকি স্বরূপ। এতো গেলো সামগ্রিক জিডিপির কথা। এবার আসা যাক অর্থনৈতিকভাবে প্রতিটি সেক্টর কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। করোনা মহামারীতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অভিবাসী শ্রমিক ও রেমিট্যান্সের ওপর। অভিবাসন মূলত বেকার সমস্যাকে শিথিল করে এবং রেমিট্যান্স খাতকে সমৃদ্ধ করে যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু করোনা মহামারীর প্রকোপ বাড়ার দরুন বহির্বিশ্বের সকল সেক্টর থেকেই শ্রমিক ছাটাই করা হয়। ফলে রেমিট্যান্স খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একটা বিরাট অংশকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বাধ্য হন। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য মতে ২০১৯- ২০২০ সালের মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ পূর্বের চেয়ে নিম্নগামী। বিভিন্ন দেশে প্রায় ১১.৩৮ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছে। যা রেমিট্যান্স খাতের জন্য সত্যি একটা বড় ধাক্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১.৭৮ বিলিয়ন রেমিট্যান্স দেশে এসেছিলো যা পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় ৯.২ শতাংশ কম ছিলো। রেমিট্যান্স খাতের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার আরো একটি বড় প্লাটফর্ম পোশাক শিল্প। যেখানে বৃহৎ একটি অংশের রুটি- রুজিরোজগার নিহিত৷ চীনের পরে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতে কাজ করে। করোনাকালে তাদের দিনরাত গভীর অনিশ্চয়তাই কেটেছে। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ রপ্তানি আয় গৃহীত হয় পোশাক শিল্প থেকে যা বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে এ শিল্পও তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে এপ্রিলের প্রথমার্ধে রপ্তানি ৮৯ শতাংশ হ্রাস পায়। বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারী দেশ যুক্তরাজ্য। মহামারীর কারণে তারা ২৫ বিলিয়ন পোশাকের অর্ডার বাতিল করে দেয়। ফলে অনেক পোশাক কর্মী চাকরি থেকে বিতাড়িত হন। আবার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই অনেককে ছাঁটাই করা হয়। যা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দু’দিকেই চরম প্রভাব ফেলে।
পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটস এবং ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম কর্তক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্ডার বাতিলের কারণে বাংলাদেশে এক মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিকের চাকরি চলে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ১.৯৬ মিলিয়ন মানুষের জীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের হার কমাতে সরকার পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে পোশাক শিল্প রক্ষার্থে কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও সরকার এজন্য নানা সমালোচনার সম্মুখীন হন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে গার্মেন্টস খাতে ৭.৭৮% হ্রাস পেয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে উন্নত বিশ্বগুলো চাকরির জন্য অনেক বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এজন্য শ্রমিকদের বিপাকে পড়তে হয় এবং অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়ে শহারের জীবন ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমায়। দেশে এবং বিদেশের মাটিতে অর্থনৈতিক খাতগুলো সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকার ২০২০ এর ২৫ মার্চ পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৫৮৮ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্যাকেজ এবং বেল আউটের জন্য ৭৭,৭৫০ কোটি টাকার ফান্ড ঘোষণা করেন। এর ফলে কিছুটা হলেও পোশাক শিল্পগুলো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সমক্ষ হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণও বাঁধার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। পোশাক, টেলিযোগাযোগ, জুতা, গার্মেন্টস শিল্প প্রভৃতি খাত এমনকি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবেও কাজ হারান। ইউএনএফপিএ, ইউএন- উইমেন, এবং বিট্রিশ মেডিকেল জার্নালের সমীক্ষা অনুসারে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে নারীদের কাজের সুযোগ কমেছে ৮১ শতাংশ, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ১৪ শতাংশ৷ এমনকি আনুষ্ঠানিক খাতে ২৪ শতাংশ নারী কাজ করার সুযোগ হারিয়েছেন। উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার ৩৭ শতাংশ নারী ঝুঁকিতে যা পুরুষের তুলনায় ২৬ শতাংশ ।
পরিবারের দারিদ্র্যের প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের জীবনে। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত পরিবারগুলো বিভিন্নভাবে এ সমস্যার পরিত্রাণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে ছোট শিশুদের দিয়ে কায়িক পরিশ্রম করাতে বাধ্য হয়েছে অনেক পরিবার।
নারী উদ্যোক্তারাও এই সংকটে গা বাঁচিয়ে চলতে পারেনি বরং স্বল্প পুঁজির ব্যাবসায় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনকি অনেকেই গৃহে ফিরতে বাধ্য হন। WTO-এর মতে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাণিজ্যিক খাতে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা বড় সঙ্কটের মুখে পড়ে। ফলে এটি গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এই মহামারীর কারণে দেশে পরিবার প্রতি ৪ হাজার টাকা আয় কমে গেছে। এবং আয় কমার ফলে খাবারের চাহিদাও কমে যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো( বিবিএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫০ কোটির বেশি লোক অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিযুক্ত যা জনশক্তির প্রায় ৮৫.১ শতাংশ, মহামারীর কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ দিনমজুর কাজ হারিয়ে বেকার জীবনযাপন করছে। এদিকে করোনার কারণে বাংলাদেশের দুগ্ধচাষিরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হন। দেশজুড়ে প্রায় ১২-১৫ মিলিয়ন দুধ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে প্রান্তিক দুগ্ধচাষিরা দৈনিক ৫ মিলিয়ন টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। লকডাউনে মুরগী ও ডিমের চাহিদাও ব্যাপক কমে যাওয়ায় পোল্ট্রি বাণিজ্যও সংকটে পড়ে। এছাড়া যানবাহন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে কাঁচা সব্জির বাজারেও মন্দা দেখা দেয়। কৃষিজাত পণ্য নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়ে যায়!
অনেককে দেখা যায় রাস্তায় কাঁচা সব্জিগুলো ফেলে রাখতে! সবমিলিয়ে করোনা দেশকে বিভিন্নরকম চাপের মধ্যে ফেলে। এই মহামারী জাতিকে কিছু দিয়ে যায় নি বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও করোনা মহামারী চাপ সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিকভাবে সচল অবস্থা বিরাজমান না থাকলে স্বভাববতই বিভন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। করোনা মহামারীর সময় একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের কথা। সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
পড়ালেখায় অনীহা সৃষ্টির পাশাপাশি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের প্রান্তিক এলাকগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা জরিপ অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছাচ্ছে। এই পরিসংখ্যান আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিবারের দারিদ্র্যের প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের জীবনে। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত পরিবারগুলো বিভিন্নভাবে এ সমস্যার পরিত্রাণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে ছোট শিশুদের দিয়ে কায়িক পরিশ্রম করাতে বাধ্য হয়েছে অনেক পরিবার।
এছাড়া মেয়েদের ক্ষেত্রে ভাগ্যে জুটেছে বাল্যবিবাহ। সবচেয়ে যেটা সামাজিকভাবে ভীতিকর কথা। যা জাতির জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। ইউনিসেফ বাংলাদেশের একটি রিপোর্টে বলেছে কোভিড-১৯ এর কারণে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি কন্যা শিশু বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং অতীতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছিলো তা হারানোর পথে।
করোনাকে পরিপূর্ণ মোকাবিলা করতে আমাদের এখনই পরিকল্পনা মাফিক এগুতে হবে তা নাহলে জনজীবনে আরও দুর্ভোগ দেখা দিবে। আর একটি কথা না বললেই না সেটা হচ্ছে সামাজিকভাবে আমাদের নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে।
২০২০ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের( ইউনিসেফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিয়েতে বিশ্বে শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে। দেশে বাল্যবিবাহে শীর্ষ ঢাকা বিভাগ এবং জেলার মধ্যে শীর্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সবচেয়ে কম বাল্যবিয়ে হয়েছে চট্টগ্রামে। নারী নেতৃত্বাধীন পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে এ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে! ব্রাকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নারী নেতৃত্বাধীন পরিবারগুলোর ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে যেখানে পুরুষ নেতৃত্বাধীন পরিবারগুলো ৭৫ শতাংশ। নারী নেতৃত্বধীন পরিবারের ৫৭ শতাংশ আয় হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যে দাঁড়িয়েছে। যেটি পুরুষ নেতৃত্বাধীন পরিবারে ৪৯ শতাংশ। যেখানে সকল পরিবারই সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে সেখানে নারী নেতৃত্বাধীন পরিবারগুলোর আর সংক্রান্ত সংকটের মাত্রা আরও ভয়াবহ। আরো একটি চরম সামাজিক অবক্ষয়ের কথা প্রতিটি রিপোর্টে ঘুরে ফিরে এসেছে সেটা হলো ‘নারীর প্রতি সংহিসতা’। লকডাউনে সারা বিশ্বজুড়ে যখন স্থবির অবস্থা তখন সকলেই ঘরে অবস্থান করেছে ফলে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এ সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র পূর্বের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্যাতিত নারীর সাহায্যে সমাজ এমনকি পরিবারও পাশে দাঁড়ায় না। দেশের শীর্ষস্থানীয় নারী সংগঠন মহিলা পরিষদ ১৩ টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাতে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সারাদেশে নারী ও কন্যা শিশুর নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে, সংরক্ষিত তথ্য মতে, ২০২০ সালের প্রথম ছয়মাসে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যাসহ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের মতো অপরাধের সংখ্যা ছিলো ১৪৫১টি। চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ অপরাধের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৯৪টি। একটি রিপোর্টে বলা হয় লকডাউনে সারা বিশ্বজুড়ে ২৪ শতাংশ সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা মানব জাতির জন্য খুবই লজ্জার! নির্যাতনের হার গ্রামে বেশি।
স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকায় শিশু নির্যাতনের হারও বৃদ্ধি পায় এসময়। রাস্তাঘাটে, অফিস, বাড়িতে, বিদ্যালয়ে এমনকি অনলাইনেও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। করোনা সংক্রমণে বিগত বছরগুলো থেকে সংহিসতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে তা ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্যা ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ এ এশিয়ার ছয়টি সীমান্ত বাজারের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে গণ্য হবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ ১০ ট্রিলিয়ন টাকারও বেশি উদ্দীপনা সরবরাহ করেছে দেশীয় অর্থনীতিকে উন্নত করতে। এই প্রতিবেদন অনুসারে ঋণ সংকটের ঝুঁকি কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশের পক্ষে ইতিবাচক হয়েছে।
করোনাকে পরিপূর্ণ মোকাবিলা করতে আমাদের এখনই পরিকল্পনা মাফিক এগুতে হবে তা নাহলে জনজীবনে আরও দুর্ভোগ দেখা দিবে। আর একটি কথা না বললেই না সেটা হচ্ছে সামাজিকভাবে আমাদের নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে। যদি মনুষ্যত্ব এবং বিবেককে জাগ্রত না করি তাহলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ভিত্তি এমনি খসে পড়বে! তো আসুন আমরা মানবিক হই এবং একে অন্যের প্রতি সহনশীল হয়ে জীবন কাটাই। তাহলেই গড়ে উঠবে জাতির পিতার স্বপ্নে লালিত সোনার বাংলা।
আরও পড়ুন: শামীম আজাদ : জন্মদিনের অঞ্জলি ॥ দিলারা হাফিজ