শিল্পের বিবিধ মাধ্যমের দুয়ারগুলো কিভাবে, কে বা কারা খুলে দেয়, সে প্রশ্নে যাচ্ছি না। ভূমিকা ছাড়াই ঠাস্ করে স্রেফ ‘কবিতা’ শব্দটির যদি কারণ অনুসন্ধানে নেমে পড়ি—আজও লজ্জা ও লোভের লাবন্যতাকে চিড় ধরিয়ে জোরালো কণ্ঠেই বলতে চাই—সে এক অমোঘ বিচ্ছু দামাল শব্দের সহদরা। ধ্বনির মাঝেই লুকায়িত যার হাজারও ব্যঞ্জনা। কী এক অলীক মায়ার মাত্রায় চড়ে-বসা দুরন্ত আর সর্বনাশা। আর তাকেই কেন্দ্র করে ঝরেপড়া কত না কাল, বয়ে চলা কত না স্রোতের ছেলেখেলা। আর তারই কিরণে কলঙ্কিত হতে ছুটে আসা কত না মানব-মানবী। কত না ভাবে, ভাষায়; আসে তারা সিক্ত হতে, সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে তছনছ করে। সেই এক রসগ্রাহীর রস আস্বাদনে। পক্ষে-বিপক্ষে বিষণ্ন আর বিপত্তির নানান প্রকরণ ভেঙে— কেবলই দিলের মধ্যে তাকে গ্রন্থিত করার লোভে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই কবিতা? কেন আমাদের দেহে-মনে-মগজে বারবার তার অভিঘাত এসে লাগে! আর মৃদুমন্দ দুলে উঠি আমরা। নানান যুক্তি-শৃঙ্খলার হুজুগে বন্দি হয়ে পড়ি। নিশ্চয় ভালো-মন্দ কোনো এক কারণ আছে। কবিতায় আমরা যা কিছু লিপিবদ্ধ করি, নিশ্চিত এর প্রায়োগিক কোনো সার্থকতা বা ব্যর্থতা অবশ্যই রয়ে যায়। না হলে কেন এত উচাটন, এত আলগা আর অস্থির হয়ে উঠি? তাকে অবলোকন করতে— তা শারীরিক বা মানসিক দুভাবেই। গোপনে গোপনে সে নিরাকারের রূপ ধরে হানা দেয় আমাদের সমস্ত আর সামগ্রিক ইন্দ্রিয়তে। আর তখনই আকার হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় বুকে আর বাহুতে।
ভাবতে অবাক লাগে কী এমন জাদুর জীবাস্ম, কী এমন গোলাপের গন্ধ লেগে থাকে এর গায়ে, আঁচলে আবৃত হয়ে? কেন তার মোহে ঘর কিংবা ঘরনী ছেড়ে ঘনীভূত ঘোরের মাঝে আমরা অযথাই ঘুরে মরি! করি পথচলা নিজেরই অজান্তে ভুলে-ভরা অবাঞ্চিত ভূগোলের পথে। হাঁটি দিশাহীন গোলকধাঁধার মাঝে নিজেকে হারাতে।
এরকমই হাজারও প্রশ্নের প্রাপক আমি নিজেও। বহুদিন এর তল-উপতল অনুসন্ধানে কাটিয়ে দিলাম। কাটাচ্ছি এখনও। আজও এইসব খোঁজার খেলাফতে যুক্ত আমি যতটা বুঝি, এ চেষ্টা কতটা ভঙ্গুর, ভয়ানক, ভীষণ মেঘে ঢাকা ছায়ার মতো ধূসর আর কতটা বর্ণহীন। যতবার সে ফিরিয়ে দিয়েছে মুখ, দুয়ারে দিয়েছে তালা; ততবারই আমি এ অধম আর অর্বাচীন— জেদে, জাগ্রত শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চ্যালেঞ্জের চৌকস সব ছলাকলায় নিজেকে নামাতে চেয়েছি যুদ্ধে। বিশাল পাহাড়ের পশ্চাতে সামান্য ধূলিকণা হয়ে ধরতে চেয়েছি তাকে। বধের এই ছেলেখেলায় আমি আজও যুক্ত করি নিজেকে। কখনো সে ধরা দেয়, কখনো বা পালায় আমাকে ফাঁকি দিয়ে।
প্রশ্নে এ কথা এসেই যায়— এই যে তাকে ধরা, তার প্রতিটি চিত্রে, তার ঢংয়ে, ভঙ্গি আর ভাবনায়, তার প্রকাশ আর প্রকরণে, ভাষার মধ্যে ভাবিয়ে তোলে যে আমাকে তার বুদ্ধির ব্যঞ্জনা দিয়ে, ছন্দে ছাদিত করে যে নানান প্রহসনে— রূপকে রঞ্জিত করে, বর্ণে বর্ণালি করে তোলে। দর্শনে থাকে যার জাগ্রত দার্শনিকতার উপভাষা। পঠনেই যার ঘটে দুত্যির সঞ্চরণ। আমাকে ভাসায়, প্লাবিত করে জলহীন কোনো গভীর সমুদ্রে। বন্দি করে আবেগের এক নতুন কারাগারে। আমি সেই কবিতার পক্ষে। আমি তার চরণে চরণামৃত ঢালতে রাজি উদয় হতে সূর্যাস্তে।
আমরা লিখি বটে কবিতা। হাজারও ভাষায়, ভাবনায়। লিখি ভুবনের সমস্ত বিষয় আর বস্তুকে আলিঙ্গন করে। কেন না সকল তর্কের সমাপ্তিতে জীব তো আমরা সামাজিক আসলে। আর নিশ্চিত সংঘবদ্ধও বটে। তর্ক এ নিয়ে থাকতেই পারে। থাকুক। আর যিনি কবি, সেও তো আসলে একটি স্থানে, কালে, যুগের মধ্যে দিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছেন তার বাস্তবিক কোনো সময়ের রূপরেখা। কাজেই যা কিছুই করি না কেন, কবিতার মধ্যে নিরন্তর আমার যে জিজ্ঞাসা তা সময় থেকে সময়ে, বাস্তব হতে বাহিত হওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি আমি।
তবে বহমান এই জিজ্ঞাসায় যেন থাকে নানা মনোষ্কামনার কথা। থাকে প্রেমের মাঝে উচ্চ আর প্রন্তিককে একাকার করে দেওয়া। জাতির মধ্যে থাকে যেন জাতীয়তা। আমরা দল হতে দলীয়, যুগ হতে যন্ত্রের নানান ক্যারিজম্যাটিক জটিলতাকে ভেঙে— সকল ভেদ-বুদ্ধিকে তোলপাড় করে গড়ে তুলতে চাই সেই কবিতাকে, যার আছে দুর্দান্ত আর সাংঘাতিক মৌন মাদকতা। যা দিয়ে হরণ করা যায় পার্থিব সকল কুসংস্কারকে। যার তাপে পুরাতন যায় গলে। আসে নতুন কোন অন্য আকারে— ধরা দেয় সোনার অলংকারে। আমি সেই কবিতার চারায় পানি ঢালতে রাজি, যে কিনা হয়ে ওঠে প্রতীকে প্রজ্জ্বলিত। যার স্তরে স্তরে ফুটে থাকে চিত্র আর কল্পনার জটিল মিথষ্ক্রিয়া। যে আততায়ীর রূপে নিঃশব্দে ছুরির ছোবল হানতে পারে সরাসরি মেধার মর্মমূলে। কবিতা তখনই যখন তিনি হয়ে ওঠেন নানান দ্যোতনার। নানান চিহ্ন আর সংকেতে যে কেবল অজর-অমর জিজ্ঞাসার দিকে নিজেকে ধাবিত করে। পল হতে পলকে, চূর্ণ হতে বিচূর্ণর দিকে ভাঙতে ভাঙতে যে আমাদের নিয়ে যায় হ্যামিলনের সেই ভূতগ্রস্থ সুরের সান্নিধ্য পেতে। আর আমরা বিবিধ মুদ্রায় মুদ্রিত হয়ে তার পথেই ঝাঁপ দেই অজান্তে, শুধু একমুঠো শিল্প আর সৌন্দর্যের লোভে।
যুগে-যুগান্তরে কবিতা এসেছে নানান তথ্য আর তালাশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে। এসেছে বিশাল ঐতিহ্যের বিষণ্ন আয়তন নিয়ে। বিশেষত বাংলা ভাষায় রচিত আমাদের কবিতা আর তার চৌকস সব কারিগরগণ তৈরী করেছেন তাদের কত না যতনে। কত না পরশ দিয়ে প্রেমের, দ্রোহে-বিদ্রোহে, কামে আর ঘামে, কারণে অকারণে, বিচিত্র সংকেতে উন্মোচিত করেছেন তাদের মনের মধ্যে নিভৃতে থেকে যাওয়া চাওয়া-পাওয়া আর সম্ভাবনার ইতিহাসকে।
ইশারা ঈঙ্গিতে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন ঘুমন্ত আমাদের। প্রকৃত কবিতা পারে মরণ কোন ঘুমকে এক নিমিষেই জাগ্রত করে তুলতে। ইতিহাস তাই বলে। দেখতে আপাত নিরীহ হলেও এর আছে এক অফুরাণ রগরগে প্রাণশক্তি। কবিতা তখনই যখন তা আমাদের মরচে পড়া বোধকে নিমিষেই চাঙ্গা করে তোলে। আধো আধো নিদ্রায় যেমত ঘটে স্বপ্ন আর বাস্তবতার যৌথ নিবেদন। যা কিনা হাজারো রহস্যময়তার দিকে চালিত করতে শেখায় আমাদের। ব্যাখ্যায় ব্যথিত করে তোলে।
একদিকে বিশাল জটিলতা অন্যদিকে নিমিষেই পাওয়া মুক্তির মহামিলনে নিজেকে আবদ্ধ করার এই যে ক্রিয়া, মাঝে নানান কোড আর কনট্রাক্ট— শিল্পের চূড়ান্ত আর মাঝামাঝি এই স্তরে দাঁড়িয়ে সে হাতছানি দেয়। সেতুর ওপাড়ে ডাকে। বোধের বিবিধ রঙের চালাকির চাবি হাতে। আমার কাছে কবিতা একান্ত তাই— যা কিনা কোলাহল মুক্ত। অজস্র আর বহুমাত্রিক পথ পাড়ি দিয়ে দিনান্তে শ্রান্ত আর ধুলোর পোষাকটি ছেড়ে, উষ্ণ জলে স্নান সেরে পাহাড়ের চূড়োয় বসে একাকীত্বে সমাপ্ত সূর্যের দিকে চেয়ে পরম তৃপ্তিতে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেয়া। অনুষঙ্গে থাকতেই পারে শরতের শুভ্র আর নীলাভ সাদার মেঘমালা। দূরে ছড়ানো-ছিটানো দু-একটি পাখি বা প্রাণের মৃদুমন্দ ছায়া। সন্ধ্যা নেমে যাবে, আঁধারে আন্দোলিত হবে প্রকৃতি। প্রিয় ঘোড়াটির চাপা হ্রেষাধ্বনি, থেকে থেকে খুরের আওয়াজ। অথচ পলক পড়বে না। কবিতার রাজ্যে বিচরণ করতে করতে একসময় শীতল পরশে ঘুমিয়ে পড়বো আমি।
আমি চাই কবিতা হোক প্রকৃতই জীবন্ত আর রোগমুক্তহীন দৃপ্ত বালকের ন্যায় স্মার্ট আর ঝরঝরে। তার আয়ুষ্কালের প্রশ্নে যেন না থাকে কোন আয়ত ক্ষেত্রের সমীকরণ। সে যেন বাঁধা না পড়ে কোনো গণ্ডী বা গোষ্ঠীর প্রহসনে। দ্যোতনায় তার ঝরে পড়ুক সর্বদেখার সমকালীন এক স্পৃহা। আর আমরা তাকে লালনে, লেহনে যেন পাই উত্তেজনার বিচিত্র সব স্বাদের শরকরা।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত কিছু মান্য আর ধন্য করে কেন লিখবেন একজন কবি তার কবিতা? দৃষ্টান্তে জানাই দরকার নেই তার। মানে-মাত্রায়, ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনে, জন্মে-প্রজন্মে ক্ষত-বিক্ষত কোনঠাসা যন্ত্রণাকাতর মানুষ নিজের অজান্তেই এমনও কবিতা রচেন, রচিয়াছেন— যা কখনো কখনো পরাজিত, আবদ্ধ আমাদের মুক্তির স্বাদ এনে দেয় বা দিয়েছে বা দিচ্ছে আজও। অন্য কবিতার ভূমিকাও নয় নগন্য এখানে সেক্ষেত্রে। বুঝি, তার সাঁড়াশি আক্রমণেও থাকে অভিনব এক আলোচ্য কবিতার পরিভাষা। তর্ক নয়, সেইসব কবিতার পাণ্ডুলিপিও ভালো লাগে কখনো সখনো। কখনো বা লাগেও না সেভাবে।
আসলে যুগে-যুগে, দেশে-দেশে, শহরে-বন্দরে মিষ্টি তো নানান জাতের, রঙের, ঢং আর শ্রেণীর সাঁরিতে সাজানো থাকে। থাকে কারিগরও বিচিত্র তাদের। আমি আমার পরিসরে, আমার শিক্ষা ও সংকেতের ভাষায় গোপনে গোপনে তাকেই করি গ্রহণ— যে রহস্যের রসাতলে থাকে আশ্চর্য রকম নতুনের নিয়ামক। যার গর্বে-গন্ধে, রূপ-রসে নিশিদিন আমারই মাত্রা-চেতনার চৈতন্যে টনক জাগাতে পারে। সর্বদাই রূপের মধ্যে যিনি বহুরূপি। চাল-চরিত্রে যে কবিতা মেজাজে মৌলিক। হজম করতে যাকে বিস্তারিত পথ পাড়ি দিতে হয়। হিরকের ন্যায় বর্ণালী সে পথের বহুমুখী রূপরেখা, নির্দেশনায় তার নানান আহাজারি— আমাকে বিভ্রান্তও করে বটে ঠিক ততখানি।
তেমন কবিতার শব্দ কিংবা শব্দবন্ধনী, তার প্রতীকের মধ্যে বেড়ে ওঠা বাক্যের ঝলকানি। বিন্যাসে তার অভিনব স্থাপত্যকলার লুকোচুরি। চিত্রে, প্রবাহিত দৃশ্যে কল্পনার কল্যাণকর বিজ্ঞাপিত বনভূমি। থাকে যদি তেমন বৈভব আর বৈচিত্রে ভরা দর্শনের দাম্ভিকতার দুয়ারগুলি—তবে আমি যত দূরেই হোক, সমস্ত অন্ধকারকে কেটে কেটে যেতে প্রস্তুত সেই কবিতার কাছে।
প্রকৃত সৎ আর সত্য কবিতাকে হয়ে উঠতে হবে প্রথমেই প্রাণজ, প্রাঞ্জল। দেখতে হবে কতটা কৌতূহলের উদ্রেক ঘটায় আমার ভিতরে সে। আলো-আঁধারের আবর্তে ঘুরে ঘুরে সে আসলে কোথায় নিয়ে যেতে চায়; পাঠক আমাকে, আপনাকে? বৈচিত্রময় তার অসংখ্য রূপ-রস নিঃসৃত হয়ে কোন ব্যাখ্যায় হাজির করে অবশেষে।
কবিতায় থাকা চাই সকল ইন্দ্রিয়তার যৌথ ভোকাবুলি। যেন তারা একে অপরকে ছাপিয়ে গিয়ে আয়োজনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে অন্য জাতের এক ইন্দ্রিয়যোগের কথাকলি। প্রতিষ্ঠিতর মাঝেই সে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক। হবে সূ² আর হৃদয়গ্রাহী। পদে-উপপদে হবে স্বাতন্ত্র্য, নির্ভেজাল আর নির্লোভী সন্নাসী। চলনে-চরিত্রে হবে সে চাতুর্যে ভরপুর। কবিতা আমার কাছে বিষ্ময়ভরা চোখ দিয়ে দেখা অতীত আর আগামীর প্রচ্ছন্ন ছেলেবেলা। তাকে প্রাপ্ত হতে সময় দিতে হয়। আর সে কারণেই যাপিত জীবনে প্রকৃত কবিতার সহচার্যে আসতে হলে তাই নিশ্চিত নিজেকেও প্রাপ্ত আর প্রাজ্ঞ করে তুলতে হয়। নইলে মানের কবিতা চিরকাল অধরাই থেকে যাবে। হয় তো মৌনতায় ভরা মূর্খ মুখের অবয়ব নিয়ে অকারণেই আফসোসের দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাবো। দিনান্তে হা-হুতাশ করে কাটিয়ে দেব আসন্ন রাত্রিবেলা।
আমি চাই নতুন দিনের নতুন কবিতায় উদ্ভাসিত হোক নতুন আঙ্গিকের সকল কাব্য ক্যারিশমা। শব্দকে ছাপিয়ে কবিতায় উঠুক ফুটে শব্দ আর নৈঃশব্দ্যের এক ইউনিক যুগলবন্দি। কবিতার দেহে লাগুক রূপান্তরের সেইসব রূপালী ঢেউয়ের ধাক্কা। যাতে মনোযোগী, সার্থক প্রতিটি পাঠক তাকে পায় আবিষ্কারের নিজস্ব পাঠ পরিক্রমায়। আর এইসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ছবক, ভিন্নার্থে পঠন-পাঠনের মাঝেই রাখতে হবে জাগ্রত নিজেকে। তথ্য-তরঙ্গের এই যুগে কবিকেও আপগ্রেড না হয়ে উপায় থাকে না যে! এ সত্য বাস্তবতার নিরিখেই।
যুক্তি ও বুদ্ধির অবিনাশী এই আয়োজনে কবিকেও তাই কঠিন-তরলের, কৃষ্ণ-আলোর ঝলকানি পেতে হলে বেরিয়ে আসতে হবে জাগতিক বিশ্বের দরবারে। কেন না সময়ের স্রোতে জমা পড়া যত অভিজ্ঞান, তার আলোকেও যদি দেখি— কই! কেউ তো একাকীত্বের জোরে হয়নি কবিতার জোরালো কারিগর কখনো, কোনোদিন! হাজারো উৎসের আলিঙ্গনে, সৎ সহচর্যে এসে একজন হয়ে উঠতেই পারেন ধীরে ধীরে কবিতামনস্ক। কবিতার পাণ্ডিত্য যেন না হয় প্রেম আর পরশ বহির্ভূত। নানা শ্রেণীর, রসের কবিতার কথা বলে, লিখে একদিকে যেমন অযথাই উত্তপ্ত করছি আমরা সময় আর সমাজকে। অন্যদিকে মূল বিষয়কে পাশ কেটে সারাংশের মতো বেহুদা বিষয় নিয়ে দিনে দিনে শতধা বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি আমরা। এ বড় দুঃখের। সম্পর্কের অনিবার্য এই পতনে, মূল স্রোতের কবিরা তথা সাহিত্যের সাধকবৃন্দ আজ একেবারে কোনঠাসা। তাদের না আছে ঘর, না আছে ঘরে প্রবেশের পথ।
যদিও সমগ্র ঝড়ের শেষে রজনী যেমন শান্ত। চৈত্রের আগুনঝরা রোদের পরিশেষে চাঁদ যেমন স্নিগ্ধ; তেমনি ভুবনের প্রতিটি চরম নিঃসঙ্গতম জনই আসলে প্রকৃত আর প্রধানতম কবি। খুঁজে দেখুন ইতিহাস তাই বলে।
কবিতার মাঝে হু-হু করে ঢুকে পড়ছে আজ অবৈধ কৃষ্ণ-রাজনীতি। পড়ছে সামাজ্যবাদের কালো আর কালিমায় ভরা কুৎসিত সব অঙ্গ আর অলিগলি। বৈষয়িক উন্নতির হাতিয়ার না করে কবিতাকে তাই তার কাব্য-কলোনির মাঝেই বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। সকল সংকীর্ণতাকে উতরে কবিতার পথ চলা হবে এমত ভদ্র আর ভিন্ন। অহংকারের এমন আত্মতৃপ্তিতে ভরা কবিতা হোক শুভ্র শরতের ন্যায় সাদা, আর সত্য। সকল সাহসী সুরের মাঝে গুঞ্জরিত হোক এর সমাধান। দাবি বা প্রত্যাশা এটুকুই।