একটি নির্দিষ্ট কালখণ্ডে আবির্ভূত নির্দিষ্ট প্রজন্মের কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আলোচককে কয়েকটি সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথমত পাঠকের যতটা নজর থাকে আলোচনার দিকে, ততটা নজর থাকে না কবিতার দিকে।যে কালখণ্ডের কবিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সে কবিতাগুলো না পড়ে পাঠক প্রথমে নজর দেন আলোচক কী লিখলেন তার ওপর। আলোচনার ভেতরে কয়েকটি জিনিস খুঁজতে থাকেন। সেগুলো হলো, আলোচ্য সময়ে কবিদের সাধারণ প্রবণতা হিসেবে লেখক কী আবিষ্কার করলেন,অন্যান্য কালখণ্ডের সঙ্গে আলোচ্য কালখণ্ডের ভেদরেখা হিসেবে তিনি কী কী শনাক্ত করলেন। এই সময়ের কবিরা অন্য কোনো কালখণ্ডের অনুকরণে বেশি আগ্রহী তা শনাক্ত করলেন কি না, এই সময়ের কবিরা পূর্ববর্তী কালখণ্ডকে কতটা ধারণ করলেন, কতটা উপেক্ষা করে চর্চা করছেন,এই তাদের মূল স্বাতন্ত্র্য কী, আলোচক কাকে বেশি মার্ক দিলেন (কেন দিলেন সে হিসাব-নিকাশও কেউ কেউ করেন। এর কারণ হিসেবে কোনো লেনদেনের ব্যাপার-স্যাপার আছে কি না, সে ব্যাপারেও উৎসুক হয়ে ওঠেন)। এ ক্ষেত্রে পাঠকের ইচ্ছে পূরণ না হলে আলোচককে হজম করতে হয় কঠোর সমালোচনা। কারণ যারা পাঠক, তারা তো বেশিরভাগই পূর্ববর্তী সময়ের অথবা বাদপড়া কবি।পূর্ববর্তী কালখণ্ডেরদ লেখকের ইচ্ছে পূরণ তখনই হয়, যখন তাঁরা আলোচকের লেখার ভেতরে খুঁজে পান আলোচ্য কালখণ্ডের কঠোর সমালোচনা।তাতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বও অনায়াসেই প্রমাণের সুযোগ হয়ে যায়।
কোনো কালখণ্ডের কাব্যালোচনা করতে সেই সেই সময়ের সাধারণ প্রবণতা খোঁজা এক ধরনের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা প্রায় ঐতিহ্যরও মর্যাদা পাওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে গেছে যেন। অবশ্য ঢালাও দোষ দিয়েও লাভ নেই।কারণ আমাদের দীর্ঘদিনের কবিতার মধ্যে এই ধরনের সাধারণ প্রবণতার উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল।ফলে এ রকম খোঁজাখুঁজির কারণ একাবারে অমূলকও নয়। কিছুটা অভ্যাসের মতো হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো একটি প্রজন্মে লিখতে আসেন কয়েকশত কবি। প্রত্যেক মানুষ যদি এককভাবে স্বতন্ত্র হয়, স্বতন্ত্র হয় তাদের চিন্তায়, স্বতন্ত্র হয় তাদের মননে, স্বতন্ত্র হয় তাদের অভিজ্ঞতায়, স্বতন্ত্র হয় তাদের বিবেচনায়, তাহলে তাদের সাহিত্য কর্মের ভেতরে সাধারণ প্রবণতার সাদৃশ্য সৃষ্টি হয় কেমন করে। হয়, যদি তারা অভিন্ন কোনো চেতনার দ্বারা নিবিষ্ট হন, অভিন্ন কোনো প্রত্যাশার জন্য উন্মুখ থাকেন, অভিন্ন কোনো দাবির জন্য থাকেন যুদ্ধন্মত্ত।জীবনানন্দ-সুধীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে গত শতকের শেষসময় পর্যন্ত এরকম অভিন্ন চেতনার বাস্তবায়ন,অভিন্ন প্রত্যাশার জন্য উন্মুখ এবং অভিন্ন দাবির জন্য যুদ্ধন্মত্ততা ছিল।স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় ত্রিশের দশকে ব্রিটিশের নাগপাশ থেকে মুক্তি, নিজেদের আত্মপরিচয় সন্ধান এবং রবীন্দ্র প্রবণতার বাইরে গিয়ে কবিতা চর্চার মতো কিছু প্রবণতা ছিল। তাতে একদিকে যেমন নজরুলের একটা ধারা তৈরি হয়ে যায়, তেমনি জন্ম হয় কল্লোল গোষ্ঠীর।এরপর স্বাধীনতার ব্যগ্রতা বা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াভয়তা সবাইকে আক্রান্ত করে। এরপরপঞ্চাশের দশকে এসে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা বিকাশের মাধ্যমে প্রকৃত স্বাধীনতার দাবি স্পষ্ট হতে থাকে। ষাটের দশক তো পাকিস্তানি সংস্কৃতির বিপরীতে বাঙালির সংস্কৃতির যুদ্ধ এবং মুক্তির জন্য উন্মুখ সময় ।সত্তরের দশকে এসে স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও প্রাপ্তিউত্তর হতাশা ও খেদ তাড়িয়ে বেড়ায়। আশির দশকে এসে সামরিক শাসনের নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় দানা বাঁধতে থাকে। এভাবে প্রতিটি কালখণ্ডের এ রকম আলাদা আলাদা দাবি প্রকৃতপক্ষে সময়েরই দাবি ছিল।ওই সময়ের বিপরীতে কোনো শিল্পকর্মীর যাওয়ার সুযোগ ছিল না।সঙ্গত কারণেই তৎকালীন কবিরা একটি অভিন্ন চাওয়ার পেছনে একাট্টা হয়েছেন। নিজেদের অতি ব্যক্তিগত সংকটটি কবিতায় তুলে আনার পরিবর্তে বৃহত্তর সংকটটি নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাকেই নৈতিকতার দিক থেকে সঠিক মনে করেছেন তাঁরা। ফলে তাঁদের কবিতার মধ্যে একধরনের সাধারণীকরণ ঘটে যায়।এতে এক একটি সময়ে ভেতরে কেউ যদি সাধারণ কোনো প্রবণতা খুঁজতে যায় তাহলে সেটা খুঁজে পাওয়া মোটেও দুষ্কর হবে না। কয়েক প্রজন্মের এই অভিজ্ঞতা পাঠকের মনে গেঁথে দিয়েছে যে, ‘দশক’ মানেই একটি সাধারণ প্রবণতার ছাপ থাকবে। কিন্তু তারা জানে না, নব্বইয়ে এসে এ রকম কোনো রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী সংকটের ভেতরে এ জাতিকে পড়তে হয়নি। তাঁরা ইতোমধ্যে এও জেনে গেছেন যে ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ার আশঙ্কা আর নেই, নতুন করে ভাষা আন্দোলন হওয়ারও সুযোগ নেই। একাত্তর একবারই আসে, সামরিক শাসন আর কল্কে পাবে না। ফলে এ রকম বৃহৎ সংকটে পড়ার আশঙ্ক আপাতত নেই। তাতে ব্যক্তি হয়ে উঠেছে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, অন্তর্মূখী। দীর্ঘকাল ধরে জেগে জেগে, জেগে উঠে হতাশ হয়ে এখন ক্লান্ত। তারা এখন আর ভাবতে চাইছে না দেশ গভীর কোনো সংকটে পড়ে গেছে। ফলে তাদের ভেতরে দেখা দিয়েছে এক অভিন্ন চেতনার পরিবর্তে স্বাতন্ত্র্যিক চিন্তার চূড়ান্ত উৎক্ষেপণ। তাতে একই সময়ে জন্ম নিয়ে, বেড়ে উঠেও তারা হয়ে উঠেছেন স্বাতন্ত্র। এ জন্য এখন কোনো একটি বিশেষ কালখণ্ডের কাব্যালোচনা করতে গিয়ে সে সময়ের সাধারণ প্রবণতা খুঁজতে যাওয়া নিতান্তই বোকামি।
এখন কণ্ঠস্বর স্বতন্ত্র করে তোলার যুগ। দেখাকে আরও ভিন্নরূপে দেখা এবং দেখানোর যুগ। এখন চিন্তার নির্মাণের নয় বিনির্মাণের যুগ।এখন গ্লোবালাইজেশনের ভেতরে থেকে নিজের লোকালাইজেশনকে রিপ্রেজেন্ট করার যুগ। এখন যে শুধুই গ্লোবাল সে শিকড়হীন।যে শুধুই লোকাল সে গ্রাম্য।এখন এ দুয়ের সমন্বয়ে যিনি তার সাহিত্যকর্মকে করে তুলতে পারবেন গ্লোকালাইজ, তিনিই অনন্য।
আজ যাকে ‘দশক’ বলছি তা আসলে কিছুই নয়। সাহিত্যালোচনা এবং কোনো কবির উত্থান ও বিকাশকাল চিহ্নিত করার একটি মাধ্যম মাত্র। এর বাইরে এর কোনো গুরুত্বও নেই। থাকা উচিতও নয়। ‘দশক’ আসলে সময়ের দিকে থেকে তার পূর্ববর্তী অনিবার্য ও অনিয়ন্ত্রিত সময়েরই পরবর্তী ধারক। ফলে এটাকে কোনো যুগ হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো যুক্তিই নেই।কোনো সুযোগও নেই। আর এখন বিশেষভাবে চিহ্নিত হওয়ার কোনো সময়ও নেই। কারণ এ রকম চিহ্নিত হওয়ার জন্য যে বৃহৎ পটভূমি লাগে, এখন তাও নেই। তাই বিপ্লবী কোনো অভিঘাত এ সময়ের নবীন কবিদের কবিতায় থাকবে তাও অসম্ভব।
তবে রক্তগরম কিছু নবীন কবি প্রত্যেক সময়ের শুরুতে হাজির হয়ে প্রথমেই জানান দেন আগের সময়ে কিছুই হয়নি। আমরা এবার দেখাব। মাত্র একযুগ আগের যে রক্তগরম কবিরা এটা করেছিলেন, আজ গবেষক দিয়ে গবেষণা করালেও তাদের ফসিলের খোঁজ পাওয়া যাবে না। হইচই করে প্রথমে যারা মাঠ গরম করেছিলেন,আমি নিশ্চিত,আজকের নবীন কবিরা তাদের নামও বলতে পারবেন না। কারণ বিগত এক দশকে তাদের কোনো লেখা কোথাও প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।এই সময়ের টোটাল সাহিত্যের মূল্যায়ন করতে গেলে দেখা যাবে তাদের কোনো অবদানই নেই। পক্ষান্তরে যারা সাক্ষাৎ পূর্ববতীদের মান্য করেছিলেন এবং ধারণ করেই উপক্ষো করেছিলেন শিল্পের দায়ে, আজ তারাই এই এ সময়ের প্রধান কুশীলব। এই ঔচিত্যবোধ থাকা উচিত সব সময়ের কবির। আশার কথা, একেবারেই তরুণদের মধ্যে কোনো রক্তগরম বেয়াদবের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।তাতে ধরে নেওয়া যায়, একটা গোপন কিন্তু প্রচ্ছন্ন প্রস্ততি তাঁদের ভেতরে রয়েছে।
এই প্রস্তুতির ছাপ টের পাওয়া যায়।এই নবীন কবিদের কবিতা বিষয়ে কথা বলা যাবে, তাঁদের কবিতার ভেতরে প্রবেশ করলেই। তাঁদের কবিতার প্রথম লক্ষণটি হলো তাদের স্বতন্ত্রস্বরী হয়ে ওঠার প্রবণতা।
রাসেল রায়হানের কবিতাকে রাসেল রায়হানেরই মনে হয়।মনে হয় না যে পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা।মনে হয় না এটা অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।রাসেল রায়হান উপলব্ধির যে জগতে নিয়ে যাবেন, পলিয়ার ওয়াহিদের চমকে দেওয়ার কুশলতার সঙ্গে তা মিলবে না। মিলবে না অরবিন্দ চক্রবর্তীর একক ভাবনাকে বিচ্ছুরণের আলোয় আলোকিত করার ক্ষমতার সঙ্গেও। জব্বার আল নাঈম রোমান্টিকতার ছদ্মবেশে প্রতিবাদের যে লিপি তৈরি করেন, তার সঙ্গে কিভাবে যোগসূত্র স্থাপন করা যাবে গিরীশ গৈরিকের গল্পচ্ছলে উস্কে দেওয়া কৌতূহলী পিপাসাকে? শঙ্খচূড় ইমাম গোপনে ব্যঙ্গ করেন,কবিতারই ছদ্মে।শরাফত হোসেনের সরল চোখ সেদিকে যাবেই না। জাহিদুর রহিমের কেন্দ্রীয় বক্তব্যের রহস্যময় বিস্তারের সঙ্গে সানাউল্লাহ সাগরের টানাগদ্যের গীতলতা যে একেবারেই মেলে না।তাদের ভেতরে কোনো সংযোগী প্রবণতা নেই, আছে বৈচিত্র্য, আছে ভিন্নতা। এ রকমই হওয়া উচিত প্রত্যেক কালখণ্ডের মৌল ভিত্তি।
রাসেল রায়হানের কবিতা উপলব্ধির ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। চিত্রকল্পের সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন মূল দৃশ্যের অংশগ্রহণ। ফলে সেটা নিছক চিত্রকল্পের জগৎ থাকে না। থাকে না নিছক সাধারণ দৃশ্যের অবয়বেও।এ দুয়ের মিথস্ক্রিয়ায় পাঠককে যেতে হয় অনেক গভীরে। তাতে মনে হয় না,এ নিছক চিত্রকল্পের ঘোর।মনে হয় ওই জগতের ভেতর দিয়ে যাওয়া আরেক অংশীজন।পাঠক এভাবেই একাত্ম হয়ে যান।
এই তীব্র তিতিরের রৌদ্রে তুমিও কি সরিয়ে নেবে না
অবগুণ্ঠন? এ আয়ুষ্কাল ঘুমিয়ে থাকবে স্পষ্টতর
স্মৃতির নৈকট্যে তৈরি কোনো গুহায়? গুমগুম আঁধারে,
আলস্যে? দেখতে থাকো, ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আপাত-যোগ্য
ঘোড়ার দর। দেখো, তীব্র তিতিরের রৌদ্রে ঘোড়াদের
কেশর ও ত্বক পুড়ে যাবার দৃশ্য। শোনো, তাদের ক্ষয়িষ্ণু
খুরের কাঁটাসমূহ ঢিলে হয়ে কোনো যথার্থ জগতে
ক্রমশই মিলিয়ে যাচ্ছে—কোন গূঢ় প্রতিধ্বনি তুলে?(রেস: রাসেল রায়হান)
নতুন কবিদের যে নতুন চোখের কথা আমরা প্রায়শই বলে থাকি, নতুন চোখে নতুন করে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নতুনতর উপলব্ধির কথা বলি। এ কবিতাটিতে তারই অনুরণন পাই। তার অক্ষরবৃত্তের দিকে সহজাত ঝোঁক পরিচর্যায় শিল্পিত রূপ লাভ করবে বলে বিশ্বাস করি।
পলিয়ার ওয়াহিদের ভেড়াদল কবিতাটি পড়া যাক:
চারিদিকে পোড়ামাংস
মাছি মারছে কসাই
সবাই কি পোঁকাধরা ফল?দণ্ডিতের হাতে তবু রাজকীয় মহিমা
পিপিলিকা নিয়ে ব্যস্ত ফুলপাত আজ
এই পটকাবৃষ্টির দেশে—
কী এক রকম ভয়ে—স্তব্ধ চারদিক
তুমুল হাততালির পরেও তবু দ্যাখো
জমে ওঠে পরিচিত একই ম্যাজিক!(ভেড়াদল:পলিয়ার ওয়াহিদ)
কবিতাটিতে চমক রয়েছে। কিন্তু চমকসর্বস্ব নয়। এই চমক ভাবায়, বিরক্ত করে না। ভাবনার বহুরৈখিকতা পাঠককে নিয়ে যায় বিভিন্নমুখী চিন্তার দরোজায়।
‘কাজুবাদাম’ কবিতাটিতে কাজুবাদামের আড়ালে শরীরী কীর্তন। দুধের সেমাইয়ের প্রতীকের আড়ালে যৌনতা। এগুলো প্রিয় খুব বলে ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে চীরকালীন যৌনতার আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কবি কতিপয় নাম উচ্চারণের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত যৌন-সঙ্গীদের স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু এ সব নাম ওই ব্যক্তিগত যৌনতার আকাঙ্ক্ষাকে বিশেষ মর্যাদা দেয় না। এখানে বক্তব্য ক্লোজএন্ডেড করা হয়েছে, পাঠককে কোনো কিচু ভাবার সুযোগ দেওয়া হয়নি।এ সব নাম বাদ দিযে যদি প্রতীকের আড়ালে নিয়ে আসা হতো তাহলে যেরহস্যের জন্ম নিত,তা হয়ে উঠত উপভোগ্য। এ বিষয়টি বাদ দিলে পুরো কবিতাটিই উপভোগ্য।
অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতায় ভাবনার বিচ্ছুরণ নেই। কিন্তু একক ভাবনার বিস্তার আছে। ভাবনার বিচ্ছুরণ ঘটলে এবং সেই বিচ্ছুরিত অংশ নতুন করে কেন্দ্র নির্মাণ করলে তা এতই বিস্তারি হয়ে যায় যে,অনেক সময় পাঠক এর একক কেন্দ্র থেকে বিচ্ছুরণের কেন্দ্রের মধ্যে সংযোগ গড়তে ব্যর্থ হন। তখন দুর্বোধ্যতার অভিযোগ ওঠে। পক্ষান্তরে ভাবনার বিস্তার যদি বিচ্ছুরণের দিকে না যায়, তখন পাঠক বারবার ওই বিস্তার জুড়ে পরিভ্রমণ করতে পারে। বারবার ওই একক কেন্দ্রে এসে তার বিস্তারের সঙ্গে মেলাতে সচেষ্ট হয়। মাঝেমাঝে ওই বিস্তার এত রসসঞ্চারী হয়ে ওঠে যে, পাঠক পৌনঃপুনিক পরিভ্রমণে নুতনতর দিশা খুঁজে পায়। এতে বহুপাঠের আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে।অরবিন্দর কবিতায় এ রকম একক ভাবনার বিস্তার লক্ষ করা যায়, যেখানে পাঠক পুনঃপুনঃ পরিভ্রমণে নুতনতর দিশা খুঁজে পায়।
মোড়ক ফসকে বেড়িয়ে এলে—এটুকু ঠিক আছে
সাবানের ধারণা থেকে বেরুলে তোমাকে মানাতে পারি না
ঘর ও জানালাভিত্তিক
বিবেচনা করা যাক, পাশাপাশি আলোচনা থাকাও ভালো।
তুমি তো জানো
বেসিনে জারুল পাতার জোসনা নিয়ে কাউকে বাসনা রাখা যায়
তারপর যা হয়, হতে থাকে…
নিভে যাওয়া কথার বুদ্বুদ থেকে যা হবে, সেটুকু ফেনা
আরটুকু ঢেউ, পুরোটাজুড়ে তুমি এবং খানিক আহত বার্তা
বাকিটা পরিণত ফলবাচক আমিবনমর্মরের দস্যুতা করে তোমার বুকে আঁচড়ে যাব
স্মৃতিনির্ভর ব্যক্তিগত বুলডোজার।(সাবান নির্ভর কবিতা : অরবিন্দ চক্রবর্তী)
জব্বার আল নাইম অতিমাত্রায় রোমন্টিক।কিন্তু এটাই তাঁর কাব্য প্রবণতার শেষ কথা নয়। বরং এই রোমান্টিকতাই তার অস্ত্র। এই রোমান্টিকতাই তার মাধ্যম। রোমান্টিক উপাদান ব্যবহার করেন তিনি। তাতে যে রূপ পরিগ্রহ করে, সেটা দিয়ে তিনি প্রতিবাদের লিপি তৈরি করেন। রোমন্টিকাতার এক অন্যরূপ ব্যবহার হতে দেখি তার কবিতায়।
‘সূর্যের বগলে গিটার বাজিয়ে অপেক্ষার বৃষ্টি নামল কিষাণের চৌচির মাঠে—পুড়তে থাকা মানুষের পাকাফলে; জারুল জলের ঘ্রাণ নেচে উঠবে দ্বিগুণ গাণিতিক নিয়মে; ফর্মুলা ওয়ান তারকা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হারিয়ে জৌলুস আগুনে ছাপ্পান্ন হাজার তড়িৎ তার পৌঁছে দেবে বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যার কথা। এরপর প্রবল প্লাবনে পাহাড়ের মতো ভিজতে থাকবে অপরিচিত শহরের প্রেমিকযুগল। বস্তির বন্ধ খিল খুলে হাসতে থাকবে সাবেক মাস্তান। প্রেমিক আহত বাঘের হুঙ্কার থামিয়ে ওড়নায় জমাতে থাকবে অসংখ্য শীলখণ্ড…
এরপর বৃষ্টির কলার জাপটে গোপন আলাপে কাটাবে ভগ্নাংশ দিনের জ্যামিতিক পাণ্ডুলিপি। প্রেমের উজ্জ্বলতায় পৃথিবীর সৌন্দর্য বাড়তে থাকলে আগুনের প্রতাপ অপ্রয়োজন।’
(প্রেমের প্রার্থনা: জব্বার আল নাঈম)
গিরীশ গৈরিকের ঢংটা গল্প বলে যাওয়ার।নিতান্তই সাদামাটা। কিন্তু পড়ছি তো কবিতা। তাহলে কবিতা কোথায়।এই আকাঙ্ক্ষা বাধ্য করে শেষ পর্যন্ত পাঠের। এবং প্রত্যেকবারই এই ঘটনা ঘটে।শেষ পঙ্ক্তি না পড়া পর্যন্ত এখানে গল্পই থাকে, স্মৃতিচারণই থাকে,কবিতা থাকে না। কবিতা পেতে হলে যেতে হয় শেষ পঙ্ক্তিতে। কবি, এখানে পাঠককে এমনই কৌতূহলে অনুগত করেন যে, শেষ পর্যন্ত পাঠ না করা পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই।এবং পাঠ শেষে তিনি মেলাতে যান এতক্ষণ ধরে পড়ে আসা গল্পের সঙ্গে। তখন তার পুনঃপাঠ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পুনঃপাঠে তিনি আবারও খুঁজে পান ভিন্নতর অর্থের দ্যোতনা। গল্প একটাই কিন্তু পুনঃপাঠে ভিন্নতর উপলব্ধির উস্কানি তার ওপেনএন্ডেড প্রবণতার সাক্ষ্য দেয়।
মাঝে-মাঝে এমন হয়—আমার ডানহাত বামহাতকে
এবং বামহাত ডানহাতকে খুঁজে পায় না।
এমনকি তারা প্রায়ই ঝগড়া করে
ঝগড়া করার কারণ—কে কার চেয়ে বেশি অপরাধ করেছে
আর কে বেশি করেছে পুণ্যের কাজ।বামহাত ডানহাতকে শাসিয়ে প্রায়ই বলে:
তুই এক বিধবার কুমারী স্তন চাপাচাপি করেছিস।
প্রতি-উত্তরে ডানহাত বামহাতকে বলে:
আমি না হয় চাপ দিয়েছি,
তুইতো তার নরম ত্রিভুজে এঁকেছিস প্রেম।এরূপ ঝগড়া যখন হাতাহাতিতে রূপান্তরিত হয়
আমি তখন এক দৌড়ে বটবৃক্ষের নিচে এসে দাঁড়াই।
বটবৃক্ষ আমার মায়ের নাম। তার আঁচল ছায়ায়
আমার সকল দুঃখ বিনাশ করি।
আর ডানহাত বামহাত ঝগড়া ভুলে সহদোর ভাই হয়ে যায়।(মা সিরিজ-২৬: গিরীশ গৈরিক)
এক ধরনের গোপন ব্যঙ্গ লক্ষ করা যায় শঙ্খচূড় ইমামের কবিতায়।ঠিক স্যাটায়ার নয়। আপাতগল্প ও দৃশ্যের আড়ালে আড়ালে থাকে সেই ব্যঙ্গের প্রাণভোমরা। ঠিক শেষ লাইনে এসে শিখরে প্রবেশ করে।
শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ঢুকে জাতীয় সঙ্গীত লিখতে বললেন। সকলে গোটা গোটা দানা দানা অক্ষরে লিখে ফেললো প্রিয় সঙ্গীত। অঘ্রাণী ইস্কুল ব্যাগ থেকে সাদা পৃষ্ঠা বের করে স্বদেশের মুখ এঁকে নিচ দিয়ে লিখে দিল—আমি তোমায় ভালোবাসি। শ্রেণীশিক্ষক ভেরিগুড কিংবা টিক চিহ্নের আদলে একটি রেখার ওপর আরেকটি রেখা এঁটে দিয়ে অঘ্রাণীর চোখ-মুখের দিকে তাকালো।
ছুটিঘণ্টা বেজে উঠতেই ঢঙ ঢঙ, শিক্ষক ভাবতে লাগলো—আহা! কি সুন্দর স্বদেশেরে মুখ—রঙ রঙ।
(স্বদেশ:শঙ্খচূড় ইমাম)
শরাফত হোসেনের সরল স্বীকারোক্তির ভেতরে রয়েছে এক নিঃসঙ্গ ব্যক্তির হাহাকার।এই নগরের হুলস্থুল সব কারবারের ভেতরে,সহস্র মানুষের ভেতরে থেকেও, মানুষে মানুষে আন্তঃসম্পর্কহীন হয়ে যাওয়ার বেদনাটাই তাকে নিঃসঙ্গ করে তোলে, বেদনার্ত করে তোলে। তিনি শহরে নতুন চাঁদ ওঠা প্রতীকের আড়ালে আশার কথা শোনান।
জাহিদুর রহিমের কবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কবিতার ভেতরে একটা সুস্পষ্ট কেন্দ্রীয় বক্তব্য। সেই বক্তব্য বিস্তারিত হয়েছে কবিতার মাধ্যমেই। কিন্তু এই বিস্তার খোলামেলা ও সুস্পষ্ট হয়নি।হলে কবিতার মর্যাদা থেকে খারিজ হয়ে যাওযার সম্ভাবনা তৈরি হতো। তা না হওয়াতে কেন্দ্রীয় বক্তব্যের রেশ ধরে পাঠক কখনো বুঝে জড়িয়ে যাচ্ছে কবিতার প্রত্যেকটি চরণের সঙ্গে, কখনো না বুঝেই জড়িয়ে যাচ্ছে। এই বুঝা ও না-বুঝার মধ্যেও এক ধরনের টান রয়েছে। কেন্দ্রীয় বক্তব্যের সঙ্গে এসব বিস্তারিত বক্তব্যের সংযোগী যোগসূত্র না থাকলে পাঠকের এ ধরনের অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা নয়। এ সময়ের কবিতার ভেতরে এই বৈশিষ্ট্য না থাকার জন্যই কবিতা অর্থহীনতার অভিযোগে পর্যবসিত হযে যায়। এ অভিযোগ একবারেই স্বাভাবিক। এই কবির কবিতা এই দোষ থেকে মুক্ত।
প্রতিটি গমনে অগম্যও কিছু থাকে;
আকাশে নরম একখানা ডালে
মেঘ দেখতে দেখতে জড়িয়ে যায় পা
লতাপাতার প্রেমে—অলস দিনের পথিকের মতো,
যেন প্রেমিকার গালে না ছোঁয়া এক গোপন তিল।দূরত্বে গমন সমুদ্রের অনায়াস ছবি
ঘোলাটে আলোয় অগম্য কিছু থাকে পাশে,
যেন হোটেলের ব্যালকনিতে কাটিয়ে দেওয়া পুরো ছুটির দিন।সব গমনে অগম্যও কিছু থাকে,
থাকে প্রাপ্তি পরিতৃপ্তিহীন গ্রহণ
থাকে বহুযুগ অপেক্ষা করা এক ব্যথা ভরা মন;
যেন তুমি শুধু চেয়ে আছ ঝাপসা আয়নায়—
তোমার চোখ নির্জলা পাথর—
আকাঙ্ক্ষায়—প্রত্যাশায় আর সন্দেহের গভীরতায়।আমার হারানো বোতামের ক্ষীণ হাসিতে
চেয়ে দেখি—
অনুভূতিগুলো সন্ধ্যার নির্বাতাস প্রেমে
এই ঘর দুয়ার ছাড়িয়ে কোন অন্ধকারে
শিকড় ডুবিয়ে দিয়েছে।(হারানো বোতামের ক্ষীণ হাসি: জাহিদুর রহিম)
সানাউল্লাহ সাগরের গদ্য-কাঠামো বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই কাঠামোর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো দম বা স্পেস। টানাগদ্যের ভেতরে যদি কবিতার সহজাত ছন্দ না থাকে, সহজাত গতি না থাকে,তাহলে পাঠক তো প্রথম পাঠেই বড় ধরনের হোঁচট খায়। ফলে তার জন্য প্রকৃত পাঠই দুষ্কর হয়ে ওঠে। কবিতার রসাস্বাদনও তার জন্য অসম্ভব হযে পড়ে। টানাগদ্যের কাঠামোয় লেখা কবিতায় যদি এই সহজাত ছন্দটি ঠিকভাবে আনা যায়, তাহলে সেটা উৎরে যায়। সানাউল্লাহ সাগরের কবিতায় লক্ষ করা গেল সহজাত গতিময় ছন্দে টানাগদ্যের কবিতা। গদ্যের শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে এক ধরনের গীতলতা টের পাওয়া যায়, যা গদ্যের কাঠামোর দিকে তাকালে বোঝা যায় না,পাঠে ধরা যায়।
শীলার হাতে কোরাস হাসে ভবঘুরে রোদ্দুর। বিশদ জবানে ঢেউ; অস্ফুট আলোয় নীরব মোহর। ঠোঁটের অলঙ্কার সকালের পিঠে লিখে দিলে দরদ; সমুদ্রের বাহুতে প্রিন্ট হয়ে আসে শীলার বায়োগ্রাফি। আড়ালের কীর্তন জ্যামিতিক স্বরবর্ণে―জ্বলে গেছে সব অভিমান। আমি দ্বৈতপাঠের সহচর, দারুণ অসুখের ঝড় পুষি। আমাকে দাও প্রেমের গ্রাম মিঠে ঘাম বেচে কিনি তবুও এক লহমা দরদ। অনুভূতির মখমলে জমা রাখি তৃষিত বায়োগ্রাফি! বাকি পৃষ্ঠা আমার; সেখানে গচ্ছিত থাকুক রোদের গীতিহার…
(দুপুর: সানাউল্লাহ সাগর)
স্বল্পপাল্লার বাক্যে-বাক্যে আফসানা জাকিয়া গেঁথে চলেন কত-না অসমাপ্ত কথার ফুলঝুরি।সে-সব অসমাপ্ত কথার পরে বসে থাকে এক ধরনের ঘোরলাগা সন্ধ্যা। এ সন্ধ্যা এমন এক আলো- আঁধারির পরিবেশ সৃষ্টি করে যেন, ওই তো দেখছি কিন্তু ঠিক যেন দেখছি না।ওই যে বুঝছি কিন্তু ঠিক যেন বুঝছি না। কিন্তু কী যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে, কী যেন বলে যাচ্ছে, অস্ফুট, আধো-আধো। তাতেই জেগে উঠছে অনুভূতির সমস্ত কলা। চাপ দিচ্ছে না, শ্বাসকষ্ট দিচ্ছে না কিন্তু নিবিড় থেকে নিবিড়তর করছে তার সমস্ত বিহ্বলতা। কোনো জটিল বাক্যবন্ধ নেই, নেই জটিল প্রতীকের কলা,নেই রূপকের আড়াল, নেই চিত্রকল্পের ঘোর, নেই শব্দের আড়ম্বর। খুব পরিমিত, নির্মেদ তার সমস্ত পঙ্ক্তি। কিন্তু তাতেই বলে যাচ্ছে কত-না কথা।বোধকরি পরিমিত শব্দের ব্যবহার এবং অধিক বিস্তারী না হয়েও অসংখ্য ভাবনার দরোজা খুলে দেওয়ার এক প্রবল ক্ষমতা রয়েছে আফসানা জাকিয়ার।
নীরব থেকেও অজস্র কথা বলা যায়
ছায়ায় ছায়ায় বেড়ে ওঠা গোলক ধাঁধায়
কে আপনি…কে আমি….
নীরবই বোঝে নীরবতার মানেতুমি কখনো সোনালি ধানের রূপ দেখনি
তাই বোঝ না উর্বর খাতার মুগ্ধ বেদন কথা
অস্থির পথে লাঠি পেটানোর কথা
একবার শুধু সোনা ধানের চোখে চোখ মেলে ধরো
আমি বিরাট এক বিস্ফোরণ ঘটাই। দ্যাখো—
পানি ধরে ধরে মানচিত্র সাজাই…(এই মেঘ আসে, এই সরে যায়: আফসানা জাকিয়া)
নবীন কবির ত্রুটি থাকেই। কিন্তু পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবনের কাছে তাদের পক্ষপাত থাকতে হবে। তাতেই সে-সব ত্রুটি ধরা পড়বে। ত্রুটি ধরা পড়লে তার সমাধান কী করতে হবে সেটাও তারা আয়ত্ত করে ফেলবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে নতুনতর কিছু করতে গিয়ে নবীন কবিরা প্রায়শই একটা কাজ করে বসেন। সেটা হলো একাধিক শব্দের সমন্বয়। যেটাকে শব্দবিবাহও বলা যেতে পারে। এই শব্দবিবাহ যদি সুষম, অর্থবহ, মনোগ্রাহী এবং চিত্রকল্পবাহী হয়ে ওঠে তবেই গ্রহণযোগ্যতা পায়। বিপরীতে গেলেই দেখা যায় এই কর্মপ্রয়াসটি হাস্যকর অর্থহীন বালখিল্যে পরিণত হয়ে যায়। এই নবীন কবিদের কবিতায়ও এ রকম কিছু শব্দবিবাহের নমুনা পাওয়া যায়। যেমন রাসেল রায়হান ব্যবহার করেছেন ‘মৃত্যুও কাউবয়’, ‘রোদের টঙ্কার’। জব্বার আল নাঈম ব্যবহার করেছেন ‘রোদের বগল’। জাহিদুল রহিম ব্যবহার করেছেন ‘রাতের বাকল’। সানাউল্লাহ সাগর ব্যবহার করেছেন ‘হলুদ বাতাস’। মূলত, এইসব শব্দ সমবায়ে কোনো কিছু নির্মিত হয় না।
কোনো মন্তব্যই চূড়ান্ত নয়। তেমনি চূড়ান্ত নয় এ সব নবীন কবির আজকের কণ্ঠস্বরও। পঠনপাঠন বিবেচনা, বিচার, গ্রহণ-বর্জন ও বিবর্তনের পথ ধরে এই কবিরা কোনো এক বা একাধিক কণ্ঠস্বরে থিতু হবেন; এটাই স্বাভাবিক।এর জন্য চটক নয়, প্রয়োজন সাধনা। তাতে রত থাকলে তাঁদের কাব্যপরিক্রমা আরও স্বাতন্ত্রিক হয়ে উঠবে বলেই বিশ্বাস করি।