আমাদের ছোট বেলায় হাবেভাবে নীতিমালায় বোঝানো হয় যৌনতা গর্হিত কাজ। ফলে যৌনতা নিয়ে ভুল বোঝা থাকে দীর্ঘদিন। অথচ কাজটা সবাই-ই করে।
আধ্যাত্মিকতা আর যৌনতা দুটোই প্রয়োজনীয়। পরস্পরবিরোধী আগে ভাবতাম। এখন মনে হয় একে অন্যের পরিপূরক। নিয়ন্ত্রক বা নির্ণায়ক। In general Spirituality cannot be classified without Sexuality. হিন্দু ধর্মে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাৎসর্য পরিত্যাজ্য। ষড়রিপু অর্থাৎ মানুষের চরম ও প্রধান এই ছ’টি শত্রু হলো, কাম, ক্রোধ,লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য।
কাম শব্দের আভিধানিক প্রতিশব্দ হলো সম্ভোগেচ্ছা। কাম শব্দটির বহুবিধ ব্যবহার থাকলেও যৌনবিষয়ক সম্ভোগশক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।
যৌনতা বিষয়ে পাশ্চাত্য অভিমত বিশেষ করে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের অনুসরণ করে বলা চলে, The Sexuality is not only physical appearance. It have more mental activity. Very complicated; involved with every human expression.বাৎসায়নের কামসূত্রের প্রথমেই লেখা আছে অর্থ অনর্থের মূল। কামের মানসিক, শারীরিক, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সেখানেও মেলে: Certain characteristics are believed to be innate in humans; these characteristics may be modified by the physical and social environment in which people interact. Human sexuality is driven by genetics and mental activity.
The sexual drive affects the development of personal identity and social activities. An individual’s normative, social, cultural, educational, and environmental characteristics moderate the sexual drive. Sexuality may be experienced and expressed in a variety of ways; including thoughts, fantasies, desires, beliefs, attitudes, values, behaviors, practices, roles, and relationships. These may manifest themselves in biological, physical, emotional, social, or spiritual aspects. আবার অসভ্য পশুদের যৌনতা কেবল প্রজননের। সিংহী বারো বছর অন্তর সন্তান প্রসব করে। তাই তাদের সংযমী বলা হয়। পশুর প্রজননের একটি নির্দিষ্ট ঋতু আছে। উৎকৃষ্ট জীব মানুষের প্রজননের নির্দিষ্ট সময় নেই। মানুষের যৌনতা কেবল প্রজননের জন্য নয়। রামকৃষ্ণদেব বলতেন, দুই-একটি বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীকে ভাই-বোনের মতো সংসারে থাকা উচিত।
এখন অনুভব করি, মানুষ মাত্রেরই থাকা চাই নিয়ন্ত্রিত কামশক্তি। এ নিয়ন্ত্রিত কামশক্তি যখন অনিয়ন্ত্রিত, বেপরোয়া ও বেসামাল হয়ে যায়, তখনই তা হয়ে যায় শত্রু। আধ্যাত্মিকতা নিয়ন্ত্রক বা নির্ণায়ক। যেমন ভক্ত না থাকলে ভগবানের প্রয়োজন নেই। তেমনি রিপু না থাকলে আধ্যাত্মিক চর্চার বা কী প্রয়োজন? চোর-ডাকাত-গুণ্ডা-বদমাইশ যেমন না থাকলে পুলিশ কোর্ট-কাছারি জেল খানা উঠে যাবে, তেমনি রিপুর তাড়না না থাকলে আধ্যাত্মিকতাও গুরুত্ব হারাবে।
সত্য, রজঃ ও তম। সাধু সত্য গুণের। সংসারী লোকের হলো মধ্য অবস্থা। রজঃ গুণ। চোর গুণ্ডা চরিত্রহীন লম্পটের বৈশিষ্ট্য। সৃষ্টি, স্থিতি, লয়; বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এই ত্রিগুণের অধীন। ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, এই তিনটি গুণের সমন্বয়ে আমাদের জীবন গঠিত। এ কি মানুষের মধ্যে একেক সময় একেকটি গুণ কম-বেশি প্রকটিত হয় বলে আমার ধারণা। অঙ্ক কষার সময় শিশু হাতের কড় গুনে তবে বলে দুই আর দুই এ চার। একটু বড় হলে তাকে আর কড় গুনতে লাগে না। ঈশ্বর একটি চিহ্নমাত্র। বীজগণিতের অঙ্কে যেমন এক্স। তেমনি আমাদের অনিত্য জীবনের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ মেলাতে এক্স-এর মতো ঈশ্বর ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
আধ্যাত্মিকতায় দেবতা থাকতে হবে এমনটা ভুল ধারণা। বিজ্ঞান, দেশ-মাতৃকার সেবা,শিল্প-সাহিত্য; এমনকি সিনেমা নির্মাণ ও খেলাধুলায়ও আধ্যাত্মিকতা চর্চা সম্ভব। ঋষি অরবিন্দ, কাল মার্কস, লেনিন, আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী; কত নাম বলব। তাঁরা সবাই সচেতন-অবচেতনে (consciously or unconsciously) আধ্যাত্মিক সাধনা করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সফলতার পেছনে তার আড়ম্বরহীন অতি সাধারণ জীবনযাপন, কৃচ্ছসাধন আমাদের রাবণের তপস্যার কথা মনে করায় না কি? সাধনা আর কিছুই নয় সংযম নিরন্তর অভ্যাস। সম্ভোগ মানে সমান ভোগ। ভোক্তা ও ভোগ্য যখন সমান ভোগ পেয়ে তৃপ্ত হয় সেটাই সম্ভোগ। সম্ভোগ একতরফা নয়। সুনিপুণ নিয়ন্ত্রিত ভোগেই সম্ভোগ সম্ভব হয়। শিশু ভোগের অন্ন ছিটিয়ে খায়। যত সে পরিণত হয়,নিয়ন্ত্রিত হয় তার ভোগ। এই নিয়ন্ত্রণের চিরন্তন রীতির সাধনা-ই আধ্যাত্মিকতা। গাড়ি চললে, তবে তার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে নিয়ন্ত্রণ কিসের দরকার? তাই চালক ছাড়া গাড়ি নিষ্ক্রিয়। গাড়ি ছাড়া চালক কর্মহীন।
পৃথিবীর মানবিক উন্নতি আধ্যাত্মিক উন্নতি না হলে কেবল বৈষয়িক উন্নতি তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাব প্রজ্ঞার। সবচেয়ে বড় অসুখ বিভেদ বিভাজন। শিশুকে মা যেমন কেবল বুকের দুধ খাইয়ে বড় করে না; স্নেহ মমতায় লালিত করে। স্নেহবর্জিত শিশুর যেমন নমনীয়তা কোমলতা গড়ে ওঠে না, তেমনি আধ্যাত্মিকতা ছাড়াও মানবতা জন্মাবে না। সূক্ষ্ম বোধ বস্তু থেকে জন্মায় না। আত্মা থেকে জন্মায়। যতই দামি হোক বস্তু কেবল স্থূলখেলনা। প্রজ্ঞার স্পর্শ ছাড়া বস্তু হীনতায় ভোগে। দুই টাকার কলম কার নেই। সবাই কিনতে পারেন। তবে তা সবার হাতে সমান মূল্যবান হয় না। কেবল মূল্য পায় জ্ঞানীর হাতে। জ্ঞান মানবিক বিকাশের পথ। আধ্ম্যাতিকতার সোপান। আধ্যাত্মিকতায় চিরন্তন মুক্তি জড়বস্তু কেন্দ্রিকতা থেকে।
আধ্যাত্মিকতা ও যৌনতা দুটোই প্রয়োজনীয়-প্রজ্ঞার স্পর্শ ছাড়া বস্তু-বস্তু হীনতায় ভোগে। আত্মা থেকে জন্মায় আধ্যাত্মিকতা। বস্তু থেকে যৌনতা। The body is nothing more than an object.শরীর একটি বস্তু বৈ আর কিছুই নয়। একটি চেতন অন্যটি জড়। জড় যে প্রাণহীন, তাও তো চেতনা ছাড়া বোঝা যায় না। আবার শুধু চেতনা থেকে কী হবে। চেতনার ব্যবহার হবে কিভাবে বস্তু ছাড়া। ধরুন আপনার বাড়িতে ইলেক্ট্রিসিটি আছে ফ্যান নেই,টিভি নেই, লাইট নেই, ফ্রিজ নেই কোনো বৈদ্যুতিক ব্যবহারযোগ্য উপাদান নেই; তাহলে কী লাভ ইলেক্ট্রিসিটির? আবারও আপনার অনেক বৈদ্যুতিক ব্যবহারযোগ্য উপাদান আছে কেবল বিদ্যুৎ নেই, তা হলেও বা লাভ কী সেই থাকায়? আপনার দুটোই আছে, যখন দুটোর মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চলেছেন, তখনই কার্যকারিতা পাবেন নচেৎ নয়। আবার যদি অনুমোদিত বিদ্যুৎ অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক উপাদান ব্যবহার করেন লোড নিতে পারবে না ফিউজ উড়ে যাবে। সবই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে তখন। তখনই ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি খুঁজি আমরা। এই মিস্ত্রি হলেন ধর্মগুরুরা। জাল মিস্ত্রির পাল্লায় পড়লে সে বিদ্যুৎ চুরি করে সাময়িক সংযোগ স্থাপন করে দিতে পারেন বটে তবে আপনি পড়বেন আরও বিপদে অনুমতি ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারে প্রশাসনিক স্তরে যেমন হাজতবাস হয়। তবে ভাল দক্ষ ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি আপনাকে বলে দেবে বিদ্যুৎ পর্ষদের অনুমতি নিতে। আর কিভাবে সেই অ্যাপ্লিকেশন লিখতে হবে তিনি শিখিয়ে দেবেন। এই অনুমতি আধ্যাত্মিক সাধনা। জীবন ও যৌবনের সমন্বয়-সাধন। আমাদের বিদ্যুৎ কম হলে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজারের প্রয়োজন হয়, আর তখনই আবির্ভাব ঘটে বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ,গুরু নানোক,শংকরাচার্য, চৈতন্য, যীশু, হযরত,গৌতম বুদ্ধের।