বাংলা সাময়িকপত্রের শুরু আঠারো শতকে। আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে এবং স্থায়ী রূপ দিতে সাময়িকপত্রের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রণযন্ত্রের সুবিধা নিয়ে বাংলার প্রথম প্রকাশিত বই—একটি অভিধান। মুদ্রণযন্ত্রে ব্যবহার উপযোগী বাংলা বর্ণমালা যখন তৈরি হয়নি। সেই সময়—১৭৪৩ সালে রোমান বর্ণমালায় মুদ্রিত হয় পর্তুগিজ-বাংলা অভিধানটি। পর্তুগালের লিসবনে মুদ্রিত বইটি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আমাদের দেশে আসা পর্তুগিজদের বাংলা শব্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর ১৭৭৮ সালে ভারতের হুগলি থেকে প্রকাশ হলো ন্যাথালিয়ান ব্যাসি হেলহেডের বই—A Grammar of the Bengali Language। কোম্পানির কর্মচারীদের বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য রচিত এই বইয়েই প্রথম ব্যবহার হলো বাংলা বর্ণমালার। এর ভাষা ইংরেজি হলেও উদাহরণগুলো দেওয়া হলো বাংলায়। ফলে বইটি কোম্পানির ইংরেজদ কর্মচারীদের উপকারে এলেও সাধারণ বাঙালির কাজে এলো না। এরপর পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি বাংলা বর্ণমালার খাঁজ যখন থেকে ব্যবহৃত হতে থাকলো বিভিন্ন সাময়িকপত্রে, তখন থেকেই সত্যিকার অর্থে মুদ্রণযন্ত্রের সুফল ভোগ করতে শুরু করে বাংলা ভাষা। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশিত সাময়িকপত্রগুলোর উদ্দেশ্য ছিল ধর্মপ্রচার। ধর্মীয় উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই সেগুলোর প্রচার ও প্রকাশ। ফলে বাংলা সাহিত্যকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়।
এর আগে আমাদের জেনে নেওয়া ভালো সাময়িকপত্র কী?
সাময়িক শব্দের আভিধানিক অর্থ: ১. কালীন ২. কখনো কখনো ঘটে এমন, অল্পসময় স্থায়ী, ক্ষণস্থায়ী, ৩.সময়োচিত, সময়ের উপযুক্ত (সাময়িক বন্দোবস্ত) ৪. বর্তমান বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আছে এমন, নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে প্রকাশিত (সাময়িকপত্র)। আর সাময়িকের এর স্ত্রীবাচক শব্দ হলো—সাময়িকী। যার আভিধানিক অর্থ বর্তমান সময়ের ঘটনাবলী বা প্রসঙ্গ, কালোপযোগী বিষয়। সাময়িক অথবা সাময়িকী শব্দের অর্থের মধ্যেই ধরা রয়েছে এর বিষয়। এখানে যে সাময়িকীর কথা বলছি, তা সাহিত্যবিষয়ক। বর্তমান সময়ের সাহিত্য যেখানে ধরা থাকে। আমাদের সাহিত্যে সাময়িকপত্রের ইতিহাস অনেক পুরনো। সেই হিসেবে সাহিত্য সাময়িকীরও।
সাময়িকপত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্ক মুদ্রণশিল্পের। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে সাময়িকপত্রের ধারণাই আসেনি। লিপি আবিষ্কারের পর মৌখিক সাহিত্য লেখ্য রূপ পেয়েছে। সেই লেখ্য রূপও দুষ্প্রাপ্য। কারণ হাতে লেখা সাহিত্য—অসংখ্য কপি করে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। উপায়ও ছিল না। একটি লেখার বড় জোর কয়েকটি কপি হতো। কখনো তাও হতো না। মুখে মুখে ছড়িয়ে থাকা সাহিত্য মুদ্রণযন্ত্রের কল্যাণে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেলো। সেই সুযোগ থেকেই এলো সাময়িকপত্রের ধারণা।
১৭৮০ সালের ২৯ জানুয়ারি জেমস আগাস্ট হিকি প্রকাশ করলেন প্রথম সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’। এটি ছিল ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র। বাংলা সাময়িকপত্রগুলোর প্রকাশ শুরু হয় ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে। উপমহাদেশের অন্যান্য ভাষার চেয়ে বাংলা ভাষাই প্রথম মুদ্রণ যন্ত্রের সুফল ভোগ করে সংবাদপত্র, সাময়িকী প্রকাশে এগিয়ে যায়। বাংলাদেশে সাময়িকপত্রের শুরু মূলত ১৮১৮ সাল থেকে। এ সময় প্রকাশ প্রায় সবই ছিল সাপ্তাহিক, পাক্ষিক অথবা মাসিক সংবাদপত্র। ১৮১৮ সালের এপ্রিলে জন ক্লার্ক মার্শমানের সম্পাদনায় বের হয় বাংলা বর্ণমালায় মুদ্রিত সংবাদপত্র ‘দিগ্দর্শন’। মার্শমানের হাত ধরেই একই বছর প্রকাশ হয় বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদ সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’। তারপর ১৮১৮-এর জুনে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য—যিনি প্রথম বাঙালি সম্পাদক, তার সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘বাঙ্গাল গেজেটি’। আর বাংলায় প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় কবি ঈশ্বরগুপ্তের হাত ধরে। ১৮৩৯ সালে তিনি সংবাদ প্রভাকর নামে দৈনিক পত্রিকার প্রকাশ করেন। সংবাদপত্রে বা সাময়িকপত্রে শুধু ধর্মীয় চেতনাকে ধারণ করার যে ধারণা তা থেকে বেরিয়ে আসে ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’। প্রভাকরকে ঘিরেই সংবাদের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চার শুরু। তিনি সংবাদপত্রের ইতিহাসে যে নতুন গতির সঞ্চার করলেন, তা আমাদের সাহিত্যের ধারাতেও নতুন প্রাণ সঞ্চার করলো।
আমাদের সংবাদপত্র, সাময়িকীর এই যে উত্থানপর্ব, তা আর পেছনে ফিরে যায়নি। এরপর একে একে বিভিন্ন জনের হাত ধরে প্রকাশিত হয়েছে একের পর এক সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র। সেই ঊনিশ শতকের গোড়াতেই নানা বিষয়ভিত্তিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ১৮২২ সালে জীবজন্তু বিষয়ক সাময়িকী ‘পশ্বাবলী’, ১৮৩১ সালে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার তাগিদ থেকে ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ১৮৩২ সালে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘বিজ্ঞান সেবধি’ নামে সংবাদপত্র প্রকাশ হয়। সাময়িকপত্র হিসেবে প্রকাশিত এরকম অসংখ্য কাগজ প্রকাশের ধারাবাহিকতা থেকেই দৈনিকের প্রকাশ। ধীরে ধীরে বিষয় বৈচিত্রে সমৃদ্ধ সাময়িকপত্রের যুগ শেষে সংবাদপত্র জগতের প্রায় পুরোটাই দখল করে নেয় দৈনিক। এর মাঝেই পেরিয়ে যায় প্রায় দুইশত বছর। মুদ্রণযন্ত্রের ধারণায়ও বিপ্লব সাধন হয়। মুদ্রণযন্ত্রের সঙ্গে যোগ হয় কম্পিউটার। সাদাকালোর যুগ থেকে রঙিন যুগে প্রবেশ করে সামিয়কী, সংবাদপত্র।
সংবাদপত্র প্রকাশের সঙ্গে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের ইতিহাসও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। সংবাদপত্রগুলো একদিকে যেমন আমাদের গদ্যের সূচনাপর্বে, গদ্যের গঠন ও সরলীকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছিল তেমনিভাবে সাহিত্যের ক্ষেত্রেও নতুন স্বরকে ধারণ করছিল। একইসঙ্গে সংবাদপত্র ঘিরেই তৈরি হচ্ছিল সাহিত্যআড্ডা, গড়ে উঠছিল নির্দিষ্ট লেখক গোষ্ঠী। এর উদারহণও সেই ঊনিশ শতকের গোড়া থেকেই শুরু। জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকাকে ঘিরে যেমন হিন্দু কলেজের প্রগতিশীল ছাত্রদের দল—যারা ইয়ংবেঙ্গল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, তারা একত্রিত হয়। এমনিভাবে অক্ষয় কুমার দত্তের সম্পদনায় ১৮৪২ সালে প্রকাশিত সাময়িকপত্র ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা, ১৮৫৪ সালে ডিরোজিও’র অন্যতম শিষ্য ইয়ংবেঙ্গল দলের প্যারীচাঁদ মিত্রের সম্পাদনায় ‘হিতকরী’, ‘মাসিক পত্রিকা’, ১৮৪৭ সালের প্রকাশিত পূর্ববঙ্গের প্রথম সংবাদপত্র ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’, ১৮৬১ সালে প্রকাশিত কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায় ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ‘ঢাকা প্রকাশ’, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাংলা পাঠশালার শিক্ষক কাঙ্গাল হরিনাথের সম্পাদনায় ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত মাসিক ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’কে ঘিরে গড়ে উঠতে থাকে এক একটি গোষ্ঠী।
একইভাবে উল্লেখ করা যায়, ১৮৩১ সালে শেখ আলিমুল্লাহর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র, ১৮৪৬ সালে মৌলভী ফরিদুদ্দীন খাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘জগদুদ্দীপক ভাস্কর’, ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের সম্পাদনায় ‘আজীজন নেহার’, ‘হিতকরী’, শেখ আবদুর রহিম সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘সুধাকর’, ১৯২২ সালে শেখ আবদুর রহিম সম্পাদিত ‘মিহির’, ‘মিহির ও সুধাকর’, ১৮৯৮ সালে এস কে এম মহম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত ‘কোহিনুর’, ১৯০০ সালে মোজাম্মেল হক সম্পাদিত ‘লহরী’, ১৯০৩ সালে সৈয়দ এমদাদ আলী সম্পাদিত মাসিক সাহিত্যপত্র ‘নবনূর’, ১৯১৮ সালে মুহম্মদ শহীদল্লাহ্ ও মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সম্পাদিত ‘বঙ্গীয়-মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’, ১৯১৪ সালে প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’, ১৯১৮ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক সাহিত্যপত্র ‘সওগাত’, ১৯১৯ সালে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও আবদুর রশীদ সিদ্দিকী সম্পাদিত মাসিক সাহিত্যপত্র ‘সাধনা’, ১৯২০ সালে মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘মোসলেম ভারত’, কাজী নজরুল ইসলাম ও কমরেড মোজাফ্ফর আহমদের সম্পাদনায় ১৯২০ সালে প্রকাশিত ‘নবযুগ’, ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত অর্ধসাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’, ১৯২৫ সালে সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘লাঙল’, কাজী আবদুল ওদুদ সম্পাদিত শিখা, পত্রিকার কথা।
‘উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের সমাজ’ বইয়ে মুনতাসীর মামুন জানিয়েছেন, ১৮৫৭ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত সময়ে পূর্ববঙ্গ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে ২৪১টি সাময়িকপত্র-সংবাদপত্র। আর ১৯৪৭-৭০ সময়কালে প্রকাশিত সাময়িকপত্রের সংখ্যা ৫০০ বলে উল্লেখ করেছেন শামসুল হক তার বাংলা সাময়িকপত্র (১৯৪৭-৭০) গ্রন্থে। দেশভাগের পর বাংলাদেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে সাময়িকী এবং সংবাদপত্র প্রকাশের যে নতুন ধারার সূচনা হয় ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তা সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে। ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে ২৮১টি পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী আত্মপ্রকাশ করে বলে শামসুল হকের ‘বাংলা সাময়িকপত্র (১৯৭২-৮২)’ তে বলা হয়েছে। এসব সাময়িকপত্র এবং সংবাদপত্রের পাতায় লেখকরা তাদের চিন্তা উন্মুক্ত করেছেন। পরবর্তীকালেও এই ধারাবাহিকতা রয়ে যায়। বিভিন্ন সাময়িকী অথবা সংবাদপত্রকে ঘিরেই গোষ্ঠীবদ্ধ হতে থাকে লেখকরা। তারা পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন সেই সাময়িকীর গোষ্ঠী পরিচয়ে। ইয়ংবেঙ্গলের মুখপত্র যেমন জ্ঞানান্বেষণ, তেমনিভাবে একে একে কল্লোল, শিখাকে ঘিরেও তৈরি হতে থাকে এরকম লেখক গোষ্ঠী। এইসব সাময়িকপত্র ঘিরেই লেখকদের চিন্তার জগত উন্মোচিত হতে থাকে। পাঠক পরিচিত হয়ে উঠতে থাকে সাহিত্যের নতুন বাঁকের সঙ্গে। এই ধারা এখনো রয়েছে। তবে সাময়িকী বা সংবাদপত্রের যেহেতু চরিত্র বদল হয়েছে, তাই গোষ্ঠীবদ্ধতারও বদল ঘটেছে।
সংবাদপত্রের সংবাদকেই এখন প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে পাঠকের চাহিদার কথা বিবেচনায় এনে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন মূল কাগজের সঙ্গে বাড়তি হিসেবে প্রকাশিত হয় বিভিন্ন ফিচারপাতা। তারই একটি সাহিত্য সাময়িকী। রবিবাসরীয় নামে পরিচিত হয়ে ওঠা একসময়ের দৈনিকের সাহিত্যপাতাগুলো এখন সাময়িকী নামে পরিচিত। সপ্তাহের একদিন—অধিকাংশ দৈনিকে সাধারণত শুক্রবার প্রকাশ হয় এই সাময়িকী। প্রতিদিনের দৈনন্দিন খবরের সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহের একদিন সাহিত্যপিপাসু পাঠকের জন্যই এই আয়োজন। যা আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায়, বিশেষ করে নামকরণ থেকে সাময়িকীতে বর্তমান সময়ের সাহিত্যই ধরা থাকবে।
অসংখ্য সংবাদপত্রের ভিড়ে প্রচারসংখ্যায় এগিয়ে থাকা যে দৈনিকগুলোর সাময়িকী প্রতি শুক্রবার আমাদের হাতের নাগলে আসে, তাতে চোখ বোলালে দেখা মিলবে সাহিত্যের নানা শাখার। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, বই আলোচনার মতো গৎবাঁধা বিষয়ের বাইরে কখনো কখনো কোন কোন সাময়িকী বাইরের বিশ্বের সাহিত্যের খবর পরিবেশন করে। সেখানেও ধরা থাকে সাম্প্রতিক বিষয়ই। তবে সামিয়কীগুলোতে যেসব গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ পরিবেশিত হয়, তাকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বলা যাবে কিনা, তাকে প্রশ্নের উর্দ্ধে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে তর্ক হতে পারে।
সংবাদপত্রের প্রাথমিক ইতিহাসে যেসব সাময়িকীর কথা আমারা জেনেছি, তাদের যে ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ সেই ধারাবাহিকতা কিন্তু আজকের সাময়িকীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। খুব বেশি দিন আগের কথাও না, আমাদেরই এখন পর্যন্ত প্রকাশের আলোয় থাকা দৈনিকের সাহিত্যপাতাও যে দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে, তা আজকে নেই। মাত্র কয়েক দশক আগেও দৈনিকের সাহিত্যপাতা সাম্প্রতিক সাহিত্যের ধারা প্রকাশের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। এ কথা বললে খুব বেশি বলা হবে না, সাময়িকীতে এখন গৎবাঁধা যে সাহিত্য প্রকাশিত হয়, তাতে নতুনের ছোঁয়া নেই—নেই প্রতিনিধিত্বের সুযোগ। একসময় যেমন রাজা-মহারাজারা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন, এখন তো তাতেও পরিবর্তন এসেছে। শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক বদলেছে। বদলেছে পাঠকের রুচি। কিন্তু পাঠকের বদলে যাওয়া সেই রুচির প্রতিফলন সাময়িকীতে কি মেলে? যে গল্প যে কবিতা, যে বই আলোচনা দিয়ে সামিয়কীর পাতা ভরানো হয়, তা কি চিত্তের খোরাক মেটায়?
প্রশ্নের উত্তর হ্যা বোধক হলে—হয়তো আমাদের সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাময়িকীগুলোকেই আজ চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু সম্ভবত উত্তরটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে না বোধক বলেই হয়তো সাময়িকীগুলো সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠতে পারেনি। তাই কোনো সাময়িকীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠেনি কোনো লেখকগোষ্ঠী। গড়ে ওঠেনি নতুন চিন্তার ধারা।