পাঠের অভ্যাস থাকলেও লেখার অভ্যাস ছিল না। পাঠের অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে যখন মনের কথাগুলো প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকলো, তখন পাঠের ব্যপ্তিও বাড়তে শুরু করলো। সেইসঙ্গে হাতের কাছে যা পাই, তাই পড়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকলো পাঠের রুচি। সঙ্গে উড়ু-উড়ু মন থেকে ঘুরে বেড়ানোর নেশা থেকে যে আড্ডার তাড়না, তা থেকেই আসতে শুরু নতুন বইয়ের খোঁজ। সাহিত্যসম্পর্কিত আলোচনা থেকেও চোখে পড়তে শুরু করেছে নানা বইয়ের খবর। সেইসব অভিজ্ঞতা আর অভিজ্ঞতাহীনতার মধ্য দিয়েই আমার সঙ্গে পরিচয় হুমায়ুন কবিরের।
প্রাথমিক পর্বে নাম শুনে মনে করেছিলাম, হুমায়ুন কবির! আচ্ছা, জানি তো, চতুরঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক। বিখ্যাত লেখক, জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এই ভুল ভাঙলো আলোচনা আরেকটু গড়াতে। অগ্রজ কয়েকজন কবির সঙ্গে আড্ডায় হঠাৎ-ই কোনো এক প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবিরের নাম উচ্চারিত হয়েছিল। আর তা থেকেই আমার এই বিভ্রম। পরে, ওই আলোচনাতেই জানলাম, আলোচ্য হুমায়ুন কবির, অবিভক্ত ভারতের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক, সম্পাদক হুমায়ুন কবির নন। ইনি বিশ শতকের ষাটের দশকে আভির্ভূত একজন কবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র কয়েক মাস পরেই ঘাতকের গুলিতে নিহত হন। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী বোহেমিয়ান সাহিত্যিকদের সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতায় সচেতন ভাবে যে বাঁক বদলের চর্চা শুরু হয়েছিল, হুমায়ুন কবির সেই ধারার অগ্রপথিক। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে সমমনাদের নিয়ে স্বাধীনতার আগে গঠন করেছিলেন ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ যা পরে হয় ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’। এ সংগঠনের তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। এটুকুই—এরপর সেদিনের আলোচনায় আর কিছু জানা হয়নি। কিন্তু নামটি মনের মধ্যে গেঁথে ছিল। তার প্রকাশিত বইয়ের খোঁজও জানতে পারিনি অনেকদিন। তবে নামটি মনের মধ্যে গেঁথে থাকায় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিক ‘কণ্ঠস্বর’-এর একটি পুরনো সংখ্যা সম্ভবত সংখ্যাটি ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত—সেই সংখ্যায় পরিচিত অনেক নামের মধ্যে পেয়ে যাই হুমায়ুন কবিরের একটি কবিতা। ‘পার্শ্ববর্তিনী সহপাঠিনীকে’ শিরোনামের কবিতাটি আমাকে চমকে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের ভেতরে চেপে থাকা আগ্রহকেও উস্কে দেয় বহুগুণ। তার আরও আরও কবিতা পাঠের জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে মন। তার সম্পর্কে জানার আগ্রহও তৈরি হয়। এখন তো হাতের কাছেই তথ্যভাণ্ডার। হাত বাড়ালেও সুলভে মেলে তথ্য। সেই তথ্যভাণ্ডার থেকেই জেনেছি—১৯৪৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী হুমায়ুন কবির বরিশাল জেলায় বেড়ে উঠেছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় সম্মানসহ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বাংলা একাডেমিতে গবেষণা করেছেন ‘সাম্প্রতিক জীবন চৈতন্য ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা’ বিষয়ে। প্রগতিশীল ও বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই কবি স্বাধীনতার পর প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এ সময়েই তিনি পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পার্টির প্রধান নেতা সিরাজ সিকদারের সংগে পার্টির কর্মসূচির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। গোপন রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য এসময়ে তিনি সরকারের রোষানলে পড়েন, গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকায় ফিরে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি নিজের প্রথম কবিতার বই ‘কুসুমিত ইস্পাত’ প্রকাশের জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরিসহ বইয়ের কবিতাগুলো পরিচর্যা শুরু করেন। এরমাঝেই পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বে ১৯৭২ সালের ৬ জুন আততায়ীর গুলিতে ঢাকায় নিহত হন। ফলে তার বইটি দেখে যাওয়া হয়নি। ৭৪টি কবিতা নিয়ে বইটি প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পর। এই একটি মাত্র কবিতার বইয়ের মধ্য দিয়েই স্বল্পায়ু হুমায়ুন কবির বাংলা সাহিত্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। পরবর্তীকালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘হুমায়ুন কবির রচনাবলী’তে স্থান পেয়েছে ‘রক্তের ঋণ’ নামে তার আরও একটি কাব্যগ্রন্থ। এই বইয়ে তার উদ্দীপনামূলক, গণ-জাগরণমূলক কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে। রচনাবলীতে ‘অগ্রন্থিত কবিতা’ নামেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার আরও কিছু কবিতা স্থান পেয়েছে। তবে হুমায়ুন কবির ‘কুসুমিত ইস্পাত’ কাব্যগ্রন্থের কবি হিসেবেই চিহ্নিত ও পঠিত। কবিতা ছাড়াও তার লেখা কিছু প্রবন্ধ এবং গল্পও রয়েছে।
দুই.
আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে দুই বার। ১৯৪৭ সালে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে দেশের মানুষ প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পায়। এই স্বাধীনতা মানুষকে স্বপ্নবান করে তোলে, স্বাপ্নিক করে তোলে। তবে দেশ বিভাগের এই পর্বে বাংলাভাষাভাষী অঞ্চলটিও ভাগ হয়ে যায়। ভাষার আত্মীয়তা ভাগ হয়ে যাওয়ায় মানুষ নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। নিজেদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়াসী হয়। পাকিস্তান নামক একটি অচেনা ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রের অংশ হয়েও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান—আজকের বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের নতুন পরিচয়ের সন্ধানে প্রত্যয়ী হয়। কারণ ১৯৪৭-এ এসে বাঙালির ভৌগলিক অবস্থান স্পষ্ট হয়। তাই নিজেদের সংস্কৃতির জায়গাটাকে সে পরিপূর্ণতা দিতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু এই স্বপ্নযাত্রার পথ মসৃণ না থাকলেও নিজেদের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার পেছনে যে ধর্মান্ধতা এবং আবার পরাধীনতার শেকল পায়ে জড়িয়ে পড়েছে তা বুঝতে বাঙালির সময় লাগেনি। ১৯৪৮-এ স্পষ্ট হয়ে যায় বিভাজনের রেখা। বাঙালির সংস্কৃতির ওপর আঘাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালির নিজস্বতার অনুসন্ধানপর্ব। পুরো পঞ্চাশের দশক জুড়ে বাঙালি সাংস্কৃতিক যে লড়াই চালিয়ে গেছে তারই পরিপূর্ণতা আসে ষাটের দশকে। ইতোমধ্যে ভাইয়ের রক্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে মায়ের ভাষার অধিকার। সেই লড়াই, অধিকারের পথ ধরেই ষাটের দশকের যোগসূত্র। পুরো ষাটের দশক জুড়েই চলতে থাকে সমাজ, রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ ও পালাবদলের সংগ্রাম। যার ফলে ১৯৭১ সালে আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করি। রক্তের বিনিময়ে এই ভূখণ্ডের মানুষ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার পায়, দেখা পায় নতুন মানচিত্রের।
তিন.
সমকালীন অন্য শক্তিমান কবিদের মতো নিজের করে বলার ভাষা তৈরি করে নিতে চেয়েছেন হুমায়ুন কবির। এজন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন, আত্মকেন্দ্রিকতার সঙ্গে সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে দিয়ে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন আলাদা পথ। সেই পথেরই সন্ধান পাওয়া যায় ‘কুসুমিত ইস্পাতে’।তার সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় জীবনের জটিল আবর্ত পেরিয়ে কবিতা হয়ে উঠতে চাইলো আত্মজৈবনিক। কবিতাকে জনতার কাতারে পৌঁছে দিতে তার বিষয় হয়ে উঠলো জীবনের অংশ। ফলে গণমানুষের পদচারণায় মৃত্তিকালগ্ন হয়ে উঠতে লাগলো তার সময়ের বাংলা কবিতা। হুমায়ুন কবির বাংলা কবিতার রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক অনুষঙ্গ ধারণ করেই জীবন্ত হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন পাঠকের কাছে। ফলে আধুনিক কবিতার প্রসঙ্গে যে বিভ্রান্তি তা অতিক্রম করেই ‘কুসুমিত ইস্পাত’-এর কবিতা হয়ে উঠলো পাঠকের মনোবিচরণের ক্ষেত্র। তার কবিতায় উঠে আসলো জীবনের জয়গান আর প্রগাঢ় প্রেমানুভূতির আর্তি। কবিতার শরীর নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি দ্রোহের ভাষাকে এড়িয়ে উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও শব্দনির্মাণে হয়ে উঠতে থাকলেন জীববনান্দীয় পরিমণ্ডলের অধিবাসী। হুমায়ুন কবিরের কবিতা হয়ে উঠলো চেতনার নিঃসংকোচ প্রকাশ। কি আত্মকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা কি সময়ের সরব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রকাশ—সবখানেই তার কবিতা হয়ে উঠেছে হতাশা আর অন্ধকারচ্ছন্নতার বিপরীতে নতুনের অনুপ্রেরণার।
আনন্দ, যেও না তুমি, বড় ভয় হয় অন্ধকারে
আমাদের চারিদিকে ছায়ার জটলা, আজ রাতে
চাঁদ উঠবে না, মলিন বাতাস পৃথিবীর সকল খিলানে
তুলছে মর্মরধ্বনি; রাতের শ্মশানে জলপায়রার মৃদু ডাক।
যেমন অস্থি কাঁপায়, থামায় রক্তের কোলাহল।
আনন্দ, যেও না তুমি, বড় ভালোবাসি ওই আলোজ্বলা মুখ
আমার শিয়রে বস, হাত ধর, পৃথিবীতে তমসা ও ভয়।
আনন্দ যেও না তুমি, আমাকে সাহস দাও, ভালোবাস
বল কি সুর বাজাব, আঁধারকে করব আঘাত।
(আনন্দ, যেও না তুমি)
হুমায়ুন কবির মাটি-মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কবিতায় আপন অভিব্যক্তি তুলে এনেছেন। এছাড়া তার কবিতায় ভর করে আছে স্থিত জীবনদর্শন। রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন হুমায়ুন কবিরের কবি মন প্রেমচেতনাকে নিরাসক্ত দৃষ্টিতে দেখেনি।
কি আর এমন ক্ষতি যদি আমি চোখে চোখ রাখি
পদাবলী প’ড়ে থাক সাতাশে জুলাই বহুদূর
এ্যাখোন দুপুর দ্যাখো দোতালায় পড়ে আছে একা
চল না সেখানে যাই। করিডোরে আজ খুব হাওয়া
বুড়ো বটে দু’টো দশে উড়ে এল ক’টা পাতিকাক।
স্নান কি করনি আজ? চুল তাই মৃদু এলোমেলো
খেয়েছ ত? ক্লাশ ছিল সকাল ন’টায়?কিছুই লাগে না ভালো; পাজামা প্রচুর ধুলো ভরা
জামাটায় ভাঁজ নেই পাঁচদিন আজ।
তুমি কি একটু এসে মৃদু হেসে তাকাবে সহজে
বলনি ত কাল রাতে চাঁদ ছিল দোতালার টবে
নিরিবিলি ক’টা ফুলে তুমি ছিলে একা।সেদিন সকালে আমি, গায়ে ছিল ভাঁজভাঙা জামা
দাঁড়িয়ে ছিলাম পথে হাতে ছিল নতুন কবিতা
হেঁটে গেলে দ্রুত পায়ে তাকালে না তুমি
কাজ ছিল নাকি খুব? বুঝি তাই হবে।ওদিকে তাকাও দ্যাখো কলরব নেই করিডোরে
সেমিনার ফাঁকা হল হেডস্যার হেঁটে গেল অই।
না—না— যেও না তুমি চোখে আর তাকাব না আমি
বসে থাকি শুধু এই; এইটুকু দূরে বই নিয়ে
এ টেবিলে আমি আর ও টেবিলে তুমি নতমুখী
(পার্শ্ববর্তিনী সহপাঠিনীকে)
তার সময়ের কবিরা যেমন রাজনীতি সচেতনতার কারণে রাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন রাগী, সাহসী উচ্চারণে। তেমনি প্রেমের প্রকাশে তাদের মানসপট আপ্লুত হলেও তাতে হতাশা এবং অপ্রাপ্তি ভর করেছে। সর্বগ্রাসী ভালবাসায় যেমন হারানোর বেদনা থাকে, বিচ্ছিন্নতার আভাস থাকে, তারই প্রকাশ হয়ে ওঠে অস্তিত্ব সংকটজনিত অস্থিরতা। ফলে যে অবক্ষয় যে নেতিবাচকতা ভর করেছিল সবখানে, তার থেকে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে হুমায়ুন কবিরের কবিতা। সব নেতির পরও তিনি আগাম-সম্ভবনাকে ধারণ করেছেন। অন্ধকারের ভেতর দিয়ে সমস্ত নেতিবাচকতা, সমস্ত বিশৃঙ্খলা, সমস্ত অস্তিত্বহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে চারদিকের গাঢ় অন্ধকারের ভেতরেও তিনি জীবনের অনিঃশেষতার কথা বলেছেন:
গোপন মোমের মতো জেগে থাকে তোমাকে স্পর্শের স্মৃতি।
যেন উজ্জ্বল দেবালয়ে আমি শান্ত স্নিগ্ধ
খরার দাহন গেলে পাখীটির মতো ধীরস্থির;
তুমি এক আনত কুসুম লজ্জায় আরক্ত মুখ
থরথর সকল কানন।
লজ্জা ভোল, বিধুমুখী, দ্যাখো জ্বলে গোপন প্রদীপ।আমাকে দহন কর, পুষ্পের বিনম্র শিখা জ্বালো
দ্যাখো নামে মেঘছায়া, তৃণময় মাঠে সন্ধ্যার বিমর্ষ কান্তি
লোকালয়েও কোলাহল নেই; একটি একাকী পাখী
উড়ে গেল মদির মৃদঙ্গে
নামাও আনত মুখ, বিধুমুখী, এই বক্ষ ’পরে
প্রেম ছাড়া বড় ম্লান পৃথিবীর এই দৃশ্যাবলী।
(প্রেম ছাড়া বড় ম্লান)
আত্মবিশ্লেষণ, আত্মস্বীকৃতি, বা আত্মজৈবনিক যাই বলি না কেন—কবিতা মাত্রেই তাতে এর ছোঁয়া থাকে। অন্যান্য ধারার পাশাপাশি হুমায়ুন কবির আত্মস্বীকারোক্তিমূলক কবিতাও লিখেছেন। তবে এখানেও তিনি সহজাত এবং সহজ-অনাড়ম্বর ভঙ্গিমার বর্ণনার মধ্য দিয়ে পাঠকের কাছে নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন বর্ণনার বিচিত্র অনুষঙ্গ আর ইতিবাচক প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে:
শহর বিধ্বস্ত আজ, জনপদ ভেঙে পড়ে ঘুমে
বিরল বসতি পথে চলাচল থেমে যায়; ইতস্তত হাত নাড়ে ভয়।রক্তহীন গল্প বলি, মঞ্জুভাষা শোনার সাহস
সুরভি জ্যোৎস্নার সাথে সুকঠিন অন্তর্ধানে গেছে।
স্বেদবিদ্ধ পড়ে আছে অর্বাচীনর কবিদের শব
গোলাপ নিহত আজ ঘুম আসে ফেরারী আলোকে।এখন আমরা সব ছিন্নভিন্ন কুড়োজালি হাতে
কোন মতে টিকে থাকি, এসো, কোন মতে
নিহত জ্যোৎস্নারা থাক কটিতটে ছিন্ন একতারা
ভাঙুক সাধের ফুল, বাগানের স্নিগ্ধ মধুকরী
শহর বিধ্বস্ত আজ, বেঁচে থাকি, এসো, কোন মতে।
(ঘুম)
সমাজ আর মানবতার বিপর্যয়ের মাঝেও হুমায়ুন কবির আলোর রেখা দেখতে পেয়েছেন। আর এই বিশ্বাস উপমা, উৎপ্রেক্ষায় শব্দে-গন্ধে মেখে ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতায়। যা হয়ে উঠেছে দুর্দান্ত—চিত্রকল্পে ব্যক্তিত্ব প্রকাশে স্পষ্ট। যা ইস্পাত সময়ের মধ্যেও তাকে করে তুলেছে সত্যিকার অর্থেই কুসুমিত।