সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ জীবনশিল্পী, না কি মৃত্যুর শিল্পী? এ প্রশ্নটি ডিমের খোসা ভেঙে বেরিয়ে আসা পাখির ছানার মতো চোখ তুলে তাকায় তাঁর রচনাবলি পাঠকালে। এড়ানো যায় না, ঘুরে ঘুরে আসে। তাঁর গল্প এবং উপন্যাসে জীবনের চেয়ে মৃত্যুকেই তিনি নতুন ভাষিকরূপ দিয়েছেন সযত্নে। তবে কি তিনি জীবনের কথা লেখেন নাই? না লিখে তো পারা যায় না, কারণ, মৃত্যু তো জীবনেরই যতিচিহ্ন। না, রূপকটি ঠিক হলো না; কারণ, বাক্যের সম্পূর্ণতার পরে পূর্ণ যতি আসে, কিন্তু জীবনের পূর্ণতার পরেই মৃত্যু আসবে কিনা তা কেউ জানে না। প্রাণীমাত্রেরই মৃত্যু আছে জেনেও জীবনগুলো মৃত্যুর উল্টাদিকে তাকিয়ে থাকে, আর সেটাই জীবন। এক্ষেত্রে আত্মহননের কথা ভিন্ন, সেই মৃত্যুপদ্ধতি ছাড়া প্রতিটি প্রাণীই সবার আগে বাঁচতে চায়।
মানুষ ব্যতিত অন্য কোনো প্রাণী স্বজাতিকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা কিংবা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে নাই, মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমাজ সৃষ্টি করে, ধর্ম সৃষ্টি করে, বিজ্ঞান সৃষ্টি করে এবং এমন প্রত্যক্ষ কল্যাণমূলক এবং সৌন্দর্যমূলক নানা বিদ্যার জন্ম দিয়েছে, যা পরোক্ষভাবে মানুষকে সুন্দরভাবে ও সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর প্রয়াসহিসাবে প্রয়োজনীয়। সেসব প্রয়াস যখন মানুষের ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণের পথকে প্রশস্ত করে, মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে পারে না, তখন প্রশ্ন না উঠে পারে না যে, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই যে মানুষের সাধনা, কয়েক হাজার বছরের যে সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতা তা কি ব্যর্থ হচ্ছে? কেন হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের জন্যই সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ লিখছেন, তিনি না লিখে পারেন না, তাঁকে জানতেই হবে, কেন আমাদের সমাজে সকল মানুষ ‘সকল’ হয়ে উঠতে পারছে না, কেন শুধু ‘কেউ কেউ’ নিজেকে সকল মানুষহিসাবে দাবি করছে, দাবি করে সকল অধিকারকে গ্রাস করে নিচ্ছে।
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ কেন সৌন্দর্য অনুসন্ধান করার চেয়ে ওই বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ভাবিত, তা তাঁর নিয়মিত পাঠকমাত্রই জানেন। যদিও তিনি সেই আশির দশক থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের লেখক; তিনি লিটল ম্যাগাজিন ছাড়া অন্য কোথাও লেখেন না। তিনি ওই দশকের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনকে গতিশীল করে তোলা, কার্যকর করে তোলা এবং শিল্পসম্মত করে তোলার মতো ওপরকাঠামোর কতগুলো বিষয় ছাড়াও সাহিত্যকে পুঁজিবাদীদের জনপ্রিয়তালোভী বড় কাগজের পেছনের গোপন উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার নিরন্তর সংগ্রামে শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন, এখনও আছেন। রচনার বিষয় এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের দিক থেকে লেখকদের তিনি দুই শ্রেণীতে ভাগ করে নিয়েছেন নিজের মতো করে,
যে লেখক, সে লেখে। কেরানিও লেখে। ইংরেজিতে লেখককে বলা হয় রাইটার।
কেরানিদের ভূমিকা নিজস্ব গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ, নিজেকে কানো বিষয়ের সঙ্গে জড়াতে হয় না, দায়িত্ব নিতে হয় না, স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন নাই, দশটা পাঁচটা করলেই চলে। বস খুশি তো আর নাই চিন্তা।
একজন লেখক নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিষয় নির্বাচন করেন, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ন করেন, তারপর প্রকাশ ঘটে যথাযথ শিল্প প্রক্রিয়ায়।১
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ কথাসাহিত্যের জায়গাতেই সৃজনলীলা চালিয়ে গেছেন, গল্প এবং উপন্যাস রচনার পেছনেই তিনি জীবন-যৌবন ব্যয় করে গেছেন। নিবিড় সাধনার মাধ্যমে তিনি ছোট কাগজের পৃষ্ঠায় লিখে গেছেন বিকল্পরচনাগুলো, তাঁর গল্প এবং উপন্যাসগুলো নিজস্ব ভাষা, স্বকীয় ভঙ্গি এবং বিষয়বস্তুর সার্বভৌমত্বে বাংলা সাহিত্য একটি চিরায়ত চিহ্ন হয়ে থাকার মতো। কথাসাহিত্যের আঙ্গিকতায় নানা প্রশ্ন জেগে ওঠে, সেসব জিজ্ঞাসার উত্তরও লেখকমনে নানা সময় জেগে ওঠে, সেগুলোও তিনি প্রবন্ধাকারে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর তালিকার দিকে একটু দৃষ্টি দিলে একটা ধারণা পেতে পারি।
গল্পগ্রন্থ: আগুনের বিপদ-আপদ (১৯৯৪), শাদা কাহিনী (১৯৯৬), লাশ নাই (১৯৯৯), গল্প অন্যান্য ও ছবিলেখা (২০০৬)।
উপন্যাস: অমিমাংসিত আলো-আঁধারি/ পিতৃপুরুষগণ অথবা ইতিহাসের মানুষজন (২০১২), বিস্তারিত অথবা বিস্মৃতি (২০১৩), জ্যোৎস্নায় এক প্রাচীন নৌকা (২০১৬), হাতিয়ারওয়ালা (২০১৭), কুসুম কথা অমৃত (২০১৭), ইতি তোমার মুজিব (২০২৭)।
প্রবন্ধগ্রন্থ: রক্ত অনুষঙ্গ (২০০৬), তামাদিপাতা ও ভাষার আঙ্গিক (২০০৮), সৈয়দ শামসুল হক: আমাদের আধুনিকতার কয়েকটি দিক (২০১৭)।
উপন্যাস: অমিমাংসিত আলো-আঁধারি/ পিতৃপুরুষগণ অথবা ইতিহাসের মানুষজন (২০১২), বিস্তারিত অথবা বিস্মৃতি (২০১৩), জ্যোৎস্নায় এক প্রাচীন নৌকা (২০১৬), হাতিয়ারওয়ালা (২০১৭), কুসুম কথা অমৃত (২০১৭), ইতি তোমার মুজিব (২০২৭)।
প্রবন্ধগ্রন্থ: রক্ত অনুষঙ্গ (২০০৬), তামাদিপাতা ও ভাষার আঙ্গিক (২০০৮), সৈয়দ শামসুল হক: আমাদের আধুনিকতার কয়েকটি দিক (২০১৭)।
আশির দশকে ছোটকাগজকেন্দ্রিক লেখালেখির মধ্যে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ নিরন্তর কলম চালিয়ে সৃষ্টি করে গেছেন গল্প, তাঁর গল্পগুলো কি আসলে প্রথাগত রবীন্দ্রসংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত চিরায়ত ধারার ছোটগল্প নাকি কলকাতার সুবিমল মিশ্র (১৯৪৩—২০২৩)-দের প্রথাভাঙ্গা নতুন রীতির প্রতিগল্প, সে প্রশ্নটি তাঁর গল্পের তোরণের ভেতর প্রবেশ করলেই দেখবেন পাঠকের চোখে-মুখে এসে লাগবে। গল্প পড়তে পড়তে পাঠক অনুধাবন করবেন সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ কোন পথে কোন দিক থেকে এসেছেন, আর তাঁর গন্তব্যটি কোন দিকে। তাঁর গল্পের ভাষা এবং আঙ্গিকতায় সে যুগের অন্য গল্পকার কাজল শাহনেওয়াজ, সেলিম মোরশেদ প্রমুখের নাম মনে আসবে, তাঁদের সাথে কোনো কোনো দিক থেকে আপাত সাদৃশ্য দেখা গেলেও রিয়াজুর রশীদের স্বাতন্ত্র্য শনাক্ত করতে অসমর্থ হবেন না।
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের গ্রন্থনামগুলোতে দুটি ব্যক্তিনাম একেবারে স্পষ্ট হয়ে আছে, মুজিব এবং সৈয়দ শামসুল হক। এখান থেকেই বোঝা যায়, তিনি কি হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং মাহমুদুল হকদের পথের পথিক কি না। সমসাময়িক অনেক গল্পকারের রচনায় প্রথাগত এবং সুন্দর একটি গল্প বা কাহিনী থাকে, তাঁর গল্পে তা থাকে না। এ প্রসঙ্গে তাঁর নিজস্ব মতটি জেনে নেওয়া যাক,
বেশিরভাগ কেরানি-লেখক। যারা কোনো ঘটনা, চরিত্র বা দৃশ্য যা কাছে পায়, বা শোনা যায় তখন তা নিয়ে অনুলিপি করে সুন্দর প্রসাধন লাগিয়ে পাঠকের দরবারে ফেলে দেয়।
সাহিত্য সৃষ্টি হলো নির্মাণ কাজ। বিষয়টি মনে মনে বপন পাওয়ার পর তা গঠন সম্পন্ন করতে নির্মাণ লীলার আশ্রয় নিতে হয়। আর তখনশিল্পী হয়ে ওঠে লেখক।
যে-কোনো সৃষ্টি, তার রূপদানের জন্য শরণাপন্ন হতে হয় শিল্পের। এমনকি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে তার শিল্পভাবনা প্রতিফলিত করতে দরকার মায়ার জগৎ।২
এই যে, তাঁর প্রবন্ধটির শিরোনামের প্রথম শব্দবন্ধ ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’, এটি তাঁর সাহিত্যকে শনাক্ত করতে বিশেষ সহায়তা করে। তিনি গল্পে, উপন্যাসে এবং প্রবন্ধসাহিত্যে আমাদের মনেজাগা এবং না-জাগা প্রশ্নগুলোকে তুলে আনেন। প্রথমেই ধরা যাক উপন্যাসের কথা:
ছায়া-আবছায়া: কলকাতাকেন্দ্রিক এ উপন্যাসটি জীবন্ত একটি সত্তা। এটি বিশ শতকের শুরু যাত্রা শুরু করে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ্বেরও অনেকখানি এগিয়ে এসেছে হাজার বছর ধরে পথ হাঁটার মতো। এই হাঁটা তো রানারের মতো বল্লম হাতে মাঝরাত্রির অন্ধকার চিরে, বল্লমবিদ্ধ সময়ের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো নয়, এই হাঁটা পরিব্রাজকের হাঁটা, সিংহলসমুদ্র থেকে মালয়সাগরে, ধূসর অশোক কিংবা আরও দূরতর বিদর্ভনগরীতে হেঁটে চলার মতো। মানে, শত শত মাইল স্থানজুড়ে ডায়াক্রনিকভাবে এবং শত শত বছর ধরে সময়ের ভেতর অন্ধকারের যোনির ভেতর দিয়ে চলার মতো সিনক্রোনিকভাবে হেঁটে চলা। এ উপন্যাসটির আকার পাঠকের চোখের সামনে একটি চতুর্ভুজ বলে মনে হবে, এর চার কোণে চারজন অস্থিরচোখ নিয়ে কিন্তু স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। জীবনানন্দ দাশ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং অদ্বৈতমল্ল বর্মণ। পাঠকের বুঝতে অসুবিধা হবে না, এই চারজনের সামাজিক অবস্থান, শনাক্ত করতে অসুবিধা হবে না তাঁদের প্রতিভার ক্ষমতা এবং আশেপাশের অনেক প্রধান এবং অপ্রধান ব্যক্তিত্ব। এই চারটি স্তম্ভ পাঠকের সামনে কথার একটি তাজমহল হয়েও দেখা দিতে পারে, যার চারটি কোণে দাঁড়িয়ে আছেন সম্রাট শাহজাহানের দারাশিকো, শাহসুজা, মুরাদ এবং আওরঙ্গজেবের মতো স্নেহধন্য চারটি অমৃতস্যপুত্র। যদি তাজমহলের ছাদের ওপর আছে বলে ধরে নেওয়া যায় মাথা উঁচু করে অবস্থান করছেন ফ্রয়েডীয় সূত্রে গম্বুজরূপী মমতাজ বেগম, তাহলে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের এই উপন্যাসে জীবনানন্দ, মানিক, সঞ্জয় এবং অদ্বৈতের মাথার ওপর গম্বুজ হয়ে কে আছেন? কেই বা এই চার অমৃতস্যপুত্রকে সন্তানহিসাবে একই ছাদের কাছাকাছি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন? তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই উপন্যাসের নায়ক হলো কাল, মহাকাল; মহাকালই এই চারজনকে সন্তানের মতো আগলে আছেন, অথবা উল্টোভাবে বলা যায়, এই চার মহাপুরুষ বিশ শতকের অর্ধাংশের ভেতর টুকরো আয়নার মতো ধারণ করে আছে মহাকাল।
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ ছায়া-আবছায়া উপন্যাসে তিনি চারটি মানবস্তম্ভকে যুক্ত করেছেন সময়ের যেসব খিলান, ছাদ, দেয়াল, মেঝে এবং ইমারতীয় উপকরণ দিয়ে, সেগুলো লেখককে সৃষ্টির চেয়ে ধ্বংসের কথা বেশি করে মনে করিয়ে দেয়। তিনি নিজে জানান,
নিরুদ্বিগ্ন বোধ করি। আমাদের ভেতরে বাস করে একেকজন জীবনানন্দ, মানিক অদ্বৈত কিংবা সঞ্জয়। রক্তের নমুনা পরীক্ষা করলে পাওয়া যাবে সে-ই ফটোগ্রাফি।
আলো ছায়া অন্ধকার। ১৯৫১ ১৯৫৪ ১৯৫৬
নিরূপণ করলে, আলো মানে অন্ধকারের অভাব; অন্ধকার হয় আলো-বঞ্চিত; আলো ও অন্ধকারের ভারসাম্য হলো ছায়া।…
মৃত্যুসন ধারাক্রম মেনে আসে নাই; জন্মের ক্রম অনুসরণ করে ক্রমে মৃত্যু আসে না। মৃত্যু তারও জীবনের ধারাক্রম অনুসরণ করে আসে নাই।৩
এরপর লেখক উল্লিখিত তিনটি বছরকে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচার করে দেখিয়েছেন, প্রতিটি বছরের যোগ ফল ১, ৩ এবং ৭। এ কারণে তিনি লিখেছেন, “বেজোড় সন জানিয়ে দিতে থাকে ODD NUMBER! ODD NUMBER!”
গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেজের শতবর্ষের নির্জনতা (১৯৬৭) রচনার কাছাকাছি সময়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় দেখেছেন এবং দেখিয়েছেন শতাব্দীর মৃত্যু (১৯৭১), তারাশঙ্করের মৃত্যুর বছরই এ বিশাল উপন্যাসে উঠে আসে শতাব্দীর মৃত্যুদৃশ্য। ঠিক একইভাবে বিগত শতাব্দীর দিকে তাকালে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের চোখে পড়ে, একজন হয়ে যায় তিনটি মানুষ। যারা একসঙ্গে চলেছে আর তাদের মধ্যে যেটি সবচেয়ে স্থির নিশ্চিত, সেটি অন্যগুলিকে ত্যাগ করেছে।
তিনি তো গপ্প লিখতে চান না, সময়ের ভাষ্য রচনা করতে চান, তাই সময়ের নেতিবাচকতা তাঁর গল্পে বারবার ফিরে ফিরে আসে।
সৈয়দ রিয়াজ এভাবেই আলো আর অন্ধকারের নিজস্ব পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করেছেন, নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে নিয়েছেন। আর সে ব্যাখ্যাই তাঁর এ উপন্যাস। এ উপন্যাসের তাজমহলের গায়ে হাজার নকশা, নিপুণ কারিগরি চিহ্ন, চৌকাঠে নকশা, কপাঠে নকশাÑএমন আরও কত কী? নিজের মধ্যবয়সের জীবন পেরিয়ে তিনি যেভাবে এ উপন্যাসে আলো-অন্ধকার, সময় আর মৃত্যুকে দেখেছেন তার কিছুটা চিহ্ন পেছনের দরোজার চৌকাঠে লেখা আছে:
মৃত্যু নিজের কানে শোনে যখন কেউ, ক্রমাগত থেমে যাবার আশঙ্কা তখন সম্মুখে; সব থেমে যেতে থাকলে একে একে স্থির হতে থাকলে, লেখকও তখন অস্থির; প্রতিপার্শ্বের স্থির বিন্যাসের জ্যামিতিক স্থানু কাঠামোর ভেতর যে স্থির, তাকে ফেলে যায় অন্যরা; আবার, এমনও হতে সক্ষম যে, যেটি সবচেয়ে স্থির নিশ্চিত, অন্যগুলিকে পরিত্যাগ করে যাচ্ছে এই একক-স্থির।৩
এভাবেই সৈয়দ রিয়াজ তাঁর উপন্যাসের ভেতর দিয়ে জীবন, জগৎ এবং সময়কে দেখে থাকেন, আর সে দেখা পাঠককেও দেখিয়ে দিতে সক্ষম তাঁর নিজস্ব ভাষাবুননে। এ উপন্যাস প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সুশান্ত বর্মণ লিখেছেন,
ইতিহাস রচনা করতে বসেননি সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ। ইতিহাসের পাতায় কার ভূমিকা কতটুকু তাও বিচার করেননি। কিন্তু ইতিহাসের বিভিন্ন কোণে পুঞ্জীভূত শক্তিমান মেঘগুলোকে তিনি একসূত্রে গাঁথেন। উল্লিখিত সাহিত্যিকগণকে নিয়ে দাঁড়ান পাঠকের সামনে। প্রত্যেক লেখকের নির্মোহ, আত্মমগ্ন, অমোঘ অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলেন। পাঠক একের পর এক ঘটনাপ্রবাহের মুখোমুখি হতে থাকে। বাংলা সাহিত্যের এক সার্বিক বিন্যস্ত সাহিত্যজীবনের একাংশ নিয়ে ‘ছায়া আবছায়া’ উপন্যাস রচিত। বাংলা সাহিত্যের জীবনগতিতে তিরিশ-চল্লিশ সালব্যাপী এক-দেড় দশকের যে অনুষঙ্গগুলো অনিবার্য ছিল, সেগুলোর প্রতিধ্বনি তুলেছেন। বাংলা সাহিত্যের জীবনযাত্রায় পুষ্টি, বঞ্চনা, প্রাপ্তির অন্তরালে যা দেখি, তা কোন একক জীবনের গল্প নয়, কোন একক সত্ত্বার প্রশংসাগাথা নয়। সকল সত্ত্বার মিথস্ক্রিয়ায় গড়ে ওঠে যে সম্মিলিত অভিযাত্রা, তার চরিত্র আঁকেন সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ। লেখকদের জীবনাভিজ্ঞতার প্রচ্ছায়ায় রচিত হয় বাংলা সাহিত্যের জীবনচিত্র। তাঁর উপস্থাপনাশৈলী পাঠক অভিজ্ঞতাকে এক বিশিষ্টতা দান করে। প্রচলিত সজ্জ্বাশৈলীর (সজ্জাশৈলী) উপন্যাসের মত নয়। ফলে উপন্যাসের শরীর নির্মাণে শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।৫
ছোটগল্প: সৈয়দ রিয়াজ গল্পেও মৃত্যুর জন্য বড় জায়গা দিয়ে থাকেন। মানবিক পাশবিক, AM I BEING A PARANOID? একটি সত্য ঘটনার রংচং চড়িয়ে গল্প, অন্নপুরাণ, জলপ্রপাতের উপাখ্যান, ২১.২.১৯৫২, খবরের কাগজে যা থাকে না, শরীরের বাজার, আক্রন্দন হৃদ-যাত্রা, আগুনবাজ, চতুর্থ দুনিয়ার মালিক, জ্বলছে শহর ভীষণ এক নেগেটিভ তীব্রতায়, উন্নয়নশীল যথা, তখন জলরাশি ছিল নোনতা এবং পোকা বোকা খেলা’র মতো গল্পগুলোতে আমাদের চেনা জীবন, চেনা জগৎ ভিন্ন চেহারা নিয়ে আমাদের সামনে ভাষিকরূপ লাভ করে।
মানবিক পাশবিক গল্পে বোনের মুখে শোনা যায় মায়ের মৃত্যু, শেষে আছে মৃত্যু নিয়ে রচিত একটা কবিতা।AM I BEING A PARANOID? গল্পটিতে আছে আছে শিশুর মৃত্যু; মনে রাখার মতো বিষয় হলো আগের গল্পে প্রবীণের এবং পরের গল্পে শিশুর জীবন মৃত্যুমুুখে পতিত হতে দেখিয়েছেন লেখক। এখানে মৃত্যু অতটা সাধারণ নয়, সাদাসিধা নয়, আছে মৃত্যুর ভেতরে জটিলতা।
যে মেয়ে মরা বাচ্চা প্রসব করে আর ইঁদুরের গর্তে শুইয়ে দিয়ে আসে শিশুর লাশ; সেই মেয়ে একদা খোলা চুলে ছাদে দাঁড়িয়ে পাশের জমিতে গড়ে ওঠা দালান দেখছিল এক নিরালা কামোত্তেজিত সে একাকী অর্গাজম ঘটিয়েছিল; দৃশ্যহীন সীমানায় তুঙ্গ স্পর্শ ও ভেতরে প্রবেশে এক প্রধান উষ্ণ সঞ্চালন শরীরের ভেতর ভূতের নামতা পড়া অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট করে শুনিয়েছিল।৬
শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সে মর্গে পড়ে আছে কালু ডোমের সামনে। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের অন্য গল্পের মতো এ-গল্পেও আছে যৌনতার নতুন উপস্থাপনা, তাঁর সাহিত্যে যৌনতা মানবজীবনের কোনো রিপুর তাড়না নিয়ে আসে না, আসে সামাজিকভাষায় একটা সর্বজনীন আলোচ্যবিষয় হয়ে। এ বিষয়ে শোয়েব শাহরিয়ার লিখেছেন ভিন্ন কথা, তিনি মনে করেন,
রিয়াজুর রশীদের গল্পে সেক্সের ব্যবহার একটু অতিরিক্ত, তাও সেটা অস্তিত্ব টিকানোর স্বার্থে, বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে। হাজার হাজার বছর নারীদেহ ভোগী পুরুষ কাম-লালসা নিবৃত্তির জন্য ব্যবহার করছে, ভোগ করেছে, আজও করছে, সেটা আমাদের জানা। নারীসত্তা অবমাননার জন্য নয়, দেহকে কলুষিত করার জন্য নয়, মাতৃত্বের মর্যাদাকে লুণ্ঠিত করার জন্য নয়, দেহকে পণ্য বানাতেও নয়, সেক্সকে ভিন্নতর মাত্রা হিসেবে, কখনো মুক্তির মন্ত্র হিসেবে, অত্যাচার-নিপীড়নের প্রতিবাদী ভাষা হিসেবে, মানবতার জ্বলন্ত শিখা হিসেবে, চেতনা পরিস্ফুটনের অপরিহার্য কৌশল হিসেবে, আত্মবলিদনের পবিত্র শপথ হিসেবে, জাতীয় স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ হিসেবে, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মাতৃত্ব, অখণ্ডত্ব, মহত্ত্ব, বিশালত্ব, শিল্পত্ব বিকাশের প্রতিমাধ্যম হিসেবে প্রত্যক্ষ করতে চাই। শুধুমাত্র বিরক্তিকর ক্লান্তিকর বীর্য স্খলনীয় বিষয় ভাবতে চাই না, অস্বস্তি লাগে, খোঁয়ারি আসে, বিবমিষার উদ্রেক করে, বিতৃষ্ণা জেঁকে বসে। ক্ষুধা একটি কঠিন সত্য এবং খাঁটি জিনিস। প্রাণ আছে, অথচ ক্ষুধা নেই এমন ভাবনাও অস্তিত্বহীন। কিন্তু ক্ষুধা যদি সর্বগ্রাসী, সর্বনেশে সত্তানাশক হয় তা হলে সে ক্ষুধা মানুষের সম্ভ্রম চূর্ণকর। ক্ষুধা যদি মানব জীবনের একমাত্র নিয়ামক হয় তা হলে প্রমাণিত হবে আমরা পাশব-অরণ্যকে বেশি দূরে পেছনে ফেলে আসতে পারিনি।৭
শোয়েব শাহরিয়ার সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের গল্পে যৌনতার বিষয়টি যেন একটু স্থ’ূলভাবে দেখেছেন, অথবা তিনি সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের সাহিত্যপাঠের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণহিসাবে উপস্থাপন করেছেন, সে অভিজ্ঞতা বর্তমান নিবন্ধকারের অভাবহেতু মূল্যায়নে অক্ষম। একটি সত্য ঘটনার রংচং চড়িয়ে গল্প-নামের গল্পের শেষে আছে বীভৎস রসের প্লাবন।
গোলকায়ন কামড়ে ধরেছে স্তনের বোঁটা। চোঁ চোঁ করে শুষে নিচ্ছে আড়াই সের দুধ। দুধের সঙ্গে রক্ত। কপিশ বর্ণ স্বদেশ আর বেশ্যা মাগী স্বপ্নে ও দুঃস্বপ্নে নিহত দুই অস্তিত্ব।৮
অন্নপুরাণ গল্পটি দুহাজার পনেরো সালে লেখা। সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অবকাঠামো, অর্থনীতিসহ সর্বত্র, সে জোয়ারের রঙিন কাচের ঝিলিক, সে সময় সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ দেখালেন ব্যষ্টি ও সমষ্টির ভেতর দিয়ে দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের প্রকটরূপ। ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা তিনি দেখাচ্ছেন সমকালের ভেতর দিয়ে মহাকালের জানালায়। এ গল্পের শেষেও আছে মৃত্যুচিত্র।
পরের দিনের পরের দিন নিউজ পেপারে টনক নাড়ানো সংবাদ পরিবেশিত হয়, ‘শহরের রাজপথে একজন বৃদ্ধের মৃতদেহের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া গিয়াছে। মনে হয় অনাহারে মৃত্যু ঘটিয়াছে।’৯ এখানে একটা লক্ষ্য করার বিষয় হলো, সংবাদে ‘মনে হওয়া’ বা ‘ধারণা করা’র মতো অনুমিত বিষয় স্থান পায় না; এটি একান্তই লেখকের মনোগত দৃশ্যের ভাষিকরূপ।
জলপ্রপাতের উপাখ্যান-গল্পের আমিনার জন্ম উনিশশ বাহাত্তর সালে, কিন্তু তার জন্মের আগে উনিশশ একাত্তর সালে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষণের প্রবহমানতা চলতে থাকে এত বছর ধরে। লেখক জানান, “উন্মত্ত শীতল ধর্ষণের সময় এই রকম হয় বাংলাদেশে, গুজরাতে, বসনিয়ায়, কোরিয়ায়, ভিয়েতনামেÑদিকে দিকে।” এখানে এশিয়া-ইউরোপের ধর্ষক এবং ধর্ষিতাদের ঘটনা ও চরিত্র লেখক একাকার করে দেখিয়েছেন, নারী আসলে কারও না কারও স্বদেশ, আর ধর্ষকেরা সর্বত্র সমশক্তিতে বিরাজমান। তবে এ গল্পটির রহস্য হলো পাকিস্তানি সেনাদের ধর্ষণজাত কন্যাশিশু ধর্ষিতা হচ্ছে বাঙালিদের হাতে।১০
ভাষা আন্দোলনের গল্প ২১.২.১৯৫২, মৃত্যুর নিপুণ শিল্পী সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ এ গল্পেও মৃত্যুদৃশ্য গল্পশেষে পাঠকের চোখের সামনে পোস্টারের মতো ঝুলিয়ে দিয়েছেন। “শব্দগাঁথা শরীরে বিদ্ধ দেহ হতে রক্ত কল্লোল তুলে ঘোড় সওয়ার নিয়ে যেতে থাকে যেতে থাকে যেতে থাকে…।”১১
শরীরের বাজার গল্পের শেষে কিন্তু লেখক বিপরীত রসসঞ্চার করেছেন। যদিও তাঁর অনালোচিত অনেক গল্পে মৃত্যুর নান্দনিক ভাষিকরূপ রয়েছে, তবে উল্টোযাত্রাতেও সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ সফল। এ গল্পের শেষে তাঁর নিজের ভাষায়:
এখন শব্দ। এখন ক্রন্দন নাই। এখন শুধু ভূ-কম্পন। এখন নিয়তি পরাজয়ের ইশতেহার ঘোষণা করলো। দুনিয়া তাই ভরে গেল আলোতে। কুচকাওয়াজ আলোর মিছিলের। সৃষ্টি মুহূর্তে একত্রিত হয়েছে নারীর সঙ্গে পুরুষটি।১২
এই পরাবাস্তব দৃশ্যের অর্থ শব্দের আভিধানিক অর্থকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইশারা দেয়।
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের গল্পগুলো কোমল, পেলব, তুলতুলে গল্পের জগতের একেবারে ভিন্ন বাগানের শেকড়গভীর বৃক্ষে জন্ম নেয়, সেখানে বেড়ে ওঠে, বড় হয়। কাজেই গতানুগতিক গল্পের বাজারে এ ধরনের গল্প পাঠকপ্রিয়তা পাবে না, আর পাঠকের মনোরঞ্জন করার জন্য তিনি লেখেনও না। তাঁর গল্প সমাজের আপাত শাদা ধবধবে ব্যান্ডেজের ভেতরকার দগদগে লাল রঙের, তাঁর গল্প থেকে দুর্গন্ধ উত্থিত হয়। তাঁর গল্প থেকে কাটাছেঁড়ার সেলাইয়ের শব্দ ওঠে, চকচকে সুঁই রক্তমাংস ভেদ করে কালো সুতা লেজে নিয়ে শূন্যে ওঠে-নামে। সময়ের আর্তনাদের মুখ চেপে ধরা গল্প এসব।
এছাড়া আক্রন্দন হৃৎ-যাত্রা, আগুনবাজ, চতুর্থ দুনিয়ার মালিক, জ্বলছে শহর ভীষণ এক নেগেটিভ তীব্রতায়, উন্নয়নশীল যথা, তখন জলরাশি ছিল নোনতা এবং পোকা বোকা খেলার মতো গল্পগুলো সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের সৃষ্টিশীলতার সাথে মননশীলতার মিশ্রমাধ্যমের কারুকাজ হয়ে আছে, সেগুলোও সচেতন পাঠকের কাছে সময়ের একেকটি মূল্যবান গুপ্তধনের নকশাহিসাবে প্রতিভাত হবে। যদিও সৈয়দ রিয়াজের গল্পপাঠে অনেক সময় একঘেয়েমি লাগতে পারে, কারণ তিনি গল্পের প্রচলিত কাঠামো এবং শর্ত ভেঙে চরিত্র, সংলাপ, প্লট ইত্যাদি উপাদানকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আখ্যানকে, কথাসাহিত্যিকহিসাবে কথাকে, বক্তব্যকে এবং প্রবন্ধসাহিত্যের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার কারণে সময়ের ভাষ্যকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
রাজনৈতিক সময়ের ফ্রেমে নেতিবাচকতা বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে, তাই সময়ের ভিন্ন মাত্রা ধারণ করার জন্য যেসব লেখক সৈয়দ রিয়াজের মতো সময় এবং সংস্কৃতির অন্ধকার দিকটির ওপর লাগানো ব্যান্ডেজ খুলে দেখাতে চান, তাঁদের গল্পে একঘেয়েমি থাকা খুবই স্বাভাবিক। রিয়াজ যদি নতুন নতুন গপ্পফেঁদে পাঠককে ভোলাতে চেষ্টা করতেন, রোমান্টিক স্বপ্নজাল বুনে পাঠককে রঙের দুনিয়ায় নিমজ্জিত করে রাখতে চাইতেন, তাহলে তাঁর গল্প হতো ভিন্ন রকম, প্রতিটি গল্পে থাকত একটি করে গপ্প, বলার মতো গপ্প, পড়ার মতো গপ্প। কিন্তু তিনি তো গপ্প লিখতে চান না, সময়ের ভাষ্য রচনা করতে চান, তাই সময়ের নেতিবাচকতা তাঁর গল্পে বারবার ফিরে ফিরে আসে।
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের কথাসাহিত্যের গোপন সূত্র এবং তাঁর পছন্দের কিংবা অপছন্দের সাহিত্যকে জানার জন্যও তাঁর প্রবন্ধগুলো অবশ্যপাঠ্য।
খুন-ধর্ষণ-নিপীড়ন-রতি-আত্মরতি-অর্গাজম-বীর্যস্খলন, রক্ত-পুঁজ এসব বিষয় তিনি দেশকালের চিরায়ত কাঁথার মতো স্তরে স্তরে রোমান্টিকতার রঙিন সুতায় করা সেলাই খুলে দেখাতে পছন্দ করেন, হয়তো পছন্দও করেন না, কিন্তু সময়ের ভাষ্যকার হিসাবে, অনিবার্য নকশাহিসাবে দেখাতে বাধ্য হন। দেশকালের দায়বদ্ধতা তাঁকে সাহিত্যের যে ধারায় অনুপ্রাণিত করেছে, কিংবা প্ররোচিত করেছেই যদি বলা যায়, তাহলেও তিনি সেখানে এসব রক্ত-পুঁজের রূপ-রস-রঙ-গন্ধ এড়িয়ে যেতে পারেন না। বিশেষ দেশকালের দৃশ্যের পাতাবাহারের আড়ালে শিরা-উপশিরায় বসে থাকা বিষধর কীটগুলোকে লুকিয়ে রেখে যাঁরা সমাজের ও সংস্কৃতির নান্দনিকতা নিয়ে আবেগে বিহ্বল হয়ে মরেন, সৈয়দ রিয়াজ সেখানে সেসব বিহ্বল লেখক-পাঠক এবং সমালোচকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে স্বকৃত, স্বচেতনাবাহিত নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে কাঁধের লাঙল কিংবা হাতের কোদাল নিয়ে রক্ত-পুঁজের খাতই খনন করে যাবেন, কারণ সেখানে আছে মাটির প্রতি ঋণপত্র, মাটির সেই দায় পরিশোধ লেখকেরই কর্ম বলে মনে করেন তিনি।
প্রবন্ধ: আশির দশক এবং ছোটোগল্পের কথকতা, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি: প্রেক্ষাপট, বিষয়, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ’, গ্রামশির দূরবীন, পারমাণবিক জমানায় অণু-গল্পায়ন, প্রেক্ষাপট ও রূপরেখা: অনলাইনভিত্তিক সাহিত্য-শিল্প আন্দোলন, ভাষা সঙ্কর্ষণ ও সংস্করণ ও দেওয়াল। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ ছোট কাগজের লেখক, তাই তাঁকে ছোট কাগজের বিশেষ সাহিত্যধরার পক্ষে নিজের অবস্থা ও অবস্থান তুলে ধরার জন্য প্রবন্ধসাহিত্যও লিখতে হয়, হয়েছে। এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে দেওয়া তাঁর বক্তব্যটি এমন:
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ: আমি মূলত গল্পকার হলেও প্রবন্ধ ও উপন্যাস লিখেছি। আমি গল্প লেখার পাশাপাশি প্রবন্ধ ও উপন্যাস লিখে কম আনন্দ পাই নাই। আমি যখন প্রবন্ধ লিখি তা শুধু প্রবন্ধ হয়ে ওঠে না। ওখানে প্রবন্ধের মধ্যে কবিতা চলে আসে। অনেক সময় প্রবন্ধ রচনা করতে করতে আমি কখনো গল্প বিন্যস্ত করে আবার প্রবন্ধে প্রত্যাবর্তন করেছি।
…বিষয়টি যে-রকম: একটা প্রবন্ধ লিখছি হঠাৎ পেলাম গল্প ঘটে চলেছে আবার গল্প হতে প্রবন্ধ; কবিতাও প্রবন্ধের টেক্সট হয়েছে। আমার গল্প ও প্রবন্ধ কখনো পরস্পর লক্ষণ যুক্ত হয়ে শেষ হয় নাই, বরং বাবার লেখা চিঠি পোস্টকার্ডের কপি, প্রেসক্রিপশান, ইলাস্ট্রেশান, আমার ওপর কোনো সমালোচনা, বাবাকে নিয়ে স্মৃতিকথা, পারিবারিক সব কিছু, এমনকি কবিতার লাইনের পর লাইন জীবনানন্দ ঢুকে পড়েছে। তো, এই রকম লেখক আমি, না প্রবন্ধ না উপন্যাস না গল্প, কোনোটা, আমার কাছে আমার সব লেখা ফেলনা ভাবতে পারি নাই। লেখার সময় কোনোটি বাদ দিতে পারি নাই যেমন পারি নাই বাদ দিতে বিভিন্ন চরিত্রের গ্রন্থপ্রকাশ।১৩
আগে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে নানা জন নানা রকম আলোচনা করেছেন, তাঁদের একজন সেলিম মোরশেদ। তিনি সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের রক্ত অনুষঙ্গ (২০০৬) প্রবন্ধগ্রন্থটি নিয়ে ছোট একটি লেখা দিয়েছেন সাম্য রাইয়ান সম্পাদিত সাহিত্যবিষয়ক ওয়েবপোর্টাল বিন্দুর ‘সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ বিশেষ সংখ্যা’য়; সেলিম মোরশেদ সেখানে বর্ণনা করেছেন বেশি মূল্যায়ন করেছেন কম, তবে সেই অল্প কথাতেই তিনি অনেকটা বলে দিয়েছেন।
বিপ্লব-বিদ্রোহ, রক্ত-হত্যা-আর? প্রকৃতিই নিয়তি। দেখাটা খুব মৌলিক। সৈয়দ রিয়াজ দেখতে চেয়েছেন এইসব। এই পর্যবেক্ষণে গতি আছে, উচ্ছ্বাস নেই। ভালোবাসা আছে, লোভ নেই। শিল্পমন আছে, লিপ্সা নেই। প্রতিরোধ আছে, প্রবঞ্চনা নেই। এতগুলো যখন নেই তো তার ব্যবস্থাপত্র ছাপতেই হয়। কিছুটা সিস্টেমের ভেতরে তো থাকি! দেখো আমার যৌনক্ষমতা কীভাবে হ্রাস পাচ্ছে! এস্টাবলিশমেন্ট এখন বিবেক-যাত্রার প্যান্ডেলে। সেরা প্রবীণ এবং মেধাবী তরুণ এরা খোঁজে, তৈরী করে। ভীষণ অরাজনৈতিক যারা আর যাদের ভেতর ইউরোপ বাস করে। ভোক্তা মাঝামাঝি শ্রেণীর সুশীল সমাজ। এখন এই বিবেকের সামনে নিজেকে ভাঁড় করে দেয়া ছাড়া আর কী আছে? দেখো এই আমি। তোমরা খোঁজো আমার স্ববিরোধিতা, এই আমার বাস্তবতা।১৪
এ গ্রন্থে সৈয়দ রিয়াজ কমলকুমার মজুমদারের নিম অন্নপূর্ণার সাথে আল মাহমুদের পানকৌড়ির রক্ত গল্পের তুলনামূলক আলোচনা করেছেন, এছাড়া আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই, ব্যক্তি সুবিমল মিশ্র, লিটল ম্যাগাজিন, সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে নিজের অবস্থান সম্পর্কে পাঠককে একটি ধারণা দিয়েছেন। সেলিম মোরশেদ সেসব রচনা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করে সংক্ষেপে মন্তব্য করেছেন, সৈয়দ রিয়াজের লেখনীশক্তি যাচাই করে মত দিয়েছেন। তবে সেলিম মোরশেদ তাঁর স্বল্পভাষী লেখাটির শুরুতে যে বিচ্ছিন্ন বাক্যটি লিখেছেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, “এটি একটি প্রথাবিরোধী বই।”
সত্যিই সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ প্রথাবিরোধী প্রবন্ধ রচনায় অভ্যস্থ। তাঁর আরেকটি প্রবন্ধগ্রন্থের নাম তামাদিপাতা ও ভাষার আঙ্গিক (২০০৮), এ গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলোতে সৈয়দ রিয়াজ না-বলা নানা কথার মালা সাজিয়েছেন কয়েকটি বিষয়ে, এর মধ্যে প্রধানতম বিষয় হলো বাংলা সাহিত্যের ভাষার বিবর্তন। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের বাংলাভাষার সাহিত্যপ্রকাশক্ষমতাই রিয়াজের আলোচ্য বিষয়। মাসুদ মোস্তাফিজ সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের এ গ্রন্থ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় জানান,
অপ্রাতিষ্ঠানিক চেতনাবোধ অতঃপর প্রতিষ্ঠান-অপ্রতিষ্ঠান দ্বন্দ্বের বিনির্মাণ করতে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ আপোষহীন ভূমিকা অনস্বীকার্যভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর শিল্প ভাবনা কোনো বাজারী ভিত্তিহীন লেখার যাবতীয় ধরণ নয়। বরং বিষয়বস্তুর ঐক্য নির্মাণে তিনি ভাষাকে খুঁজেছেন দুই আধেয় বর্গে। লেখক সুবিমল মিশ্র কিংবা কমল কুমার মজুমদার শিল্প ভাবনা ভেঙে অনেকটাই ভাষার গতিপকৃৃতি ও পারস্পরিক সংস্কৃতি গড়ে তোলেন।১৫
সমগ্র রচনা সংকলনে সাঙ্গীকৃত প্রবন্ধগুলো নতুন শতাব্দীতে লেখা। এখানকার বিষয়বস্তুতে যেমন আছে নতুনত্ব, তেমনই পুরনো বিষয়ে আছে নতুন সময়ের, পরিবর্তমান নবমূল্যায়ন, যেমন আশির দশক এবং ছোটোগল্পের কথকতা, প্রবন্ধটিতে সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ তাঁর সময়ের নতুনদের আগমন এবং পুরনোদের অবস্থা এবং অবস্থান নিয়ে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার প্রস্তুতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রসঙ্গক্রমে পাকিস্তানি আমলের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেছেন, পাকিস্তানপূর্ব বাংলাসাহিত্য নিয়েও আলোচনা করে ক্ষেত্রপ্রস্তুতির বিষয়টি এড়িয়ে যান নাই, তিনি লিখেছেন,
পাকিস্তানপূর্ব বাংলা গল্প-উপন্যাস-সাহিত্যে নানা কারণে মুসলমান সমাজ জীবন ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠী মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও ব্যাপকভাবে চিহ্নিত হয় নাই। অধিকাংশ সাহিত্যিক বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে মুসলমান সমাজ জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাদের পরিচয় ছিল না, ফলে তাঁরা এই জীবনের রূপকার হতে ব্যর্থ হয়েছেন।১৬
তবে সেসময় যে কয়েকজন মুসলমান সাহিত্যিক মুসলমান সমাজজীবনকে সাহিত্যিক রূপদান করতে চেয়েছেন, কিন্তু উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন নাই, সৈয়দ রিয়াজ এদেশের অনেক গবেষকের মতো তাঁদেরকে একেবারে বাতিল করে দেন নাই, তিনি বরং সার্থক শিল্পীহিসাবে অভিহিত করতে না পারলেও সমাজজীবনের রূপকার বলতে দ্বিধা করেন নাই। তিনি বরং মুসলমান সাহিত্যিকদের সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করার প্রয়াস নিয়েছেন। তবে প্রবন্ধের মূল বিষয় হলো আশির দশকের গল্প, সেটি আলোচনা করতে গিয়ে তিনি পূর্বালোচনা করে গেছেন। বাংলা ছোটগল্পের ধারাবাহিকতায় আশির দশকের বিশিষ্টতাগুলো তিনি আলোচনায় এনে সমকালীন লেখকদের সমস্যাগুলোও চিহ্নিত করেছেন। সচেতন পাঠকদের জন্য, যাঁরা দৈনিকের সাহিত্যপাতার সাহিত্যকেই সমকালীন সাহিত্যের মুরুব্বি ভেবে বসে থাকেন, তাঁদের আড়ালে যাঁরা তৎকালীন নিরীক্ষাপ্রবণ ছোটগল্পের ইতিহাস জানতে চান, সময়টি অনুধাবন করতে চান, সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলো নিয়ে ভাবতে চান, তাঁদের জন্য এ প্রবন্ধ অবশ্যপাঠ্য।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি: প্রেক্ষাপট, বিষয়, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ; এ প্রবন্ধটিতে সমকালীন রাজনীতির নানা দৃশ্যমান দৃশ্য এবং অদৃশ্য ও গোপনদৃশ্যের সাংস্কৃতিক প্রভাব আলোচিত হয়েছে। এ রচনার একাধিক উদ্ধৃতি আগেই এ রচনায় ব্যবহৃত হওয়ায় সচেতন পাঠক প্রবন্ধটি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা এরমধ্যেই হয়তো পেয়ে গেছেন। তবে আলোচ্য বিষয়ের সাথে লেখক ও লেখার সম্পর্কসূত্রে কয়েকটি উদ্ধৃতিযোগ্য কথা এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন।
ক] সংস্কৃতির যুদ্ধ অসংস্কৃত হাতিয়ার দিয়ে হয় না। কলা-শিল্প, সাহিত্য শান দিতে হয়।
খ] সাহিত্যে রিয়ালিজম জরুরি। এই বাস্তবতা বাইরে থেকে দেখানোটা প্রতিষ্ঠানের পছন্দ এবং পাঠকও তাহলে রিয়ালিজমের বাইরে থাকে।
গ] ভাষাময় সাহিত্য দিয়ে কোনো ঘটনাকে আমরা হুবহু তুলে ধরতে পারি না। ভাষা অনিশ্চিত এক কৌশল।
ঘ] লেখকের হাতে জাদু থাকতে হবে। ভূতে পাওয়া লেখক-কবি শব্দের পর শব্দ এমনি এমনি খুঁজে পান, তাতে স্বতস্ফূর্ততা—সে যা দেখেছে তা বাস্তব নয়Ñযা দেখা হয় না, সেখানে আছে বাস্তবতা।
খ] সাহিত্যে রিয়ালিজম জরুরি। এই বাস্তবতা বাইরে থেকে দেখানোটা প্রতিষ্ঠানের পছন্দ এবং পাঠকও তাহলে রিয়ালিজমের বাইরে থাকে।
গ] ভাষাময় সাহিত্য দিয়ে কোনো ঘটনাকে আমরা হুবহু তুলে ধরতে পারি না। ভাষা অনিশ্চিত এক কৌশল।
ঘ] লেখকের হাতে জাদু থাকতে হবে। ভূতে পাওয়া লেখক-কবি শব্দের পর শব্দ এমনি এমনি খুঁজে পান, তাতে স্বতস্ফূর্ততা—সে যা দেখেছে তা বাস্তব নয়Ñযা দেখা হয় না, সেখানে আছে বাস্তবতা।
এমন আরও প্রয়োজনীয় কিছু উদ্ধৃতি এখানে পাঠক খুঁজে পাবেন, যা তাঁদের চিন্তাশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে সহায়ক হবে।১৭
গ্রামশির দূরবীন, পারমাণবিক জমানায় অণু-গল্পায়ন, প্রেক্ষাপট ও রূপরেখা: অনলাইনভিত্তিক সাহিত্য-শিল্প আন্দোলন, ভাষা সঙ্কর্ষণ ও সংস্করণ ও দেওয়াল এ প্রবন্ধগুলোও সৈয়দ রিয়াজের প্রবন্ধ সম্পর্কিত পূর্বে কথিত ধারণাগুলোর সত্যতা পাবেন। হোর্হে লুই বোর্হেসের গল্প এবং প্রবন্ধসাহিত্যের মিশ্রমাধ্যমের মতো তাঁর প্রবন্ধগুলোও গল্পের সাথে মিলে অনেক সময় একাকার হয়ে যায়, তা তিনি আগেই জানিয়েছেন। গল্পের প্রচলিত যে গঠন, রাবীন্দ্রিক যে আকার বা কাঠামো, সেটি তিনি অনেক আগেই ভেঙে ফেলেছেন। শুধু তিনি একা না, তাঁর সময়ের বাংলাদেশের অনেক লেখকই জগদীশ গুপ্ত-নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যপথের প্রান্তরে পরিভ্রমণ করে, মানবজীবনের আলোকিত দিক, ঔজ্জ্বল্যের শামিয়ানা টানানো নীতিবাদের মঞ্চ কিংবা ‘সত্যম শিবম সুন্দরমে’র শাশ্বত শাদা সড়কের পথ ছেড়ে সংকীর্ণ, দুর্গন্ধময়, আলো-আঁধারিতে ছায়াচ্ছন্ন, অন্ধকার এবং পচা-গলা-নষ্ট গলির বীভৎস রস এবং অদ্ভুত রসের মিশ্রণে জারিত সাহিত্যের চর্চা করে জনপ্রিয়তার পথ থেকে অনেক দূর সরে গিয়েছেন। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের কথাসাহিত্যের গোপন সূত্র এবং তাঁর পছন্দের কিংবা অপছন্দের সাহিত্যকে জানার জন্যও তাঁর প্রবন্ধগুলো অবশ্যপাঠ্য।
তথ্যসূত্র
১। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি: প্রেক্ষাপট, বিষয়, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-৩৪১।
২। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি: প্রেক্ষাপট, বিষয়, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২,
৩। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, ছায়া-আবছায়া, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১০১।
৪। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, ছায়া-আবছায়া, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১০১।
৫। সুশান্ত বর্মণ, সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ রচিত ‘ছায়া আবছায়া’ উপন্যাসে অবগাহনকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা, https://www.bindumag.com/2023/11/susanta-barmans-article-on-syed-riazur-rashid.html ২৭ নভেম্বর, ২০২৩।
৬। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, AM I BEING A PARANOID, , সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১৩২-১৩৩।
৭। শোয়েব শাহরিয়ার, সৈয়দ রিয়াজুর রশীদের গল্প: নিবিড় পাঠ, নিসর্গ, বর্ষ ৩৮, সংখ্যা ২, আগস্ট ২০২৩, পৃষ্ঠা- ৪৩৯।
৮। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, একটি সত্য ঘটনার রংচং চড়িয়ে গল্প, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১৪৭।
৯। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, অন্নপুরাণ, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১৬১।
১০। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, জলপ্রপাতের উপাখ্যান, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১৭৩।
১১। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, ২১.২.১৯৫২, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-১৮৫।
১২। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, শরীরের বাজার, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-২২২।
১৩। https://www.granthagata.com/2022/12/interview-syed-riazur-rashid.html
১৪। সেলিম মোরশেদ, প্রসঙ্গ: রক্ত অনুষঙ্গ,https://www.bindumag.com/2023/11/selim-morshed-article-on-syed-riazur-rashid.html, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩।
১৫। মাসুদ মুস্তাফিজ, বর্তমান কালপর্ব বাংলা সাহিত্যের পুরাণ বা মিথভাষার লোকায়িত সন্ধানে: তামাদিপাতা ও ভাষার আঙ্গিক পাঠের সরল অনুভূতি, https://www.bindumag.com/2023/11/masud-mustafiz-article-on-syed-riazur-rashid.html, সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩।
১৬। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, আশির দশক এবং ছোটোগল্পের কথকতা, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-৩০৮।
১৭। সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি: প্রেক্ষাপট, বিষয়, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সমগ্র রচনা-১, অনুভব প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রথম প্রকাশ-২০২২, পৃষ্ঠা-৩৪৭—৩৫১।
মন্তব্য