বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। তাঁর লেখার জগৎ বাংলাদেশের মানুষ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তিনি কথাসাহিত্যে সমকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংকটের সামগ্রিক রূপায়ণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন। সাতচল্লিশ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি-সংকট, তেভাগা আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভয়াবহ পরিস্থিতি—এসবই তাঁর কথাসাহিত্য স্থান পেয়েছে নতুন মাত্রায়। জীবনের গভীর উপলব্ধির প্রকাশে তিনি সিদ্ধহস্ত। তাঁর ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে,
বাংলাদেশের ছোটগল্পে তাঁর চেতনার গভীরে মমতায় লালিত জীবন ও প্রকৃতিকে বাস্তবতার সঙ্গে রোমান্টিকতার মিশেল দিয়ে রূপদান করেছেন। ফলে তাঁর ছোটগল্পে মানবজীবন যেন একগুচ্ছ তাজা ফুলের মত বিকাশ লাভ করেছে।… সেলিনা হোসেন শুধুমাত্র জীবন-সচেতন শিল্পী নন, তাঁর জীবনবোধের সঙ্গে অনায়াসে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশ জাতি ও ঐতিহ্য-সচেতনতা। তাঁর মধ্যে জাতীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতিও প্রবল আকর্ষণ ও ভাবপ্রবণতা লক্ষ করা যায়। কিছুটা রাজনীতি সচেতন তিনি। তবে সবকিছুর মধ্যেই তাঁর সাহিত্যপ্রীতি অকপটে লীলাময় হয়ে ওঠে।১
সেলিনা হোসেন জীবনবাদী শিল্পী। তাঁর উৎস থেকে নিরন্তর (১৯৬৯) গল্পগ্রন্থের নামগল্পে লেখক সমাজকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। সমাজে একশ্রেণির মানুষ আছে যারা প্রতিনিয়ত উচ্চবিত্তের শোষণের শিকার। উচ্চবিত্তের রোষে পড়ে নিম্নবর্গের এসব মানুষের জীবনের নানামুখী যাত্রা থমকে যায়। খেটে খাওয়া এসব মানুষের জীবনযাতনা এবং দুঃখ-কষ্টগুলো কীভাবে আরও বেদনাদীর্ণ হয়ে ওঠে তাই প্রকাশিত হয়েছে উৎস থেকে নিরন্তর গল্পটিতে। মূলত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন সমাজকে অঙ্কন করেছেন। গল্পের কাহিনি এতটা পরিচিত যে সেদিক থেকে এখানে নতুনত্ব নেই। কিন্তু লেখকের সুগভীর এবং সুতীক্ষ্ন চেতনাদীর্ণ হৃদয় দিয়ে সুস্পষ্ট করে তুলেছেন সমাজের কদর্য দিক। যা ভাবতে শেখায় জীবনের অর্থ সম্পর্কে।
গল্পের সূচনা হয়েছে সুরত আলীকে কেন্দ্র করে। তাকে ঘিরেই গল্পের গতি-প্রকৃতি উৎস থেকে বিকাশের পথে এগিয়ে গেছে। স্বল্প পরিসরের এই গল্পে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন নিষ্ঠুর নির্মমতার চিত্র তুলে ধরেছেন। কারখানার শ্রমিক নেতা সুরত আলী। বস্তি জীবনের একঘেয়ে বিবর্ণতার মধ্যে সে চাঞ্চাল্য সৃষ্টি করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। কারখানায় বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে মালিকের নিশ্চিত রাতের ঘুম হারাম করেছে। এবং তার সঙ্গীদের পেটের ভাত কেড়ে নিতে যারা ব্যস্ত সেই রাঘববোয়ালদের নির্যাতনের শিকার হলেও দমে যায়নি সুরত আলী। তার রক্তে নেশার মতো ঘোর লাগা মাদকতা ছড়িয়ে। বিদ্রোহের ছাপ মননে-মগজে। তাইতো মালিকপক্ষ সুরত আলীকে দমিয়ে দিতে না পেরে মিথ্যা মামলার কেসে ছয় মাসের জেলে আঁটকে দেয়। আর সুরত আলীর করুণ-দুর্বিষহ দিনের সূত্রপাত ঘটে ভয়ানকভাবে। দ্রোহ ভাব থাকলেও নিম্নবর্গের মানুষ তা প্রকাশ করতে পারে না শোষকশ্রেণির ভয়ে। আর যারা তা উচ্চারণ করে শত বাধা পেরিয়ে তারাও ক্ষতির সম্মুখীন হয় নানাভাবে। যেমনটা ঘটেছে সুরত আলীর সঙ্গে। পেটে লাথি মেরে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে শোষকশ্রেণি।
তবু সুরত আলীর বিদ্রোহাত্মক মনোভাব কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কিন্তু তার স্ত্রী ওজুফার জীবনে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কায় ব্যাকুল থেকেছ সুরত আলী। কারণ মালিকের বখাটে ছেলে তাহের ওজুফাকে উত্ত্যক্ত করছে ইদানীং। সুরতের কারাবাসকালে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে তাহের। যা ওজুফার বিবর্ণ মুখের কথকতায় প্রকাশিত হয়েছে। নির্জন সেলে রাতের অন্ধকারে সবকিছু ছাড়িয়ে সুরত আলীর চিন্তা শুধু ওজুফাকে নিয়ে। এই চিন্তায় একসময় কাল হয়ে ধরা দেয় সুরতের কাছে। ছয় মাসে নানা মাধ্যমে ওজুফার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলেও সে ব্যর্থ হয়। ছয় মাস পর সুরত আলী ঘরে ফেরে। কিন্তু স্ত্রী ওজুফার কালিঝুলি মাখা চেহরার কোথাও কিঞ্চিৎ আনন্দের ছাপ নেই। ক্লান্তি আর ঘৃণার ছাপ তার শরীর-মনজুড়ে। উষ্ণ আদরে আবিষ্ট করতেই সুরত আলী আবিষ্কার করে ওজুফা অন্তঃসত্ত্বা। তার মহা আনন্দে জল ঢেলে দেয় ওজুফা। একরাশ বিষাদের সঙ্গে উদগীরণ করে নিজের সর্বনাশের কথা। সুরতের প্রশ্নের জবাবে ওজুফার মুখ খোলে:
বিশ্বাস করো আমার কোনো দোষ নেই।
কার ছেলে? তাহের।
সুরত আলী চিনল। মালিকের সেই মদখোর ছেলেটা। সুরত আলী মাথার চুল টানতে লাগল। পায়চারি করল সারা ঘরে। ওজুফা তখন শব্দ করে কাঁদতে শুরু করেছে। বিশ্বাস করো আমার কোনো দোষ নেই। আমি এ চাইনি। কোনোদিনও না। আমি তো চিৎকার করেছিলাম। কেউ তো শুনল না।২
কারখানার মালিকের ছেলের ধর্ষণের ফসল ওজুফার পেটে। নিম্নশ্রেণির মানুষ যে কতটা অসহায় তা ওজুফার কথার মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার চিৎকারেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি। সব শুনে ওজুফাকে বেদম পেটায় সুরত। তবু প্রতিশোধ স্পৃহা তাকে নিবৃত্ত করেনি। মালিকের ছেলে বলে পিছিয়ে থাকেনি সুরত। তাহেরকে খুন করে তার রক্তে রঞ্জিত করেছে হাত। সমাজের কদর্য রূপ সেলিনা হোসেন বিশেষভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে তিনি মানব জীবনের মূলে আঘাত করেছেন। উৎস থেকে নিরন্তরের পথে যাত্রা দেখিয়েছেন। এক মহান ব্রতে শেষপর্যন্ত সুরত আলীকে বিলীন করতে চেষ্টা করেছেন। ঘরে ফিরতেই সদ্যজাত বাচ্চার কান্না ভেসে আসে। আর ওজুফার উচ্চারণ শোয়েরের বাচ্চা। কিন্তু মুখের কথা টেনে নিয়ে প্রতিবাদ করে ওঠে সুরত। না, না। ও আমার। ও আমার। গল্পে বিষয়টির অবতারণা করেছেন এভাবে:
আমি ওকে মানুষ করবো ওজুফা। ও আমার ছেলে। তোর রক্ত আছে ওর গায়ে-ও তোর ছেলে-ও মানুষের। আমি আর কিছু জানতে চাই না—ও আমার—ও আমার—ও আমার।৩
সুরত নিরন্তরে অবগাহন করেছে। যেখানে মানুষের শরীরের রক্তই মানুষর পরিচয়। হিংসা-দ্বেষ-ক্রোধ ভুলে এই অবগাহন মানুষকে নতুন পাট শেখায়। মনুষ্যত্ব-বিবেক-মানবিকতা সর্বোপরি মানুষই চিরন্তন। তবু মানুষ তাহেরদের মতো নরপিশাচদের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না! সুরত আলী, ওজুফা এ সমাজের শোষিতশ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেছে। যারা প্রতিনিয়তই সমাজে নির্মমভাবে ভাগ্যের কাছে পরাজিত। তবে সুরত আলী ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে আপন চেষ্টায়। অধিকার-অন্যায়কে রুখে দিতে প্রতিবাদে জ্বলে উঠেছে।
জলবতী মেঘের বাতাস (১৯৭৫) গল্পগ্রন্থের অন্যতম গল্প ‘বুকের ভেতর নদী’। এই গল্পে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দেখিয়েছেন। মধ্যবিত্তশ্রেণির মানুষের জীবনযাতনার নিষ্ঠুর চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে এখানে। মানুষ অসহায় দারিদ্র্যের কাছে। অর্থের সংকট ভালোবাসাকেও ম্লান করে দেয়। লেখক সেলিনা হোসেন বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের অতি সাধারণ চিত্র তুলে ধরেছেন। যার দ্বারা এদেশের অধিকাংশ মানুষের দৈনন্দিন টিকে থাকার লড়াই-জীবনযন্ত্রণা-সংকটকে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষের গভীরে প্রবেশ করতে পেরেছেন বলেই লেখক এত চমৎকারভাবে হৃদয়ের কথা তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে নতুন শ্রেণীরূপায়ণের ফলে সমাজে যে শ্রেণীর বিস্তার হয়েছে সবচেয়ে বেশি এবং অন্যান্য শ্রেণীর তুলনায় যার আধিপত্যও ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা হলো মধ্যবিত্তশ্রেণী। এই শ্রেণীর, অর্থাৎ মধ্যবিত্তের, সঠিক কোনো সংজ্ঞা নির্দেশ করা কঠিন, কারণ in modern civiliæed countries, the class structure is exceedingly complex, and that aû classification involving the notion of a ‘middle class’ or of an identifiable constellation of ‘middle classes’ is bound to be arbitrary, and to be quite lacking in scientific precision. মধ্যবিত্তশ্রেণীর বর্তমান আকার যেমন বিশাল হয়েছে, তার রূপও হয়েছে তেমনি জটিল। পৃথিবীর সকল দেশেই হয়েছে, বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।৪
গল্পের কথক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। দুর্মূল্যের বাজারে বাসাভাড়া, সংসারের খরচ যুগিয়ে উঠতে পারেনি আজও। তাই তো বাবার বাড়ি খুলনায় এক স্কুলে মাস্টারি নিয়ে সেখানেই আছে নিতু। দুজনের দুটি পথ গেছে দুদিকে। ভালোবাসা শুধু সংসার তথা দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যম হলেও সেখানে পরস্পরের সমান উপস্থিতি জরুরি। কথায় আছে, ‘বাসি কথায় চিঁড়েও ভেজে না’। ঠিক তাই। সংসারে সংকট নানামুখী। নুন আনতে পান্তা ফুরালে ভালোবাসা উবে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। নাগরিক জীবনে টিকে থাকতে যতটা সাধ্য থাকা দরকার গল্পকথকের জীবনে তার ছিটেফোঁটাও নেই। ফলে স্ত্রীর প্রতি যে দায়-দায়িত্ব এবং কর্তব্য থাকা জরুরি সে সম্পর্কে অবগত থাকলেও কথক নির্বিকার। কারণ তার ভালোবাসা দুর্মূল্যের বাজারে ধোপে টেকেনি। তাই তো নিতুকে অবস্থান করতে হয়েছে বাবার বাড়ি। সেখানে ছোট্ট একটি স্কুলে চাকরি করে তার কোনোরকমে জীবন চলে যায়। কিন্তু সেখানে সম্মানের যথেষ্ট ঘাটতি। কারণ আমাদের সমাজে নারীকে এমনিতেই অবজ্ঞা-অবহেলা করা হয় তারওপর বিয়ের পর কোনো নারী যদি পিতৃগৃহে অবস্থান করে তবে তার ভাগ্যে সর্বদা শনি নাচে। এ সমাজের এত প্রখর সত্যি তুলে ধরা হয়েছে গল্পটিতে যা হৃদয় ছুয়েঁ যায় বারবার। গল্পটি পড়তে পড়তে এ সমাজের অধিকাংশ মানুষ তার নিজের ছায়া স্পষ্ট দেখতে পাবেন। যারা নিতু আর গল্পকথকের মতো অসহনীয় জীবনকে বয়ে বেড়াচ্ছেন। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের এই নির্মম সত্য উপস্থাপন সমাজের কদর্য সত্যেকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এ সমাজে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সবাই ধুঁকছে কঠিন সংকটে। হাতপাতার ক্ষমতা নেই। নিজের কষ্টকে প্রকাশের ভাষা নেই। শুধু শুষ্ক হাসিতে ভরিয়ে রাখতে হয় মুখমণ্ডল। বলতে হয় সবই ভালো। কিন্তু জীবনের এই ভালোর মাঝে শত কালোকে গোপনে টানতে হয় এই হতভাগ্য শ্রেণিকে। গল্পে কথাসাহিত্যিক বিষয়টিকে উপস্থাপন করেছেন এভাবে:
… বিশ্বাস করো তোমাকে ঠকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। সেই জন্যই সত্যি কথা বলি। বিকেলে যখন কিছু করার থাকে না তখন প্রায় ফুটপাত ধরে হাঁটি। একলা একলা। আর কী করবো বল। বন্ধুরা সব মেকি আর যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। তাছাড়া একই সমস্যায় সবাই জর্জরিত।৫
নিতু এবং গল্পকথকের দুঃখ-জীবনযাতনা এইশ্রেণির মানুষের যাপনের স্বাভাবিক চিত্র। যান্ত্রিকতার হওয়ায় মানুষ বদলাতে শুরু করেছে। সবার মধ্যে মেকি আচরণ। সেই মেকিময়তার ভিড়ে কিঞ্চিৎ ভালোবাসাই সম্বল। যদি সেটুকুও রক্ষিত না হয় তবে কোথায় মানুষের বাঁচার আশা। আর কোথায় নিতু, গল্পের কথকেরা আশার বাণী শুনবে! দুর্ঘটনায় কবিরের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং তার স্ত্রী সাঈদার হতভাগ্য জীবনই কী উন্নত! সেখানেও হতাশা-বিশাদ-স্বপ্নভঙ্গের গল্প। কোথায় স্বস্তি! তারচেয়ে এই না হয় ভালো নিতুর কপালে। জীবনের গতিপথ আলাদা হলেও যদি মানসিক যোগ থাকে তবে সেখানে শারীরিক অনুপস্থিতি ততটা বড় নয়। তারপরও যদি নিতুর প্রস্থানের ইচ্ছে হয় সে যেতে পারে নতুনের খোঁজে। লেখক তুলে ধরেছেন:
নিতু অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের জীবনে আর কোনো সমাধান দেখছি না। কিছু কিছু জিনিস জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়, কিছু ধরে রাখতে হয়। আমরা ঝেড়ে ফেলেছি অনেক। সামান্য মূলধন আঁকড়ে ধরে রাখছি ভবিষ্যতের পরিকল্পনার জন্য।
তুমি কী পার নিতু তোমার প্রেম আমার জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে?
তুমি কী বলবে আমি জানি না। তবে একই প্রশ্ন আমাকে করলে আমি বলব, ঐ টুকুই তো সম্বল। ঐ টুকু বাদ দিলে আর কী থাকে?৬
জীবনের গতিপথ সরল-সোজা নয়। প্রতি বাঁকেই রয়েছে ভঙ্গুর গতিপথ। এই পথকে ভয় না পেয়ে যে চলতে সক্ষম তিনিই জীবন যুদ্ধে জয়ী। বিজয়মাল্য তারই প্রাপ্য। নতুবা হাহাকার-বিষাদেই প্রাণত্যাগ করতে হবে। নিতু, গল্পকথকের জীবন যুদ্ধ তাই থমকে যাওয়ার নয়।
খোল করতাল (১৯৮২) গল্পগ্রন্থের নামগল্প ‘খোল করতাল’। এই গল্পেও লেখক সমাজকে দেখিয়েছেন। মানুষের জীবন কতটা অসহায় তা স্পষ্ট করে তুলেছেন। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আয়াত আলী, ছফদর। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এই গল্পে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মৃত্যুর সম্মিলন ঘটিয়েছেন। জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই জারি রাখতে মানুষ একের পর এক সংগ্রামে লিপ্ত হয়। কিন্তু এই জীবন যুদ্ধে কেউবা জয়ী আবার কেউবা ব্যর্থ। জীবনের গ্লানিবোধটুকুর সঙ্গেই তখন তার বাস জমে ওঠে। ছফদরের মা অসুস্থ। তাকে রেখে পেটের টানে শহরে যাওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে মাকে সুস্থ করে তোলার মতো যথেষ্ট অর্থ তার নেই। যার দুবেলা-দুমুঠো পেটের ভাত জোটে না, তার কাছে মাকে সুস্থ করে তোলার অলীক স্বপ্ন না দেখায় ভালো। আবার আয়াত আলীও নিঃস্ব। আয়াত আলীর কোনো দরদ নেই তবু কিসের যেন মায়া তাকে পিছু ডাকে। কিন্তু আয়াতকে পৌঁছুতে হবে শহরে যেখানে জীবনের নতুন উজ্জীবন ঘটবে। এরই মধ্যে ছফদরের মায়ের মৃত্যু তাকে নতুনভাবে জীবনের মোড় ঘুরাতে সাহায্য করেছে। ছফদর এখন শেকড়হীন। আয়াতের মতোই। তাই তো রাতের অন্ধকার পেরিয়ে ভোর হতেই আয়াতের সঙ্গে ছফদর যোগ হয় শহরে যাওয়ার জন্য। কৈশোরে বাবা-মা দুজনে কলেরায় মারা যাবার পর আয়াত আলী কারো মায়ায় জড়ায়নি। আমিনার দরদ তার কাছে ম্লান হয়ে উঠেছে। বড় সড়কে ওঠার আগে ছফদরের যুক্ত হওয়া আয়াত আলীকে বিরক্তিতে ফেললেও জীবন চলার পথে একটি সঙ্গী পাওয়ায় কিছুটা চুপসে থাকে। কথাসাহিত্যিক জীবনের গতিপথ থেকে এভাবে সচল রাখতে চেষ্টা করেছেন:
দু’জনে হাঁটতে থাকে। বড় সড়কে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দিনের প্রথম রোদ ওদের পিঠ স্পর্শ করে। হাঁটতে ছফদরের কষ্ট হয়। পা ভেঙে আসে। পেটে চিনচিনে ব্যথা। আয়াত আলী লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটে। এমনিতেই ওর হাঁটার গতি বেশি। ছফদর হাঁপিয়ে ওঠে। কখনো বসে পড়ে। আয়াত আলী ওর জন্যে থামে। মাথার ভেতরে মাগরা চিন্তা দাপাদাপি করে। নিজেকে বোঝায়, আসলে ও কাজ খুঁজতে যাচ্ছে। কাজ করে ভাত জোগাড় করবে। হাত পেতে নয়। ওর শরীরে এখনো অনেক শক্তি। তবুও একগুঁয়ে চিন্তাটা বেয়াড়া হয়ে ওকে বিষণ্ন করে রাখে।৭
আয়াত আলীর মতোই ছফদরও দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষ। পরিবার-পরিজন হারিয়ে বাঁচার তাগিদে পথে নেমেছে। শহরে গেলে হয়তো দুবেলা পেট পুরে খেয়ে-পরে বাঁচাতে পারবে। মানুষ মাত্রই আশা -ভরসায় বাঁচে। মানুষের জীবনে স্বপ্ন –আকাঙ্ক্ষা-কামনা-বাসনা শেষ হলে জীবনের অর্থও ফুরিয়ে যায়। নিভে যায় জীবন প্রদীপ। কথায় আছে, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশা। ফলে ছফদর বা আয়াত কেউই তার ব্যতিক্রম নয়। পথে চলতে চলতে ক্লান্ত ছফদর খাবারের খোঁজে পাগলপ্রায় হয়ে পড়ে। রাস্তার পাশে শুকনো আঁখ থেকে একটু রসে তেষ্টা মেটানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। কাঠফাটা রোদে, ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ছফদর চোখে ধূসর দেখে। দুজনে তাও চলতে শুরু করে। ছফদর পিছিয়ে পড়ে। আবারও টেনে টেনে চলতে থাকে। ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় হাত পাতে। যতটুকু পায় তা দিয়েই যদি জীবনকে একটু রক্ষা করা যায়। জীবনের তাগিদ যেন এইটুকুই। ছফদরের চাওয়ার মধ্যে দিয়ে নিম্নবিত্তের জীবনের অন্তিম ইচ্ছে প্রকাশিত হয়েছে:
ক্যান খাবেন না? খাবার দুক্কেই তো আমরা বাড়িঘর ছ্যাড়া পালাইয়া আনু। ছফদরের নিষ্ঠুর সত্য কথায় আয়াত আলীর বুকটা ধ্বক করে ওঠে। কথা বলতে পারে না। মনে হয় এজন্যেই ওর হাঁটু কাঁপছিল। আসলে ও একটা সত্য কথা লুকোতে চাইছে। বাড়ি থেকে আসার সময়ে যে কথাটা খুব সহজ মনে হয়েছিল এখন মনেপ্রাণে সে কথাটা অস্বীকার করতে চাইছে ও । কিছুতেই বিশ্বেস করতে ইচ্ছে হয় না যে শুধু খাওয়ার জন্যে ও গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটে যাচ্ছে।৮
ছফদরের মৃত্যু, আয়াত আলীর নির্বাক বসে থাকা জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে! মানব জীবনের উদ্দেশ্য কী? একটু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই নয় কী! শুধু এই তাগিদই মানুষকে চালনা করে। জীবনের শত প্রতিকূলতাকেও ডিঙিয়ে চলতে শেখায়। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন যেন জীবনের জীবন্ত পাঠ দান করেছেন এক একটি গল্পে।
পরজন্ম (১৯৮৬) গল্পগ্রন্থের নামগল্প ‘পরজন্ম’। এই গল্পে লেখক সেলিনা হোসেন বাংলার সমাজ এবং রাজনীতিকে স্থান দিয়েছেন। দেশকে স্বাধীন করতে বাংলার আপামর জনগণ তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। ছিনিয়ে এনেছে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা। কথাসাহিত্যিক এই গল্পে সমাজের আলখ্যে উপস্থাপন করেছন সমকালীন রাজনীতি। কাজেম আলিকে ঘিরে গল্পের প্লট নির্মিত হয়েছে। আটষট্টি বছরের কাজেমের সন্তান-স্ত্রী পৃথিবীতে কেউই আর অবশিষ্ট নেই। দিন কাটে ভবিষ্যৎ চিন্তায়। বংশ রক্ষা করার মতো প্রজন্ম তার নেই। চার ছেলে যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। বাকি দুই ছেলে কলেরায় প্রাণ হারিয়েছে। কাজেম আলীর সম্পদের পাহাড় থাকলেও দেখভাল করার মতো কোনো মানুষ নেই। তাকে ভালোবেসে আগলে রাখারও কোন মানুষ তার পাশে নেই। এক সিকান্দারই কেবল তাকে সাহায্য-সহোযোগিতা করে সবকাজে। স্ত্রী আসমানির মৃত্যুর পর তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করে বেড়ালেও মনের মাঝে একটাই দুশ্চিন্তা এখন তার বংশরক্ষা কী হবে!
তার মৃত্যুর পর এত বিষয়-আশয় এমনকি নিজের প্রজন্মও শেষ। চিন্তায় মুষড়ে থাকে কাজেম আলী। লেখক সেলিনা হোসেন সমাজের সাধারণ মানুষের কিছু চিন্তার অসাধারণ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আজও এ সমাজের অধিকাংশ মানুষ তার পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবেই সামনের দিকে এগিয়ে চলে। মৃত্যুকালে হাতের কাছে পুত্র-পৌত্র না পাওয়ার আশঙ্কা থাকলে মৃত্যুর আগেই তার মানসিক মৃত্যু ঘটে। কাজেম আলিও এ সমাজের আর দশটা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। যারা কিনা জীবনের যাপনই সন্তান অর্থাৎ বংশধরদের বংশরক্ষাকে গুরুত্ব দেয়। গ্রামের জোহোরা নাম্নী নারী কষ্টে আছে। তাকে বাড়িতে ঠাঁই দিতে বলে সিকান্দার। কিন্তু কাজেম তাকে নিরাস করে। তার আটষট্টি বছর বয়সও তারুণ্যে ভরা। মানসিক শক্তির কাছে সব পরিশ্রম হার মানে। কিন্তু মনের শান্তি নেই। শেষমেশ সিকান্দারের পরামর্শ এবং সহোযোগিতায় কুলসুম নামের এক নারীকে আটষট্টি বছরে বিয়ে করে কাজেম আলি। স্বপ্ন একটাই। কাজেমের ভাষ্য মতে, ‘হামার ভিটাত পাঁচ পুরুষের পত্তন চ্যাই। হামি ভিটা আন্ধার রাইখা মরব্যার পারুম না।’৯ কাজেম আলির এই ইচ্ছেয় তাকে সামনের দিকে অগ্রসর করেছে।
মানুষটি (১৯৯৩) গল্পগ্রন্থের নামগল্পে লেখক দ্বন্দ্ব-জটিল মানবজীবনকে চিত্রিত করেছেন। এই গল্পে কথাসাহিত্যিক এমন এক চরিত্রকে তুলে ধরেছেন যিনি তারই মুদ্রাদোষে সবার থেকে আলাদা। সাংসারিক দ্বন্দ্ব, জীবনের নানামুখী সংকট একজন ব্যক্তিকে কীভাবে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে তা বোঝা যায় গল্পটি পাঠের মাধ্যমে। আমাদের সমাজে অসংখ্য মানুষ আছেন যারা মশিউরের মতো জীবনযাপন করছেন। নিজের ভেতরে নিজে গুম হয়ে থাকেন। সমাজ-পরিবারের বাড়তি বোঝা মানুষকে কতটা ক্ষত-বিক্ষত এবং একাকী করে তোলে তা স্পষ্ট হয়। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। তবে সেই সংসারে সবাই নিজ ভুনের বাসিন্দা। একে অপরের সংকটে মমতায় ছায়া হয়ে পাশে দাঁড়ায় না। মশিউরের প্রেমের বিয়ে। স্ত্রী শিক্ষিত। কলেজে অর্থনীতি পড়ায়। সংসার জীবনে এখন ভরাডুবি। দুজন মানুষের পাশাপাশি অবস্থান হলেও মনের দিক থেকে তাদের দূরত্বও প্রকটিত হয়েছে এ গল্পে। পাঠক এক জানা ভুবনেই নতুনভাবে ডুব দেয়। যেখানে আমাদের সমাজের অসংখ্য মানুষের জীবনযাপনের ছবি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে মশিউরেরা সংকটে আছে। জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়ে জীবনের আনন্দ থেকেই বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন মানুষের এই দ্বন্দ্ব-জটিল জীবনকে চিত্রায়িত করেছেন এভাবে:
ও জানে ঘরে ওর অবস্থান সুখের নয়। স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় নয়। তাতে ওর কিছু আসে যায় না। ও নিঃসঙ্গই থাকে। ও জানে বন্ধু এবং পরিচিত জনদের নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোনো সম্পর্কে গড়ে উঠবে না। তবু ওর ভূমিকা ওর নিজেরই। অন্যদের ভাষায় গোয়ার্তুমি, জটিলতা অহঙ্কারী, ক্ষ্যাপামি ইত্যাদি যত কিছুই উচ্চারিত হোক না কেন ও নিজেকে ভালো চেনে। এই চেনার মধ্যে কোনো ফাঁকি নেই, কপটতা নেই । এইটুকু নিয়েই ও সন্তুষ্ট। ও মনে করে, যে মানুষ নিজের বিবেকের কাছে সৎ তার কিছু চাইবার থাকে না। ওর কিছু চাইবার নেই। প্রাপ্যটুকু আপন নিয়মে এলেই হয়।১০
মতিজানের মেয়েরা (১৯৯৫) গল্পগ্রন্থের নামগল্পে লেখক এক দুঃসাহসিক নারীর জীবনালেখ্য তুলে ধরেছেন। সমাজকে এখানে খুব নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন কথাসাহিত্যিক। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান কতটা বীভৎস তাই দেখাতে চেষ্টা করেছেন লেখক। শাশুড়ি গুলনুরের অত্যাচারে মতিজানের জীবনে নেমে আসে কালো অন্ধকার। কিন্তু সব অতিক্রম করার মতো সাহস মতিজানের ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। বিয়ে হওয়ার পরে শ্বশুরঘরে নারীর কী পরিচয় এবং নারী কতটা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয় তা এই ছোট্ট গল্পটি পাঠে অনুধাবন করা যায়। মতিজান এ সমাজের অধিকাংশ নারীর প্রতিচ্ছবি। মূলত যৌতুকের কারণে প্রতিনিয়ত শাশুড়ির মানসিক অত্যাচার, মদ্যপ স্বামীর অবহেলা-নির্যাতন, স্বামীর অন্য নারীতে আসক্তি নতুন কিছু নয়। আমাদের সমাজের অধিকাংশ চিত্রই এই। নারী তার বেড়ে ওঠা পরিবার ছেড়ে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর ঘরে পা রাখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন -স্বপ্নই থেকে যায়। তা আর বাস্তবে রূপ নেয় না অধিকাংশ মেয়ের জীবনে।
মানুষ হয়েও তারা ‘মানুষ’ নয়, তারা ‘ঊনমানুষ’। আঁতুড়ঘর আর হেঁশেলের গণ্ডীর ভিতরেই তাদের অবস্থান। পিতৃতন্ত্র তাদের রেখেছে ‘অপর’ করে। তোমাদের পক্ষে অমুকটা শোভা পায় না, তমুকটা করলে লোকে ভালো বলবে না—একরাশ ‘না’ তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। তবু কুঁজোরও তো চিত হয়ে শুতে সাধ হয়। এই চাপিয়ে দেওয়া অপরত্বের বেড়া ডিঙিয়ে পা ফেলার স্পর্ধা যুগে যুগে দেখিয়েছে এই ঊনমানুষেরা। তারা নারী। আজ যতটুকু ন্যায্য জমি তারা আদায় করে নিতে পেরেছে, তার পেছনে রয়েছে অনেকদিনের অনেক লড়াই আর যন্ত্রণা। সবচেয়ে মজার কথা হল, তাদের মধ্যে অনেকে বোঝেই না যে তারা তাদের ন্যায্য পাওনাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের না বলা কথাগুলো বলার জন্য কলম ধরেছেন বহু শুভবোধসম্পন্ন মানুষ। তেমনই একজন মানুষ সেলিনা হোসেন—আজকের সময়ে বাংলা কথাসাহিত্যের আঙিনায় এক অতিপরিচিত নাম। তাঁর ছোটগল্পগুলির মধ্যে বারেবারে দেখা দিয়েছে ‘না’-এর বেড়া ভাঙতে চাওয়া কিছু নারীচরিত্র। তারা প্রশ্ন করে, চিন্তা করে। ‘অমুকটাই নিয়ম’—এটুকু বলে তাদের কণ্ঠস্বর থামিয়ে দেওয়া যায় না।১১
এ সমাজ নারীকে শুধু ভোগ্য বস্তু হিসেবে ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে পুরুষ। একজন নারী তার জীবনের সবটা নিংড়ে দিয়ে যাবে আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তা উপভোগ করবে। যৌতুকের জন্য মতিজানের শাশুড়ি গুলনুর তাকে দুবেলা-দুমুঠো ভাতও দিতো না। বাপের বাড়ি তুলে অশ্রাব্য কথাবার্তা বলেছে। প্রথমের দিকে মতিজান নিশ্চুপ থেকেছে। কিন্তু শেষাবধি মতিজানের দৃঢ় কণ্ঠস্বর পাঠককে পর্যন্ত নড়েসরে বসতে বাধ্য করে। মতিজান হয়ে ওঠে দুঃসাহসী নারী। প্রতিবাদের তোপে ভেসে যায় শাশুড়ি গুলনুর। যেই গুলনুর একসময় যৌতুকের জন্য মতিজানকে ধরাশায়ী করতে না পেরে তাকে বাজা বলে পাড়া মাতিয়েছে। তবু মতিজান দমে যাওয়ার নয়। মতিজানের মধ্যে এই সাহস সঞ্চয় করে লেখক বাঙালি নারীদের নির্যাতনের বুকে পদাঘাত করতে শিক্ষা দিয়েছেন। নারী অবলা-নির্জীব-প্রাণহীন হয়ে শুধু মার খেয়ে যাবে এমন নয়। বরং নারীও মানুষ সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মতিজান।
এই নারীই এতকাল পুরনো সমাজকে শাসন করে এসেছে, নতুন সমাজ তা মানবে কেন? নারী কেবল যৌনতার, দেহসর্বস্বতার যন্ত্র নয়, সে বন্ধু, সে সৌন্দর্যপ্রিয়া, চিরন্তন প্রেমিকা নিশ্চয়ই হতে পারে—যার মধ্যে মালিন্য নেই, প্রেরণা আছে, উৎকট উদ্দেশ্য নেই অমিয়ধারার মতো লাবণ্য আছে।১২
স্বামী আবুল অন্য নারী-মদ-গাঁজা নিয়ে পড়ে থাকলেও বউয়ের প্রতি দায় নেই। মায়ের বাধ্যগত সন্তান হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। শাশুড়ি গুলনুরের ‘বাজা’ সম্বোধন এবং মতিজানের ভেতরের জেদ একসময় তাকে অন্যপথে পরিচালিত করে। আবুলের পাঠানো সদাই নিয়ে রোজ রোজ বাড়িতে আসে লোকমান। মতিজানের প্রতি তার আবেগ একটু অন্য ধরনের। সেই লোকমানের বাহুডোরে আশ্রয় খোঁজে। সমাজের গালে কড়া চপেটাঘাত করে মতিজান নিজের জীবনের অর্থ খুঁজে ফেরে। আর লোকমানকে পেয়ে জীবনকে সাজায় অন্য রঙে। তৎকালীন সমাজে নারীর এমন দুঃসাহসিক পদক্ষেপ বাঙালি নারীকে সাহসী হয়ে ওঠার প্রেরণা জোগায়। গল্পে বিষয়টার অবতারণা করেছেন লেখক এভাবে:
দিন গড়ায়, দিন তো গড়াবেই, দিনের নিয়ম। মতিজানের দিনগুলো এখন অন্যরকম গড়ায়। ও মা হবে। সেদিনের ঘটনার পর প্রথম ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল মতিজান, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে উথাল-পাতাল। মতিজানের সামনে সব বন্ধ দরজা খুলে যায়। খবরটা শোনার পর বাঁকা চোখে তাকায় আবুল, ত্যালে বংশরক্ষা হলো।১৩
মতিজান শুধু লোকমানের বাহুডরে আবদ্ধ হয়েই ক্ষান্ত থাকেনি। তার গর্ভে জন্ম নিয়েছে দুটি ফুটফুটে মেয়ে। তাতে মতিজানের মাতৃত্বের স্বাদ যেমন নিবৃত্ত হয় তেমনি সমাজের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়ে মতিজান প্রমাণ করে সে বাজা নয়। কিন্তু এ সমাজের চোখ কালো কাপড়ে বাঁধা। অন্ধ সমাজে তাই মতিজনরাই আহত হয় বারবার। আর সেখানে পৌরুষত্ব নিয়ে সদর্পে বুক ফুলিয়ে বেড়ায় আবুলের মতো লম্পটেরা। যারা নারীকে শুধু সেবাদাসী ভাবতেই অভ্যস্ত। এমনকি নারী হয়ে গুলনুরের অত্যাচার অপর নারীর ওপর এ সমাজের কদর্যতার পরিচয় নির্দেশ করে। কিন্তু মতিজানের গতি কোথাও থামেনি। যাদের কাছ থেকে বাজা আখ্যা পেয়েছে, যৌতুকের দায়ে নির্যাতন ভোগ করেছে, বাবার অপরাগতায় অশ্রাব্য গালাগাল শুনতে হয়েছে সবকিছুর প্রতিবাদ হয়ে উঠেছে তার দুই মেয়ে। তবু যখন সেই মেয়ে হওয়ার কারণে শাশুড়ি গুলনুর আবার তার ছেলে আবুলকে নতুন বিয়ের তোড়জোড় করতে থাকে তখন মতিজান সমাজকে আরও কষে চড়টা দিয়েছে। যা শুধু দুঃসাহসিক পদক্ষেপই নয়, এ সমাজ-মানবজীবনে সত্য স্বীকারের অদম্য বাসনা মতিজানকে চির অম্লান করেছে। সমাজের চাদরে সবাই ভণ্ডামি করলেও মতিজান করেনি। মতিজান শুধু নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছে। তাইতো তার প্রতিবাদী ভাষা এত ঝাঁঝালো :
থুঃ। আপনের ছাওয়ালের আশায় থ্যাকলে হামি এই মাইয়া দুইডাও পেত্যাম না কি কহালা?
গ্রামের শক্ত মেয়েমানুষ গুলনুর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে মতিজানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভিড়ের মধ্যে গুঞ্জন।
দুহাতে দুমেয়েকে বুকের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রেখেছে মতিজান। মায়ের বুকর ভেতর থেকে জ্বলজ্বল চোখে সবার দিকে তাকায় মতিজানের মেয়েরা।১৪
অনূঢ়া পূর্ণিমা (২০০১) গল্পগ্রন্থের নামগল্পে লেখক সেলিনা হোসেন সমাজে নারীর অবস্থান নির্দেশ করেছেন। একইসঙ্গে নারী যে শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোরঞ্জনের বস্তু তাও বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এককথায় এই গল্পে লেখক, সমাজের কদর্য চেহরা উন্মোচন করেছেন। যেখানে নারীর অবস্থান দেহ এবং বাহ্যিক সৌন্দর্যে। নারী এ সমাজের চোখে উপভোগ্য বস্তু। যাকে ভোগের পণ্য করে তোলে পুরুষ কিন্তু সেই পুরুষই আবার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চায় সতীসাধ্বী-পতিব্রতা নারীকে। পুরুষের এই বৈপরীত্য সমাজকে কিভাবে আজও আষ্টেপৃষ্টে আছে তা গল্পটি পাঠে অনুধাবন করা যায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভণ্ডামি একনিমিষেই যেন চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গল্পের শরীরে।
আর পুরুষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ নারীর প্রতি কতটা নির্মম হয়ে উঠতে পারে সেটাও এখানে নির্দেশিত হয়েছে। লীলাময়ী এবং কথিত সংবাদকর্মী দুজনেই সুন্দরবনের দুবলার চরে রাসমেলা দেখতে যায়। সেখানেই পরিচয় দুজনের। পরিচয় থেকে সখ্যতা ও হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। লীলাময়ী আদরে-আব্দারে স্বপ্ন বুনতে শুরু করে কিন্তু তার হৃদয়ে ভয়ও সমান পরিমাণ। কারণ সে নিষিদ্ধ জগতের নারী। যেই পুরুষেরা তাকে ভোগ করে যায় তারাও এই সংবাদকর্মীর মতোই। কিন্তু কাউকে মনে ধরেনি। টাকা উপর্জানের মাধ্যম হিসেবে লীলাময়ী গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে এই পেশা। কিন্তু হৃদয় তো অন্য জিনিস। সেখানে কারো জোরজবরদস্তি চলে না। তাইতো লীলার মনে আসন গ্রহণ করে ভ্রমণে আসা সাংবাদিক। এমনকি ভালোবেসে শরীরের আদান-প্রদানও হয় তাদের। কিন্তু সত্য উন্মোচিত হলে এই সাংবাদিকই লীলাকে কুকুরের মতো দূর করে দেয়। গল্পে এসেছে এভাবে:
বন্দরে নোঙর করে থাকা বিদেশি জাহাজের খালাসি-সারেংরা আমাকে ভালো টাকা দেয়। ছেলেটি চিৎকার করে ওঠে, বানিয়াশান্তার নিষিদ্ধপল্লীর মেয়ে তুমি?
মেয়েটি জলের মধ্যে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে, তুমি আমার ভগবান হও। আমি আর কোনো ভগবান চাই না। শুধু তোমাকে চাই।
-ছাড়ো, সরো। বেশ্যা একটা!
-ছেলেটি এক ধাক্কায় মেয়েটিকে সরিয়ে দেয়।১৫
এ কালের পান্তাবুড়ি (২০০২) গল্পগ্রন্থের নামগল্পে লেখক সেলিনা হোসেন সমাজের কদর্যতা তুলে ধরেছেন। সমাজের সাধারণ মানুষের প্রতি উচ্চবিত্ত শ্রেণির অত্যাচারের মাত্রা কতটা নির্মম হতে পারে তা এ গল্পে তুলে ধরেছেন। পান্তাবুড়ি সমাজের বিবেক। সমাজকে আগলে রেখেছে নিজের মানবিক গুণে। নিজের পেটে ভাত না জুটলেও গ্রামের কিশোর-যুবা-তরুণীদের ভরসা স্থল পান্তাবুড়ি। কিন্তু গ্রামের জোতদারশ্রেণি, রাঘববোয়ালদের অত্যাচারে তার ভিটেমাটিটুকু পর্যন্ত প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি। তবু পান্তাবুড়ির মনোবল তাকে সমাজের ঢাল হতে সাহায্য করেছে। গ্রামের আক্কাস মাস্টারকে ছুরি মেরেছে দুর্বৃত্তরা। মনিজার মতো তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে। সমাজের বাস্তব চিত্রের আলেখ্য লেখক সেলিনা হোসন গল্পের পটভূমি নির্মাণ করেছেন।
সেলিনা হোসেনের ছোটগল্পে তাঁর আবেগময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে। আলোচ্য পর্বের ছোটগল্পে সেলিনা হোসেন ব্যাপকভাবে শাহরিক জীবনের ক্যানভাসকে ব্যবহার করলেও ‘খোল করতাল’ (১৯৮২) গ্রন্থে মূলত ব্যবহৃত হয়েছে গ্রামীণ জীবনপ্যাটার্ন। একাত্তর-পরবর্তী গল্পে সেলিনা হোসেন নগর-সম্পৃক্তির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের রক্তিম অভিজ্ঞতাকে বৃহত্তর জীবনপ্রেক্ষিতে অবলোকন করেছেন। ‘জলবতী মেঘের বাতাস’ (১৯৭৫), ‘পরজন্ম’ (১৯৮৬), ‘মতিজানের মেয়েরা’ (১৯৯৫), অগ্রন্থিত গল্প প্রভৃতি গ্রন্থের গল্পসমূহে বাঙালির গৌরবময় মুক্তিসংগ্রাম অনিবার্যভাবে কাহিনী—উপাদান হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বর্ণনা-প্রধান সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ গল্প রচিত হলেও নৈঃসঙ্গ্যজীর্ণ নরনারীর বেদনাময় প্রান্ত উন্মোচনে সেলিনা হোসেন উত্তম পুরুষে কাহিনী রচনা করেছেন।১৬
অবেলার দিনক্ষণ (২০০৯) গল্পগ্রন্থের নামগল্পে লেখক সমাজকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। দীর্ঘাবয়বের এই গল্পে লেখক পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর অবস্থান, পুরুষের ইগো, সৎ মায়ের অবস্থান, পরিবারে কন্যা সন্তানের অবস্থান প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেছেন। প্রৌঢ় বয়সের একাকীত্ব আর যুবক বয়সের তেজোদ্দীপ্ত পৌরুষত্বে তার জীবন কেমন ছিল সেটাই ফ্লাশব্যাকে তুলে ধরেছেন লেখক। প্রথম স্ত্রীর সাত সন্তান এখন সবাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু একটি সময় সংগ্রাম করে তাদের চলতে হয়েছে। সাত ছেলে-মেয়ের সংসারে মিনহাজউদ্দিন থাকবে না। কিন্তু একাও তার থাকা কষ্ট। দেখভাল করার মতো একটি মানুষ তার চায়। বিপত্নীক হওয়ার পর বিয়ের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের কাছে মুখ ফুটে বলতে পারেনি। একসময় ছোট মেয়ে মুনিরাই সব পাকাপোক্ত করে। রাশিদা নামের এক বিধবা নারীকে দুই মেয়ে কুকি-রুকিসহ ঘরে আনে। দুই মেয়ে নতুন বাবাকে ভালোবাসে। এর মধ্যে দিয়েই মিনহাজউদ্দিন বিচরণ করতে থাকে তার ফেলে আসা জীবনকে। বার্ধক্যের ছাপ শরীরে নিয়ে একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য যেই রাশীদাকে ঘরে তোলে সে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। কিন্তু এই মিনহাজউদ্দিনই যৌবনে তার প্রথম স্ত্রী মাজেদাকে মর্যাদা দেয়নি। অসম্মান করেছে প্রতিনিয়ত। মাজেদার বাহ্যিক চেহারা ততটা সুশ্রী না থাকার কারণে মিনহাজ কোনোদিন তাকে পত্নীরূপে স্বীকার করেনি। যদিও মাজেদার বাবার টাকায় মিনহাজের উচ্চতর ডিগ্রি লাভ হয়েছে। গল্পের আদ্যপান্ত এক পরাজিত নায়কের জীবনকাহিনি তুলে ধরেছেন লেখক।
এছাড়া বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি সেলিনা হোসেনের ‘অচেনা’; ‘নো ক্লু’; ‘মৃত্যু’; ‘পুনরায় ইহকাল’; ‘মর্গ’ ; ‘খরচ’ ; ‘পলাতক রঙ’; ‘কাকজ্যোৎস্না’; ‘দীপান্বিতা’; ‘যুদ্ধজয়’; ‘ঋণশোধ’; ‘নতুন জলের শব্দ’; ‘প্রার্থনা’; ‘ঘৃণা’; ‘ইজ্জত’; ‘আকলির স্টেশন জীবন’; ‘খুঁজতে যাওয়া’ প্রভৃতি গল্পে বিশেষভাবে সমাজ এবং রাজনীতির অনুষঙ্গ এসেছে। যার মাধ্যমে লেখকের জীবনবোধ এবং সুতীক্ষè দৃষ্টি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। এছাড়া তাঁর গল্প-উপন্যাস পাঠে সমকালীন দ্বন্দ্ব-সংকট, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কেও অবগত হওয়া যায়।
সেলিনা হোসেনের গল্পের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাংলা এবং বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য। সমকালকে ধারণ করা সাহিত্যিকের অন্যতম সাধনা তবে সেই কাজটিও সব লেখকের হাতে সুনিপুণভাবে ফুটে ওঠে না। যিনি পারেন তিনি অপরাজেয়। এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিক তাই চির অম্লান হয়ে আপন আসন অলঙ্কৃত করেছেন। তাই বাংলা সাহিত্য সম্ভারকে ঋদ্ধ করার এই অপরিমেয় ক্ষমতাধর শিল্পীকে শত কোটি প্রণাম। তাঁর সৃষ্টি সম্ভারে পূর্ণ হোক পাঠক হৃদয়।
তথ্যসূত্র
১. আজহার ইসলাম, বাংলাদেশের ছোটগল্প: বিষয়-ভাবনা স্বরূপ ও শিল্পমূল্য, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা-৪২৫
২. সেলিনা হোসেন, নির্বাচিত গল্প-১, সৃজনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০১২, পৃ.৩৫-৩৬
৩. তদেব, পৃ.৩৭
৪. বিনয় ঘোষ, বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা, বুক ক্লাব, ঢাকা, ২০০০,পৃ. ১৪২
৫. সেলিনা হোসেন, নির্বাচিত গল্প-১, সৃজনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০১২, পৃ.৭২
৬. তদেব, পৃ.৭৭
৭. তদেব, পৃ. ১৪৩
৮. তদেব, পৃ. ১৪৪
৯. তদেব, পৃ. ১৬০
১০. তদেব, পৃ.২১১
১১. সেলিনা হোসেন, পঞ্চাশটি গল্প, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ জানুয়ারি: ২০১৪, পৃ. ০৬
১২. বীরেন্দ্র দত্ত, বাংলা ছোটগল্প: প্রসঙ্গ ও প্রকরণ, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, নবম মুদ্রণ: আগস্ট ২০১৯, পৃ. ২৭২
১৩. সেলিনা হোসেন, নির্বাচিত গল্প-১, সৃজনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০১২, পৃ.২৭০
১৪. তদেব, পৃ.২৭১
১৫. তদেব, পৃ. ১১২
১৬. চঞ্চল কুমার বোস, বাংলাদেশের ছোটগল্পের শিল্পরূপ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ২০০৯, পৃ. ৩০৭