ভাষা দৈনন্দিন যোগাযোগের মাধ্যম। যুগে যুগে ভাষা ব্যবহারের পদ্ধতি ছিল মাত্র দুটি; কথ্য ও লেখ্য। বর্তমানে ভাষা ব্যবহারের পদ্ধতি কয়েক প্রকার। প্রথমত কথ্য বা ওরাল, দ্বিতীয়ত, লেখ্য বা টেকচুয়াল; তৃতীয়ত শব্দধারণ বা অডিও এবং চতুর্থত, শব্দধারণ ও চিত্রগ্রহণ বা ভিডিও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সর্বাধুনিক মাধ্যম অনলাইনে এর সব পদ্ধতিই একত্রে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশে সব মাধ্যমে পৃথক অথবা একত্রে ভাষা ব্যবহারকারীর শ্রেণী বিভাগটা এমন হতে পারে:
১. রাজনীতি (ডান, বাম, মধ্য নানান ধারার রাজনীতির নেতা, কর্মী ও সমর্থক)
২.আইন (আইনসভার সদস্য, প্রশাসন, ছাত্রশিক্ষক, আইনজীবী ও তাদের মুহুরি বা সংশ্লিষ্ট কর্মচারী)
৩. ধর্ম (সব ধর্মের অনুসারীদের পৃথক ভাষা হলেও সবাইকে নিয়ে)
৪. গণমাধ্যম (প্রিন্ট মাধ্যম, সম্প্রচার মাধ্যম ও অনলাইন মাধ্যম)
৫. সাহিত্য (সাহিত্যিক বা সাহিত্যকর্মী, সাহিত্যের ছাত্রশিক্ষক ও পাঠক)
৬. বিজ্ঞান (বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মী ও বিজ্ঞানের ছাত্রশিক্ষক ও পাঠক)
৭. দর্শন (দার্শনিক, দর্শনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ও পাঠক)
সাহিত্য হলো ভাষা ব্যবহারকারী অন্যতম শক্তিশালী একটি দল। একমাত্র নয়। সাহিত্যের সম্পাদনা মানে ভাষার সবগুলো ক্ষেত্র সম্পাদনা নয়। আইনের ভাষা সম্পাদনার কাজ আইনজীবী ও আইনপ্রণেতাগণ ভালো বোঝেন। রাজনীতির ভাষা রাজনীতিবিদগণ এবং তাদের উপদেষ্টারা ভালো বোঝেন। দর্শনের ভাষা দার্শনিকেরা ও দর্শনবিদরা সমালোচনা এবং সম্পাদনা করতে পারেন।
ভাষা ছাড়াও আছে সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রচলিত সব বিষয়ের জন্য রয়েছে নির্ধারিত পরিভাষা। পরিভাষা ভাষাচিন্তার অংশ, কিন্তু সাহিত্যের না। আবার প্রতিটি বিষয়সম্পৃক্ত মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে অপভাষা। শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান-দর্শন বা ধর্ম প্রতিটি বিষয়ে কিছু অপশব্দ লোকেরা ব্যবহার করে থাকে। এর বেশিরভাগই কথ্য। তবে কিছু লেখ্যরূপও দেখা যায়।
দুই.
সাহিত্য সম্পাদনা বলতে আমরা কী বুঝি? এটি বড় প্রশ্ন। আমাদের দেশে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বঙ্গদর্শন’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সাধনা’, প্রমথ চৌধুরী ‘সবুজপত্র’, কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূমকেতু’, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ‘পরিচয়’ বুদ্ধদেব বসু ‘কবিতা’ বিষ্ণু দে ‘সাহিত্য পত্র’, সিকান্দার আবু জাফর ‘সমকাল’ সম্পাদনা করে বিশেষ উদাহরণ রেখে গেছেন। এর বাইরেও অনেক সাহিত্য পত্রিকা অনেক লেখক সম্পাদনা করে গেছেন। এসব সাহিত্য-পত্রিকার সম্পাদনার কোনো নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো ছিল কি না, জানি না। তবে সম্পাদক নয় বরং লেখকের কর্তব্য নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রবন্ধ লিখে গেছেন একাধিক। এর মধ্যে একটি ‘রচনার শিল্পগুণ।’ রবীন্দ্রনাথও প্রবন্ধ লিখেছেন লেখকের প্রতি নানা উপদেশ দিয়ে। বুদ্ধদেব বসু ‘কবিতা’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন সবচেয়ে বেশি দিন। তিনি নিজে ‘কবিতা’ পত্রিকার সম্পাদকীয় এবং অন্য গদ্য রচনায় যে বানানভঙ্গি ব্যবহার করেছেন তার পত্রিকার লেখকদের সে বানানরীতি লঙ্ঘন করতেও দেখা যায়। যেমন বুদ্ধদেব বসু উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের নামের বানান লিখতেন ‘ওয়ার্ডস্বার্থ’ এই বানান অন্য কেউ গ্রহণ করেননি। ইংরেজি ডব্লিউ এর প্রতিবর্ণ হিসাবে অন্তন্থ-ব যুক্তব্যঞ্জনে ব্যবহার তিনি করেছেন, অন্য কেউ করেননি। এটি প্রচলিত বাংলায় হয়ে যায় ‘ওয়ার্ড’ ও ‘স্বার্থ’।
সম্পাদনা বলেতে আমরা সাধারণত এমন এক ধরনের কাজকেও বুঝি, যা আসলে সম্পাদনা নয়। ধরা যাক ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা কবিতা’ নামে একটি সংকলন গ্রন্থন করলেন কোনো লেখক। দেখা যাবে গ্রন্থে ‘সংকলক’ না লিখে ‘সম্পাদক’ বা ‘সম্পাদনা’ লেখা হবে। হয়ও।
পশ্চিমের সাহিত্য জগতে সম্পাদকের কাজ লেখকের তুলনায় সামান্য। পত্রিকার যদি কোনো নিজস্ব বানানরীতি আ স্টাইলশিট থাকে সে রীতি অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তা দেখা। বানান ঠিক করা তার কাজ। কিন্তু তথ্যগত ত্রুটি থাকলে তা লেখককে অবহিত করতে হয়। টীকা-টিপ্পনীতে অসঙ্গতি থাকলে, রেফারেন্সে ভুল থাকলে লেখককে অবহিত করা তাদের কাজ। লেখকের দায় ও দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
লেখক যেভাবে লেখা পাঠান, সেভাবে ছাপাবেন নাকি সম্পাদক নিজের ইচ্ছামতো অথবা তার পত্রিকার রীতিমতো পরিবর্তন করে নেবেন, সেটি লেখককে আগে থেকেই জানানো উচিত। আমাদের দেশে অনেক সাহিত্য সম্পাদক নিজেকে বুদ্ধদেব বসুর মতো গুণবিচারী বলে মনে করেন। বুদ্ধদেব বসুর মতো হতে হলে তার মতো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। বুদ্ধদেব বসু লেখকের লেখা পড়ে আপত্তিকর কিছু দেখলে বা অসঙ্গতি মনে করলে দাগ দিয়ে বা উল্লেখ করে চিঠি লিখে জানাতেন। লেখকের ত্রুটি লেখকের হাত দিয়েই সারাতেন। ড. আশরাফ সিদ্দিকীকে লেখা বুদ্ধদেব বসুর চিঠিপত্রগুলো পড়লে সে দায়িত্বশীলতার অনেক নমুনা দেখা যায়। আমাদের দেশের অনেক গবেষণা জার্নালের সম্পাদনা পরিষদও জমাকৃত লেখার মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ কিছু পেলে, অসম্পূর্ণতা, অসঙ্গতি ইত্যাদি দেখলে ই-মেইলে সংশোধন করতে পাঠান লেখকের কাছেই। যদিও একাধিক সম্পাদক বিষয়টি পড়ে মূল্যায়ন করেন আগে। তারপরে লেখার উপযোগী হয়েছে কি না বা কী কী সংশোধন করলে মুদ্রণযোগ্য হবে, তা উল্লেখ করে দেন।
লেখকের অনুমতি ছাড়া কোনো কাটা-ছেঁড়া, সংযোজন-বিয়োজন করা উচিত না। কারণ লেখকের নিজস্ব ভাষারীতি এতে ক্ষুণ্ন হতে পারে। শব্দের ভিন্নার্থ বা দ্ব্যর্থবোধকতা নিহত হতে পারে। ড. আহমদ শরীফ, তার কয়েকজন সুযোগ্য ছাত্র, অনুসারী ও ভাষাসচেতন অনেকেই বাংলা লেখেন ঙ দিয়ে। তাঁরা দেশের নামও লেখেন ‘বাঙলাদেশ’। তাঁদের এই বানান কেটে ফেলা, পরিবর্তন করা দুঃসাধ্য কাজ। ‘মফিজন’, ‘মোমেনের জবানবন্দী’ প্রভৃতি গ্রন্থের সুলেখক মাহবুব-উল-আলম ক্রিয়াপদে ‘র’ থাকলে তা রেফ হিসাবে ব্যবহার করতেন, এটাই তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য। যেমন, কর্লেন, মার্লেন ইত্যাদি।
সর্বনাম পদের চন্দ্রবিন্দু নিয়ে অনেক সম্পাদকের অনেক রকম বিধিনিষেধ থাকতে পারে। কিন্তু একজন সমাজসচেতন, শ্রেণীসচেতন গল্পকার বা ঔপন্যাসিক যদি কুলি-মজুর ইত্যাদি শ্রমিক শ্রেণীর চরিত্রদের সম্মানসূচক সর্বনাম পদ দিতে চান, সম্পাদক তা কোন অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন?
সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক যদি বুদ্ধদেব বসুর মতো কবি, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক, ছড়াকার, বহুভাষাবিদ ইত্যাদি বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী হন, তাহলেই তিনি যে কোনো ধরনের লেখার মূল সুর ধরতে পারবেন। যদি হন শুধু কবি, তাহলে তার পক্ষে গল্প-উপন্যাস সম্পাদনা করা কঠিন হবে। যদি হন শুধু গল্পকার বা ঔপন্যাসিক তাহলে তার পক্ষে কবিতার সুষ্ঠু সম্পাদনা করা কঠিন হবে। বহুভাষাবিদ না হলে অনুবাদ রচনা সম্পাদনা করতে পারবেন না। যা পারবেন, তা সংকলন গ্রন্থনা বলা যেতে পারে। বলা যেতে পারে প্রকাশনা। সম্পাদক সেক্ষেত্রে হবেন একজন প্রকাশক মাত্র।
পত্রিকা সম্পাদক নিজে যোগ্য কবি হলে কবিতার রস বুঝবেন, সুর বুঝবেন। ছন্দ-অলঙ্কার বুঝবেন। তিনি যদি ছাত্রপাঠ্য ব্যাকরণের শিক্ষকের মতো সম্পাদক হন তাহলে অবশ্যই জীবনানন্দ দাশের ‘সেইসব শেয়ালেরা’ ছাপবেন না। এখানে তিনি বাহুল্যদোষ খুঁজে পাবেন। অক্ষরবৃত্তের আটমাত্রা তার হাতে মার খেয়ে ‘সেইসব শেয়াল’ শব্দবন্ধরূপে সাত মাত্রা করে তুলবে; অথবা ‘সেই শেয়ালেরা’ লিখে ছয়মাত্রা বানিয়ে ছাড়বেন। গানের সুর এবং গভীর অনুধাবন ক্ষমতা না থাকলে আবদুল আলীমের গান থেকে ‘গঙ্গায় তরঙ্গ ঢেউ খেলে’ কেটে ফেলবেন। কারণ তরঙ্গ আর ঢেউ সমার্থক শব্দ, দুই বার বলা ব্যাকরণদোষ। এখানে সঙ্গীত অনুরাগী মন নিয়ে শুনলেই বুঝা যায়, তরঙ্গ এখানে কর্তা আর ‘ঢেউ খেলে’ একটি যৌগিক ক্রিয়া। এর অর্থ ‘দোলা দেওয়া’। যদি ভালো কথাসাহিত্যিক না হন, চরিত্রদের বয়স ও মনস্তত্ত্ব না বোঝেন, তাহলে সত্যজিৎ রায়ের ‘পিকুর ডায়েরী’ গল্পটি কেটেকুটে সর্বনাশ করে ফেলবেন। কারণ এ গল্পটি লেখক স্বেচ্ছাকৃত ভুল বানানে ও ভুল ব্যাকরণে লিখেছেন।
ছাত্রপাঠ্য ব্যাকরণের গুরুচণ্ডালী দোষ এবং বাহুল্য দোষ সংশোধনের নামে নষ্ট হবে কবিতার সুর, ছন্দ, অলঙ্কার ইত্যাদি। দ্বিরুক্তি, পুনরুক্তি সাহিত্যের অংশ। এগুলো কেটে ছেঁটে ফেললে সংবাদপত্রের বা সাংবাদিকতার ভাষা হবে কিন্তু নিহত হবে সাহিত্যের ভাষা।
তিন
সৈয়দ শামসুল হক ‘মার্জিনে মন্তব্য ও গল্পের কলকব্জা’য় সাহিত্যের ভাষার সঙ্গে আইনের ভাষার পার্থক্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে আমাদের সংবিধানের ভাষার উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। সত্যি, আমাদের সংবিধানের সপ্তম তফসিলের ১৫০ (২) অুনচ্ছেদে উল্লিখিত ১৯৭১ সালের ১০এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পড়ে দেখুন, ‘এবং যেহেতু’ এমন দুটি অব্যয় পদ দিয়ে প্রতিটি অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যগুলো লিখিত হয়েছে। এটি নিশ্চয়ই সাহিত্যের ভাষা নয়। সাহিত্যে সাধারণত এভাবে বাক্য শুরু হয় না। আবার ইসলাম ধর্মের প্রধান গ্রন্থ কোরানের অনেক বাক্য এমন অব্যয় দিয়ে শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞানের ভাষাও ভিন্ন বিষয়। যদিও বিজ্ঞানের ভাষা ও পরিভাষা অন্য সব ভাষা ব্যবহারকারী দল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, তবু সেখানে সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ আছে। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর ‘জিজ্ঞাসা’ কিংবা জগদীশচন্দ্র বসুর ‘অব্যক্ত’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘বিশ্বপরিচয়’ একই ভাষায় লেখা নয়। আবার আবদুল্লাহ আল মুতির ‘এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে’ বা মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘একটুখানি বিজ্ঞান’ সম্পূর্ণ পৃথক ভাষায় লেখা। যদিও এসব গ্রন্থ মূলত সব ধরনের পাঠকের জন্য লেখা হয়েছে তাই ভাষা অনেক সহজ। আসলে বিজ্ঞানের ভাষার উদাহরণ দেওয়া উচিত বিজ্ঞানের গবেষণা জার্নাল থেকে। বিজ্ঞানের সে ভাষা গাণিতিক সূত্রে সাজানো। সর্বসাধারণের কাছে প্রায়ই অপাঠ্য।
সংবাদপত্রের জন্য বিজ্ঞানের একটি সহজভাষ্য লেখা হয় নানা ফিচারের মাধ্যমে। এটিই বিজ্ঞানের মূল ভাষা নয়, সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে লেখা এক সহজভাষ্য মাত্র। এ ধরনের লেখাকে ‘পপুলার সায়েন্স’ বা ‘পপসায়েন্স’ বলা হয়। যেমন, আছে পপ লিটারেচার, পপ মিউজিক ইত্যাদি।
ওপরের উদাহরণ থেকেই আমরা বুঝতে পারি, সংবাদপত্রের জন্য লেখা সাহিত্যই আসল সাহিত্য নয়। তবে হতে পারে, যোগ্য সম্পাদকের সাহস ও কৌশলে। আমি নিজে যখন যে পত্রিকায় লেখা দেই, সেই পত্রিকার নিয়ম মেনে, বানানরীতি মেনে দেই। চাহিদামতো শব্দসংখ্যার ভেতর লেখা দেই। কিন্তু গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় নিজের বানান, রুচি ও শব্দসংখ্যা অক্ষুণ্ন রাখি। সংবাদপত্রের সাহিত্য থেকে লিটল ম্যাগাজিন বা সাহিত্যপত্রিকার জন্য লেখা সাহিত্য অনেক ভিন্ন। যারা সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, বা সংবাদপত্রের নীতিমালা জানেন, তাদের জানা আছে, দৈনিক সংবাদপত্র ছাপা হয় পঞ্চম শ্রেণীর পাঠক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদের মতো পাঠকের উপযোগী করে। অর্থাৎ গড় পাঠকের জন্য লেখা হয়, ছাপা হয়। সেখানে সাহিত্যের আসল রূপ না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নাই।
সংবাদপত্রগুলো সব ধরনের কথা ছাপাতে পারে না। যত রকমের আইনের ভেতর দিয়ে সংবাদপত্রকে যেতে হয়, কবিতা বা গল্প কিংবা একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ ছেপে পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার সময় সে ধরনের আইনের ভেতর দিয়ে যেতে হয় না। বলা যায় গ্রন্থপ্রকাশের জায়গাটা এখনো মুক্ত। কাজেই সংবাদপত্রের সম্পাদনা অতি কঠিন হবে, তা সহাজেই অনুমেয়।
চার.
সংবাদপত্রের সম্পাদনা ও সাহিত্যের সম্পাদনার পার্থক্য এলোমেলো কথাগুলো থেকেও বোঝা যায়। অনেকে না পড়েও বুঝতে পারেন। তবে সাহিত্য সম্পাদকের কাজের পরিধি নিয়ে এখনো স্পষ্ট হতে পারলাম না। ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট আছে। এমন একটি সাইটের নাম www. the reviewreview.net এখানে ‘সম্পাদকের করণীয়’ নামের একটি রচনা পেলাম। সেখানে সম্পাদকের কাজের চেয়ে সম্পাদকের কাছে লেখা পাঠানোর আগের ও পরের লেখকের দায় ও দায়িত্ব নিয়েই কথা লেখা হয়েছে বেশি। সম্পাদকের কাছে পাঠানোর আগের ও পরের কর্তব্যগুলোতে প্রমাণিত হয়, রচনার শিল্পগুণ নির্ভর করে লেখকের ওপর। সম্পাদকের কাছে লেখাটি ভালো না লাগলে তিনি আপত্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ফেরত দিতে পারেন। রিজেক্টেড লেখা বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা লেখকের থাকতে হবে।
সম্পাদকের উচিত হবে, তার পত্রিকায় লেখার নীতিমালা প্রকাশ করা। যদি সম্পাদক নিজের মতো করে নিতে চান, তাহলে আগেই সে শর্ত জানানো উচিত, সম্মতি আদায় করে নেওয়া ভালো। লেখকের উচিত, সেসব শর্ত ও নীতিমালা মেনে লেখা পাঠানো। ফেরত পাঠানো লেখা প্রয়োজনে সংশোধন করে দেওয়া। বানান, ব্যাকরণ, ছন্দ, অলঙ্কার সম্পর্কে লেখককেই সচেতন হতে হবে। তথ্যের ভুল ভ্রান্তি মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এসব মেনে লেখালেখি করলে সম্পাদকের রূঢ় আচরণেও সম্পর্ক অটুট থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে লেখকের পছন্দের না হলে সম্পাদকের নামে ব্যক্তিগত দুর্নাম রটানোর প্রবণতা আছে। এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হয়। অনেক সম্পাদক সর্বদা অন্যের রচনা কাটাছেঁড়া করেন বলে নিজে অন্যের পত্রিকায় লেখা দেন না। পাছে তার ভুল ধরে ধরে কেউ হেসে ওঠে। এভাবে সম্পাদক একঘরে হয়ে পড়েন।
আসলে সম্পাদক নিজে দায় কম নিয়ে লেখককেই অধিকতর দায়িত্বশীল করে তুলতে পারেন। এটাই উচিত।