কবিতা হচ্ছে সাহিত্যের আদিমতম শাখা। কবিতা মানে ‘নির্মাণ’ অথবা ‘তৈরি করা’। কবিতা শিল্পের মহোত্তম শাখা হিসেবে বিবেচিত। এটি শিল্পের একটি শাখা, যেখানে ভাষার নান্দনিক গুণাবলির ব্যবহারের পাশাপাশি ধারণাগত এবং শব্দার্থিক বিষয়বস্তু ব্যবহার করা হয়। কবিতার আছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাস যুগে যুগে আরও দীর্ঘ হয়েছে ও ভবিষ্যতেও হবে। আমরা জানি, কবিতা হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্যবিন্যাস। যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তার সংক্ষিপ্ত রূপ। তা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত সৃষ্টির উদাহরণ।
পৃথিবীর তাবৎ বিষয়কে পুঁজি করে কবিতা সুমধুর শ্রুতিযোগ্য হয়ে ওঠে। কাঠামোর বিচারে কবিতা নানা রকম হতে পারে। তাই যুগে যুগে কবিরা কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোয় পরিবর্তন এনেছেন। আনার চেষ্টা করেছেন। তবে অনেকের কাছে কবিতা লেখা সহজ মনে হলেও কবিতাই একমাত্র কঠিনতম শিল্পকর্ম। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যাকে সহজ মনে হয়। কিন্তু এর অন্তর্গত নির্মাণকাজ আদৌ সহজ নয়। আর এই কঠিনেরেই অনেকে ভালোবেসে নিজেকে নিবেদন করেছেন। কবি মোহাম্মদ নূরুল হক সেই কঠিন কবিতাশ্রমিকদের একজন।
মোহাম্মদ নূরুল হক একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক। তিনটি শাখায়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যখন কবিতা লেখেন; তখন তাকে শুধুই কবি মনে হয়। আবার তিনি যখন প্রবন্ধ লেখেন; তখন জাতপ্রাবন্ধিক মনে হয়। এমনকি তিনি যখন সম্পাদনা করেন; তখন তাকে আগাগোড়া সম্পাদকই মনে হয়। অর্থাৎ যখন যে কাজটি তিনি করেন; আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারেই করেন। তার তিনটি সবিশেষ গুণ নিয়ে আলোচনা করলে ব্যাপক সময়ের প্রয়োজন। তাই আজ শুধু তার কবিসত্তা জানার চেষ্টা করবো।
সময় বিচারে মোহাম্মদ নূরুল হক একুশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতায় নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করেন। যদিও তিনি দশক বিশ্বাসী নন। এমনকি আমার কাছেও কবিকে দশকবন্দি করে রাখার কোনো মানে হয় না। কবি সমকালের। সময়কে ধারণ করাই তার কাজ। এরপরও মোহাম্মদ নূরুল হকের এই পর্যন্ত চারটি কবিতার বই বের হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—‘মাতাল নদীর প্রত্ন বিহার’, ‘স্বরচিত চাঁদ’, ‘উপ-বিকল্প সম্পাদকীয়’ ও ‘লাল রাত্রির গান’। এছাড়া অগ্রন্থিত অনেক কবিতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তবে আর দশজন কবির মতো প্রতি সপ্তাহে তার কবিতা একাধিক সাহিত্যপাতায় প্রকাশ হতে দেখা যায় না। বিষয়টি আমাদের জন্য ভাবনার হলেও তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। তার মতে, যোগ্য কবিতা কেবল যোগ্যরাই সম্পাদনা করতে পারেন।
তার কবিতাবিষয়ক একাধিক প্রবন্ধ পড়ে মনে হয়েছে, কবিতার নাড়ি-নক্ষত্র জানা না থাকলে এমন সুগভীর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করা সম্ভব নয়। তেমনই তার কবিতায় ছন্দ, মাত্রা, তাল, লয়, উপমা, অনুপ্রাস, উৎপ্রেক্ষা—সবই যেন সাবলীলভাবে ধরা দেয়। তিনি দেখিয়ে দেন, নিয়মের ভেতরে থেকেই এত সুন্দর করে কবিতা রচনা করা যায়। যারা নিয়ম ভাঙার কথা বলেন, তারা আসলে নিয়ম সম্পর্কেই জানেন না।
আমরা দেখতে পাই, তার কবিতায় গ্রামীণ জীবন, নাগরিক জীবন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি নানাবিধ বিষয় উঠে এসেছে। তার কবিতা পাঠকালে এক ধরনের সাংগীতিক দোলা অনুভূত হয় পাঠকের হৃদয়ে। কবিতার প্রতিটি দৃশ্যপট, ভাবনা, কল্পনা, অনুভূতি নিজের বলে মনে হয়। যে কথা আমি বলতে চাই বা চেয়েছিলাম, তা-ই যেন মোহাম্মদ নূরুল হক বলে দিচ্ছেন অনায়াসে। পাঠকের হৃদয়ের সঙ্গে তার কবিতার হৃদ্যতা আসলে এখানেই। এ কারণেই কবিরা স্বপ্নদ্রষ্টা, কবিরা ভবিষ্যৎ অবলোকন করতে পারেন। তাই আমার মনে হয়, তার কবিতার সার্থকতা এখানেই।
তার ‘আবহমান’ কবিতায় রাধা-কৃষ্ণ, বেহুলা-লখিন্দর, ইউসুফ-জুলেখা, লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে। এই রূপকথা-লোককথার বাইরেও ঘরের সাধারণ নাস্তার টেবিল তার কবিতায় বিশেষায়িত হয়ে ওঠে
উপমার ক্ষেত্রেও কবি অতুলনীয়। অহেতুক শব্দের ব্যবহার নেই তার কবিতায়। অকল্পনীয় বা অবাস্তব শব্দ বা ভাব তার কবিতায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। যথাযথ উপমার ব্যবহার তার কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। কবির ভাষায় বলতে গেলে,
ডালিম দানার মতো লাল লাল কামুক সূর্যাস্তে
লাফিয়ে উঠুক মুঠোবন্দি রাধিকার স্তন। আর—
সমস্ত আকাশ সেই শিক্ষিত মন্থন দৃশ্য দেখে
নাক্ষত্রিক বেদনায় কেঁদে কেঁদে উঠুক এবার।
(স্রোতের নামতা)
এখানে প্রতিটি শব্দ-উপমা যেন একে অপরের পরিপূরক। কোনোটিকেই বিচ্ছিন্ন করার বা বিচ্ছিন্ন ভাবার আসলে সুযোগ নেই। একই ভাবে কবি অন্যত্র বলেছেন,
অসুখী বয়সী রাতে ভেসে যাচ্ছি ধূলোস্রোতে আমরা কজন।
রাতগুলো ক্লান্তিহীন। সিলিংফ্যানের হাওয়ারা—
কেঁপে কেঁপে ঘুমুচ্ছে দেয়ালে।
শুধু আমরা কজন নির্ঘুম চাঁদের সঙ্গী।
বসে আছি পবিত্র নরকে। পান করে গলিত জোছনা আর তার
অপরূপা রূপ।
(উত্তরবাঁকের মেঘ)
উপমা ছাড়াও ছন্দের বিষয়ে তিনি বরাবরই আপোসহীন। ছন্দহীন কবিতাকে তিনি কবিতা বলতে নারাজ। তার মতে, ছন্দ হচ্ছে কবিতার প্রাণ। প্রাণ ছাড়া কবিতা কী করে বেঁচে থাকবে? তাই তো কবি তার কবিতায় যখন বলেন,
উড়ছে দেখে মেঘরমণী বাতাসে নির্ভয়ে
আমার দু’চোখ থমকে গ্যাছে অনন্ত বিস্ময়ে।
মেঘরমণী মেঘ নয় যেন নারীর কোমল মন
শহর ছেড়ে উড়ছে বুঝি হাওয়ায় অনুক্ষণ?
তবে অনেকেই কবিতার অন্ত্যমিলকেই ছন্দজ্ঞান করে থাকেন। কিন্তু কবি মনে করেন, প্রতিটি শব্দের ভেতরে ছন্দ থাকতে হবে। একটি শব্দ থেকে অন্য শব্দে গমনের সময়ও সেই ছন্দ পাঠককে দোলা দিয়ে যাবে। তাই ছন্দজ্ঞান নিয়েই কেবল কবিতা লেখার আহ্বান জানান তিনি বিভিন্ন সময়ে।
একটি বিষয় আমি লক্ষ করেছি তার কবিতা পড়তে গিয়ে। কবিতার ব্যাকরণ যেমন তার কাছে আরাধ্য; তেমনই ভাব প্রকাশেও তিনি বিদগ্ধ মনীষী। কারণ তিনি আবেগ প্রকাশে সংযমী। তার আবেগ প্রকাশিত হয় ভাষা, ছন্দ, কবিতায়। ফলে সে আবেগ হয়ে ওঠে যুক্তিসঙ্গত। তার প্রায় কবিতার শরীরজুড়ে আবেগ আর বিরহের ছড়াছড়ি। নীরবে-নিভৃতে কবি ভালোবেসে গেছেন। পাওয়া-না পাওয়ার বেদনা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন মানব জনম। অথচ কবির কোনো গল্প নেই। যা আছে সব নিজের অনুভূতি। সেই অনুভূতি কারও সঙ্গে ভাগ করেন না তিনি। কারণ তার কোনো বন্ধুও নেই। তার মতে,
আমার কোনো বন্ধু নেই
না সচিবালয়ে না পুলিশে—আর্মি—র্যাবে
তাই আমার কোনো গল্প থাকে না
এসব আড্ডায়।
(মানুষের কত গল্প থাকে)
নিভৃতচারী মানুষটি তার দীর্ঘশ্বাস জমিয়ে রাখেন রাতের গভীরে। আর হেঁটে যান নিজস্ব গন্তব্যের দিকে। এখানেই তার চিন্তার সার্থকতা।
তার কবিতায় গ্রামবাংলা ধরা দেয় আপন মহিমায়। কারণ তিনি শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও তারুণ্য গ্রামেই কাটিয়েছেন। যদিও কর্মের সন্ধানে পা ফেলেছেন নগরে। তাই নগর জীবন তাকে স্মৃতিতাড়িত করে। ফলে নগরীর বাস্তবতা সুনিপুণভাবে তুলেছেন কবিতায়। তিনি বলেন—
আমরা গ্রামের ছেলে—চিরকাল অবুঝ-অবুঝ
বুঝিনি স্বার্থের প্যাঁচ, শুধু জানি ভালোবাসাবাসি
আমাদের কোনো ক্যালেন্ডার নেই
কোকিলের ডাক শুনে বুঝে যাই বসন্ত এসেছে
ভুলে যাই কবেকার বিষণ্ন সকাল!
ছন্দে ছন্দে মাঠে নামি
ঘরে ফিরি মাতাল সন্ধ্যায়!
(কাচারি ঘরের পালা)
গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রত্যেকেরই এমন কাচারি ঘরের ইতিহাস বা স্মৃতি রয়েছে। তাই কবিতাটি পড়লে সবাই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়বেন বলে মনে করি।
স্মৃতিতাড়িত কবি ভালোবাসারও কাঙাল। তাই তো তার রাত বিরহের। তিনি কেবল ভালোবেসেই যান। তাই তো বিরহকে সঙ্গী করে নেন। ফলে রাত নিয়ে কবির আলাদা দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন কবিতায়। রাতের গভীরে নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। কবি বলে ওঠেন,
অনন্ত তৃষ্ণায় আমি পুড়ি, আর পোড়ে
রাগি রোদ্দুরের চৈত্রে গেরুয়া বাউল;
আমাদের রাত্রি তবু সুর তোলে চির বিরহের!’
(লাল রাত্রির কসম)
শুধু তা-ই নয়, মোহাম্মদ নূরুল হকের কবিতার পরতে পরতে ইতিহাস, রূপকথা, লোককথা, উপকথা, ঐতিহ্য, প্রণয়োপাখ্যান প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে। তার ‘আবহমান’ কবিতায় রাধা-কৃষ্ণ, বেহুলা-লখিন্দর, ইউসুফ-জুলেখা, লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে। এই রূপকথা-লোককথার বাইরেও ঘরের সাধারণ নাস্তার টেবিল তার কবিতায় বিশেষায়িত হয়ে ওঠে। নাস্তার টেবিলকে কবিতায় এমনভাবে উপস্থাপন করা কেবল তার দ্বারাই সম্ভব। কবিতায় তার শব্দবৈচিত্র্য পাঠককে ভাবাতে চেষ্টা করে।
হয়তো আমরা তাকে যত্ন করতে জানি না বা যত্ন করতে চাই না। তবে এ কথা সত্য, আমরা চাই বা না চাই, যত্ন করি বা না করি; তিনি কিন্তু ফুটে থাকবেন তার আপন মহিমায়। সময়ই হয়তো একদিন কবিকে স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে।
কবি যেন বরাবরই একাকিত্ব অনুভব করেন। আর সেই একাকিত্বের অনুষঙ্গ হয়ে বারবার ধরা দেয় রাতের নির্জনতা বা রাতের গভীরতা। তার বেশিরভাগ কবিতায় তাই রাত এসেছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। রাতকে তিনি কখনো গোপনীয়তা, কখনো নীরবতা, কখনো সীমাহীনতা হিসেবে কল্পনা করেছেন। তাতে কেমন যেন একটা নিঃসঙ্গতা ভর করে আছে। আবার তিনি নিঃসঙ্গতাকে ভালোবাসেন না কি এড়িয়ে চলতে চান, তা ঠিক বোধগম্য নয় আমার কাছে। এসব বিরহ-বেদনা ছাড়াও কবিকে প্রতিবাদী হতে দেখেছি। কোনো কোনো কবিতায় তিনি প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন বিষয়ে। ধর্ষণ, হত্যা, হামলা, জঙ্গিবাদ নিয়েও কথা বলেছেন কবি। তার প্রতিবাদের ধরন এরকম,
এদেশে মৃত্যুর উৎসব চলে হরদম,
এদেশে খুনের উৎসব; উপভোগ করে খোদ রাষ্ট্রযন্ত্র
ছিন্নমস্তক যুবক পড়ে থাকে ঘরে-ম্যানহোলে
মন্ত্রীরা উল্লাসে নাচে, হাতে হাতে বিয়ারের গ্লাস।
(মন্ত্রী মহোদয়গণ)
কেননা রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের অন্যায়-অসঙ্গতিও কবিকে ভাবিত করে। তাই তিনি শ্লেষ বা উষ্মা প্রকাশ করেন কবিতার চরণে চরণে। মোহাম্মদ নূরুল হকের কবিতার ভাব, ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার, অন্ত্যমিল, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, যমক—সবকিছুই পাঠককে আকৃষ্ট করে। ছন্দের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ফুটে ওঠে প্রতিটি কবিতায়। শুধু কবিতায়ই নয়, একজন বিদগ্ধ প্রাবন্ধিক হিসেবেও কবিতায় ছন্দের ব্যবহারকে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। যারা ছন্দবিরোধী; তাদের তিনি কবি বলতে নারাজ। তবে কখনো কখনো তিনি মুক্তক ছন্দে বা গদ্যছন্দে কবিতা লিখে থাকেন। কারণ মোহাম্মদ নূরুল হকও যথেষ্ট আধুনিক। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগে এসে তিনিই বা কেন মধ্যযুগে পড়ে থাকবেন? হাল ফ্যাশনের সবকিছুই তার নজরে পড়ে। এখন ফেসবুক-টুইটারেও তার রাত চমকায়। মোটকথা, পুরাণ থেকে বর্তমান—কোনো কিছুই বাদ যায় না তার কবিতা থেকে। সে কারণেই মোহাম্মদ নূরুল হক সময় সচেতন কবি। পাশাপাশি ছন্দ সচেতন একজন সমালোচকও বটে।
তার কবিতাগুলো পড়া শেষ হলে মনে হয়, বেদনার সুর বেজে ওঠে। বিরহকাতর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। তাই মনে হয়, যাবতীয় দুঃখ, আঁধার, চাঁদ, পাখি, রাত, নদী, জল তার বিরহের উপজীব্য। কবি যখন বলেন,
হঠাৎ মেঘে ভেসে এলো আওয়াজ
আকাশ ভরা চাঁদের আলাপন
তারারা গায় মন খারাপের গান
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?
(মানুষ কেন আত্মহত্যা করে)
তবে কবি হয়েও তিনি সব সময় নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহ বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে কবিতার সংকট নিরূপণ করতে চেষ্টা করেছেন। কবিতা কিভাবে লেখক-পাঠকের মধ্যে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে, তা-ও ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। তিনি ভাবেন, জনপ্রিয়তা লাভ করেও একটি কবিতা কেন সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যায়। সমালোচকরা হয়তো এ কারণেই তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
আলোচনার শেষপ্রান্তে এসে তার একটি কবিতা খুব মনে পড়ে। নিজেকে কতটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চোখে আঙুল দিয়ে। এ কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তিই যেন কবিকে চিনিয়ে দেয়। কবি বলেছেন,
যদি ভুল করে কোনো ভুলফুল ফোটে তোমাদের ছাদে
জেনে রেখো সে ভুল আমি;
জেনে রেখো তোমার খোঁপায় ঠাঁই হলো না
তাই ফুটেছি অকালে—হৃদয়ের দাবি নিয়ে জংলি কুসুম!কাচের দেয়াল ঘেরা তুমি-আমি-আমাদের পৃথিবী
তবু কেন মনে হয়—এই ছুঁই এই ছুঁই?
আহারে মানবস্বপ্ন! দেয়ালের ওপারেই থাক!
আমাদের বিশ্বে শুধু বয়ে যাক প্রেমের জোয়ার।
(জংলি কুসুম)
কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল হক কবিতায় সফল। আগেই বলেছি, তার প্রবন্ধ পড়েও তাকে সফল প্রাবন্ধিক মনে হয়েছে। এবার কবিতা পড়েও তা-ই মনে হলো। কেননা একজন সার্থক কবি হিসেবে সাহিত্যের যেকোনো বিষয়ে সাবলীল ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রবন্ধ রচনায়ও সিদ্ধহস্ত তিনি। যদি আমরা তাকে ভুল করে ফোটা কোনো ফুল মনে করি, সেটা হয়তো আমাদেরই দীনতা। হয়তো আমরা তাকে যত্ন করতে জানি না বা যত্ন করতে চাই না। তবে এ কথা সত্য, আমরা চাই বা না চাই, যত্ন করি বা না করি; তিনি কিন্তু ফুটে থাকবেন তার আপন মহিমায়। সময়ই হয়তো একদিন কবিকে স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে।
আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক সাহিত্য