প্রগতি-প্রতিক্রিয়া দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে দিয়েই শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় একজন বুদ্ধিজীবীর দায়বদ্ধতা, সদর্থকতা কিংবা প্রতিক্রিয়াশীলতা প্রমাণিত হয়ে যায়। একজন মানুষ সারাজীবন ধরে শুধুই প্রগতিশীল কিংবা শুধু প্রতিক্রিয়াশীল থাকেন না। জীবনের প্রথম পর্যায়ে প্রগতিশীল একজন বুদ্ধিজীবীকেও হয়তো কখনো দেখা যায় জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রচণ্ডভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হতে। একজন বুদ্ধিজীবীকে প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, শাসকশ্রেণীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে লড়তে লড়তে একটা অবস্থানে এসে দাঁড়াতে হয়। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কর্মকাণ্ড, দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে তাঁর ভূমিকা গ্রহণের স্বরূপ এবং সর্বোপরি তাঁর চিন্তাশীল প্রবন্ধসমূহ বিশ্লেষণ করলে একজন বুদ্ধিজীবী কতখানি কিংবা প্রগতিশীল কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল, তা উপলব্ধি করা সম্ভব।
রাজনৈতিক গতিবেগের ধারায় বাংরাদেশের বুদ্ধিজীবীশ্রেণীও অনিবার্যভাবে প্রগতি ও প্রতিক্রিয়াশীলতার দুই মূল বিপরীত স্রোতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন এবং আছেন—একদল প্রাতিষ্ঠানিকতার পক্ষে, অন্যদল জনগণের আন্দোলনে, গণমানুষের অংশীদার হিসেবে। এই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার সত্যতা সূত্রে বলা যায়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিকালের শ্রেষ্ঠ মনীষা আহমদ শরীফও সারাজীবন প্রগতি-প্রতিক্রিয়ার দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে একজন প্রগতিশীল ও বিদ্রোহী বুদ্ধিজীবীর অবস্থানে পৌঁছোতে পেরেছেন। কিন্তু বলা বাহুল, এটা একদিনে সম্ভব হয়নি, দীর্ঘকালের নিবচ্ছিন্ন দ্বন্দ্ব-সংঘাতেই এই পরিণতি—এই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া সূত্রই আহমদ শরীফের বর্তমান আহমদ শরীফ ‘হয়ে ওঠার’ ইতিহাস।
বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে, বিশেষত প্রবন্ধ ও গবেষণার ক্ষেত্রে আহমদ শরীফ একটি অসাধারণ প্রতিভা, অনন্য ব্যক্তিত্ব। ‘পণ্ডিত ও বয়স্ক বিদ্রোহী’ এই মানুষটি প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে অবলীলায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে নাচক করে দেন বলিষ্ঠ যুক্তি ও তথ্যের জালে, শব্দের সুতীক্ষ্ণ সায়কে এবং প্রগতিশীল বিজ্ঞাননিষ্ঠ চিন্তার আঘাতে। এসব অস্ত্র দিয়েই তিনি ব্যক্তি ও সমাজকে, মন ও মননকে এবং মানুষের অন্তরের সুপ্ত সত্তাকে জিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। সবচেয়ে অভিনব হলো এই যে, তাঁর যুক্তিনির্ভরতা এতই প্রখর এবং চিন্তা-চেতনার উপস্থাপন এমনই প্রচণ্ড শক্তিশালী যে, পাঠকসমাজ বিষয়ের তথ্যগত সংশয় মনে না রেখেই চুম্বকের মতো আকর্ষিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যেমন আপসহীন; সমাজকর্মে, প্রবন্ধচিন্তায় ও গবেষণাকার্যে, তথা মননশীলচর্চায় তেমনি প্রতিবাদী। তাঁর গদ্যে নানাভাভাবে প্রতিফলিত হয়েছে প্রচলিত বিশ্বাস-সংস্কার ও সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থার প্রতি অস্থির আগ্রহ। যদিও তাঁর সমাজতান্ত্রিক চেতনা মানবতাবাদের দ্বারা সিক্ত।
আহমদ শরীফ ঐতিহ্য ও সংস্কারকে বিচার-বিশ্লেষণ করলেন সমকালীন জীবন-দৃষ্টি থেকে, চিরাচরিত ধ্যান-ধারণার অচলায়তনকে ভাঙেন যুক্তি ও মননশীল পাণ্ডিত্য দিয়ে। বস্তুবাদী দর্শনে প্লাবিত তাঁর সমগ্রসত্তা আঘাত করে সমাজের উপরিসৌধের দেয়ালে। প্রথাবদ্ধ সংস্কারের বিরুদ্ধে এভাবেই ফেটে পড়ে তাঁর বিদ্রোহ; ঐতিহ্যই হয়ে ওঠে তাঁর আগল ভাঙার হাতিয়ার। মার্কসবাদীরা প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতিকে যেভাবে কালের উপযোগ অনুযায়ী বিশ্লেষণ করেন জীবন ও এবং সমাজবদলের আন্দোলন-প্রয়াসে, আহমদ শরীফও তেমনিভাবে বস্তুবাদী দর্শনের আলোকে মানবতাবাদের চেতনায় গণমুক্তির সংগ্রাম ও তাদের সংগ্রামী হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত নির্মাণ করেন, শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরেন; শিল্পচেতনা ও ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা দেন।
মধ্যযুগ নিয়ে তাঁর সাহিত্যকর্ম প্রবাদে পরিণত হয়েছে: ‘আহমদ শরীফÑÑসমগ্র মধ্যযুগ করিলা জরিপ’। পুথির ভাষার আদলে শিক্ষার্থীদের এই প্রবাদপ্রতিম প্রচার মিথ্যে নয়। জীবনের একটা বড় সময় ব্যয়ে তিনি মধ্যযুগের সাধারণ মানুষের ইতিহাস তৈরি করেছেন, যাকে প্রয়াত অধ্যাপক দেবীপদ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘হিস্ট্রি অব দ্য পিপ্ল’। মধ্যযুগের ক্ষেত্রে আহমদ শরীফের জুড়ি মেলা ভার। এই পর্যায়ে, বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কখনো তিনি নৃতাত্ত্বিক, কখনো বা প্রতিফলনতত্ত্ব আরোপ করেছেন; তবে মূলস্রোত তাঁর সবসময়েই এগিয়েছে দ্বান্দ্বিক বস্তুতান্ত্রিকতার দিকে। তাঁর বিশ্লেষণালোক সম্পাতে গুরুত্ব পেয়েছে ওই যুগের সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষ। প্রচণ্ড নির্ভীকতা ও ঝুঁকি নিয়ে, চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন সে-যুগের সামাজিক অসঙ্গতিগুলোকে।
সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতি-তত্ত্ব, ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তা কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে যৌক্তিকভাবে পরিহার করে তিনি রাষ্ট্রিক জাতীয়তার কথা বলেছেন; সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রকাশ্যে নিন্দা করে এর উদ্গাতাদের বিরুদ্ধে তীব্র কষাঘাত হেনেছেন। সামরিক শাসন, গণতন্ত্রহীন স্বৈরাচারের রাজত্বে দাঁড়িয়েও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তাঁর বুক কাঁপেনি কখনো, বন্ধ হয়নি তাাঁর প্রতিবাদী লেখনী। জীবনে আপস করেননি কোনোদিন। সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারকে তিনি ঘৃণ্য মনে করেনে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন প্রতিবাদের পরিণামে বাংলাদেমের প্রতিটি সরকারের হিসেবের তালিকায় তাঁর নাম শত্রু হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে, বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁকে তাঁর প্রাপ্য বহু সম্মানসূচক স্বীকৃতি থেকে, বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম সব ধরনের সরকারি প্রচারমাধ্যম থেকেও। ফলে এতবড় পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রতভিার আন্তর্জাতিক পরিচিতি বা খ্যাতির সুযোগ মেলেনি আজো।
বাংলাদেশের মতো একটি জটিল পরিস্থিতি ও প্রতিবেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করা সহজ না হলেও জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার আশা তিনি ব্যক্ত করেছেন এবং জানিয়েছেন, এর মধ্যে দিয়েই ‘যথাযথ সুশাসনে ও সুব্যবস্থায়’ সাময়িকভাবে হলেও ‘শোষিত-পীড়িত দীন-জনগণের’ আর্থিক যন্ত্র্রণার কিছুটা উপশন হবে। ড. শরীফের এই মন্তব্যে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রগঠন সত্যি সত্যিই কি সম্ভব? কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ যেখানে প্রকট, শ্রেণীগত বিভাজন যেখানে ব্যাপক, সেখানে দীন-জনগণের আর্থিক যন্ত্রণার উপশম আদৌ সম্ভব কি? অবশ্যই এই সমস্যা সুরাহার আকাঙ্ক্ষায় তিনি ‘গণমানবের’ জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং তিনি মনে করেন, মানবতাবাদীদের দ্বারা সংঘটিত বিপ্লবই ‘গণমুক্তি’কে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিচ্ছিন্নতাবাদ, সাম্প্রদায়িকতার উৎস, সাম্রাজ্যবাদীশক্তি, শোষকশ্রেণী, ইতিহাসের বিবৃতি, কিভাবে শ্রেণীস্বার্থে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ায়—ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ইসলামের নামে নানা ধরনের ব্যবসা, ধর্ম, ভাষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার, সংস্কৃতিবিহীন ইয়াংকী কালচার, জাতপাতের রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয় তাঁর রচনার পরিধিকে বিস্তৃত করেছে।
তাঁর বিশ্লেষণের গুণেই, এ গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে নিরন্ন খেটে খাওয়া পিছিয়ে পড়া বাঙালির অকথিত ইতিহাস, যার পরিচয় প্রচলিত গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক রচনাগুলোতে আমরা লক্ষ করি, ড. শরীফ ক্রমশ জনগণের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। নৈর্বস্তুক সৌন্দর্যচেতনা থেকে জীবনচেতনায়, জীবন থেকে মানুষে তিনি চলে এসেছেন এবং মানুষের মনের, আত্মার, জীবনাচারের সৌন্দর্য যেমন তিনি কামনা করেন, সেই সঙেৃ্গ নৈতিকতার প্রসঙ্গটিকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। সংস্কৃতিকে তিনি তাঁর রচনায় ব্যবহার করেছেন গণসচেতনতা বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে। দায়বদ্ধ বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালনে অগ্রণী আহমদ শরীফের অধিকাংশ রচনারই মূল লক্ষ্য ‘মানবতা ও গণমুক্তি’ এবং জনকল্যাণ। কিন্তু সত্যের খাতিরে বলতেই হয়, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ যে শ্রেণীবিভক্ত সমাজকাঠামোয় সম্ভব নয়, ড. শরীফের শ্রেণীচেতনা এই ক্সেত্রে খুব স্পষ্ট নয় বলেই তাঁর চিন্তায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। অবশ্য দিন যত অতিক্রান্ত হয়েছে, তাঁর চিন্তা-চেতনা তত বেশি স্বচ্ছ হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছোতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এটা তাঁর সংগ্রামী-সত্তারই বিবর্তনিক চারিত্র্য। সংগ্রামী বলেই তিনি গতিশীল এবং অস্থির। এই পরিবর্তনশীলতা, দ্বান্দ্বিক চলমানতাই বিদ্রোহী আহমদ শরীফের স্বরূপী-উদ্ভাসন।
২.
আহমদ শরীফ দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক ইসলাম ও মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিরোধী। তাঁর ‘বাঙলা, ভাঙালী ও বাঙালীত্ব’ সংকলন গ্রন্থটির প্রবন্ধে সে-বিরোধিতার কথা সবিস্তারে তিনি বুঝিয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি ধর্মভিত্তিক মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রতিবাদ করেছেন এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন। মুসলিম জাতীয়তাবাদ তাঁর কাছে ভাঁওতাবাজি বলৈ মনে হয়েছে। ইসলামি ভ্রাতৃত্বের দোহাই দিয়ে ঔপনিবেশিক কায়দায় দুর্বলকে বঞ্চিত ও শোষণ করার যে চক্রান্ত দেশি (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি) দালালদের মাধ্যমে পাঞ্জাবি ও করাচি-ওয়ালারা (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ) উদ্ভাবন করেছিল, ড. আহমদ শরীফ এই গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে সে-কথা ব্যক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি বুঝিয়েছেন কিভাবে পশ্চিমা শোষকশ্রেণী অর্থনৈতিক কারণ দেখিয়ে, হিন্দুবিদ্বেষকে পুঁজি করে, ধর্মকে অস্ত্র বানিয়ে, সম্প্রদায়গত সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে জিকির হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘস্থায়ী শোষণের পরিকল্পনা করেছিল। তিনি মনে করেন, সেই একই অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যজাত, জাতিগতভাবে শোষিত হবার ফলেই বাঙালি স্থানিক, ভাষিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন, সাংস্কৃতিক আত্মনিয়ন্ত্রণ এবল পরিশেষে সার্বিক স্বাধীনতা দাবি করেছিল।
সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাদকিস্তান ও ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্মলাভের বিবর্তনিক ইতিহাস ড. আহমদ শরীফ এ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্লোগানে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভৌগোলিক, রাষ্ট্রীয় তথা সার্বভৌমগত পরিবর্তন আসে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরিণামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু উর্দুভাষী শোষকদের শোষণের অবসান হলেও এর পরেই নতুন করে আবার শুরু হয় দেশি উঠতি পুঁজিবাদের শোষণ। আটের দশকেই সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তাবাদের কথা ঘোষণা করলেন। আহমদ শরীফ এ-সংকলনের বিভিন্ন রচনায় বাঙালির ঐতিহাসিক বিবর্তন ও পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট নির্দেশ ও বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা করেন যে, ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তাবাদের নাম ঘোষিত হলেও শাসকের পক্ষপাত ও অভিসন্ধি ছিল মূলত ‘ইসলামী’ জাতীয়তাবাদের দিকেই। ধর্ম-নিরপেক্ষতার লেবেল তুলে ফেলে শাসকশ্রেণী তাই সাংবিধানিকভাবে দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তনে প্রয়াসী হয়। সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ ও ভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসীদের অস্তিত্ব এক অর্থে বিপন্ন হয়ে পড়ে। ওই প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আর এক নতুন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অশুভ ইঙ্গিতেই প্রচ্ছন্নভাবে ক্রিয়াশীল হতে থাকে। এর উদ্যোক্তা ও সমর্থনকারীরা দেশের অভ্যন্তর পরিচয়ে নিজেদেরকে ‘বাঙালি’ বা ‘বাংলাদেশি’ বলে ঘোষণা করলেও বিদেশে গেলেই নিজেদের জাতীয় পরিচয় হিসেবে ‘বাংলাদেশি’র চেয়ে মুসলিম বলে পরিচয় দিতেই এঁরা সুখ ও স্বস্তি বোধ করেন বেশি।
‘বাঙলা, বাঙালী ও বাঙালীত্ব’ গ্রন্থে আহমদ শরীফের যেসব প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হয়েছে, প্রবণতার দিক থেকে বিচার করলে তাকে তিনটি পর্যায়ে ফেলা যায়। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িক হীনণ্মন্যতা, জাতিবৈরী এবং পশ্চিমা উর্দুভাষী সংখ্যালঘু মুসলিমদের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরোধিতা করতে গিয়ে ড. শরীফ আর পাঁচজন বাঙালির মতোই মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। কারণ সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা মনেপ্রাণে কামনা করলেও তিনি তখনকার পরিস্থিতিতে উপলব্ধি করেছিলেন যে, মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সমর্থন সৃষ্টির একমাত্র এবং তাৎক্ষণিক হাতিয়ার হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। একমাত্র এই মন্ত্রের পতাকাতলে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ সমবেত হবেন, হয়েছেনও। তিনি তাই সে পরিস্থিতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বললেও অর্থনৈতিক শোষণ, ধনী- দরিদ্রের দ্বন্দ্ব, শ্রেণীসম্পর্ক ইত্যাদিকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, একদিন বাঙালিরা সমাজতন্ত্রী হয়ে উঠবেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সীমানা ছাড়িয়ে ক্রমশ রাষ্ট্রিক জাতীয়তায় আস্থাশীল হয়েছেন। বিশ্বাস করেছেন সমাজতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বাঙলার মানুষের একদিন দুর্দিন ঘুচবে। জাতীয়তার প্রসঙ্গে তাঁর মানসপ্রবণতার বিবর্তনটি এভাবে দেখানো যায় :
মুসলিম জাতীয়তাবাদ>বিরোধিতা>বাঙালি জাতীয়তাবাদ: সপক্ষে রাষ্ট্রিক জাতীয়তাবাদ।
গতিবাদ : ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ>রাষ্ট্রিক জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্র।
এ সংকলনে কেবলমাত্র ‘বাঙলা’, ‘বাঙালি’ ও ‘বাঙালিত্ব’বিষয়ক প্রবন্ধসমূহই স্থান পেয়েছে; বিষয়বহির্ভূত অন্য কোনো প্রবন্ধ সঙ্গত কারণেই এতে নেই। এর প্রতিটি প্রবন্ধেই আহমদ শরীফের নিজস্ব ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি তথ্যনির্ভর, বিশ্লেষণাত্মক এবং প্রতিবাদী ও সাহসী মতামত ব্যক্ত করেছেন নির্দ্ধিধায়। তাঁর যৌক্তিক তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের শানিত তরবারিতে কার মাথা কাটা বা ফেটে গেলো, কে কতটা ক্ষুণ্ন হলো, ধর্ম কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থা কেঁপে উঠলো কিনা এবং তার আশু প্রতিফল তাঁকে পেতে হবে কিনা, তা নিয়ে তিনি বিচলিত হননি কখনো। তাঁর চরিত্রের এই দৃঢ়তা, আপসহীনতা, যুক্তিবাদিতা এবং তীক্ষ্ণ অনুসন্ধিৎসাই তাঁকে প্রতিবাদী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। আর তাই তাঁর ‘বাঙালী’ ও ‘বাঙালীত্ব’র’ ঐতিহাসিক বিবর্তন ও পরিচিতিতেও লক্ষ করা যায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী বিশ্লেষণ। বাঙলার নিরন্ন মানুষ, শ্রেণীসম্পর্ক, শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও সামাজিক -সাংস্কৃতিক অসঙ্গতিগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ গ্রন্থে। তাঁর বিশ্লেষণের গুণেই, এ গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে নিরন্ন খেটে খাওয়া পিছিয়ে পড়া বাঙালির অকথিত ইতিহাস, যার পরিচয় প্রচলিত গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রচিত বলে কিছু কিছু কথা প্রাসঙ্গিকভাবে ঘুরে-ফিরেও এসেছে। তবে বিশেষত জনমানসে সংগ্রামীচেতনার অগ্রগামী গতিবেগের দিকে লক্ষ রেখেই সংকলনভুক্ত প্রবন্ধগুলো নির্বাচিত ও বিন্যস্ত হয়েছে।
বাঙালির ভৌগোলিকতা, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, বাঙালির সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, বিপ্লবীচেতনা ইত্যাদি বিষয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি এই খেটেখাওয়া নিরন্ন বাঙালি জাতির একটি সামগ্রিক পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছেন- এ গ্রন্থে। তাঁর এই গ্রন্থের বিন্যস্ত বিষয়গুলি নিয়ে কিঞ্চিৎ পর্যালোচনা করা যায় :
১. বাঙালির দেশ-কালের পরিচিতি, তার বিদ্যাবুদ্ধি, সাহিত্য ও দর্শনের ক্ষেত্রে বাঙালির গৌরব-গর্বের কারণ, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় প্রভৃতি বিষয়ে লেখক আমাদের ধারণা দিয়েছেন।
২. আর্য-গর্ব ও অনার্য লজ্জা যে অহেতুক এবং স্বাধীন বিকাশের পরিপন্থী, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
৩. আভিজাত্যবোধ কিংবা হীনণ্মন্যতা যে মনুষ্যত্বের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিকূল, তিনি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
৪. গোত্র, শাস্ত্র কিংবা স্থানভিত্তিক মানুষের সংকীর্ণ গোষ্ঠীচেতনা কিভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এবং দুর্বলের ওপর পীড়নের ও অপ্রেমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তিনি সে কথা ব্যক্ত করেছেন।
৫. বাঙালির সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতির উৎস ও ভিত্তি প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে, দেশি শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, ভাস্কর্য, স্থাপত্য প্রভৃতি সাংস্কৃতিক কর্ম ও ঐতিহ্য, নির্বিশেষে বাঙালির অবদান নয়। বাংলাদেশও এর সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক রূপ পরিদৃশ্যমান।
৬. বাঙালির মৌলধর্ম বিশ্লেষণ করে তিনি জীবনের। শোষণ-বঞ্চনার বিবর্তন ও ধর্মীয় বাতাবরণের শ্রেণীভেদ নির্দেশ করেছেন।
৭. বাঙালির মননবৈশিষ্ট্য আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বাঙালির মুক্তির সন্ধান করেছেন সমাজতন্ত্র কায়েমের মধ্য দিয়ে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাঙালির ওই প্রত্যাশিত মুক্তিসুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে নিরীশ্বর, নাস্তিক বিশেষত শাস্ত্রদ্রোহী মুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন মানবতাবাদী বাঙালিই।
৮. তিনি গতরখাটা বা প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর বাঙালির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন।
৯. ‘ইতিহাসের ধারায় বাঙালি’ এবং ‘বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস’ তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন বিশ্লেষণাত্মক সদর্থক দৃষ্টিকোণ থেকে।
১০. কোম্পানি আমলে ও ভিক্টোরিয়া শাসনে বাঙালিসমাজ কেমন ছিল তার পরিচয় দিয়েছেন লেখক এ- গ্রন্থে। প্রতিটি আলোচনা সূত্রেই সমাজ, সংস্কৃতি ও সাধারণ মানুষের বঞ্চনা এবং উচ্চকোটির বাঙালি ও সমাজপতিদের শোষণের চিত্র নির্মিত হয়েছে।
১১. আঠারো এবং উনিশ শতকের বাঙালা ও বাঙালি সম্বন্ধে প্রচলিত মতামত ও সিদ্ধান্তের পুনর্মূল্যায়ন করে, এ ক্ষেত্রেও তিনি বেশ কিছু নতুন তথ্য দিয়েছেন।
১২. উনিশ শতকের বাঙালার নবজাগরণের যথার্থ মূল্যায়নের চেষ্টা পরিলক্ষিত হয় এ-গ্রন্থে।
১৩. বঙ্গভঙ্গ কার্যটি যে সম্পন্ন করা হয়েছিল বাঙালি সত্তাকে বিলুপ্ত করে দেবার উদ্দেশ্যেই, তিনি তার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন এখানে। প্রসঙ্গত ‘বাঙলা’ এ ‘বাঙালিদের’ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণের চিত্রও লেখক তুলে ধরেছেন এ গ্রন্থে।
১৪. একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে ড. শরীফ ‘বাঙালার বিপ্লবী পটভূমি’ ও সেই পটভূমিতে বাঙালিদের সংগ্রামী মানসিকতা, কার্যক্রম, অবদান ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেছেন। আবার এরই পাশাপাশি বাঙালিদের, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, মিথ্যে অহমিকার মুখোশ খুলে দিয়েছেন ; রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতার গ্লানিও তুলে ধরেছেন কোনো রকম সংকোচের আবরণ না রেখেই।
১৫. সবশেষে তিনি বাংলাদেশের বাঙালিদের ভবিষ্যতের সুখ-স্বপ্ন এঁকেছেন। বাংলাদেশে বাঙালি বনাম বাংলাদেশি বিতর্ক এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে যে ধর্মভিত্তিক ইসলামী জাতীয়তাবাদ ফিরিয়ে আনারই ষড়যন্ত্র চলছে, তিনি এ- গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধে সেদিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছেন; এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও একাত্মতার স্বার্থে সাংস্কৃতিক পরিচয়ে ‘বাঙালি’ ও রাষ্ট্রিক পরিচয়ে ‘বাংলাদেশী’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘বাঙলা বাঙালী ও বাঙালীত্ব’ আহমদ শরীফের কোনো মৌলিক গ্রন্থ নয়। তিনি তাঁর জীবনের চল্লিশটা বছর ব্যয় করেছেন বাঙালি জাতিসত্তার অনুসন্ধানে। আমি যখন ‘বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও প্রগতি – প্রতিক্রিয়ার দ্বন্দ্ব’ বিষয়ে কাজ করি এবং ‘বাংলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি’ নিয়ে গবেষণা করি, তখন গবেষণা-অভিসন্দর্ভে আহমদ শরীফের জন্য প্রায় তিনশ পৃষ্ঠার মতো জায়গা ছেড়ে দিতে হয় (এখন এটি আগামী প্রকাশনী থেকে ‘আহমদ শরীফ : স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে’) প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের প্রিয়জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও ভাষাবিদ প্রফেসর পবিত্র সরকার আমার গবেষণাপত্রটি পাঠ করে আমাকে বিষয়টি নিয়ে ডি.লিট ডিগ্রির জন্য কাজ করতে বলেন। পরে আমি যখন ‘আহমদ শরীফ : নির্মোহ চিন্তার প্রতিকৃতি’ শিরোনামে একটি বই লিখি, তখনো তিনি এই গ্রন্থের ভূমিকায় বিষয়টি উল্লেখ করেন। তাই ‘আত্মপরিচয়ের আবর্তে বাঙালি মুসলমান এবং সাহিত্যে তার প্রতিফলিত রূপ’ ডি লিট -এর কাজ করতে গিয়ে আমি আহমদ শরীফকে গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু করি এবং সমগ্র বিষয়টিকে সংহত করে ‘আত্মপরিচয়ের আবর্তে বাঙালি মুসলমান এবং এক দ্রোহীর অনুসন্ধান’ ছায়াতলে নিয়ে আসি। সম্প্রতি এই গবেষণাকর্মটি এই শিরোনামেই ঢাকার জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, পিএইচডি-এর গবেষণাকালে আমি আহমদ শরীফের ‘বাঙলা’, ‘বাঙালী’ ও ‘বাঙালীত্ব’-বিষয়ক রচনাগুলোর সন্ধান করে একটা তালিকা প্রস্তুত করি এবং তা নিয়ে কলকাতার সাহিত্যলোক থেকে ১৯৯২ সালে (পৌষ ১৩৯৮ বঙ্গাব্দ; জানুয়ারি ১৯৯২) মুদ্রিত করি। গ্রন্থ-সংকলনে এই প্রবন্ধটি পরিচায়িকা হিসেবে লিখি। ফলে বিষয়ভিত্তিক এই সংকলনে গ্রন্থিত রচনাগুলোকে রচনার তারিখ বা প্রকাশ-তারিখ অনুযায়ী সাজাতে পারিনি। ফলে বিভিন্ন সময়ে রচিত প্রবন্ধগুলো বিষয়বস্তুর ও মানসপ্রবণতার নানা গতিপ্রকৃতির দিক লক্ষ রেখে বিন্যস্ত হয়েছে বলেই এতে কালানুক্রম বজায় রাখা যায়নি। এ কারণে লেখকের ভাষা ও রচনাভঙ্গির ক্রমোন্নতি, চিন্তার অগ্রগামিতা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রচিত বলে কিছু কিছু কথা প্রাসঙ্গিকভাবে ঘুরে-ফিরেও এসেছে। তবে বিশেষত জনমানসে সংগ্রামীচেতনার অগ্রগামী গতিবেগের দিকে লক্ষ রেখেই সংকলনভুক্ত প্রবন্ধগুলো নির্বাচিত ও বিন্যস্ত হয়েছে।
এই গ্রন্থটি কলকাতা থেকে যখন প্রকাশিত হয়, তখন মুদ্রণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রন্থটি ঢাকার অনন্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়। বিনা কারণেই এই পরিচায়িকাটি বর্জিত হয়। অবশ্য এর আগেই সাহিত্যলোক প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে ঢাকার ‘স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ’-এর উদ্যোগে আহমদ শরীফের ৮০তম জন্ম-উৎসব উপলক্ষে গবেষক মুস্তাফা মজিদ সম্পাদিত ও মুদ্রিত ‘দ্রোহের স্মারক’ সংকলনে এটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধ হিসেবে মুদ্রিত হয়। তবে সাহিত্যলোক প্রকাশিত সংকলনে কলেবরের কারণেই অনেক প্রবন্ধ বাদ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। সংকলনটি পশ্চিমবঙ্গের ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পাঠ্যসূচিভুক্ত হওয়ার কারণেই এর সঙ্গে আরও দশটি প্রবন্ধ যুক্ত করে গ্রন্থটি শিগগির প্রকাশিত হচ্ছে কলকাতার একুশ শতক থেকে।