‘মনুষ্যেতর’ শব্দের অর্থ মানুষের ইতর। মানে মানুষের মতো উন্নত নয়, অসভ্য প্রাণী। এখন ইতর শব্দটির ব্যবহারই ইতরতার পর্যায়ে চলে যাওয়ায় নিরীহ প্রাণীমাত্রকেই ইতিহাস বলাটা মানানসই নয়। ছোটগল্পের একটি শাখার নাম করা হয়েছে—মনুষ্যেতর গল্প। শ্রীস চন্দ্র দাসের যুগে হয়তো এ নামে চলেছে। এখন চলে না। তাই প্রাণীবাচক গল্প বা প্রাণীভিত্তিক গল্প নামে আলোচনা করা উচিত।
জীববৈচিত্র্য:
সভ্যতার ইতিহাসে মানুষই একমাত্র সৃষ্টিশীল সভ্য প্রাণী। সভ্যতার শুরু থেকেই কিছু প্রাণী তার সহযোগী ছিল; এখনো আছে। সভ্যতা নির্মাণে তাদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। জমিকর্ষণ, মইটানা ও কৃষিপণ্য পরিবহনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গরু, মোষ, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর, উট, হরিণ, হাতি, কুকুর, লামাসহ অনেক প্রাণী মানুষের সহযোগী। রাজ্য রক্ষা, যুদ্ধ, বার্তাপ্রেরণ ইত্যাদি কাজে পশুপাখির ভূমিকা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে চলমান। ব্যবসা-বাণিজ্যেও পশুপাখির বিশেষ অবদান রয়েছে। গেরস্থালি কাজে রয়েছে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। মানবসমাজে বসবাস করা প্রাণীদের এখনো দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। বন্য প্রাণী আর গৃহপালিত পশুপাখি।
মানুষের আশ্রয়ে থাকা প্রাণীদের প্রধানত দুধ-মাংস-লোম ইত্যাদি সংগ্রহ আর নানা কাজে শ্রমদানে নিযুক্ত করা হয়। বন্য প্রাণীদের ধরে পোষ মানিয়েও কাজে ব্যবহার করা হয়, তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিল্প-বাণিজ্য, রাজনীতি-অর্থনীতি, চিকিৎসা এবং গেরস্থালি কাজে ব্যবহার করা হয়।
চিরায়ত সাহিত্যে:
ইতিহাসের শুরু থেকে মনুষ্যেতর প্রাণী নানা কাজে সহায়ক এবং সহযোগী বলে মানুষের কথায়, কাজে, আচরণে, গল্পে-শিল্পে, ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান-সাহিত্যসহ সব কায়িক এবং মানসিক, চিন্তাশীল ও সৃজনশীল কাজে এসব প্রাণীর কথা আছে। প্রাচীন ইহুদি ধর্মে উট এবং গরুর কথা বিশেষভাবে রয়েছে। মানুষের ধর্মের অংশহিসাবে এসব প্রাণী সম্পর্কে কোথাও কৃতজ্ঞতাপ্রসূত প্রশংসা রয়েছে, আবার কোথাও মিথহিসাবে ট্যাবু বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উপস্থিত আছে। রামায়ণ, মহাভারত, বেদ, গীতা, পিটক, জাতক, বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট, কোরআনসহ প্রাচীন প্রায় সমস্ত ধর্মগ্রন্থে জীববৈচিত্র্য রয়েছে।
প্রাচীন বিশ্বাসে কিছু অতিকায় দেহ কিংবা বুদ্ধিধারী প্রাণীর কথাও আছে। জিন-পরি, দৈত্য-দানো, ভূত-প্রেত, ড্রাগন ইত্যাদি। দর্শনের চিন্তাশীল রচনাগুলোতেও প্রাণীর কথা আছে। প্লাতোর ‘রিপাবলিক’-এ সক্রেটিস তো থ্রাসুমাকসের কুকুরের বুদ্ধিমত্তা দেখে ওটাকেই দার্শনিক বলে অভিহিত করেছেন।
বিভিন্ন দেশের রূপকথা, লোককথা, উপকথা, অপকথা ইত্যাদি লোকসাহিত্যেও মানুষের সহযোগী বিভিন্ন প্রকার কথাবলা পাখির কথা আছে। আছে বন্য প্রাণী এবং মানুষের গৃহপালিত এবং খামারের প্রাণীর কথাও। আমাদের দেশের রূপকথায়ও বাঘ, হাতি, সিংহ, সাপ, হরিণ, শেয়াল, সজারু ইত্যাদি বন্য প্রাণীর সঙ্গে গৃহপালিত গরু, মহিষ, গাধা, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, উট, কুকুর, বেড়াল, মোরগ-মুরগি, হাঁস, রাজহাঁস, টিয়া, ময়না, চন্দনা, কাকাতুয়া, শুকসারি, পায়রা, শালিক ইত্যাদি গৃহপালিত প্রাণীর কথাও আছে। আছে বন্য পাখি কাক, শকুন, চিল, বাজ, ঈগল এবং কাল্পনিক হিরামন পাখিও।
বিশ্বসাহিত্যে:
আধুনিক সাহিত্য বলতে পাশ্চাত্যসাহিত্য এবং পাশ্চাত্য অনুসারী সাহিত্যকেই সাধারণত চিহ্নিত করা হয়। ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পরে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ জেগে ওঠে। গোত্র কিংবা পরিবার ও গ্রামছেড়ে শহরে শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক শ্রেণীর মানুষগুলো-প্রত্যেকেই ছিলেন শহরে একা। তাদের এই একাকীত্ববোধ পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তার অনুগ্রাহক। এই মানুষগুলো তাদের গোত্র এবং পরিবার থেকে নানাভাবেই ভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
এই ধারা থেকেই আধুনিক সাহিত্যের চরিত্রভিত্তিক প্রকরণগুলো জেগে ওঠে। উপন্যাস, ছোটগল্প, আধুনিক নাটক ইত্যাদি। অবসান ঘটে রূপকথা, জাতীয় মহাকাব্য, বীরত্বব্যঞ্জক রোমান্স সাহিত্যের। ইউরোপে আধুনিক উপন্যাসে মানুষের ব্যক্তিগত সংকট প্রধানভাবে আলোচিত হয়। স্থান এবং কালের নানারকম ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আধুনিক মানুষ বেঁচে থাকে। আধুনিক সাহিত্যে তাই চিত্রায়িত হতে থাকে। সাহিত্যে উঁচুতলার মানুষদের পাশাপাশি নিচুতলার মানুষেরও অবস্থান দেখা দেয় প্রধান প্রধান কথাসাহিত্যিকদের রচনায়। তাদের আবেগ-অনুভূতি, ভাব, চিন্তা, কর্ম এভাবেই আধুনিক সাহিত্যে ফুটে ওঠে।
একই সঙ্গে মানুষের প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় অনেক প্রাণীও সাহিত্যে আপন চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে স্থান করে নিতে থাকে। যেমন, বালজাকের প্যাসন ইন দ্য ডেজার্ট, লেভ তলস্তয়ের (১৮২৮—১৯১০) পক্ষীরাজ ইত্যাদি। তলস্তয় তার উপন্যাস ওয়ার অ্যান্ড পিস-এ পঞ্চাশটির অধিক ঘোড়া ও কুকুরের চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি প্রাণী নিজস্ব নামে এবং চরিত্রে প্রকাশিত। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন, “প্রত্যেকটি চরিত্র স্বতন্ত্র, একটির সঙ্গে হুবহু মিশে যায় না অন্যটি, এমনকি কুকুগেুলোও পারস্পরিকভাবে স্বতন্ত্র।১
হেরমান মেলভিলের মবিডিক এর তিমি, রেনে গুইঅর লেপাড, জ্যাক লন্ডনের হোয়াইট ফ্যাং, কল অব দ্য ওয়াইল্ড, আলেক্সান্দার কুপ্রিনের হাতি, জন স্টেইনবেকের রেড হর্স, বিয়নস্টার্ন বিয়নসনের সমুদ্রতীরে কং ইত্যাদি।
পাশ্চাত্যের সাহিত্যে জীববৈচিত্র্য কয়েক রকমের দেখা যায়। প্রধান চরিত্র অথবা পার্শ্বচরিত্র। আবার প্রাণীগুলো নিজ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অথবা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই দুই ভাগেও ভাগ করা হয়।
বাংলাসাহিত্যে:
প্রাচীন ও মধ্যযুগে: বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদে কাক, কোকিলসহ অনেক প্রাণীর কথা কবিরা উল্লেখ করে গেছেন। এর পরে মধ্যযুগের সাহিত্যের প্রায় সবগুলো ধারায় প্রাণীর কথা আছে। মনসামঙ্গল তো সাপ নিয়েই লেখা। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলকাব্যে অনেক প্রাণীর কথা আছে। এ কাব্যটি বিচিত্রজীবের প্রতি প্রেম নিয়েই শুরু হয়। কালকেতু এবং তার স্ত্রী ফুল্লরা নির্বিচারে প্রাণীহত্যা করতে থাকলে অসহায় প্রাণীকুল দেবী চণ্ডীর শরণাপন্ন হলে দেবী মনুষ্যজগতে এসে গ্রামভিত্তিক জীবন থেকে নগর প্রতিষ্ঠা করে নাগরিকজীবনে উত্তরণের পথ নির্দেশ করেন। মুসলমান লেখকদের লেখায় ঘোড়া, উটসহ অনেক প্রাণীর কথা আছে। কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার বর্ণনায় ইমাম হোসেনের প্রিয় ঘোড়া দুলদুলের করুণ ঘটনা আছে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যে:
আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মানুষের পাশাপাশি অন্য প্রাণীর কথাও আছে। উনিশ শতকের লেখার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা’ অনুবাদ হলেও সেখানে শকুন্ত পাখির কাছে বড় হওয়া এক নারীর কথা বলা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর কাব্যে অনেক প্রাণীর কথা লিখেছেন। এর মধ্যে ‘তপসী মাছ’, ‘পাঁঠা’ ইত্যাদি বিখ্যাত হয়ে আছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাসের জনক, তবে তিনি ছোটগল্প লেখেননি। নকশাজাতীয় লেখা লিখেছেন। ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’ কমলাকান্তের আহার সরবরাহকারী মঙ্গলা নামের একটি গাভীর কথা আছে, বিড়াল নামে একটি রচনাও আছে। প্যারীচাঁদ মিত্রের রচনায় বিড়ালের কথা আছে। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের রচনায় ঝিনুক, বাঘ, ছাগলসহ অনেক প্রাণীর কথা আছে। মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’তে আরবভূমির উট, ভেড়া, ঘোড়াসহ অনেক প্রাণীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এখানেও হোসেনের দুলদুল ঘোড়ার করুণ বর্ণনা আছে।
তবে লক্ষ্য করার বিষয় হল উনিশ শতকের সাহিত্যে যে সব প্রাণীর কথা উল্লেখ আছে সেগুলো কোনো চরিত্র হয়ে ওঠেনি। ব্যক্তিত্বও ফুটে ওঠেনি। মানুষের বিশেষ করে লেখকের বক্তব্য প্রচারের যন্ত্র হয়ে উঠেছে। কোথাও এক আধটু জীবন্ত মনে হলেও সার্বিকভাবে তা লেখকের ছায়ায় বেড়ে ওঠা প্রাণী।
ছোটগল্প:
বাংলা ছোটগল্প আধুনিক শিল্প প্রকরণ। বাংলা সাহিত্যের এ শাখাটি উনিশ শতকের শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে পূর্ণতা লাভ করে। বিশ শতকে এসে তা রবীন্দ্রনাথ এবং পরবর্তী কালের প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, জগদীশ গুপ্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) প্রমুখের সযত্নপ্রয়াসে বিশ্বসাহিত্যমানের এবং বিচিত্র হয়ে ওঠে। এ ধারা দেশ বিভাগের পরেও প্রবহমান থাকে। দেশবিভাগের আগে পর্যন্ত কলকাতাকেন্দ্রিক লেখকদের রচনাই এদেশে প্রাধান্য পেত। দেশ বিভাগের পরে পাকিস্তানি আমল থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য ঢাকা এবং কলকাতা দুটি প্রধান শহরকে কেন্দ্র করেই উৎকর্ষতা লাভ করে। তবে দুই বাংলাতেই তরুণ লেখকরা কেন্দ্র ভেঙে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রচনা করছেন উন্নত এবং বিচিত্র সাহিত্যকর্ম। বিপণন এবং প্রচারের দিক থেকে তাদের লেখা বই-পুস্তক কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুটি নগরকে কেন্দ্র করেই পরিচিতি লাভ করে।
দেশ বিভাগের পর থেকে ঢাকায় কলকাতা প্রত্যাগত এবং স্থানীয় লেখকগোষ্ঠীর হাতে নতুন সাহিত্যধারা গড়েও ওঠে। শুরুতে অনেকেই ছিলেন কলকাতার অনুসারী। ক্রমে সাহিত্যের সব শাখায় নিজস্বতা দেখা দেয়। এখানকার অনেক কথাসাহিত্যিকের রচনাও বিশ্বামনের হয়ে ওঠে।
বিভাগপূর্ব এবং পরবর্তীকালের উভয় বাংলার ছোটগল্পে জীববৈচিত্র্য সযত্নে স্থান লাভ করে। লেখকদের লেখনীতে এসব প্রাণী পায় যত্ন সহানুভূতি, প্রেম এবং নানা রকম আবেগ। চিত্রায়িত হয় বিজ্ঞানসম্মতভাবে এবং চরিত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের ব্যক্তিত্বও গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে কিছু রচনা মূলত রূপক হিসাবে লেখা। এগুলোতে প্রাণীকে প্রধান চরিত্র করা হলেও তারা লেখকের আঙুলের ইশারায় অন্য কিছু বোঝাতে চায়। যেমন, হাসান হাফিজুর রহমানের ‘একজোড়া পাখি’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘সোয়ালো’, হাসান আজিজুল হকের ‘শকুন’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘যুগলবন্দি’ সৈয়দ শামসুল হকের ‘ জেসমিন রোড, ইত্যাদি।
বর্তমান রচনায় বাংলা ছোটগল্পে আলোচিত প্রাণীগুলোর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান করা হয়েছে। যেমন,
ক. প্রজাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন থাকা। মানবীয় গুণাবলি আরোপ না করে প্রাণীর স্বপ্রজাতির যাবতীয় স্বভাব নিয়ে থাকা। রূপক বা প্রতীক নয়, চরিত্র হিসাবে সাহিত্যে উত্তরণ।
খ. গৃহপালিত, আধা গৃহপালিত বা বন্য প্রাণীগুলোর কখনো মানবসমাজে বাস করার কারণে মানুষের স্নেহ-বাৎসল্যে ব্যক্তিনাম লাভ করা। বেনামি চরিত্রও দেখা যায়।
গ. ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য অনুসারে শেষ পর্যন্ত পাঠকহৃদয়ে চিত্রার্পিত হয়ে থাকা। অনেক সময় সহানুভূতি বা আবেগের রেশটুকু থেকে যায়।
ঘ. রসতত্ত্বের দিক থেকে এসব রচনা বিচিত্র। করুণ রসের বা হাস্যরসের গল্প হলেও প্রাণীর নিজস্বতা নিয়েই তারা সাহিত্যে স্থান লাভ করেছে।
আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের প্রাণী:
আধুনিক বাংলা ছোটগল্পে আলোচিত প্রাণীবৈচিত্র্যের কয়েকটি শ্রেণি দেখা যায়। যেমন, গৃহপালিত চতুষ্পদী স্তন্যপায়ী পশু ও পাখি, বন্য পশু এবং পাখি, সরীসৃপজাতীয় প্রাণী এবং কীট-পতঙ্গ।
গরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ গল্পের সুভা একজন বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে। সে তার মতোই অবলা এবং ভাষাহীন দুটি বোবা প্রাণী গাভীর সঙ্গে বেড়ে ওঠে। মমতায় জড়িয়ে যায়। একদিন তার বিয়ে ঠিক হয়। যাওয়ার সময় সুভা গাভীদের গলা ধরে পরম আদরে মনের কথা যেন বলে যায়। চোখ তার ভিজে যায়।২
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’ কালজয়ী গল্প। পশ্চিমবঙ্গের এক দরিদ্র মুসলমান চাষী গফুর আর তার মেয়ে আমিনার সংসারের তৃতীয় সদস্য মহেশ। অভাবের তাড়নায় সে মাঝে মাঝেই ছুটে গিয়ে নানাজনের খেতে হামলে পড়ে। এ অপরাধে বিচারে গফুরের শাস্তি হয়। শেষ পর্যন্ত রাগের মাথায় মহেশকে একদিন আঘাত করলে মহেশ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গফুর জমিদারের অত্যাচারের ভয়ে বাড়িঘর ফেলে মেয়েকে নিয়ে রাতের আঁধারে শহরের দিকে পালিয়ে যায়।৩
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘বুধীর বাড়ি ফেরা’। বুধীকে বেচে দেওয়া হয়েছিল। তাকে নেওয়া হয়েছিল কসাইখানায়। সেখান থেকে সে পালিয়ে এ গ্রাম-সে গ্রাম ঘুরে নিজ গ্রামে ফিরে যায়।৪
‘কোরবানী’ মাহবুব উল আলমের গল্প। এখানে গৃহপালিত একটি গরুর সঙ্গে মানবহৃদয়ের অচ্ছেদ্য বন্ধনের আবেগটাই গল্পের শেষে করুণরস বিস্তার করে। পোষাপ্রাণী কোরবানি করলে সওয়াব বেশি, তাই প্রিয়পোষ্য গরুটি কোরবানি করা হয়।৫
সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা’। নিধিরাম তার বুড়ো গাভীটা বেচতে গেলে ছেলে বিশুসহ পরিবারের সবাই অবোধ প্রাণীটার মায়ায় কান্নাকাটি শুরু করে। নিষ্ঠুর নিধিরাম তবু বেচে দেয়। সপ্তাকানেক পরে গরুটা ফিরে আসে। ক্রেতারা এসে আবার দরে নিয়ে যায়। আবার সবার মন খারাপ হয়। এবার নিধিরাম ক্রেতাদের পিছু পিছু গিয়ে দশটাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বাড়ির ছোটবড় সবাই খুশিতে দেখে নিধিরাম আসলে তত খারাপ লোক না। এ গল্পের ভাষা ও বর্ণনা আবেগপূর্ণ।৬
বনফুলের গল্প ‘অংকের বাইরে’তে মঙ্গলা নামের গাভীটা দুইমাস বয়সে মাকে হারানোর পরে অনেক কষ্টে বড় করে তুলেছেন লেখক। বড় হওয়ার পরে অনেকেই বলেছিল বেচে দিতে। কিন্তু লেখক ওকে বেশি ভালোবাসতেন। সবাই ওর পেছনের যে খরচ হয় তার হিসাব করে। যখন মঙ্গলা মা হয়ে দুধ দিতে শুরু করে তখন দেখা যায় সে সবার হিসাবনিকাশের বাইরেই সংসারে ব্যয়ের তুলনায় অনেক বেশি আয় বাড়িয়ে দিয়েছে। সে ধারণাতীত পরিমাণ দুধ প্রদান করছে। এক বছর দুধ দেওয়ার পরে যখন দুধ থেমে যায় তখন আবার সবাই পীড়াপীড়ি করে বেচে দেওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মঙ্গলা চিকে থাকে ভালোবাসার টানে।৭
ছাগল
পরশুরামের ‘লম্বকর্ণ’ গল্পে বংশলোচন বাবু খালের পাড়ে বিকালে হাওয়া খেতে গিয়ে একটা বেওয়ারিশ ছাগল পান। মালিক খুঁজে না পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গিন্নি তা পছন্দ করেননা। বিক্রি করে দিতে হয়। বিক্রির সময় বংশলোচন বাবু শর্ত দেন, একে মারা যাবে না, জবাই করা যাবে না। বাদক দলের নেতা লাটু বাবু লম্বকর্ণকে অক্ষত রাখার শর্ত মেনে কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু লম্বকর্ণ তার কোনো কিছু অক্ষত রাখেনি। ঢোলের চামড়া, হারমোনিয়ামের চাবিসহ নগদ নব্বই টাকা খেয়ে ফেলেছে। লাট বাবু তাকে ফেরত দিয়ে যায়। বংশলোচন বাবু বাধ্য হয়ে লম্বকর্ণকে যেকানে পেয়েছিলেন সেখানে রেখে আসেন। কালবোশেখি ঝড়ের মধ্যে ভিজে বাড়ি ফিরে আসার পরে দেখেন লম্বকর্ণও বাড়িতে চলে এসেছে। এর পরে সে এখানেই থাকে।৮
মোষ
পরশুরামের গল্প ‘রাজমহিষী’। হংসেশ্বরের রাধানাথপুরের জমিদারী গেলেও সম্পত্তি আছে। কলকাতায় মামাবাড়ি থেকে পড়া মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল প্রফেসর বংশীদাস পিএইচডি। হংসেশ্বর পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা থেকে লোক দিয়ে একটা মোষ আনিয়েছেন। তার আশা ওয়েস্টবেঙ্গল ক্যাটল শোতে ফার্স্ট হবে। ওটার কেয়ারটেকার গোপীরাম পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি করে জেলে গেলে রাজমহিষী খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন বংশী বুদ্ধি করে গোপীরামের সঙ্গে জেলে গিয়ে দেখা করে খাওয়ানোর মন্ত্র অর্থ একটা গান মুখস্ত করে আসে। মোষের খাওয়ার জন্য গানের আয়োজন করে রাজমহিষীর খাওয়ার ব্যবস্থা করে। বিনিময়ে জমিদার কলকাতা শহরের তিনটি বাড়ি বংশীকে লিখে দিতে বাধ্য হন। তিনটি বাড়ির বিনিময়ে একটি গৃহপালিত পশুকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা গল্পটিতে জীবপ্রেমকে মহৎ করেছে।৯
তারাশঙ্কর বন্ধ্যোপাধ্যায়ের ‘কালাপাহাড়’ও একটা মোষ। সে তার সঙ্গিনী কুম্ভকর্ণকে হারাবার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। আরেকটা মোস কিনে তার নিঃসঙ্গতা দূর করার চেষ্টা করা হলেও সে আগন্তুককে গঁতিয়ে মারে। তাকে বিক্রি করে দেওয়া হলেও সে ফিরে আসে। আবার যখন দূরের হাটে বেচে দেওয়া হয় তখন সে শহরের ভেতর পাগরামি শুরু করে। অবশেষে পুলিশ এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে।১০
বনফুলের ‘বুধী’ গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা। গল্পটি ছোট হলেও ব্যঞ্জনা গভীর। বেনামী চরিত্রের পুরুষ লোকটার স্ত্রী মারা গেছে, একটি কন্যা ছিল, সেও মরে গেছে। বুধী নামের একটা গাভী ছাড়া জগতে তার আর কেউ নেই। পাকিস্তানি সৈন্যদের ভয়ে গ্রামের সমস্ত লোক পালিয়ে যাচ্ছে। সে গর্ভবতী গাভীটা নিয়ে কোথায় যাবে! তবুও একদিন পালাতে হয়। কারণ সবাই বলছে গ্রামে মিলিটারি ঢুকলে সবার আগে তার গরুটা জবাই করে খাবে। পালাতে গেলে নদীর ¯্রােতে হারিয়ে যায় বুধী। লোকটা একা নদীর অপর পাড়ে গিয়ে হাঁটতে থাকে। একটা বাড়ির সামনে বুধীকে বাঁধা অবস্থয়ি দেখতে পেল। তার একটা বাছুর হয়েছে। বুধী তাকে চিনেছে। সে গাভীটা নিজের বলে দাবি করলে বাড়িওলা প্রমাণ চায়। প্রমাণ দেবে কোথা থেকে? লোকটা এবার জানতে চায় সে হিন্দু নাকি মুসলমান। অজানা এলাকায় অচেনা মানুষের কাছে সে ধর্মীয় পরিচয় দেওয়া নিরাপদ মনে করে না। অকস্মাৎ প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকে। বুধীও বাঁধন ছিঁড়ে তার পেছনে দৌড়ে আসতে শুরু করে। তার কাছে তার প্রভু হিন্দু না মুসলমান এই পরিচয় বড় নয়। ভালোবাসাই অনেক বড়।১১
ঘোড়া
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘লাল ঘোড়া’। লেখকের কৈশোরে তার বাবা দুটি ঘোড়া কিনেছিলেন। এর একটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। লালঘোড়াটি বেঁচে যায়। এটি নিয়ে কিশোল লেখকের অনেক স্মৃতি। একসময় লালঘোড়াটি পাগল হয়ে যায়। অবশেষে প্রিয় এই ঘোড়াটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।১২
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ে ‘গবিন সিংয়ের ঘোড়া’করুণ গল্প। পশ্চিমভারতীয় গবিন সিংয়ের ছেলে নবীন বাপের অসুস্থ বুড়ো ঘোড়া প্রবীণকে কিছুতেই দেখতে পারে না। সে আরেকটা ঘোড়া কিনে তার ধানচালের ব্যবসা করে ধনসম্পদ বৃদ্ধি আর বাপের ঘোড়াটাকে ঘৃণা করতে থাকে। গবিন সিংয়ের মৃত্যুর পরে নবীন আস্তাবল ভেঙে দেয় যেখানে প্রবীণ থাকত। নবীনের হাতে মারধার খেয়েও প্রবীণ সারারাত পুরনো বাসস্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে একদিন নবীনের নতুন ঘোড়ার সঙ্গে বাজিতে নেমে জিতেও যায়। কিন্তু জিতেও শেষ কালে সে উঁচু ভাঙ্গা সাঁকো থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। সারাগ্রামের মানুষের চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।১৩
হাতি
‘সৈনিক’ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প। উত্তরবঙ্গের জমিদার চন্দ্র চৌধুরী সাঁওতালদের বসতি করার অনুমতি দেন। তিনি একটি হাতি পোষেণ। হাতিটি তাঁর সকল কাজের সঙ্গী হয়ে থাকে। জমিদারের মৃত্যুর পরে পুত্র ইন্দ্র চৌধুরী জমিদারি গ্রহণ করেন। তিনি হাতি পছন্দ করেন না। মোটরগাড়ি আছে তাঁর। হাতিটির প্রতি অবহেলা দেখা দেয়। সাঁওতালদের বসতি উচ্ছেদ করার জন্য নীল বাহাদুরকে ক্ষুধার্ত রেখে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়। নীল বাহাদুর ক্ষুধায় কাতর হয়ে কাত হয়ে মোটরগাড়ির ওপর পড়ে মারা যায়। ভেতরে ইন্দ্রচৌধুরীও মারা যান। ১৪
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘আদরিণী’। রাজাবাড়ির নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য মোক্তার হাতি ক্রয় করন। এর পরে তার আয় কমে যায়। নতুন প্রজন্মের কাছে বিদ্যা, শিক্ষা ও পেশাগাত কৌশলে হেরে যান। অভাবের সংসারে নাতনীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য হাতিটি বিক্রি করতে পাঠান। প্রথমে বিক্রি হয় নাই। পরের বার অসুস্থ্য হয়ে মারা যায় আদরিণী।১৫
কুকুর
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘কুকুর ছানা।’ লন্ডনপ্রবাসী শরৎকুমার বাগচী শীতের হিমরাতে একটি কুকুরছানা কুড়িয়ে পেয়ে পাঁচ মাস লালনপালন করে। পরে আসল মালিককে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেন ছিঁড়ে সে চলে আসে।১৬
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প ‘দেওঘরের স্মৃতি’। অসুস্থ লেখক হাওয়া বদলের জন্য দেওঘরে যাওয়ার পরে বাড়ির সামনে একটি বেওয়ারিশ কুকুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। লেজ নেড়ে তাঁর আদর নিতে চায়, খাবার চায় আর একটু আশ্রয় চায়। চাকরবাকরেরা তাকে মেরে তাড়িয়ে দেয়। লেখক নিজের জোরে ওকে খাবার দেন। এভাবেই কয়েকদিনের মধ্যে কুকুরটি আপন হয়ে ওঠে। শরীর সুস্থ না হলে লেখক কলকাতায় ফিরে আসেন। আসার সময় ক্ষুধার্ত কুকুরটাকে স্টেশনের প্লাটফর্মে দেখতে পান। লেখকের ভাষায়,
কেবলই মনে হতে রাগল, অতিখি আজ ফিরে গিয়ে দেখবে বাড়ীর লোহার গেট বন্ধ— ঢোকবার জো নেই। পথে দাঁড়িয়ে দিন-দুই তার কাটবে, হয় ত মধ্যাহ্নের ফাঁকে লুকিয়ে উপরে উঠে খুঁজে দেখবে আমার ঘরটা—তার পরে পথের কুকুর পথেই আশ্রয় নেবে।১৭
বনফুলের গল্প ‘বাঘা’র নায়ক একটি ভীরু, রুগ্ন এবং দুর্বল কুকুর। তাকে বড় ভাইয়ের যোনিপ্রাপ্ত কুকুর ভেবে ছোট বাই আদর-যত্ন করতে থাকে। মনিবের চাকরি চলে যাওয়ায় বাঘা খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিন পরে সে মনিবকে কামড়ায়। মনিবও তার স্ত্রীকে কামড়ে দেয়। উভয়েই জলাতঙ্কের রোগী।১৮
মোহাম্মদ নাসির আলীর ‘কুকুর ছানার কাণ্ড’গল্পে লেবুমামা ঢাকা শহরে গিয়ে বাটপারের পাল্লায় পড়ে সাতটাকা দিয়ে একটা কুকুর ছানা কিনে মহাবিপদে পড়ে। মিউনিসিপ্যালিটির ইলকেশনে কুকুরমার্কায় নির্বাচন করে পরাজিত লোকের কাছে গিয়ে হেনস্থা হয়। সে তাদের ‘দরিদ্র সেবা সমিতি’র টাকা খরচ করে কুকুরছানা কিনে ফেলায় ভারি মুশকিলে পড়ে। অবশেষে সমিতির জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা চাইতে গিয়ে আরেক বিপদে পড়ে। এমনই এক বাড়িতে গেলে তার কোল থেকে কুকুর ছানাটি নেমে বাড়ির ভেতর চলে যায়। বাড়ির ছেলের প্রিয় কুকুর পপি হারিয়ে গেলে পেপারে দশ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। আজ পপিকে পাওয়া গেছে। বাড়ির সবাই ভেবেছে লেবু মামা কুড়িয়ে পেয়ে বিজ্ঞাপন মতো এ বাড়িতে নিয়ে এসেছে। বাড়ির সবাই লেবু মামাকে পুরস্কারের দশটাকা এবং বকশিশ হিসাবে আরো পাঁচ টাকা উপহার দেয়। লেবু মামা সাতটাকা দিয়ে কিনেছিল এখন আট টাকা লাভ হল। গল্পটিতে পোষা প্রাণীর প্রতি মমতা দেখালে তার পুরস্কার প্রাপ্তিটাই তুলে ধরা হয়েছে।১৯
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘সাপ’ গল্পের অন্যতম চরিত্র রেনি নামের একটা কুকুর। গল্পের নাম সাপ হলেও কুকুরটার কথাই মুখ্য। বাপ্পা এবং তার বাবা যখন বিষধর সাপের ভয়ে আড়ষ্ট তখন বাবার চাবুকের আঘাতে মারখাওয়া রেনিই বীরের মতো সাপটাকে আক্রমণ করে বাবা- ছেলেকে রক্ষা করে।২০
আবু কায়সারের গল্প ‘লুৎফর রহমানের কুকুর’। মুক্তিযুদ্ধের সময় পদ্মপুর শহরে পাঞ্জাবি সৈন্য আর দেশী রাজাকারদের বাজার লুট করার সময় লুৎফর বস্ত্রালয়ে সমরাস্ত্র দিয়ে আঘাত করার সময় লুৎফর রহমানের কুকুরটি সৈন্যদের রিবুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সৈন্যদের গুলিতে সে প্রাণ হারায় কিন্তু পালানোর চেষ্টা করে না।২১
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে আরেকটি কুকুরের গল্প পাওয়া যায় আলাউদ্দিন আল আজাদের লেখা ‘যুদ্ধ নয়’। এটিতে ‘জন’ নামের একটি কুকুরের মুখে যুদ্ধ এবং জটিল রাজনীতির বর্ণনা দেওয়ায় কুকুরটি তার চারত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে।২২
হুমায়ূন আহমেদের ‘কুকুর’ একটি পরাবাস্তব গল্প। নিষ্ঠুর কিশোরদের হাত থেকে একটা কুকুরকে বাঁচাতে জামান সাহেব আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ছেলেরা কুকুর ছানাটিকে আগুনে ফেলে দিয়েছিল। ছানাটি তিনি বাঁচাতে পারেননি কিন্তু নিজে মারাত্মকভাবে পুড়ে আহত হয়েছিলেন। ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে তিনি অনেকদিন নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগেছেন। সুস্থ হওয়ার পরে তিনি প্রায়ই দিখতে পান তার বাড়ির সামনে কুকুরদের সভা বসে। বাংলাদেশের যেখানেই যান সেখানেই এইদৃশ্য দেখতে পান। এই কুকুরসভা কিন্তু আর কেউ দেখে না।২৩
বিড়াল
রম্যলেখক শিবরাম চক্রবর্তী বিড়াল নিয়ে অনেকগুলো গল্প লিখেছেন। প্রায় সবগুলো লেখকের উত্তমপুরুষে লেখা। এর মধ্যে একটি ‘অথ আয়োডিন ঘটিত’। এটিও হাসির গল্প। এ গল্পে লেখক বিড়াল একেবারেই দেখতে পারেন না। এদের উৎপাত অসহ্য লাগে। গা ঘেষাঘেষি করার সময় লেখক প্রচ- লাথি মারেন। বিড়ালটি পোষেণ লেখকের ছোটবোন বিনি। সে তখন বিড়ালটিকে টিংচার আয়োডিন খাইয়ে দেয়। এর পরে বিড়ালটি বিচিত্র সব কর্মকাণ্ড করতে থাকে। কখনো নাচে, কখনো দৌড়ায়, এটা সেটা ভাঙে। তার উদ্ভট কাণ্ড নিয়েই এই গল্প।২৪
‘বেড়ালের বই’ লীলা মজুমদারের একটি গল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বই। বইটি বিড়াল নিয়ে। তবে কোনো একটি বিড়াল নিয়ে না। প্রথমে লেখকের ছোটবেলার পাহাড়ী শহরের একটি হুলো বিড়ালের কথা লিখেছেন। এর পরে কলকাতা বসবাসের সময়কার আরেকটা বিড়ালের বর্ণনা। এটির নামও রাখা হয়েছিল হুলো। এর পরে ‘দিদি বেড়াল’ নামের আরেকটি বিড়ালের স্নেহ ও বাৎসল্য বোধের কথা লিখেছেন। এই দিদিবিড়াল সত্যিই দিদি টাইপের। অনেকগুলো ছোট ভাইবোনের জন্য আহার যোগাড় করে, সবাইকে খাইয়ে তার পরে নিজে খেতো। এখানে লেখক বিড়ালের স্বভাব ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।২৫
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘একটা দুটা বেড়াল’ বেড়াল গল্পে চুষি আর কুসিদের বাড়িতে আগে কোনো বেড়াল ছিল না। এবার একটা বড় বেড়াল এসে আশ্রয় নিয়েছে। বেড়ালটা নানারকম অঘটন ঘটালেও শেষ পর্যন্ত আশ্রয় পায়। মানুষের ভালোবাসা পায়। মা বেড়ালটা তার কতগুলো ছানাসহ দুধ পায়, মাছ পায় সবই পায়।২৬
বানর
বনফুলের ‘তিনটি’নামের গল্পটি বানর নিয়ে। রামভক্ত জবালাল বানরদের রামভক্তির অনুসরণে কুকুর পোষা বাদ দিয়ে এখন বানর পোষেণ। তিনটি বানর সংগ্রহ করেছেন। ওদের আহার-বহিারের সকল ব্যবস্থা করেছেন। গলায় প্লাস্টিকের মালা-বেল্ট যা পান তাই পরান। লেজের মধ্যে প্লাইস্টকের পাইপ লাগিয়ে রাখার কারণে লেজে স্পন্ডিলাইটিস হয়ে যায়। সেটা গ্যাংগ্রিনের রূপ নেয়। অবশেষে বানরগুলোর লেজ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার। কিন্তু বানরগুলো মানুষের অনুগ্রহের অনুকরণে বানরেরা জবালালের পা ধরে কান্নাকটি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ওদের বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে লেজ কাটার সিদ্ধান্তই থাকে।২৭
হনুমান
বনফুলের ‘পূর্বপুরুষের কাণ্ড’ গল্পটি হনুমান নিয়ে। হনুমানের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে অন্যের পরামর্শে লেখক মদ খাইয়ে হনুমানকে সরানোর চেষ্টা করলেন। দুই বোতর মদ আনিয়ে ছোলা ভিজিয়ে ছাদে দিলেন। দেখা গেল সব হনুমান বাড়িতে এসে উপস্থিত। ছাদে উঠে দেখলেন বুড়ি হনুমানটা গামলার সব ছোলা একাই খেয়ে বসে আসে। ছাদে লেলকের মেয়ে নিনতিকে উঠতে দেখে বুড়ি হনুমান তার সামনে এসে মানুষের মতো করে দুই হাত ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করে ক্ষমা চাইছে। তার দুই চোখ বেয়ে অঝোরধারায় অশ্রু ঝরছে।২৮
শেয়াল
লীলা মজুমদারের ‘কুঁকড়ো’গল্পটা ভিন্ন ধরনের। প্রথমে দেখা যায় মোরগের জন্য গল্পের সবার মনে করুণা জাগে। মোরগ-মুরগিসহ ছাগশিশুকে দরে খাওয়ার কারণে শেয়াল মারার ধুম পড়ে যায়। মুন্নুর লালঝুঁটির সাদা মোরগটাও শেয়ালে ধরে নিয়ে যায়। সবার মন খারাপ। একদিন দেখা যায় তীরবেঁধা একটা শেয়াল বাড়িতে এসে মরে পড়ে আছে। মৃত মা-শেয়ালটির কোলে একটা ছোট্ট ফুটফুটে শেয়ালছানা। দুধের বাচ্চাটির জন্য সবার হৃদয়ে করুণা জেগে ওঠে। মুন্নু তখন শেয়ালছানাটিকোই কুঁকড়ো বলে আদর-স্নেহে পুষতে শুরু করে। এ গল্প পড়েই মনে হয়, জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ কথাটা কত সত্য।২৯
মোরগ
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘ইদুমিয়ার মোরগ’। জোহরার যন্ত্রণায়ও সে মোরগটা বেচতে দেয়নি। কিন্তু নানা চালাকি করে নিয়ে গেল লোভী দফাদার দবিরুদ্দিন, তার কাছ থেকে ক্ষমতাবান দারোগা দীন মহম্মদ, তার কাছ থেকে আবার নিয়ে গেল ইন্সপেক্টর ইমতিয়াজ চৌধুরী। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে মোরগটা চলে আসে।৩০
শওকত ওসমানের গল্প ‘রাতা’। এ গল্পে দাদি আর নাতির মধ্যে একটা মোরগ নিয়ে মানসিক লড়াই চলে। বুড়ি ছেলের ঘরের নাতিকে নিয়ে অভাবী মেয়ের বাড়ি যাওয়ার সময় পালের মোরগটা নিয়ে যায়। নাতি সাজেদ কিছুতেই মোরগটা কাউকে দিতে দেবে নাম জবাই করতে দেবে না। তপ্তরোদের ভেতর হাঁটতে গিয়ে দুজনেই যখন ক্লান্ত তখন তাদের দুর্বলতার সুযোগে মোরগটা সাজেদের কোল থেকে ছুটে যায়। অনেক কষ্টে অনেকের সহায়তায় ধরে আনার পরে রাগে জিদে বুড়ি করিমা বিবি মোরগটার ঘাড় মটকে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সাজেদের প্রিয় মোরগটা মমৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দ্রুত বটি এনে প্রায় মৃত মোরগটার গলায় চালানো হয়। অভাবের দেশে ফুপুর হাভাতে সংসারের লোকেরা যেন খেতে পায় সে আশায়। সাজেদ ধূলায় গড়াগড়ি খায় আর চিৎকার করে মোরগটার জন্য।৩১
হাঁস
বনফুলের ‘হাঁস’ গল্পে অধ্যাপক পিতার ছেলে অনার্স পাস করে মিলিটারিতে যাওয়ার আশায় বাবার কাছে আবদার করে। বাবা মিলিটারিতে যাওয়ার আগে হাত পাকানোর জন্য ছেলেকে একটু বন্দুক কিনে দেন। ছেলে বন্দুক নিয়ে হাঁস শিকারে বেরোয় বন্ধুকে নিয়ে। বাদাড়ের মধ্যে সরোবরে একটা বড় শুভ্র হাঁস গুলি করে আহত করে বাড়ি আনে। রাতে দেখা যায় হাঁসটা নেই। ঘরে সরস্বতীর প্রতিমাচিত্রের হাঁসটাও নেই। রাত্রে সে স্বপ্ন দেখে। কয়েকদিন পরে আসামের শিলচরে ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর মিলিটারি গুলি চালায়। ছেলে ঘৃণায় মিলিটারিতে যোগদান না করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে যায়।৩২
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘হাঁস’ গল্পে হাঁসশিকারী দুই বন্ধুর কথা বলা হয়েছে। যাদের একজনের নারীশিকারেরও অভ্যাস আছে। সে জলাভূমিতে হাঁস শিকার করতে গিয়ে দুর্গম অঞ্চলে চলে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন। এতে যেন দেখানো হয়েছে লোভের পরিণাম।৩৩
কাক
বনফুলের গল্প ‘কাকের কাণ্ড’তে স্বর্ণগর্ভা জননী বাড়িতে অসময়ে কাকের ডাককে অমঙ্গল বিবেচনা করে কাকে তাড়াতে গিয়ে পিছল উঠানে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলেন। এ সংবাদ শুনে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ছেলে ও নাতিরা দ্রুত ছুটে আসে। দেখা গেল ব্যথা বেশি লাগে নাই। কাকের ডাকে অলক্ষ্মীর কিছু ঘটে নাই বরং সবার সঙ্গে সবার দেখা হওয়ার আনন্দে ভেসে উঠল বাড়িটা। কাক আগের মতোই ডাকছে।৩৪
পেঁচা
পরশুরাম ওরফে রাজশেখর বসুর ‘লক্ষ্মীর বাহন’ গল্পে মুচকুন্দ রায়ের বাড়িতে জানালা দিয়ে একটি পেঁচা চলে আসার পরে গিন্নি তাকে আদর যত্ন করে পোষে। রায়ের ঘরে সত্যি লক্ষ্মী আসে। ব্যবসায় উন্নতি, ঠিকাদারি- কন্ট্রাকটারিতে আয় বাড়ে। এই পেঁচা নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। কৃপারাম দাবি করেন, এটা তার গিন্নির। উকিল পঞ্চাননের বুদ্ধিতে মুচকুন্দের ছেলেকে দিয়ে চুরি করানো হয়। মুচকুন্দ উকিলের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে পেঁচাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু পেঁচা আর আগের মতো নেই। এখন নিষ্প্রাণ ও ক্ষুব্ধ। যার তার হাতে ঠুকরে দেয়। মুচকুন্দের গিন্নি মাতঙ্গীকে ঠুকরে দিলে তিনি পাখা দিয়ে পিটিয়ে পেঁচাকে বাড়িছাড়া করেন। এর পরেই মুচকুন্দ ফটকাবজি, জালিয়াতি, ঠিকাদারিতে নকল পণ্য চালান দিয়ে ধরা পড়ে। সাত বছর কারাবাস হয়। পুরো সংসার তছনছ হয়ে যায়।৩৫
চন্দনা
অচিন্ত্যকুমার সেন গুপ্তের গল্প ‘তাজমহল’। স্বামী-সন্তান নাতি-নাতি-নাতনি সবার নিষেধাজ্ঞার মুখে বিমলা একজোড়া চন্দনা পাখির ছানা পুষে বড় করেন। তার পক্ষীপ্রেম দেখে ক্রমে বাড়ির অন্যরাও পাখিদুটিকে ভালো বাসতে শুরু করে। কিন্তু রানী পাখিটা মারা যায় অজ্ঞাত কারণে। শোকে সপ্তাখানেক পরে রাজা পাখিটাও মারা যায়। মৃত পাখিদুটিকে কবর দেওয়া হয়। আর ওদের কবর দেওয়াকে কেন্দ্র করে মণিশঙ্কর ও বিমলা শেষ বয়সেও অনেক কাছাকাছি চলে আসেন।৩৬
কোকিল
বনফুলের ‘পাখীদের মধ্যে’ গল্পটিতে দেখা যায় কোকিল ছানা তার বাবার পাশে বসে থাকে। কিন্তু বাবা তাকে খাওয়ায় না। সে কাকের বাসায় জন্মনেওয়া কোকিলসন্তান। তখন মা কাক এসে তাকে ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁট পুরে খাবার খাওয়ায়। নিত্যদিনের শুধু চিরচেনা দৃশ্য নিয়েই গল্পটি লেখা। কোনো ঘটনা নেই।৩৭
শালিক
বনফুলের ‘এক ঝাঁক খঞ্জন’ গল্পে কবি শুকদেব জানেন শালিককে সংস্কৃত ভাষায় সারিকা বলা হয়। এই সারকিা নিয়ে সংষ্কৃত সাহিত্যে কত গল্প আছে। সেই সাহিত্যের টানেই শালিকের প্রতি তার আকর্ষণ জন্মেছে। জানালা দিয়ে একটা শালিক এসে তার টেবিলের ওপর থেকে পাউরটি আর বিস্কুটের গুঁড়া খেয়ে যায়। সে ধরার চেষ্টা করেও পারে না। একদিন কৌশলে দরে ফেলে। তার পরে ছেড়েও দেয়। পরদিন থেকে দেখা যায় জানালা দিয়ে একটা শালিক আর কাক, কাঠবেড়ালী এবং চড়ুই পাখিও এসে আদাড় খায়। কবি শুকদেব বকসী সে দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন। কিন্তু তিনি জানেন না, সেই আগের শালিকটা আর আসে না; আসে অন্য একটা শালিক।৩৮
বনফুলের আরেকটি গল্প ‘দ্বিতীয় শালিকটি’। বিহারের মেয়ে নন্দিনী সোম কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করার সময় ভুপেন রক্ষিতের সঙ্গে আন্তুরকতা গড়ে ওঠে। নন্দিনীর কিছুটা বিলাতি কুসংষ্কার আছে। ওয়ান ফর সরো টু ফর জয়। সে দেখেছে হীবনে যতবার একটা শালিক দেখেছে ততবারই অলক্ষ্মীর ঘটনা ঘটেছে। আর জোড়া শালিক দেখলে শুভসংবাদ আসে। গ্রামে ফিরে আসার পরে দোলযাত্রার অনুষ্ঠানে নীলরঙ পিচকারি দিয়ে একজোড়া শালিক পাখির গায়ে রঙ ছুঁড়ে মারে। একটার গায়ে লাগে। পরদিন একটা রঙছাড়া শালিকটা দেখতে পায়। এসময় ভুপেনের চিঠি পেয়ে জানতে পারে, তার টিবি হয়েছে—তাই তাদের বিয়ে হতে পারে না। বিয়েটা ভেঙে গেল। আরেক পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। এসময় ভুপেন খাঁচাসহ একটা শালিক পাখি নিয়ে আসে। শালিকটার গায়ে নীলরঙ লাগানো। নন্দিনীর কথায় ভুপেন পাখিটা ছেড়ে দেয়। উড়ে আকাশে চলে যায় শালিকটা।৩৯
বাঘ
মণীন্দ্রলাল বসুর গল্প ‘ডায়না’র প্রধান চরিত্র ডায়না নামের একটি সার্কাসের বাঘ। সে দল থেকে একদিন বেরিয়ে যায়। অনেক দেশ ঘুরে ফিরে আহার ও বিহারের সুবধা করতে না পেরে অনেক দিন পরে আবার ফিরে আসে। মৃতপ্রায় সার্কাসের দরটি আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে।৪০
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাঘিনী’তে মানুষ খেকো বাঘিনীকে হত্যা করার পরে দেখা যায় একটি অরণ্যচারী কিশোর মৃত বাঘিনীকে জড়িয়ে কাঁদছে। সে ছোটবেলা থেকেই মুক্ত পরিবেশে বাঘটির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিল। পায়ের কাঁটা তুলে দেওয়া বাঘটি কৃতজ্ঞতায় কিশোরকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিল। কিশোর বড় হয়ে বিয়ে করার পরে বাঘিনী ঈর্ষায় মানুষখেকো হয়ে ওঠে। এর পরে তার করুণ পরিণাম মৃত্যু।৪১
ভালুক
ভালুক নিয়ে শিবরাম চক্রবর্তী একাধিক হাসির গল্প লিখেছেন। দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘ভাবা’(ভালুক+বালক) সিরিজ উপন্যাসও রচনা করেছেন। শিবরামের দুটি গল্পের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে একটির ‘আমার ভালুক শিকার’। এটিতে লেখক সুন্দরবনের কাছাকাছি অঞ্চলে বেড়াতে গিয়ে জাম পাড়তে গিয়ে ভালুকের মুখোমুখি হন। পরে বন্দুক নিয়ে যান। ভালুককে দুই পায়ে দাঁড়াতে দেখে ভয়ে বন্দুক ফেলে দৌড়ে পালান। ভালুকটি বন্দুক কুড়িয়ে নেয়। প্রথমে নতুন খাদ্য ভেবে খাওয়ার চেষ্টা করে পরে অসতর্কভাবে লেখককে গুলি করার অভিনয় করে। এতে নিজের গুলি রেগে ভালুকটি মারা যায়। লেখক তখন সবাইকে বলে বেড়ান তিনিই ভালুক শিকার করেছেন।৪২
সাপ
কাজী নজরুল ইসলামের ‘পদ্মগোখরা’ গল্পটি পরাবাস্তব। মীর পরিবারের পুত্রবধূ জোহরা একজোড়া পদ্মগোখরা সাপকে বাস্তুসাপ হিসাবে নিয়মিত দুধ খাইয়ে পোষে। এ নিয়ে পরিবারের নানা সমস্যা দেখা দেয়। জোহরাকে ষড়যন্ত্র করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাপ দুটিকে হত্যা করার জন্য। সাপদুটির পাহারা দেওয়া গুপ্তধনের কলসি পেয়েই তারা ধনী হতে থাকে। জোহরার দুটি জমজ সন্তান শৈশবে মারা গিয়েছিল তাই সাপজোড়াকে খোকা বলে লালন করে। যখন সাপ দুটিকে হত্যা করা হয় তখন আবার জোহরার পেট থেকে জমজ মৃত সন্তান প্রসূত হয়। কিন্তু এই সন্তানেরা মানুষ ছিল না। ছিল একজোড়া গোখরা সাপ। ফ্রয়েডীয় যেমন মনস্তত্ত্ব অনুসারে সাপ পুরুষের প্রতীক। জমজ সাপ জমজ পুত্রসন্তানেরই প্রতীক।৪৩
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নারী ও নাগিনী’তে খোঁড়া শেখ নামের বেদে ইটের ফাঁকে একটি সাপিনী পেয়ে তাকে পেশাগত এবং সখ্যতায় আপন করে নেয়। স্ত্রী বলে ঠাট্টা করে। খোঁড়ার বিবি জোহরা সাপিনীকে দেখতে পারত না। সাপিনীও তাকে ঈর্ষা করত। ঋতুমতী সাপিনী সর্পসঙ্গলাভের কামনায় প্রচ- ঈর্ষায় জোহরাকে ছোবল মেরে হত্যা করে।৪৪
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘বাস্তুসাপ’। বাস্তুসাপকে বাড়ির চাকর হত্যা করলে বাড়িতে অমঙ্গল হবে আশঙ্কা দেখা দেয়। বকা শুনে চাকর নতুন করে দুটি সাপ যোগাড় করে আনে। সেই সাপ বাড়ির লোকদের কামড়ায়। চাকর যে বেদের কাছ থেকে সাপ কিনে এনেছিল তারাই এসে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলে সবাইকে। সাপ দুটির বিষদাঁত ছিল না।৪৫
হুমায়ূন আহমেদের গল্প ‘বেবি রুথ’। লেখকের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসকালে একই বাড়ির বাসিন্দা সত্তর বছরে প্রবীণা এলিজাবেথ এন্ডারসন অজগর সাপ কিনে এনে পোষেন। বাড়ির সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকেন। বুড়ি তার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্যই অদ্ভুত কাজ করেন। সাপটিকে তিনি মুক্তভাবে বিচরণ করার সুযোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। তবে কারো ক্ষতি করেনি বুড়ির রুথ নামের অজগর সাপটা। এক সময় রুথ নিখোঁজ হয়ে যায়। তখন যারা এর ভয়ে ভীত ছিল সবারই মন খারাপ হয়ে যায়। সবাই খোঁজাখুজি করেন। সবাই সাপটিকে ভুলে যায়। অনেকনি পরে এক সন্ধ্যায় এককুড়ি ছানাপোনাসহ অজগরটি ফিরে আসে। কিলবিল করতে থাকা ছানাপোনা দেখে সবাই এবার প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। এমনকি বুড়ি এন্ডারসনও। দমকল বাহিনিকে ডাকা হলে তারা লোকজন ডেকে নানা কৌশলে ছানাপোনাসহ সাপটি ধরে নিয়ে যায়। সাপটি আসলে প্রিয় মানুষদের কাছে নিজের সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এসেছিল বলে লেখকের ধারণা। মানুষ সাপটির ভালোবাসা গ্রহণ করেনি। লেখকের মতে, “মানুষ শুধু মানুষের ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারে—অন্য কারো ভালোবাসা গ্রহণ করার ক্ষমতা মানুষের নেই।”৪৬
গিনিপিগ
‘পিগ মানে শুয়োরছানা’ গল্পে শিবরাম চক্রবর্তী হাস্যরসাত্মক ভাষায় লিখেছেন,ব্রিটিশ আমলের আমলাতন্ত্র কতটা জটিল ও কঠিন ছিল। রেলওয়ের ডাকে একাজোড়া গিনিপিগ পাঠানো হলে প্রাপক তা গ্রহণ করতে গেলেন। স্টেশন মাস্টার ডাকমাশুল চাইলেন ‘পিগ’ মানে শুয়োর ছানার। কিন্তু নকুল বাবু পিগের মাশুল দিয়ে গিনিপিগ গ্রহণ করবেন না। গিনিপিগ অনেক ছোট—তাই মাশুল কম হবে। শেষ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ, আবেদন পত্র, চিঠি চালাচালি, বিলাতের লন্ডন পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি। এদিকে পিগ হোক আর গিনিপিগ হোক না খেয়ে মারা গেলে স্টেশন মাস্টারের চাকরি থাকবে না। তিনি পকেটের পয়সা খরচ করে খাওয়াতে লাগলেন। দ্রুত প্রজননশীল গিনিপিগেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত হয় গিনিপিগকে পিগের সমান ধরা যাবে না। মাশুল কম হবে। ঝামেলা মিটল। কিন্তু সংখ্যায় বেড়ে ওরা আট-দশ ওয়াগন ভরে গেছে। ৪৭
এ ছাড়া কীট-পতঙ্গ নিয়েও বাংলায় ছোটগল্প লেখা হয়েছে। আবু ইসহাকের ‘জোঁক’, ‘মহাপতঙ্গ,’ বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ‘নারায়ণী সেনা’য় পিঁপড়া, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘টিকটিকি’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের মশা, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মশা, বনফুলের গল্প ‘পোকা’, হুমায়ূন আহমেদের ‘পোকা’ উপন্যাসে তেলাপোকা ইত্যাদি। বাংলা ছোট গল্প এসব প্রাণী নিয়ে ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। এদেশের লেখকদের মানুষের অতিরিক্ত প্রাণীবৈচিত্র্যের প্রতি আবেগ ও আগ্রহ প্রকাশ পায়। এসব গল্প শিশু-কিশোর-তরুণসহ সব বয়সী পাঠকের মনে শুধু সাহিত্যরসই সঞ্চার করে না; প্রাণীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ স্থাপনে যত্নবান হতে সাহায্যও করে।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: লিও টলস্টয় অনেক প্রসঙ্গের কয়েকটি: বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫, পৃ-১১-১২
২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: শ্রেষ্ঠ ছোট গল্প, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, মার্চ ২০০২, পৃ-৮৭
৩. শরৎ রচনাবলী অষ্টম খণ্ড, ঝিনুক পুস্তিকা, ঢাকাণ্ড জুলাই ১৯৭৪. পৃ- ৩৯১
৪. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়: বিভূতি রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, আষাঢ় ১৩৯৪ পৃ- ১৯৮
৫. গল্প সংকলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৫, পৃ-২৫০
৬. দুই বাংলার ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প: সম্পাদনা: লীলা মজুমদার ও এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ: পরিবর্ধিত বাংলাদেশ সংস্করণ: মে ২০০৮, চারুলিপি প্রকাশন, ঢাকা। পৃ-১০৪
৭. বনফুল রচনাবলী পঞ্চদশ খণ্ড-, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ-২৭৬
৮. পরশুরাম গ্রন্থাবলী প্রথম খণ্ড, পরশুরাম, এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড: কলকাতা, ১৩৮৭, পৃ-৫০
৯. রাজশেখর বসু: পরশুরাম গল্প সমগ্র: এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড: কলকাতা, অক্টোবর, ২০১০, পৃ-৬৫০
১০. তারাশঙ্কর বন্দ্যেপাধ্যায়: তারাশঙ্কর রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৩৯১, পৃ-৪০৫
১১. বনফুল রচনাবলী উনবিংশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ-৩০১
১২. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী দশম খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, আষাঢ় ১৩৬৫, পৃ- ২৩৭
১৩. দুই বাংলার ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প: সম্পাদনা: লীলা মজুমদার ও এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ: পরিবর্ধিত বাংলাদেশ সংস্করণ: মে ২০০৮, চারুলিপি প্রকাশন, ঢাকা। পৃ-৬২
১৪. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী প্রথম খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, আষাঢ় ১৩৬৯, পৃ- ৬১৬
১৫. গল্প সমগ্র: প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়: পূথিকা বুক স্টল, কলকাতা, প্রকাশকাল নাই-পৃ-১৩
১৬. গল্প সমগ্র: প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়: পূথিকা বুক স্টল, কলকাতা, প্রকাশকাল নাই-পৃ-১০০৩
১৭. শরৎ রচনাবলী সপ্তম খণ্ড, ঝিনুক পুস্তিকা, ঢাকাণ্ড জুলাই ১৯৭৪. পৃ- ৪৫৩
১৮. বনফুলের গল্প দেখতে হবে
১৯. দুই বাংলার ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প: সম্পাদনা: লীলা মজুমদার ও এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ: পরিবর্ধিত বাংলাদেশ সংস্করণ: মে ২০০৮, চারুলিপি প্রকাশন, ঢাকা। পৃ-১৩৪
২০. শীর্ষেন্দুর সেরা ১০১, পত্র ভারতী, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি-২০১০. পৃ. ৩৮৩
২১. মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কিশোর গল্প: সম্পাদনা: আমীরুল ইসলাম: সময় প্রকাশনী, ঢাকা: জুন ১৯৮৯ পৃ- ৩০
২২. শিল্পী খানম: আলাউদ্দিন আল আজাদের ছোটগল্পে জীবনবোধের রূপ-রূপান্তর, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকাণ্ডআগস্ট ২০০৯, পৃ-৫২
২৩. গল্পসমগ্র: হুমায়ূন আহমেদ: কাকলী প্রকাশনী, ঢাকা, তৃতীয় প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, পৃ. ৩৭
২৪. শিবরাম চক্রবর্তী: জন্মদিনের উপহার, দেব সাহিত্য কুটির, কলকাতা, ১৩৬৬, পৃ—৯
২৫. লীলা মজমদার: বেড়ালের বই , শিশু সাহিত্য সংসদ, কলকাতা-
২৬. শীর্ষেন্দুর সেরা ১০১, পত্র ভারতী, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি-২০১০. পৃ. ৬৭
২৭. বনফুল রচনাবলী চতুর্দশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ- ৪৭৫
২৮. বনফুল রচনাবলী উনবিংশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ- ১০০
২৯. দুই বাংলার ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প: সম্পাদনা: লীলা মজুমদার ও এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ: পরিবর্ধিত বাংলাদেশ সংস্করণ: মে ২০০৮, চারুলিপি প্রকাশন, ঢাকা। পৃ-১০৮
৩০. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, আষাঢ় ১৩৬২, পৃ-৪৬
৩১. বাংলাদেশের নির্বাচিত ছোটগল্প প্রথম খণ্ড: সম্পাদনা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ; বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা। নভেম্বর ১৯৯৪, পৃ-১১
৩২. বনফুল রচনাবলী পঞ্চদশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ-২২১
৩৩. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী নবম খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, আষাঢ় ১৩৬২, পৃ-১৯৭
৩৪. বনফুল রচনাবলী নবম খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ-১৯৭
৩৫. পরশুরাম গ্রন্থাবলী প্রথম খণ্ড, পরশুরাম, এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড: কলকাতা, ১৩৮৭, পৃ-২১৫
৩৬. অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত: শতগল্প, আনন্দধারা প্রকাশন, কলকাতা, অগ্রহায়ণ-১৩৬৭, পৃ-৫৯৭
৩৭. বনফুল রচনাবলী- ত্রয়োদশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ-৫৫৬
৩৮. বনফুল রচনাবলী উনবিংশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ-১৬৮
৩৯. বনফুল রচনাবলী উনবিংশ খণ্ড, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা- ১৩৬০, পৃ- ৩৭৫
৪০. ঝলমল, সম্পাদক (অজ্ঞাত), কলকাতা, পৃ-৩২
৪১. শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়: শরদিন্দু অমনিবাস সপ্তম খণ্ড: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৩৫৯, পৃ- ১৬১
৪২. শিবরাম রচনা সমগ্র (অখণ্ড সংস্করণ) অন্নপূর্ণা প্রকাশনী, কলকাতা, পৌষ, ১৩৯৮, পৃ— ১৬৫
৪৩. রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য সম্পাদিত নজরুল রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড, জন্মশতবর্ষ সংষ্করণ- মে ২০০৭। বাংলা একাডেমী ঢাকা, পৃ-৩৬২
৪৪. শ্রেষ্ঠ রচনাসমগ্র: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়: সাহিত্যকথা প্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১৪, পৃ-৫৮
৪৫. গল্প সমগ্র: প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়: যূথিকা বুক স্টল, কলকাতা-পৃ. ৮৯
৪৬. গল্পসমগ্র: হুমায়ূন আহমেদ: কাকলী প্রকাশনী, ঢাকা, তৃতীয় প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩্ পৃ. ১৪৫
৪৭. শিবরাম রচনা সমগ্র (অখণ্ড সংস্করণ) অন্নপূর্ণা প্রকাশনী, কলকাতা, পৌষ, ১৩৯৮, পৃ— ৩১