বাংলাদেশের সাহিত্যে সম্প্রতি নতুন একটি প্রকরণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সেটি হলো প্রবচন। তবে প্রবচন বিশ্বের সমাজ ও সাহিত্যের ইতিহাসে নতুন কোনও বিষয় নয়। প্রবচন এসেছে প্রবাদ থেকে, প্রবাদবাক্য বিশ্বের সকল দেশে, ভাষায় ও সকল সমাজে প্রচলিত আছে। প্রবাদ হলো কোনও জনগোষ্ঠীর অতীতের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত কথার সংক্ষিপ্তপ্রকাশ। ধারণা করা হয় ধর্মগ্রন্থগুলো রচিত হওয়ার আগে মানুষ এসব প্রবাদ এবং প্রবচনকে বেদবাক্যের মতো গুরুবাক্য মনে করে আঁকড়ে ধরে জীবনকে সুন্দর, সমাজকে সংহত এবং সভ্যতাকে টেকসই করার চেষ্টা করত। কোনও কৌম বা জনসমাজে যিনি যত বেশি প্রবাদ ও প্রবচন বলতে পারতেন, মুখস্ত রাখতেন সমাজে তাঁর মর্যাদা ছিল রাজার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশের আলোচ্য এই প্রবচনধারার সাহিত্যপ্রকরণটি হুমায়ুন আজাদ শুরু করেছেন বলে অনেকে মনে করেন। এজন্য কেউ কেউ ড. হুমায়ুন আজাদের একটি কথাকে সাক্ষ্য বলে মানেন, তিনি তাঁর প্রবচনগুচ্ছ- প্রাচীনকাল থেকে এই কয়েক দশক পূর্বকাল পর্যন্ত এ ধারা প্রচলিত ছিল। কিন্তু মধ্যযুগে রাজক্ষমতা এত লোভনীয় হয়ে ওঠে যে, তখন এইসব জ্ঞানী ও সাধক মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাজক্ষমতাসীন লোকেরা নানা রকম কলাকৌশল আবিষ্কার করতে শুরু করে। মধ্যযুগের সে ইতিহাসের বিয়োগান্তক ঘটনাগুলো অনেকেরই জানা।
নামের পকেটগ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন, “বাঙলায় প্রবচনগুচ্ছের কোনো সচেতন ঐতিহ্য নেই।” এ-কথায় কিন্তু মনে হয় না যে তিনি দাবি করছেন তাঁর আগে কেউ প্রবচন লেখে নাই। এখানে লিখিত দুটি শব্দ ‘সচেতন’ এবং ‘ঐতিহ্য’ একটু লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে ঐতিহ্য বিশেষ্য পদটিকে তিনি সচেতন বিশেষণ দিয়ে বিশেষায়িত করে বোঝাতে চাইছেন যে, সচেতনভাবে প্রবচন রচনা করার ধারাবাহিকতা নাই।১
বর্তমান রচনায় প্রবচনসাহিত্যের পূর্বাপর দিকগুলো আলোচনা করার প্রয়াস নেওয়া হবে।
দুই.
প্রবাদ ও প্রবচন কী: প্রবাদ লোকসাহিত্যের অংশ বলে এ সম্পর্কে দেশ-বিদেশের লোকসংস্কৃতিবিদগণ সাধারণত আলোচনা করে থাকেন। সাহিত্যের ইতিহাসবিদ এবং সাহিত্যতাত্ত্বিকগণও সে আলোচনায় প্রবৃত্ত হন। লোকসাহিত্য গবেষক ড. আবদুল খালেক জানান, লোকসংস্কৃতির এই একটি ধারা প্রবাদ, এর সংজ্ঞা নিরূপণ জটিল কাজ। কেননা প্রবাদের যে বৈশিষ্ট্য তাকে অল্প কথায় বোঝানো অসম্ভব। প্রবাদের সংজ্ঞাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হলে প্রবাদের নানা বৈশিষ্ট্যের কথা উঠে আসে।২
প্রবাদ, এর নিচে কয়েকজন লোকসংস্কৃতি-গবেষকের মত তুলে ধরা হলো:
প্রবাদ ও প্রবচন কী: প্রবাদ লোকসাহিত্যের অংশ বলে এ সম্পর্কে দেশ-বিদেশের লোকসংস্কৃতিবিদগণ সাধারণত আলোচনা করে থাকেন। সাহিত্যের ইতিহাসবিদ এবং সাহিত্যতাত্ত্বিকগণও সে আলোচনায় প্রবৃত্ত হন। লোকসাহিত্য গবেষক ড. আবদুল খালেক জানান, লোকসংস্কৃতির এই একটি ধারা প্রবাদ, এর সংজ্ঞা নিরূপণ জটিল কাজ। কেননা প্রবাদের যে বৈশিষ্ট্য তাকে অল্প কথায় বোঝানো অসম্ভব। প্রবাদের সংজ্ঞাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হলে প্রবাদের নানা বৈশিষ্ট্যের কথা উঠে আসে।২
প্রবাদ, এর নিচে কয়েকজন লোকসংস্কৃতি-গবেষকের মত তুলে ধরা হলো:
১। ড. বরুণকুমার চক্রবর্তী: প্রবাদ হলো অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের দীর্ঘলালিত ভাণ্ডার।৩
২। পল্লবসেনগুপ্ত: প্রবাদের মধ্যে খুব স্বল্প পরিসরে মৃদু অথবা তীব্র শ্লেষ প্রয়োগ করে মূলত উপমা ও তুলনার মাধ্যমে বক্তব্যকে হাজির করা হয়—উপমানটিই শুধু সেখানে উপস্থিত হয় কথার মধ্যে, উপমেয় থাকে বাস্তবে গরহাজির। এ-কারণে প্রবাদ মাত্রেই রূপক ও অতিশয়োক্তি অলঙ্কারের গুণসম্পন্ন। এই সংশ্লেষ তির্যক-তুলনাই হল প্রবাদের প্রাণ।৪
৩। ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য: প্রবাদ গোষ্ঠীজীবনের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ততম সরস অভিব্যক্তি।৫
৪। ড. আশরাফ সিদ্দিকী: মানবজীবনের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, ভুয়ো-দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রবাদ ও প্রবচন পরিবৃদ্ধি লাভ করে আসছে। বিরাট বিস্তৃত বিপুল পৃথিবী নানা ধর্ম, নানা জাতি নানা সামাজিক ও সাংসারিক আবহাওয়ার মধ্যে মানুষ পরিবর্তিত হয়, কাজেই তার অভিজ্ঞতা ও প্রবাদও বহু বিচিত্র।৬
প্রবাদ হলো সমাজে প্রচলিত, আর প্রবচন হলো ব্যক্তির রচিত। প্রবাদগুলো লোকপরম্পরাক্রমে মুখে মুখে উচ্চারিত হতে হতে, প্রসঙ্গক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর প্রবচনগুলো কোনও ব্যক্তির মৌখিক অথবা লিখিত সচেতন সৃষ্টি। তবে বর্তমানে মৌখিক সাহিত্যের চেয়ে লিখিত এবং মুদ্রিত সাহিত্যের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় প্রবাদগুলোকে এখন লিখিত বিষয়ও বলা যায়। শিশুকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত প্রবাদগুলো মানুষ কানে শুনে এবং লিখিত রূপ পাঠ করে পুনরায় ব্যবহার করার জন্য মস্তিষ্কে সঞ্চয় করে রাখছে। একেবারে সম্প্রতি মুদ্রিত বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা ছাড়াও ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বেতারযন্ত্র, টেলিভিশন এবং ইউটিউবের মতো বৈদ্যুতিক এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রবাদ ও প্রবচন পাঠকরা, লেখা এবং শোনার সুযোগ পাচ্ছে।
আলোচনার সুবধার জন্য বাংলা প্রবাদ ও প্রবচনের একটি শ্রেণীবিভাগ করে নেওয়া যায়:
ক) গ্রহণ করার ভিত্তিতে দুই প্রকার: ১। শ্রুত, ও ২। লিখিত।
খ) ব্যবহারের রুচিগত দিক থেকে দুই প্রকার: ১। লৌকিক, ও ২। নাগরিক। এটিকে অপ্রমিত এবং প্রমিতও বলা যেতে পারে।
গ) প্রকাশনার দিক থেকে দুই প্রকার: ১। রচিত, এবং ২। সংগৃহীত।
খ) ব্যবহারের রুচিগত দিক থেকে দুই প্রকার: ১। লৌকিক, ও ২। নাগরিক। এটিকে অপ্রমিত এবং প্রমিতও বলা যেতে পারে।
গ) প্রকাশনার দিক থেকে দুই প্রকার: ১। রচিত, এবং ২। সংগৃহীত।
৪। উৎসগত দিক থেকেও দুই প্রকার: ১। স্থানীয়, ও ২। বহিরাগত। এটিকে অন্তর্গত ও বহির্গত এবং স্থিত ও আমদানিকৃতও বলা যেতে পারে।
প্রবাদ ও প্রবচনের কাজ কী: সাধারণত প্রবাদ ও প্রবচনগুলো চার ধরনের কাজ করে থাকে:
১। সমাজে বিদ্যমান নানা ঘটনার ভেতর থেকে গূঢ় সত্য বের করে আনে, প্রকাশ করে।
২। ভাষা ও কথার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, বক্তার বাকবৈদগ্ধ প্রকাশ করে, পাণ্ডিত্যসম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করে।
৩। সময়, পরিবেশ ও সমাজ থেকে ব্যক্তি যে অভিজ্ঞতা লাভ করে, তা প্রকাশ করে, যা সমকালীন অনেকের এবং উত্তরকালীন প্রজন্মের যাপিত জীবনে কাজে লাগতে পারে।
৪। ব্যক্তি ও পরিবার, সমাজ ও সম্প্রদায়, দেশ ও জাতি, রাষ্ট্র ও বিশ্ব কিংবা গোষ্ঠী ও শ্রেণীর অকল্যাণ দূর করে কল্যাণের লক্ষ্যে নীতি, উপদেশ এবং পরামর্শ প্রদান করে।
২। ভাষা ও কথার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, বক্তার বাকবৈদগ্ধ প্রকাশ করে, পাণ্ডিত্যসম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করে।
৩। সময়, পরিবেশ ও সমাজ থেকে ব্যক্তি যে অভিজ্ঞতা লাভ করে, তা প্রকাশ করে, যা সমকালীন অনেকের এবং উত্তরকালীন প্রজন্মের যাপিত জীবনে কাজে লাগতে পারে।
৪। ব্যক্তি ও পরিবার, সমাজ ও সম্প্রদায়, দেশ ও জাতি, রাষ্ট্র ও বিশ্ব কিংবা গোষ্ঠী ও শ্রেণীর অকল্যাণ দূর করে কল্যাণের লক্ষ্যে নীতি, উপদেশ এবং পরামর্শ প্রদান করে।
প্রবাদ-প্রবচনের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে সেগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা যায়:
ব্যবহারযোগ্যতা: কাউকে সরাসরি আদেশ-নির্দেশ দেওয়ার চেয়ে প্রবাদ বা প্রবচন উচ্চারণ করে শুনিয়ে বা লিখে জানালে মানুষের কাছে সে কথাটা বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে অর্থনীতি, ক্ষমতা, শক্তিসহ শ্রেণীর নানা রকম আছে; সমশ্রেণীর আদেশ-নির্দেশ মানুষ যত সহজে গ্রহণ করে, অসমান শ্রেণীর ক্ষেত্রে তা সহজে গ্রহণ করে না, সেক্ষেত্রে প্রবাদ-প্রবচন বিশেষ কাজে লাগে। গ্রামের দরিদ্র ব্রাহ্মণ পণ্ডিত কিংবা পথের ফকির-দরবেশ তার দেশের রাজাকে বা বাদশাকে সরাসরি আদেশ-নির্দেশ দিতেন না, দিতে পারেনও না; প্রয়োজনে প্রবাদ-প্রবচন শুনিয়ে দিতেন, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। এভাবে, স্বামী-স্ত্রী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পির-মুরিদ, ওস্তাদ-সাগরেদ, মালিক-শ্রমিক এবং রাজা-প্রজার মধ্যে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে প্রবাদ-প্রবচন। অপরিচিত মানুষের ক্ষেত্রেও অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ না করে প্রবাদ-প্রবচন ব্যবহার করে সাপ মারা যায়, লাঠিও অক্ষত থাকে।
গতি: প্রবাদ-প্রবচন নামের সাহিত্যপ্রকরণটি মলাটবদ্ধ গ্রন্থের মতো স্থির বিষয় নয়, এটি গতিশীল। এর গতিতে স্থানান্তরযোগ্যতা এবং কালন্তরযোগ্যতা রয়েছে। এগুলো তিন প্রকার:
ক) ব্যবহারের দিক থেকে: ১। সাহিত্য থেকে জনজীবন, এবং ২। জনজীবন থেকে সাহিত্য।
জানা থেকে জানানো, শেখা থেকে শেখানো, শোনা থেকে বলা বা শোনানো, লেখাপাঠ করে জীবনে গ্রহণ করা আবার জীবন থেকে রচিত সাহিত্যে লিপিবদ্ধ করে রাখাÑদ্ভুাবেই গতিশীল থাকতে পারে প্রবাদ-প্রবচন।
খ) স্থান বা পরিবেশগত দিক থেকে দুই প্রকার: ১। স্থানীয় কোনও পরিবার, সমাজ বা দেশ থেকে আরেক পরিবারে, সমাজে এবং দেশে মৌখিকভাবে বা লিখিতরূপে যেতে পারে। ২। ভিন্ন পরিবার, সমাজ এবং দেশ থেকে প্রবাদ-প্রবচন নানা মাধ্যমে আসতে পারে; বিদেশি প্রবাদ-প্রবচন এভাবেই আসে। যেমন,
১.১। ভগবান যব দেতা, ছাপ্পড় ফাড়কে। (হিন্দি-উর্দু)
১.২। টাকা যখন কথা বলে, সত্য তখন চুপ করে থাকে। (রাশিয়ান প্রবাদ)
১.৩। আইনের আশ্রয় নেওয়ার মানে হলো বিড়ালের জন্য হাতি হারানো। (চীনা প্রবাদ)
১.২। টাকা যখন কথা বলে, সত্য তখন চুপ করে থাকে। (রাশিয়ান প্রবাদ)
১.৩। আইনের আশ্রয় নেওয়ার মানে হলো বিড়ালের জন্য হাতি হারানো। (চীনা প্রবাদ)
গ) কালগতভাবেও প্রবাদ-প্রবচনগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে: ১। ব্যক্তিগত প্রবচন অনেক সময় কালক্রমে সামাজিক প্রবাদে রূপ নিতে পারে, এবং ২। সমাজে স্বল্পপরিচিত কিংবা অপ্রচলিত প্রবাদ কোনও ব্যক্তির মুখে উচ্চারিত হওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা রচিত প্রবচন হয়ে উঠতে পারে। এভাবে প্রবাদ-প্রবচন কাল থেকে কালান্তরে প্রজন্মক্রমে প্রবহমান থাকে।
বৈপরীত্য: অনেক সময় কোনও জনসমাজে বা দেশে বা ভাষিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিপরীত অর্থবোধক প্রবাদ-প্রবচনও দেখা যায়। সাধারণত ছাত্রপাঠ্য ব্যাকরণগ্রন্থে এবং প্রবাদ-প্রবচনের সংকলনে এমন উদাহরণ দেখা যায়। ব্যবহারের সময় ব্যক্তি, সময় ও পরিবেশ অনুসারেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় বাস্তবজীবনে কিংবা নাটক-সিনেমার সংলাপে, তর্কে-বিতর্কে বিপরীতধর্মী প্রবাদ-প্রবচনের ব্যহার ঘটতে পারে। যেমন,
১.১। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
১.২। নাই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো।
১.২। নাই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো।
বিকল্প: কোনও ভাষিক জনগোষ্ঠীতে একটি প্রবাদের বিকল্প এক বা একাধিক থাকতে পারে। বক্তা তার রুচি, সূক্ষ্ম অনুভূতি এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, সময় ও পরিবেশ অনুসারে একটি বেছে নিতে পারে। যেমন,
১.১। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।
১.২। এক নায়ের মাঝি।
১.৩। সব শেয়ালের এক রা।
১.২। এক নায়ের মাঝি।
১.৩। সব শেয়ালের এক রা।
কিংবা রয়েছে,
২.১। ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া।
২.২। নাই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো।
২.২। নাই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো।
নৈর্ব্যক্তিকতা: প্রবচনের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এর নৈর্ব্যক্তিকতা। যদিও কেউ কেউ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে, আবেগ থেকে প্রবচন লিখে থাকেন, তবে সেগুলো আর ব্যক্তিগত থাকে না, একটি সারস্বত সত্যের দিকে চলে যায় বলে সেটি নৈর্ব্যক্তিকতা লাভ করে। এভাবেই একজনের অনুভব, উক্তি বা বোধ হয়ে যায় সবার, এক থেকে হয় দশের।
অপরিবর্তনীয়তা: আধুনিক যুগের বাক্যশুদ্ধির অন্যতম রীতি হলো প্রবাদ-প্রবচনগুলো সমাজে প্রচলিত বাগধারার মতোই অপরিবর্তনীয় রাখা। কোনও রকম ভাষাগত পরিবর্তন করা যায় না, তাতে ব্যবহারযোগ্যতা হারায়, অর্থের হানি ঘটাতে পারে। ‘মহাভারত অশুদ্ধ’ হয়ে যাওয়াকে ‘উপনিষদ অশুদ্ধ’ হওয়া বলা যায় না।
তবে অনেক ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠী, সময় এবং পরিবেশবেদে একই প্রবাদের ভিন্ন সংস্করণও চোখে পড়ে, কানেও শোনা যায়। মধ্যযুগের একই প্রবাদ একেকজন কবির কাব্যে সামান্য এদিক-সেদিক হতে দেখা যায়। সেটি কোনও ব্যক্তিগত পরিবর্তন নয়, সামাজিক পরিবর্তন মাত্র। যেমন,
১.১। ভগবান যব দেতা, ছাপ্পড় ফাড়কে। (হিন্দি-উর্দু)
১.২। আল্লায় যারে দেয়, ছাপ্পড় ফাইড়া দেয়।
১.২। আল্লায় যারে দেয়, ছাপ্পড় ফাইড়া দেয়।
উৎস: প্রবাদ ও প্রবচনের উৎস অতি প্রাচীন। আগেই বলা হয়েছে “ব্যক্তিগত প্রবচন অনেক সময় কালক্রমে সামাজিক প্রবাদে রূপ নিতে পারে”—আবার বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। প্রবাদগুলো সাধারণত অর্থনীতির গ্রিসামের নীতির বিপরীতক্রমে চলে। গ্রিসামের কথা অনুসারে বাজারে নতুন মুদ্রা প্রবর্তিত হলে, সেগুলো দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়, পুরনোগুলো বাজারে প্রচলিত থাকে। আর প্রবাদ-প্রবচনের ক্ষেত্রে নতুন আমদানিকৃত প্রবাদ অনেক দিন বাজারে থাকে। আবার পুরনো প্রবাদগুলো যুগ থেকে যুগান্তরে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত পরিবর্তন নিজেই করে নেয়, সর্বদা চকচক করে। বাংলাদেশের আজকের সমাজে প্রচলিত অনেক প্রবাদই সেই প্রাচীনকালে কোনও অজানা-অচেনা জনগোষ্ঠীর মুখে সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর বৈদিক কিংবা সংস্কৃতে লিখিত হয়েছে, কথিত হয়েছে। তারপর পালি ও প্রাকৃত ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে, জনসমাজেও প্রচলিত ছিল, অপভ্রংশ হয়ে এরপর বাংলাভাষায় নবরূপ নিয়েছে, প্রাচীন বাংলা থেকে মধ্যযুগীয় বাংলায়, সেখান থেকে সাধু ভাষায়, সেখান থেকে বর্তমানে চলিত ভাষায় রূপ নিয়েছে; এখনও চকচকে উজ্জ্বল, সচল রয়েছে। জনপ্রিয় কোনও চলচ্চিত্রের কোনও সংলাপের মাধ্যমে কিংবা জনসভার কারও বক্তৃতার মাধ্যমে পুরনো কোনও প্রবাদও নতুন করে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে যেতে পারে।৭
প্রবাদের নেপথ্যে: প্রায় প্রতিটি প্রবাদের পেছনে কোনও না কোনও ঘটনা এবং সামাজিক অভিজ্ঞতা ছিল বা থাকে। সেসব ঘটনার নির্যাস একটিমাত্র বাক্যে অমর হয়ে থাকে কিন্তু ঘটনাটি বা অভিজ্ঞতার কথা কারও মনে থাকে না। সেসব ঘটনা গবেষণার কাজ, অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করার বিষয়। বাংলা ভাষার উৎস সন্ধান নিয়ে ফরহাদ খান অনেক আগেই একটি বই লিখেছেন।৮
প্রবচনের পেছনেও কোনও ঘটনা বা গল্প থাকতে পারে, নাও পারে; সেটি লেখকের একান্তই নিজস্ব বিষয়।
বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের আরও কিছু নাম প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত হয়ে বর্তমান পর্যন্ত বাজারে প্রচলিত আছে, শ্লোক, বাণী, উক্তি, কথা, বচন, চিন্তা, কাব্যকণিকা, আয়াত, অনুকথা, আলাপ, প্রলাপ, ম্যাক্সিম, অ্যাফুরিজম, চলতি কথা, দর্শন, শস্যকণা, টুকরো কথা, উদ্ধৃতি, সার, অমৃত সার, অণুকাব্য, সূত্র ইত্যাদি। প্রাচীন উৎস বিবেচনা করলে প্রবাদ-প্রবচনগুলো অনেক পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে বাজারে সুলভ বাংলা বই থেকে সন্ধান করলে দেখা যায় অনেক প্রকার: বেদের শ্লোক বা বাণী, পৌরাণিক শ্লোক বা বাণী, চাণক্যের শ্লোক, বুদ্ধের বাণী, সক্রেটিসের উক্তি, এরিস্টটলের বাণী, প্লেটোর উক্তি, ডায়োজেনিসের উক্তি, খ্রিস্টের বাণী, তাও- তে-চিং-এর বাণী, কনফুসিয়াসের বাণী, হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর বাণী, কোরআনের বাণী, হাদিসের বাণী, মনীষীদের বাণী, রুমির বাণী, সাহাবিদের বাণী, দরবেশের নীতিকথা, সূফিদের বাণী, রবীন্দ্রনাথের বাণী, গান্ধিজীর বাণী, সুভাষ বসুর বাণী, অরবিন্দ ঘোষের বাণী, নজরুলের বাণী, বঙ্গবন্ধুর উক্তি বা বাণী, নেলসন ম্যান্ডেলার বাণী, শত মনীষীর উক্তি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি, অমরবাণী, খ্যাতিমানদের উক্তি ইত্যাদি। এছাড়া চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী মাও সে তুংয়ের বিখ্যাত লাল বই এবং লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদাফির সবুজ বইও ব্যক্তিগতভাবে রচিত প্রবচনমূল্য লাভ করেছে। ক্ষুদ্র আকারের হাইকু, ওয়াকা, তানাকা ইত্যাদি কবিতার মধ্যেও অনেক সময় নৈর্ব্যক্তিকতা থাকলে প্রবচনের গুরুত্ব পায়। আরও রয়েছে বিভিন্ন জেলার বা অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচনের সিরিজ কিংবা বিচ্ছিন্ন সংকলনগ্রন্থ।
তিন.
বাংলা প্রবচন: বাংলায় কবি বা খ্যাতিমানদের প্রবচনের প্রাচীন উৎস চর্যাপদ। সেখানে ছয়টি প্রবচনের সন্ধান পাওয়া যায়। ড. মুহম্মদ আবদুল খালেক সেগুলোকে প্রবাদ বলেছেন একারণে যে, যেসব কবির কবিতায় সেগুলো পাওয়া গেছে, তা হয়তো সমকালীন সমাজ থেকেই কবি আত্মীকৃত করেছেন, তাই আপাতঃদৃষ্টিতে প্রবচন মনে হলেও তা প্রবাদ বাক্যই হয়তো।
বাংলা প্রবচন: বাংলায় কবি বা খ্যাতিমানদের প্রবচনের প্রাচীন উৎস চর্যাপদ। সেখানে ছয়টি প্রবচনের সন্ধান পাওয়া যায়। ড. মুহম্মদ আবদুল খালেক সেগুলোকে প্রবাদ বলেছেন একারণে যে, যেসব কবির কবিতায় সেগুলো পাওয়া গেছে, তা হয়তো সমকালীন সমাজ থেকেই কবি আত্মীকৃত করেছেন, তাই আপাতঃদৃষ্টিতে প্রবচন মনে হলেও তা প্রবাদ বাক্যই হয়তো।
১। আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী।
২। গুরু বোব সে সীমা কাল।
৩। এর সুণ গোহালী কি সো ছুটঠ বলন্ধে।
৪। হাতের কাঙ্কন মা লেউ দাপন।
৫। দুহিল দুধ কি বটে সমাজ।
৬। হাড়ীত ভাত নাই নিতি আবেশী।
২। গুরু বোব সে সীমা কাল।
৩। এর সুণ গোহালী কি সো ছুটঠ বলন্ধে।
৪। হাতের কাঙ্কন মা লেউ দাপন।
৫। দুহিল দুধ কি বটে সমাজ।
৬। হাড়ীত ভাত নাই নিতি আবেশী।
আবদুল খালেকের গবেষণা দিয়ে দুটি কথা না বলে পারা যায় না,
১। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার নিয়ম অনুসারে উদ্ধৃতি সর্বদা মূলের বানানরীতি মেনে চলতে হয়, তিনি ওপরের ছয়টি উদ্ধৃতিতে বানান ভুল রেখেছেন, প্রুফরিডারের ওপর দায় চাপিয়ে লাভ নাই। যেমন, তিনি উদ্ধৃত করেছেন “দুহিল দুধ কি বটে সমাজ।”৯ মূলে আছে, দুহিল দুধ কি বান্টে সেমায়।” অর্থাৎ দোহানো দুধ কি গাভীর বাঁটে ফেরত দেওয়া যায়!১০
২। মনোযোগ দিয়ে চর্যাপদ পাঠ করলে বা অনুসন্ধান করলে এমন আরও পাওয়া যাবে, যেমন “রুখের তেন্তিলী কুম্ভীরে খাএ।”
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের বিভিন্ন খণ্ডে তিরিশটিরও বেশি সমকালীন প্রবাদ ও প্রবচন পাওয়া যায়: যেমন,
১। ললাট লিখিত খণ্ডন না যাএ। (দানখণ্ডে)
২। আপনার মাঁসে হরিণী জগতের বৈরী। (ঐ) আপন গাএর মাসে হরিণা বিকলী (ঐ)
৩। চুন বিহনে যেহ্ন তাম্বুল তিতা।
আলপ বএসে তেহ্ন বিরহের চিন্তা॥ (ভারখণ্ড)
৪। বন পোড়ে আগ বঢ়ায়ি জগজনে জণী।
মোর মন পোড়ে যেহ্ন কুম্ভারের পণী॥ (বংশীখণ্ড)
৫। কাটিল ঘাঅত লেম্বু রস দেহ কত। (বিরহখণ্ড)
২। আপনার মাঁসে হরিণী জগতের বৈরী। (ঐ) আপন গাএর মাসে হরিণা বিকলী (ঐ)
৩। চুন বিহনে যেহ্ন তাম্বুল তিতা।
আলপ বএসে তেহ্ন বিরহের চিন্তা॥ (ভারখণ্ড)
৪। বন পোড়ে আগ বঢ়ায়ি জগজনে জণী।
মোর মন পোড়ে যেহ্ন কুম্ভারের পণী॥ (বংশীখণ্ড)
৫। কাটিল ঘাঅত লেম্বু রস দেহ কত। (বিরহখণ্ড)
মুহম্মদ আবদুল খালেক চর্যাপদ ছাড়াও বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতাব্দীর হেয়াত মামুদ, গরীবুল্লাহর জঙ্গনামা পর্যন্ত মোট সাঁইত্রশটি কাব্যগ্রন্থ থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকশ প্রবাদ উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে অল্প কয়েকটি নির্বাচন করে এখানে দেওয়া যেতে পারে:
১। পিঁপিড়ার পাখা উঠে মরিবার তরে। (কৃত্তিবাস ওঝা রচিত রামায়ণ, মুআখা-পৃ ৩৬৭)
২। ঘৃতের কলস নারী পুরুষ অনল।
একযোগে থাকিলে অবশ্য ধরে বল॥ (ঘনরাম চক্রবর্তী: ধর্মমঙ্গল, মুআখা-পৃ৩৬৮)
৩। পিতা ধর্ম্ম পিতা স্বর্গ পিতা কল্পতরু।
তা হতে সহস্র গুণ মা হন গুরু॥ (মানিকরাম শ্রীধর্ম্মমঙ্গল, মুআখা-পৃ৩৬৮)
৪। উর্দ্ধ আঙ্গুলে কভু বাহির হয় না ঘি। (বিজয়গুপ্ত: পদ্মাপুরাণ বা মনসামঙ্গল) মুআখা-পৃ ৩৬৯)
৫। নীচ কি উত্তম হবে পাইলে বহু ধন। (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী: চণ্ডীমঙ্গল, মুআখা-পৃ ৩৭১)
৬। দুষ্টের ঐশ্বর্য্য দিন দশ বই নয়।
২। ঘৃতের কলস নারী পুরুষ অনল।
একযোগে থাকিলে অবশ্য ধরে বল॥ (ঘনরাম চক্রবর্তী: ধর্মমঙ্গল, মুআখা-পৃ৩৬৮)
৩। পিতা ধর্ম্ম পিতা স্বর্গ পিতা কল্পতরু।
তা হতে সহস্র গুণ মা হন গুরু॥ (মানিকরাম শ্রীধর্ম্মমঙ্গল, মুআখা-পৃ৩৬৮)
৪। উর্দ্ধ আঙ্গুলে কভু বাহির হয় না ঘি। (বিজয়গুপ্ত: পদ্মাপুরাণ বা মনসামঙ্গল) মুআখা-পৃ ৩৬৯)
৫। নীচ কি উত্তম হবে পাইলে বহু ধন। (মুকুন্দরাম চক্রবর্তী: চণ্ডীমঙ্গল, মুআখা-পৃ ৩৭১)
৬। দুষ্টের ঐশ্বর্য্য দিন দশ বই নয়।
উত্তমের উন্নতি অনেক কালে হয়। (রামেশ্বর: শিবসংসকীর্তন বা শিবায়ন, মুআখা-পৃ ৩৭১)
৮। দুধে ভাতে দিন ভালো হেন বুদ্ধি কেটা দিল। (ভারতচন্দ্র: অন্নদামঙ্গল)
৯। পরে নিন্দ নাহি দেখ ছিদ্র আপনার। কাশীরাম দাশ: মহাভারত, মুআখা-পৃ ৩৭৪)
১০। বীর বলে দুঃখ সুখ কর্মের অধীন। (দ্বিজরাম দাস: অভয়ামঙ্গল, মুআখা-পৃ ৩৭৪
১১। মোহ হৈতে হয় আপন বুদ্ধি বল ক্ষয়।
আপনার হতে কেহ কার মিত্র নয়॥ (মালাধর বসু, শ্রীকৃষ্ণবিজয়, মুআখা-পৃ ৩৭৫)
১২। শিষ্টজন কদাচিত দুষ্ট নাহি হএ।
কৃষ্ণকালি দাগ ন জায়ন্তি শত ধোএ॥ (শাহ মুহম্মদ সগীর: ইউসুফ-জুলেখা মুআখা-পৃ ৩৭৫)
১৩। কাকের মুখেত যেন সিন্দুরিয়া আম। (দৌলত উজীর বাহরাম খান: লাইলী-মজনু, মুআখা-পৃ ৩৭৬)
১৪। পুরুষ ভ্রমরা জাতি সম্ভ্রম না এড়ে।
যেই ফুলে মধু পায় তথা গিয়া পড়ে। (দৌলত কাজী: সতী ময়না লোর চন্দ্রাণী, মুআখা-পৃ ৩৭৭)
১৫। জ্ঞানহীন জনে যেই নিদ্রা নাহি চিনে।
সর্বস্ব হারায় হেন নিদ্রার কারণে॥ (আলাওল: পদ্মাবতী, মুআখা-পৃ ৩৭৮)
১৬। পুত্র বিনে মিত্র নাহি পাত্র বিনে রাজা।
সত্য বিনে ধর্ম নাই আস্থা বিনে প্রজা॥ (দোনা গাজী: সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল মুআখা-পৃ ৩৭৯)
১৭। আত্মরক্ষা মহাধর্ম নিশ্চয় জানিব। (মুহম্মদ খান: সত্যকলি বিবাদ বিসম্বাদ, মুআখা-পৃ ৩৮০)
১৮। কাকের সহিত শুয়া রহিতে না পারে। (সৈয়দ সুলতান: নবীবংশ, মুআখা-পৃ ৩৮০)
১৯। মৃত্যুভয় যার নাহি রহে তার নাম। (নওয়াজিস খান: গুলে বকাওলী, মুআখা-পৃ ৩৮০)
২০। তিক্ত গুড়ে সুধা দিলে মিষ্ট নাহি হয়।
গাভী ঘাস খায় তবু দুগ্ধ তিক্ত নয়॥ (হেয়াত মামুদ: সর্বভেদবাণী, মুআখা-পৃ ৩৮১)
৯। পরে নিন্দ নাহি দেখ ছিদ্র আপনার। কাশীরাম দাশ: মহাভারত, মুআখা-পৃ ৩৭৪)
১০। বীর বলে দুঃখ সুখ কর্মের অধীন। (দ্বিজরাম দাস: অভয়ামঙ্গল, মুআখা-পৃ ৩৭৪
১১। মোহ হৈতে হয় আপন বুদ্ধি বল ক্ষয়।
আপনার হতে কেহ কার মিত্র নয়॥ (মালাধর বসু, শ্রীকৃষ্ণবিজয়, মুআখা-পৃ ৩৭৫)
১২। শিষ্টজন কদাচিত দুষ্ট নাহি হএ।
কৃষ্ণকালি দাগ ন জায়ন্তি শত ধোএ॥ (শাহ মুহম্মদ সগীর: ইউসুফ-জুলেখা মুআখা-পৃ ৩৭৫)
১৩। কাকের মুখেত যেন সিন্দুরিয়া আম। (দৌলত উজীর বাহরাম খান: লাইলী-মজনু, মুআখা-পৃ ৩৭৬)
১৪। পুরুষ ভ্রমরা জাতি সম্ভ্রম না এড়ে।
যেই ফুলে মধু পায় তথা গিয়া পড়ে। (দৌলত কাজী: সতী ময়না লোর চন্দ্রাণী, মুআখা-পৃ ৩৭৭)
১৫। জ্ঞানহীন জনে যেই নিদ্রা নাহি চিনে।
সর্বস্ব হারায় হেন নিদ্রার কারণে॥ (আলাওল: পদ্মাবতী, মুআখা-পৃ ৩৭৮)
১৬। পুত্র বিনে মিত্র নাহি পাত্র বিনে রাজা।
সত্য বিনে ধর্ম নাই আস্থা বিনে প্রজা॥ (দোনা গাজী: সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল মুআখা-পৃ ৩৭৯)
১৭। আত্মরক্ষা মহাধর্ম নিশ্চয় জানিব। (মুহম্মদ খান: সত্যকলি বিবাদ বিসম্বাদ, মুআখা-পৃ ৩৮০)
১৮। কাকের সহিত শুয়া রহিতে না পারে। (সৈয়দ সুলতান: নবীবংশ, মুআখা-পৃ ৩৮০)
১৯। মৃত্যুভয় যার নাহি রহে তার নাম। (নওয়াজিস খান: গুলে বকাওলী, মুআখা-পৃ ৩৮০)
২০। তিক্ত গুড়ে সুধা দিলে মিষ্ট নাহি হয়।
গাভী ঘাস খায় তবু দুগ্ধ তিক্ত নয়॥ (হেয়াত মামুদ: সর্বভেদবাণী, মুআখা-পৃ ৩৮১)
ওপরের বিশটি উদাহরণে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের পাঁচশ বছরের বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের একটু ধারণা পাওয়া গেল, এখানে বিবর্তনের রূপও আছে। সব কবিই প্রায় প্রতিটি প্রবাদ নিজের মতো করে, নিজস্ব রুচির শব্দ দিয়ে, কখনও পয়ারের চৌদ্দ মাত্রা মিলাতে গিয়ে ছোট বা বড় শব্দ বসিয়ে, আবার কখনও কাব্য রচনার পৃষ্ঠপোষকের রুচি অনুসারে পুনরায় সৃষ্টি করে ব্যবহার করতেন। এখন আর সে রীতি মানা হয় না। বিস্তারিত জানার জন্য আবদুল খালেকের মূল গ্রন্থটি পাঠ করা যেতে পারে।
প্রচলন: প্রবাদ-প্রচলনের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত, যে জাতির জনগণ যেখানে বাস করে সেখানেই তার প্রয়োগ হয়, প্রচলন ঘটে। নিচে কয়েকটি ক্ষেত্র তুলে ধরা যায়:
১। রাজনৈতিক, ধর্মীয়, কিংবা অন্য ধারার বিখ্যাত ব্যক্তির ভাষণে, বক্তৃতায়, ওয়াজে-বয়ানে ও আলোচনায়।
২। প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধগ্রন্থে লেখকের কথায় ও ভ্রমণকাহিনির বর্ণনায়।
৩। প্রকাশিত নাটক-উপন্যাসে লেখকের আখ্যান ও চরিত্রের সংলাপে।
৪। যাত্রাপালার চরিত্রের সংলাপে ও বিবেকের ভাষ্যে।
৫। মঞ্চনাটক, বেতারনাটক, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা, পার্শ্ব অভিনেতা-অভিনেত্রী, খলঅভিনেতা-অভিনেত্রী এমনকি কৌতুক অভিনেতার পারস্পরিক সংলাপ এবং স্বগতসংলাপে।
৬। একক গান, পালাগান ও গীতিনাট্যের মাধ্যমে।
৭। ছড়া-কবিতা পাঠ করা, আবৃত্তি শোনা এবং আলোচনায়।
৮। হাটে, ঘাটে, দোকানে, আলাপে-আড্ডায় ও ক্রয়-বিক্রয়ে।
৯। বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এবং সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনে।
১০। ক্যানভাসার, ফেরিওয়ালা, সেলসম্যান বা চলতিপথের পণ্যবিক্রেতা, হাটুরে প্রমুখের মৌখিক বিজ্ঞাপনে।
১১। গ্রামের কিংবা শহরের নারী অথবা পুরুষের দুইপক্ষের কলহের সময় উচ্চারিত খিস্তি-খেউড়ে।
১২। ব্যক্তিগত চিঠিপত্র এবং প্রত্যুত্তরপত্র রচনায়।
১৩। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষের পাঠদানে বা প্রভাষণে।
১৪। দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সময় পরিবহণ চালক-শ্রমিক, সহযাত্রী এবং বিরাম-বিশ্রামের আয়োজনে নিয়োজিত কর্মচারী, পরিদর্শনের পথপ্রদর্শক (গাইড)-এর সাথে আলাপে।
১৫। কথাবলা পোষাপাখির মুখস্ত কথার উচ্চারণে ও উত্তরে।
১৬। মোতায়েনকৃত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অভিজ্ঞতায়।
১৭। শিশুদের ঘুমপাড়ানী গানে, খাওয়ানোর সময় গল্পে এবং তাদের সাথে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে।
১৮। ক্রীড়াঙ্গনে একাধিক পক্ষের খেলোয়াড়, আয়োজক বা সেবকদের কথায়।
১৯। চিকিৎসাগ্রহণের সময় নানা পক্ষের কথায়।
২০। নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক, সরদার, প্রকৌশলী, ঠিকাদার, সেবাদাতা, ইলেকট্রিশিয়ান, মিস্ত্রি, লন্ড্রিম্যান, ক্ষৌরকার, সুইপার প্রমুখের পারস্পরিক আলাপে।
২১। কৃষকদের ফসলকাটা বা মাড়াইয়ের সময় গানে-কথায় উল্লাসে ও উৎসবে।
২২। বিয়ে-শাদি-জন্মদিন, ফাতেহা-শ্রাদ্ধ ও অন্যান্য সামাজিক উৎসবে ও মেলায়।
২৩। কনেদেখা, বরদেখা, সালিশে-বিচারে এবং পারিবারিক বৈঠকে-আসরে।
২৪। থানা-পুলিশের জেরা, তদন্ত, আদালতে সাক্ষ্য ও স্বীকারোক্তি দেওয়ায় ও রায় প্রদানের সময়।
২৫। প্রতিষ্ঠানের রুটিনমাফিক নিয়মিত বা প্রাত্যহিক সভায়।
২৬। বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণে।
২। প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধগ্রন্থে লেখকের কথায় ও ভ্রমণকাহিনির বর্ণনায়।
৩। প্রকাশিত নাটক-উপন্যাসে লেখকের আখ্যান ও চরিত্রের সংলাপে।
৪। যাত্রাপালার চরিত্রের সংলাপে ও বিবেকের ভাষ্যে।
৫। মঞ্চনাটক, বেতারনাটক, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা, পার্শ্ব অভিনেতা-অভিনেত্রী, খলঅভিনেতা-অভিনেত্রী এমনকি কৌতুক অভিনেতার পারস্পরিক সংলাপ এবং স্বগতসংলাপে।
৬। একক গান, পালাগান ও গীতিনাট্যের মাধ্যমে।
৭। ছড়া-কবিতা পাঠ করা, আবৃত্তি শোনা এবং আলোচনায়।
৮। হাটে, ঘাটে, দোকানে, আলাপে-আড্ডায় ও ক্রয়-বিক্রয়ে।
৯। বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এবং সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনে।
১০। ক্যানভাসার, ফেরিওয়ালা, সেলসম্যান বা চলতিপথের পণ্যবিক্রেতা, হাটুরে প্রমুখের মৌখিক বিজ্ঞাপনে।
১১। গ্রামের কিংবা শহরের নারী অথবা পুরুষের দুইপক্ষের কলহের সময় উচ্চারিত খিস্তি-খেউড়ে।
১২। ব্যক্তিগত চিঠিপত্র এবং প্রত্যুত্তরপত্র রচনায়।
১৩। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষের পাঠদানে বা প্রভাষণে।
১৪। দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সময় পরিবহণ চালক-শ্রমিক, সহযাত্রী এবং বিরাম-বিশ্রামের আয়োজনে নিয়োজিত কর্মচারী, পরিদর্শনের পথপ্রদর্শক (গাইড)-এর সাথে আলাপে।
১৫। কথাবলা পোষাপাখির মুখস্ত কথার উচ্চারণে ও উত্তরে।
১৬। মোতায়েনকৃত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অভিজ্ঞতায়।
১৭। শিশুদের ঘুমপাড়ানী গানে, খাওয়ানোর সময় গল্পে এবং তাদের সাথে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে।
১৮। ক্রীড়াঙ্গনে একাধিক পক্ষের খেলোয়াড়, আয়োজক বা সেবকদের কথায়।
১৯। চিকিৎসাগ্রহণের সময় নানা পক্ষের কথায়।
২০। নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক, সরদার, প্রকৌশলী, ঠিকাদার, সেবাদাতা, ইলেকট্রিশিয়ান, মিস্ত্রি, লন্ড্রিম্যান, ক্ষৌরকার, সুইপার প্রমুখের পারস্পরিক আলাপে।
২১। কৃষকদের ফসলকাটা বা মাড়াইয়ের সময় গানে-কথায় উল্লাসে ও উৎসবে।
২২। বিয়ে-শাদি-জন্মদিন, ফাতেহা-শ্রাদ্ধ ও অন্যান্য সামাজিক উৎসবে ও মেলায়।
২৩। কনেদেখা, বরদেখা, সালিশে-বিচারে এবং পারিবারিক বৈঠকে-আসরে।
২৪। থানা-পুলিশের জেরা, তদন্ত, আদালতে সাক্ষ্য ও স্বীকারোক্তি দেওয়ায় ও রায় প্রদানের সময়।
২৫। প্রতিষ্ঠানের রুটিনমাফিক নিয়মিত বা প্রাত্যহিক সভায়।
২৬। বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণে।
এর বাইরেও প্রবাদ-প্রবচন উচ্চারণ করার, ব্যবহার করার নানা ক্ষেত্র থাকতে পারে।
চার
বাংলাপ্রবাদ সংগ্রহ: যদিও হুমায়ুন আজাদ বলেছেন বাংলা প্রবচনের সচেতন ঐতিহ্য নেই, এবং তাঁর ভক্তরা বিশ্বাস করে, তিনিই প্রথম প্রবচন রচনা করে বাংলাসাহিত্যের এ ধারাটির প্রচলন ঘটিয়েছেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। ভাষাবিজ্ঞানী এবং সাহিত্যগবেষক হুমায়ুন আজাদের হয়তো জানা ছিল পূর্বেকার কাজগুলোর কথা, হয়তো তাঁর কাছে সন্তোষজনক ছিল না বলে সচেতন ঐতিহ্য নাই বলেছেন।
বাংলাপ্রবাদ সংগ্রহ: যদিও হুমায়ুন আজাদ বলেছেন বাংলা প্রবচনের সচেতন ঐতিহ্য নেই, এবং তাঁর ভক্তরা বিশ্বাস করে, তিনিই প্রথম প্রবচন রচনা করে বাংলাসাহিত্যের এ ধারাটির প্রচলন ঘটিয়েছেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। ভাষাবিজ্ঞানী এবং সাহিত্যগবেষক হুমায়ুন আজাদের হয়তো জানা ছিল পূর্বেকার কাজগুলোর কথা, হয়তো তাঁর কাছে সন্তোষজনক ছিল না বলে সচেতন ঐতিহ্য নাই বলেছেন।
বাংলায় পর্তুগিজ মিশনারীদের হাতে মুদ্রণযন্ত্র আমদানির পরে প্রথম দিকে তারা তাঁরেদ প্রয়োজনীয় কাজই করতেন, পরে বাংলা ভাষার গ্রন্থ ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। ভারতচন্দ্র রায়ের বিদ্যাসুন্দর কাব্য এবং গদ্যগ্রন্থ প্রতাপাদিত্য চরিত্র প্রথম মুদ্রিত বাংলা গ্রন্থ। ১৮০১ সালে শ্রীরামপুর মিশন থেকে বই প্রকাশিত হতে থাকে। সেই সময় একটি বহুভাষী প্রবাদ সংকলনগ্রন্থ ফোর্ট উইলিয়ামের পক্ষে শ্রীরামপুর মিশন থেকে ছাপা হয়, গ্রন্থটির নাম ছিল বহুদর্শন, শ্রীনীলরতন হালদার কর্তৃক সংগৃহীত। গ্রন্থটির উপনাম ছিল বেশ বড়—অর্থাৎ ইংগ্লন্ডীয় ও লাটিনজাতীয় ও গৌড়ীয় সংস্কৃত ও পারস্ব ও আরবীয় ভাষার বহুবিধ দৃষ্টান্ত ও নীতিশিক্ষা। এর নিচে ইংরেজিতে লেখা ছিল ঝবৎধসঢ়ড়ৎব, ১৮২৬ প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা ছিল ঈড়ষষবমব ড়ভ ঋড়ৎঃ ডরষরধস ১৮ ঃযব ইঙঐঙঙউটজঝঙঘ ড়ৎ ঠধৎরড়ঁং ঝঢ়বপঃধপষবং, ইঊওঘএ অ পযড়রপব পড়ষষবপঃরড়হ ড়ভ চৎড়াবৎনং ধহফ গড়ৎধষং রহ ঃযব ঊহমষরংয, খধঃরহ, ইবহমধষবব, ঝধহংশৎরঃ, চবৎংরধহ ধহফ অৎধনরপ খবহমঁধমবং. ঈঙগচওখঊউ ইণ ঘঊঊখজটঞঘঅ ঐঅখউঅজ. “অ চজঙঠঊজইঝ ওঝ ঞঐঊ ঈঐওখউ ঙঋ ঊঢচঊওঊঘঈঊ.”
দেড়শ পৃষ্ঠার ঐ সংকলনটিতে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, আরবি এবং ফারসি অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম দিকে রয়েছে ইংরেজি, বাংলা এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা একেকটি প্রবাদ। যেমন:
১। চৎড়ংঢ়ৎরঃু মধরহং ভৎরবহফং, ধহফ ধফাবৎংরঃু ঃৎরবং ঃযবস. দুঃখেতে যে বন্ধু থাকে। সত্য বন্ধু বলি তাকে। যথা সংস্কৃতঃ॥ স বন্ধুর্যো বিপন্নামাপদুদ্ধারণক্ষমঃ।১১ (নীরহা পৃ ৩)
২। অ ভৎরবহফ রহ হববফ, রং ধ ভৎরবহফ রহফববফ. সৌভাগ্যকালীন অনেক বন্ধু মিলে কিন্তু দুঃখের সময় বন্ধুর পরীক্ষা হয়। যথা সংস্কৃতঃ॥ যেচান্যে সুহৃদঃ সমৃদ্ধিসময়ে দ্রব্যাভিলা যাকল্যাস্তে সর্ব্বত্র মিলন্দি তত্র নিকষ গ্রাবাত তেষাং বিপৎ। (নীরহা পৃ ৩)
৩। ঘড়ঃযরহম াবহঃঁৎব, হড়ঃযরহম যধাব. বিনা সাহসে কিছুই লভ্য হয় না। যথা সংষ্কৃতঃ॥ বিস্ময়ঃ সর্ব্বদা হেয়ঃ প্রত্যূহঃ সর্ব্বকর্ম্মনাং। তম্মাদ্বিস্ময়মুৎসৃজ্য সাধ্যে সিদ্ধির্বিধৗয়তাং। (নীরহা পৃ ৬)
৪। অষষ াবহঃঁৎব, অষষ ষড়ংব. অতি সাহসে সকরি নষ্ট হয়। যথাসংস্কৃতঃ॥ কর্ত্তব্যঃ সাহসো নিত্যং উৎকটো হি বিগর্হিতঃ। অতিসাহসদোষেণ ভীমঃসর্পবশংগত। (নীরহা পৃ ৬)
২। অ ভৎরবহফ রহ হববফ, রং ধ ভৎরবহফ রহফববফ. সৌভাগ্যকালীন অনেক বন্ধু মিলে কিন্তু দুঃখের সময় বন্ধুর পরীক্ষা হয়। যথা সংস্কৃতঃ॥ যেচান্যে সুহৃদঃ সমৃদ্ধিসময়ে দ্রব্যাভিলা যাকল্যাস্তে সর্ব্বত্র মিলন্দি তত্র নিকষ গ্রাবাত তেষাং বিপৎ। (নীরহা পৃ ৩)
৩। ঘড়ঃযরহম াবহঃঁৎব, হড়ঃযরহম যধাব. বিনা সাহসে কিছুই লভ্য হয় না। যথা সংষ্কৃতঃ॥ বিস্ময়ঃ সর্ব্বদা হেয়ঃ প্রত্যূহঃ সর্ব্বকর্ম্মনাং। তম্মাদ্বিস্ময়মুৎসৃজ্য সাধ্যে সিদ্ধির্বিধৗয়তাং। (নীরহা পৃ ৬)
৪। অষষ াবহঃঁৎব, অষষ ষড়ংব. অতি সাহসে সকরি নষ্ট হয়। যথাসংস্কৃতঃ॥ কর্ত্তব্যঃ সাহসো নিত্যং উৎকটো হি বিগর্হিতঃ। অতিসাহসদোষেণ ভীমঃসর্পবশংগত। (নীরহা পৃ ৬)
ওপরে উল্লিখিত পরিচয় থেকেই বোঝা যায় বইটির গুরুত্ব কতখানি। পাঁচটি ভাষার প্রবাদ সংকলিত করার মতো জটিল কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন নীলরত্ন হালদার। গ্রন্থভুক্ত প্রবাদগুলোর ভাষার প্রমিতরূপ দেখে ধারণা করা যায় সংকলক বোধহয় হাটে-মাঠে ঘুরে এগুলো সংগ্রহ করেন নাই, পুরনো গ্রন্থ থেকেই সংগ্রহ করেছিলেন, কাজেই ধরে নেওয়া যায় বাংলায় মুদ্রণযন্ত্রের প্রবর্তনের আগেই হয়তো হাতেলেখা পুঁথির যুগে এমন প্রবাদ বা নীতিকথামূলক গ্রন্থ বাংলাতে প্রচলিত ছিল।
এরপর ড. সুশীলকুমার দে’র মতে ১৮৩২ সালে উইলিয়াম মর্টন নামের একজন ইংরেজ দৃষ্টান্ত বাক্য সংগ্রহ নামে একটি (বাংলা ও ইংরেজি) দ্বিভাষিক প্রবাদ-প্রবচনের সংকলন করেছিলেন। তারপর ড. সুশীলকুমার দে যে গ্রন্থটি প্রকাশ করেন সেটির নাম বাংলা প্রবাদ, ছড়া ও চলতি কথা, এক হাজার পৃষ্ঠার বিশাল ওই সংকলন প্রথম প্রকাশিত হয় আশ্বিন ১৩৫১ বঙ্গাব্দে।
এরপর সত্যরঞ্জন সেন প্রবাদ-রত্নাকর ‘সংক্ষিপ্ত রত্নাকর’ নামে আরেকটি সংকলন করেন। সেটির উপনামে ছিল পরিধি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল দেড় হাজার ‘প্রবাদ, প্রবচন, লোকোক্তি, যোগরূঢ় পদসমষ্টি, রীতিসিদ্ধ বাক্যাংশ, বাগধারা” প্রভৃতির অভিধান।১২
এরপরে শেরপুরের জমিদার শ্রীগোপালদাস চৌধুরী নিজে প্রবাদ ও প্রবচন সংগ্রহ করেছিলেন, সেটি অধ্যাপক প্রিয়রঞ্জন সেন জমিদার বাবু এবং নিজেরÑযৌথনামে প্রকাশ করেন প্রবাদ বচন নামে। এটি প্রকাশিত হয় ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে। ঐ এর মাঝখানে সুবলচন্দ্র মিত্র (১৮৭২Ñ১৯১৩) বাংলা প্রবাদ ও প্রবচন নামে আরেকটি সংকলন করেন। সেটি বর্তমানে ঢাকার বিদ্যাপ্রকাশ থেকে নতুন করে প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রথম প্রকাশের তারিখ সেখানে ছাপা হয় নাই।
কলকাতার আরেকটি মূল্যবান গ্রন্থ হলো, উদ্ভট শ্লোক-মালা, এটি সংকলন ও সম্পাদনা করেন কবিভূষণ শ্রীপূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর বিএ। কলকাতার গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থে রয়েছে বিশেষ ভঙ্গিতে রচিত প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের প্রধান ও অপ্রধান কবি, নাট্যকার এবং অন্য ধারার লেখকদের নির্বাচিত শ্লোকের বাংলা অনুবাদ। এটির প্রকাশকাল অজ্ঞাত হলেও গ্রন্থটি সুখপাঠ্য এবং নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্ধৃতির নানা রকমের অভিধান বাজারে প্রচলিত রয়েছে। যেমন, উদ্ধৃতি অভিধান—ড. দিলীপকুমার মিত্র, পারুল প্রকাশনী, কলকাতা।
দিলীপকুমার মিত্রের গ্রন্থটি কোটেশন ডিকশনারির মতো আধুনিক রীতিতে লেখা। পশ্চিমের দেশগুলোতে এখন এ ধরনের গ্রন্থের জনপ্রিয়তা বেশি, উগুলোতে তথ্য থাকে না, শুধু সংগৃহীত প্রবাদগুলো থাকে।
প্রবাদ-প্রবচন নিয়ে বালাদেশের লোকসংস্কৃতিবিদগণ গবেষণামূলক কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে,
১। প্রবাদ ও প্রবচন: ওয়াকিল আহমদ, গতিধারা প্রকাশনী, ঢাকা।
২। প্রবাদের উৎসসন্ধান: সমর পাল, শোভা প্রকাশনী, ঢাকা।
২। প্রবাদের উৎসসন্ধান: সমর পাল, শোভা প্রকাশনী, ঢাকা।
বিশের শতকে তিনের দশকে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শেখ ফজলুল করিম (১৮৮২Ñ১৩৩৬) প্রথম মৌলিক প্রবচন রচনা করেন, তাঁর প্রবচনগ্রন্থের নাম চিন্তার চাষ (১৯১৬) গ্রন্থটিতে একশটি স্বরচিত প্রবাদ রয়েছে। তাঁর কয়েকটি প্রবচন এখানে উল্লেখ করা যায়।
ক) পৃথিবী যখন সব দিক থেকে আমাদিগকে তাড়িয়ে দেয় তখন আমরা এমন কোন এক স্থানে এসে মিলিত হই। যেখানে নিরাশার মধ্যেও আশা-অশান্তির মধ্যেও শান্তি পাই। উহাই অকুলের কুল, শান্তিদাতার অভয়, চরণতল। দুঃখ, অশান্তি এসে আমাদের হৃদয়তন্ত্রীটি স্পর্শ করলেই আমরা তাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি। সে সুখ বাহিরে নহে, আত্মানুভূতিতে, সুতরাং দুঃখ এসেছে বলে ক্ষুব্ধ হয়ো না; উহাই আমাদিগকে বিধাতার সান্নিধ্য ও সহবাসলাভে সহায়তা করছে। দুঃখকে তাড়াতে গেলেই অপমৃত্যু ডেকে আনবেবিলাসীর মরণ আসন্ন। (শেফক-৬)
খ) জল যেমন ধরাতলকে সিক্ত করে, প্রেম তেমনি হৃদয়ভূমিকে সরল করে। জলে যেমন অগ্নি আছে দেখা যায় না, প্রেমেও তেমনি শৈত্য ও অগ্নি প্রচ্ছন্ন ওতপ্রোতভাবে আছে। সুতরাং প্রেমকে জনগর্ভ অগ্নি বা অগ্নিগর্ভ জল দুই বলা যেতে পারে। অবস্থাভেদে কোথাও উহার দাহিকা শক্তি, কোথাও শৈত্যক্রিয়া বিকাশ পায়। (শেফক-৭)
গ) রস নানা প্রকার কটু, তিক্ত, কষায়, অম্ল, মধুর ইত্যাদি। সব রস পান করতে করতে মন অবসন্ন অপ্রসন্ন হতে পারে; কিন্তু প্রেমের রস সর্বদেশে, সর্বকালে, সকল হৃদয়ে অনির্বচনীয়। উহা পান করতে বিরক্তি নাই, আসক্তিই বাড়ে। পিপাসার জ্বালা নিবারণের পক্ষে এমন অমোঘ রসাল ওষুধ আর নাই। (শেফক-১০)১৩
ঔপনিবেশিক যুগের পরে ১৯৬৩ সালে ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের এবং বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সপ্তমহারথীর অন্যতম প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক আবুল ফজল (১৯০৩-৮৩)-এর একে একে একশ নামে একটি প্রবচনগ্রন্থ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশ করেছিলেন মমতাজউদ্দীন আহমদ।১৪
আবুল ফজল তাঁর লেখকের রোজনামচার শেষে ওই প্রবচনগুলো শত উক্তি নামে গ্রন্থাবদ্ধ করেন:
নিচে তার কয়েকটি নমুনাহিসাবে উদ্ধৃত করা হচ্ছে:
১। ধর্ম, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক মতবাদ বা ইজমÑএ সবের কোন একটাকে সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাভূমি করতে গেলে বনের বাঘকে খাঁচায় বন্ধ করলে যে দশা হয় সাহিত্য শিল্পেরও সে দশা ঘটে। (লেরো পৃ ২০৫)
২। লেখকের জন্য লেখার শাসন ছাড়া অন্য কোন শাসন নেই, অন্তত যখন তিনি লিখতে বেসন তখনকার মতো। তখন তিনি শুধু শিল্পী, শির্পের শাসনে তিনি যুগপৎ বন্দী ও মুক্ত। (লেরো পৃ ২০৫)
৭। সেয়ানা আর সুবিধা-সন্ধানী মাঝারীর ভাগ্যেই জোটে অর্ধেক রাজত্ব আর আস্ত রাজকন্যা। প্রতিভাবানের জন্য তোলা থাকে কাঁটার মালা। তবুও দুনিয়ায় কাঁটার মালা গলায় পরার লোকের অভাব হয়নি কোনদিন। যে জাতির মধ্যে ঐ রকম লোকের সংখ্যা যত বেশী সে জাতি তত মহৎ ও তত বেশী সভ্য। পূর্ব পাকিস্তানের তরুণদের ভাগ্যলিপি হোক গলার এ কাঁটার মালা পরার সাধনা। (লেরো পৃ ২০৬)
১০। মানুষ আত্মাহীন জড় পদার্থ নয়। রুদ্ধ নিশ্বাস আর রুদ্ধবাক কঠোরতার খড়্গ সব সময় তার উপর ঝুলতে থাকলে তার বিকাশ প্রাচীন চীনা রমণীর পায়ের মতই রুদ্ধ হয়ে থাকবে। (লেরো পৃ ২০৭)
২৫। আমার দেশ, আমার ধর্ম, আমার সভ্যতা, আমার জাতি জগতের সেরা—এ মনোভাব হাস্যাস্পদ। এতে সংকীর্ণ আত্মঅহমিকাই প্রশ্রয় পায় আর নিজেকে করে তোলা হয় কূপমণ্ডুক। (লেরো পৃ ২০৯)
স্বাধীনতার পরের বছর থেকে দৈনিক বাংলার প্রতিষ্ঠান থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রকাশিত হয়। সেটি নানা কারণেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। সত্তর, আশি এবং নব্বই দশকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্ব কাল পর্যন্ত এ পত্রিকার মান ছিল দেশের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের মধ্যে সবচেয়ে উঁচুতে। প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে সাহিত্যসম্ভার নিয়ে প্রকাশিত হতো বিশেস ঈদসংখ্যা। সেসব ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত হতো দেশের প্রথম শ্রেণীর লেখকদের গল্প-কবিতা-নাটক-প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ছড়া-সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। বিচিত্রায় কারও লেখা প্রকাশিত হলে তিনি দেশের একজন গণ্যমান্য লেখক বলে পরিচিত হতেন। পত্রিকাটি বিভিন্ন সময় সম্পাদনা করেছেন নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, শামসুর রাহমান, শাহাদত চৌধুরী প্রমুখ দেশসেরা সাংবাদিক। সত্তরের এবং আশির এমনকি নব্বই দশকের সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ‘ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন’ নামে একটি বিভাগ ছিল, সেখানে শব্দপ্রতি নির্ধারিত ফি দিয়ে যে কেউ ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ছাপাতে পারতেন। পত্রিকাটির পাঠকেরা সেখানে ব্যক্তিগত জীবনের নানা সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার মতো আবেগপূর্ণ ঘটনার অনুভূতি ব্যক্ত করতেন। পত্রমিতালি করার আহ্বান ছাপা হতো, সেগুলোর বেশির ভাগই চলতি বিষয়, পত্রমিতালির আহ্বান, জন্মদিনের শুভেচ্ছার মতো ব্যক্তিগত বিষয় থাকত। তবে মাঝে মাঝে সেখানে কিছু নৈর্ব্যক্তিক ভাষা, শাশ্বত বোধ এবং সর্বজনীন অনুভূতির কথা প্রকাশ পেত। সেসব বিজ্ঞাপনদাতার মনের কথাগুলো প্রবচন বা উক্তিহিসাবে প্রকাশিত হতো। অনেকেই সেগুলো এখানে আশির দশকের প্রথম দিকের কয়েকটি প্রবচন উদ্ধৃত করা হলো:
১। সংসারে কোন সম্পর্কই নির্ভেজাল নয়, তা যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন।১৫
২। এই দুনিয়ায় মজনু সেজো না বন্ধুÑতোমরা লাইলী পাবে না। তেমনই এই দুনিয়ায় লাইলী সেজো না বান্ধবী, মজনু পাবে না। মনের লাগাম জোরছে ধরো হে বন্ধু, পাগলা ঘোড়া ছেড়ো না।১৬
৩। আমরাই সহপাঠিনীর সর্বনাশ চাই, সাহায্য করি, বখরা চাই, খুশি হই। আমরাই আবার সভ্য ও প্রগতিশীল বলে গর্ব করি।১৭
৪। ছন্দহীন জীবনে অনেক প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে একটি লিপি।১৮
৫। অসুখী মানুষের জীবনে আশা নেই, আবার হতাশাও নেই।১৯
৬। অকাজের হাজার ভালোবাসার চেয়ে কাজের একটু ভালোবাসা, সেও অনেক দামী।২০
‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র পুরনো সংখ্যা খুঁজলে এমন অনেক উক্তি বা প্রবচন পাওয়া যাবে।
আবুল ফজলের একে একে একশ অর্থাৎ শত উক্তি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় তিন দশক পরে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ প্রথম প্রকাশিত হয় মে সংখ্যা অরুণিমা নামের একটি ম্যাগাজিনে। কিছু উক্তির জন্য দেশের প্রগতিশীল সাহিত্যিক সমাজ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিল, পরে দৈনিক সংবাদ ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চলে পাল্টা লেখা। বর্তমান লেখক সে সংখ্যা অরুণিমা এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রা কিশোর বয়সে দেখেছিলেন, পড়েছিলেন। পরে ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আগামী প্রকাশনী থেকে পকেট সাইজের বই আকারে প্রকাশিত হয়। তিনি সেখানে আধুনিক প্রবচনের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রান্সের লা রুশফুকোর কথা বলেছেন। লা রুশফুকো (ঋৎধহম্ফড়রং ফব খধ জড়পযবভড়ঁপধঁষফ, ১৬১৩– ১৬৮০) ফ্রান্সের সতেরো শতকের একজন নীতিবাদী লেখক। তাঁর বিখ্যাত নীতিকথাগুলো কখনো অ্যাফুইরিজম কখনো ম্যাক্সিম বলে প্রকাশিত, প্রচারিত এবং অনূদিত হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে রুশফুকোই আধুনিক প্রবচনের জনক।২১
হুমায়ুন আজাদ প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় লেখক জানান প্রবচনগুলোর বেশিরভাগই রচিত, তবে কিছু প্রবচন তাঁর অন্য রচনা থেকে সংগৃহীত। (হুআ পৃ ১৯)
পরবর্তী সংস্করণে আরও উন্নত করা হয়, বর্তমান পর্যন্ত প্রবচনগুচ্ছ গ্রন্থটিতে ২০০ প্রবচন রয়েছে। স্বভাবগত কারণেই হুমায়ুন আজাদের বেশিরভাগ প্রবচনই নেতিবাচকতায় আচ্ছন্ন।
১। জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি। অনেকেই আজকাল জনপ্রিয়তার পথে নেমে যাচ্ছে। ক্রম-১১, (হুআ পৃ ২৪)
২। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনে অসৎ উদ্দেশ্য আছে। ক্রম-২১, পৃ (হুআ পৃ ২৬)
৩। পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কী করবে? ক্রম ১৬৩, (হুআ পৃ ৫৫)
২। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনে অসৎ উদ্দেশ্য আছে। ক্রম-২১, পৃ (হুআ পৃ ২৬)
৩। পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কী করবে? ক্রম ১৬৩, (হুআ পৃ ৫৫)
তবে ইতিবাচক দিকও আছে, যেমন:
৪। শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের চেয়ে স্বাধীন গাধা উত্তম। ক্রম-২৭ (হুআ পৃ ২৭)
৫। সৌন্দর্য যেভাবে থাকে, সেভাবেই সুন্দর। ক্রম-১৬৯, (হুআ পৃ ৫৬)
৫। সৌন্দর্য যেভাবে থাকে, সেভাবেই সুন্দর। ক্রম-১৬৯, (হুআ পৃ ৫৬)
দুহাজার সালের পরে প্রবচন অনেকেই লিখতে শুরু করেন। লেবাননের কবি খলিল জিবরানের কবিতার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তাঁর বালি ও ফেনা নামের গ্রন্থটির প্রবচনগুলোও বাংলায় অনুবাদ হতে থাকে। বিভিন্ন অনুবাদক সেগুলো অনুবাদ করেন, বাজারে একাধিক প্রকাশনীর ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ বাজারে প্রচলিত রয়েছে। খলিল জিবরানের এসব জনপ্রিয় উক্তি, হুমায়ুন আজাদের প্রবচন তরুণদেরকে প্রবচন রচনা করায় আগ্রহী করে তোলে। ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁরা এসব প্রবচন লিখে যান, সরাসরি পাঠক বা ফেসবুক বন্ধুর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, ভালো লাগা কিংবা না-লাগার মন্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ থাকায় সেসব মন্তব্যের ভিত্তিতে লেখকগণ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা লাভ করেন, কেউবা নিরুৎসাহিত হন। এর আগে, ফেসবুক প্রচলিত হওয়ার আগে কবি নির্মলেন্দু গুণ (১৯৪৫) মোবাইল ফোনের খুদেবার্তা রচনার মাধ্যম ব্যবহার করে মুঠোফোনের কাব্য রচনা করেন। সিরিজের তিনটি গ্রন্থই ব্যক্তিজীবনের অনুভবের কাব্যিক রূপ, বা ছোট আকারের কবিতা, তবে সেখানে কিছু কিছু রয়েছে প্রবচনের মতো নৈব্যক্তিক এবং চিরকালীন আবেদন নিয়ে রচিত। কাব্যগ্রন্থগুলো অল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে, এবং প্রথমটির সাফল্যের পরপরেই মুঠোফোনের কাব্য-২ এবং ৩ রচিত হয়। মুঠোফোনের কাব্য থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে:
১। যখন সে সমুদ্রে নামে, লাল।
যখন সে উঠে আসে,
সমস্ত সমুদ্র জুড়ে পড়ে থাকে
নিঃস্ব মহাকাল।২২
যখন সে উঠে আসে,
সমস্ত সমুদ্র জুড়ে পড়ে থাকে
নিঃস্ব মহাকাল।২২
আহমদ শরীফের ডায়েরি ভাববুদবুদ। প্রখ্যাত মনীষী ড. আহমদ শরীফের ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে স্মরণীয় কিছু বাণী বা উক্তি, যেগুলো ব্যক্তিগত বোধ থেকে নৈর্ব্যিিক্তকতা লাভ করে লেখক থেকে পাঠকের হয়ে উঠেছে, সেগুলো গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে এ গ্রন্থে। তারিখ অনুযায়ী লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। যেমন,
২.০৩.১৯৮৭: যন্ত্রণামুক্ত জীবন নাই, তাই যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তি ও সংযম চাই।২৩ (আশ পৃ-৮)
১৫. ৬. ৮৮: সার যেমন কমিনের উর্বরাশক্তির বৃদ্ধি ঘটায়, জ্ঞানও তেমনি মননশক্তির ঔৎকর্ষ ঘটায়। (আশ পৃ-৮)
১৫. ৬. ৮৮: সার যেমন কমিনের উর্বরাশক্তির বৃদ্ধি ঘটায়, জ্ঞানও তেমনি মননশক্তির ঔৎকর্ষ ঘটায়। (আশ পৃ-৮)
সাইদুজ্জামান রওশন ওরফে দন্ত্যস রওশন অণুকাব্য রচনা করছেন অনেক বছর ধরে। তাঁর ঐ খুদে রচনাগুলো মূলত কবিতা, সেখানে ব্যক্তিগত অনুভব প্রকাশই মুখ্য, নির্মলেন্দু গুণের মুঠোফোনের কাব্যের মতো। তবে তিনিও মাঝে মাঝে কিছু প্রবাদপ্রতিম উক্তি রচনা করেছেন, যেগুলো প্রবচন বলে গণ্য করা যায়। যেমন,
ভাঙ্গাচোড়া
নানান অঙ্গ
মৃত্যুশয্যায়
জাতিসংঘ।
কিংবা,
কে ছাড়ে হায়
ক্ষমতা
ভীষণ রকম
মমতা।২৪
নানান অঙ্গ
মৃত্যুশয্যায়
জাতিসংঘ।
কিংবা,
কে ছাড়ে হায়
ক্ষমতা
ভীষণ রকম
মমতা।২৪
এ সময় বাজারে প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনেকগুলো প্রবচনগ্রন্থ পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১। অপূর্ব চৌধুরী: অনুকথা মন দর্শন জীবন (৪খণ্ড), আগামী প্রকাশনী, ঢাকা। প্রকাশকাল ২০১৫।
২। ইমতিয়াজ মাহমুদ: ১। ম্যাক্সিম, চৈতন্য প্রকাশনী, সিলেট, প্রথম প্রকাশ-২০১৭, ২। গন্ধম ফুল, দিব্য প্রকাশ,
৩। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: সোনালি শস্যকণা। (সম্পাদনা: আসলাম আহসান), বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, প্রকাশকাল ২০২০।
৪। যাকির সাইদ: আত্মতত্ত্ব দর্শনসমগ্র, বেহুলা বাংলা প্রকাশনী, ঢাকা, প্রকাশকাল, ২০২১।
৫। হুমায়ূন আহমেদ: অমৃত সার, বেহুলা বাংলা, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০২৩।
৬। মজিদ মাহমুদ: কথা বিষামৃত মাক্সিম, প্রকৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। প্রথম প্রকাশ ২০২৩।
৭। সাদমান সিদ্দীক: হলুদ ফুলের ইনকিলাব, ইজরা পাবলিকেশন, ঢাকা, প্রকাশকাল ২০২৩।
৮। রনজু রাইম: ১। প্রবচন সংগ্রহ,.. ২। অপ্রিয় বচন, ৩। বাণীপুত্র,
৯। পলাশ মাহবুব: পমার বচন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০২৪
১০। মাসুদ অর্ণব: প্রলাপগুচ্ছ, লাল পিঁপড়া প্রকাশন, নারায়ণগঞ্জ, পরিমার্জিত সংস্করণ ২০২৪
২। ইমতিয়াজ মাহমুদ: ১। ম্যাক্সিম, চৈতন্য প্রকাশনী, সিলেট, প্রথম প্রকাশ-২০১৭, ২। গন্ধম ফুল, দিব্য প্রকাশ,
৩। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: সোনালি শস্যকণা। (সম্পাদনা: আসলাম আহসান), বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, প্রকাশকাল ২০২০।
৪। যাকির সাইদ: আত্মতত্ত্ব দর্শনসমগ্র, বেহুলা বাংলা প্রকাশনী, ঢাকা, প্রকাশকাল, ২০২১।
৫। হুমায়ূন আহমেদ: অমৃত সার, বেহুলা বাংলা, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০২৩।
৬। মজিদ মাহমুদ: কথা বিষামৃত মাক্সিম, প্রকৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। প্রথম প্রকাশ ২০২৩।
৭। সাদমান সিদ্দীক: হলুদ ফুলের ইনকিলাব, ইজরা পাবলিকেশন, ঢাকা, প্রকাশকাল ২০২৩।
৮। রনজু রাইম: ১। প্রবচন সংগ্রহ,.. ২। অপ্রিয় বচন, ৩। বাণীপুত্র,
৯। পলাশ মাহবুব: পমার বচন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০২৪
১০। মাসুদ অর্ণব: প্রলাপগুচ্ছ, লাল পিঁপড়া প্রকাশন, নারায়ণগঞ্জ, পরিমার্জিত সংস্করণ ২০২৪
অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
১। কাহলিল জিবরান: বালি ও ফেনা, অনুবাদ: মাসুদুল হক, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকা, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০০৮।
২। শামস আল তাবরিজ: ভালোবাসার ৪০ সূত্র, অনুবাদ: ইয়াকুব আহসান, জলধি, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০২
২। শামস আল তাবরিজ: ভালোবাসার ৪০ সূত্র, অনুবাদ: ইয়াকুব আহসান, জলধি, ঢাকা, প্রকাশকাল-২০২
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এ নতুন ধারা প্রবচন, যা ব্যক্তিমনের ভাব, কল্পনা, অনুভূতি এবং ইচ্ছাসমূহ সবল্পসময়ে, অল্পকথায় পাঠকের কাছে বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে প্রকাশ করার একটি উপায় হিসাবে কার্যকর হলেও সাহিত্যের পাঠকের কাছে সাদরে গৃহীত হয়ে থাকে। এসব রচনা অল্প সময়ে পাঠ করা, সন্তানদের জন্য নীতিকথা হিসাবে উপস্থাপন করাসহ নানা রকম উপযোগ রয়েছে, এবং সমাজ-সভ্যতা ও সংস্কৃতি চর্চার সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেও আধুনিকতা প্রকাশ করতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র
১। হুমায়ুন আজাদ, প্রবচনগুচ্ছ, আগামী প্রকাশনী ঢাকা, তৃতীয় শোভন সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ জুলাই ২০০৭, ভূমিকা।
২। মুহম্মদ আবদুল খালেক, মধ্যযুগে বাংলা কাব্যে লোক-উপাদান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫, পৃষ্ঠা- ৩৫২।
৩। বরুণকুমার চক্রবর্তী (ড.), লোকসংস্কৃতির সুলুক সন্ধানে, বুক ট্রাস্ট, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা-৯।
৪। পল্লব সেনগুপ্ত (ড.) লোকসংস্কৃতির সীমানা ও স্বরূপ, পুস্তক বিপনী, ডিসেম্বর ১৯৫৯, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১৫৩।
৫। আশুতোষ ভট্টাচার্য (ড.), বাংলার লোকসাহিত্য প্রথম খণ্ড, ক্যালকাটা বুক হাউস কলকাতা, তৃতীয় সংস্করণ ১৯৬২, পৃষ্ঠা-২১।
৬। আশরাফ সিদ্দিকী (ড.), লোকসাহিত্য, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা, ১৯৬৩, পৃষ্ঠা-২৫৬।
৭। এৎবংযধস’ং ষধ,ি যঃঃঢ়ং://িি.িনৎরঃধহহরপধ.পড়স/সড়হবু/এৎবংযধসং-ষধি
৮। ফরহাদ খান, বাংলা শব্দের উৎস অভিধান, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পুনর্মুদ্রণ, এপ্রিল ২০০৭।
৯। মুহম্মদ আবদুল খালেক, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে লোক-উপাদান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫, পৃষ্ঠা-৩৬৪।
১০। মুহম্মদ আবদুল খালেক, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে লোক-উপাদান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৩৬৪।
১১। শ্রীনীলরতন হালদার, বহুদর্শন, (সংগৃহীত), ফোর্ট উইলয়াম কলেজ, কলকাতা, ১৮২৬, পৃষ্ঠা-৩।
২। মুহম্মদ আবদুল খালেক, মধ্যযুগে বাংলা কাব্যে লোক-উপাদান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫, পৃষ্ঠা- ৩৫২।
৩। বরুণকুমার চক্রবর্তী (ড.), লোকসংস্কৃতির সুলুক সন্ধানে, বুক ট্রাস্ট, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা-৯।
৪। পল্লব সেনগুপ্ত (ড.) লোকসংস্কৃতির সীমানা ও স্বরূপ, পুস্তক বিপনী, ডিসেম্বর ১৯৫৯, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১৫৩।
৫। আশুতোষ ভট্টাচার্য (ড.), বাংলার লোকসাহিত্য প্রথম খণ্ড, ক্যালকাটা বুক হাউস কলকাতা, তৃতীয় সংস্করণ ১৯৬২, পৃষ্ঠা-২১।
৬। আশরাফ সিদ্দিকী (ড.), লোকসাহিত্য, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা, ১৯৬৩, পৃষ্ঠা-২৫৬।
৭। এৎবংযধস’ং ষধ,ি যঃঃঢ়ং://িি.িনৎরঃধহহরপধ.পড়স/সড়হবু/এৎবংযধসং-ষধি
৮। ফরহাদ খান, বাংলা শব্দের উৎস অভিধান, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পুনর্মুদ্রণ, এপ্রিল ২০০৭।
৯। মুহম্মদ আবদুল খালেক, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে লোক-উপাদান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫, পৃষ্ঠা-৩৬৪।
১০। মুহম্মদ আবদুল খালেক, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে লোক-উপাদান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৩৬৪।
১১। শ্রীনীলরতন হালদার, বহুদর্শন, (সংগৃহীত), ফোর্ট উইলয়াম কলেজ, কলকাতা, ১৮২৬, পৃষ্ঠা-৩।
ঃযব ইঙঐঙঙউটজঝঙঘ ড়ৎ ঠধৎরড়ঁং ঝঢ়বপঃধপষবং, ইঊওঘএ অ পযড়রপব পড়ষষবপঃরড়হ ড়ভ চৎড়াবৎনং ধহফ গড়ৎধষং রহ ঃযব ঊহমষরংয, খধঃরহ, ইবহমধষবব, ঝধহংশৎরঃ, চবৎংরধহ ধহফ অৎধনরপ খবহমঁধমবং. ঈঙগচওখঊউ ইণ ঘঊঊখজটঞঘঅ ঐঅখউঅজ. “অ চজঙঠঊজইঝ ওঝ ঞঐঊ ঈঐওখউ ঙঋ ঊঢচঊওঊঘঈঊ.” ঝবৎধসঢ়ড়ৎব, ১৮২৬, চধমব ৩-৬]
১২। শ্রীগোপালদাস চৌধুরী ও প্রিয়রঞ্জন সেন, প্রবাদ বচন, বুকল্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড, ১৩৫৭, ভূমিকা।
১৩। শেখ ফজলুল করিম, চিন্তার চাষ, যঃঃঢ়ং://ঢ়ড়পশবঃনড়ড়শ-ৎবধফবৎ.ধরৎঃবষঢ়ড়পশবঃনড়ড়শ.পড়স/ঢ়ৎবারব/িঋ৩অ৫ঊ২৩১
১৪। আবুল ফজল: লেখকের রোজনামচা, নওরোজ কিবতাবিস্তান, ঢাকা, অক্টোবর, ১৯৬৯, পৃষ্ঠা- কথা প্রসঙ্গে-২।
১৫। জসিম মল্লিক, সাগরদি, মল্লিক বাড়ি, বরিশাল, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ৩১ অক্টোবর ১৯৮০, পৃষ্ঠা-২৩।
১৬। ফজলু, চট্টগ্রাম, সাপ্তাহিক বিচিত্রা ঐ, পৃষ্ঠা-২৮।
১৭। মিসিবাবা, ঢাকা-২, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ঐ পৃষ্ঠা-৪০।
১৮। আলমগীর কবীর, পশ্চিম জার্মানি, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১২ জুন, ১৯৮১, পৃষ্ঠা-১৮।
১৯। জসিম মল্লিক, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ঐ, পৃষ্ঠা ৬২।
২০। নবাব, চট্টগ্রাম, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ঐ, পৃষ্ঠা-৬২।
২১। ক) Moral maxims and reflections, by Duke de La Rochefoucauld, Methuen and Compaû LTD, London, Second Edition, May 1912.
L) Mathias Degout, Aphorisms from French to English: Translations of La RochefoucauldÕs Maxims, Volume 1 (1) GRAFT & TRANSPLANT, Université Paris IV Sorbonne, France.
২২। নির্মলেন্দু গুণ, মুঠোফোনের কাব্য, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৩, পৃষ্ঠা- ৯।
২৩। আহমদ শরীফ, ডায়েরি ভাব-বুদবুদ, আগামী প্রকাশনী ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০১৭, পৃষ্ঠা ৮।
২৪। দন্ত্যস রওশন, অণুকাব্য লালবাত্তি, জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৩, পৃষ্ঠা-৩০।
১৩। শেখ ফজলুল করিম, চিন্তার চাষ, যঃঃঢ়ং://ঢ়ড়পশবঃনড়ড়শ-ৎবধফবৎ.ধরৎঃবষঢ়ড়পশবঃনড়ড়শ.পড়স/ঢ়ৎবারব/িঋ৩অ৫ঊ২৩১
১৪। আবুল ফজল: লেখকের রোজনামচা, নওরোজ কিবতাবিস্তান, ঢাকা, অক্টোবর, ১৯৬৯, পৃষ্ঠা- কথা প্রসঙ্গে-২।
১৫। জসিম মল্লিক, সাগরদি, মল্লিক বাড়ি, বরিশাল, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ৩১ অক্টোবর ১৯৮০, পৃষ্ঠা-২৩।
১৬। ফজলু, চট্টগ্রাম, সাপ্তাহিক বিচিত্রা ঐ, পৃষ্ঠা-২৮।
১৭। মিসিবাবা, ঢাকা-২, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ঐ পৃষ্ঠা-৪০।
১৮। আলমগীর কবীর, পশ্চিম জার্মানি, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১২ জুন, ১৯৮১, পৃষ্ঠা-১৮।
১৯। জসিম মল্লিক, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ঐ, পৃষ্ঠা ৬২।
২০। নবাব, চট্টগ্রাম, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ঐ, পৃষ্ঠা-৬২।
২১। ক) Moral maxims and reflections, by Duke de La Rochefoucauld, Methuen and Compaû LTD, London, Second Edition, May 1912.
L) Mathias Degout, Aphorisms from French to English: Translations of La RochefoucauldÕs Maxims, Volume 1 (1) GRAFT & TRANSPLANT, Université Paris IV Sorbonne, France.
২২। নির্মলেন্দু গুণ, মুঠোফোনের কাব্য, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৩, পৃষ্ঠা- ৯।
২৩। আহমদ শরীফ, ডায়েরি ভাব-বুদবুদ, আগামী প্রকাশনী ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০১৭, পৃষ্ঠা ৮।
২৪। দন্ত্যস রওশন, অণুকাব্য লালবাত্তি, জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৩, পৃষ্ঠা-৩০।
মন্তব্য