নব্বইয়ের দশকের শুরু। দিনাজপুর থেকে পাট গুটিয়ে স্থায়ীভাবে চলে এসেছি বগুড়া শহরে। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন শহর। সেই সব নতুনের মাঝেই নিজেকে খুঁজে নেওয়ার, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তখন সবে শুরু হয়েছে আমার কলেজের পাঠ। উড়ু-উড়ু মন। মনের সুতো কোথায় বাঁধা জানা নেই। নানাজনের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। কারও কারও সঙ্গে সেই পরিচয় গাঢ় হচ্ছে। চিন্তার সঙ্গে মিলিয়ে বন্ধুর সংখ্যা বাড়ছে, কমছে। বন্ধুত্ব শুধু কলেজের সীমানার মধ্যেই বন্দি নয়। তার ডালপালা গজাচ্ছে। মাকড়শার জালের মতো—একের পর এক নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে। তাদের চিন্তা-ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশের স্বতঃস্ফূর্ততা, আমাকে বুঝে নেওয়ার সক্ষমতা সব মিলিয়ে মেপে নেওয়া যাচ্ছে সম্পর্কের দূরগামিতা। তখনো মনের মধ্যে লিখব, এই ভাবনা ডানা মেলেনি।
স্কুলে পড়ার সময়ে আউট বই পড়ার প্রতি যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, তাও ক্রমশ বাড়ছে। নতুন সম্পর্কগুলোর সুতো ধরে কেউ কেউ সেই আগ্রহকে আরও উস্কে দিচ্ছে। সাতমাথায় ‘নজেল সেন্টার’ আর ‘মুসলিম বুক ডিপো’ তখন আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। পাঠের যে আগ্রহ আর রুচি তখনো পর্যন্ত, তা মেটাতে তখন এই দুটি বইয়ের দোকানই ছিল যথেষ্ট। কিন্তু সেই আগ্রহ আর রুচিকে আরও বাড়িয়ে নিতে, তেমনি কোনো কোনো উস্কানি থেকে একদিন মুসলিম বুক ডিপোর পাশেই লাগানো আরও একটি দোকানে ঢুঁ মারলাম। এখানে বগুড়ার লেখক-সাহিত্যিকরা আড্ডা দেন। কলেজের শিক্ষকরা আসেন, তাই সযত্নে এড়িয়েই যেতাম ‘পড়ুয়া’ নামের বইয়ের দোকানটি। এখানে ভেতরের বুক শেলফে রাখা বইয়ের সারির চেয়ে কাউন্টারের সামনে সাজিয়ে রাখা ছোট ছোট ম্যাগাজিনগুলোই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। একটু একটু করে উল্টে-পাল্টে দেখতে দেখতেই মনে হলো—অন্যরকম। কোথায় যেন বড় একটা পার্থক্য রয়েছে আমার পড়া বইয়ের সঙ্গে, আমার পরিচিত লেখাগুলোর সঙ্গে। ধীরে ধীরে পরিচয় গড়ে উঠতে শুরু হলো ম্যাগাজিনগুলোর সঙ্গে। বগুড়া থেকেই তখন প্রকাশিত হতো— দ্রষ্টব্য, নিসর্গ, বিপ্রতীক-এর মতো ছোটকাগজগুলো। এর সঙ্গে নোয়ার্জাক, অতিক্রমসহ আরও নানান কাগজ। যাদের সঙ্গে বাইরের থেকে এসে যোগ দিয়েছিল নদী, গাণ্ডীব, পেঁচা’র মতো অসংখ্য নামের ছোটকাগজ।
রাজনীতিতে তখন নতুন ঢেউ। বন্দি সময়ের অস্থিরতা কেটে গেছে। অন্ধকার তাড়িয়ে মানুষ নিয়ে এসেছে নতুন আলো। মানুষ স্বপ্ন দেখছে—আলো তার উজ্জ্বলতা দিয়ে সব আঁধার তাড়িয়ে দেবে। আশার এই সেতুতে উঠেই একে একে প্রকাশিত হচ্ছে নানান নামের ছোটকাগজ। এইসব কাগজের পৃষ্ঠাতেই অসংখ্য নামের সঙ্গে পরিচয়। অসংখ্য লেখা আর অসংখ্য ভাবনার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠতে থাকে।
তারই মাঝে একটি নাম আমার চোখে আটকে যায়। বজলুল করিম বাহার। তিনি আমাকে হোর্সে লুইস বোর্হেস, চিনুয়া আচেবে, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, নুরুদ্দীন ফারাহসহ অসংখ্য লেখকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তার হাত ধরেই আমি বিদেশি ভাষার মহৎ সাহিত্যিকদের অনেকের রচনার সঙ্গেই পরিচয় হই। শুধু আমিই নয়, আমার মতো আরো অনেকেই হয়তো বজলুল করিম বাহারের ভাষান্তরের মধ্য দিয়ে বিদেশি ভাষার সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন। স্কুলের দিনগুলোতে সেবা প্রকাশনীর হাত ধরে বিদেশি সাহিত্যের প্রতি আমার যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, আমার সেই আগ্রহকেই বিবর্ধিত করেছেন বজলুল করিম বাহার।
শুধু কি বিদেশি সাহিত্য? বা বিদেশি বইয়ের খবর? তা তো নয়, ছোটকাগজের পৃষ্ঠায় বজলুল করিম বাহারের ভাষান্তর এবং বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই বিদেশি চলচ্চিত্রের প্রতিও আগ্রহ তৈরি হয়েছিল আমার।
অনেক দিন পর্যন্ত তাকে অনুবাদক হিসেবেই জানতাম। প্রাবন্ধিক হিসেবেই জানতাম। কারণ, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যেসব ছোটকাগজের সঙ্গে আমার পরিচয়, সে সব কাগজের সম্পাদকরা তাকে দিয়ে বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ করিয়ে নিয়েছেন বেশি। প্রবন্ধ লিখিয়ে নিয়েছেন বেশি। কবিতার অনুবাদ করিয়ে নিয়েছেন। এতে করে পাঠক হিসেবে আমরা লাভবান হয়েছি, বিদেশি ভাষার লেখকদের সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু বজলুল করিম বাহার-এর কবি সত্তাকে ভুলে থেকেছি।
২.
বজলুল করিম বাহার, প্রকৃত প্রস্তাবে কবি। শেষ বিচারেও কবি। অথচ অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক সত্তার আড়ালে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছেন কবি বজলুল করিম বাহার। নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে, যখন থেকে ছোটকাগজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন কোথাও কোথাও—কোনো কোনো কাগজে হঠাৎ বজলুল করিম বাহারের কবিতা চোখে পড়লেও, অভ্যস্ত মন তার প্রবন্ধ, অনুবাদই খুঁজে ফিরেছে। ফলে কবিতার প্রতি নজর দেওয়া হয়নি। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তার প্রথম কবিতার বই ‘পোতাশ্রয়ে একা ও কয়েকজন’।
স্বাভাবিকভাবেই আমার সঙ্গে ছোটকাগজের সম্পর্ক যখন গড়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন তার এই কবিতার বইটি পুরোপুরি নিরুদ্দেশ। প্রায় দুই দশক পরে একটি কবিতার বইয়ের কপি খুঁজে বের করা অসম্ভবই। বইটি পরবর্তীকালে কোনও প্রকাশকও হয়তো আর পুনঃমুদ্রণ করার আগ্রহ দেখাননি। তাই বিস্তৃতির আড়ালে চলে গেছে বজলুল করিম বাহারের প্রথম কাব্যগ্রন্থটি। ফলে তার কবিতাকে কেউ যেমন টেনে আনেনি প্রচারের আলোয় তেমনিভাবে তার কবিতাকে পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও কোনো আলোচক জোরালোভাবে করেননি। ফলে বজলুল করিম বাহারের কবিসত্তা এবং কবিতার সঙ্গে পাঠকের যোগসূত্র তৈরি হয়নি।
বিচ্ছিন্নভাবে যখন বজলুল করিম বাহারের কবিতার সঙ্গে পরিচয় শুরু হয়েছে, যখন আমার কাছে তার প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক সত্তার বাইরে ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে কবি সত্তা। সে রকমই একটি সময়ে, গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী তখন ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ—সে বছর দুই মলাটের ভেতরে আবারও বন্দি হলো বজলুল করিম বাহারের কবিতা। পেপারব্যাক সংস্করণের সেই বইটির নাম ছিল—‘স্বপ্নের নিরাশ্রিত খামাড়’। (এই বইটিও আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না) এই বইয়ের ভেতর দিয়ে আবিষ্কার করতে শুরু করলাম, পাঠ করতে শুরু করলাম বজলুল করিম বাহারের কবিতার।
৩.
বজলুল করিম বাহার সঠিকভাবে শনাক্ত না হওয়ায় কবি হিসেবে প্রায় অনালোচিত রয়ে গেছেন। তার প্রবন্ধ, অনুবাদ নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে, তিনি যতটা পাঠকের কাছে এসেছেন, কবিতা নিয়ে তা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে যেমন রয়েছে—তার নিভৃতচারী স্বভাব, পত্রিকার পাতা ভারী করার প্রয়োজনে সম্পাদকদের কাছে তার কবিতার চেয়ে প্রবন্ধ-অনুবাদের আদর, তেমনি রয়েছে আলোচকদের এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও।
সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি তাৎক্ষণিক রুঢ় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, শিল্পকে তার শুদ্ধতার স্থান থেকে দেখার যে নতুন চিন্তার সূচনা হয়েছিল, বজলুল করিম বাহার সে দিকেই তার দৃষ্টি মনোনিবেশ করেছিলেন। ফলে জনতার কাতারে স্লোগান হয়ে তার কবিতা না পৌঁছে গেলেও তিনি কবিতায় গণমানুষের উপস্থিতিকে অস্বীকার করেননি। বরং শিল্পের পরিশুদ্ধতার ভেতর থেকে অনেক বেশি মৃত্তিকালগ্ন করে তুলতে প্রয়াসী হয়েছেন নিজের কবিতাকে।
আমি যে রুমাল কুড়িয়ে পেয়েছিলাম
সোনাডাঙা শালবনে ফরেস্ট বাংলোয়,
যাতে সূচিকর্মে ফুল পাতা ‘মনে রেখ’
অংকিত ছিল, বীণা এটা কি তোমার ছিল?
কোন বীণা, কতদূর থেকে এসেছিল?
কার সাথে? পরনে কি ধরনের পোষাক ছিল?
রোদ চশমা? হাত ব্যাগ?
বীণা কুয়াশা ও মেঘের আড়ালে হেঁটে
গেছো, কোনদিকে কতদূর গেছো?
তোমার হারানো রুমাল ঘাসের ওপরে
পড়ে ছিল, অদ্ভুত রঙিন ছোপে
তবে তুমি কার কথা ভেবে বিধৃত করেছো?
(মনে রেখ)
বজলুল করিম বাহার কবিতায় নিঃসঙ্গতা ও প্রেমের দিক উন্মোচন করলেও জীবন সম্পর্কে তার উপলব্ধি অভিজ্ঞতায় জারিত। তিনি জীবন থেকেই কবিতার সন্ধান করেছেন। ফলে কবিতায় কোন আরোপিত বিষয়কে স্থান দেননি। জীবনের নির্মমতার দিকগুলো স্পর্শ করেছেন। কবিতাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে চেয়েছেন। বর্ণনার সঙ্গে বিষয়কে একত্রিত করে জীবনের প্রাত্যহিকতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যেখানে মানুষের বিপুল সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে স্থিত জীবনদর্শন।
বেকারিতে দাঁড়িয়ে প্রাণ ম্যাঙ্গো জুস
মুখে দিতে গিয়ে দেখি, নিষ্পলক দুটি চোখ,
এলোমেলো চুল, ছেঁড়াজামা, এক বালক!
আমারই হারানো শৈশব, ছোটখাটো সরল
বাসনা অপূর্ণ থাকার অভিমানে দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে
প্রতীক্ষা করা। ইদারার মেঝেতে আম আঁটির
ভেঁপু তৈরিতে দুঃখ ভুলে থাকা, শোক নিয়ে
রেল লাইন ধরে হেঁটে যাওয়া দূরে বহুদূরে…!
সেই উন্মাদ স্মৃতির মুখোমুখি
দাঁড়ানো আমার লুব্ধ পানতৃষ্ণা, চশমাদৃষ্টি
বর্ষণমুখর রেল স্টেশনের মতো রিক্ত ও নিঃসঙ্গ,যেন ব্যর্থ অনুষ্ঠান শেষে একা একা
নিজেরি ছায়ার সাথে দুঃখ উদ্বোধন।
(দৃষ্টিভঙ্গি)
বজলুল করিম বাহার তার সময়ের দ্বন্দ্ব, সংঘাতময় পরিস্থিতির ভেতরে শুধু বর্তমানকে ধারণ করেই নয় বরং বর্তমানকে আগামীর দিকে প্রসারিত করেছেন। তিনি ঘটনা থেকে মুখ ফিরিয়েও থাকেননি। বরং দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন মানবিক বোধ। মানব জীবনের সংকটের মধ্যে, টালমাটাল অথচ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসা পৃথিবীতে বজলুল করিম বাহার জীবনকে মিলিয়ে দেখতে চেয়েছেন আপন আলোয়।
বাটখারা হারানো মুদির নিষ্প্রভ বিষণ্ন মুখ
আমি দেখেছি ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজের সামনে
ফুটপাতে। ওজোনের মাত্রাজ্ঞান তাই
. হঠাৎ থমকে পড়েছে সবজির দোকানে।
দ্রব্যমূলে ঘিরে ক্রেতার সংশয় বাড়ে,
অপ্রস্তুত মুদির অগণিত প্রশ্নের মুখে অনন্ত স্থিরতা
বাজার অর্থনীতিকে ক্ষুৎকাতর করে তোলে।
……….
কিছুটা কমদামে সবজি কিনতে পারার
আহ্লাদে নন্দিত ক্রেতা দরপতনের সহজিয়া
গানে জেমস-এর সুর ভাজে, রিকশাওয়ালা
কেক দিয়ে চা খায়। মধ্যবিত্ত বেকার বাঙালি ‘আমাদের
সময়’ কাগজ পড়তে পড়তে ভাবে এভাবেই
. ওজন হারাক প্রতিদিন বিশ্ববাজার,
বেনোজলে ভেসে যাক গ্লোবাল টেন্ডার।
কারওয়ান বাজারে মাছ ও সবজির আড়তে
বসন্ত আসুক।,
ইলশে গুড়ির মতো দর পতনের বৃষ্টি হোক,
নামুক সস্তার সুনীল প্রবাহ।
(বাজার)
বাংলা কবিতার ইতিহাসের যে সময়ে বেড়ে উঠেছেন বজলুল করিম বাহার, সে সময়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর পরিবেশ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখলেও তিনি শুধু সেসময়ে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী উত্তাল সময়কে ধরে রাখার জন্যই কবিতা লেখেননি। তার কবিতায় উচ্চস্বর নেই। তিনি মৃদুলয়ে তুলে এনেছেন দুঃখবোধ। এই দুঃখবোধ কখনো একান্তই আত্মকেন্দ্রিক, কখনো তা হয়ে উঠেছে সামষ্টিক।
আমাদের কবিতায় নগর জীবনের হাহাকার, নাগরিক জীবনকে ব্যাপক অর্থে খুব বেশি করি ধারণ করেননি। শামসুর রাহমানকে বলা হয় নাগরিক কবি। কবিতায় তিনি নগরের জীবন ও পরিবেশকে ধরে রেখেছেন। বজলুল করিম বাহারের কবিতায়ও এই দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি নগরে থেকে নগরের যন্ত্রণা, নগর জীবনকেই পরিস্ফুট করে তুলতে চেয়েছেন। যে জীবনের সঙ্গে তিনি অভ্যস্ত সেই জীবনকেই স্পষ্ট করেছেন। নগরে থেকে গ্রামের জন্য, ফেলে আসা সময়ের জন্য মধ্যবিত্তের যে হাহাকার, তাকে নয়, বরং অভ্যস্ত জীবনকেই ধারণ করতে চেয়েছেন। ফলে তার কবিতা হয়ে উঠেছে নগরের দর্পণ।
বজলুল করিম বাহার স্বসময়েই নিজের স্বাতন্ত্র্য দিয়ে চিহ্নিত হয়েছেন। কবি পরিচয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পেরেছেন। এমন নয় যে, তিনি স্বসময়ে অচিহ্নিত থেকে গেছেন। তবে এ অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তাকে যেভাবে শনাক্ত করার প্রয়োজন ছিল, পাঠকের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, সেই দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালন করিনি। তাকে, তার কবিতাকে উপলব্ধি করার প্রয়াস থেকে আমরা স্বাগত জানাইনি। এই কবির মাত্র দু’টি কাব্যগ্রন্থই এই বক্তব্যের পক্ষে যথেষ্ট। গীতিপ্রবণ ও বিজ্ঞানের যুক্তিমাখা যে পঙ্ক্তিমালা নিয়ে তিনি উপস্থিত হয়েছেন, তা তাকে স্বতন্ত্র স্বর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
০৪.
বজলুল করিম বাহার, কবি। অন্য সব পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি কবি। কবিতার যে জগৎ তিনি পাঠকের সামনে উন্মোচিত করেছেন, সংখ্যার বিচারে তাকে স্বল্পপ্রজ বলে চালিয়ে দিলেও গুণ বিচারে, কাব্যরুচিতে তার মূল্য আগামী হাতে ধরা থাকবে। চিরতরুণ এই কবির ৭০তম জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা।